Ajker Patrika

ভুয়া চিকিৎসা সনদে পেশাদার লাইসেন্স

  • কম্পিউটারের দোকানে তৈরি হয় ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট।
  • বিআরটিএ নির্ধারিত ৮ হাসপাতালে হয় মেডিকেল পরীক্ষা।
  • ৭ হাসপাতাল থেকে সার্টিফিকেট ই-মেইলে আসে না বিআরটিএতে।
  • দুর্ঘটনায় জড়িত মাদকাসক্ত চালকের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী।
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৬: ২৮
ভুয়া চিকিৎসা সনদে পেশাদার লাইসেন্স

পেশাদার মোটরযান চালকদের নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরিতে ও নবায়ন করাতে মেডিকেল সার্টিফিকেট (চিকিৎসা সনদ) বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেকে ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট তৈরি করে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁরা লাইসেন্সও পেয়ে যাচ্ছেন সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘আমরা এগুলোর (ব্যাপারে) ব্যবস্থা নেব।’

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালার আলোকে নির্ধারিত ফরমে পেশাদার চালকের বিভিন্ন বিষয় দেখা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্ধারিত ফরম এবং মেডিকেল সার্টিফিকেট ভুয়া বানানো হচ্ছে। সাধারণত বিআরটিএর সার্কেল অফিসের আশপাশে যেসব কম্পিউটার কম্পোজের দোকান রয়েছে, সেগুলোয় এ ধরনের ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট তৈরি করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ডাক্তারের নাম দিয়ে ফটোশপে এডিট করে মেডিকেল সার্টিফিকেট বানানো হচ্ছে।

৮ হাসপাতালে হয় মেডিকেল পরীক্ষা

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেডিকেল পরীক্ষায় জন্য বিআরটিএ ৮টি হাসপাতাল নির্ধারণ করে দিয়েছে। তার মধ্যে আছে—কুর্মিটোলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (সাবেক পিজি), জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, রাজারবাগ।

এসব হাসপাতালের ডাক্তারের থেকে আনা সার্টিফিকেট মেডিকেল সার্টিফিকেট হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে শুধু জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান মেডিকেল সার্টিফিকেটের কপি অনলাইনে জিমেইলের মাধ্যমে বিআরটিএকে পাঠায়। এই বিষয়ে বিআরটিএ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, মেডিকেল সার্টিফিকেট বিআরটিএকে অফিশিয়ালি মেইলে পাঠানোর জন্য।

বিআরটিএর বিভিন্ন সার্কেলের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘মেডিকেল সার্টিফিকেটটি ভুয়া কি না, সেটা প্রমাণ করার যথেষ্ট সুযোগ নেই আমাদের কাছে। তবে চোখের দেখায় বোঝা যায় যে সেটা ভুয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে আমরা সেগুলো ভেরিফাই করেছি। আমরা এই ধরনের ভুয়া সার্টিফিকেট বাতিলও করতে পারছি না। কারণ, সার্টিফিকেটে ডাক্তার ও হাসপাতালের সিল সবই আছে; সে ক্ষেত্রে অফিশিয়ালি বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। হাজার হাজার লাইসেন্স ম্যানুয়ালি ক্রস চেক করার সুযোগ কম; কারণ, একটি মাত্র হাসপাতাল সার্টিফিকেট আমাদের কাছে মেইলে পাঠায়, বাকি হাসপাতালগুলো পাঠায় না।’

সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুরসহ বিভিন্ন বিআরটিএ অফিসের পাশে গড়ে ওঠা কম্পিউটার কম্পোজের দোকানগুলোয় দেদার বানানো হচ্ছে মেডিকেল সার্টিফিকেট। টাকার বিনিময়ে হাসপাতাল, ডাক্তারের সিলসহ সই জাল করে বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে মেডিকেল সার্টিফিকেট। এই কাজ বেশি করছেন একশ্রেণির দালাল; যাঁরা ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে দেওয়ার চুক্তি করছেন গ্রাহকদের সঙ্গে।

মিরপুরে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে এসেছিলেন মো. আলিফ। তাঁর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘লাইসেন্সের কাজে অনেক ভেজাল (জটিল)। অনেকগুলো কাগজপত্র লাগে। এর মধ্যে মেডিকেল সার্টিফিকেট করানো একটা জটিলতা। হাসপাতালে ঘুরতে ঘরতে দিন শেষ। আমাদের এত সময় নেই। দোকানে মেডিকেল সার্টিফিকেট বানিয়ে দেয়, সেটা দিয়ে কাজ চালিয়ে নিয়েছি।’ জাল মেডিকেল সার্টিফিকেটের কারণে যদি আবেদন বাতিল হয় তখন কী হবে-এ প্রশ্নে আলিফ বলেন, ‘জানি না আবেদনটি বাতিল হবে কিনা। তবে আমার পরিচিত অনেক চালক এইভাবে লাইসেন্স নিয়েছেন।’

জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি আসার পরে এই ধরনের অভিযোগ পেয়েছি, ব্যবস্থাও নিয়েছি। আমাদের এডি (সহকারী পরিচালক) প্যানেলে যাঁরা আছেন, তাঁদের প্রত্যেককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কারণ, এসব অ্যাটাচমেন্ট অনলাইনে আসে, সেখানে অনেক সময় ভুল দেয়। তাই অ্যাটাচমেন্টগুলো যাচাই করে সত্যতা পেলে তারপরে অনুমোদন দেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরাসরি রিপোর্টটা আমাদের সার্ভারে আপলোড করে দিলে ভালো হতো।’

মেডিকেল পরীক্ষায় চালকের যেসব বিষয় দেখা হয়

সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালায় পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেডিকেল সার্টিফিকেটের মাধ্যমে চালকের যে বিষয়গুলো পরীক্ষা করা হয়, সেগুলো হলো—প্রার্থীর বয়স, দৃষ্টিশক্তির কোনো ত্রুটি আছে কি না, প্রার্থী সহজে লাল ও সবুজ রং চিহ্নিত করতে পারেন কি না, প্রার্থীর রাতকানা এবং বধিরতা রোগ আছে কি না, মোটর যান চালনায় অক্ষম এ রকম অঙ্গহানি প্রার্থী আছে কি না, মদ বা ড্রাগে আসক্তির কোনো লক্ষণ আছে কি না। এ ছাড়া প্রার্থীর শনাক্তকরণ চিহ্ন আছে কি না, তা-ও দেখা হয়ে থাকে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে অদক্ষ, মানসিক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স পান এবং তিনি যদি সড়কে থাকেন, তাহলে সড়ক যতই মাখনের মতো করা হোক, দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। দুর্ঘটনার অন্যতম ফ্যাক্টর (কারণ) হলো হিউম্যান এরর (মানুষের ভুল)। শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং মাদকাসক্ত চালক যদি সড়কে থাকেন, অন্য চালক দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হলেও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) গবেষণায় দেখা যায়, ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে দুর্ঘটনায় জড়িত মাদকাসক্ত চালক ছিলেন ১২-১৪ শতাংশ। এই সংখ্যা ২০২০-২১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ থেকে ২৪ শতাংশ। বর্তমান সময়ে এই সংখ্যা আরও ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এটি বাড়ার কারণ হচ্ছে, চালকদের জীবনমানের এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। সড়ক পরিবহন আইনে যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, তার কোনোটি বাস্তবায়িত হয়নি।

সমাধান মিলতে পারে প্রযুক্তিতে

বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, বিআরটিএর সার্ভারে বিএমডিসির রেজিস্টার্ড ডাক্তারদের যুক্ত করতে হবে। ডাক্তাররা যে মেডিকেল সার্টিফিকেট দেবেন, সেটা বিআরটিএ সিস্টেমে চলে আসবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এতে ভুয়া সার্টিফিকেট ভেরিফাই করা সহজ হবে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টেকনোলজি অনেক এগিয়ে গেছে, কিউআর কোডসংবলিত মেডিকেল সার্টিফিকেট করা উচিত। তাহলে যে কেউ কিউআর কোড স্ক্যান করে বুঝতে পারবেন, সার্টিফিকেটটা আসল নাকি নকল।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে চাঁদাবাজির সময় গণপিটুনিতে সম্রাট বাহিনীর প্রধান নিহত

রাজবাড়ী প্রতি‌নি‌ধি
সম্রাট বাহিনীর প্রধান অমৃত মন্ডল ওর‌ফে সম্রাট। ছবি: সংগৃহীত
সম্রাট বাহিনীর প্রধান অমৃত মন্ডল ওর‌ফে সম্রাট। ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর পাংশায় চাঁদাবা‌জি করার সময় জনগ‌ণের পিটুনিতে সম্রাট বাহিনীর প্রধান অমৃত মন্ডল ওর‌ফে সম্রাট নিহত হ‌য়েছেন। এ সময় দু‌টি অস্ত্রসহ তাঁর সহ‌যো‌গী সে‌লিম শেখ‌কে আটক ক‌রে পু‌লি‌শে দি‌য়েছে জনতা। বুধবার দিবাগত রাত পৌ‌নে ১১টার দি‌কে উপ‌জেলার ক‌লিমহর ইউনিয়‌নের হো‌সেনডাঙ্গা গ্রা‌মে এই ঘটনা ঘ‌টে। নিহত সম্রাট উপ‌জেলার ক‌লিমহর ইউনিয়‌নের হো‌সেনডাঙ্গার অক্ষয় মন্ড‌লের ছে‌লে। আটক সে‌লিম একই ইউনিয়‌নের বসাকু‌ষ্টিয়া গ্রা‌মের ইসলাম শে‌খের ছে‌লে।

সম্রা‌টের সহ‌যো‌গী‌ সেলিমের কাছ থে‌কে এক‌টি পিস্তল ও এক‌টি ওয়ান শুটারগান জব্দ করে‌ছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সম্রা‌টের সহ‌যো‌গী‌ সেলিমের কাছ থে‌কে এক‌টি পিস্তল ও এক‌টি ওয়ান শুটারগান জব্দ করে‌ছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরা‌ত দিয়ে পাংশা ম‌ডেল থানার ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম জানান, সম্রাট নিজের না‌মেই এক‌টি বা‌হিনী গড়ে তু‌লে মানুষ‌কে ভয়ভী‌তি দে‌খি‌য়ে চাঁদাবা‌জি কর‌তেন। দীর্ঘদিন ভার‌তে পা‌লি‌য়ে থাকার পর সম্প্রতি এলাকায়‌ ফি‌রে এসে এক‌টি বাড়িতে চাঁদা দা‌বি ক‌রেন। কিন্তু তারা চাঁদার টাকা দি‌তে অস্বীকৃতি জানা‌য়। গত রা‌তে সম্রাট তাঁর বা‌হিনীর সদস‌্যদের নি‌য়ে ওই বাড়িতে চাঁদার টাকা আন‌তে যান। এ সময় ওই বাড়ির লোকজন ডাকাত ডাকাত ব‌লে চিৎকার দি‌লে আশপা‌শের লোকজন এসে ধ‌রে তাঁকে গণ‌পিটু‌নি দেয়। এতে ঘটনাস্থ‌লেই তাঁর মৃত‌্যু হয়। এ সময় তাঁর অন‌্য সহ‌যো‌গীরা পালি‌য়ে গে‌লেও অস্ত্রসহ ধরা প‌ড়েন সে‌লিম না‌মের একজন।

ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম আরও জানান, সম্রা‌টের সহ‌যো‌গী‌ সে‌লিম‌ের কাছ থে‌কে এক‌টি পিস্তল ও এক‌টি ওয়ান শুটারগান জব্দ করা হয়ে‌ছে। নিহত সম্রা‌টের না‌মে হত‌্যা, চাঁদাবা‌জিসহ একা‌ধিক মামলা র‌য়ে‌ছে। সম্রা‌টের মর‌দেহ ময়ন‌াতদন্তের জন‌্য ম‌র্গে পাঠা‌নোর প্রস্তু‌তি চল‌ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎টঙ্গীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে জুলাই যোদ্ধা তাহরিমা গ্রেপ্তার

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৬
টঙ্গীর মরকুন পূর্বপাড়া চৌরঙ্গীর পাড় এলাকায় নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভী। ছবি: আজকের পত্রিকা
টঙ্গীর মরকুন পূর্বপাড়া চৌরঙ্গীর পাড় এলাকায় নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভী। ছবি: আজকের পত্রিকা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকার, সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনীর প্রধানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় মামলা দায়েরের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে জুলাই যোদ্ধা তাহরিমা জান্নাত সুরভীকে (২৫)। ‎বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ১টার দিকে টঙ্গীর মরকুন পূর্বপাড়া চৌরঙ্গীর পাড় এলাকায় তাঁর নিজ বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। পরে তাঁকে টঙ্গী পূর্ব থানায় হস্তান্তর করা হয়।

‎জানা যায়, গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভী দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্তমান সরকার, সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা এবং সেনাবাহিনীর প্রধানকে নিয়ে অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য করে আসছিলেন। তাঁর এসব বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

‎আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, তাহরিমা জান্নাত সুরভীর বিরুদ্ধে আগে থেকেই ওয়ারেন্ট জারি ছিল। একই সঙ্গে তাঁর অনলাইন কর্মকাণ্ড দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।‎

‎টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কালিয়াকৈর থানা-পুলিশের কাছে তাহরিমাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে চার দিন ধরে ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীত

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৪
ঘন কুয়াশার কারণে ভোরে হেডলাইট জ্বালিয়ে বাস চলছে। পঞ্চগড়ের তেলিপাড়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘন কুয়াশার কারণে ভোরে হেডলাইট জ্বালিয়ে বাস চলছে। পঞ্চগড়ের তেলিপাড়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

টানা চার দিন ধরে ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। ভোর থেকেই জেলার সড়ক ও জনপথ ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে। কনকনে ঠান্ডা আর কুয়াশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এর প্রভাব পড়েছে কর্মজীবী মানুষ থেকে শুরু করে হাসপাতালগুলোতে।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকেই যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। ভোরে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। শীত নিবারণের জন্য বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে।

নাইট কোচের চালকেরা জানান, ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তায় কিছুই দেখা যায় না। রফিকুল আলী নামের এক চালক বলেন, ‘এত কুয়াশায় সাবধানে গাড়ি চালিয়ে আসতে হয়েছে। শীত এলেই আমাদের এই সমস্যায় পড়তে হয়। কুয়াশায় সামনে কিছুই বোঝা যায় না।’

আরেকজন চালক জানান, কুয়াশার কারণে গতি কমিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। একটু অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

শীতের প্রভাবে জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর ভিড়। সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি এ সময় গরম কাপড় ব্যবহার, উষ্ণ খাবার গ্রহণ এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, ১১ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। গত শনিবার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও পরবর্তী দিনগুলোতে তা আবার কমে গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক কাজী সাইমুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। প্রাপ্ত শীতবস্ত্রগুলো প্রতিটি উপজেলায় সমানভাবে ভাগ করে শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পিরোজপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি 
মাহমুদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
মাহমুদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

পিরোজপুর-২ (কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন। মোবাইলে আলাপকালে মাহমুদ হোসেন নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মাহমুদ হোসেন ভান্ডারিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ভাতিজা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পিরোজপুর-২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে এই আসনে বিএনপির একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বলয় গড়ে উঠেছে বলে স্থানীয়ভাবে জানা যায়।

উল্লেখ্য, পিরোজপুর-২ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন আহমদ সোহেল মঞ্জুর সুমন। গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই মাহমুদ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এ বিষয়ে মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমি ২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিলেও ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চেতনাকে ধারণ করে সব সময় দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।’

মাহমুদ হোসেন আরও বলেন, ‘পিরোজপুর-২ আসনের সাধারণ মানুষ আমাকে এই আসনে নেতৃত্বে দেখতে চান। জনগণের সেই প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দিয়েই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিএনপি একটি গণমানুষের দল। সেই গণমানুষের চাওয়াকেই গুরুত্ব দিয়ে সামনে এগোতে চাই।’

মাহমুদ হোসেন জানান, শিগগির তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত