Ajker Patrika

গাজীপুরে তৃতীয় দিনের মতো মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের, যানজট ছড়িয়েছে অলিগলিতে

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ০৬
তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে টিঅ্যান্ডজেড গ্রুপের শ্রমিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে টিঅ্যান্ডজেড গ্রুপের শ্রমিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বকেয়া বেতনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে টিঅ্যান্ডজেড গ্রুপের শ্রমিকেরা। প্রায় ৫০ ঘণ্টা ধরে চলা এ অবরোধের কারণে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে । এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ঢাকা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতকারীরা যাত্রীরা। পাশাপাশি ক্ষুব্ধ চালক, এলাকাবাসী ও সাধারণ মানুষ। পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা।

এদিকে শ্রমিকদের দাবি, বকেয়া পাওনা না পেলে তারা রাস্তা ছাড়বেন না। এ ছাড়া মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকায় অপর একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা অভ্যন্তরীণ একটি সড়ক অবরোধ করে রেখেছে।

গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টিঅ্যান্ডজেড গ্রুপের শ্রমিকেরা গত শনিবার সকাল ৯টায় মহাসড়ক অবরোধ শুরু করে। আজ সোমবার সকাল দশটায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ অব্যাহত রেখেছে। আন্দোলনে শনিবার থেকে পর্যায়ক্রমে শ্রমিকেরা ভাগ করে অবস্থান করছে। দুই থেকে আড়াই শ শ্রমিক মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন। ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক জনতাও।  এদিকে টিঅ্যান্ডজেড এর শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে আশপাশের ১৫-২০টি কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।

শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধে বিপদে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বাচ্চা কোলে নিয়ে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের দিকে যাচ্ছিলেন কলিম উদ্দিন। কোথায় যান জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, সবকিছুর একটা সীমা থাকা দরকার। দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক আজ তিন দিন ধরে বন্ধ। অথচ কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। মানুষ চলাচল করতে পারছে না। দূরপাল্লার গাড়ি চলছে না।

টানা শ্রমিক অবরোধের ফলে কার্যত অচল হয়ে গেছে গাজীপুর। মহাসড়কের যানজট রাতে বিভিন্ন বিকল্প পথে চলাচল শুরু করায় যানজট এখন অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে মহাসড়কের যানজট আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। অবরোধের বিষয়টি জানার পর অধিকাংশ যাত্রী ও যানবাহন এ সড়ক এড়িয়ে চলছেন।

মহাসড়ক অবরোধ থাকায় পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মহাসড়ক অবরোধ থাকায় পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুর মহানগরীর মালিকের বাড়ি এলাকায় কলম্বিয়া গার্মেন্টসের সামনে ২০০ মিটার ব্যবধানে দুটি ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল আটকে দেওয়া হয়েছে। মাঝখানে কয়েক শ শ্রমিক এবং কিছু যুবককে লাঠি হাতে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তারা কেউ কোনো কথা বলতে চাইলে বেতন ছাড়া আর কোনো কথা বলার ব্যাপারে আপত্তি জানায়।

আন্দোলনকারী এক যুবক এগিয়ে এসে বলেন, ‘আমরা কষ্ট করেছি কাজ করেছি আমাদের টাকা দিচ্ছে না।  আমরা আমাদের পাওনা চাচ্ছি। আমাদের পাওনা দিয়ে দেন আমরা বাড়ি চলে যাব।’

এ সময় এখানে দায়িত্বরত শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম এবং গাজীপুর মহানগর পুলিশের ওপর পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) নাজির আহমেদকে কথা বলতেও বাধা দিতে দেখা যায় তাদের। শ্রমিকদের দাবি যা বলার মাইকে বলেন।

ময়মনসিংহ থেকে চাঁদপুরগামী হায়দার নামে এক ট্রাকচালক বলেন, দু’দিন ধরে সড়কে রয়েছি। কোথাও যেতে পারছি, নড়তেও পারছি না। অনেক ট্রাকে পচনশীল পণ্য রয়েছে। যাত্রীবাহী বাস থেকে যাত্রীরা নেমে গেছে দুদিন আগে। কিন্তু বাস আগের স্থানেই রয়েছে। খুব বিরক্ত হয়ে গেছি ভাই।

আন্দোলনরত শ্রমিকেরা বলেন, গত এপ্রিল মাস থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। পরে কারখানা খুললেও দুই মাসের বেতন না দিয়ে কর্তৃপক্ষ টালবাহানা শুরু করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বারবার বেতন পরিশোধের তারিখ দিলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ ৭ নভেম্বর আবার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করলে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ বিষয়ে সমাধান করার আশ্বাস দিলে তাঁরা ফিরে যান। কিন্তু শ্রমিকেরা বেতন পাচ্ছেন না। তা ছাড়া কারখানা বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ আছে। এসব কারণে শনিবার সকাল থেকে আবারও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। বারবার সময় দেওয়ার পরও বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রমিকেরা এখন আর কারও কথা আর বিশ্বাস করে না।

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকার একটি কারখানার শ্রমিকেরাও বেতনের জন্য বিক্ষোভ করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকার একটি কারখানার শ্রমিকেরাও বেতনের জন্য বিক্ষোভ করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

শ্রমিক নেতা আরমান হোসাইন বলেন, আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের ধৈর্য ধরতে বলেছি। তারা বলেছেন দুই মাস ধৈর্য ধরেছি ,আর না। আমাদের কথা হচ্ছে মহাসড়ক অবরোধ রাখায় যে ভোগান্তি হচ্ছে এটি দ্রুত সমাধান করা। আশুলিয়া আর গাজীপুর মিলে ৮-১০ টা কারখানায় মূলত ঝামেলা দেখছি। তাদের পাওনাও খুব বেশি না। প্রয়োজনে ওই সব মালিকদের কিছু সম্পদ বিক্রি করে হলেও পাওনা পরিশোধ করুক। আজ আমরা আবারও শ্রমিকদের সঙ্গে বসব।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) নাজির আহমেদ বলেন, শ্রমিকদের বোঝানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কথাই শুনে না। তারা বেতন না নিয়ে মহাসড়ক ছাড়বে না। তাঁদের আজও বোঝানো হচ্ছে। যেহেতু দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে, এ জন্য আপাতত বিকল্প যে রাস্তা রয়েছে তা ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিকদের দাবি ন্যায্য। মালিকপক্ষ একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তারা রক্ষা করতে পারেনি। তাই শ্রমিকেরা গত দুটি রাত রাস্তায় বসে আছে।

তিনি আরও বলেন আমি যতদূর জানি মালিকপক্ষও টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

এ সময় তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যদি তোমরা পারো মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে রাস্তা ছেড়ে দাও। এ সময় উপস্থিত শ্রমিকেরা বলেন, আমাদের টাকা না দিলে আমরা রাস্তা ছাড়ব না।

এদিকে, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে এক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে রেখেছে পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা।

সোমবার সকাল ৮ টা থেকে মহানগরীর কোনাবাড়ী থানাধীন স্বাধীন গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা পল্লী বিদ্যুৎ দশতলা আঞ্চলিক সড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

পুলিশ জানায়, গত অক্টোবর মাসের বেতন এ মাসের ১০ তারিখে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ১০ তারিখে বেতন দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। গতকাল দুপুরে পর তারা কাজ বন্ধ করে দেয়। আজ সকাল ৮টায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সড়ক অবরোধ করে রেখেছে পোশাক শ্রমিকেরা। কর্তৃপক্ষ বলছেন ১৪ নভেম্বরের আগে  বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু শ্রমিকেরা কেউ এ কথা শুনছেন না।

শ্রমিকেরা বলেন, প্রতি মাসের দশ তারিখে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ বেতনের সময় টালবাহানা শুরু করে। তারা বলেন, বেতন না দিলে আমরা কাজে যোগ দেব না।

এ বিষয়ে  জানতে স্বাধীন গার্মেন্টসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাজু আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অন্যদিকে বাইমাইলে কাশেম ল্যাম্পস কারখানার শ্রমিকেরা হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিলসহ দশ দফা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম জানান, বকেয়া বেতনের দাবিতে স্বাধীন গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা রাস্তা অবরোধ করেছেন। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভৈরবে গ্যাসের লিকেজ থেকে আগুন, ১০ শিশুসহ দগ্ধ ১৫

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ও ভৈরব সংবাদদাতা
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ১০ শিশুসহ ১৫ জন দগ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া চরপাড়া বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দগ্ধদের উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ১২ জনকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠান। বাকি তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দোকান মালিক, লুন্দিয়া টুকচানপুর গ্রামের বাসিন্দা জহির মিয়া পুরি ও রুটি ভাজি বিক্রি শেষে সকালে ১০টার দিকে প্রতিদিনের মতো দোকান বন্ধ করে বাড়ি যান। তিনি ভুলে গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটরের সুইচ বন্ধ করেননি। দীর্ঘ সময় ধরে দোকানের ভেতর গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। পরে এক পর্যায়ে গ্যাসের বিস্ফোরণে দোকানে আগুন ধরে যায়। এসময় দোকানের সামনে থাকা পথচারী এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দগ্ধ হন।

আহতরা হলেন—হারুন মিয়া (৪০), সোহাগ মিয়া (১০), ওয়াসিবুল (১০), সামিউল (৯), আল আমিন (৮), শুভ (৮), নিরব (১৫), রাহাত (১২), ফাহিম (১০), আমিন (১০), হেকিম মিয়া (৫৫), সেরাজুল (১০), ছিদ্দিক মিয়া (৫৮), মোর্শিদ মিয়া (৫০) ও নাছির মিয়া (৪০)।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে স্বজনেরা জানান, আহতদের মধ্যে হারুন মিয়ার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ দগ্ধ হওয়ায় তাঁর অবস্থা সংকটজনক।

প্রত্যক্ষদর্শী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ রাস্তার ওপর আগুন ছড়িয়ে পড়ে। চোখের সামনে কয়েকজন মানুষ আগুনে পুড়তে দেখি। পরে জানতে পারি গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই আগুন ছড়িয়েছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশোর কুমার ধর বলেন, ১৫ জন অগ্নিদগ্ধ রোগী হাসপাতালে আসে। একজনের শরীরের ৮০ শতাংশ এবং অন্যদের ২০–৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। ১২ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি যুবকের

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি 
দুলাল মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
দুলাল মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার একটি গ্রামে তৃতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার আসামির নাম দুলাল মিয়া (২৮)। তিনি ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বিচারক আশরাফুল আলম আসামির জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন। পরে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকছুদ আহাম্মদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আসামির জবানবন্দির বরাতে ওসি মাকছুদ আহাম্মদ জানান, গত মঙ্গলবার রাতে দুলাল মিয়া আট বছরের ওই শিশুকে ঘর থেকে ডেকে নেন। এরপর তাকে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ সময় শিশুটি চিৎকার করলে শ্বাস রোধ করে তাকে হত্যা করেন দুলাল।

মাকছুদ আহাম্মদ জানান, এদিকে ওই রাতেই শিশুকে না পেয়ে তার পরিবার খোঁজাখুঁজি শুরু করে। সে সময় সন্ধান চেয়ে মাইকে প্রচারও করা হয়। তখন দুলাল মিয়াও শিশুটির বাবার সঙ্গে খোঁজাখুঁজিতে যোগ দেন। পরদিন গত বুধবার সকালে বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত একটি ঘর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় দুলাল মিয়া ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়ে পুলিশ সদস্যদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন।

জবানবন্দির বরাতে ওসি মাকছুদ আহাম্মদ বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের সময় দুলাল মিয়ার আচরণে আমাদের সন্দেহ হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রউফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আল সরকারের সঙ্গে কথা হয়। পরে বুধবার রাতে শিশুটির বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন। মামলার পরই দ্রুত তদন্ত শুরু করে ঘটনাস্থলসংলগ্ন বিভিন্ন আলামত পর্যালোচনা শেষে ওই রাতেই দুলাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শিশুটির লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মামলা ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
পাবনার চাটমোহরে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের একটি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাবনার চাটমোহরে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের একটি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার চাটমোহর উপজেলায় অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের একটি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, মামলায় নির্দোষ ব্যক্তিদের ফাঁসানো হয়েছে। পুনঃতদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন ও অভিযুক্তদের খালাস দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ শুক্রবার সকালে চাটমোহর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মামলার ১ নম্বর বিবাদী, ছাইকোলা ইউনিয়নের কুবড়াগাড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন।

জানা গেছে, গত ৪ জুলাই রাত আড়াইটার দিকে কুবড়াগাড়ি গ্রামের আব্দুর রহিম (৬৫) নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ওই সময় দুর্বৃত্তরা তাঁকে ঘর থেকে বাইরে ডেকে শরীরে দাহ্য পদার্থ ঢেলে দেয়। এতে তিনি দগ্ধ হন। প্রথমে তাঁকে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। এ ঘটনায় আব্দুর রহিমের ভাই আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে প্রতিবেশী সাতজনকে বিবাদী করে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনে মামলা করেন। মামলার ছয়জন জামিন পেলেও ১ নম্বর বিবাদী শফিকুল ইসলাম এখনো কারাগারে।

সংবাদ সম্মেলনে সুমাইয়া খাতুন দাবি করেন, ঘটনার দিন ওই সময়ে তাঁর স্বামী চাটমোহরে ছিলেন না। তাঁরা দুজনই সেদিন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ছিলেন, যেখানে তাঁরা ফুটপাতে বিরিয়ানি বিক্রি করেন। তা সত্ত্বেও তাঁর স্বামীকে মামলার ১ নম্বর বিবাদী করা হয়েছে। এ ছাড়া শফিকুলের পিতা শহিদ সরদারসহ আরও দুই ভাইকে মামলায় জড়ানো হয়েছে।

সুমাইয়ার ভাষ্য, ‘আমার স্বামী গ্রামে থাকেন না। আমরা তিন সন্তান নিয়ে হাটহাজারীতেই থাকি। প্রতিপক্ষ আমাদের ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা করেছে। প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করা হয়নি। আমরা অন্যায়ের শিকার।’ তিনি অভিযোগ করেন, মামলার তদন্তে গাফিলতি থাকায় তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে হয়রানির শিকার। তিন সন্তানসহ মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মামলাটি পুনঃতদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে শফিকুল ইসলামের পিতা শহিদ সরদার, তাঁর মা ও অন্যান্য স্বজন উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গুলশানে ৫৪০ বোতল বিদেশি মদ জব্দ, গ্রেপ্তার ১

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি 
র‍্যাবের হাতে জব্দ হওয়া ৫৪০ বোতল বিদেশি মদ। ছবি: র‍্যাব
র‍্যাবের হাতে জব্দ হওয়া ৫৪০ বোতল বিদেশি মদ। ছবি: র‍্যাব

রাজধানীর গুলশানে মদের চালানসহ এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ৫৪০ বোতল বিদেশি মদ ও মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত একটি পিকআপ ভ্যান জব্দ করা হয়।

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে।

গ্রেপ্তার রবিউল ইসলাম (২১) নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ভিটি গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে।

এ বিষয়ে র‍্যাব-১-এর কর্মকর্তা মো. রাকিব হাসান বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গুলশানে অভিযান চালিয়ে ৫৪০ বোতল বিদেশি মদ, মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত পিকআপ ভ্যানসহ রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত