Ajker Patrika

কেন্দ্রনির্ভর হয়ে পড়েছে মানিকগঞ্জে আ.লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ
আপডেট : ২৬ জুন ২০২২, ১৫: ৩৬
কেন্দ্রনির্ভর হয়ে পড়েছে মানিকগঞ্জে আ.লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো

মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো কেন্দ্রনির্ভর হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি সবগুলো সহযোগী সংগঠনের প্রভাবশালী নেতা-কর্মীরা কাউন্সিল না করে কেন্দ্রীয় নেতাদের ম্যানেজ করে আহ্বায়ক কমিটি বাগিয়ে নিয়ে আসছেন। সেই আহ্বায়ক কমিটির নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারছে না। এতে জেলার তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৬ মে যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রাজাকে আহ্বায়ক এবং আওয়ামী লীগের সদস্য মাহবুবুর রহমান জনিকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ঢাকায় বসে কমিটি ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ স্বাক্ষরিত একটি প্যাডে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২৫ সদস্যের প্রস্তাবিত আহ্বায়ক কমিটিকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে সব উপজেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। 

সেই ৯০ দিনের আহ্বায়ক কমিটি প্রায় তিন বছর পার করলেও জেলা সম্মেলন দূরে থাক, নানা কারণে উপজেলায়ও সম্মেলন করতে পারেনি। এরপরও তাদের কমিটিকে সফল দাবি করা হচ্ছে। অন্যদিকে ৯০ দিনের আহ্বায়ক কমিটি গত তিন বছরে পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এরপর ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ সৌমির চন্দ্র ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি জেলা কৃষক লীগের এক বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে আসেন। সেখানে এসে পূর্বের কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের বিভিন্ন কাজে অসন্তুষ্ট হয়ে তাৎক্ষণিক উপস্থিত জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মো. সমাপ্ত হোসেনকে আহ্বায়ক ও কৃষক লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক বুলবুল আহম্মেদকে সদস্যসচিব করে ৭৯ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দিয়ে যান। তিন মাসের জন্য তাৎক্ষণিক করে দেওয়া সেই কমিটি এক বছরের বেশি সময় পার করেছে, কিন্তু মানিকগঞ্জ সদর ও দৌলতপুর উপজেলা ছাড়া আর কোনো কমিটি করতে পারেনি। স্থানীয় সংসদ সদস্যরা সময় না দেওয়ার কারণে উপজেলা কৃষক লীগের কমিটি করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নেতা-কর্মীরা।

অন্যদিকে ২০২১ সালের ২৬ জুলাই মানিকগঞ্জ জেলায় ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া এলাকার এম এ সিফাত কোরাইশী সুমনকে সভাপতি এবং দৌলতপুর উপজেলার রাজিদুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকায় বসে কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। জেলায় ছাত্রলীগের একাধিক প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও কাউন্সিল না দিয়ে ছাত্রলীগের প্যাডে কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। আগামী এক মাস (জুলাই) এই কমিটির মেয়াদ রয়েছে। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, গত এক বছরে হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা কৌড়ি কলেজ এবং খাজা রহমত আলী ডিগ্রি কলেজের আহ্বায়ক কমিটি করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো কমিটি করতে পারেনি ছাত্রলীগ। এমনকি জেলা শহরের পৌর ছাত্রলীগ ও সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ ছাত্রলীগ কমিটির মেয়াদ দীর্ঘদিন ধরে শেষ হয়ে যাওয়ার পরও সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁরা কমিটি করতে পারেননি। আগামী এক মাসের মধ্যে করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন নেতা-কর্মীরা।

এদিকে ২০২২ সালের ২৩ মে তিন বছরের জন্য দুই সদস্যবিশিষ্ট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। এতে আবু বক্কর সিদ্দিক খান তুষারকে সভাপতি ও আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি বাবু নির্মল রঞ্জন গুহ ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু স্বাক্ষরিত একটি দলীয় প্যাডে ঢাকায় বসে কমিটি ঘোষণা করা হয়। আগামী এক মাসের মধ্যে জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু দুই মাস পার হলেও কমিটি দূরে থাক, একটি সভাও করতে পারেননি স্বেচ্ছাসেবক লীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। মানিকগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক লীগের একাধিক সভাপতি বা সম্পাদক প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও কোনো কাউন্সিল না দিয়ে কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় সংসদ।

অভিযোগ রয়েছে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের হাইকমান্ড আবুল বাশারের কাছে ম্যানেজ হয়ে ঢাকায় বসে পকেট কমিটি দিয়েছেন। এই কমিটি বাতিলের দাবিতে একাধিকবার প্রতিবাদ মিছিল করেছেন পদবঞ্চিতরা। 

অন্যদিকে ২০২২ সালের ১৮ জুন মানিকগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে অবৈধভাবে কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এ নিয়ে পদবঞ্চিতদের বিক্ষুব্ধ অনুসারীরা সম্মেলনে আসা মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমসহ আগত নেত্রীদের সার্কিট হাউসে এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। 

মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীদের অভিযোগ, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সিঙ্গাইর উপজেলার বাসিন্দা আনোয়ারা খাতুনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। আনোয়ারা খাতুন সিঙ্গাইর উপজেলার মূল আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হলেও তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ এমনকি সিঙ্গাইর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কোনো সদস্য না হয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে কমিটি বাগিয়ে নিয়েছেন। এ নিয়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

সর্বশেষ, ২০২২ সালে ২২ জুন মানিকগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সাবেক জেলা যুবলীগের নেত্রী রোমেজা আক্তার খান মাহিনকে আহ্বায়ক ও সালেহা জাহানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঢাকায় বসে ঘোষণা দিয়েছেন যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাজমা আকতার জেলায় কাউন্সিল না করে ঢাকায় বসে কমিটি ঘোষণা দেওয়ায় জেলা যুব মহিলা লীগের অনেক নেতা-কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

অভিযোগ রয়েছে, এই কমিটির আহ্বায়ক মাহিন খান পরিচয় গোপন করে ঢাকায় থাকা তাঁর দুই মেয়েকে সদস্য বানিয়েছেন। এতে করে মূলধারার যুব মহিলা লীগের নারী নেত্রীরা বাদ পড়েছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র এক নেতা বলেন, ‘তৃণমূলে খবর না নিয়ে এবং জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে ঢাকায় বসে নিজস্ব প্যাডে দুজনের নাম বসিয়ে কমিটি দিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করছে সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিগুলো। সংসদ সদস্যদের অনুরোধে তাঁদের পছন্দের মানুষদের দিয়ে কমিটি দেওয়ায় মাঠের অনেক নেতা-কর্মী হারিয়ে যাচ্ছেন। এতে জাতীয় নির্বাচনসহ আন্দোলন-সংগ্রামে প্রভাব পড়তে পারে। এ কারণে কমিটি ঘোষণা হওয়ার আগে অবশ্যই জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সম্মেলনের মাধ্যমে করতে পারলে একদিকে যেমন দলের জন্য মঙ্গল হবে, অন্যদিকে নেতা-কর্মীদের মধ্যে অভিযোগ-ক্ষোভ ও হতাশা থাকবে না।’

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন, আওয়ামী লীগসহ তার সহযোগী যেকোনো কমিটিই কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত হলে তা শক্তিশালী হবে এটাই স্বাভাবিক। ঢাকায় বসে কমিটি ঘোষণাটা দলের জন্য শুভলক্ষণ হবে না। তবে এটাও সত্য, কেন্দ্রীয় কমিটি ঢাকায় বসে যাদের নাম ঘোষণা করে কমিটি দিচ্ছে, তারা তাদের সম্পর্কে সব জেনে, খোঁজ-খবর নিয়েই ঘোষণা দিচ্ছে।

এদিকে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ তিন বছর আগে শেষ হয়েছে। মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটির প্রয়োজন। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে ভোটার এবং কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে যোগ্যদের দিয়ে কমিটি হলে জেলা রাজনীতির জন্য ভালো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নরসিংদীতে তিন চোখ ও দুই মুখের বাছুরের জন্ম, এলাকায় চাঞ্চল্য

নরসিংদী প্রতিনিধি
পুবেরগাঁও গ্রামের একটি খামারে বাছুরটির জন্ম। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুবেরগাঁও গ্রামের একটি খামারে বাছুরটির জন্ম। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীতে অদ্ভুত আকৃতির বাছুরের জন্ম হয়েছে। বাছুরটির রয়েছে দুটি মুখ, দুটি জিহ্বা, দুটি কান ও তিনটি চোখ। এর মধ্যে একটি চোখ বাছুরের কপালের মাঝখানে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

২৩ ডিসেম্বর রাতে শিবপুর উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের পুবেরগাঁও গ্রামে স্থানীয় ইউপি সদস্য কাশেম খানের খামারে বাছুরটির জন্ম।

খামারমালিক কাশেম খান বলেন, বাছুরটি জন্মের পর থেকেই অসুস্থ। স্বাভাবিকভাবে দুধ পান করতে না পারায় ফিডারের মাধ্যমে দুধ খাওয়াতে হচ্ছে।

তিনি জানান, তাঁর খামারের একটি গাভি বাছুরটির জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, এর আগেও গাভিটির বাছুর হয়েছে। কিন্তু এবারের মতো এমন অদ্ভুদ বাছুর আগে কখনো হয়নি।

ঘটনাটি জানাজানির পর থেকেই বাছুরটিকে একনজর দেখতে আশপাশের কৌতূহলী মানুষ খামারে আসছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল জলিল বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে গরু-ছাগল দেখছি। কিন্তু তিন চোখ আর দুই মুখের বাছুর এই প্রথম দেখলাম। খবর পেয়ে দূর থেকে এসেছি।’

আরেক স্থানীয় নারী জরিনা বেগম বলেন, ‘বাছুরটা দেখতে অদ্ভুত লাগলেও মায়া হচ্ছে। বাছুরটির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। অনেকেই দ্রুত প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিচ্ছেন।’

এর আগে এ ধরনের বাছুর জন্মের বিষয়ে প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাধারণত জেনেটিকস ডিফেক্টের কারণে গাভির এমন ত্রুটিপূর্ণ বাচ্চার জন্ম হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজীপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে নানি-নাতনিসহ নিহত ৩

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গাজীপুরের কালীগঞ্জে রেললাইন দিয়ে হাঁটার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে নানি-নাতনিসহ তিন নারী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে টঙ্গী-ভৈরব রেলপথের আড়িখোলা রেলস্টেশনসংলগ্ন টেকপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত নারীরা হলেন কালীগঞ্জ পৌরসভার দেওয়ালেরটেক গ্রামের মোবারক হোসেনের স্ত্রী সাদিয়া বেগম (২৪), একই এলাকার বাবু মিয়ার মেয়ে অনাদি আক্তার (১৩) এবং নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মরজাল এলাকার বাসিন্দা কমলা বেগম (৫৫)। নিহত কমলা বেগম ও অনাদি আক্তার সম্পর্কে নানি-নাতনি এবং সাদিয়া বেগম তাঁদের প্রতিবেশী ছিলেন।

স্থানীয়রা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আড়িখোলা রেলব্রিজ এলাকায় রেললাইনের ওপর দিয়ে তিনজন হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নোয়াখালীগামী ‘উপকূল এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি চলে আসে। এ সময় তাঁরা রেলব্রিজের ওপর থাকায় সেখান থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার সুযোগ পাননি। পরে ট্রেনটি তাঁদের ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই কমলা বেগম ও সাদিয়া বেগমের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় অনাদি আক্তারকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জিয়াউর রহমান জানান, অনাদি আক্তারকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওবায়দুল হক জানান, এটি রেলওয়ের আওতাধীন দুর্ঘটনা হওয়ায় রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।

রেলওয়ে নরসিংদী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) দিলীপ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করেছি। নিহত নারীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিনা ময়নাতদন্তে লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আরাকান আর্মিদের জন্য নেওয়া হচ্ছিল ১৫০০ মশারি, আটক ৫

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি  
মশারিসহ জব্দ করা মালপত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা
মশারিসহ জব্দ করা মালপত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা

বান্দরবানের থানচি উপজেলায় দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা তল্লাশি করে ১ হাজার ৫০০টি মশারি, ১২০টি নৌকার ইঞ্জিনের পাখা উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে তিন্দুমুখ বিজিবি চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় নৌকাগুলো তল্লাশি করে এসব জিনিস জব্দ করে বিজিবি। এসব মশারি ও ইঞ্জিনের পাখা বান্দরবানের থানচির বড় মদক সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির জন্য নেওয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছে বিজিবি। এ ঘটনায় নৌকা দুটি থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার তাঁদের থানচি থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আটক ব্যক্তিরা হলেন থোয়াই হ্লা চিং মারমা, উমং সাইং মারমা, হ্লাচিংথোয়াই মারমা, উক্যছাইন মারমা ও মো. ইউনুস।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে বিজিবি বলিপাড়া ৩৮ ব্যাটালিয়ানের সহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেনের জানান, নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্রে তাঁরা জেনেছেন, দীর্ঘদিন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ওষুধ, কাপড়, জুতা, মোজা, মশারি, নৌকা ইঞ্জিনের পাখা ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মিয়ানমারের আরাকান আর্মির কাছে সরবরাহ করছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। পাচারকারীদের ধরতে সীমান্তের বিজিবি চৌকিগুলোতে বিজিবি সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন।

জাকির হোসেন বলেন, গতকাল বুধবার তিন্দুমুখ বিজিবি চেকপোস্ট অতিক্রম করার সময় মালবাহী তিনটি ইঞ্জিন নৌকা দেখে বিজিবির সদস্যদের সন্দেহ হয়। এ সময় নৌকা থামাতে বললে একটি নৌকা দ্রুত চলে যায়। বাকি দুটি নৌকা তল্লাশি করে ১ হাজার ৫০০টি মশারি, ১২০টি ইঞ্জিন বোটসহ অন্যান্য পণ্য পাওয়া যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নলছিটি লঞ্চঘাট ওসমান হাদির নামে নামকরণ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  
নলছিটি লঞ্চঘাট ।  ছবি: আজকের পত্রিকা
নলছিটি লঞ্চঘাট । ছবি: আজকের পত্রিকা

নলছিটি উপজেলার লঞ্চঘাট এখন থেকে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির নামে পরিচিত হবে। জন্মস্থান ও শৈশবের স্মৃতিতে গাথা এই লঞ্চঘাট তাঁর নামের সঙ্গে চিরস্থায়ীভাবে যুক্ত হলো।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (২৫ ডিসেম্বর) জানান, শহীদ ওসমান হাদির জন্মস্থান নলছিটি। শৈশব, বেড়ে ওঠা এবং জীবনসংগ্রামের সঙ্গে লঞ্চঘাট এলাকার নিবিড় সম্পর্ক থাকার কারণে এটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে টার্মিনালের সংস্কার ও রঙের কাজ চলমান রয়েছে।

আগামী শনিবার নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ঘাটটি পরিদর্শন করবেন বলেও জানান তিনি।

নলছিটি লঞ্চঘাট শহীদ ওসমান হাদির জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঘাট থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে তার পৈতৃক বাড়ি। নদীর ধারে দাঁড়িয়ে মানুষের আসা-যাওয়া দেখা এবং লঞ্চের ভিড়ে সময় কাটানো—এই ঘাট ছিল তার বেড়ে ওঠার নীরব সাক্ষী।

ঘাট এলাকার ব্যবসায়ী রব হাওলাদার বলেন, ‘আমরা চাইছিলাম হাদির স্মরণে এমন কিছু হোক, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে। তার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত লঞ্চঘাটের নাম তার নামে হওয়া নিঃসন্দেহে স্মরণীয় সিদ্ধান্ত।’

ব্যবসায়ী শাহাদত আলম ফকির যোগ করেন, ‘এই ঘাটে আমরা হাদিকে ছোটবেলা থেকে দেখেছি। সে এখানকারই ছেলে ছিল। আজ তার নামে ঘাটের নামকরণ হওয়ায় আমরা গর্বিত।’

ওসমান হাদির প্রতিবেশী বেলায়েত হোসেন নান্নু বলেন, ‘হাদি এই এলাকার সন্তান। এই ঘাট, এই নদী, এই মানুষ—সবকিছুতেই তার স্মৃতি ছড়িয়ে আছে। লঞ্চঘাটের নাম তার নামে হওয়া মানে, সে এখানেই চিরদিন বেঁচে থাকবে।’

উল্লেখ্য, ১২ ডিসেম্বর হত্যার উদ্দেশ্যে ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। তাঁকে প্রথমে ঢাকায় ভর্তি করা হয় এবং পরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর মারা যান ওসমান হাদি। পরবর্তীকালে তাঁর মরদেহ দেশে আনা হয় এবং সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে (জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে) সমাহিত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত