Ajker Patrika

‘হালুয়া-রুটি হয় না, সবাই যে যার মতো ব্যস্ত’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
‘হালুয়া-রুটি হয় না, সবাই যে যার মতো ব্যস্ত’

‘ইচ্ছা থাকলেও আগের মতো হালুয়া, রুটি বানানো হয় না। খাওয়ানোর তো মানুষ পাই না। পাড়াপড়শি, আত্মীয়-স্বজন যে যার মতো ব্যস্ত। শবে বরাতের ছুটিতেও কেউ কারও বাসায় আসে না, কারও বাসায় কেউ কিছু পাঠায়ও না’, বলছিলেন রাজধানীর আদাবরের গৃহিণী নাসিমা আক্তার।

ষাটোর্ধ্ব এই নারী জানান, ছেলে, বউ, নাতি নিয়ে তাঁর পরিবারে পাঁচ সদস্য। ছোট বেলা থেকে তিনি দেখে এসেছেন শবে বরাতে বাসায় বাসায় রুটি হালুয়া, মাংসসহ নানা রকমের খাবার রান্না হয়। আত্মীয়-স্বজনের বাসায় সেগুলো পাঠানো হয়। কিন্তু এই রেওয়াজ কাটছাঁট হতে হতে বছর তিনেক ধরে একেবারে হারিয়েই গেছে।

একই ধরনের কথা জানালেন মিরপুরের বাসিন্দা শিরিন মনোয়ার। শবে বরাতে তাঁদের বাসাতেও বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই নারী বলেন, ‘সারা সপ্তাহ অফিস-বাসা করতে করতে জীবন শেষ। দু-এক দিন যা ছুটি মেলে, বাসায় বসে একটু রেস্ট নেওয়া ছাড়া বাড়তি কিছু করার ইচ্ছা হয় না।’

দোকানগুলোতে ওঠে নানা ধরনের নকশি রুটি। আজ শুক্রবার সারা দেশে পালিত হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত। এই দিনে বাড়িতে বাড়িতে হরেক রকমের হালুয়া, ফিরনি, রুটিসহ উপাদেয় খাবার তৈরি করে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিতরণের সংস্কৃতি বহু পুরোনো। কিন্তু রাজধানীতে অনেকের সঙ্গে কথা বলেই দেখা গেল, এই সংস্কৃতি থেকে তারা একটু একটু করে সরে আসছেন। কেউ ছুটি কাটাতে ঢাকার বাইরে চলে গেছেন। কেউ আবার বাসায় বসেই নৈমিত্তিক কিছু কাজ করছেন। তবে অনেকেই ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়েই দিনটি পালন করছেন। বিভিন্ন কবরস্থানে আপনজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়াও করছেন অনেকে।

ঘরে ঘরে রুটি-হালুয়া তৈরি করে অন্যদের মধ্যে বিলানোর সংস্কৃতির এই খরায় জমে উঠেছে রাজধানীর দোকানগুলো। নাগরিক ব্যস্ততার কারণে নিজে তৈরি করতে না পারলেও দোকান থেকে কিনে এনে সপরিবারে হালুয়া-রুটি খাওয়ার একটা চল জারি আছে।

বিকেলের দিক থেকে খাবারের দোকানগুলোতে ভিড় বাড়তে শুরু করেশবে বরাতকে ঘিরে রাজধানীতে খাদ্যসামগ্রীর বাজার বেশ জমজমাট দেখা গেছে আজ। সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় রুটি, হালুয়া, জিলাপির পসরা সাজিয়ে বসতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের। দিনের বেলা সেখানে ক্রেতা খরা থাকলেও বিকেল গড়াতেই সেসব দোকানে বেচাকেনার ধুম পড়ে গেছে।

রাজধানীর শংকরে আবদুস সালাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছর শবে বরাতে বেচাকেনা কম ছিল। এবার মনে হইতেছে করোনারে হারাইয়া ভয়ডরহীনভাবে সবাই কেনাকাটা করতেছে।’

শবে বরাত উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও পুরান ঢাকার চকবাজারে নানা ধরনের হালুয়া ও রুটি বেচাকেনার ধুম চলছে। ঠান্ডা লাচ্ছি, মাওয়ার লাড্ডু, রসমালাইসহ নানা ধরনের খাবার পাওয়া যাচ্ছে সেখানে। চকবাজার ছাড়াও ওয়ারী, রায় সাহেব বাজার, নারিন্দা ও আশপাশের এলাকায় রুটি-হালুয়া কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। বাহারি সব রুটির দাম আকার ভেদে ২০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত। আর বিভিন্ন ধরনের হালুয়া পাওয়া যাচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০০-১০০০ টাকায়।

বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানীর মসজিদগুলোয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা ব্যস্ত ইবাদত-বন্দেগিতে।এদিকে শবে বরাত উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসায় ওয়াজ মাহফিল, দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ মাগরিব নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘শবে বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে। ওয়াজ মাহফিল শেষে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ওয়াজ ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান।

শবে বরাতে আতশবাজি, পটকাবাজি নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ সম্পর্কিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএমপি জানিয়েছে, শবে বরাতের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদ্‌যাপন নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে শবে বরাত রাতে আতশবাজি ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণার বিষয়টি মাইক দিয়ে মহল্লায় মহল্লায় প্রচার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাড়কাঁপানো শীতে কাঁপছে জীবননগর, এক দিনেই তাপমাত্রা কমল ৪ ডিগ্রি

জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি 
আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা জীবননগর। সূর্যের দেখা নেই। শীতের দাপট তীব্র। এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়ায় পুরো জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কনকনে শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ৯৬ শতাংশ। আর সকাল ৯টায় তাপমাত্রা আরও কমে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে এবং আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ।

অন্যদিকে গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৯৪ শতাংশ। সকাল ৯টায়ও তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থেকে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়, তবে আর্দ্রতা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৮৬ শতাংশে।

এই হিসাবে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে যান চলাচলে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ, ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো।

আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভ্যানচালক রনি আহমেদ বলেন, ‘ভোরে রাস্তায় নামতেই গা জমে যায়। কাজ না করলে খাওন জোটে না, আবার এই শীতে শরীরও সয় না।’

দিনমজুর রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শীত বাড়লে কাজ কমে যায়। কাজ না থাকলে খাওন জোটে না। গরিব মানুষের শীতটা সবচেয়ে বেশি কষ্টের।’

জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শীতের কারণে হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শীতে শিশুদের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শীত আরও তীব্র হওয়ার আগেই ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে শীতবস্ত্র বিতরণ প্রয়োজন।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল আমীন বলেন, ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া কম্বল ইতিমধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে। ছিন্নমূল, গরিব ও অসহায় শীতার্ত মানুষের মধ্যে পর্যায়ক্রমে কম্বল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে ফুলের চারা উৎপাদনে ব্যস্ত নেছারাবাদের নদীতীরের গ্রামগুলো

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি 
নেছারাবাদ উপজেলার সন্ধ্যা নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক নার্সারি। ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলচাষিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নেছারাবাদ উপজেলার সন্ধ্যা নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক নার্সারি। ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলচাষিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেছারাবাদ উপজেলার সন্ধ্যা নদীতীরবর্তী অলংকারকাঠি গ্রামে শীতের আগমন মানেই ভিন্ন এক কর্মচাঞ্চল্য। ভোরের ঘন কুয়াশার মধ্যেই নারী-পুরুষ সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন নার্সারির কাজে। কারও হাতে কাস্তে, কারও হাতে পানির পাইপ, কেউ আবার মাথায় তুলে নেন বড় ঝুড়ি। এভাবেই ফুলের চারা উৎপাদনের কর্মকাণ্ড জমে ওঠে অলংকারকাঠি, পানাউল্লাহপুর, আকলম, মাহমুদকাঠিসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে।

উপজেলায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় নার্সারি। বিশেষ করে স্বরূপকাঠি-বরিশাল সড়কের অলংকারকাঠি এলাকায় সড়কের দুই পাশে সারি সারি নার্সারি চোখে পড়ে। শীত মৌসুমকে ঘিরে এসব নার্সারিতে শুরু হয়েছে ফুলের চারা উৎপাদনের ব্যাপক প্রস্তুতি। উপজেলা কৃষি অফিস ও উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা, চলতি মৌসুমে ফুলের চারা বিক্রিতে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে।

নার্সারিগুলোতে ইতিমধ্যে ফুটতে শুরু করেছে বাহারি ফুল। অল্প সময়ের মধ্যেই লাল, নীল, হলুদ, গোলাপি ও বেগুনি রঙের ফুলে মাঠ ঢেকে যাবে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন ফুলের গালিচা। এই চারা উৎপাদন শুধু সৌন্দর্যই ছড়াচ্ছে না, নীরবে সৃষ্টি করছে এক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। পাশাপাশি দরিদ্র নারী-পুরুষের জন্য তৈরি হচ্ছে টেকসই কর্মসংস্থান।

নেছারাবাদ উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে প্রায় ১ কোটি ফুলের চারা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে, যার বাজারমূল্য ৩ কোটি টাকার বেশি। নার্সারির মালিকেরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার বেশি জমিতে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। যদিও সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অলংকারকাঠি, কুনিয়ারী, মাহমুদকাঠি, সুলতানপুরসহ অন্তত ২০টি গ্রামে ফুলের চারা উৎপাদনের কাজ চলছে। গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, টিউলিপ, কসমস, বেলি, সূর্যমুখী, অর্কিড, সিলভিয়া, মর্নিং ফ্লাওয়ার, ক্যালেন্ডুলাসসহ শতাধিক প্রজাতির দেশি ও বিদেশি ফুলের চারা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

নার্সারির মালিক মো. আদনান শেখ বলেন, নেছারাবাদে বর্তমানে ২ হাজারের বেশি নার্সারি রয়েছে। মালিক ও শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতে জড়িত। শীত মৌসুমে এই নার্সারিগুলো ফুলের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। উৎপাদন খরচ বাড়লেও চলতি মৌসুম নিয়ে তিনি আশাবাদী।

নার্সারির নারী শ্রমিক ঝুমা আক্তার বলেন, আগে সংসারে অভাব ছিল। স্বামীর একার আয়ে কষ্ট করে চলতে হতো। এখন নার্সারিতে কাজ করে সংসারের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের মুখে হাসি ফুটেছে। তিনি জানান, ফুলের চারার দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বনসাই ও বিদেশি জাতের চারার দাম সবচেয়ে বেশি।

দেখা গেছে, এসব নার্সারিতে শ্রমিকদের বড় অংশই নারী। পাশাপাশি পুরুষ শ্রমিকেরাও কাজ করছেন। নার্সারির কাজে তুলনামূলক কম মজুরির কারণে নারী শ্রমিক সহজলভ্য বলে জানান উদ্যোক্তারা। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি পেয়ে তাঁরা সংসারের খরচ সামাল দিচ্ছেন।

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান জানান, নেছারাবাদে প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে ফুলের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ব্যবসায়ীরা দেড় থেকে দুই কোটি টাকার বেচাকেনা করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ফুলের চারা উৎপাদনের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে নেছারাবাদের নদীতীরবর্তী গ্রামগুলো আগামী দিনে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফুল উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মহাসড়কে দোকান যানজটে ভোগান্তি

মো. আজিমুশ শানুল হক দস্তগীর চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)
মহাসড়কে দোকান যানজটে ভোগান্তি

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশের দোহাজারী অংশটি এখন শুধু যাতায়াতের পথ নয়, ক্রমেই মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। দোহাজারী বাজার এলাকায় ৬ লেনের প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ হলেও যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরেনি। একদিকে সড়কের ডিভাইডার দখল করে গড়ে ওঠা ভাসমান দোকান ও কাঁচাবাজার, অন্যদিকে মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবাধ চলাচল—সব মিলিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই ব্যস্ত এলাকায় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দোহাজারী পৌর সদরের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় সড়কের বিভাজকে (ডিভাইডার) খুঁটি গেড়ে অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে। কোথাও সবজি, কোথাও ফল, আবার কোথাও চায়ের দোকান। নিয়ম অনুযায়ী মহাসড়কের ওপর কোনো ধরনের স্থাপনা থাকার কথা না থাকলেও এখানে ডিভাইডারই যেন বাজারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

৬ লেনের এই মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহনের জন্য দ্রুতগতির লেন থাকলেও দোহাজারী অংশে তা কার্যত অকার্যকর। সড়কের দুই পাশে শত শত সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। নির্দিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় মূল লেনেই যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকছে। ফলে ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে আসা দ্রুতগতির বাস ও ট্রাককে দোহাজারী সদরে এসে হঠাৎ ব্রেক কষতে হচ্ছে। এতে পেছনে থাকা যানবাহন দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও তা স্থায়ী হয় না। সকালে উচ্ছেদ হলেও বিকেলেই আবার দোকান বসে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র ও বাজার ইজারাদারেরা প্রতিদিন এসব ভাসমান দোকান থেকে চাঁদা আদায় করে। এতে সড়ক দখলমুক্ত করার উদ্যোগ বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নুর উদ্দিন বলেন, ‘৬ লেনের সড়ক হওয়ায় যাতায়াত সহজ হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো ২০-৩০ মিনিটের যানজটে আটকে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দোহাজারী পৌর প্রশাসক ঝন্টু বিকাশ চাকমা জানান, তিনি সদ্য কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। দোহাজারীতে সড়ক দখল করে ভাসমান দোকান ও বাজার বসার বিষয়টি সম্প্রতি তাঁর নজরে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজির বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করা পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ। প্রতিদিনই মামলা হচ্ছে। তবে স্থানীয় তদবিরের কারণে অনেক সময় দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি হয় বলে তিনি দাবি করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘সাংগঠনিক কমিটি ভেঙে দিলে, সেই কমিটির নেতৃত্বেই নির্বাচনী কমিটি গঠন করুন।’

দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি 
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৪
হাসান মামুন। ছবি: সংগৃহীত
হাসান মামুন। ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা–গলাচিপা) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ও সদ্য বহিষ্কৃত বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতার অংশ হিসেবে ওই আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। এই ঘোষণার পর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন হাসান মামুন। তিনি নুরুল হক নুরের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেন। এর আগে ২৮ ডিসেম্বর তিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতির জন্য পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এদিকে গতকাল বুধবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে হাসান মামুনকে নির্বাহী কমিটির সদস্যপদসহ প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বহিষ্কারের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের পর হাসান মামুন তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একাধিক পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি নেতা-কর্মী ও ভোটারদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

বুধবার রাত ৮টার দিকে এক পোস্টে তিনি লেখেন, বিএনপির সিদ্ধান্ত পূর্বনির্ধারিত ছিল এবং তিনি আগেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। একই পোস্টে নেতা-কর্মীদের সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে আরেক পোস্টে তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে লেখেন, মজলুম নেত্রীর ইন্তেকালের দিনে তৃণমূলের মজলুম নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? একই সঙ্গে অতীতের একটি বহিষ্কার ও পরবর্তী সময়ে তা প্রত্যাহারের উদাহরণ তুলে ধরেন।

রাত ১১টার দিকে দেওয়া আরেক পোস্টে হাসান মামুন লেখেন, ৩৭ বছরের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত কর্মীদের চেয়ে দুই দিনের অবিশ্বস্ত ও ফ্রন্ট মিত্রদের সঙ্গে চলা বিষধর সাপের সঙ্গে বসবাসের চেয়েও ঝুঁকিপূর্ণ।

সর্বশেষ পোস্টে তিনি লেখেন, সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। সাংগঠনিক কমিটি ভেঙে দেওয়া হলে সেই কমিটির নেতৃত্বেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করার আহ্বান জানান তিনি। তার ভাষায়, নেতা-কর্মী ও ভোটাররাই তাদের মূল শক্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত