Ajker Patrika

সন্তান না নেওয়ায় নাতিকে খুন করেন বৃদ্ধের দ্বিতীয় স্ত্রী, অভিযোগ পরিবারের

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা) 
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০১: ০৯
সন্তান না নেওয়ায় নাতিকে খুন করেন বৃদ্ধের দ্বিতীয় স্ত্রী, অভিযোগ পরিবারের

রাজধানীর দক্ষিণখানে মো. মাহবুবুর রহমান (৬২) নামের এক ব্যক্তি উম্মে হাবিবা আফরিন (৪০) নামের এক নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। নতুন সংসারে সন্তান নিতে অনিচ্ছুক ছিলেন মাহবুবুর। তিনি নাতি-নাতনিকে নিয়েই সময় কাটাতেন বেশি। এতে আফরিন প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মাহবুবুরের এক বছর বয়সী নাতিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

আজ শুক্রবার ভোরে দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ উত্তরপাড়ার নূরানী জামে মসজিদ রোডের ৬৬৭ নম্বর বাড়ির নিচতলায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি জব্দ করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুটির সৎ দাদি উম্মে হাবিবা আফরিনসহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। 

নিহত ওই শিশুর নাম মো. শেখ মাহতাব উদ্দিন মেহেমেত। সে মহিউদ্দিন বাপ্পি ও ইসরাত জাহান ইভা দম্পতির ছেলে। এর আগে আফরিন দুধে বিষ শিশুটিকে মিশিয়ে খাইয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন অভিযোগ রয়েছে। 

শিশুটির মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে দক্ষিণখানের গণকবরস্থানে সন্ধ্যায় দাফন করা হয়েছে। নিহত শিশুটির মা, বাবা, নানি ও স্থানীয় এক বিচারক আজ শুক্রবার রাতে আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

শিশুটির পরিবারের দাবি, শিশুটির দাদা মো. মাহবুবুর রহমান (৬২) প্রায় তিন বছর পূর্বে উত্তরখানের রাজাবাড়ী এলাকার উম্মে হাবিবা আফরিন (৪০) নামের এক নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের পরও দাদা নাতি-নাতনিকে আদর করতেন। রাতদিন তাদের সঙ্গেই খেলাধুলা করতেন। বড় বড় সন্তান ও নাতি-নাতনি থাকায় আর সন্তান নিতে চাননি। 

এদিকে সন্তানের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন আফরিন। তাঁর ধারণা ছিল নাতিকে সরিয়ে দিলেই তাঁকে সময় দেবে এবং তিনিও সন্তানের মা হবেন। এই প্রতিহিংসা থেকেই দ্বিতীয় দফায় চেষ্টা চালিয়ে শিশুটিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, দোতলা বাড়ির উত্তর-পূর্ব পাশের কোণার রুমের বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত মেহমেত। তাদের রুমের জানালা ছিল রাস্তার পাশে। পশ্চিম পাশের রুমে দাদা থাকেন। দক্ষিণ পাশে চাচার রুম। তাঁর দক্ষিণের গেটের সামনের রুমে স্বমলা নামের একজন ভাড়াটিয়া থাকেন। ঘটনাস্থলের রুমটিতে পুলিশ ক্রাইম সিনের আলামতের জন্য তালাবদ্ধ করে রেখেছে। পাশের রুমেই কান্না করছিলেন শিশুটির নানি মোছা. রোসমা বেগম। 

শিশুটির মা ইসরাত জাহান ইভা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত জুলাই মাসের ২৭ তারিখে প্রথমে আমার ছেলেকে দুধের সঙ্গে বিষ খাইয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পরে পাঁচটি হাসপাতাল ঘুরে সর্বশেষ ছেলেকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যাই। সেখানে চার দিন চিকিৎসার পর সুস্থ করে বাসায় নিয়ে আসি। তখন চিকিৎসকেরা জানায় দুধের সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল।’ 

হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে ইভা বলেন, ‘সকালে গ্যাস থাকে না। যার কারণে আজ (শুক্রবার) ভোর সাড়ে ৩টার দিকে রান্নার জন্য ঘুম থেকে উঠি। যখন রান্নাবাড়া করছিলাম, তখন বাবুর চিৎকার শুনে ঘরে দৌড়ে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দেখি—আমার বাবার শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। ওর নাড়ি বেরিয়ে গেছে। পরে আমি চিৎকার করে বাবুর দাদাকে ডেকে তুলি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই বাবু মারা যায়।’ 

ইভা আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে নানার বাড়ি টাঙ্গাইলে ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে স্বামী আবদুল্লাহপুরের মাছের আড়তে কাজে ছিল। রুমে আমি ছেলে ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। রাত ১টার দিকে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। ছেলে শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। যার কারণে জানালার থাই গ্লাস খুলে দিয়েছিলাম। এই জানালা খুলে দেওয়াই হলো কাল হলো আমার। জানালা দিয়ে ছুরিকাঘাত করে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।’ 

কে কেন হত্যা করল—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসরাত জাহান ইভা বলেন, ‘আমার দুই সন্তানকে তার দাদা অনেক আদর করত। ওদের নিয়েই সব সময় খেলাধুলা করত। এদিকে বাবুর সৎ দাদিও বাচ্চা নেওয়ার জন্য পাগল ছিল, বিভিন্ন সময় চাপ দিত। কিন্তু বড় বড় সন্তান থাকায় দাদা আর সন্তান নেয়নি। যার কারণে মনে করছে, মেহেমেতকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিলেই সৎ দাদিকে সন্তান দেবে তাঁর দাদা।’ 

ইভা আরও বলেন, ‘বাবুর সৎ দাদি উম্মে হাবিবা আফরিন (৪০), তার মা নিলুফা ইয়াসমিন সাথি (৬০) ও তার ছোট ভাই সিয়াম (২৩) এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আফরিন ও সাথির পরিকল্পনা অনুযায়ী সিয়াম ও তার সহযোগীরা ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমার স্বামী বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে।’ 

শিশুটির দাদা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘জুলাই মাসে বিষ খাওয়ানোর আগে আমার বউ আফরিন জিজ্ঞাসা করছিল, তোমার জান কে? তখন উত্তরে আমি বলেছিলাম নাতি। তখন বউ বলছিল, আমি তাহলে তোমার কে? উত্তরে বউ বলা হয়েছিল। ওই সময় আফরিনও বলেছিল, তার সন্তান লাগবে। কিন্তু আমি বলছিলাম, ছেলেরা বড় হয়ে গেছে, এখন কি করে সম্ভব? এই নিয়ে আমাদের মধ্যে মমনমালিন্য চলছিল। যার থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বলে আমার ধারণা।’ 

শিশুটির নানি মোছা. রোসমা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জুলাই মাসে যেদিন রাতে মেহেমেতকে বিষ খাওয়ায়ে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল, ওই দিন সন্ধ্যায়ও আমি আমার কলিজার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলাম। আমার মেয়ে রাতে পিঠা ভেজে নাতি নাতনিকে দুধ খাওয়ার জন্য তিনটি ফিডারে তাল মিছরি দিয়ে রেখেছিল। পরে গরুর দুধ গরম বসিয়ে দিয়ে মেয়েকে খাবার খাইয়েছিল। 

‘এই সময়ের মধ্যেই ওদের সৎ দাদি দুই বাচ্চাকে মেরে ফেলার জন্য দুধে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। দুটি ফিটারের একটি মেহেমেতের জন্য, দুটি মুনতাহার জন্য। রাতে যখন মেহেমেতকে দুধ খাইয়েছে, তখন ও জানি কেমন শুরু করে, আর হাত-পা আছড়াইছে। তখন আমার মেয়ে নাতনিকে ফিডার খাওয়াইতে মানা করেছিল তার দাদাকে। ওই সময় তার দাদি পাশের রুমে থাকা সত্ত্বেও কাছেও যায় নাই। একবারও কিছুই জিজ্ঞাসা করে নাই। শুধু মুচকি হাসি দিছে।’ 

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় মোড়ল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাচ্চাটির সৎ দাদি যখন ওকে বিষ খাওয়ায়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করছিল, তখন আমি বিচার সালিস করেছিলাম। গত তিন মাস আগের বিচারে ওর সৎ দাদিকে তার বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই শিশুটিকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে আমার ধারণা। ওই পরিকল্পনা থেকেই ওর সৎ দাদি ও তার সহযোগীরা মিলে বাবুটিকে হত্যা করেছে।’ 

এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ইয়াসীন গাজী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিশুটির মা ও তাঁর সৎ শাশুড়ির সঙ্গে পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল। যার কারণে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি শিশুটির স্বজনদের। এ ঘটনায় শিশুটির সৎ দাদীসহ পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। শিশুটির পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে মামলা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে কৃষিজমির টপসয়েল কেটে অবাধে বিক্রি, পরিবেশ ও উৎপাদন হুমকিতে

সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কেটে অবাধে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রতিবছর শীত মৌসুম এলেই একটি সংঘবদ্ধ মাটিখেকো চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। গত কয়েক বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ অবৈধ কার্যক্রম চললেও শীত শুরু হলেই ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নে তৎপরতা সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কার্যকর তদারকির অভাবে চলতি মৌসুমে মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য কয়েক গুণ বেড়েছে। দিন-রাত শ্রমিক ও ভেকু (এক্সকাভেটর) ব্যবহার করে কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ট্রাক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষিজমির উৎপাদনক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়ছে। অতিরিক্ত ভারী যান চলাচলে গ্রামীণ সড়কগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, টপসয়েল কাটা ও পরিবহনের সঙ্গে একটি মধ্যস্বত্বভোগী চক্র জড়িত। অভিযোগ অনুযায়ী, ব্রাহ্মণডোরা এলাকার মুর্শেদ মিয়ার ছেলে কামাল মিয়া, শেরপুর এলাকার সামসু মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া এবং অলিপুর এলাকার মন্নর মিয়া এ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা কৃষিজমি থেকে টপসয়েল কেটে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের শেরপুর, কেশবপুর ও ঋষিপাড়া এলাকা থেকে নিয়মিত মাটি কেটে ট্রাক্টরের মাধ্যমে পরিবহন করা হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি ট্রাক্টর টপসয়েল ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনে পরে তা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘এই মাটিখেকো চক্রের সঙ্গে প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকায় প্রকাশ্যে কিছু বলা কঠিন। সরকার পরিবর্তন হলেও প্রভাবশালীরা থেকে যায়।’

অভিযোগের বিষয়ে কামাল মিয়া বলেন, ‘আমরা যে জমি থেকে মাটি কাটি, তা মালিকের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া। যদি আইনি কোনো বাধা থাকে, তাহলে আর এসব কাজ করব না।’

আরেক অভিযুক্ত মন্নর মিয়া বলেন, ‘এই মৌসুমে মাত্র দুই দিন মাটি কেটেছি। এখন আর কাটছি না। যে গাড়ি এনেছিলাম, সেটিও ফেরত পাঠিয়েছি। এ বছর আর মাটি কাটব না।’

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হোসেন বলেন, ‘কৃষিজমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়টি শুনেছি। যারা এ কাজে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আ.লীগের দুই নেতাকে বিএনপির মনোনয়ন

  • বাগেরহাট-১ আসনে মনোনয়ন পাওয়া কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি
  • বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী সোমনাথ দে গত বছরের আগস্টে আ.লীগ থেকে পদত্যাগ করেন
বাগেরহাট প্রতিনিধি
আ.লীগের দুই নেতাকে বিএনপির মনোনয়ন

বাগেরহাটের চারটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে চারটির দুটিতেই দলটির মনোনয়ন পেয়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দুই নেতা। বিএনপিতে যোগ দিয়ে এক বছরের মধ্যে দুটি আসনের মনোনয়ন পাওয়ায় বিএনপি বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে থাকা ঘনিষ্ঠ ছবি শেয়ার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট-১ (ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারী) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল। তিনি একই সঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব এবং বাংলাদেশ অশ্বিনী সেবা আশ্রমের সভাপতি। ছিলেন চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

অপর দিকে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের সভাপতি সোমনাথ দে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। এর আগে সোমনাথ দে জাতীয় পার্টি করতেন। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সংখ্যালঘুবিষয়ক উপদেষ্টা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন।

২০১৯ সালের শেষের দিকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০২২ সালে গঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটিতে তিনি ৩নং সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছিলেন। ‘দেশবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগে’ কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল চলতি বছরের মার্চে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং অপর একটি মামলায় কারাভোগ করেছেন সোমনাথ দে। জেল থেকে বেরিয়ে সনাতন ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে ২০ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন কপিল ও সোমনাথ।

এই নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় শরণখোলার বাসিন্দা রাসেল আহম্মেদ ফেসবুকে সোমনাথ দের ছবি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, ‘জয় বাংলা, ধানের শীষে ভোট দিন।’ পোস্টের নিচে একজন লিখেছেন, ‘সাথে জাতীয় পার্টির স্লোগান যুক্ত করে দিন।’

গত শনিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে প্রার্থী ঘোষণার পরে আসন দুটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, ‘কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের আসলে করার কিছু নেই। তবে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দীর্ঘদিন দল করে, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পরে অন্য দলের কেউ এসে মনোনয়ন পাওয়ায় তাঁরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে এসব বিষয় কেন্দ্রকে জানিয়েছি।’

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এটি কীভাবে মেনে নেবে বলেন। তাঁরা দুজনই সুবিধাবাদী এবং শেখ হেলালের নিকটতম অনুসারী ছিলেন।’

তবে বাগেরহাট-১ আসনের মনোনয়নপ্রাপ্ত কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘কখনো অন্য কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। এটিই আমার প্রথম রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া।’ আর বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী সোমনাথ দে বলেন, ‘আমি মনোনয়ন পাওয়ায় যাঁরা চাঁদাবাজ, জুলুমকারী, নির্যাতন করে, তাঁদের গাত্রদাহ হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা সাধারণ মানুষ তাঁরা আমাকে সাদরে বরণ করেছেন। আমি জাতীয় পার্টি করেছি, আওয়ামী লীগ করেছি, ৫ আগস্টের পর জেল খেটেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়, দলের হাইকমান্ড আমাকে মনোনীত করেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘স্যাক্রোলাইটিস’ রোগে আক্রান্ত: মেধাবী ছাত্রী আসফির বাঁচার আকুতি

খুলনা প্রতিনিধি
আরিফা জান্নাত আসফি । ছবি: সংগৃহীত
আরিফা জান্নাত আসফি । ছবি: সংগৃহীত

খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী আরিফা জান্নাত আসফি পিইসি পরীক্ষায় বৃত্তিসহ এ+ এবং জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় এ+ পেয়েছেন। অত্যন্ত মেধাবী এই ছাত্রী গত চার বছর ধরে দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে।

চিকিৎসকের পরামর্শে এর আগে পরপর দুবার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। তবে এখনো শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় পুনরায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

আসফির পরিবার জানায়, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে তারা চরম সংকটে পড়েছে। ভারতে গিয়ে পুনরায় চিকিৎসা নিতে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন হলেও দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এ অর্থ জোগাড় করা সম্ভব নয়।

এ অবস্থায় ‘স্যাক্রোলাইটিস’ রোগে আক্রান্ত মেধাবী ছাত্রী আরিফা জান্নাত আসফি নিজের জীবন রক্ষার্থে সমাজের বিত্তবান ও সহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন। সামান্য সহযোগিতাই হয়তো তার চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে এবং একটি সম্ভাবনাময় জীবন রক্ষা করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নকলায় ৭ অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, সাড়ে ২২ লাখ টাকা জরিমানা

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
অবৈধভাবে প্রস্তুত করা কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয় । ছবি: আজকের পত্রিকা
অবৈধভাবে প্রস্তুত করা কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয় । ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরের নকলায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। রোববার (২১ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় দিনব্যাপী এ অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযানকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা সাতটি অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর বিভিন্ন ধারায় ভাটামালিকদের মোট ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ সময় অবৈধভাবে প্রস্তুত করা কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট ইটভাটাগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পাশাপাশি অবৈধ ইটভাটার সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে মালিকপক্ষকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশের ক্ষতি রোধ ও সরকারি আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে চলমান থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত