Ajker Patrika

বিএসএফ খুনি ও মানবতাবিরোধী বাহিনী: নাহিদ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহ পৌর শহরের পায়রা চত্বরে জাতীয় নাগরিক কমিটির জুলাই পদযাত্রা ও পথসভায় বক্তব্য দেন নাহিদ ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝিনাইদহ পৌর শহরের পায়রা চত্বরে জাতীয় নাগরিক কমিটির জুলাই পদযাত্রা ও পথসভায় বক্তব্য দেন নাহিদ ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা বলছি। যেই জুলাইয়ের প্রেক্ষাপট, সনদ শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের অধিকার ও নিরাপত্তার কথা বলবে। জুলাই সনদ আমরা আদায় করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ। আজ ঝিনাইদহবাসীর কাছ থেকে অভূতপূর্ব ভালোবাসা পেয়েছি। জুলাই অভ্যুত্থানকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে।’

আজ বুধবার সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ পৌর শহরের পায়রা চত্বরে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা ও পথসভায় দেওয়া বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন।

নাহিদ আরও বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে ২৫ বছরে সীমান্তে বিএসএফ ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করেছে। বিএসএফ সীমান্তরক্ষী নয়, একটি খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তারা শুধু খুন করতে চায়। খুন করা তাদের নেশা। বিএসএফ মানবতাবিরোধী বাহিনী। আমরা সীমান্ত হত্যা মেনে নেব না। আমরা ভারত সরকারকে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে মর্যাদাশীল আচরণ করুন।’

ঝিনাইদহের সন্তান তারেক রেজা ঢাকায় প্রথম ছয় শহীদের জানাজা পড়িয়েছিলেন জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘আমরা তাঁকে আপনাদের হাতে তুলে দিয়ে গেলাম। তিনি ঝিনাইদহবাসীর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আপনাদের উন্নয়নে কাজ করতে চান। আপনারা এনসিপির সঙ্গে থাকেন। এনসিপি আপনাদের অধিকার আদায়ে কাজ করবে। এনসিপি জনগণের রাজনীতি করবে এবং সব সময় জনগণের পাশে থাকবে।’

দেড় মিনিটেই বক্তব্য শেষ করেন এনসিপি আহ্বায়ক।

এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘২৪ আমরা একটি খুনি শাসকের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি, কিন্তু শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। পুলিশ, নির্বাচন কমিশনসহ সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। দেশের সব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার জন্য সব ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশে এমন রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে ধর্মের নামে কোনো হানাহানি বা শত্রুতা থাকবে না।’

এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব তারেক রেজা বলেন, ‘স্বৈরাচারী পাগল খুনি জুলাই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যার প্রমাণ ইতিমধ্যে বিবিসি পেয়েছে। ফলে খুনি শেখ হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা কোটা সংস্কারের জন্য মাঠে নেমেছিলাম। যার পথ ধরে আজ স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে। সেই সংস্কারের কথা বললে একটি দল এমন ভাব করে, মনে হয়, তারা কিছুই বোঝে না। সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।’ এ সময় তিনি ঝিনাইদহবাসীর দোয়া ও পরামর্শ চান।

দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ। ৫ আগস্টের পর থেকে দেখছি, একটি দল আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তারা সংস্কার চায় না। তারা নির্বাচন চায়। আমরা বিচার ও সংস্কার করে নির্বাচন চাই। আমরা খুনি হাসিনার বিচার চাই। একটি দল বলছে সংস্কার ও বিচার নির্বাচিত হয়ে এসে করবে—এমন ধোঁকাবাজি অনেক হয়েছে। আপনারা নির্বাচিত হয়ে সংস্কার ও বিচার করবেন, এর নিশ্চয়তা কীভাবে পাব। সংস্কার দ্রুত করুন, না হলে ছাত্ররা আবার রাস্তায় নেমে আসবে।’

হাসনাত আরও বলেন, ‘পুলিশ ভাইয়েরা জুলাই আন্দোলনের দায় আপনাদেরও নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, সব পুলিশ কিন্তু খারাপ নয়। আপনার ভাই আমার ভাই পুলিশে চাকরি করে। যাঁরা আওয়ামী লিগের পুলিশ ছিলেন, যাঁরা ছাত্র-জনতার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের জুলাই হত্যার দায় নিতে হবে।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে এই সংগঠক বলেন, ‘এখানে যে সাংবাদিকেরা উপস্থিত আছেন, তাঁদের অনেকে বেতন পান না। অনেকে ১০ থেকে ৫ হাজার টাকা বেতন পান। অনেকের হাতে আবার বুম ধরিয়ে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়। আপনাদের মুক্তির কথা বলছি। আপনারা আর কারও কাছে বিক্রি হবেন না। আপনাদের কথা বলতে হবে। যেভাবে জুলাই আন্দোলনে বলেছিলেন। আমরা আপনাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে চাই।’

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পার্টির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়াই, শহীদের বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াই, তখন আমরা জুলাই আন্দোলনে ফিরে যাই।’ তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছিল। তাঁর বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

সভায় জুলাই আন্দোলনে শহীদ রাকিব হোসেনের মা ও বাবা বক্তব্য দেন।

মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত করেছি। তবে দীর্ঘ সময় পার হলেও হত্যার বিচার ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার হয়নি। জুলাই সনদ তৈরি হয়নি। আমরা সংস্কার চাই, হত্যাকারীদের বিচার চাই, জুলাই সনদ চাই। আমরা পুলিশকে ভয় পাই না। আমরা সেনাবাহিনীকে ভয় পাই না। আমরা জনতার ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। জনতা আমাদের সাহস, তা প্রমাণ করেছে আজ ঝিনাইদহের মানুষ। আমরা সন্ত্রাস-দুর্নীতির কাছে মাথা নত করতে চাই না। আমাদের শক্তি সততা।’

পদযাত্রা ও পথসভায় আরও অংশ নেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ জেলা আহ্বায়ক আবু হুরাইয়া, জেলা সদস্যসচিব সাহারিয়ার অভিক, সদর উপজেলা আহ্বায়ক সৌরভ আহম্মেদ শুভ, মহেশপুর উপজেলা আহ্বায়ক হামিদুর রহমান রানা, কোটচাঁদপুর উপজেলা আহ্বায়ক হৃদয় আহম্মেদ প্রমুখ।

এর আগে বিকেলে এনসিপির প্রতিনিধিরা চুয়াডাঙ্গা থেকে ঝিনাইদহ জেলা শহরের জোহান পার্কে আসেন। সেখানে তাঁরা শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। বিকেল ৬টার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রার সময় রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ এসসিপি নেতাদের শুভেচ্ছা জানান। পদযাত্রা নিয়ে শহরের পায়রা চত্বরে সমাবেশস্থলে আসেন। মাগরিবের নামাজের পর পথসভার মঞ্চে আসেন নেতারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

জটিল ও সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন খালেদা জিয়া: এ জেড এম জাহিদ

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জীবননগরে সেনা-পুলিশের যৌথ অভিযানে বিদেশি পিস্তলসহ যুবক গ্রেপ্তার

জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি 
অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার যুবক। ছবি: সংগৃহীত
অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার যুবক। ছবি: সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি গুলিসহ গাজী জাহিদ হাসান (৩৬) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার গাজী জাহিদ হাসান পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং তিনি মো. নুরুল ইসলামের ছেলে।

আজ রোববার ভোর ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন সৌমিক আহমেদ অয়নের (৩৬ এডি) নেতৃত্বে জীবননগর মডেল মসজিদের পাশে গাজী জাহিদ হাসানের মালিকানাধীন সাইকেলের শোরুমে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখান থেকে অস্ত্র ও অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার করা মালপত্রের মধ্যে রয়েছে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি গুলি, একটি স্মার্টফোন, ১১টি সিমকার্ড এবং একটি ব্যাটন।

গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জীবননগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রিপন কুমার দাস বলেন, এই ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

জটিল ও সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন খালেদা জিয়া: এ জেড এম জাহিদ

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় দুর্বৃত্তদের হামলায় দুই যুবক গুরুতর আহত

খুলনা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

খুলনায় দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের হামলায় দুই যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। শনিবার রাতে নগরীর লবণচরা থানাধীন আশিবিঘা ঢালাই সড়কে এই ঘটনা ঘটে।

আহত দুজন হলেন মো. রনি ও সজিব। তাঁদের দুজনকেই গুরুতর অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশিবিঘা ঢালাই সড়কে রনি ও সজিবের ওপর ৮-১০ জনের একটি সশস্ত্র দল অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় রনির কপালের মাঝখানে এবং বাঁ হাত ও ডান হাতের বাহুতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লাগে।

এ সময় দুর্বৃত্তরা রনির সঙ্গে থাকা বন্ধু সজিবকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তাঁর মাথা ফেটে যায়। তাঁদের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় আহত দুজনকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

লবণচরা থানার ওসি (তদন্ত) মো. ইউসুফ আলী বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এই ঘটনায় এখনো আহত ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

জটিল ও সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন খালেদা জিয়া: এ জেড এম জাহিদ

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরিষাখেতে ৮৫টি মৌ-বাক্স, এক সপ্তাহ পর শুরু হবে মধু সংগ্রহ

রাকিবুল ইসলাম, গাংনী (মেহেরপুর) 
গাংনী উপজেলার তেরাইল মাঠ থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার তেরাইল মাঠ থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌচাষিরা। সরিষাখেতের পাশে মৌ-বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহের প্রস্তুতি নিয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে তেরাইল কলেজের সামনের সরিষাখেতে বসানো হয়েছে ৮৫টি মৌ-বাক্স।

সরিষা ফুলের হলুদ আভা আর মৌমাছির গুনগুন শব্দে পুরো এলাকা হয়ে উঠেছে মনোরম। এই দৃশ্য দেখতে রাস্তায় চলাচলকারী পথচারী ও আশপাশের গ্রামের মানুষ ভিড় করছে। অনেকেই দাঁড়িয়ে দেখছেন মৌচাষিদের কাজ।

মৌচাষিরা জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে মধু সংগ্রহ শুরু হবে। তাঁদের ধারণা, এই খেত থেকেই প্রায় ২০ মণ মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাধারণত তাঁরা এই ধরনের মধু সংগ্রহের দৃশ্য খুব কমই দেখেন। সরাসরি বাক্সে মধু উৎপাদনের প্রক্রিয়া দেখে তাঁরা মুগ্ধ। তাঁদের মতে, সরিষা ফুল থেকে সংগৃহীত মধু স্বাভাবিকভাবেই বিশুদ্ধ হয় এবং ক্রেতারাও চোখের সামনে দেখে মধু কিনতে পারেন।

মধু সংগ্রহ দেখতে আসা সাজেদুর রহমান বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি সরিষাখেতের পাশে মৌ-বাক্স বসানো। এত বড় সরিষার মাঠ আশপাশে আর কোথাও নেই। মৌচাষিদের কাছে শুনেছি, এখান থেকে প্রায় ২০ মণ মধু সংগ্রহ করবেন তাঁরা।’

মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘দোকান থেকে মধু কিনলে অনেক সময় খাঁটি কি না বোঝা যায় না। কিন্তু এখানে সরাসরি সংগ্রহ করা মধু নিঃসন্দেহে খাঁটি।’

মৌচাষি মো. সোহান আলী বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও এখানে এসেছি। কারণ, এই এলাকায় প্রচুর সরিষার আবাদ হয়। এবার ৮৫টি বাক্স বসানো হয়েছে। আশা করছি, প্রায় ২০ মণ মধু সংগ্রহ করতে পারব। সাধারণত তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে মৌমাছিরা ভালোভাবে মধু সংগ্রহ করতে পারে।’

আরেক মৌচাষি মো. কামাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কাঠ দিয়ে তৈরি বিশেষ বাক্সে রানি মৌমাছি রাখা হয়। বিস্তীর্ণ সরিষাখেতের পাশে এসব বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করা হয়। এখান থেকে ৮৫টি বাক্সে প্রায় ২০ মণ মধু পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। আমরা কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে মধু বিক্রি করি।’

গাংনী উপজেলার তেরাইল মাঠ থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার তেরাইল মাঠ থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘বিশেষ করে সরিষা ফুলের মধু অত্যন্ত বিশুদ্ধ। ডিসেম্বরের শুরু থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মধু সংগ্রহের মৌসুম চলে। সরিষা ফুল শেষ হলে আমরা অন্য ফুলের এলাকায় চলে যাই। আগামী ৩০ তারিখের (৩০ ডিসেম্বর) পর থেকে এখানে পুরোপুরি মধু সংগ্রহ শুরু হবে।’

গাংনী উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরিষা ফুল থেকে মধু উৎপাদনের প্রধান মৌসুম। চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে। বাক্স পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা।

ইমরান হোসেন আরও বলেন, মধু স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। পবিত্র কোরআনেও মধুর উপকারিতার কথা উল্লেখ রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগও মধু ও কালিজিরা খাওয়ার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

জটিল ও সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন খালেদা জিয়া: এ জেড এম জাহিদ

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কর্মবিরতিতে কার্যক্রম বন্ধ: মাসব্যাপী টিকাবঞ্চিত শিশুরা

খোরশেদ আলম সাগর, লালমনিরহাট
কর্মবিরতিতে কার্যক্রম বন্ধ: মাসব্যাপী টিকাবঞ্চিত শিশুরা

ইপিআই সম্প্রসারণ কর্মসূচির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে নবজাতকসহ শিশুদের ১০টি রোগ প্রতিরোধের টিকাদান কার্যক্রম। টানা এক মাসের কর্মবিরতিতে টিকাবঞ্চিত হচ্ছে জেলার হাজারো শিশু।

উচ্চতর বেতন স্কেলের দাবিতে সারা দেশের মতো লালমনিরহাটেও কর্মবিরতি চলছে গত ২৯ নভেম্বর থেকে। দীর্ঘ এক মাস কর্মসূচি চলমান থাকায় বন্ধ রয়েছে টিকাদান কার্যক্রম। তাঁদের কর্মবিরতিতে মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়লেও কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই।

জানা গেছে, পোলিও, হুপিং কাশি, যক্ষ্মা, ধনুষ্টংকার, হাম, ডিপথেরিয়া, রুবেলাসহ ১০টি মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে জন্মের পর থেকে ১৮ মাস বয়সে নির্ধারিত সময়ে ১১টি ভ্যাকসিন প্রদান করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে এ ১০টি রোগ নির্মূল করতে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে এ ভ্যাকসিন প্রদান করছে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইপিআই সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করছেন স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকেরা। এ জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে ২৪টি টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে উপজেলাপ্রতি ৫-৬শ শিশু এসব কেন্দ্রে বিনা মূল্যে ভ্যাকসিন পেয়ে থাকে। এ জন্য শিশুর জন্মের পরেই টিকা কার্ড প্রদান করা হয় এবং কার্ডেই উল্লেখ থাকে, কখন কখন টিকা পাবে শিশুরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন নিতে হয়। ভ্যাকসিন টিকা কার্ড ছাড়া মেলে না শিশুর জন্মনিবন্ধন সনদ। ফলে জন্মনিবন্ধনেও ভাটা পড়েছে।

ইপিআই কার্যক্রম সফল হওয়ায় একাধিকবার আন্তর্জাতিক পুরস্কারও গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। এ পুরস্কারপ্রাপ্তির পরে ভ্যাকসিন হিরো হিসেবেও বেশ আলোচনায় আসেন ইপিআই কর্মসূচির মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নকারী স্বাস্থ্য সহকারীরা। আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্তির সেই কার্যক্রম আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে হিরোদের কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিতে। ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এমন মারাত্মক ১০টি রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।

আদিতমারীর বাসিন্দা বুলবুল আহমেদ বলেন, জন্মের পরপরই শিশুকে ভ্যাকসিন দিতে হয়। এক মাস টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ থাকায় আমার শিশু ভ্যাকসিন নিতে পারেনি। আমি এটা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি। স্বাস্থ্য সহকারীরা এক মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন। তাঁদের দ্রুত মাঠে কার্যক্রম শুরু করতে নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ হেল্থ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের লালমনিরহাটের সাবেক সভাপতি সোহেল মাসুদ বলেন, ‘একই যোগ্যতার উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তারা ১৮তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। অথচ আমরা ভ্যাকসিন হিরোরা আজও ১৮তম গ্রেডে রয়েছি। আমাদের পরিশ্রমে দেশ আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেলেও আমরা অন্ধকারেই রয়েছি।’

সংগঠনটির সহসভাপতি হালিমা আক্তার বলেন, ‘রোধ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে শিশুদের সুরক্ষায় আমরা মাঠপর্যায়ে কাজ করে আসছি। অথচ আমাদের উপযুক্ত মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। একই যোগ্যতা নিয়ে অনেক দপ্তরের কর্মীরা উচ্চতর বেতন-ভাতা ভোগ করছেন। অথচ আমরা বঞ্চিত। সরকার আমাদের দাবি মেনে

নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন করছে না। সরকার দ্রুত আমাদের দাবি মেনে নিলে আমরা পুনরায় কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাব।’

এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলার সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতির কারণে গোটা দেশে এক মাস ধরে ইপিআই কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে শিশুরা মারাত্মক ১০টি রোগের ১১টি ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত রয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ টিকাদান কার্যক্রম সচল করতে ঊর্ধ্বতন মহলের নজর দেওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. আবদুল হাকিম বলেন, ইপিআই কর্মসূচির কর্মীরা সারা দেশে উচ্চতর গ্রেডের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এ নিয়ে সভাও করা হয়েছে। তাঁদের কর্মবিরতি দীর্ঘ সময় হলে শিশুদের সুরক্ষায় খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

জটিল ও সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন খালেদা জিয়া: এ জেড এম জাহিদ

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত