Ajker Patrika

ছোট্ট শিশুটির বড় বিপদ

মাগুরা প্রতিনিধি নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৫, ২২: ৩৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাগুরায় বড় বোনের বাড়িতে ‘ধর্ষণ ও নির্যাতনের’ শিকার হয়েছে ৮ বছরের এক শিশু। বোনের শ্বশুর ঘুম থেকে তুলে নিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে শিশুটি গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে শিশুকে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে এবং ধর্ষণকারীর শাস্তির দাবিতে আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর শহরের ভায়না মোড় ও চৌরঙ্গী মোড়ে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় কিছু লোক। এরপর কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে তাঁরা সদর থানার প্রধান ফটকে অবস্থান নেন।

শিশুটির স্বজনেরা জানান, তাঁদের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায়। শিশুটি কয়েক দিন আগে মাগুরার পৌর সদরে বড় বোনের (শ্বশুর) বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যার হাসপাতালে নিয়ে আসেন বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে আসেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

জানা গেছে, শিশু ধর্ষণের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বড় বোনের শ্বশুর ও গতকাল বোনের স্বামীকে আটক করেছে মাগুরা থানা-পুলিশ।

আজ বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুটির বড় বোন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বুধবার রাতে আমার স্বামী ও ছোট বোনকে নিয়ে একই কক্ষে ঘুমাই। সেহরি খাওয়ার আগে ঘুম থেকে উঠে দেখি, ছোট বোন মেঝেতে কাঁপছে আর কানতেছে। আমি ভেবেছি, শীতের কারণে কাঁপছে, সেও ভয়ে কিছু বলেনি। পরে সকালে ঘুম থেকে উঠে ছোট বোন ঘটনার বিস্তারিত আমাকে জানায়।’

ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, ‘রাতে আমার শ্বশুর তাকে (ছোট বোন) ঘুম থেকে তুলে অন্য কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ধর্ষণ করে এবং ভয়ভীতি দেখায়। আমার স্বামীই দরজা খুলে দেয়। শাশুড়িও ঘটনা জানে। ঘটনা বলে দেওয়ার কথা বলায় তাকে মারধরও করে। পরে তাকে আমার কক্ষে দিয়ে যায়।’

শিশুটি ঢামেকের পিআইসিইউতে চিকিৎসাধীন। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশুটি ঢামেকের পিআইসিইউতে চিকিৎসাধীন। ছবি: আজকের পত্রিকা

শিশুটির বোন বলেন, ‘সকালে আমার স্বামী ও শাশুড়িকে ঘটনা বললে তাঁরা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বলেন। আমাকে মারধরও করেন। এতে আশপাশের লোকজন জানতে পারে এবং তার (ছোট বোন) অবস্থাও খারাপ হতে থাকে। পরে আমার শাশুড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এর মধ্যে আমার বাবাকে ফোন করে অসুস্থতার কথা জানায়।’

ওই নারী আরও বলেন, ‘চার মাস আগে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের দুই মাস পরই শ্বশুর আমাকেও শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনা স্বামীকে বললে তিনি তা বিশ্বাস করতে চাননি। আমার পরিবারকেও জানিয়েছিলাম। কিন্তু মানসম্মানের ভয়ে তখন বিষয়টি নিয়ে আর কিছু বলা হয়নি।’

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ভুক্তভোগী শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গতকাল বিকেলে ঢামেকে পেডিয়াট্রিক আইসিইউ ও নিওনেটাল সার্জারি ওয়ার্ডের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভুক্তভোগী শিশুর বাবা ও তাঁদের স্বজনেরা অপেক্ষা করছেন। মা ও বোন শিশুটিকে দেখার জন্য ওয়ার্ডের ভেতরে যান।

ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে শিশুটির মা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মেয়েটা ভালো নেই। যারা আমার মেয়েকে এই অবস্থা করেছে, তাদের কঠোর বিচার চাই। আমার দুই মেয়েরই ক্ষতি হয়েছে।’

ঢামেকে শিশুটির ফুফাতো ভাই আজকের পত্রিকাকে বলেন, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এখনো শিশুটির চেতনা ফেরেনি। বর্তমানে তাকে পিআইসিইউতে রাখা হয়েছে। গলায় আঘাত দেখে ধারণা করা হচ্ছে, তার গলা টিপে ধরা হয়েছিল।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষুব্ধ জনতা সড়কে বিশৃঙ্খলার পর মাগুরা সদর থানার প্রধান ফটক ভাঙতে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষুব্ধ জনতা সড়কে বিশৃঙ্খলার পর মাগুরা সদর থানার প্রধান ফটক ভাঙতে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

শিশুটির অবস্থার বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. ছামিদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিশুটির অবস্থা স্ট্যাবল (স্থিতিশীল) রয়েছে। আগামীকাল (শনিবার) তার বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব। এখন চিকিৎসা চলছে।’

আজ জুমার নামাজের পর বিক্ষুব্ধ জনতা সড়কে বিশৃঙ্খলা শুরু করে মাগুরা সদর থানার প্রধান ফটক ভাঙতে যায়। এ সময় পুলিশ তাঁদের বোঝাতে গেলে তাঁরা পুলিশকে ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। তখন সেখানে সেনাবাহিনী চলে এলে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মাগুরা সদর থানার সামনে তখন পুলিশ, আনসার সদস্যরা ছিলেন। স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম বেলা ৩টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ দেননি। তবে পুলিশ এ বিষয়ে তৎপর বলেই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটক করেছে। শিশুটির চিকিৎসা চলছে। হয়তো সে জন্য আইনগত বিষয়ে তার পরিবার বিলম্ব করছে।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি, একদল বিক্ষুব্ধ লোক ধর্ষকদের বিচারের দাবি করছে এখনই। এটা কী করে সম্ভব? আইনগত প্রক্রিয়া না হলে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব নয়। তাই আমরা বিক্ষুব্ধ জনতাকে বলেছি, পুলিশ তৎপর আছে। আপনারা বাড়ি যান। কিন্তু তা না করে সদর থানা ঘেরাও করতে এসেছেন তাঁরা। এ জন্য সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আপাতত পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএসএমএমইউতে হেনস্তার ঘটনা নিয়ে যা বললেন প্রাণ গোপালের মেয়ে ডা. অনিন্দিতা

বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব: গ্রেপ্তার ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী

জামিনে বেরিয়েই ছদ্মনামে হাসপাতালে ভর্তি হন ‘ডিবি হেফাজতে’ মৃত এজাজ

স্বাধীনতা দিবসে এবার কুচকাওয়াজ হচ্ছে না

থমথমে খামারবাড়ি: সড়ক অবরোধ করে চলছে অবস্থান কর্মসূচি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত