Ajker Patrika

দ্বারে দ্বারে নৌকার বাবুল, স্বতন্ত্র প্রার্থী রণজিতের সরে দাঁড়ানোর গুঞ্জন

যশোর প্রতিনিধি
দ্বারে দ্বারে নৌকার বাবুল, স্বতন্ত্র প্রার্থী রণজিতের সরে দাঁড়ানোর গুঞ্জন

যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর) আসনে ভোটের মাঠে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক বাবুল। এরপরও প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। দলীয় নেতা–কর্মীর পাশাপাশি বিভিন্ন স্তরের মানুষ তাঁর পক্ষে মাঠে নেমেছেন। এই আসনে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ থাকা বর্তমান সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়ও দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তবে বাবুলের প্রার্থিতা বহালে আপিল বিভাগের আদেশের পর নির্বাচনী এলাকায় রণজিতের সরে দাঁড়ানোর গুঞ্জন উঠেছে।

এ বিষয়ে রণজিত কুমার রায়ের কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি। চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে রণজিত কুমার রায়ের ব্যক্তিগত সহকারী তপন বিশ্বাস নিজের ফেসবুক পেজে নির্বাচন থেকে রণজিত কুমার রায়ের সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়ালেন যশোর-৪ এর বর্তমান এমপি রণজিত কুমার রায়।’ তবে, সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছেন, এ আসনে এবার ভোটের মাঠে জায়গা করে নিতে শক্ত লড়াইয়ে রয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী জহুরুল হক।

যশোর-৪ আসনে এবার আটজন নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সচিব সন্তোষ অধিকারীর মনোনয়ন বাতিল হয়। এখন নৌকার এনামুল হক বাবুল, স্বতন্ত্র রণজিত কুমার ও জাপার জহুরুল হক ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন তৃণমূল বিএনপির শাব্বির আহমেদ, জাকের পার্টির লিটন মোল্যা, বিএনএমের সুকৃতী কুমার মণ্ডল ও ইসলামী আন্দোলনের ইউনুস আলী।

রিটার্নিং কর্মকর্তার থেকে মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হকের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ তুলে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী সুকৃতি কুমার মণ্ডল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রণজিত কুমার রায়। শুনানি শেষে ১৩ ডিসেম্বর এনামুল হকের মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে ও প্রার্থিতা ফিরে পেতে এনামুল হক ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। শুনানি নিয়ে ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এনামুল হক। এর ওপর ১৯ ডিসেম্বর চেম্বার আদালতে শুনানি হয়। শুনানি নিয়ে সেদিন চেম্বার আদালত এনামুল হকের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। তার প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত এবং রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করা হয়। ফলে এনামুল হকের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ খোলে। ১৯ ডিসেম্বরের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে ওই দুই প্রার্থী আবেদন করেন।

অন্যদিকে রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে এনামুল হক লিভ টু আপিল করেন। গতকাল মঙ্গলবার এই লিভ টু আপিল এবং চেম্বার আদালতের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে অপর দুই প্রার্থীর করা আবেদন একসঙ্গে শুনানির জন্য ওঠে। এনামুল হকের প্রার্থিতা বহালে চেম্বার আদালতের দেওয়া আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

নেতা–কর্মীরা জানিয়েছেন, যশোর-৪ আসনে ২০০৮,২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রণজিত কুমার রায়। এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন রণজিত। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তাঁর প্রতীক ঈগল। আর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক। যশোর-৪ আসনে গিয়ে দেখা যায়, নৌকার প্রার্থী বাবুল ও তাঁর পক্ষে দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছুটে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। কর্মী সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও পথসভা করে ভোটারদের কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরছেন তাঁরা। তবে কোথাও তেমন চোখে পড়েনি এমপি রণজিতের কোনো নির্বাচনী তৎপরতা। নির্বাচনী এলাকার কোনো জায়গায় পোস্টার যেমন সাঁটানো হয়নি, তেমনি রণজিত করেননি কোনো সভা-সমাবেশও। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের ইউনুস আলীরও কোনো প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়েনি। তবে মাঠে রয়েছেন জাপার জহুরুল হক। তৃণমূল বিএনপির শাব্বির আহমেদ ও বিএনএমের সুকৃতী মণ্ডলের কিছু জায়গায় পোস্টার দেখা গেছে। জানা গেছে, তারা ভোটের মাঠে শক্ত জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে জাকের পার্টি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় দলটির প্রার্থী লিটন মোল্যার এখন তৎপরতা নেই।

স্থানীয় সূত্র বলছে, এমপি রণজিত বিভাজন ও অবহেলা করলেও দলের ত্যাগী নেতাদের পাশে ছায়া হয়ে থেকেছেন অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এনামুল হক বাবুল। দল তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ায় এবার আশায় বুক বেঁধেছেন এলাকার মানুষ। সবাই মিলে নৌকাকে জয়ী করতে বদ্ধপরিকর। বাঘারপাড়ার খাজুরা এলাকায় মাছুম রেজা খান বলেন, ‘তিনবারের এমপি রণজিত রায় মানুষের কোনো কাজে আসেননি। তিনি স্কুল-কলেজের নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রণজিত কুমার এবার নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা জেনেশুনেই তাকে এবার মনোনয়ন দেননি।’

লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জহুরুল হক বলেন, ‘এই আসনে দুবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিতেছিলেন। আমি শতভাগ আশাবাদী, প্রকৃত ভোট হলে এবারও লাঙ্গল জিতবে।’

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এনামুল হক বাবুল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা যে আশা নিয়ে আমাকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছেন, আমি জনগণের ভোটে জয়লাভ করে আসনটি অবশ্যই তাঁকে উপহার দিতে চাই। আমার সঙ্গে জনগণের ভালোবাসা আছে। ভোটে নৌকার জয় হবে ইনশাআল্লাহ। সংসদে যেতে পারলে এই অঞ্চলের মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে কাজ করে যাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫ দিন সূর্যহীন চুয়াডাঙ্গা: মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে বিপন্ন জনজীবন

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। হিমাঙ্কের কাছাকাছি নামা তাপমাত্রার সঙ্গে টানা পাঁচ দিন সূর্যের দেখা না মেলায় স্থবির হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। আজ বুধবার চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা জেলাজুড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সৃষ্টি করেছে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। চলতি শীত মৌসুমে এটিই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ ছাড়া জেলায় ২৭ ডিসেম্বর থেকে একটানা সূর্যের দেখা মেলেনি। ২৭ ডিসেম্বর ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি এবং সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করলেও বুধবার একলাফে তাপমাত্রা কমেছে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৬ শতাংশ হওয়ায় শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে, যা মানুষের জীবনযাত্রায় হঠাৎ করে চরম দুর্ভোগ ডেকে এনেছে।

জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু এবং ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সেই হিসাবে চুয়াডাঙ্গায় এখন মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে এবং এই পরিস্থিতি আরও দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। রাস্তাঘাটে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে।

চা-দোকানি আলফাজ আলী বলেন, ‘ঠান্ডার চোটে সকালে দোকান খোলাই দায় হয়ে পড়েছে। কুয়াশায় মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না, বেচাকেনাও খুব কম।’

দিনমজুর হারেজ আলী বলেন, ‘হাতে-পায়ে বরফের মতো ঠান্ডা লাগে। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না, তাই এই শীতেও বের হতে হচ্ছে।’

সদর উপজেলার একটি ইটভাটার শ্রমিক আফতাব হক বলেন, ‘খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হয়। বাতাসের ঝাপটায় হাত অবশ হয়ে আসে, কাজ এগোয় না।’

টানা কুয়াশা ও সূর্যের অনুপস্থিতিতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। হাটকালুগঞ্জ গ্রামের ধানচাষি ফরজ আলী জানান, তীব্র ঠান্ডায় ধানের বীজতলা লালচে হয়ে যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, বীজতলা রক্ষায় সকালে দড়ি টেনে কুয়াশার পানি ঝরিয়ে দিতে হবে এবং প্রয়োজনে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ফসল সুরক্ষায় ছত্রাকনাশক ও পরিমিত সেচ জরুরি।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শিশু বিশেষজ্ঞ আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান, প্রতিদিন আউটডোরে শত শত শিশু ও বৃদ্ধ রোগী নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা নিতে আসছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। এ সময় তিনি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এনসিপির প্রার্থী ডা. মাহমুদা মিতুকে হত্যার হুমকি

ঝালকাঠি প্রতিনিধি 
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. মাহমুদা মিতু। ছবি: সংগৃহীত
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. মাহমুদা মিতু। ছবি: সংগৃহীত

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. মাহমুদা মিতুকে পুড়িয়ে ও কুপিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই অভিযোগ করেন।

ফেসবুক পোস্টে ডা. মাহমুদা মিতু লেখেন, ‘আজকেও (+৯৬৬৫৪৮৬৮০৪৩৬) এই নম্বর থেকে হত্যার হুমকি আসছে। আবার নতুন করে প্রতিদিন হত্যার হুমকি শুরু হয়েছে। পুড়িয়ে মারবে, কুপিয়ে মারবে—এ ধরনের কথা বলছে। আপনাদের বিচলিত করতে চাই না বলে এত দিন জানাচ্ছিলাম না। কিন্তু জোটে ইলেকশন করব—এ খবর জানার পর একদম বানোয়াট ও উদ্ভট গল্প বানিয়ে চরিত্র হনন শুরু করেছে। জোটের খবর আওয়ামী লীগের পুচ্ছে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।’

মাহমুদা মিতু লেখেন, ‘আমি ভয় পাচ্ছি না, বিচলিতও নই। আপনারাও বিচলিত হবেন না। ওদের লেখাগুলো পড়ার দরকার নেই। আল্লাহ ভরসা। আমার স্বামী বলছে—এটা তো শুরু, সামনে এআই ভিডিও, ন্যুড ও এডিটেড ছবি ছড়ানোর চেষ্টাও হতে পারে। দোয়ার আরজি রইল।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মাহমুদা মিতু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এর আগেও বিভিন্ন সময় নানা ধরনের হুমকি এসেছিল। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর এই প্রথম এমন হুমকি এসেছে।’ তিনি জানান, শুধু হুমকি নয়, তাঁকে নিয়ে মিথ্যা বদনাম রটানোর চেষ্টাও চলছে।

ডা. মাহমুদা মিতুর ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত
ডা. মাহমুদা মিতুর ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত

আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো আইনি সহায়তা নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত এ ধরনের হুমকি-ধমকি আসছেই।’

রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে রাজশাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহীতে কনকনে শীতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টায় কয়েকজন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীতে কনকনে শীতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টায় কয়েকজন। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুয়াশার চাদরে মোড়া রাজশাহী কাঁপছে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায়। দিনের তাপমাত্রা ক্রমেই নেমে যাওয়ায় জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তবে কনকনে শীতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে সময় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ছিল শতভাগ। ফলে শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

এদিকে তিন দিন ধরে পদ্মার তীরের এই জেলায় সূর্যের দেখা নেই বললে চলে। ভোর থেকে সকাল, এরপর দুপুর পেরিয়েও কুয়াশার আস্তরণ কাটছে না। হিমেল বাতাস শরীর ছুঁয়ে গেলেই কাঁপুনি ধরছে। প্রতিদিন যেন শীত নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে জনজীবনে।

সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে রাজশাহীর দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষ। কাজ কমে যাওয়ায় আয় নেই। আবার শীত নিবারণের পর্যাপ্ত গরম কাপড়ও নেই। শীতবস্ত্রের অভাবে ছিন্নমূল মানুষকে কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করে রাত কাটাতে হচ্ছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে খড়কুটো জ্বালিয়ে শরীর গরম রাখার চেষ্টা করছেন।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা থেকে ভোরে কাজের আশায় রাজশাহী নগরের তালাইমারী এলাকায় আসেন দিনমজুর নাজমুল। কিন্তু শীতের কারণে কাজের দেখা মেলেনি। তিনি বলেন, ‘আজ খুব বেশি ঠান্ডা। মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না, তাই কাজও পাওয়া যায়নি। আগে যেখানে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন কাজ মিলত, এখন এই শীতে সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনই কাজ পাওয়া যায় না।’

রিকশাচালক জাকির আলী বলেন, ‘হুহু করে ঠান্ডা বাতাস বইছে। রিকশা চালাতে গেলে শরীর জমে আসে। যাত্রী কম, আয়ও কম। খুব কষ্টে দিন কাটছে। কয়দিন এই অবস্থা থাকবে কে জানে!’

এদিকে তীব্র শীতের প্রভাব পড়েছে নগরজীবনেও। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। কুয়াশা আর ঠান্ডার ভয়ে মানুষ দ্রুত ঘরে ফিরছে। আর সন্ধ্যা নামলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ দোকানপাট। যেন পুরো শহর আগেভাগেই নিস্তব্ধ হয়ে পড়ছে।

গ্রামাঞ্চলে শীতের দাপট আরও বেশি। রাজশাহীর বানেশ্বর এলাকার বাসিন্দা তুষার আলম জানান, শহরের তুলনায় গ্রামে শীত অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে। খোলা মাঠ, নদী আর কুয়াশার কারণে ঠান্ডা যেন হাড়ে হাড়ে ঢুকে পড়ছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিক থেকে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। বুধবার ভোরের পর থেকে কুয়াশার আধিক্য দেখা যায়। কুয়াশার কারণে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মতো অনুভূতি হচ্ছে। রাজশাহীসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এই পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন বিরাজ করতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে বিপর্যস্ত মেহেরপুরের জনজীবন, তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
গাংনীতে ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে সড়ক ও আশপাশের এলাকা। হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনীতে ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে সড়ক ও আশপাশের এলাকা। হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেরপুর জেলায় ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এর সঙ্গে বইছে ঝিরি ঝিরি বাতাস। সকাল থেকে সূর্যের দেখা নেই। ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে সড়ক ও আশপাশের এলাকা। কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু অবস্থায় পড়েছে মানুষ।

কুয়াশা উপেক্ষা করেই মানুষ নিজ নিজ কাজে বের হচ্ছে। যানবাহনগুলো ধীরগতিতে কুয়াশা ভেদ করে চলাচল করছে। দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ জীবিকার তাগিদে কাজে ছুটছেন। তবে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ সকালে তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চারদিক এত কুয়াশায় ঢাকা যে অনেক সময় রাস্তা স্পষ্ট দেখা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে রাস্তায় বের হতে ভয় লাগছে। এর সঙ্গে তীব্র শীত ও ঠান্ডা বাতাসে হাত-পা ঝিনঝিন করছে।

মাঠে কাজ করতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, চরম শীত আর কুয়াশার মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছে। সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস বইছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে শিশু ও বয়স্কদের।

আরেক শ্রমিক শিপন আলী বলেন, ‘আমরা দিনমজুর। কাজ না করলে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। আজ শীত খুব বেশি। হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে, কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে।’

অটোচালক বকুল হোসেন জানান, ভোর থেকেই ঘন কুয়াশায় মাঠ ও রাস্তা ঢেকে গেছে। পেটের তাগিদে বের হতে হলেও ধীরে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। দুই দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি।

ঝিরি ঝিরি বাতাস আর ঘন কুয়াশার মধ্যেই জমিতে কাজ করছেন এক কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝিরি ঝিরি বাতাস আর ঘন কুয়াশার মধ্যেই জমিতে কাজ করছেন এক কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা

নছিমনচালক হিরোক ইসলাম বলেন, ‘ভোরে মাছ আনতে বের হতে হয়। কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনার ভয় বেশি। ধীরে চালালেও ভয় কাটে না। শীত আর বাতাসে হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে।’

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জামিনুর রহমান জানান, আজ সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। এমন আবহাওয়া আরও দু-এক দিন থাকতে পারে। তবে দুপুরের পর আকাশ কিছুটা পরিষ্কার হতে পারে।

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, ঘন কুয়াশা ও শীত থাকলেও এখন পর্যন্ত মাঠের ফসলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা নেই। কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, মেহেরপুর জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকায় পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া অফিসের তথ্যই মেহেরপুর জেলার তাপমাত্রা হিসেবে ধরা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত