Ajker Patrika

কুষ্টিয়ায় ইনু-জর্জকে আদালতের কাঠগড়ায় হাতকড়া পরা নিয়ে এজলাস উত্তপ্ত

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৫, ২১: ১৩
কুষ্টিয়ার আদালতে সাবেক সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু ও সেলিম আলতাফ জর্জ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুষ্টিয়ার আদালতে সাবেক সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু ও সেলিম আলতাফ জর্জ। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়া মডেল থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় হাজিরা দিয়েছেন কুষ্টিয়ার দুই সাবেক সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু ও সেলিম আলতাফ জর্জ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁরা কুষ্টিয়া সদর আমলি আদালতে হাজির হন। এ সময় ইনুর আইনজীবী তাঁর জামিন আবেদন করেন। তবে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে ইনুসহ দুজনকেই কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এদিকে আদালতের কাঠগড়াতে হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় তোলা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান হাসানুল হক ইনুসহ তাঁর আইনজীবীরা। এ নিয়ে এজলাসে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ইনুর আইনজীবীসহ কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কুষ্টিয়া শহরে আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম নামে এক যুবক গুলিতে আহত হন। তাঁর হাতে ও পায়ের মধ্যে এখনো গুলি রয়েছে। বিচারের আশায় একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।

মামলায় ৬৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে। এই মামলায় কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু এজাহারভুক্ত ৩৭ নম্বর আসামি। আর কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ ৩৩ নম্বর আসামি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বেলা ২টার দিকে তাঁদের দুজনকে হাজিরা দিতে আদালতে নেওয়া হয়। কুষ্টিয়া কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় প্রিজন ভ্যানে তাঁদের আদালত ভবনের দোতলায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার আদালতে নেওয়া হয়। এ সময় ইনু ও জর্জের দুই হাতে সামনে রেখে হাতকড়া পরানো ছিল। দুজনের মাথায় পুলিশের হেলমেট ও শরীরে পুলিশের ভেস্ট পরানো ছিল।

২টা ১০ মিনিটের দিকে দুজনকেই এজলাসে নেওয়া হয়। এ সময় হাসানুল হক ইনু হাতকড়া পরা অবস্থায় কাঠগড়ায় উঠতে আপত্তি জানান। তাঁর আইনজীবী তানজিলুর রহমান ও আকরাম হোসেন দুলাল আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

তাঁদের ভাষ্যমতে, কাঠগড়ায় তোলার পর এক পুলিশ কর্মকর্তা তাঁদের বসতে বলেন। তবে সে সময় আদালতে বিচারক উপস্থিত ছিলেন না। বসার কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে হাসানুল হক ইনু উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি হাতকড়া খুলে দিতে বলেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা চুপ থাকেন। একপর্যায়ে ইনু বলতে থাকেন, ‘হাতকড়া খোলেন, হাতকড়া খোলেন। কেন কাঠগড়াতে হাতকড়া পরা থাকব।’ তবে পুরো সময় সেলিম আলতাফ জর্জ চুপ ছিলেন।

এই নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাসানুল হক ইনু ও তাঁর আইনজীবীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কয়েক মিনিট এমন হওয়ার পর এক পুলিশ কর্মকর্তা বিচারকের খাসকামরায় যান। সেখান থেকে ফিরে এসে হাসানুল হক ইনুর হাতকড়া এক হাত খুলে রাখেন। পুলিশের উপপরিদর্শক জিলানী সেলিম আলতাফের হাতকড়া খুলতে গেলে তিনি তা করতে দেন না। জোরাজুরি করেও খুলতে দেন না।

কয়েক মিনিট পর আদালত শুরু হলে সিনিয়র আইনজীবী আকরাম হোসেন হাসানুল হক ইনুর জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে উপপরিদর্শক জিলানী আসামিকে জামিন না দেওয়ার যুক্তি তুলে ধরেন।

সিনিয়র আইনজীবী আকরাম হোসেন দুলাল বলেন, একপর্যায়ে সেলিম আলতাফ জর্জ কথা বলার অনুমতি চান বিচারকের কাছে। অনুমতি নিয়ে তিনি সামনে দুই হাত হাতকড়া পরা অবস্থায় তুলে বলতে থাকেন, ‘আদালতের সামনে যখন কোনো আসামির হাতে হাতকড়া অবস্থায় উপস্থাপন করা হয় এবং আদালত যদি সেটা দেখেন, তাহলে এটা বুঝতে হবে টোটাল জুডিশিয়ালের হাতেই হাতকড়া।’

এ সময় আদালত হাতকড়া খুলে দিতে বলেন। তবে জর্জ হাতকড়া খুলতে দেননি। বিচারক তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ মিনিট তাঁরা কাঠগড়াতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

পুলিশ দ্রুত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জকে বের করে প্রিজন ভ্যানে তোলেন। এজলাস থেকে প্রিজন ভ্যানে যাওয়ার সময় আদালত চত্বরে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হেসে হাত নেড়ে ইশারা দেন ইনু। এ সময় তাঁর এক হাতে হাতকড়া ছিল। পাশে থাকা জর্জও হাত তুলে ইশারা দেন। তবে তাঁর দুই হাতেই হাতকড়া ছিল।

প্রিজন ভ্যানে তোলার পর দ্রুত কারাগারের দিকে চলে যায়। নেতা-কর্মীরা পেছন পেছন দৌড়ে হাত নেড়ে বলতে থাকেন, ‘ভাই ভালো আছে, ভাই ভালো আছেন।’

আইনজীবী তানজিলুর রহমান বলেন, কোনো আইনে নেই এজলাসে কাঠগড়াতে আসামির হাতে হাতকড়া পরানো অবস্থায় রাখতে হবে। এ নিয়ে বেশ উত্তপ্ত ছিল এজলাস।

জানতে চাইলে কুষ্টিয়া আদালতের পরিদর্শক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘দুজনের হাজিরা তারিখ ছিল। একজনের জামিন ধরা হয়েছিল। জামিন নামঞ্জুর হয়েছে। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

হাতকড়া পরিয়ে কাঠগড়ায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘এটা আদালতের বিষয়। আমরা তো হাতকড়া পরিয়ে ওভাবে নিয়ে যাই। আদালত যেটা ডিসিশন (সিদ্ধান্ত) দেবেন, সেটা হবে। আদালত পরে বলছেন হাতকড়া খুলে দিতে। আমরা খুলে দিয়েছি। আদালত যে নির্দেশ দেবে, সেটা হবে। আদালত নির্দেশ দিয়েছেন আমরা হাতকড়া খুলে দিয়েছি।’

জর্জের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা অত ইয়ে করিনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএসএমএমইউতে হেনস্তার ঘটনা নিয়ে যা বললেন প্রাণ গোপালের মেয়ে ডা. অনিন্দিতা

বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব: গ্রেপ্তার ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী

জামিনে বেরিয়েই ছদ্মনামে হাসপাতালে ভর্তি হন ‘ডিবি হেফাজতে’ মৃত এজাজ

স্বাধীনতা দিবসে এবার কুচকাওয়াজ হচ্ছে না

নিউজিল্যান্ডের কাছে বাজে হারের ‘বদলা’ নেবেই পাকিস্তান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত