Ajker Patrika

তদন্ত প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শী, সাক্ষী বলছেন ঘটনাস্থলে ছিলেনই না

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১৯: ৩১
তদন্ত প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শী, সাক্ষী বলছেন ঘটনাস্থলে ছিলেনই না

রাজশাহীতে ভাঙচুর, চাঁদা দাবি ও লুটপাটের একটি মামলায় ১৬১ ধারায় সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা। সেখানে সাক্ষীর উপস্থিত থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও সাক্ষীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, যে সময়ের ঘটনা সে সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তা কীভাবে এটি দিয়েছেন তা জানেন না তিনি।

মামলাটির তদন্তে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) রাজশাহীর উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন। মামলার আরও দুই সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলে গোঁজামিল পাওয়া গেছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তদন্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

ওই মামলার সাক্ষী রাজশাহী নগরীর দেবিশিংপাড়া মহল্লার বাসিন্দা হাসান আলী। মামলার তদন্তের সময় তদন্ত কর্মকর্তা ১৬১ ধারায় তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। তারপর লিপিবদ্ধকারী হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রের সঙ্গে সাক্ষীর জবানবন্দির একটি কপি আদালতে দাখিল করেছেন।

ওই কপিতে লেখা রয়েছে, হাসান আলী তাঁকে জানিয়েছেন যে তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন। ভাঙচুর করতে দেখেছেন। মামলার আসামি দুরুল হোদাকে বাদী আবদুল বারীর কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদাও চাইতে দেখেছেন।

তবে যোগাযোগ করা হলে হাসান আলী বলেন, ‘ভোর সাড়ে ৪টার সময় ঘটনা। তখন সবাই বাড়িতে থাকে, আমিও বাড়িতে ছিলাম। ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তদন্ত কর্মকর্তা এটা কীভাবে দিয়েছেন তা জানি না।’

আহসাদ হাবিব রনি নামের আরেক সাক্ষীর জবানবন্দি হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তা লিখেছেন, এই সাক্ষী বাদী আবদুল বারীর কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা চাইতে দেখেছেন।

তবে যোগাযোগ করা হলে আহসাদ হাবিব রনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি চাঁদা দাবি করতে দেখেননি, শুনেছেন।

কত টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল সে প্রশ্নে হাসান বলেন, ‘আমি সেটা জানি না।’

এদিকে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ভাড়াটিয়া মিজানুর রহমানের দোকানের ৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেছেন আসামিরা। তবে মিজানুর তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছেন, তিনি নিজেই তাঁর দোকান থেকে চাল বের করে নিয়ে যান। যোগাযোগ করা হলে মিজানুর বলেন, চাঁদা চাইতে তিনি দেখেননি। যা বলার আদালতে গিয়েই বলবেন।

দুরুল হোদার অভিযোগ, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন প্রভাবিত হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। দুরুল ২০২২ সালে নগরীর সপুরা আহম্মদনগর এলাকায় লাকি বেগম নামের এক নারীর কাছ থেকে প্রায় সোয়া পাঁচ কাঠা জমি কেনেন। এই জমি নিজের বলে দাবি করে আসছেন বারী। তবে লাকি বেগমের নানি সাপিনা বেগম ২০১৫ সালে যখন এ জমির মালিক ছিলেন, তখনই আদালতে প্রমাণিত হয়েছিল যে জালিয়াতি করে বারী এই জমির খাজনা-খারিজ করেছিলেন নিজের নামে।

পরে সাপিনা বেগম তাঁর নাতনি লাকিকে এ জমি দেন। তারপর লাকি বিক্রি করেন দুরুলের কাছে। দুরুল তাঁর জমিতে থাকা দোকানপাট ভেঙে ফেললে বারী মামলা করেন। যদিও এখন জমির খাজনা-খারিজ দুরুলের নামে। এই জমির কাগজপত্র জমা দিয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) থেকে ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র নিয়েছেন। একতলা বাড়ি করে পেয়েছেন বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ পেতেও জমা দিতে হয়েছিল জমির কাগজপত্র। ই-পরচা ওয়েবসাইটেও রয়েছে দুরুলের নাম।

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, আবদুল বারী ২০০৬ সালে এই জমির একটি দলিল বের করেন। এই দলিলে দেখা যায়, আবদুল বারী এবং তাঁর স্ত্রী সেলিনা বারী নাজির আহমেদ নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে জমিটি কিনেছেন। নাজিরের বাবার নাম শেখ বসির আহমেদ। অথচ এই জমির আরএস খতিয়ানে দেখা গেছে, রেকর্ড অনুযায়ী মালিক সেখ হারুন ও তাঁর ভাই সেখ নাজির। দুজনের বাবার নাম সেখ মোহাম্মদ। সুতরাং, বারী ও তাঁর স্ত্রী যে নাজিরের কাছ থেকে জমি ক্রয় দেখাচ্ছেন আরএস খতিয়ানে তাঁর নামই নেই।

অথচ এ দলিল দিয়েই ২০০৭ সাল থেকে নিজের নামে জমির খাজনা দিতে শুরু করেছিলেন বারী ও তাঁর স্ত্রী। এ জন্য বারী বোয়ালিয়া ভূমি অফিসে সাকিনা বেগমের একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। সাকিনার টিপসই দেওয়া এই প্রত্যয়নপত্রে লেখা, এই জমি নিয়ে সাকিনার কোনো দাবি নেই। এর প্রেক্ষিতে সার্ভেয়ার সায়েম আলী বারীর খাজনা নেওয়ার সুপারিশ করেন। ফলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তখন বারী ও তাঁর স্ত্রীর খাজনা নেওয়ার অনুমতি দেন। 

 ২০১১ সালে সাকিনা বেগম খাজনা দিতে গেলে জানতে পারেন, এই জমির খাজনা নেওয়া হচ্ছে বারী ও তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে। এ নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদালতে মামলা করেন। 

 ২০১৫ সালে মামলার রায়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আতাউল গণি উল্লেখ করেন, শেখ হারুন ও শেখ নাজিরের কাছ থেকে ১৯৭৫ সালে এই জমি কিনে ভোগদখল করছেন সাকিনা বেগম। সিআইডির মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সাকিনার না-দাবির ব্যাপারে তাঁর যে প্রত্যয়নপত্র বারী দিয়েছেন সেই টিপসই সাকিনার নয়। 

তাই আদালত বারী ও তাঁর স্ত্রীর খাজনা বন্ধ করে সাকিনার নামেই খাজনা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি বারীর পক্ষে মিথ্যা প্রতিবেদন দেওয়ায় আদালত ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সার্ভেয়ারের চাকরি চলে যায়। ২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আট বছর জালিয়াতির মাধ্যমে বারী ও তাঁর স্ত্রী জমির খাজনা দিলেও রায়ে সেটি অবৈধ প্রমাণিত হয়ে যায়। 

পরে লাকির কাছ থেকে জমি কিনে দুরুল বাড়ি করতে গেলে আবদুল বারী বাধা দেন। তার ওপর হামলাও হয় দুই দফা। এ নিয়ে বারী ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। দুরুল জমিটা কেনার আগে থেকেই সামনের অংশে পাঁচটি দোকানঘর ছিল। ভবন নির্মাণের জন্য দুরুল চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি দোকানগুলো ভেঙে ফেলেন। আর এই কারণে বারী এবার দুরুলসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। এ মামলার তদন্তেই পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রি, চুয়াডাঙ্গায় ডিলারকে জরিমানা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রির অপরাধে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় এক ডিলারকে ৫০ হাজার টাকা ও ক্রেতাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম।

জানা গেছে, সদর উপজেলার পাঁচমাইল এলাকার এক বিএডিসির সারের ডিলার অবৈধ উপায়ে আলমডাঙ্গার বলেশ্বরপুর এলাকার তাওহীদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছে ডিএপি ১১ বস্তা ও এমওপি ৯ বস্তা সার বিক্রি করেন।

বিষয়টি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম দ্রুত অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁদের জরিমানা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় বিএডিসি সার ডিলার মডার্ন অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইকবাল বিশ্বাসকে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে অবৈধ উপায়ে সার কেনার অপরাধে ক্রেতা তাওহীদ হোসেনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে বিএনপির ২ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়া নিয়ে হামলার ঘটনায় ২ শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে তিনি কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দেন। এর আগে দুপুরে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হন নাসরিন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন উল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফুল দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সেই ইস্যুতে বিএনপির নেত্রী নাসরিন থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

জানা গেছে, অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনের কথা বলা হয়েছে। এদের অধিকাংশই ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মী।

জানতে চাইলে বিএনপির নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিন জানান, তাঁর ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি রোববার রাত ৯টার দিকে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের নাম তিনি প্রকাশও করেছেন।

নাসরিনের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, রোববার দুপুরে ফুল দিয়ে তাঁরা যখন যাচ্ছেন, তখন বাইরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নাসরিনের ঝামেলা হয়েছে। তবে কী হয়েছে জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩২
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তাঁর শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়া।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ফোনে ঘন ঘন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে এ ঘটনায় র‍্যাব মোট চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে করা গুলিতে গুরুতর আহত হন রিকশায় থাকা ওসমান হাদি। তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ সিদ্ধান্ত নেন। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ওসমান হাদির চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড আজ রোববার বিকেলে বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ সমন্বয়ক এবং জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. জাফর ইকবাল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আজ আবার তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত ও বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। এদিন তাঁর হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদ্‌যন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে অ্যাসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।

মেডিকেল বোর্ড আরও বলেছে, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাঁকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাঁকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

ওসমান হাদির প্রথম অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ আজ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল শনিবারের মতো আজও মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। রোগীর কেস সামারি প্রস্তুত করে ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত