Ajker Patrika

অনুসন্ধান /মোহাম্মদপুরে নিহত ২: গণপিটুনি নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড

  • ভোরের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে বলা হয় গণপিটুনি
  • গরুর খামার ও হোটেল থেকে ডেকে দুই তরুণকে পিটিয়ে হত্যা
  • পুলিশই গণপিটুনি বলতে শিখিয়ে দেয় হামলাকারীদের
আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ৫৯
মো. সুজন ও মো. হানিফ।
মো. সুজন ও মো. হানিফ।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ভোররাতে একজনকে, ভোর হতেই আরও একজনকে একই কায়দায় রাস্তায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর রটানো হয়, ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই তরুণের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশও একই সুরে গণপিটুনির তথ্য ছড়িয়ে দেয় গণমাধ্যমে। আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ছিনতাইয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ কেউ তোলেনি। দুই তরুণকে পূর্বপরিকল্পনা করে তাঁদের বাসার কাছে একই জায়গায় দুই ঘণ্টার ব্যবধানে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যাঁরা পিটিয়েছেন এবং যাঁরা নিহত হয়েছেন সবাই পূর্বপরিচিত, একই এলাকার বাসিন্দা।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ১২৪ জনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খুঁজলে দেখা যাবে প্রতিটি গণপিটুনির ঘটনাই পরিকল্পিত। ব্যক্তিগত শত্রুতা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও বিভিন্ন মতবিরোধকে ঘিরে গণপিটুনির নামে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। শুরুতে যদি জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা হতো, তাহলে এ রকম ঘটনা বারবার ঘটত না।’

গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোররাত ও সকালে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের ১৬ নম্বর সড়কের মাথায় সাঁকোরপাড় এলাকায় দুই দফায় চার তরুণকে পেটানো হয়। ভোররাত সাড়ে ৪টায় মারধরের শিকার হন মো. সুজন ওরফে বাবুল ও মো. শরীফ।

পরে সকাল সাড়ে ৬টায় একই স্থানে আবারও মারধর করা হয় মো. হানিফ ও মো. ফয়সালকে। এতে সুজন ও হানিফ নিহত হন। গুরুতর আহত শরীফ ও ফয়সালকে ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

নিহত সুজনের গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানের বি-ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের একটি ভাড়া বাসায় বাবা টাইলস মিস্ত্রি জাহাঙ্গীর আলম, মা শাহনাজ বেগমের সঙ্গে থাকতেন। মাঝেমধ্যে বাবার সঙ্গে টাইলসের কাজও করতেন তিনি।

সুজন ৯ সেপ্টেম্বর রাতে নবীনগর হাউজিংয়ে চাচাতো বোনের বাসায় খাওয়ার পর বন্ধু শরীফের সঙ্গে স্থানীয় সাদিক অ্যাগ্রোর গরুর খামারে যান। খামারকর্মী মনিরুলের কক্ষে তাঁরা ঘুমান। ভোররাত ৪টার পর নৈশপ্রহরী মালেক, হাবীবসহ সাত-আটজন তাঁদের খামার থেকে তুলে নবীনগরের ১৪ নম্বর সড়কের মাথায় সাঁকোরপাড় এলাকায় নিয়ে যান।

এই প্রতিবেদক ২৩ সেপ্টেম্বর ওই গরুর খামারে গেলে কর্মচারী মো. মিলন বলেন, খামারে থাকতে দেওয়ার কারণে মনিরুলকেও মারধর করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সোনিয়া আক্তার সুমি জানান, নবীনগর ১৬ নম্বর সড়কে তাঁর বাসা। তিনি চিৎকার শুনে বাইরে এসে দেখেন, কয়েকজন লোক সুজন ও শরীফকে ১৪ নম্বর সড়কের মাথায় নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে নৈশপ্রহরী হাবীব, মালেক, শাহাবুদ্দিন, আক্তার, নুরু, হাসনাইন, শাহীন, চা-দোকানি জহিরুল ওরফে জাহিদ ও আল আমিন মিলে তাঁদের মারধর করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনার পাশাপাশি সুজন ও শরীফকে মারধরের তিনটি ভিডিও আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। স্থানীয়দের নিয়ে ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, হামলাকারীদের মধ্যে রয়েছেন বাঁশ ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন, নৈশপ্রহরী হাবীবুর রহমান হাবীব ও মালেক, মুরগি ব্যবসায়ী আল আমিন ও তাঁর কর্মচারী শাহীন, মকবুল, চা-দোকানি জহিরুল ওরফে জাহিদ, কবির, নূরু মিয়া, শামসু ও তাঁর ছেলে শাহাবুদ্দিন।

সেদিন খবর পেয়ে ভোররাতে মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আক্তারুজ্জামান প্রথম ঘটনাস্থলে যান। তিনিই হামলাকারীদের গণপিটুনির কথা শিখিয়ে দেন বলে অভিযোগ করেছেন আহত শরীফের ভাই। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই আক্তারুজ্জামান বলেন, ভোররাতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে থাকা কেউ মারধরের কথা স্বীকার করেননি। পরে তিনি দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মো. ফয়সাল ও মো. হানিফ নামের আরও দুজনকে একই জায়গায় মারধর করা হয়। তাঁরা দুজনে একটি হোটেলে নাশতা করতে যাচ্ছিলেন—এ সময় একই লোকজন আকবরের চায়ের দোকানের সামনে তাঁদের আটকায়। ভিডিওতে দেখা গেছে, ফয়সালকে পাঁচজন এবং হানিফকে তিনজন মিলে পেটাচ্ছে।

কবির, নৈশপ্রহরী মালেক ও হাবীব মিলে হানিফকে পিটিয়ে ফুটপাতে অচেতন অবস্থায় ফেলে রাখেন। এ ঘটনার সময় পোশাকশ্রমিকেরা কারখানায় যাচ্ছিলেন। তাঁদের একজন শিউলী বেগম। তিনি বলেন, সেদিন তাঁরা কারখানায় যাওয়ার সময় দেখেন, দুই ব্যক্তিকে ৮-৯ জনে মিলে মারধর করছেন। ঠেকানোর চেষ্টা করেন ফয়সালের ভাই মো. রবিউল ও তাঁর স্ত্রী সোনিয়া আক্তার সুমি। সোনিয়া ঘটনার সময়ের একটি ভিডিওতে নিজেকে দেখিয়ে বলেন, পিটুনি ঠেকাতে গেলে তাঁর স্বামী রবিউলকেও মারধর করে আল আমিন, মালেক, নূরু, হাবীব, শাহাবুদ্দিন, শাহ আলম।

নিহত হানিফ নবীনগর হাউজিংয়ের ১৪ নম্বর সড়কের শেষ মাথার একটি বাসায় মা-বাবা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। তিনি একটি পাম্পের কর্মচারী ছিলেন। তাঁকে হত্যার ১৭ দিন আগে গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে তাঁর স্ত্রী ঝুমু প্রথম কন্যাসন্তানের মা হন। হানিফ সেই সন্তানকেও দেখে যেতে পারেননি বলে স্ত্রী আফসোস করেন।

হানিফের বাবা সাদেক হাওলাদার বলেন, প্রথম ঘটনার পর পুলিশ যদি হামলাকারীদের ধরত, জেরা করত, তাহলে দ্বিতীয় ঘটনা ঘটত না। তিনি বলেন, হানিফকে হত্যায় অভিযুক্ত আক্তার তাঁর ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। সরকার পরিবর্তনের পর সে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেছে, হাউজিংয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব পেয়েছে। চার-পাঁচ দিন আগে থেকে পরিকল্পনা করে তারা দুজনকে পিটিয়ে মারছে।

নিহত ব্যক্তিদের পরিবার অভিযোগ করেছে, চারজনকে পিটুনির নেতৃত্বে ছিলেন আক্তার হোসেন। যাঁরা হামলায় অংশ নিয়েছেন, তাঁরা সবাই আক্তারের লোক হিসেবেই পরিচিত। মূল অভিযুক্ত আক্তার হোসেনকে নবীনগর হাউজিংয়ের ১২ নম্বর সড়কের বাসায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ঘটনার দিন ভোরে নৈশপ্রহরীরা ফোন দিয়ে তাঁর স্বামীকে (আক্তার) বাসা থেকে ডেকে নেন। এরপর থেকে তিনি আর বাসায় নেই।

নিহত হানিফের বড় ভাই আক্তার হোসেন বলেন, যারা মেরেছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাইলে পুলিশ মামলা নেয়নি। ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে পুলিশ তাঁর স্বাক্ষর নিয়েছে।

মোহাম্মদপুর থানার ভরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক বলেন, গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য ছিল। নিহত একজনের ভাই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন। তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি আরও বলেন, নিহত দুজনের বিরুদ্ধে চারটি করে মাদক ও ছিনতাইয়ের মামলা ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত