Ajker Patrika

চেঙ্গী নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে বসতবাড়ি, ফসলি জমি

নীরব চৌধুরী বিটন, খাগড়াছড়ি
নদীভাঙনে মন্টু চাকমার ঘর অর্ধেক বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়েই পরিবার নিয়ে বাকি অংশে থাকছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে খাগড়াছড়ি সদরের যুবরাজ কাবারীপাড়ায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নদীভাঙনে মন্টু চাকমার ঘর অর্ধেক বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়েই পরিবার নিয়ে বাকি অংশে থাকছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে খাগড়াছড়ি সদরের যুবরাজ কাবারীপাড়ায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়িতে চেঙ্গী নদীর পানি বেড়ে আবার কমে যাওয়ার পর নদীর তীর ভাঙন শুরু করেছে। এতে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার হুমকির মুখে পড়েছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি, বিভিন্ন বাগান ও রাস্তা। আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী মানুষের।

সদর উপজেলার যুবরাজ কাবারীপাড়া, পল্টনজয়পাড়া, বেলতলীপাড়া, চেঙ্গীব্রীজ, রাজবাড়ি মারমাপাড়া, গঞ্জপাড়া, দক্ষিণ গোলাবাড়ি, রাজ্যমনিপাড়া, কালাডেবাপাড়া, বটতলী, ফুটবিল, কমলছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন দিয়েছে।

সদর উপজেলার নদীর পাড়ে দক্ষিণ গঞ্জপাড়ার ৬৪ কৃষক ফসল ফলিয়ে সংসার চালান। এখন তাদের সেই ফসলি জমি নদী কেড়ে নিচ্ছে। কৃষক ক্যচিং মর্গ, আপ্রুমা মর্গ ও হেমাচং মর্গ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বার মাস সবজি চাষ করে চলি। নদী ভাঙনে জমি বিলীন হচ্ছে। আগাম শীতের বিভিন্ন সবজি বীজ বপন করেছি। নদী ভাঙনে সব শেষ হয়ে গেছে। কেমন ক্ষতি হয়েছে, বলার বাহিরে।

সদরের যুবরাজ কাবারীপাড়ার মন্টু চাকমার ঘর অর্ধেক বিলীন হয়েছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, দুই মাস হয়েছে ভাঙনে ঘরের অর্ধেক পড়ে গেছে। সাথে বিভিন্ন ফল গাছ বিলীন হয়েছে। দিনমজুরি করে খাই। অন্য জায়গা কিনে ঘর তুলে চলে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। দিন-রাত ভয় লাগে, তারপরও থাকতে হচ্ছে।

যুবরাজ কাবারীপাড়ার জীবনপর্ব চাকমা, জিয়দয় চাকমা ও শান্তিপর্ব চাকমা আজকের পত্রিকাকে জানান, গত পাঁচ-সাত বছরে এই গ্রাম থেকে ১৫ পরিবারের ঘর বিলীন হয়েছে। সবাই অন্য জায়গায় বসবাস করছে। এখন পর্যন্ত কেউ তাদের খোঁজখবর নিতে আসেনি।

সদরের রাজবাড়ি এলাকায় তিনটি ঘর বিলীন হওয়ার পথে। এর মধ্যে রান্না ঘর ও গোয়াল ঘর ও ফল গাছ নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত অংগজাই মারমা ও আনাই মর্গ বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, পাড় ভেঙে রান্না ঘর, গরু গোলায় ঘর, নারকেল, আম ও কাঁঠাল গাছ ও ষোল হাত ভূমি বিলীন হয়েছে। রাতে ঘুমায় আতঙ্কে। এই ঘরটি বিলীন হয়ে যায় কোথায় গিয়ে উঠব। দ্রুত কিছু করে ভাঙন ঠেকানো দরকার।

নদীভাঙনে রাস্তা, ফসলি জমি বিলীন হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকালে খাগড়াছড়ি সদরের পল্টনজয়পাড়ায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নদীভাঙনে রাস্তা, ফসলি জমি বিলীন হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকালে খাগড়াছড়ি সদরের পল্টনজয়পাড়ায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

এই দিকে ভারি বষর্ণে ও পাহাড়ি ঢলে ছড়ার পানি স্রোতে খাগড়াছড়ি সদরের মহালছড়া নামের এক ছড়ার দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মহালছড়া ও দেওয়ানপাড়া এলাকার ছড়া ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, বাগান, বসতবাড়ি, পোলট্রি খামার। আতঙ্ক রাত কাটাচ্ছে স্থানীয়রা। ভারি বৃষ্টি হলে রাত জেগে পাহারা দিতে হয়। মহালছড়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জ্যোতিময় ত্রিপুরা ও প্রতিময় ত্রিপুরা বনলতা ত্রিপুরা বলেন, ছড়ার দুই পাড় ভাঙনের কারণে আমাদের ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দুই বছর আগে পাড়ায় যাতায়াতের কালভার্ট ধসে পড়ে গেছে।

এদিকে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার চরপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বসতবাড়ি, রাস্তা, গাছ ধলিয়া খালে বিলীন হচ্ছে। মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড মন্দির পাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত রিপ্রুচাই মারমা ও পাইচাইং মারমা বলেন, গত বছর ধলিয়া খালের প্রবল স্রোতে বাড়ির কিছু অংশ ভেঙে গেছে। এ বছর আমার গোয়ালঘর ভেঙে গেছে। এখন আমার থাকার একমাত্র ঘরটি ভাঙনের পথে।

নদীভাঙনে বসতঘর, রাস্তা, ফসলি জমি বিলীন হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকালে খাগড়াছড়ি সদরের পল্টনজয়পাড়ায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নদীভাঙনে বসতঘর, রাস্তা, ফসলি জমি বিলীন হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকালে খাগড়াছড়ি সদরের পল্টনজয়পাড়ায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুর আলম বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতির পরিমাণ খোঁজ খবর নিয়েছি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে। তিন পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ক অবহিত করা হবে বলে জানান।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী নিখিল চাকমা বলেন, বিভিন্ন এলাকার ভাঙন পরিদর্শন করে উপজেলা পযায়সহ সবগুলো মিলে একশ উপরে ভাঙন পয়েন্ট তালিকা করে উধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। যতটুকু বরাদ্দ হয়ে আসে, তা দিয়ে কাজ শুরু করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত