Ajker Patrika

২৭ মে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বের হলেই মাথা ফাটিয়ে দেবেন: যশোর আ.লীগ সভাপতি

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ মে ২০২৩, ১০: ৫৯
২৭ মে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বের হলেই মাথা ফাটিয়ে দেবেন: যশোর আ.লীগ সভাপতি

২৭ মে যশোরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমাবেশ না করতে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন। একই সঙ্গে জনসভার দিন তিনি নেতা-কর্মীদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বাঁশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশনা দেন। বিএনপি নেতা-কর্মীরা জনসভায় মিছিল নিয়ে উপস্থিত হলেই তাঁদের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ারও নির্দেশনা দেন।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের গাড়িখানার দলীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। হুঁশিয়ারি দেওয়া এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ২৭ মে বিএনপির জনসভাকে ঘিরে যখন সকল প্রস্তুতি চলছে, সেই মুহূর্তে যশোর আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতার হুঁশিয়ারিমূলক বক্তব্যে যশোরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলেছেন বলে মত রাজনীতিবিদদের।

গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার, নির্যাতনসহ সরকার পদত্যাগের ১০ দফা দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৭ মে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে যশোর জেলা বিএনপি। এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশ সফল করতে জেলা বিএনপি ইতিমধ্যে সকল উপজেলা ও ইউনিয়নে প্রস্তুতিসভা সম্পন্ন করেছে। তবে জেলা প্রশাসন এখনো সমাবেশ স্থলের অনুমতি দেয়নি। 

মঙ্গলবার বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জুলিও কুরি’ পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ। দলীয় কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘দেশ একটি গভীর ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে চলছে। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন সহ্য করতে পারছে না স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিরা। এসব বিপক্ষের শক্তির দোসররা আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। আজ বিএনপির এত সাহস। আওয়ামী লীগের সভাপতিকে হত্যার হুমকি দেয়। যশোরে বিএনপির কোনো প্রোগ্রাম, জনসভা আর করতে পারবে না। ২৭ মে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আসা হবে না।’

শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ থাকতে যশোরে মির্জা ফখরুলের জনসভা করতে দেওয়া হবে না। আপনারা প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সতর্ক থাকবেন যশোরের মাটিতে জনসভা হতে দেওয়া হবে না। শহরের মোড়ে মোড়ে বাঁশের লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন। বিএনপি নেতা-কর্মীরা আসামাত্রই বাঁশের লাঠি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেবেন। যাতে তাঁরা জনসভায় যেতে না পারেন।’

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার সকল মিটিংয়ের নেতৃত্ব দেব। ফখরুল যাতে জনসভা করতে না পারে; সকল নেতৃত্ব আমরা দেব। আপনারা একত্রে থাকবেন। আপনারা এক থাকেন ইনশা আল্লাহ ২৭ তারিখে যশোরে কোনো জনসভা করতে দেব না। আপনারা প্রস্তুত হন, দুর্গ তৈরি করে ফেলেন। আগামী ২৭ তারিখ যাতে সমাবেশ না করতে পারে সেই লক্ষ্যে ভূমিকা রাখতে হবে ছাত্রলীগ, যুবলীগদের। ২৭ মে রণাঙ্গনে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’

৭৫ সদস্যবিশিষ্ট যশোর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি। উপদেষ্টা পরিষদ আরও ১৯ জনের। ৯৪ সদস্যের বিশাল বহরের কমিটি। কিন্তু বেশির ভাগ দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত হন গুটি কয়েকজন। বেশির ভাগ নেতা অনুপস্থিত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি রাজপথে সরব হয়েছে। সেই সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সভা-সমাবেশে উপস্থিত থাকেন না। সবাই নেতা হবেন। সভায় আসবেন না, মিছিল করবেন না। আবার নেতা হতে চাইবেন সেটা তো হতে দেওয়া যাবে না। যাঁরা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকেন না; তাঁরা যাতে পদ না পান, তাঁদের সেই ব্যবস্থা করে দেব আমি।’

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বক্তব্যটি শুনেছি। একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাশা করি না। রাজনীতিবিদদের কাছে অরাজনৈতিক আচরণ কাম্য নয়। রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।’

 সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসী রাজনীতি পছন্দ করি না। আওয়ামী লীগের সভাপতির বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে তিনি তাঁর নেতা-কর্মীদের ফুঁসলিয়ে দিলেন। ওঁনারা তো সমাবেশ করতে দেবেন না বলেই প্রশাসন দিয়ে এখনো সমাবেশস্থলের অনুমতি দিতে দেননি। আর পুলিশ দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠাচ্ছেন। আমাদের রাজপথে প্রতিবন্ধকতা আসবেই; আমরা সেটি পার করেই সমাবেশ সফল করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: চিকিৎসায় শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দ মাত্র ১২৫ টাকা

  • স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দ বাজেটের ০.০৮৪ শতাংশ
  • ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য চিকিৎসক মাত্র দুজন
  • প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ জন চিকিৎসা নেন
সোহানুর রহমান, জবি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যবস্থার চিত্র উদ্বেগজনক। শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বার্ষিক বাজেট মাত্র ২৫ লাখ টাকা। এ বছর মাথাপিছু চিকিৎসায় বরাদ্দ মাত্র ১২৫ টাকা; যা অপ্রতুল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায় মাত্র সাত একর জায়গায় জবি ক্যাম্পাস। আটটি ভবনে চলছে ৩৮টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কার্যক্রম। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী প্রায় ২০ হাজার। কিন্তু প্রতিষ্ঠার দুই দশক পরও নানা সংকটে রয়েছে জবি। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট বাজেট ধরা হয়েছে ২৯৭ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বার্ষিক বাজেট মাত্র ২৫ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় শূন্য দশমিক শূন্য ৮৪ শতাংশ। এ বছর মাথাপিছু চিকিৎসায় বরাদ্দ ১২৫ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসাসেবার বাজেট বাড়ানোর জন্য আমরা ইউজিসির সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছি, কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে তারা বৃদ্ধি করছে না। তাই একটি বিশেষ ফান্ডের আবেদন করা হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে আগামী বছরে এর ব্যবস্থা হবে।

অব্যবস্থাপনায় মেডিকেল সেন্টার

জবির বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর চিকিৎসাসেবার দায়িত্বে থাকা মেডিকেল সেন্টারে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও লোকবল নেই। প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিলেও সেখানে কর্মরত আছেন মাত্র দুজন চিকিৎসক, তিনজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, একজন নার্স, দুজন অফিস সহকারী ও একজন ক্লিনার। রয়েছে একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যেকোনো অসুখের চিকিৎসায় মেডিকেল সেন্টার থেকে দেওয়া হয় শুধু প্যারাসিটামল। অনেক সময় প্যারাসিটামলও পাওয়া যায় না।

গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন বলেন, চিকিৎসকেরা রোগীর কথা শুনতে চান না। শুধু নাপা, প্যারাসিটামল বা স্যালাইন দিয়েই দায়িত্ব সারেন।

দর্শন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোছা. রাতিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার সমস্যা অনুযায়ী সঠিক ওষুধ দেওয়া হয়নি। শুধু প্যারাসিটামল ও স্যালাইনই মেলে মেডিকেল সেন্টারে।’

ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী মো. কামরুল হাসান বলেন, রক্তস্বল্পতার ইনজেকশন দেওয়ার সময় নার্সের অদক্ষতার কারণে তা মাংসে প্রবেশ করে। ফলে ক্ষত তৈরি হয়, যা পাঁচ মাসেও সারেনি।

এ বিষয়ে মেডিকেল সেন্টারের উপপ্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মিতা শবনম বলেন, ‘আমরা অল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমাদের মেডিকেল সেন্টারে প্রায় ৪০ ধরনের ওষুধ রয়েছে, যা রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী জ্বর, মাথাব্যথা ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে আসে, তাই সাধারণত প্যারাসিটামল দেওয়া হয়।’

ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, ‘চিকিৎসা বাজেট এত কম কেন, এটি আমাদেরও প্রশ্ন। দীর্ঘদিন ধরে এমন পরিস্থিতি চলছে। তবে বর্তমান প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে বাজেট বাড়ানোর চেষ্টা করছে এবং কিছুটা বৃদ্ধি এরই মধ্যে হয়েছে। ইউজিসির অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে তারা সবই দিতে পারছে না। তবুও আশা করছি, শিগগির এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং দুটি পদে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য বাজেট অনুমোদন পাওয়া গেছে। আশা রাখছি আগামী অর্থবছরে এ খাতে ভালো বাজেট বরাদ্দ পাওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর: গ্রাম আদালতে অতিরিক্ত ফি

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গ্রাম আদালতে সরকারি নামমাত্র ফি আদায়ের নিয়ম থাকলেও কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের দাবি, উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে বিচার চাইতে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে তাঁদের। ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদটির হিসাবরক্ষক কাম কম্পিউটার অপারেটর আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন নান্টু আলী নামের এক ব্যক্তি। অভিযোগের সপক্ষে ভিডিও প্রমাণও দাখিল করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, গ্রাম আদালতে দেওয়ানি মামলার ফি ২০ টাকা এবং ফৌজদারি মামলার ফি ১০ টাকা। অথচ ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের দাবি, এখানে মামলা দায়ের থেকে শুরু করে হাজিরা পর্যন্ত ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে।

ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জানান, স্বল্প সময়ে ও কম খরচে বিচার পাওয়ার আশায় তাঁরা গ্রাম আদালতে আসেন। কিন্তু এখানে এসেও তাঁদের অনেক টাকা খরচ হচ্ছে।

আল্লাহর দরগা বাজার এলাকার এক ঝালমুড়ি ও ফুচকা বিক্রেতা জানান, পারিবারিক কলহ-সংক্রান্ত মামলায় তাঁর কাছ থেকে ধাপে ধাপে ১ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। মুন্না নামের অন্য এক ভুক্তভোগী জানান, একটি সাধারণ অভিযোগ দায়ের করতে তাঁকে ৪০০ টাকা দিতে হয়েছে।

অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে হিসাবরক্ষক আবু সুফিয়ান জানান, যোগদানের পর থেকে তিনি এমনভাবে টাকা নিয়ে আসছেন।

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও চেয়ারম্যান উভয়ে অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যাপারে অবগত নন বলে দাবি করেছেন।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিন্দ্য গুহ বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে এবং সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাত খুনের চারটিই ক্লুলেস

  • নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে শিশু, নারী, রিকশাচালক, মাছ ও ডাব ব্যবসায়ী
  • ক্লুলেস পাঁচ হত্যাকাণ্ডের একটির রহস্য উদ্‌ঘাটন
  • দুই ঘটনায় চারজন গ্রেপ্তার, অপর একটি ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক
হাসান মাতুব্বর, ফরিদপুর
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফরিদপুরে গত এক মাসে সাতটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে শিশু, নারী, রিকশাচালক, মাছ ও ডাব ব্যবসায়ী। এ ছাড়া গণপিটুনিতে একজন নিহত হয়েছেন। গত ২০ নভেম্বর থেকে চলতি মাসের ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যে ক্লুলেস পাঁচটি ঘটনার একটির রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হয়েছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এ ছাড়া মাত্র দুটি ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অপর আরেকটি ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে।

শিশু জায়ান হত্যাকাণ্ড

গত ২০ নভেম্বর আলফাডাঙ্গার পাকুড়িয়া গ্রামের গ্রিসপ্রবাসী পলাশ মোল্যার সাত বছর বয়সী শিশুপুত্র জায়ান মোল্যার মরদেহ বাড়ির পাশের একটি বাগান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটির মুখে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় এবং ঝুলন্ত অবস্থায় তার পরনের প্যান্ট দিয়ে মুখমণ্ডল ঢাকা ছিল। এ ঘটনায় শিশুটির মা সিনথিয়া বেগম অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেন।

পুলিশ জানায়, ঘটনার পর ২৫ নভেম্বর প্রতিবেশী ইউনুচ মোল্যা নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সুজন বিশ্বাস তাঁর ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে ১০ ডিসেম্বর ফরিদপুর ৯ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক আনারুল আসিফ এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া এ ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন সম্পর্কে জানাতে পারেনি পুলিশ। তদন্তকারী কর্মকর্তা সুজন বিশ্বাস জানান, তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

নারীর হাত বাঁধা লাশ

১৯ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় সদরপুর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস-সংলগ্ন সড়কের ঢাল থেকে অজ্ঞাত এক নারীর হাত বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, মরদেহটি বোয়ালমারী উপজেলার সুতাশী গ্রামের বারিক শেখের মেয়ে রুমা বেগমের (২৫)। এ ঘটনায় মৃতের স্বামী তুহিন মণ্ডল বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান রিপন নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে বলেন, ওই নারী মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন। সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ ছিলেন। তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডটি কীভাবে ঘটেছে, তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে জানা যাবে; ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে কি-না, সে বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’

এদিকে একই দিন সন্ধ্যায় ভাঙ্গার গুনপালদী গ্রামে টুকু মোল্লা (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে সীমা বেগম নামের এক নারীর বিরুদ্ধে। সীমা বেগম নিহত টুকু মোল্লার চাচাতো ভাই তুরস্কপ্রবাসী সোহাগ মোল্লার স্ত্রী এবং ঘটনার পর তিনি পালিয়ে যান। এ ঘটনায় নিহত টুকু মোল্লার স্ত্রী আমেনা আক্তার থানায় একটি অভিযোগ দেন। মামলাটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান থানার ওসি আলিমুজ্জামান।

অপর দিকে ১৮ ডিসেম্বর সকালে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানাধীন চাঁদপুর গ্রামের একটি কলাবাগান থেকে টিপু সুলতান নামের এক রিকশাচালকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দুর্বৃত্তরা তাঁকে গলা কেটে হত্যার পর তাঁর রিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক হিরামন বিশ্বাস বলেন, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে এবং তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা

৫ ডিসেম্বর ভোর পৌনে ৫টার দিকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর মাছের আড়তে যাওয়ার পথে সালথার কালীতলা ব্রিজ (মাটিয়াদহ) এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় উৎপল সরকার (৩৮) নামের এক মাছ ব্যবসায়ী নৃশংসভাবে খুন হন। দুর্বৃত্তরা প্রথমে উৎপলের সঙ্গে থাকা ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্লাকে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে আটকে ফেলে এবং পরে উৎপলকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনসহ জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আসামিরা পূর্বশত্রুতা ও পরকীয়ার জেরে উৎপল সরকারকে হত্যা করে বলে জানান সালথা থানার ওসি মো. বাবলুর রহমান খান।

ডাব ব্যবসায়ীর লাশ, মেলেনি রহস্য

গত ২২ নভেম্বর বোয়ালমারী উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকার একটি ব্রিজের পাশে থেকে ইব্রাহিম (৩৫) নামের এক ডাব ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার সময় অজ্ঞাত অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও পরে তাঁর পরিচয় শনাক্ত হয়। তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দির উত্তরটিলি গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে। গত এক মাসেও এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য মেলেনি।

এ ছাড়া গত ২৩ নভেম্বর গভীর রাতে চোর সন্দেহে এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে নিহত হন শাহীন শিকদার (২৮) নামের এক যুবক এবং আহত হন আরও তিন যুবক। নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের দেবীনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে এবং নিহত শাহীনের বাড়ি পার্শ্ববর্তী গজগাহ গ্রামে। এ ঘটনায় শতাধিক অজ্ঞতানামা ব্যক্তিকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন নিহত শাহীনের মা রিক্তা বেগম। তবে ঘটনার এক মাসেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক ইরানুল ইসলাম।

জানতে চাইলে এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অগ্রগতি নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শামছুল আজম বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা সালথার একটি ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করেছি। আলফাডাঙ্গায় শিশু হত্যার ঘটনা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী দ্রুত এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনসহ জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের নিয়ে ব্রাইটার টুমরোর আনন্দ ভ্রমণ, শীতবস্ত্র উপহার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর কড়াইল বস্তির ৫৪ জন বিশেষ শিশু ও ব্যক্তিকে শীত উপহার দিয়েছে ব্রাইটার টুমরো ফাউন্ডেশন (বিটিএফ) নামের একটি সংগঠন। আজ শুক্রবার সকালে দুটি বাস এবং একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ৫৪ জন বিশেষ শিশু ও ব্যক্তিকে নিয়ে সাফারি পার্কের উদ্দেশে রওনা হয় সংগঠনটি। সেখানে তাদের নির্মল আনন্দ ও বিনোদন প্রদানের পাশাপাশি শীতবস্ত্র উপহার দেওয়া হয়।

সাফারি পার্কে পৌঁছার পর স্বেচ্ছাসেবী ও কর্মকর্তারা তাদের ফুল দিয়ে বরণ করেন। এরপর সকালের নাশতা প্রদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘শিশুদের স্বপ্নের পৃথিবী’ শীর্ষক এ কর্মসূচি। সাফারি পার্কে প্রবেশের পর সেখানকার নীরব স্পট হয়ে ওঠে প্রাণচঞ্চল ও আনন্দমুখর।

অনুষ্ঠান সম্পর্কে সংগঠনের উপদেষ্টা, কবি ও সাংবাদিক জুনান নাশিত বলেন, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত এ ধরনের কিছু অবহেলিত মানুষের নির্মল আনন্দ ও বিনোদন প্রদানের পাশাপাশি তাদের শীতের কষ্ট লাঘব করাই এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য। মাত্র কয়েক দিন আগে বস্তিটিতে আগুন লেগে বেশ কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই তাদের নিয়েই বিটিএফ এ বছরের কর্মসূচি হাতে নেয়।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জয়শ্রী জামান বলেন, ‘বিশ্বে ৭৫ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে দরিদ্র ও অনুন্নত দেশগুলোয়। অনুন্নত দেশে দারিদ্র্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতনতা আত্মহত্যার বড় কারণ। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিনোদন খুব প্রয়োজন, যা থেকে অনেকে বঞ্চিত। আমরা তাদের কথা ভেবে প্রতিবছর এই আয়োজন করে থাকি।’

স্পেশাল শিশু ও ব্যক্তি, তাদের অভিভাবক এবং বিটিএফের কর্মকর্তা-স্বেচ্ছাসেবীসহ প্রায় ১০০ জনের অংশগ্রহণে এই উপহার প্রদান ও আনন্দভ্রমণ সম্পন্ন হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত