Ajker Patrika

কচুরিপানা থেকে তৈরি হস্তশিল্প যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকায়

শাহীন রহমান, পাবনা 
কচুরিপানা থেকে তৈরি হস্তশিল্প যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকায়

গ্রামাঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিলে প্রায়ই চোখে পড়ে কচুরিপানা। কচুরিপানার ফুল দেখতে সুন্দর হলেও, কচুরিপানা তেমন কোনো কাজে আসে না। তবে এবার সেই ফেলনা কচুরিপানা থেকে পাবনায় তৈরি হচ্ছে হস্তশিল্পের নজরকাড়া নানারকম পণ্য।

পরিবেশবান্ধব ও দামে কম হওয়ায়, এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে দেশ-বিদেশে। বর্তমানে জেলা থেকে তৈরি কচুরিপানার এসব পণ্য ইউরোপ, আমেরিকার অন্তত আটটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

তাঁদের দাবি, এতে বছরে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা আয় হয়। একই সঙ্গে কচুরিপানা ঘিরে পাবনায় বাড়ছে কর্মসংস্থান।

তিন বছর আগে জেলার সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের জয়তুন খাতুন ও রফিকুল ইসলাম দম্পতির উদ্যোগে গড়ে উঠেছে কচুরিপানার এমনই এক কুটিরশিল্প। এখানে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কচুরিপানা কেনা-বেচা ও পণ্য উৎপাদন। কচুরিপানা থেকে টব, ফুলদানি, ফল ঝুড়ি, ডিম রাখার পাত্র, পাপোশ, মোড়া, টুপি, আয়নার ফ্রেম, ডাইনিং টেবিলের ম্যাটসহ দশ রকমের পণ্য তৈরি হচ্ছে এখানে।

নিজের কারখানায় তৈরি হস্তশিল্প পণ্য হাতে জয়তুন খাতুনরসুলপুর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ওই দম্পতি গ্রামের নারীদের মাধ্যমে কচুরিপানা দিয়ে পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি হস্তশিল্প রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘বিডি ক্রিয়েশনে’ এগুলো বিক্রি করেন। সাঁথিয়া ও বেড়া বেড়া উপজেলার প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন কচুরিপানা কেনাবেচা করার কাজে জড়িত। দিনে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ মণ কাঁচা এবং ৫ থেকে ৭ মণ শুকনো কচুরিপানা কেনা-বেচা হয়। প্রতি মণ কাঁচা কচুরিপানা ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং শুকনো কচুরিপানা বিক্রি হয় ১ হাজার ৮০০ টাকায়।

শ্রমিকেরা জানান, বিভিন্ন আকারের হস্তশিল্প পণ্য তৈরি করে প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান। এসব পণ্য কেউ কারখানায় বসে তৈরি করেন; আবার কেউ বাড়িতে বসে কাজ করে সেগুলো কারখানায় জমা দেন। এ ছাড়া কচুরিপানা পরিবহন ও শুকানোর কাজ থেকে শ্রমিকেরা গড়ে দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন।

আলাপকালে জয়তুন খাতুন বলেন, ‘আমার শ্বশুর বেতের ব্যবসা করতেন। একপর্যায়ে আমার স্বামীও ব্যবসা শুরু করেন। এরপর তিন বছর আগে বেতের জিনিসপত্র ক্রয় করা সম্পর্কে জানতে স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় বিডি ক্রিয়েশনে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি কচুরিপানা দিয়ে নানান পণ্য তৈরি করছে। সেখান থেকে উৎসাহ নিই।’

কচুরিপানা থেকে তৈরি হস্তশিল্পজয়তুন খাতুন আরও বলেন, ‘বিডি ক্রিয়েশন থেকে তিনজন মাস্টার আমাদের গ্রামে এসে কচুরিপানার হস্তশিল্প তৈরি শিখিয়ে দেন। এভাবেই শুরু। এরপর গ্রামের নারীদের এ কাজে যুক্ত করি। বর্তমানে ৩০-৪০ জন নারী কচুরিপানা দিয়ে হস্তশিল্পের পণ্য তৈরির কাজ করছেন। বর্তমানে ১০ রকমের পণ্য বিক্রি করছি। খরচ বাদে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়।’

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থাভাবে বড় পরিসরে পণ্য তৈরির কাজ করতে পারছি না। কারণ কোম্পানি থেকে অর্ডার নিয়ে এসে নিজেকে অর্থ লগ্নি করে কাজগুলো তুলতে হয়। সে ক্ষেত্রে এনজিও থেকে যে ঋণ নেই সেটার অনেক সুদ বহন করতে হয়। খুব একটা লাভ থাকে না। সরকার যদি অল্প সুদে ঋণ দেয় তাহলে এই কাজে গ্রামের অন্তত ২ হাজার নারীকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারব।’

এদিকে কচুরিপানা বিক্রি ও পণ্য তৈরির কাজ করে অনেকেই সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। স্কুল-কলেজ অনেক ছাত্রীও এ কাজ করে নিজেদের পড়াশোনা ও হাত খরচ চালিয়ে নিতে পারছেন।

সাঁথিয়ার মিয়াপুর গ্রামের নাজমুল মিয়া, বানিয়াবছ গ্রামের মজিবুর রহমান ও ধাতালপুর গ্রামের ইন্তাজ আলী জানান, প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার কচুরিপানা বিক্রি করেন তাঁরা।

হস্তশিল্প পণ্য তৈরির আগে বিভিন্ন গ্রাম থেকে কিনে আনা হয় কচুরিপানা। তৈরির পর সেগুলো পাঠানো হয় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানেহস্তশিল্প শ্রমিক সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রী খুশি খাতুন ও মিয়াপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন জানায়ন, পড়াশোনার ফাঁকে যতটুকু সময় পায় কচুরিপানার পণ্য তৈরির কাজ করে। এতে যে আয় হয় তা দিয়ে নিজেদের লেখাপাড়া, হাত খরচ ও পোশাকের খরচ চালিয়ে নিতে পারে।

রসুলপুর গ্রামের মাজিয়া খাতুন, আকলিমা বেগম ও গঙ্গারামপুর গ্রামের ডলি খাতুন জানান, সংসারের কাজ শেষ করে তাঁরা এ কাজ করেন। এতে সপ্তাহে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় করতে পারেন। আগের থেকে বর্তমানে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে তাঁদের।

সাঁথিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ওই দম্পতি আমাদের কাছে আবেদন করলে তাঁদের শতকরা আড়াই ভাগ সার্ভিস চার্জে ঋণ দিতে পারব। একই সঙ্গে এই কুটিরশিল্পকে ঘিরে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে গ্রামের আরও বেশি নারীকে এই কাজে সম্পৃক্ত করা যায়।’

বিডি ক্রিয়েশনের জ্যৈষ্ঠ ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মাহবুব আলম বলেন, ২০২০ সাল থেকে আমরা কচুরিপানা দিয়ে হস্তশিল্প পণ্য তৈরির কাজ শুরু করি। ওই বছরের শেষের দিকে সাঁথিয়া জয়তুন-রফিকুল দম্পতি আমাদের সঙ্গে কাজ করছে।

বিডি ক্রিয়েশনের কর্ণধার আব্দুর রহমান আশিক বলেন, শুকনো কচুরিপানা কিনে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে তাঁরা বাহারি সব পণ্য তৈরি করেন। আটটি দেশে কচুরিপানার তৈরি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রতি বছর পরিবেশবান্ধব হস্তশিল্প পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা আয় হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর নতুন নাম ‘শহীদ ওসমান হাদি’

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর টোল প্লাজার নামফলকের পাশে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নাম স্থাপন করেন ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর টোল প্লাজার নামফলকের পাশে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নাম স্থাপন করেন ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলার ওপর নির্মিত শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতু উদ্বোধন করা হয় ২০২২ সালে। সে সময় জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের নামে সেতুটির নামকরণ করা হয়। তবে ৫ আগস্টের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সেতু থেকে নাসিম ওসমানের নাম মুছে ফেলা হয়। এবার জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা ওসমান হাদির নামে সেতুটির নামকরণ করেছেন বন্দর এলাকার ছাত্র-জনতা।

শুক্রবার বিকেলে ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্র-জনতা। মিছিলটি বন্দর রেললাইন এলাকা থেকে শুরু হয়ে মদনগঞ্জ এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর টোল প্লাজার নামফলকের পাশে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নাম স্থাপন করেন আন্দোলনকারীরা।

নতুন নামকরণের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই ছাত্র-জনতার এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। আয়োজকদের দাবি, ওসমান হাদিকে স্মরণীয় করে রাখা এবং তাঁর হত্যার বিচার নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আয়োজকদের একজন রেদোয়ান ইসলাম বলেন, ‘হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে আমরা বিক্ষোভ মিছিল করেছি। এরপর সিদ্ধান্ত নিই, তাঁর নাম স্মরণীয় করে রাখতে সেতুর নামকরণ করব। এর আগে ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগী নাসিম ওসমানের নাম মুছে দেওয়া হয়েছে। এবার সেখানে দেশের একজন মহানায়ক হাদি ভাইয়ের নাম স্থাপন করা হলো। শিগগিরই সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই নাম স্থায়ী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় মাদারীপুর অন্ধকারে

মাদারীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় অন্ধকারে ঢেকে গেছে মাদারীপুর জেলা। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাদারীপুর শহরসহ আশপাশের গ্রামাঞ্চলে ঘন কুয়াশা দেখা যায়।

এর আগে দিনভর আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, সূর্যের দেখা মেলেনি। রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি। কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচল করেছে ধীরগতিতে ও সতর্কতার সঙ্গে।

রিকশাচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সাধারণত রাত ১২টা পর্যন্ত রিকশা চালাই। কিন্তু আজ হঠাৎ অনেক কুয়াশা পড়েছে, রাস্তাও ফাঁকা। তাই আগেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’

ডিসি ব্রিজ এলাকার মুদিদোকানি রানা বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখি। আজ কুয়াশা আর শীত বেশি থাকায় রাত সাড়ে ৮টার দিকেই দোকান বন্ধ করেছি।’

মাদারীপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আগামী দুই সপ্তাহ জেলায় শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব থাকতে পারে। এ সময় সাধারণ মানুষকে সতর্কভাবে চলাচলের পরামর্শ দেন তিনি। দুর্ঘটনা এড়াতে দিনের বেলায়ও যানবাহনের হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচলের অনুরোধ জানান এবং মহাসড়কে চলাচলকারী চালকদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকার কথা বলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর) 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় চার-পাঁচ দিন ধরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে তিস্তাতীরবর্তী এলাকার মানুষেরা। তবে শীত নিবারণের জন্য সরকারি সহায়তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। শীতার্ত মানুষের অভিযোগ, প্রয়োজনের সময় তারা কম্বল পাচ্ছে না। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

গত বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বেদপাড়া এলাকায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় সন্ধ্যা রানী (৫০) নামের এক নারীকে। শীতের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঠান্ডায় হাত-পা কোঁকড়া হয়ে যাচ্ছে। আগুন পোহাইলেও ঠিকমতো কাজ হয় না। আগের বছর শীত আসার আগেই কম্বল পাইছিলাম। এবার শীত আইসা চলি যাচ্ছে, কেউ খোঁজও নিল না।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘এবার শীতে কি সরকার থাকি কোনো কম্বলের ব্যবস্থাই নাই, নাকি সবগুলা লোকজনে ভাগ করে খাইছে?’

এই অভিযোগ শুধু সন্ধ্যা রানীর নয়; কয়েক দিনে সরেজমিনে উপজেলার কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের তিস্তাতীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনমজুর, বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ শীত নিবারণে সরকারি সহায়তার কোনো দৃশ্যমান উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

আলমবিদিতর ইউনিয়নের ডাঙ্গী পাইকান এলাকায় আলুখেতে কাজ করার সময় কথা হয় দিনমজুর নুর আমিনের (৫৪) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঠান্ডা বাড়ার কারণে কোমর আর ঘাড়ের ব্যথা এমন হইছে যে ঠিকমতো হাঁটতেও পারি না, ঘাড়ও সোজা করতে পারি না। তবুও কাজ করা লাগে। বসে থাকলে কি আর পেট চলবে?’

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পর গত বুধবার গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, চলতি শীতে শীতার্ত মানুষের জন্য উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে নির্বাচনী কিছু জটিলতার কারণে ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনায় কম্বলগুলো উপজেলা পরিষদের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। পরে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানের বিষয়টি জানতে পেরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তড়িঘড়ি করে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে ১০০টি করে কম্বল সরবরাহ করা হয়।

জানতে চাইলে মর্ণেয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাঁদের ইউনিয়নের জন্য ১০০টি কম্বল দেওয়া হয়েছে। শনিবার (আজ) সেগুলো বিতরণ করা হবে।

কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, সম্ভবত বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন সচিব পিআইও অফিস থেকে ১০০টি কম্বল এনেছেন। তবে সঠিক তথ্য খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সজীবুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাসিক সমন্বয় সভায় ওপর থেকে নির্দেশনা এসেছে, জরুরি অবস্থা ছাড়া কোনো কম্বল বিতরণ করা যাবে না। নির্বাচনী কিছু জটিলতাও রয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘কম্বলের বরাদ্দ ছিল। আমরা সেগুলো বিতরণ করে ফেলেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি

একসময়ের জ্ঞানের বাতিঘর আজ নিকষ কালো অন্ধকার

মেহেদী হাসান, (দিনাজপুর) ফুলবাড়ী
লতা-পাতা ও আগাছায় ভরা শতবর্ষী সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা
লতা-পাতা ও আগাছায় ভরা শতবর্ষী সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দূর থেকে তাকালেই মনে হয়, কোনো পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়ি। লতা-পাতায় ঢাকা দেয়াল, আগাছায় ভরা চত্বর আর তালাবদ্ধ দরজার ভেতরে মাকড়সার জাল। অথচ একসময় এ জায়গাটিই ছিল পাঠকের ভিড়ে মুখর, জ্ঞানের আলোয় উজ্জ্বল এক প্রজন্মের আশ্রয়। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সুজাপুর গ্রামে শতবর্ষী ‘সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি’ আজ নীরব অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে—ইতিহাস, শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত সাক্ষী হয়ে।

জানা গেছে, ১৯১৬ সালে তৎকালীন জমিদার সুরেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর ছেলে ক্ষীতিশ চন্দ্র রায়ের উদ্যোগে ফুলবাড়ী দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে সুজাপুর গ্রামে যাত্রা শুরু করে এ পাবলিক লাইব্রেরিটি। সুজাপুর হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার পর দরিদ্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বইয়ের সংকট দূর করতে বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় পাঠাগারটি নির্মাণ করা হয়। বাবার স্মৃতি অমর করে রাখতে এর নামকরণ করা হয় ‘সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি’।

একসময় এ লাইব্রেরিতে ছিল বিপুল বই। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা গ্রন্থে ভরপুর ছিল তাকগুলো। পাঠকদের পদচারণে মুখর ছিল পুরো প্রাঙ্গণ। এ লাইব্রেরি থেকেই বহু মানুষ জ্ঞানের আলোয় পথচলা শুরু করেছিলেন। কালের বিবর্তনে যেমন ছোট যমুনা নদী আজ মরা নদীতে পরিণত হয়েছে, তেমনি এ লাইব্রেরিও ধীরে ধীরে হারিয়েছে তার প্রাণ। সবচেয়ে বড় আঘাত আসে ১৯৭১ সালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী আগুনে পুড়িয়ে দেয় লাইব্রেরির অমূল্য বই ও আসবাবপত্র।

দীর্ঘ নীরবতার পর ২০১১ সালের ১৪ অক্টোবর লাইব্রেরি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুরোনো ভবনের পাশে ১২ শতাংশ জমিতে নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১২ সালে পুরোনো ভবন সংস্কার ও নতুন ভবন নির্মাণের পাশাপাশি কেনা হয় ১ হাজার ১২০টি বই। ২০১৫ সালে আরও ২ লাখ টাকা অনুদানে নির্মিত হয় অতিরিক্ত একটি ঘর। ২০১৭ সালে সেখানে চালু হয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এলাকার শিক্ষিত যুবকেরা সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। পাঠকদের পদচারণে আবারও মুখর হয়ে ওঠে লাইব্রেরিটি। গঠিত হয় পরিচালনা কমিটি। মনে হয়েছিল, আবার বুঝি ফিরবে সেই দিন।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অর্থাভাব, লাইব্রেরিয়ানের বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের চাপে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। কে নেবে এর দায়িত্ব—এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এর মধ্যেই আঘাত হানে করোনা মহামারি। বন্ধ হয়ে যায় সব কার্যক্রম। ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি রাতের আঁধারে চুরি যায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছয়টি কম্পিউটার। এভাবেই নতুন আশার শেষ আলোটুকুও যেন নিভে যায়।

এ বিষয়ে ইউএনও আহমেদ হাছান জানান, তিনি লাইব্রেরিটি পরিদর্শন করে পরিচালনা কমিটিকে আপাতত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে লাইব্রেরি খুলে বসার ব্যবস্থা করতে বলেছেন। পরবর্তী সময়ে জনবলসংকটসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত