Ajker Patrika

ঋণের ফাঁদে রাজশাহী: বাঁচতে গিয়ে মরছে মানুষ

  • গ্রামের ২৫০ বাড়ির দু-চারটি ছাড়া সবারই কোথাও না কোথাও ঋণ আছে: বাসিন্দা
  • আত্মহত্যা করা এক কৃষকের বাড়ি থেকে ১৮টি এনজিওর পাসবই উদ্ধার।
  • কিস্তি দিতে এক দিন দেরি হলে এনজিওর লোকেরা এসে বসে থাকেন: ঋণগ্রহীতা
  • কিস্তি আদায়ে কাউকেই আমরা চাপ দিই না: এনজিও কর্তা
 রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৫, ০৭: ৪৯
একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুতে স্বজনদের কান্না। ছবি: আজকের পত্রিকা
একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুতে স্বজনদের কান্না। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে রাজশাহীর নিম্ন আয়ের মানুষ। চারদিক থেকে অভাব-অনটনে ঘিরে ধরা মানুষগুলো বাঁচার আশায় ঋণ নিচ্ছেন। কেউ চড়া সুদে নিচ্ছেন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে, কেউ সুদের কারবারি কিংবা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে। একসময় এই ঋণই অনেকের বোঝায় পরিণত হচ্ছে, যা তাঁদের ঠেলে দিচ্ছে হতাশা আর মৃত্যুর দিকে। বাঁচার জন্য ঋণ নিলেও তার কারণেই ঝরছে কারও কারও প্রাণ।

সম্প্রতি পরপর কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে ঋণের বিষয়টিই উঠে এসেছে। ঋণের কারণে স্ত্রী, ছেলে ও শিশুকন্যাকে হত্যার পর রাজশাহীর পবার বামনশিখর গ্রামের মিনারুল ইসলামের আত্মহত্যার ঘটনা সবাইকেই ভাবিয়ে তুলেছে। ওই এলাকার বেশির ভাগ মানুষই কোনো না কোনো সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছেন। তাঁরাও ঋণের কারণে চাপের কথা বলছেন। তবে এ দাবি অস্বীকার করেছেন এনজিওর কর্মকর্তারা।

একের পর এক মৃত্যু

ঋণের চাপে আত্মহত্যার ঘটনায় সরকারি কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে সম্প্রতি এমন ঘটনা বেশি দেখা যাচ্ছে। ১৫ আগস্ট সকালে পবার বামনশিখর গ্রামের মিনারুল ইসলাম (৩০), তাঁর স্ত্রী মনিরা বেগম (২৮), ছেলে মাহিন (১৩) ও মেয়ে মিথিলার (৩) লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘরে মেলে মিনারুলের লিখে যাওয়া দুই পাতার চিরকুট। এতে তিনি লিখে যান, ঋণের চাপে ও খাবারের অভাবে তিনি একে একে মনিরা, মাহিন ও ছোট্ট মিথিলাকে হত্যার পর নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই গত সোমবার মোহনপুর উপজেলার খাড়ইল গ্রামের পানবরজে আকবর শাহ (৫০) নামের এক কৃষকের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। তিনিও ঋণগ্রস্ত ছিলেন।

মোহনপুরের বেলনা গ্রামের রিকশাচালক ফজলুর রহমানও (৫৫) জর্জরিত ছিলেন ঋণে। ১৪ আগস্ট রাতে এলাকায় তাঁকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে পরদিন তাঁর মৃত্যু হয়। স্বজনদের দাবি, ২০২২ সালে কেশরহাট এলাকার সুদের কারবারি ধুলু মিয়ার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন ফজলুর। সুদসহ ৪৩ হাজার টাকা শোধ করলেও আরও টাকা দাবি করছিলেন ধুলু। তাঁদের অভিযোগ, টাকা না দেওয়ায় ধুলু মিয়াসহ কয়েকজন ফজলুরকে খুন করেছেন।

ঘরে ঘরে ঋণ

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার নিজের গ্রাম গোবিন্দপাড়া। এই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ ঋণগ্রস্ত। ধরতে গেলে এই হার ১ টাকার ভেতর ১২ আনা (৭৫ শতাংশ)। ৪ আনা কম থাকতে পারে। মানুষ তো গরিব, ঋণ না নিয়ে উপায় থাকে না। কিন্তু একবার ঋণ নিলে তা শোধ হয় না।’

ঋণের চাপে স্ত্রী-সন্তানদের হত্যার পর আত্মহত্যা করা মিনারুলের গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই ঋণগ্রস্ত। এই গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গোটা গ্রামে প্রায় ২৫০ বাড়ি আছে। দু-চার বাড়ি হয়তো পাওয়া যাবে, তাদের ঋণ নাই। বাকি সবারই কোথাও না কোথাও ঋণ আছে।’

মিনারুলের ঋণ ছিল বেসরকারি সংস্থা টিএমএসএসে। সংস্থার খড়খড়ি শাখার ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান বলেন, ‘বামনশিখরে আমাদের সদস্য আছে প্রায় ৮০ জন। মিনারুলের আর অল্প কিছু টাকা বাকি ছিল। সে জন্য তাঁকে চাপাচাপি করা হয়নি। কাউকেই আমরা চাপ দেই না।’

ঋণ থাকলেও ঋণ

দুর্গাপুরে আত্মহত্যা করা কৃষক রেন্টু পাইকের বাড়ি থেকে ১৮টি এনজিওর পাসবই উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এর মধ্যে অর্ধেকের ঋণ পরিশোধ থাকলেও বাকিগুলোর ঋণ চলমান ছিল। গত সোমবার মোহনপুরে আত্মহত্যা করা পানচাষি আকবর শাহের বাড়িতে তাঁর স্ত্রীর নামে পাওয়া যায় ১১টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার পাসবই। দফায় দফায় এ সংস্থাগুলো থেকে ঋণ নিয়েছিলেন আকবর শাহ।

মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, ‘বাড়িতে ১১টা পাসবই পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬-৭টি বইয়ে ঋণ ছিল। সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা কিস্তি লাগত। কিস্তি দিতে না পারার কারণে মানসিক চাপে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে আমাদের ধারণা।’

টাকা আদায়ে কঠিন চাপ

রাজশাহীর তানোর উপজেলার দুবইল গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলামের ঋণ আছে। তিনি বলেন, ‘ঋণ আমি নিয়মিতই পরিশোধ করি। কিন্তু এক দিন যদি দেরি হয়, এনজিওর লোকেরা এসে বসে থাকেন। টাকা না নিয়ে ওঠেন না।’

স্ত্রী-সন্তানদের হত্যার পর আত্মহত্যা করা মিনারুলের চাচি জানেহার বেগম বলেন, ‘মিনারুল কিস্তির চাপে ঠিকমতো বাড়িতেই থাকতে পারত না। কিস্তির লোকেরা বাড়ি আসত, আমরা বুঝিয়ে পাঠাতাম যে, “বাবা, এখন তো মিনারুল বাড়িত নাই, পরে আইসো।” কিন্তু তারা ঘুরেফিরে আসত। রাত ৮টা বেজে গেলেও বাড়ির পাশে বসে থাকত।’

প্রয়োজন মনিটরিং

রাজশাহীর মানবাধিকার সংগঠন ‘বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টা’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ফয়েজুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘এনজিওগুলো সুদের হার ১৪ শতাংশ বলে প্রচার করলেও বাস্তবে তা দাঁড়ায় প্রায় ৩০ শতাংশে। এটা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা। একাধিক এনজিওতে এই উচ্চ সুদে ঋণ থাকলে মানুষ শোধ করতে পারে না। এ বিষয়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি মনিটরিং বাড়াতে হবে।’

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন বলেন, ‘একটা ব্যবসা দাঁড় করাতে গেলে যে পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন, সেটা একক কোনো এনজিও দেয় না। ফলে মানুষ একাধিক এনজিও থেকে ঋণ নেন। সেটা সঠিকভাবে বিনিয়োগ হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়, কিন্তু যখন ঋণের টাকার অপব্যবহার হয়, তখনই সেটা কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা এনজিওগুলোকে পরামর্শ দিয়ে থাকি, যেন তারা যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেয় এবং টাকাটা সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়েছে কি না, তা দেখে। নিয়মিত পরিদর্শনের সময়ও আমরা এটা দেখে থাকি।’

ইয়াকুব হোসেন আরও বলেন, ‘অনেকের একাধিক এনজিওতে ঋণ থাকে। এটা কমিয়ে আনতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী এক বছরের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে অনলাইনে সার্চ করলেই যেকোনো ব্যক্তির এনজিওর ঋণের অবস্থা জানা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সেপারেটিস্টদের’ আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে ভারত থেকে সেভেন সিস্টার্স আলাদা করে দেব: হাসনাত

সেলিম ওসমানকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ

রাজধানীর দক্ষিণখানে যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

তারেকের প্রত্যাবর্তন: ফেরার ঘোষণায় ব্যাপক উৎসাহ, লন্ডন-ঢাকা ফ্লাইটের টিকিট শেষ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: মূল অভিযুক্ত ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিজয় দিবস উদ্‌যাপনে মুছে ফেলা হলো জুলাই আন্দোলনের গ্রাফিতি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
স্মৃতিস্তম্ভে চুনকাম করায় গ্রাফিতিগুলো মুছে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্মৃতিস্তম্ভে চুনকাম করায় গ্রাফিতিগুলো মুছে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ফুলপুরে বিজয় দিবস উদ্‌যাপনে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ থেকে মুছে ফেলা হয়েছে জুলাই আন্দোলনের গ্রাফিতি। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বৈষমবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা।

সারা দেশের মতো চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে যোগ দেন ফুলপুরের শিক্ষার্থীরাও। রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন তাঁরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সাইফুল ইসলাম নামের এক কৃষক শহীদ হন।

আন্দোলনের শক্তি সঞ্চার করতে ফুলপুর গোলচত্বরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের বেদিতে ‘পানি লাগবে কারও পানি, স্বাধীনতা এনেছি সংস্কারও আনব, এক সাঈদ লোকান্তরে লক্ষ সাঈদ ঘরে ঘরে’ এমন নানা উক্তি লেখেন শিক্ষার্থীরা। বিজয় দিবস উপলক্ষে স্মৃতিস্তম্ভের দেয়ালে লেখা এসব উক্তি মুছে ফেলায় ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

জুলাই যোদ্ধা সামাদ খান নাঈম বলেন, ‘দু-তিন দিন ধরে দেখছি, আমাদের অঙ্কিত গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়েছে। কারা এ কাজটি করেছে জানি না; তবে তা খুব খারাপ হয়েছে। এটা আশা করিনি। আমরা আন্দোলনের ফাঁকে ফাঁকে এগুলো এঁকেছিলাম। এখন ইচ্ছে করলেই তা আঁকা সম্ভব নয়।’

এ বিষয়ে গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম সীমা বলেন, জুলাই আন্দোলনের কোনো গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়নি। তবে প্যানা পোস্টার ছিল, সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে। উপজেলা শহরের গোলচত্বরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের দেয়ালে কোনো গ্রাফিতি ছিল না বলেও দাবি করেন তিনি। পরে রাত ১২টার দিকে ফুলপুর উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী গোলচত্বরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পোস্টার অপসারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে অঙ্কিত গ্রাফিতি ফ্যাকাশে ও বিবর্ণ হয়ে স্থানীয় জুলাই যোদ্ধা ও ছাত্র প্রতিনিধিদের পরামর্শক্রমে নতুনভাবে গ্রাফিতি অঙ্কনের উদ্দেশ্যে চুন দিয়ে সাদা করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর এই গ্রাফিতি ছাত্র-ছাত্রী ও জুলাই যোদ্ধাদের সমন্বয়ে নতুন করে আঁকা হবে বলে জানায় উপজেলা প্রশাসন। এ নিয়ে কাউকে বিভ্রান্তি না ছড়াতে অনুরোধ জানায় উপজেলা প্রশাসন।

ময়মনসিংহ সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘কোনো কিছু মুছে দিয়ে লিখে দেওয়া প্রকৃত চেতনাকে ধারণ করে না। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা নিজেদের অঙ্কিত লেখার মাধ্যমে সাহস সঞ্চার করেছিলেন। তাই ইতিহাস মুছে দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সেপারেটিস্টদের’ আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে ভারত থেকে সেভেন সিস্টার্স আলাদা করে দেব: হাসনাত

সেলিম ওসমানকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ

রাজধানীর দক্ষিণখানে যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

তারেকের প্রত্যাবর্তন: ফেরার ঘোষণায় ব্যাপক উৎসাহ, লন্ডন-ঢাকা ফ্লাইটের টিকিট শেষ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: মূল অভিযুক্ত ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার জন্য উন্মুক্ত স্মৃতিসৌধের ফটক, আশপাশের সড়কে যান চলাচল শুরু

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভিন্ন সংগঠন। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভিন্ন সংগঠন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মহান বিজয় দিবসে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটক। প্রায় এক মাস ধরে প্রস্তুতির পর গত চার দিন সর্বসাধারণের প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ ছিল স্মৃতিসৌধ এলাকায়।

আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর আগে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে ভোররাত থেকে আশপাশ এলাকায় ভিড় জমাতে শুরু করে সাধারণ মানুষ।

এদিকে মহান বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিয়মিত পোশাকের বাইরে সাদাপোশাকেও দায়িত্ব পালন করছে তারা।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ‘যাঁদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি, তাঁদের স্মরণে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া সাভারের আমিনবাজার থেকে শুরু করে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি পোশাকে এবং সাদাপোশাকে ৪ হাজারের বেশি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। তারা জনগণের জানমাল রক্ষাসহ সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে।’

এর আগে গতকাল ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাত ৩টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকা-আশুলিয়া ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গাবতলী, বাইপাইল পয়েন্টে ডাইভারশন চলবে। এ সময় বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য সকল যানবাহনের চালককে অনুরোধ করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার গাড়িবহর স্মৃতিসৌধ থেকে সকাল ৭টা ৫ মিনিটের দিকে ঢাকার উদ্দেশে বের হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্মৃতিসৌধ-সংলগ্ন সড়কে যান চলাচলের অনুমতি দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সেপারেটিস্টদের’ আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে ভারত থেকে সেভেন সিস্টার্স আলাদা করে দেব: হাসনাত

সেলিম ওসমানকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ

রাজধানীর দক্ষিণখানে যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

তারেকের প্রত্যাবর্তন: ফেরার ঘোষণায় ব্যাপক উৎসাহ, লন্ডন-ঢাকা ফ্লাইটের টিকিট শেষ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: মূল অভিযুক্ত ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

১৬ ডিসেম্বরের প্রত্যয়েই দেশ পুনর্নির্মাণের সুযোগ করে নিতে পেরেছি: আসিফ নজরুল

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ছবি: আজকের পত্রিকা

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘১৬ ডিসেম্বরের যে প্রত্যয়, সেটা আমাদের মধ্যে ছিল দেখেই আমরা ঐতিহাসিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পুনর্নির্মাণের একটা সুযোগ করে নিতে পেরেছি। এখানে আসলে ভালো লাগে, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা যাঁরা আছেন, আহত মুক্তিযোদ্ধা যাঁরা আছেন, যাঁরা ওই সময়ে নানান আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় মন সিক্ত হয়।’

আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। আমি মনে করি, আমাদের বাংলাদেশের মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠতম একটা দিন। এই দিনে আমরা যখন জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসি, আমাদের যে মুক্তিযুদ্ধকালীন গৌরবগাথা, আমাদের সেই অসামান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান, আমাদের দেশ গড়ার যে প্রত্যয়, সেগুলো সব মনে পড়ে।’

এদিন সকালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও তিন বাহিনীর প্রধানেরা বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপরই জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সেপারেটিস্টদের’ আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে ভারত থেকে সেভেন সিস্টার্স আলাদা করে দেব: হাসনাত

সেলিম ওসমানকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ

রাজধানীর দক্ষিণখানে যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

তারেকের প্রত্যাবর্তন: ফেরার ঘোষণায় ব্যাপক উৎসাহ, লন্ডন-ঢাকা ফ্লাইটের টিকিট শেষ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: মূল অভিযুক্ত ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রতিপক্ষ পেছন দিক থেকে আঘাত করার অপচেষ্টা করছে: রিজওয়ানা হাসান

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার ও জাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৩
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্য উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্য উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: আজকের পত্রিকা

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘প্রতিপক্ষ সংগঠিত এবং পেছন দিক থেকে আঘাত করার অপচেষ্টা করছে। এর বিপরীতে আমাদের আরও বেশি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং আমরা তা করছি। আমরা নিরাপত্তা আরও জোরদার করছি।’

আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তথ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘৫৪ বছর পরেও যখন একটা গণ-অভ্যুত্থান হতে হয়, তার অর্থ হচ্ছে একাত্তরের যে স্বপ্নটা আমাদের ছিল, যে বিশ্বাসটা আমাদের ছিল, যে প্রত্যাশাটা আমাদের ছিল, রাষ্ট্র সেই প্রত্যাশাটা পূরণ করতে পারেনি। আমরা আশা করি, এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটা ভিত্তি স্থাপন হবে। যেই ভিত্তিটা গণতন্ত্রকে যেমন সুদৃঢ় করবে, তেমনি জনগণের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করবে এবং একই সঙ্গে একটি বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্নটা আমাদের এখনো অধরাই রয়ে গেছে। এর মাধ্যমে আমাদের পূর্ণতার যাত্রা শুরু করতে পারব।’

রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অনেক সময় যুক্তিতর্ক না করে হত্যাচেষ্টাকে একটা অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয়, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও কাপুরুষোচিত বলে মন্তব্য করেন তথ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা একটা খুবই দুঃখজনক বিষয় যে আমাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অনেক সময় দেখা যায়, আমরা যুক্তিতর্ক না করে হত্যাচেষ্টাকে একটা অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করি। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও কাপুরুষোচিত, এটার মধ্যে তো কোনো বীরত্ব নেই, আপনার যদি শক্তি থাকে, আপনি জনগণের মুখোমুখি হন, জনগণের মুখোমুখি কীভাবে হতে হয়, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তো সবার কাছে স্পষ্ট। সেটা না করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এই যে একটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি চলে এসেছে, এটা কোনোভাবেই নতুন বাংলাদেশে গ্রহণ করার কোনো সুযোগ দেখতে পাচ্ছি না।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘নিরাপত্তা দেওয়ার যতটা স্বাভাবিক প্রস্তুতি থাকে, সবটুকু স্বাভাবিক প্রস্তুতি আমাদের আছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ের আঘাতটা নিয়ে স্বাভাবিক প্রস্তুতির চেয়েও বেশি কিছু আমাদের নিতে হবে। কারণ, প্রতিপক্ষ আরও বেশি সংগঠিত এবং সে পেছন দিক থেকে আঘাত করছে।’ তিনি বলেন, ‘এই যে পেছন দিক থেকে আঘাত, এটার বিপরীতে আমাদের আরও বেশি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা নিরাপত্তা আরও জোরদার করছি।’

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আজকে এমন একটা সন্ধিক্ষণে আছি, যেখানে আমরা একটা শাসনব্যবস্থাকে পেছনে ফেলে নতুন করে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করব। সেখানে ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের নির্বাচন আছে, আমরা খুবই আশা করছি, নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথে সুদৃঢ় একটা যাত্রা আমরা শুরু করব। এ জন্য কেবল একটা নির্বাচনই হচ্ছে না, সঙ্গে গণভোটও হচ্ছে।’

সবকিছু বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকার সফল নাকি ব্যর্থ—এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বটা নিয়েছিলাম, তখন একটা একেবারে ভেঙে পড়া অবস্থায় আমরা কাজটা শুরু করেছি। সেই ভেঙে পড়া অবস্থাকে জোড়া লাগিয়ে রাষ্ট্রটাকে আবার একটা যাত্রার দিকে নিয়ে যাওয়াই ছিল আমাদের কাজ। আমরা সেই কাজটা করেছি। সেখানে আমি এই সরকারকে ব্যর্থ বা সফল কোনোটা বলারই সুযোগ দেখতে পাচ্ছি না। এ সরকার তখনই সফল হবে, যখন দেখা যাবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই সরকারের যাত্রা—একটা সুষ্ঠু নির্বাচন, বিচার করা এবং সংস্কার করা; সেই কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে।’

রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে, সুষ্ঠু একটা নির্বাচন হবে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে লোকে ভোট দিতে পারবে, শান্তিপূর্ণভাবে লোকে ভোট দিতে পারবে। এখন এটাকে ব্যহত করার জন্য একটা শক্তি সমাজে কাজ করছে। সে শক্তিটাকে একই সঙ্গে আমাদের প্রতিহত করতে হচ্ছে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশার জায়গা থেকে আমরা বলে দিতে পারি, আমরা শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, স্বতঃস্ফূর্ত একটা নির্বাচনের দিকে তাকাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সেপারেটিস্টদের’ আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে ভারত থেকে সেভেন সিস্টার্স আলাদা করে দেব: হাসনাত

সেলিম ওসমানকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ

রাজধানীর দক্ষিণখানে যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

তারেকের প্রত্যাবর্তন: ফেরার ঘোষণায় ব্যাপক উৎসাহ, লন্ডন-ঢাকা ফ্লাইটের টিকিট শেষ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: মূল অভিযুক্ত ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত