Ajker Patrika

হালিমকে বাঁচাতে আফছারকে ফাঁসানোর অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

পাবনা প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২২, ১৬: ০০
হালিমকে বাঁচাতে আফছারকে ফাঁসানোর অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

গাঁজার গাছসহ আটক হালিম শেখ (৫০) নামের এক সহযোগীকে বাঁচাতে মানসিক ভারসাম্যহীন আফছার মোল্লাকে (৪০)  মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ উঠেছে পাবনার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান খানের বিরুদ্ধে। 

এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান ও থানার ওসির পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যান জানান, তিনি হালিমের পরিবারের অনুরোধে আফছারকে নিয়ে থানায় গেছেন। আর ওসি জানান, ঘটনাস্থল থেকে আফছারকে আটক করা হয়েছে। পরে চেয়ারম্যানকে থানায় ডেকে আনা হয়েছে। তাঁর সামনেই আফছার নিজের দোষ স্বীকার করেন। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হালিম শেখ উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের নেওয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মাজেদ শেখের ছেলে এবং ভুক্তভোগী আফছার মোল্লা একই গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ মোল্লার ছেলে। 

ভুক্তভোগী আফছার মোল্লার স্ত্রী শাহিদা খাতুন অভিযোগ করে জানান, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে নেওয়া গ্রামের হালিম শেখের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গাঁজার গাছসহ আটক করে পুলিশ। একই দিন রাত ১২টার দিকে হঠাৎ হালিম শেখের ভাই ও ছেলেরা এসে আমার স্বামীকে ডাকাডাকি করেন। এ সময় ঘুম থেকে উঠলে তাঁরা আমার স্বামীকে হালিমের দোষ স্বীকার করতে বলেন। তারা বলেন, ‘হালিমের গাঁজার গাছ তুই লাগিয়েছিস, তুই গাঁজা খাস। তুই স্বীকার করলে হালিমকে ছেড়ে দেবে। আর তুই পাগল, তোর কিছু হবে না, পুলিশ তোকে ধরবে না।’ এ সময় আমার স্বামী প্রথমে অস্বীকৃতি জানালে তারা তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে এক হাজার টাকা দিয়ে পরদিন সকালে তাঁদের সঙ্গে থানায় যাওয়ার জন্য বলে চলে যান। পরদিন সকালে আমার স্বামী মাঠে যাওয়ার পথে জোর করে তাঁরা চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা আমার স্বামীকে থানায় নিয়ে যান। পরে শুনেছি আমার নির্দোষ স্বামীকে পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে। 

এ বিষয়ে আফছারের ভাই খালেক মোল্লা বলেন, ‘আমার ভাই মানসিক ভারসাম্যহীন। মাঝে মধ্যে তাকে পায়ে শিকল ও হাতে বেড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। সে নিয়মিত পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় ও ওষুধ খায়। মাঝেমধ্যে যখন সুস্থ থাকে তখন এলাকায় দিনমজুরের কাজ করে। আমরা থানায় গিয়ে পুলিশকে অনুরোধ করেছি, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।’ 

স্থানীয় গ্রাম পুলিশ ইয়াছিন আলী বলেন, ‘আমার উপস্থিতিতেই হালিম শেখকে তাঁর নিজ বাড়িতে লাগানো গাঁজার গাছসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরদিন শুনি চেয়ারম্যানের লোকজন আফছারকে ধরে থানায় নিয়ে গেছে। খবর পেয়ে আমি থানায় গিয়ে দেখি ইতিমধ্যে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে।’ 

সরেজমিনে খাইরুল শেখ, আব্দুল মান্নান, শাহিদা খাতুন, ইনামুল হকসহ অন্তত ১০ জন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আফছার একজন নিরীহ মানুষ এবং মানসিক ভারসাম্যহীন। মাঝেমধ্যে তাকে শিকল-বেড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে দেখেন তারা। আগে কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে তাকে জড়িত হতে দেখেননি। এমন একজন মানসিক রোগীকে এভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। 

আফছারকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান খান বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর হালিমের ভাইয়েরা আমার কাছে আসে এবং বলে, ‘তিন মাস আগে তাদের বাড়িতে আফছার ফুলের গাছ মনে করে গাঁজার গাছটি লাগিয়েছিল।’ এরপর আমি আফছারকে জিজ্ঞাসা করলে সে গাছ লাগানোর কথা স্বীকার করে। পরে আমি ও হালিমের লোকজন তাকে নিয়ে থানার ওসির কাছে যায়। আফছার ওসির সামনে সব দোষ স্বীকার করলে পুলিশ দুজনকেই হাজতে পাঠায়। 

নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান খান বলেন, ‘যেহেতু আফছার নিজে দোষ স্বীকার করেছে, তাই আফছারকে আমি থানায় নিয়ে গিয়েছিলাম।’ 

আফছারকে নানা ভয়ভীতি ও লোভ দেখিয়ে থানায় জোর করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে মশিউর রহমান খান বলেন, ‘হালিমের ভাইয়েরা আফছারকে ভয় দেখাতে পারে, কিন্তু আমি কিছু করিনি। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সঠিক নয়।’ 

এ বিষয়ে সুজানগর থানার পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান জানান, যেহেতু আফছার নিজে দোষ স্বীকার করেছেন, সেহেতু হালিমের সহযোগী হিসেবে তাঁকেও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকেই আফছারকে আটক করা হয়েছে। পরে চেয়ারম্যানকে ডাকা হয়েছিল, চেয়ারম্যানের সামনেই তিনি স্বীকার করেছেন। এখন চেয়ারম্যান বা কে কী বলল সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। এজাহারে যেটা বলা আছে সেটাই বিষয়। মামলার এজাহারে ঘটনাস্থলে আটকের বিষয় উল্লেখ আছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটের চারটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

বাগেরহাট প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি কার্যালয়ে এ ঘোষণা দেওয়া হয় বলে জানান মনোনয়নপ্রাপ্তরা।

মনোনয়ন পেলেন যাঁরা—বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট) আসনে মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল, বাগেরহাট-২-এ (সদর ও কচুয়া) জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন, বাগেরহাট-৩-এ (মোংলা-রামপাল) জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম ও বাগেরহাট-৪-এ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের সভাপতি সোমনাথ দে।

মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা মোবাইল ফোনে তাঁদের মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিপুকে হত্যার পর ঝুলিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সনাতন ধর্মাবলম্বী যুবক দিপু চন্দ্র দাসকে (২৭) পিটিয়ে হত্যা ও হত্যার পর লাশ গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। এর আগে র‍্যাব বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আজ শনিবার ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়।

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. লিমন সরকার (১৯), মো. তারেক হোসেন (১৯), মো. মানিক মিয়া (২০), এরশাদ আলী (৩৯), নিজুম উদ্দিন (২০), আলমগীর হোসেন (৩৮) ও মো. মিরাজ হোসেন আকন (৪৬)।

ডিবির হাতে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. আজমল হাসান সগীর (২৬), মো. শাহিন মিয়া (১৯) ও মো. নাজমুল।

র‍্যাব ও পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ওই ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝিনাইদহে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে আরোহী নিহত, বন্ধু আহত

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় আজ শনিবার সন্ধ্যায় সড়ক দুর্ঘটনাস্থলে স্থানীয় লোকজন ভিড় করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় আজ শনিবার সন্ধ্যায় সড়ক দুর্ঘটনাস্থলে স্থানীয় লোকজন ভিড় করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝিনাইদহ জেলা শহরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে এক আরোহী নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম তানভির হাসান (৩৬)। এ ঘটনায় তাঁর এক বন্ধু আহত হয়েছেন। আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সদর উপজেলার ক্যাডেট কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

তানভির হাসান শহরের কালিকাপুর এলাকার আবুল বাসার বিশ্বাসের ছেলে। এ ঘটনায় আকাশ হোসেন নামের আরেক আরোহী আহত হয়েছেন। তাঁকে সদর হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।

ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক তানভির হাসান জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বন্ধু আকাশ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে ঝিনাইদহ শহর থেকে শৈলকুপার দিকে যাচ্ছিল তানভির হাসান। পথিমধ্যে ক্যাডেট কলেজের সামনে সড়কের গতিরোধকে ওঠার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন দুই বন্ধু। এ সময় তানভিরকে একটি গাড়ি এসে চাপা দিলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আহত আকাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠান এবং তানভিরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।

তানভিরের বাবা আবুল বাসার বিশ্বাস বলেন, ‘ছেলে তার বন্ধুর মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে বের হয়েছিল। এখন ফিরল লাশ হয়ে। আমার বুক খালি হয়ে গেল।’

আরাপপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহায়তায় নিহত ও আহত যুবকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। মোটরসাইকেলটি হাইওয়ে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নাটোরে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধার

নলডাঙ্গা (নাটোর) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নাটোরের নলডাঙ্গার মাধনগর রেলস্টেশন থেকে অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সান্তাহার জিআরপি পুলিশকে সংবাদ দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা জানান, মাধনগর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে একজন মধ্যবয়সী নারীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা। প্রথমে স্থানীয়রা মনে করেন ওই নারী কোনো কারণে অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে রয়েছেন। পরে অনেক সময় কোনো নড়াচড়া না করায় তাঁদের মধ্যে সন্দেহ হলে তাঁরা ওই নারীকে ডেকে তোলার চেষ্টা করেও পারেননি। পরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় চিকিৎসকের মাধ্যমে নিশ্চিত হন ওই নারী মারা গেছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সান্তাহার জিআরপি পুলিশ।

সান্তাহার জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, তাঁরা মাধনগর রেলস্টেশনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে সেখানে একটি টিম পাঠিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। মরদেহের পরিচয় শনাক্তের জন্য কাজ করছে পুলিশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত