Ajker Patrika

রাজধানীতে আনসার আল ইসলামের ৬ জঙ্গি গ্রেপ্তার: র‍্যাব

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯: ২৪
রাজধানীতে আনসার আল ইসলামের ৬ জঙ্গি গ্রেপ্তার: র‍্যাব

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের দাওয়াতি শাখার প্রধানসহ ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব। গতকাল সোমবার র‍্যাব-১ ও ডিজিএফআইয়ের যৌথ অভিযানে উত্তরা, বনানী, বনশ্রী ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন র‍্যাব-১-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. পারভেজ রানা।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের ঢাকা অঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে আবু মাসরুর (৫০), সদস্য শেখ আশিকুর রহমান ওরফে আবু আফিফা (৪৯), সাদি মো. জুলকার নাইন (৩৫), মো. কামরুল হাসান সাব্বির (৪০), মো. মাসুম রানা ওরফে মাসুম বিল্লাহ (২৬) এবং সাঈদ মো. রিজভী (৩৫)।   

গ্রেপ্তারকালে তাঁদের কাছ থেকে জঙ্গি কার্যক্রমে ব্যবহৃত ২টি ল্যাপটপ, ৬টি মোবাইল, উগ্রবাদে সহায়ক পুস্তিকা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সংক্রান্ত ডায়েরি ও নোট বই জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব-১-এর সিনিয়র এএসপি পারভেজ রানা বলেন, ‘আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শে কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন তাঁরা। বিভিন্ন সময় তাঁরা অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য শুনে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে উক্ত সংগঠনে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তাঁরা সংগঠনের সদস্য সংগ্রহে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।’ 

পারভেজ রানা আরও বলেন, ‘পাশের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে সংগঠনের সদস্যদের জিহাদের মাধ্যমে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী করে তোলেন। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদের তারা বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতেন। এ ছাড়া তাঁরা সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভুল তথ্য দিয়ে তাঁদের আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন মাদ্রাসা ও সদস্যদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করতেন।’ 

তা ছাড়া বিভিন্ন সময়ে তাঁরা মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতেন বলে জানা যায়। তাঁরা বিভিন্ন অপব্যাখ্যা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদের উগ্রবাদী করে তুলতেন। 

এ ছাড়া তাঁরা পাশের বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখতেন এবং বিভিন্ন উগ্রবাদী গ্রুপের সদস্য বলেও জানান তিনি। 

র‍্যাব কর্মকর্তা পারভেজ বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া মিজবাহ ওরফে আবু মাসরুর দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য ২০০৪ সালে ইউরোপের একটি দেশে গমন করেন এবং ফিন্যান্সে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন। ২০১০ সালে গ্রিন কার্ড স্কিমের মাধ্যমে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে সপরিবারে ইউরোপীয় একটি দেশে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। 

কিন্তু একপর্যায়ে তিনি আশিক ওরফে আবু আফিফার মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করেন এবং দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি ইউরোপীয় একটি দেশে অবস্থানকালে কোনো সংগঠনের নাম না বলে বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে ও ধর্মীয় বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতেন। সেই সঙ্গে নতুন সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে গোপন সভা করতেন। 

পরে ২০২২ সালের অক্টোবরে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে বাংলাদেশে এসে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম করতে থাকেন। পরবর্তীতে সেই সংগঠনের ঢাকা অঞ্চলের দাওয়াতি শাখার প্রধানের দায়িত্ব পান মিজবাহ। তিনি দেশে ও দেশের বাইরে থেকে সংগঠনের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করতেন। 

এ ছাড়া তিনি ঢাকা, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা এবং খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক সফর, সভায় অংশগ্রহণ এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ ও চাঁদা আদায় করতেন বলে জানা গেছে। 

অপর দিকে শেখ আশিকুর রহমান ওরফে আবু আফিফা একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএস সম্পন্ন করেন। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরির পাশাপাশি এয়ারকন্ডিশনের ব্যবসাও করতেন। আশিকুর সপরিবারে ইউরোপীয় একটি দেশে বসবাসকালীন মিসবাহর সঙ্গে পরিচয় ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। 

তিনি ইউরোপীয় একটি দেশে থাকাকালীন সংগঠনের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতি কার্যক্রম করতে থাকেন। তিনি সংগঠনটির ঢাকা অঞ্চলের অন্যতম উপদেষ্টা ও অর্থের জোগানদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় উগ্রবাদী ভিডিও কনটেন্ট সংগঠনের সদস্যদের পাঠাতেন। 

গ্রেপ্তার সাদি মো. জুলকারনাইন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে গার্মেন্টস সেক্টরে চাকরিরত ছিলেন। তিনি গ্রেপ্তার মিজবাহর মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হন এবং ঢাকা অঞ্চলের বিভিন্ন দাওয়াতি কার্যক্রমের পাশাপাশি সংগঠনের নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতেন। তিনি সংগঠনে নিয়মিত চাঁদা দিতেন বলেও জানা যায়। 

এ ছাড়া তিনি মেজবাহর কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সংগ্রহ করতেন। তিনি পাশের বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত ছিলেন। তিনি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথাকথিত জিহাদের নামে হিজরত করে সেসব দেশে গমনের পরিকল্পনা ও চেষ্টা করছিলেন বলেও জানিয়েছে র‍্যাব। 

গ্রেপ্তার মো. কামরুল হাসান সাব্বির একটি পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকে আইটিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে একটি আইটি ফার্মে কর্মরত ছিলেন। তিনি গ্রেপ্তার শেখ আশিকুর রহমান ওরফে আবু আফিফার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম করছিলেন। তিনি সংগঠনে নিয়মিত চাঁদা দিতেন। তিনি মেজবাহ ও আশিকের কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা ও অন্যান্য কনটেন্ট সংগ্রহ করতেন। তথ্যপ্রযুক্তিতে তাঁর দক্ষতা থাকায় বিভিন্ন সময় তিনি ইন্টারনেট থেকে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের ভিডিওসহ বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদী কনটেন্ট সংগ্রহ করে মেজবাহকে সরবরাহ করতেন। এ ছাড়া তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন উগ্রবাদী কনটেন্ট প্রচার প্রচারণা করতেন এবং সংগঠনের নতুন সদস্যদের আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতেন। 
 
গ্রেপ্তার সাঈদ মো. রিজভী পেশায় একজন চিকিৎসক। ২০২১ সালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে অবস্থানকালে উগ্রবাদী মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হন। পরে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেজবাহর সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তাঁর মাধ্যমে সংগঠনে যোগ দেন। তিনি সংগঠনে নিয়মিত চাঁদা দিতেন। তাঁর বাসায় প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর সংগঠনের সভা অনুষ্ঠিত হতো এবং নতুন সদস্যদের সংগঠনে যুক্ত করার আনুষ্ঠানিকতাও সেখানে সম্পন্ন হতো। এ ছাড়া তাঁর বাসায় সংগঠনের নতুন সদস্যদের শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো বলে জানা গেছে। 

গ্রেপ্তার মো. মাসুম রানা ওরফে মাসুম বিল্লাহ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। তিনি সাদি জুলকার নাইনের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি নিজ এলাকায় দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। তিনি সংগঠনে নিয়মিত চাঁদা দিতেন এবং সংগঠনের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করতেন বলেও জানিয়েছেন র‍্যাব কর্মকর্তা পারভেজ। 

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত