Ajker Patrika

কালো শেভ্রোলেটে চড়ে আসা তাজউদ্দীনের স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভায় ভাষণ

জাহিদ হাসান, যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬: ১৭
কালো শেভ্রোলেটে চড়ে আসা তাজউদ্দীনের স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভায় ভাষণ

১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর বেলা ৩টা। বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ যশোর ইনস্টিটিউটের মাঠ। প্রস্তুত মাঠের ভেতরের মঞ্চটিও। এমন সময় লাল-সবুজের পতাকাবাহী কালো রঙের শেভ্রোলেট সিডেন কারে চড়ে এলেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। সঙ্গে ছিলেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা।

প্রধানমন্ত্রীসহ নেতারা যখন মঞ্চে উঠলেন, উপস্থিত জনসাধারণ দাঁড়িয়ে পতাকা নাড়িয়ে মুহুর্মুহু জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে তাঁদের স্বাগত জানায়। জনসভায় তাজউদ্দীন আহমদ প্রায় ২০ মিনিটের বক্তব্যে সবাইকে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার সেই দিনের জনসভা শেষ করে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে আবার কলকাতায় ফিরে যান তাজউদ্দীন আহমদসহ নেতারা। স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভার সেদিনের সেই মাঠে দাঁড়িয়ে দৈনিক আজকের পত্রিকাকে সেই স্মৃতি রোমন্থন করেন জনসভার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন দোদুল।

জনসভায় উপস্থিত জনতার একাংশ। ছবি: আফজাল হোসেন দোদুলবাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনে হানাদার বাহিনীর কবলমুক্ত যশোরে স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জনসভায় প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আর ধ্বংস নয়, যুদ্ধ নয়। এ মুহূর্তে কাজ হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা।’ সেদিন তিনি সর্বস্তরের মানুষকে স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জনসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ফণীভূষণ মজুমদার, রওশন আলী, মোশাররফ হোসেন, তবিবর রহমান সরদার, এম আর আকতার মুকুল, জহির রায়হান প্রমুখ।

সেদিন মঞ্চের পাশে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল। তিনি সেই দিনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর দুপুরের পর থেকে যশোরসহ বিভিন্ন জেলার মানুষেরা এই জনসভায় আসতে থাকে। কারও কারও হাতে ছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। আড়াইটার দিকে কালো রঙের শেভ্রোলেট সিডেন কারে চড়ে কলকাতা থেকে যশোরে আসেন তাজউদ্দীন আহমদ। তাঁর আগে ছিল কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রমের খোলা জিপ গাড়িটি। পেছনে ছিল মিত্র বাহিনীর বহর। প্রথম সেদিন তাঁদের গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। বেলা ৩টার দিকে মাঠে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও যশোরের নেতারা। ৩টা থেকে শুরু হওয়া এই জনসভা শেষ হয় সন্ধ্যায়। তারপর যশোর থেকে আবার বেনাপোল দিয়ে কলকাতা চলে যান তাঁরা।

সেই জনসভা মঞ্চ যশোর ইনস্টিটিউট মাঠ এখন ‘স্বাধীনতা উন্মুক্ত মঞ্চ’। ছবি: আজকের পত্রিকাতাজউদ্দীন আহমদ সেদিন বক্তব্যে বলেন, এই দেশ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হবে। ইসলামিক ও স্বাধীনতাবিরোধী দলগুলো রাজনীতি করতে পারবে না। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। এই জনসভার মাধ্যমে যশোরের তৎকালীন ডিসি ওয়ালি উল ইসলাম এবং কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন ঘোষালকে নির্দেশ দেন, আইনশৃঙ্খলার যেন কোনো অবনতি না হয়। ১৫ থেকে ২০ মিনিট বক্তব্য দেন তিনি।

তাজউদ্দীন যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন হঠাৎ খুলনার দিক থেকে কামানের শব্দ ভেসে আসে বলে জানান দোদুল। এ জনসভায় শুধু যশোর নয়; দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাজউদ্দীন দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নেন এই জনসভা থেকে। এরপর নজরুল ইসলাম, মোশারফ হোসেন বক্তব্য দেন। দোদুল বলেন, জনসভার কথা বেশি প্রচার না হওয়ার কারণে লোকজন কম এসেছিল।

স্বাধীনতার পর যশোর ইনস্টিটিউট মাঠে যে মঞ্চে জনসভা হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে সেটির নামকরণ হয় ‘স্বাধীনতা উন্মুক্ত মঞ্চ’। দীর্ঘদিন ধরে এই মঞ্চটি অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকার পর স্বাধীনতার ৫০ বছর পর ২০২২ সালে যশোর জেলা পরিষদ মঞ্চটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুনর্নির্মাণ করে। বর্তমানে সেটি দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। এ বিষয়ে আফজাল হোসেন দোদুল বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল মঞ্চটি। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এখন এটি দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। তাতে আমরা খুশি।’ তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দিনটি বাঙালি জাতির একটি স্মরণীয় দিন। আর যশোরবাসীর জন্য দিনটি গৌরব ও অহংকারের। তবে সেই ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার কোনো উদ্যোগ নেই সরকার বা জেলা প্রশাসনের।

মুক্ত স্বদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম এ জনসভার খবর সংগ্রহের জন্য উপস্থিত ছিলেন লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক পিটার গিল, নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সিডনি এস এইচ সানবার্গ, ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিনিধিসহ বহু বিদেশি সাংবাদিক। সেই বহরে ছিলেন কুষ্টিয়ার সাংবাদিক আব্দুল হামিদ রায়হান। সমাবেশের তিন দিন আগেই কলকাতা থেকে ক্যামেরাসহ সরঞ্জামাদি নিয়ে চলে আসেন যশোরে। বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় যশোর শহরের বারান্দীপাড়ায় মেয়ের বাসায় রয়েছেন তিনি।

আফজাল হোসেন দোদুল। ছবি: আজকের পত্রিকাসেদিনের ঐতিহাসিক জনসভার কথা মনে করে ফটোগ্রাফার মুক্তিযোদ্ধা হামিদ বলেন, ‘মুজিবনগর সরকারের হেডকোয়ার্টার্স ছিল কলকাতার থিয়েটার রোডে। ১১ ডিসেম্বর যশোর টাউন হল মাঠের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, কামারুজ্জামান, জহির রায়হানদের আসার খবরে দুপুর থেকে মাঠে লোকজন আসতে শুরু করে। মাঠ ছিল ছোট, জনসভায় সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতি ঘটে। তারা ভাষণ দিলেন, মানুষ সেগুলো শুনল। সেই জনসভায় বিদেশি কয়েকজন সাংবাদিক এবং বাংলাদেশের একমাত্র আমিই উপস্থিত ছিলাম।’

মুক্তিযোদ্ধা হামিদ আরও বলেন, ‘ভাষণ শেষে তাঁরা যখন চলে গেলেন, তাঁদের সঙ্গে আমিও যাই। কলকাতার ধর্মতলায় একটি স্টুডিও থেকে ছবিগুলো ওয়াশ করাই। পরদিন জয়বাংলা পত্রিকায় ছবি ছাপা হয়। আমি সেই কাগজ নিয়ে দেশে ফিরে আসি। এরপর ১৩ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় এবং ২০ ডিসেম্বর খুলনার সমাবেশে যোগ দিই।’

মুক্তিযোদ্ধা হামিদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে (আগে-পরে) পাঁচ শতাধিক ছবি তুলি। যার নেগেটিভ এখনো আমার স্টুডিওতে (কুষ্টিয়ার রূপান্তর ফটো স্টুডিও) সংরক্ষণ করা আছে। সেই সময়কার ছবি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সামরিক জাদুঘর, দৃক গ্যালারি, বেঙ্গল গ্যালারি এবং লন্ডনেও রয়েছে।’

এদিকে দিনটি উপলক্ষে যশোর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজট

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সংবর্ধনায় অংশ নিতে ঢাকামুখী হয়েছেন হাজার হাজার নেতা-কর্মী। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জ অংশে মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় এই যানজটের চিত্র দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে মদনপুর পর্যন্ত এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে রূপগঞ্জের তারাব পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট লেগে আছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন থেমে থেমে চলাচল করলেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অনেক যানবাহন একই স্থানে দীর্ঘ সময় আটকে রয়েছে। এতে যাত্রী ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে, নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

যানজটে আটকে পড়া রহমান রিপন বলেন, ‘মৌচাক থেকে মদনপুর যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। মাত্র ১০ মিনিটের পথ ৩০ মিনিটেও পাড়ি দিতে পারিনি।’

বিএনপির সমর্থক আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমার নেতাকে একঝলক দেখার এবং তাঁর বক্তব্য শোনার আশায় কাজ রেখে পূর্বাচলের দিকে যাচ্ছি। কিন্তু যানজটে আটকে আছি।’

শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ জুলহাস উদ্দিন বলেন, মূলত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়ির অতিরিক্ত চাপ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন ধীরে চলাচল করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গজারিয়ায় পুলিশের টহল গাড়িতে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কা, সার্জেন্টসহ আহত দুই

গজারিয়া (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি 
আজ ভোরে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পুলিশের গাড়ি উল্টে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ ভোরে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পুলিশের গাড়ি উল্টে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় হাইওয়ে পুলিশ ও থানা-পুলিশের টহলরত দুটি গাড়িতে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় হাইওয়ে পুলিশের এক সার্জেন্টসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় কাভার্ড ভ্যানটির চালক ও হেলপারকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের বালুয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকামুখী লেনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট আহসান হাবিব ও কনস্টেবল নয়ন। তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ ভোরে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পুলিশের গাড়ি উল্টে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ ভোরে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পুলিশের গাড়ি উল্টে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহাসড়কে দায়িত্ব পালনকালে হাইওয়ে পুলিশ ও থানা-পুলিশের দুটি টহল গাড়ি বালুয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তার পাশে অবস্থান করছিল। এ সময় দ্রুতগতিতে আসা একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টহলরত গাড়ি দুটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে পুলিশের দুটি গাড়ি উল্টে যায় এবং দুজন পুলিশ সদস্য আহত হন।

দুর্ঘটনার পর পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। পরে কাভার্ড ভ্যানটির চালক ও হেলপারকে আটক করা হয়। এই ঘটনায় মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে কিছু সময়ের জন্য যানজটের সৃষ্টি হয়।

আজ ভোরে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পুলিশের গাড়ি উল্টে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ ভোরে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পুলিশের গাড়ি উল্টে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

গজারিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুবেল সিকদার বলেন, টহলরত দুটি গাড়ি মহাসড়কের পাশে অবস্থান করছিল। এ সময় একটি কাভার্ড ভ্যান সজোরে ধাক্কা দিলে গাড়ি দুটি উল্টে যায়। এতে হাইওয়ে পুলিশের এক সার্জেন্ট ও এক কনস্টেবল আহত হন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শাহ কামাল আকন্দ বলেন, দুর্ঘটনার পর যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ কাজ করছে। দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যশোর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পরিবর্তন, ধানের শীষের প্রার্থী নুরুজ্জামান লিটন

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি 
শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি নুরুজ্জামান লিটন। ছবি: সংগৃহীত
শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি নুরুজ্জামান লিটন। ছবি: সংগৃহীত

সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে যশোর-১ (শার্শা) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তন করা হয়েছে। এই আসনে ধানের শীষের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি নুরুজ্জামান লিটন।

এর আগে এই আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে নুরুজ্জামান লিটনের চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের নিশ্চিত করেন শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহীর। একই সঙ্গে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নুরুজ্জামান লিটন নিজেও।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহীর বলেন, ‘দল থেকে চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি নুরুজ্জামান লিটনকে দেওয়া হয়েছে।’

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরিত ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে নুরুজ্জামান লিটনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়।

এক মাস ধরে শার্শা উপজেলায় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছিল। এ সময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহীর, সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন ও দলের প্রধান উপদেষ্টা খায়রুজ্জামান মধুর সমর্থকেরা একযোগে আন্দোলনে অংশ নেন। তাঁদের দাবি ছিল, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল রাজনীতিতে সক্রিয় ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে তাঁরা মফিকুল হাসান তৃপ্তির মনোনয়নের বিরোধিতা করেন।

শেষ পর্যন্ত স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বিবেচনায় নিয়ে দল নুরুজ্জামান লিটনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়।

মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় নুরুজ্জামান লিটন বলেন, ‘শার্শার গণমানুষের চাওয়ার কারণেই আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। আমাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ায় দলের প্রতি কৃতজ্ঞ।’ একই সঙ্গে তিনি শার্শাবাসীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

নুরুজ্জামান লিটন বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপিকে শক্তিশালী করা এবং দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রত্যয় তাঁর রয়েছে। মনোনয়নের খবর পাওয়ার পর তিনি মফিকুল হাসান তৃপ্তির বাসায় গিয়ে সাক্ষাৎ করে দোয়া নিয়েছেন বলেও জানান।

বর্তমানে নুরুজ্জামান লিটন ঢাকায় অবস্থান করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় অংশ নিতে। নির্বাচনী এলাকায় ফিরে তিনি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করবেন বলে জানান।

এদিকে মনোনয়ন পরিবর্তনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে মফিকুল হাসান তৃপ্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে চাঁদাবাজির সময় গণপিটুনিতে সম্রাট বাহিনীর প্রধান নিহত

রাজবাড়ী প্রতি‌নি‌ধি
সম্রাট বাহিনীর প্রধান অমৃত মন্ডল ওর‌ফে সম্রাট। ছবি: সংগৃহীত
সম্রাট বাহিনীর প্রধান অমৃত মন্ডল ওর‌ফে সম্রাট। ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর পাংশায় চাঁদাবা‌জি করার সময় জনগ‌ণের পিটুনিতে সম্রাট বাহিনীর প্রধান অমৃত মন্ডল ওর‌ফে সম্রাট নিহত হ‌য়েছেন। এ সময় দু‌টি অস্ত্রসহ তাঁর সহ‌যো‌গী সে‌লিম শেখ‌কে আটক ক‌রে পু‌লি‌শে দি‌য়েছে জনতা। বুধবার দিবাগত রাত পৌ‌নে ১১টার দি‌কে উপ‌জেলার ক‌লিমহর ইউনিয়‌নের হো‌সেনডাঙ্গা গ্রা‌মে এই ঘটনা ঘ‌টে। নিহত সম্রাট উপ‌জেলার ক‌লিমহর ইউনিয়‌নের হো‌সেনডাঙ্গার অক্ষয় মন্ড‌লের ছে‌লে। আটক সে‌লিম একই ইউনিয়‌নের বসাকু‌ষ্টিয়া গ্রা‌মের ইসলাম শে‌খের ছে‌লে।

সম্রা‌টের সহ‌যো‌গী‌ সেলিমের কাছ থে‌কে এক‌টি পিস্তল ও এক‌টি ওয়ান শুটারগান জব্দ করে‌ছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সম্রা‌টের সহ‌যো‌গী‌ সেলিমের কাছ থে‌কে এক‌টি পিস্তল ও এক‌টি ওয়ান শুটারগান জব্দ করে‌ছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরা‌ত দিয়ে পাংশা ম‌ডেল থানার ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম জানান, সম্রাট নিজের না‌মেই এক‌টি বা‌হিনী গড়ে তু‌লে মানুষ‌কে ভয়ভী‌তি দে‌খি‌য়ে চাঁদাবা‌জি কর‌তেন। দীর্ঘদিন ভার‌তে পা‌লি‌য়ে থাকার পর সম্প্রতি এলাকায়‌ ফি‌রে এসে এক‌টি বাড়িতে চাঁদা দা‌বি ক‌রেন। কিন্তু তারা চাঁদার টাকা দি‌তে অস্বীকৃতি জানা‌য়। গত রা‌তে সম্রাট তাঁর বা‌হিনীর সদস‌্যদের নি‌য়ে ওই বাড়িতে চাঁদার টাকা আন‌তে যান। এ সময় ওই বাড়ির লোকজন ডাকাত ডাকাত ব‌লে চিৎকার দি‌লে আশপা‌শের লোকজন এসে ধ‌রে তাঁকে গণ‌পিটু‌নি দেয়। এতে ঘটনাস্থ‌লেই তাঁর মৃত‌্যু হয়। এ সময় তাঁর অন‌্য সহ‌যো‌গীরা পালি‌য়ে গে‌লেও অস্ত্রসহ ধরা প‌ড়েন সে‌লিম না‌মের একজন।

ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম আরও জানান, সম্রা‌টের সহ‌যো‌গী‌ সে‌লিম‌ের কাছ থে‌কে এক‌টি পিস্তল ও এক‌টি ওয়ান শুটারগান জব্দ করা হয়ে‌ছে। নিহত সম্রা‌টের না‌মে হত‌্যা, চাঁদাবা‌জিসহ একা‌ধিক মামলা র‌য়ে‌ছে। সম্রা‌টের মর‌দেহ ময়ন‌াতদন্তের জন‌্য ম‌র্গে পাঠা‌নোর প্রস্তু‌তি চল‌ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত