Ajker Patrika

মানিকগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, আটক ৩

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪: ১৮
মানিকগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, আটক ৩

মানিকগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিএনপির তিন কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আনন্দ র‍্যালিতে অংশগ্রহণ করতে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের কর্মীরা।

আহতদের মধ্যে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের রিপোর্টার মঞ্জুর রহমান ও বাংলা নিউজের সাজিদুর রাসেল রয়েছেন। বাকি আহত পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।

জেলা বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মানিকগঞ্জে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আজ বেলা ১১টার দিকে আলোচনা সভার আয়োজন করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। তাই সকালে প্রথমে তাঁরা শহরের আশপাশে অবস্থান নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে আসার প্রস্তুতি নেন। এ সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কোরাইশি সুমন ও সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েক শ কর্মী ভাষা শহীদ রফিক চত্বরে উপস্থিত হন। পরে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। শহরে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান নিয়ে সাড়ে ১০টার দিকে চলে যান তাঁরা।

মানিকগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছেএদিকে, বেলা ১১টার দিকে শহরের সেওতা এলাকা থেকে বিএনপির কয়েক শ নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার সময় খালপাড় মোড়ে পুলিশ বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে নেতা-কর্মীরা মিছিল এগিয়ে নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করেন। এ সময় মিছিলের পেছন দিকে থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও প্রথমে লাঠিপেটা, পরে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনার পর সেওতা শহীদ তুজ সড়কের পূর্বপাশে পুলিশ ও উত্তর পাশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন। আধা ঘণ্টা পর দুপুর ১২টার দিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ কবীর জিন্নাহ বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তিন দিন আগে পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ অনুমতি দেয়নি। বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ লাঠিপেটা ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত ও কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। এ ঘটনার প্রতিবাদে দুপুর দেড়টার দিকে বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হবে।’ 

এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো কিছু জানানো হয়নি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে আট দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ: রাতে কনকনে শীত, দিনে ঝলমলে রোদ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড় সদর উপজেলার টুনিরহাট এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় সদর উপজেলার টুনিরহাট এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে আট দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। রাতে কনকনে হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও দিনে ঝলমলে রোদের দেখা মিলছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় জেলার তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার থাকায় শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।

সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশাহীন ভোরে সূর্য উঠেছে ঝলমলে আলো নিয়ে। সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে জেলার প্রকৃতি। স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য দেখা গেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রায় কিছুটা ওঠানামা থাকলেও তা ১০ ডিগ্রির নিচেই রয়েছে। বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে বুধবার ৯ দশমিক ৭, মঙ্গলবার ৯ দশমিক ৫, সোমবার ৯, রবি ও শনিবার ৯ দশমিক ৩, শুক্রবার ৯ দশমিক ৫ এবং আগের বৃহস্পতিবার ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। গতকাল বুধবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংজ্ঞা অনুযায়ী, তাপমাত্রা ১০ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৮ থেকে ৬ ডিগ্রির মধ্যে হলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। সে হিসেবে বর্তমানে তেঁতুলিয়াসহ পঞ্চগড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে।

সদর উপজেলার টুনিরহাট এলাকার কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘রাতে যে ঠান্ডা পড়ে, তা সহ্য করা মুশকিল। ভোরবেলা ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। হাত-পা বরফের মতো হয়ে যায়। তবে দিনে রোদ ঝলমল করে। এই রোদের কারণে মাঠের কাজ কোনোমতে চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘গত কয়েক দিনে জেলার তাপমাত্রা ক্রমেই নিম্নমুখী। আজ সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে, যা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের আওতায় পড়ে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় শীতের প্রভাব আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জমিতে পুকুর কাটতে বাধা দেওয়ায় কৃষককে ভেকুচাপায় হত্যার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজশাহী মোহনপুর উপজেলায় ফসলি জমিতে পুকুর খননে বাধা দেওয়ায় এক কৃষককে ভেকু (এক্সকেভেটর) চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত ব্যক্তির নাম জুবায়ের হোসেন (২৫)। তিনি উপজেলার বড় পালশা গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার পর স্থানীয় জনতা মাটি খননের যন্ত্রটিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন। পুলিশ ভেকু চালককে আটক করেছে।

নিহতের পরিবারের দাবি, পুকুর খননে বাঁধা দেওয়ায় জুবায়েরকে এক্সকেভেটরের চাকার নিচে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তারা বিচার চান। ঘটনার পরে চালক আবদুল হামিদকে (২৮) আটক করেছে পুলিশ। আটক আবদুল হামিদ টাঙ্গাইল জেলার কাদিমহামজানি উত্তরপাড়ার বাসিন্দা।

রাজশাহীর মাঠে মাঠে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল কৃষককে না জানিয়ে কিংবা অনুমতি না নিয়েই জোর করে পুকুর খনন করে। সেই পুকুর তারা ইজারা দেয় এবং পরবর্তীতে ইজারামূল্যের একটি অংশ কৃষককে দেয়। এতে রাজশাহীতে কৃষিজমি রাতারাতি পুকুর হয়ে যাচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পালশা গ্রামে পুকুর খনন করা হচ্ছিল। তবে কৃষিজমি রক্ষায় স্থানীয়দের সঙ্গে জুবায়ের বাঁধা দেন। এ সময় ভীমনগর গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে এলাকাবাসীর বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে এক্সকেভেটরের নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন জুবায়ের। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক জুবায়েরকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

এদিকে খবর পেয়ে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহিমা বিনতে আখতার ঘটনাস্থল ও নিহতের বাড়িতে যান। এসময় তিনি নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন।

ইউএনও ফাহিমা বিনতে আখতার বলেন, ‘পুকুর খনন করবে জেনে এলাকাবাসী বাঁধা দেয়। এলাকাবাসী ফসলী জমিতে পুকুর খনন করতে দেবে না। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে এক্সকেভেটর গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে জুবায়ের আহত হন। পরে তার মৃত্যু হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি এখানে আসার পরে শুনেছি ঘটনার পরে জনতা গাড়িটিতে আগুন দিয়েছে। এছাড়া পুলিশ চালককে আটক করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

যোগাযোগ করা হলে মোহনপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দীন জানান, তিনি ঘটনাস্থলে আছেন। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

থানচিতে ভিডব্লিউবি কর্মসূচি: সরকারি সঞ্চয়ের টাকা পাচ্ছেন না ১২০০ নারী

  • থানচিতে ১ হাজার ৬৭৪ জন উপকারভোগী রয়েছেন।
  • তাঁদের কাছ থেকে সঞ্চয়ী আমানত হিসেবে ৮৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়।
  • ৪৫০ জনের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন ইউপি চেয়ারম্যানরা।
  • বছর পার হতে চললেও ১ হাজার ২২৪ জনের ৫৮ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি।
মংবোওয়াংচিং মারমা, থানচি (বান্দরবান)
থানচিতে ভিডব্লিউবি কর্মসূচি: সরকারি সঞ্চয়ের টাকা পাচ্ছেন না ১২০০ নারী

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের থানচি উপজেলায় দুস্থ মহিলা সহায়তা (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির আওতায় ১ হাজার ৬৭৪ জন কার্ডধারী রয়েছেন। তাঁদের প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দিয়ে আসছে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর। এসব কার্ডধারীর কাছ থেকে প্রতিবার চাল বিতরণের সময় সুরক্ষা সঞ্চয় বাবদ ২২০ টাকা জমা নেয় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি); যা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখার কথা।

দুই বছরের মেয়াদ পূর্ণ হলে সঞ্চয়ের সেই টাকা উপকারভোগীদের ফিরিয়ে দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু উপজেলাটিতে ২০২৩ ও ২০২৪ সালের তালিকাভুক্ত ১ হাজার ২০০ জনের বেশি উপকারভোগী সেই সঞ্চয়ের টাকা এক বছরেও ফেরত পাননি। সুরক্ষার জন্য সঞ্চয় করে এখন দরিদ্র এসব নারী মানবেতর জীবন যাপন করছেন এবং কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে।

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয় ও ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, চার ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত উপজেলাটিতে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে প্রত্যেক কার্ডধারীর কাছ থেকে ২৪ মাসে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ২২০ টাকা করে সুরক্ষা সঞ্চয় আদায় করা হয়। প্রত্যেকের সঞ্চয় হয় ৫ হাজার ২৮০ টাকা। হিসাব অনুযায়ী, চার ইউপিতে সঞ্চয় জমা হওয়ার কথা মোট ৮৮ লাখ ৩৮ হাজার ৭২০ টাকা। যদিও কার্ডধারী নারীদের অভিযোগ, তাঁদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ২৭০ টাকা করে আদায় করা হয়।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ চক্রে রেমাক্রী ইউপিতে ৪২৪ জন, তিন্দুতে ৪৩০, থানচি সদরে ৪২০ ও বলিপাড়া ইউপিতে ৪০০ কার্ডধারী ছিলেন।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ভিডব্লিউবি কর্মসূচির সঞ্চয় তহবিল সরকারের অনুমোদিত ব্যাংকে উপজেলা কমিটি সভাপতি ও সদস্যসচিবের যৌথ স্বাক্ষরিত কেন্দ্রীয় হিসাবে জমা রাখতে হয়। কিন্তু চার ইউপির কোনোটিতে সেই নীতিমালা মানা হয়নি। ইউপি চেয়ারম্যানরা সঞ্চয়ের টাকা ব্যাংকে জমা না রেখে নিজেদের কাছে রাখেন। যদিও তাঁদের দাবি, মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর তাঁরা ওই টাকা উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী এমরান হোসেনের কাছে জমা রেখেছেন। কিন্তু গত ২০ সেপ্টেম্বর এমরান মারা যান। পরে সঞ্চয় ফেরত দেওয়া অনিশ্চয়তায় পড়ে।

বলিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে এই কর্মসূচির আওতায় সুরক্ষা সঞ্চয় টাকা আদায়ের পর মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার পরামর্শে ম্যানুয়ালি (কাগজে লিখে কাছে জমা রাখা) জমা রাখা হয়। ২০২৩ ও ২০২৪ চক্রের মেয়াদ পূর্ণ হলে ৩৫০ জনের প্রতি মাসের ২২০ টাকা হারে মোট ১৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা এমরান হোসেনের হাতে দিই। এ ছাড়া ৪২০ জনের মধ্যে ৬০ জনের মতো কার্ডধারীর টাকা নিজেই ফেরত দিয়েছি। এখন এমরান মারা যাওয়ায় বিপত্তি বেধেছে। তাঁর ওপর অগাধ বিশ্বাস থাকায় সে সময় কোনো প্রমাণপত্র নিইনি।’

রেমাক্রীর ইউপি সচিব উশৈ মারমা বলেন, ‘ভিডব্লিউবি কর্মসূচির উপকারভোগীদের তালিকা চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি পকেটে করে নিয়ে যেতেন। আমি কর্মসূচির কমিটিতে সদস্যসচিব হিসেবে থাকলেও তালিকা প্রণয়ন, বিতরণ, সঞ্চয় গ্রহণ, ব্যাংকের জমা করানো, সব কাজ করেন চেয়ারম্যান। তিনি মৌজার হেডম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় দাপট দেখাতেন। আমাকে নাক গলাতে নিষেধ করেছেন।’

রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি বলেন, ‘আমি বান্দরবানে আছি। থানচিতে এলে এ বিষয়ে সরাসরি বলব। এ বিষয়ে নিউজ করবেন না। আপনাদেরও ভবিষ্যৎ রয়েছে।’ এমন হুমকি দিয়ে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

তিন্দু ইউপি চেয়ারম্যান ভাগ্য চন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ও পুরোনো চেয়ারম্যানদের গুটিচালের (ষড়যন্ত্র) স্বীকার হয়েছি। শিগগির সঞ্চয়ের টাকা ফেরত দেব।’

থানচি সদর ইউপি চেয়ারম্যান অংপ্রু ম্রো বলেন, সব উপকারভোগীর সঞ্চয়ের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। যদিও এখনো ৩০ জনের টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের মারা যাওয়া অফিস সহকারী এমরান হোসেনের স্ত্রী রুমা আক্তার বলেন, ‘গত ২২ নভেম্বর মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আয়েশা আক্তার আমাকে এবং চার ইউপি চেয়ারম্যানকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে যান। এ সময় চেয়ারম্যানরা দাবি করেছেন, আমার স্বামীর কাছে সঞ্চয়ী আমানতের বলিপাড়ার ১৫ লাখ, থানচি সদরে ৫ লাখ, তিন্দুর ১৪ লাখ, রেমাক্রীর ২৪ লাখসহ মোট ৫৮ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও আমার স্বামীর কাছে কিছু টাকা জমা রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ৭০ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে তাঁরা দাবি করছেন।’

সঞ্চয়ের টাকা না পাওয়া বলিপাড়ার উপকারভোগী নুমেউ মারমা, উমেসিং মারমা, মাচাইসিং মারমা, হ্লায়ইনুসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের অভিযোগ, ২০২২ সালে কার্ডের তালিকা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তাঁদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা সঞ্চয়ের সময় অতিরিক্ত ৫০ টাকা করে আদায় করা হয়।

থানচি উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আয়েশা আক্তার বলেন, ‘দুস্থ নারীদের সঞ্চয় আমানত গত ২৩ সেপ্টেম্বর ফেরত দেওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল, কিন্তু এর আগেই সহকর্মী (অফিস সহকারী) এমরান হোসেন মারা যাওয়ায় টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব হচ্ছে। ১ জানুয়ারির মধ্যে সঞ্চয়ের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

থানচির ইউএনও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ-আল-ফয়সাল বলেন, ‘মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন। আগামী ১ জানুয়ারির মধ্য সঞ্চয়ের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমি উপস্থিত থেকে বিতরণ করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লাভের আশায় লোকসানে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা

  • কোল্ড স্টোরেজে রাখা আলু নিয়ে সংকটে পড়েছেন অসংখ্য আলুচাষি ও ব্যবসায়ী।
  • বাজারে দামের ধসে বাধ্য হয়ে প্রতি বস্তা আলুর স্লিপ ১০০ টাকায় বিক্রি।
ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩: ১৪
নীলফামারীতে কোল্ডস্টোরেজে মজুত রাখা আলু। ছবি: আজকের পত্রিকা
নীলফামারীতে কোল্ডস্টোরেজে মজুত রাখা আলু। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঋণ নিয়ে ৪০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার আবদুর রাজ্জাক। লাভের আশায় ৮০০ বস্তা আলু কোল্ড স্টোরেজে মজুত রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি বাজারে দামের ধসে বাধ্য হয়ে প্রতি বস্তা আলুর স্লিপ ১০০ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। এতে তাঁর লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা। ঋণের চাপে এখন তাঁর পথে বসার দশা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবদুর রাজ্জাক একা নন। দেশের অন্যতম আলু উৎপাদনকারী জেলা নীলফামারীতে কোল্ড স্টোরেজে মজুত করা আলু নিয়ে সংকটে পড়েছেন অসংখ্য আলুচাষি ও ব্যবসায়ী। তাঁরা বলছেন, বাজারে আলুর দামে বড় ধরনের পতন হওয়ায় উৎপাদন খরচ উঠছে না। অনেক ক্ষেত্রে বস্তার দামও উঠছে না বলে দাবি তাঁদের। লোকসান সামলাতে না পেরে অনেক কৃষক বিপাকে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন।

বর্তমানে নীলফামারীর ১১টি কোল্ড স্টোরেজে আলু সংরক্ষণের মোট সক্ষমতা ৯০ হাজার ১০০ টন। সেখানে জমে আছে শুধু আলুর বস্তা নয়, হতাশ কৃষকের স্বপ্নও। দাম স্বাভাবিক না হলে আগামী মৌসুমে আলু চাষে আগ্রহ হারাতে পারেন অনেক কৃষক এমন আশঙ্কাই করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে নীলফামারীতে প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার টন আলু উৎপাদন হয়। ভালো দামের প্রত্যাশায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জেলার বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজে আলু মজুত করেন। মজুত করা ওই আলুর পরিমাণ প্রায় ৭৫ হাজার ৭০০ টন। তবে মৌসুম শেষে বাজারে হঠাৎ করে দাম পড়ে যাওয়ায় সেই আলু বিক্রি করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডোমার উপজেলার আলুচাষি আবদুল কাদের বলেন, ‘প্রতি বস্তা আলু তুলতেই খরচ পড়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এখন বাজারে পাচ্ছি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এভাবে হলে আলু চাষ করা আর সম্ভব না।’

ডিমলা উপজেলার চাষি নাউতারা এলাকার সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেছি। কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া আর পরিবহন খরচ মিলিয়ে চাপ বেড়েই চলেছে।’

কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাষি মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো না হওয়ায় চাষিরা এমন ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তিনি বলেন, প্রতিবছর উৎপাদন বাড়ছে, কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনা নেই। এবার আলু তুললেই লোকসান।

অন্যদিকে শহিদুল হোসেন নামের এক আলু ব্যবসায়ী বলেন, ‘চাষিদের কাছ থেকে আলু কিনে কোল্ড স্টোরেজে রেখেছিলাম। এখন বাজারে যে দাম, তাতে আলু তুললেই ক্ষতি।’ তিনি বলেন, লাভ তো দূরের কথা, প্রতি বস্তায় লোকসান গুনতে হবে আরও ১০০ টাকা।

কোল্ড স্টোরেজসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চাষি ও ব্যবসায়ীরা লোকসানে থাকায় আলু তোলার গতি কমে গেছে।

স্থানীয় কৃষিবিদ আবু নোমান সায়েম বলেন, আলুর উৎপাদন বাড়লেও রপ্তানি, প্রক্রিয়াজাত শিল্প ও কার্যকর বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে। ফলে প্রতিবছর কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

নীলফামারী কৃষি বিপণন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ টি এম এরশাদ আলম খান বলেন, বাজারে আলুর দাম না বাড়া পর্যন্ত কোল্ড স্টোরেজে রাখার সময় বাড়ানো ছাড়া কৃষকের সামনে তেমন বিকল্প নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত