Ajker Patrika

দখল-চাঁদাবাজি-হামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা

  • উচ্ছেদ করতে যাওয়া প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা।
  • সাংবাদিক ও তাঁদের বাড়িঘরেও হামলা চালানো হয়েছে।
মীর মহিবুল্লাহ, পটুয়াখালী
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় চলছে স্থানীয় বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দখল-চাঁদাবাজি। উচ্ছেদ করতে যাওয়া প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি সাংবাদিকের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, অভিযুক্তরা কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ও পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী এ বি এম মোশারফ হোসেনের অনুসারী।

জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা এবং অভিযোগ দেওয়া হলেও দল থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পরে কুয়াকাটায় খাসজমিসহ সৈকত এলাকায় অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করছিলেন স্থানীয় বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। জেলা প্রশাসন ৫ নভেম্বর এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। তা ঠেকাতে ৬ নভেম্বর দুপুরে ভেকু ভাঙচুর এবং এর চালককে পিটিয়ে জখম করেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। কুয়াকাটা ট্যুরিজম পার্কের ভেতরে অবস্থানরত কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ও পুলিশকে অবরুদ্ধ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন তাঁরা। এ ঘটনায় ওই দিনই মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আ ন ম মূরাদুল ইসলাম বাদী হয়ে যুবদল, শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দলসহ ১৯ জন নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে। সরকারি কাজে বাধা দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। মামলা করা হয়েছে, পরবর্তী পদক্ষেপ আদালত দেখবেন।’

এ ছাড়া ৪ জানুয়ারি সাগরপারে মসজিদের সামনে উচ্ছেদ করা খাসজমিতে আবারও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন পৌর শ্রমিক দলের সহসভাপতি জসিম মৃধা। পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ বাধা দিলে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন জসিম।

কৌশিক আহমেদ বলেন, ‘উচ্ছেদ করা খাসজমিতে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার অজুহাত দিয়ে তারা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ শুরু করে। তবে তারা আমাকে কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি, তাই আমি কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় জসিম ও আ. কাদের আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং হুমকি দেয়। এ ঘটনা পৌর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অবগত রয়েছেন।’

সর্বশেষ গত রোববার পৌর শ্রমিক দলের সহসভাপতি জসিম মৃধা ও কৃষক দলের সভাপতি আলী খন্দকারের নেতৃত্বে কুয়াকাটা চৌরাস্তায় এলাকায় দেশ রূপান্তরের কুয়াকাটা প্রতিনিধি ও ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সভাপতি কে এম বাচ্চু খলিফা ও তাঁর বাবা ইউনুছ খলিফার ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে।

এর আগে ১৩ নভেম্বর রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সদস্য এবং আমাদের সময়ের কুয়াকাটা প্রতিনিধি মাসুদ পারভেজ সাগরের আবাসিক ‘হোটেল সাগরে’ হামলা চালান কুয়াকাটা পৌর শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. জলিল চুকানী ও তাঁর লোকজন। এ ঘটনায়ও তাঁর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দল থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ ছাড়া পারিবারিক শত্রুতার জেরে ৫ আগস্ট একুশে টেলিভিশন ও যুগান্তরের কুয়াকাটা প্রতিনিধি মো. নাসির উদ্দীন বিপ্লবের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান ও তাঁর ভাই মহিপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আতিকুর রহমান মিলন এবং লতাচাপলী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে।

ভুক্তভোগীর মতে, তাঁরা সবাই কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেনের অনুসারী। বর্তমানে নাসির উদ্দিন বিপ্লব পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ নিয়ে একাধিক অভিযোগ দেওয়া হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নাসির উদ্দিন বিপ্লব ফোনে বলেন, ‘মোশারফ ভাইকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তিনি ওদেরকে বলেছেন কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি; ব্যবস্থাও নেয়নি। এ ছাড়া আমি মামলা করতে গেলে স্থানীয় নেতারা উল্টো আমাকে মামলার ভয় দেখাচ্ছে।’

এদিকে ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমানের মোবাইল ফোনে বাস কাউন্টার দখলে নেওয়ার কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন মিল্লা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হইছে, এখানে বিআরটিসির কুয়াকাটা এবং তুলাতলীর কাউন্টার ৯ ওয়ার্ডের বিএনপির কমিটি মিল্লা ভোগ করবে।’

ভিডিওতে বিআরটিসির কুয়াকাটা কাউন্টার ইনচার্জ আলী আহমদ শেখের ছেলে মোস্তফা শেখ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপির নেতা মতিউর রহমান। অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে তিনি বলেন, ‘এখন সভাপতি, সিনিয়রসহ আমাদের সবার সিদ্ধান্ত এক, কালকে হইতে আপনাদের কাউন্টার বন্ধ থাকবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুয়াকাটা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘যাত্রীর টিকিট কাটা নিয়ে ঝামেলা হয়; তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি কাউন্টার বন্ধ রাখতে বলেছি। এ ছাড়া আমার বিরুদ্ধের অভিযোগ সত্য নয়। বাচ্চুর ওপর হামলা নিজেদের মধ্যে হয়, ওটার ব্যবস্থা নিচ্ছি। এবং হোটেল সাগরে যারা হামলা করছে, তাদের বহিষ্কারের সুপারিশ জেলায় পাঠিয়েছি।’

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেন বলেন, ‘ইউএনও এবং এসি ল্যান্ড আওয়ামী লীগের ডিও লেটারে হয়েছে, তাদের লোক তারা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবৈধ স্থাপনা বসছে, কিন্তু এখন তারা উচ্ছেদ করতে আসছে। আমি জনগণের লোক, জনগণ বাধা দিয়েছে, আমি তাদের সাথে ছিলাম। তবে হামলার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ছাড়া কাউন্টার দখলের বিষয়ে জানি না। ওগুলো স্থানীয় বিষয়। আমি আগে সভাপতি ছিলাম, এখন নেই।’

সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে মোশারফ হোসেন বলেন, ‘নাসির উদ্দিন বিপ্লবের সাথে যেটা হয়েছে, সেটা তাদের পারিবারিক বিষয়, সাংবাদিক হিসেবে নয়। এটা তাদের দীর্ঘদিনের ঝামেলা, আমার সাথে তার কথা হয়েছে। এ ছাড়া বাচ্চু আমাদের ক্লোজ লোক, মূলত ওর বাবার সাথে চায়ের দোকানে বসে ঝামেলা শুরু হয়ে এ পর্যন্ত গড়িয়েছে। দুই পক্ষই মামলা করেছে; এখন বিষয়টি আদালত দেখবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নরসিংদীতে তিন চোখ ও দুই মুখের বাছুরের জন্ম, এলাকায় চাঞ্চল্য

নরসিংদী প্রতিনিধি
পুবেরগাঁও গ্রামের একটি খামারে বাছুরটির জন্ম। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুবেরগাঁও গ্রামের একটি খামারে বাছুরটির জন্ম। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীতে অদ্ভুত আকৃতির বাছুরের জন্ম হয়েছে। বাছুরটির রয়েছে দুটি মুখ, দুটি জিহ্বা, দুটি কান ও তিনটি চোখ। এর মধ্যে একটি চোখ বাছুরের কপালের মাঝখানে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

২৩ ডিসেম্বর রাতে শিবপুর উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের পুবেরগাঁও গ্রামে স্থানীয় ইউপি সদস্য কাশেম খানের খামারে বাছুরটির জন্ম।

খামারমালিক কাশেম খান বলেন, বাছুরটি জন্মের পর থেকেই অসুস্থ। স্বাভাবিকভাবে দুধ পান করতে না পারায় ফিডারের মাধ্যমে দুধ খাওয়াতে হচ্ছে।

তিনি জানান, তাঁর খামারের একটি গাভি বাছুরটির জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, এর আগেও গাভিটির বাছুর হয়েছে। কিন্তু এবারের মতো এমন অদ্ভুদ বাছুর আগে কখনো হয়নি।

ঘটনাটি জানাজানির পর থেকেই বাছুরটিকে একনজর দেখতে আশপাশের কৌতূহলী মানুষ খামারে আসছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল জলিল বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে গরু-ছাগল দেখছি। কিন্তু তিন চোখ আর দুই মুখের বাছুর এই প্রথম দেখলাম। খবর পেয়ে দূর থেকে এসেছি।’

আরেক স্থানীয় নারী জরিনা বেগম বলেন, ‘বাছুরটা দেখতে অদ্ভুত লাগলেও মায়া হচ্ছে। বাছুরটির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। অনেকেই দ্রুত প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিচ্ছেন।’

এর আগে এ ধরনের বাছুর জন্মের বিষয়ে প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাধারণত জেনেটিকস ডিফেক্টের কারণে গাভির এমন ত্রুটিপূর্ণ বাচ্চার জন্ম হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজীপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে নানি-নাতনিসহ নিহত ৩

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গাজীপুরের কালীগঞ্জে রেললাইন দিয়ে হাঁটার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে নানি-নাতনিসহ তিন নারী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে টঙ্গী-ভৈরব রেলপথের আড়িখোলা রেলস্টেশনসংলগ্ন টেকপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত নারীরা হলেন কালীগঞ্জ পৌরসভার দেওয়ালেরটেক গ্রামের মোবারক হোসেনের স্ত্রী সাদিয়া বেগম (২৪), একই এলাকার বাবু মিয়ার মেয়ে অনাদি আক্তার (১৩) এবং নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মরজাল এলাকার বাসিন্দা কমলা বেগম (৫৫)। নিহত কমলা বেগম ও অনাদি আক্তার সম্পর্কে নানি-নাতনি এবং সাদিয়া বেগম তাঁদের প্রতিবেশী ছিলেন।

স্থানীয়রা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আড়িখোলা রেলব্রিজ এলাকায় রেললাইনের ওপর দিয়ে তিনজন হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নোয়াখালীগামী ‘উপকূল এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি চলে আসে। এ সময় তাঁরা রেলব্রিজের ওপর থাকায় সেখান থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার সুযোগ পাননি। পরে ট্রেনটি তাঁদের ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই কমলা বেগম ও সাদিয়া বেগমের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় অনাদি আক্তারকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জিয়াউর রহমান জানান, অনাদি আক্তারকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওবায়দুল হক জানান, এটি রেলওয়ের আওতাধীন দুর্ঘটনা হওয়ায় রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।

রেলওয়ে নরসিংদী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) দিলীপ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করেছি। নিহত নারীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিনা ময়নাতদন্তে লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আরাকান আর্মিদের জন্য নেওয়া হচ্ছিল ১৫০০ মশারি, আটক ৫

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি  
মশারিসহ জব্দ করা মালপত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা
মশারিসহ জব্দ করা মালপত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা

বান্দরবানের থানচি উপজেলায় দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা তল্লাশি করে ১ হাজার ৫০০টি মশারি, ১২০টি নৌকার ইঞ্জিনের পাখা উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে তিন্দুমুখ বিজিবি চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় নৌকাগুলো তল্লাশি করে এসব জিনিস জব্দ করে বিজিবি। এসব মশারি ও ইঞ্জিনের পাখা বান্দরবানের থানচির বড় মদক সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির জন্য নেওয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছে বিজিবি। এ ঘটনায় নৌকা দুটি থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার তাঁদের থানচি থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আটক ব্যক্তিরা হলেন থোয়াই হ্লা চিং মারমা, উমং সাইং মারমা, হ্লাচিংথোয়াই মারমা, উক্যছাইন মারমা ও মো. ইউনুস।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে বিজিবি বলিপাড়া ৩৮ ব্যাটালিয়ানের সহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেনের জানান, নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্রে তাঁরা জেনেছেন, দীর্ঘদিন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ওষুধ, কাপড়, জুতা, মোজা, মশারি, নৌকা ইঞ্জিনের পাখা ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মিয়ানমারের আরাকান আর্মির কাছে সরবরাহ করছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। পাচারকারীদের ধরতে সীমান্তের বিজিবি চৌকিগুলোতে বিজিবি সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন।

জাকির হোসেন বলেন, গতকাল বুধবার তিন্দুমুখ বিজিবি চেকপোস্ট অতিক্রম করার সময় মালবাহী তিনটি ইঞ্জিন নৌকা দেখে বিজিবির সদস্যদের সন্দেহ হয়। এ সময় নৌকা থামাতে বললে একটি নৌকা দ্রুত চলে যায়। বাকি দুটি নৌকা তল্লাশি করে ১ হাজার ৫০০টি মশারি, ১২০টি ইঞ্জিন বোটসহ অন্যান্য পণ্য পাওয়া যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নলছিটি লঞ্চঘাট ওসমান হাদির নামে নামকরণ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  
নলছিটি লঞ্চঘাট ।  ছবি: আজকের পত্রিকা
নলছিটি লঞ্চঘাট । ছবি: আজকের পত্রিকা

নলছিটি উপজেলার লঞ্চঘাট এখন থেকে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির নামে পরিচিত হবে। জন্মস্থান ও শৈশবের স্মৃতিতে গাথা এই লঞ্চঘাট তাঁর নামের সঙ্গে চিরস্থায়ীভাবে যুক্ত হলো।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (২৫ ডিসেম্বর) জানান, শহীদ ওসমান হাদির জন্মস্থান নলছিটি। শৈশব, বেড়ে ওঠা এবং জীবনসংগ্রামের সঙ্গে লঞ্চঘাট এলাকার নিবিড় সম্পর্ক থাকার কারণে এটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে টার্মিনালের সংস্কার ও রঙের কাজ চলমান রয়েছে।

আগামী শনিবার নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ঘাটটি পরিদর্শন করবেন বলেও জানান তিনি।

নলছিটি লঞ্চঘাট শহীদ ওসমান হাদির জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঘাট থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে তার পৈতৃক বাড়ি। নদীর ধারে দাঁড়িয়ে মানুষের আসা-যাওয়া দেখা এবং লঞ্চের ভিড়ে সময় কাটানো—এই ঘাট ছিল তার বেড়ে ওঠার নীরব সাক্ষী।

ঘাট এলাকার ব্যবসায়ী রব হাওলাদার বলেন, ‘আমরা চাইছিলাম হাদির স্মরণে এমন কিছু হোক, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে। তার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত লঞ্চঘাটের নাম তার নামে হওয়া নিঃসন্দেহে স্মরণীয় সিদ্ধান্ত।’

ব্যবসায়ী শাহাদত আলম ফকির যোগ করেন, ‘এই ঘাটে আমরা হাদিকে ছোটবেলা থেকে দেখেছি। সে এখানকারই ছেলে ছিল। আজ তার নামে ঘাটের নামকরণ হওয়ায় আমরা গর্বিত।’

ওসমান হাদির প্রতিবেশী বেলায়েত হোসেন নান্নু বলেন, ‘হাদি এই এলাকার সন্তান। এই ঘাট, এই নদী, এই মানুষ—সবকিছুতেই তার স্মৃতি ছড়িয়ে আছে। লঞ্চঘাটের নাম তার নামে হওয়া মানে, সে এখানেই চিরদিন বেঁচে থাকবে।’

উল্লেখ্য, ১২ ডিসেম্বর হত্যার উদ্দেশ্যে ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। তাঁকে প্রথমে ঢাকায় ভর্তি করা হয় এবং পরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর মারা যান ওসমান হাদি। পরবর্তীকালে তাঁর মরদেহ দেশে আনা হয় এবং সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে (জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে) সমাহিত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত