Ajker Patrika

নয়াচরে ৫৬ বছর ধরে আলো ছড়াচ্ছে মাওলানা অছিউদ্দীনের পাঠাগার

হারুনূর রশিদ, রায়পুরা (নরসিংদী) 
আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫: ২৩
নয়াচরে ৫৬ বছর ধরে আলো ছড়াচ্ছে মাওলানা অছিউদ্দীনের পাঠাগার

নরসিংদীর রায়পুরার আড়িয়াল খাঁ নদের তীরের এক অজপাড়াগাঁয়ে গড়ে উঠেছে ‘জাগরণী পাঠাগার’। দুর্লভ বইয়ের এই সংগ্রহশালার মাধ্যমে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন মাওলানা অছিউদ্দীন। পাঠাগারটিতে রয়েছে প্রায় ২০ হাজার বই। বর্তমানে মাওলানা অছিউদ্দীনের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান উম্মুল কুরা ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার একটি অব্যবহৃত কক্ষে চলছে ১৯৫৬ সালের এই পাঠাগার। 

আদিয়াবাদে আড়িয়াল খাঁ নদের তীরের সিরাজনগর নয়াচর গ্রামের শিক্ষক মৃত হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াছ মাস্টারের ছেলে অছিউদ্দীন আহমদ। জন্ম ১৯৪৬ সালে। কওমি মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) করেন । ১৯৭৩-৭৪ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে বিএ পাস করেন। 

এবার বরং এই পাঠাগার গড়ে তোলার গল্পটি জানা যাক। ছেলেবেলায় বাবার বই পড়া দেখে বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তাঁর। পড়াশোনার খরচ বাঁচিয়ে টিফিনের এক-দুই পয়সা বাঁচিয়ে জমাতে থাকেন টিনের বাক্সে। জমানো টাকায় কিনতেন পছন্দের বই। বইগুলো বাড়িতে রাখতেন বাক্সে ভরে। সহপাঠীরা বেড়াতে এলেই উঠোনে মেলে ধরতেন সেই বাক্স। বন্ধুরা বই দেখে রীতিমতো অবাক হতো! তাঁর জমানো বইয়ের অনুপ্রেরণায় বন্ধুদের নিয়ে ১৯৬৪ সালে গড়লেন পাঠাগার। নাম দিলেন ‘কিশোর সমিতি’। এ নামে চার বছর চলার পর যৌবনের পদচারণায় নতুন জাগরণে উজ্জীবিত হয়ে পাঠাগারটির নাম রাখেন ‘জাগরণী সমিতি’। ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে পাঠাগারটি রেজিস্ট্রেশন পায়। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা পাঠাগারটি ২০১১ সালে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর থেকে নরসিংদী জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের মাধ্যমে ‘জাগরণী পাঠাগার’ নামে সনদ পায়। 

সিরাজনগর উম্মুল কুরা ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার একটি অব্যবহৃত কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, জাগরণী পাঠাগারের টেবিলে বসে বই পড়া, সম্পাদনা, লেখালেখিতে ব্যস্ত ডা. অছিউদ্দীন। পাশের চেয়ারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী পাঠক জ্ঞানচর্চায় মগ্ন। 

পাঠাগারটিতে উপন্যাস, গল্প, কবিতাসহ ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভ্রমণ, রম্যরচনা, বিজ্ঞানসহ নানা বিষয়ের বই আলমারিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর রচনাবলিসহ পাঠাগারে আছে হাজার বিশেক বই। এ ছাড়া ‘তত্ত্ববোধিনী’, ‘প্রবাসী’, ‘শনিবারের চিঠি’, ‘মোহাম্মদী’, ‘সওগাত’ ইত্যাদি পত্রিকার সংখ্যা আছে। ৫৬ বছর ধরে বিভিন্ন পত্রিকার দুর্লভ কাটিং ১০টি বইয়ের আকরে আলাদা আলাদা বিষয় ধরে সংরক্ষণ করেছেন। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোয় খোলা রাখেন পাঠাগার। দূরদূরান্ত থেকে আসা পাঠক মুগ্ধ হন একজন মানুষের অসাধারণ এক কাজ দেখে। 

পাঠাগারটিতে যারা এসেছেন তাঁদের মধ্যে আছেন ১৯৯০ সালে লন্ডন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও জীবনানন্দ গবেষক উইলিয়াম রাদিচে, ২০০৮ সালে তৎকালীন নরসিংদী জেলার অ্যাডিশনাল ডিসি বিজয় কান্তিসহ বহু গুণীজন। সবাই পাঠাগারটি দেখে মুগ্ধ হয়ে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেছেন। 

ডা. অছিউদ্দীন আহমদ পাঠাগার পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা করেছেন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করছেন এখনো। এ জন্য মানুষের কাছে ডা. অছিউদ্দীন নামেও পরিচিত তিনি। পাশাপাশি লেখালেখিও চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্পাদনা করেছেন মাসিক পত্রিকা ও সাময়িকী। তাঁর সম্পাদিত বই জাগরণ, অগ্রদূত, লাব্বাইক, নাজাত, নওরোজ পেয়েছে পাঠকপ্রিয়তা। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আটটি। অমুদ্রিত পাণ্ডুলিপি ২২টি। 

রায়পুরা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও দীর্ঘকাল সহসভাপতি তিনি। ছিলেন ‘সাপ্তাহিক বার্তা’র স্টাফ রিপোর্টার। ১৯৭০ সাল থেকে দুই যুগ সিরাজনগর হাইস্কুল ও সিরাজনগর উম্মুল কুরা সিনিয়র মাদ্রাসায় বাংলা সাহিত্যে পাঠদান করান।
 
পাঠাগারে আসা আদিয়াবাদ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন, ‘আমার বাড়ি স্যারের বাড়ির পাশেই। একটা মানুষ বইয়ের জন্য এত পাগল হতে পারে, স্যারকে না দেখলে বুঝতামই না। আমি সময় পেলে পাঠাগারে পড়তে আসি।’ 

মুফতি মুহাম্মদ রাকিব বলেন, ‘তাঁকে দেখেই বই পড়ার আগ্রহ জন্মে। কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়িতে এলে বারবার পাঠাগারে ছুটে আসি।’ 

স্থানীয় শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, উমর আলী মোল্লা, মুর্শিদা আক্তার বলেন, পাঠাগারটি আদর্শ মানুষ তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। অজপাড়াগাঁয়ে পাঠাগারটি থাকায় গ্রামের এবং গ্রামের বাইরে যারা সবাই উপকৃত হচ্ছেন। 

সিরাজনগর উম্মুর কুরা ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমর ফারুক বলেন, ‘পাঠাগারটি ৫৬ বছর ধরে জ্ঞানের আলো বিতরণ করছে। এতে সমাজ উপকৃত হচ্ছে, মানুষ জ্ঞান অর্জন করে ব্যক্তিজীবনে কাজে লাগাতে পারছেন। যুবসমাজ মাদকসহ বিভিন্ন অন্যায় থেকে বিরত থাকছে। ’

খুবই সাধাসাধি জীবনযাপন মাওলানা অছিউদ্দীনের। বহু বছরের পুরোনো টিনের ভাঙা ঘরেই পরিবার নিয়ে বাস তাঁর। ছয় সন্তানের জনক তিনি। বর্তমানে শরীরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগ বাসা বাঁধলেও পাঠাগারে সময় দেন।

ডা. অছিউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘বই পড়াতে আনন্দ পাই, সে জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে জাগরণী পাঠাগারকে দেশের শীর্ষস্থানীয় গ্রামীণ পাঠাগারে পরিণত করার স্বপ্ন দেখি। ১৯৬৪ সালে পড়াশোনা করতে পুরান ঢাকায় ছিলাম। ফুটপাতে দোকানিরা বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসত। হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা কিংবা এক টাকায় বই কিনতাম। দীর্ঘদিন ধরে আমি খেয়ে না-খেয়ে বইয়ের পাহাড়ই গড়েছি।’ 

নিজের পাঠাগারে কাজ করছেন মাওলানা অছিউদ্দীন। ছবি: আজকের পত্রিকাতিনি আরও বলেন, ‘যান্ত্রিক ও প্রযুক্তির যুগে আমাদের তরুণ সমাজের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ কমে গেছে। নতুন প্রজন্ম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রযুক্তি ব্যবহারে মাত্রাতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়েছে। এগুলো যত কম ব্যবহার হবে, ততই মঙ্গল। তাই নতুন প্রজন্মকে বইমুখী করা অতি জরুরি। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও গ্রামের মানুষের মধ্যে আলো ছড়াতে তিল তিল করে পাঠাগারটি গড়েছি। পাঠাগারের স্থায়ী কোনো স্থাপনা নেই। টাকার অভাবে বইয়ের যত্ন নিতে পারছি না। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে বড় উপকার হতো। আমার ছেলে মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহকে অসিয়ত করেছি, সে এই পাঠাগার দেখাশোনা করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুজনের গোলটেবিলে পর্যবেক্ষণ: ভোটের খরচ না কমলে দুর্নীতিও কমবে না

  • আর্থিক বিষয়সহ কমিশনের অনেক সুপারিশ উপেক্ষা করার অভিযোগ।
  • নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার বিষয়ও বিবেচনায় রাখার তাগিদ।
  • অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাদ পড়েছে বা গৃহীত হয়নি বলে অভিমত।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনী ব্যয় কমানো না গেলে নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতিও কমানো যাবে না। কিন্তু অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠনের মাধ্যমে নিবিড় নজরদারি করতে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) উভয়ের তরফে অবহেলা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রায়ণ, আর্থিক স্বচ্ছতা ও দলের সদস্যদের দায়বদ্ধতা, নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও কিছু সুপারিশ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) গ্রহণ করা হয়নি।

গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাদের কাছ থেকে এসব কথা উঠে আসে। বেসরকারি সংগঠন ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’ এ বৈঠকের আয়োজন করে।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সরকার ও ইসির প্রস্তাবের মাধ্যমে আরপিওর বিভিন্ন অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আবার অনেক বিষয়ই উপেক্ষা করা হয়েছে। কোনো আসনে মোট ভোটের ৪০ শতাংশ না পড়লে আবার ভোট গ্রহণের বিধান, পর পর দুটি নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান বাতিল করা এবং প্রতি পাঁচ বছর পর দলের নিবন্ধন নবায়ন বাধ্যতামূলক করা, কোনো ব্যক্তির একাধিক আসনে প্রার্থী হওয়ার বিধান বাতিল করা, ২০২৩ সালে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ নিবন্ধন দেওয়া দলের নিবন্ধন বাতিল করাসহ অনেক সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে।

নির্বাচনী ব্যয়ের অর্থ পরে জনগণের কাছ থেকে আদায়ের চেষ্টা করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি মনে করেন, ইতিমধ্যে ‘মনোনয়ন-বাণিজ্যের মাধ্যমে’ নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের আশঙ্কা রয়েছে।

নির্বাচনে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা থেকেও সুরক্ষা প্রয়োজন। জাতীয় ঐক্য ছাড়া একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

সুজনের সম্পাদক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, ভোট গণনা এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়টি একটি দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ হিসেবে দেখা উচিত। নির্বাচন কমিশন এবং সরকার নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করতে যে সংস্কারগুলো করেছে, তা সন্তোষজনক নয়।

বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, নির্বাচনসংক্রান্ত সুপারিশগুলোর মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশ গৃহীত হয়েছে। বাকি সুপারিশগুলো যাতে গ্রহণ করা হয়, সে জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এবং কমিশনকে চাপের মুখে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

ইসির সাবেক অতিরিক্তি সচিব জেসমিন টুলি বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা নির্বাচনী আচরণবিধির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এর অপব্যবহার বা ভোটারদের বিভ্রান্তি রোধে প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ বা সীমাবদ্ধতাগুলো স্পষ্টভাবে থাকা উচিত ছিল। তা করা হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য সংস্কার কমিশনের তুলনায় নির্বাচনবিষয়ক কমিশনের অর্জন কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাদ পড়েছে বা গৃহীত হয়নি।

বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, অধ্যাপক ওয়ারেসুল করিম, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য মীর নাদিয়া নিভিন প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফেনী পৌরসভা: সরকারি জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ, মালামাল চুরি

  • সুলতানপুরে প্রায় ৭০ শতক জমির ওপর স্থাপিত জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র।
  • বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবেশবান্ধব সমাধানের আশায় স্থাপন করা হয়।
  • কারখানাটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় মাদকসেবীরা আস্তানা গেড়েছে।
  • ২০১৮ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়; ২০২১ সালে শুরু হয় সার উৎপাদন।
ফেনী প্রতিনিধি
ফেনী পৌরসভার সুলতানপুরে এলাকায় পরিত্যক্ত জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফেনী পৌরসভার সুলতানপুরে এলাকায় পরিত্যক্ত জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফেনী পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবেশবান্ধব সমাধানের আশায় স্থাপিত জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্রটি এখন মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কোটি টাকার এই প্রকল্পটি এখন পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে। নিয়মিত তদারকি ও নিরাপত্তা না থাকায় প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো চুরি হয়ে গেছে।

ফেনী পৌরসভার সুলতানপুরে প্রায় ৭০ শতক জমির ওপর স্থাপিত প্রকল্প এলাকাটি ঘুরে দেখা গেছে, উৎপাদন শেডগুলো ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে। কোথাও দরজা নেই, কোথাও ছাউনি খুলে নেওয়া হয়েছে। যন্ত্রপাতির কোনো অস্তিত্ব নেই। ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা কংক্রিট, মরিচা ধরা লোহার অংশ। আগাছায় ঢেকে পুরো এলাকাজুড়ে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১৮ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সার উৎপাদন শুরু হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেবক এগ্রোভেট লিমিটেড।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যাশিত আয় না হওয়ায় ২০২৩ সালেই সার উৎপাদন বন্ধ করে দেয় এগ্রোভেট লিমিটেড। পরে সেখানে কিছুদিন প্লাস্টিক পুড়িয়ে ফার্নেস অয়েল উৎপাদনের চেষ্টা চালানো হয়। ২০২৪ সালে সরকার পরিবর্তনের পর প্রকল্পটির সব কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিন কোনো তদারকি বা নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় একে একে যন্ত্রপাতিসহ অবকাঠামো চুরি হয়ে যায়।

প্রকল্প চলাকালে কেন্দ্রটির পাহারাদার হিসেবে কাজ করা ফরিদ আহমদ বলেন, ‘যখন এখানে সার উৎপাদন হতো, তখন আমি ছয় হাজার টাকা বেতনে পাহারাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতাম। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে আর কেউ এখানে আসেনি। আমিও পাহারা দেওয়া বন্ধ করে দিই। এখন এখানে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। সব ভেঙে নিয়ে গেছে চোরেরা।’ তিনি বলেন, ‘পৌরসভার কোনো পদক্ষেপ না থাকায় যে যেভাবে পেরেছে নিয়ে গেছে।’

পাশের পৌর কবরস্থানে দাফনকাজে নিয়োজিত ইমাম মোহাম্মদ আলী বলেন, কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত জায়গাটি মোটামুটি ভালো অবস্থায় ছিল। সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই চুরি শুরু হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘কারখানা স্থাপনের শুরু থেকেই আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে আশপাশে বসবাস করা কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। লাভ না হওয়ায় যারা চালু করেছিল, তারাই আবার বন্ধ করে পালিয়েছে। ৫ আগস্টের পর এলাকার কিছু মাদকসেবী, চোর ও বহিরাগতরা মিলে ফ্যান, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতিসহ সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। কয়েকবার পৌরসভাকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকির উদ্দিন বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন না দাবি করে পৌর স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

পৌর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ সাহা বলেন, ‘২০১৮ সালে সুলতানপুরে বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন কেন্দ্রটি চালু করা হয়। চট্টগ্রামের একটি এনজিও পৌরসভার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এটি পরিচালনা করছিল। সম্ভবত লাভ না হওয়ায় তারা বন্ধ করে দেয়। তবে তারা প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করেনি। বর্তমানে প্রকল্পটির অবস্থা সম্পর্কে আমার জানা নেই।’

কেন পৌরসভার আওতাধীন কোটি টাকার প্রকল্পটি অচল হয়ে পড়েছে এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির উদ্দিন। একপর্যায়ে তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সেবক এগ্রোভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. খালেদ আমিনকে ফোন করে আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রকল্পটি পৌরসভার কাছে হস্তান্তরের জন্য বলেন। তবে প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণে পৌরসভা কেন কোনো উদ্যোগ নেয়নি এই প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে সেবক এগ্রোভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. খালেদ আমিনকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জয়পুরহাটের ২টি আসন: জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা

  • বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ।
  • তৃণমূলকে উপেক্ষা করলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বলছেন বঞ্চিতদের অনুসারীরা।
  • বিএনপির দ্বন্দ্বকে সুযোগ হিসেবে দেখছে জামায়াত।
মো. আতাউর রহমান, জয়পুরহাট 
জয়পুরহাটের ২টি আসন: জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা

জয়পুরহাটের দুটি আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর দলটির তীব্র অন্তঃকোন্দল সামনে আসে। দুই আসনেই প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনুসারীরা। সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে সড়ক অবরোধ, রাস্তায় শুয়ে পড়া, টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ কিংবা মশাল মিছিল—কিছুই বাদ যায়নি। বিএনপির এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে সুযোগ হিসেবে দেখছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগেভাগেই মাঠে নেমে গণসংযোগ শুরু করেছেন। তৎপর এনসিপি ও এবি পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও।

জয়পুরহাট-১ (জেলা সদর ও পাঁচবিবি) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধান। তবে এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলীম এবং কুসুম্বা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল গফুর মণ্ডলের অনুসারীরা। তাঁরা বলছেন, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে প্রার্থী নির্ধারণ করলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফয়সাল আলীম বলেন, ‘তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সম্পর্ক আমার। অবহেলিত এ এলাকার উন্নয়ন এবং দলে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেওয়ার সবচেয়ে বেশি যোগ্যতা আমি রাখি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সব দিক বিশ্লেষণ করে দল আমাকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে।’

জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা আমির মো. ফজলুর রহমান সাঈদ। তিনি বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চায়। অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার। বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ভোটের মাঠে আমাদের জন্য ইতিবাচক।’ এনসিপির প্রার্থী হতে পারেন দলের জেলা শাখার আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া।

জয়পুরহাট-২ (কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক সচিব আবদুল বারী। তাঁর প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা এবং সাবেক ছাত্রনেতা আব্বাস আলীর অনুসারীরা। আবদুল বারী বলেন, ‘সরকারি চাকরি করা সত্ত্বেও বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। প্রাথমিকভাবে দলের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার আগে-পরে এলাকাবাসীর ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। নির্বাচিত হলে কৃষিভিত্তিক কারখানা গড়ে তুলব। কৃষিসংশ্লিষ্ট উপাদানের দাম সহনশীল রাখতে কাজ করব। এলাকা আলুপ্রধান। তাই আলুভিত্তিক চিপস ইন্ডাস্ট্রি করে তোলা হবে।’ প্রাথমিক মনোনয়নবঞ্চিত গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘যাঁকে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের কোনো সম্পর্ক নাই। সাধারণ ভোটাররা তাঁকে অতিথি পাখি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি নেতা-কর্মীদের কোনো খোঁজ রাখেননি। এখন পর্যন্ত দলের প্রাথমিক সদস্যও নন। আমি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য। তৃণমূলের ৩ লাখ ৫১ হাজার নেতা-কর্মী ও ভোটাররা আমার সঙ্গে আছেন।’

জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সহকারী সেক্রেটারি এস এম রাশেদুল আলম সবুজ। তিনি বলেন, ‘ভোটাররা বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চায়। তাঁদের বিশ্বাস, জামায়াতে ইসলামীর দ্বারাই এর বাস্তবায়ন সম্ভব। নির্বাচিত হলে দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব প্রশাসন, মাদক, বৈষম্য ও চাঁদাবাজমুক্ত সমাজ তৈরির জন্য কাজ করব। কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে কাজ করব ইনশা আল্লাহ।’ এনসিপির মনোনয়ন পেতে পারেন জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল ওহাব দেওয়ান কাজল। এবি পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী এস এম জাহিদ সরকার। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবাই গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ। ছবি: সংগৃহীত
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ। ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌ-রুটে ফেরি চলাচল ঘন কুয়াশার কারণে বন্ধ করেছে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টা থেকে নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয় বলে জানান বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন।

সালাহউদ্দিন বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশা পড়তে থাকে। রাত সাড়ে ১০টার সময় নদীপথ অস্পষ্ট হয়ে যায়। সে সময় নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে এই নৌ-রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় কিছু যানবাহন আটকা পড়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আরও বলেন, কুয়াশা কেটে গেলে ফেরি চলাচল শুরু হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত