Ajker Patrika

স্কুলে শিশুদের ওপর পড়ল যুদ্ধবিমান

  • ছুটির পর বের হচ্ছিল শিক্ষার্থীরা।
  • অপেক্ষায় ছিলেন অভিভাবকেরা।
  • তখনই আছড়ে পড়ে যুদ্ধবিমান।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক, মর্মস্পর্শী। এমনই এক দুর্ঘটনা ঘটেছে গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা শোকবিহ্বল করেছে পুরো দেশকে।

দুপুরে ওই যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে আছড়ে পড়ে বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন বৈমানিকসহ অন্তত ২০ জন। আহত ও দগ্ধ হয়েছে দেড় শতাধিক। এদের বেশির ভাগই মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী। আহতদের মধ্যে আছেন শিক্ষক ও অভিভাবকও। আইএসপিআর বলেছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। কারণ উদ্‌ঘাটনে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করেছে বিমানবাহিনী।

নিহত বৈমানিকের নাম ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম। নিহতদের মধ্যে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১২ জন, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ২ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২ জন, উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ২ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ১ জনের মরদেহ রয়েছে। দগ্ধ হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে নিহত অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, যুদ্ধবিমানটি বেলা ১টা ১৮ মিনিটে দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী একাডেমিক ভবনের ওপর পড়ে বিধ্বস্ত হয়।

এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার এক দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদ, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে আজ দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সব সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। হতাহতদের জন্য দেশের সব মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

আরেক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলেছে, পরিচয় শনাক্ত হওয়া মরদেহ দ্রুত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। যাদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যাবে না, তাদের মরদেহ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে পরে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

আহতদের ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গতকাল জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহতদের ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গতকাল জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সন্ধ্যায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামসহ ২০ জন নিহত এবং ১৭১ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটনে বিমানবাহিনীর একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আইএসপিআর জানায়, বিমানবাহিনীর ‘এফ-৭ বিজিআই’ বিমানটি বেলা ১টা ৬ মিনিটে প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকার কুর্মিটোলার এ কে খন্দকার বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। পরে বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়।

জানা যায়, বিধ্বস্ত এফ-৭ বিজিআই বিমানটি চীনের তৈরি চেংদু জে-৭ সিরিজের একটি যুদ্ধবিমান। বাংলাদেশে এই মডেলের বিমানের তৃতীয় দুর্ঘটনা এটি। এর আগে ২০১৮ সালের নভেম্বরে টাঙ্গাইলের মধুপুরের রসুলপুরে ফায়ারিং রেঞ্জে মহড়ার সময় বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দিপু নিহত হন। এরপর ২০২১ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ এমবি। এতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ নিহত হন।

গতকালের দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাইলস্টোন স্কুলের হায়দার আলী একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটকে আছড়ে পড়ে বিমানটি। সঙ্গে সঙ্গে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। অনেক দূর থেকেও ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। জ্বলন্ত বিমানটির আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখান থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করেন। দগ্ধ অর্ধশতাধিক মানুষকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। আরও অনেককে উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, লুবনা হাসপাতালসহ উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। আহতদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। তাদের অনেকের পুরো শরীর পুড়ে গেছে।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান বলেন, আহতদের প্রায় সবাই স্কুলের শিক্ষার্থী। সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল বলেন, বিমানটি প্রথমে ভবনে আছড়ে পড়ে। পরে ছেঁচড়ে ভবনে গিয়ে ধাক্কা খায়। সঙ্গে সঙ্গে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়।

দুর্ঘটনাস্থল থেকে অনেককে স্ট্রেচারে করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। আহতদের একটি অংশকে প্রাথমিকভাবে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। দগ্ধদের অধিকাংশকে পাঠানো হয় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে।

উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালের প্রশাসন শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেন, যাদের ৩০ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে, তাদের বার্ন ইউনিটে রেফার করা হয়েছে। অল্প আঘাত নিয়ে আসা কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আকাশ বলেন, আহতদের বেশির ভাগের শরীরের ৬০-৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের অনেকের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

রাত পৌনে নয়টার দিকে বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ ভ্যানে তুলে নিয়ে উদ্ধারকাজের আপাতত সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, হায়দার আলী ভবনটি দোতলা এবং পশ্চিমমুখী। ভবনটির মাঝখানে প্রধান ফটক ও দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। বিমানটি সোজা ফটকে আছড়ে পড়লে ভবনটি এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ও সেনাসদস্যরা বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে বিমানটির বিভিন্ন অংশ কেটে বের করেন।

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই ভবনে দুটি তলা মিলিয়ে মোট ১৬টি শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকদের চারটি কক্ষ রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শ্রেণিকক্ষের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। শিক্ষার্থীরা জানায়, ভবনটিতে ছুটির পর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোচিং করত।

জানতে চাইলে মাইলস্টোন কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল বলেন, হায়দার আলী ভবনে ইংরেজি মাধ্যমের তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস হতো। স্কুল ছুটির ঠিক আগে হওয়ায় বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় অনেক অভিভাবক ভবনের সামনে ছিলেন।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়েম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেলা ১টা ১০ মিনিটের দিকে বিকট শব্দ শুনতে পাই। দৌড়ে বাইরে এসে দেখি, আগুন জ্বলছে হায়দার আলী ভবনে। কিছু শিক্ষার্থী গায়ে আগুন নিয়ে বের হয়ে আসে। কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসরুমে আটকা পড়ে।’ তিনি বলেন, প্রধান ফটকের ভেতর বিমানটি ঢুকে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী সেখানে আটকা পড়ে। ভবনের কক্ষের জানালায় লোহার গ্রিল থাকায় অনেকে বের হতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভানোর পর গ্রিল কেটে এবং ছাদে মই দিয়ে উঠে অনেক শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে।

বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ওই এলাকা পরিদর্শনে যান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দোতলা ভবনটির প্রথম তলায় ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শ্রেণিকক্ষ। দ্বিতীয় তলায় ছিল দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শ্রেণিকক্ষ। সঙ্গে ছিল অধ্যক্ষের অফিস মিটিং রুম। একটি কোচিংয়ের ক্লাস চলমান ছিল। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল এবং ওই সময় শিক্ষকদের কক্ষের সংলগ্ন যে জায়গায় বিমানটি পড়েছিল, ওই জায়গায় বাচ্চারা জড়ো হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে হয়তো কিছুসংখ্যক অভিভাবকও ছিলেন।

বিকেলে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন দগ্ধদের খোঁজখবর নিতে যান অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও বার্ন ইনস্টিটিউটে যান। পরে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, বার্ন ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চিকিৎসার প্রয়োজনে যত কিছু দরকার, তারা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তারপরও যদি প্রয়োজন হয়, বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লঞ্চ দুর্ঘটনা: চিকিৎসার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় পৌঁছা হলো না জেলে হানিফের

শিমুল চৌধুরী, ভোলা 
লঞ্চ দুর্ঘটনা নিহত হানিফ মাঝির পরিবারের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
লঞ্চ দুর্ঘটনা নিহত হানিফ মাঝির পরিবারের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎মো. হানিফ মাঝি (৪২), পেশায় জেলে। বাড়ি উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। হতদরিদ্র এ জেলে সারা জীবন নদীতে জাল টেনে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। অসুস্থ স্ত্রী রহিমা বেগমের চিকিৎসার জন্য রওনা হয়ে চাঁদপুরের মেঘনায় ‎লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঘন কুয়াশার কারণে মেঘনা নদীতে ঢাকা থেকে বরিশালগামী একটি যাত্রীবাহী লঞ্চের ধাক্কায় জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে অনেকে নদীতে ঝাঁপ দেন।

নদীতে ভাসমান জাকির সম্রাট-৩ থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় হানিফসহ কয়েক যাত্রীকে এমভি কর্ণফুলী-৯ লঞ্চযোগে ঢাকার সদরঘাটে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

হানিফ মাঝি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদাবাদ গ্রামের মো. গেদু শনির ছেলে।

স্থানীয় লোকজন জানান, চার সন্তান ও স্ত্রীর সংসারে নদীতে মাছ শিকারই হানিফ মাঝির একমাত্র আয়ের পথ। সম্প্রতি স্ত্রী রহিমা বেগম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসায় সুস্থ না হওয়ায় ধারদেনা করে তাঁকে ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন জেলে হানিফ।

গতকাল বিকেলে স্ত্রীকে নিয়ে চরফ্যাশন উপজেলার ঘোষেরহাট লঞ্চঘাট থেকে এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চে উঠে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু রাত ২টার দিকে সন্তানেরা খবর পান, তাঁর বাবা হানিফ মাঝি আর নেই।

এ খবর ফরিদাবাদ গ্রামে পৌঁছালে গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। আজ শুক্রবার বিকেলে নিহত হানিফ মাঝির বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন হানিফের সন্তানেরা। বসতঘরের সামনে সন্তানেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তাঁরা বলেন, ‘আমাদের মা অনেক দিন ধরে অসুস্থ। বাবাই সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী। ধারদেনা করে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলেন। রাত ১টার দিকে ফোনে খবর পাই, দুর্ঘটনায় বাবা মারা গেছেন।’ বরিশালগামী এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চ ও জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চচালকের বিচার দাবি করেন তাঁরা।

‎নিহত হানিফের ভাই আক্তার বলেন, চিকিৎসার জন্য যাত্রা করা মানুষটি শেষপর্যন্ত লাশ হলেন। নদীর বুকে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষ শুধু দুটি লঞ্চের নয়, এটি গরিব জেলে পরিবারের জীবনের সঙ্গে নিয়তির ভয়াবহ সংঘর্ষ। নিহত হানিফ মাঝির পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে দুলারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আহাম্মদপুর ইউনিয়নের হানিফ নামের একজনের নিহতের খবর পেয়েছি। পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে নৌ পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ায় পিকআপচাপায় দুই কিশোর নিহত

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
পিকআপ ভ্যানের নিচে চাপা পড়া মোটরসাইকেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
পিকআপ ভ্যানের নিচে চাপা পড়া মোটরসাইকেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় পিকআপ ভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই কিশোর নিহত হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের ষোল দাগ ক্যানেলপাড়া হাসপাতাল রোডে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলো মিরপুর উপজেলার বিজনগর এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে সিয়াম শেখ (১৬) এবং একই এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আ. রশিদ (১৬)।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, আজ বিকেলে সিয়াম ও রশিদ মটরসাইকেল নিয়ে ভেড়ামারার লালন শাহ সেতু, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও মনি পার্ক এলাকায় ঘুরতে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ষোল দাগ ক্যানেলপাড়া এলাকায় এলে কুষ্টিয়া থেকে আসা একটি পিকআপ ভ্যান তাদের মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়।

এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেলচালক সিয়াম নিহত হয়। স্থানীয়রা গুরুতর আহত আরেক কিশোর রশিদকে উদ্ধার করে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ জাহেদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, পিকআপ ভ্যানটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক ও সহকারী পালিয়ে গেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যা মামলা: ফয়সালকে পালাতে সহযোগিতার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুজন কারাগারে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানকে ভারতে পালাতে সহযোগিতার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুজনকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রিপন হোসেন তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম।

বিকেলে দুজনকে পাঁচ দিনের দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আদালতের অতিরিক্ত পিপি মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

২১ ডিসেম্বর দুজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ১৮ ডিসেম্বর তাঁদের তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এর আগে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাট থেকে দুজনকে আটক করে ডিবি পুলিশ।

১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে বিজয়নগর এলাকায় শরিফ ওসমান বিন হাদি একটি রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল করে আসা দুজনের একজন তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিতে হাদি মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। ঘটনার পরপর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়ার পর এখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর মারা যান হাদি।

১৪ ডিসেম্বর রাতে ফয়সালকে আসামি করে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন ইনকিলাব মঞ্চের যুগ্ম সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। হাদির মৃত্যুর পর তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশায় ভয়ংকর মেঘনা, এক রাতে একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করা অ্যাডভেঞ্চার-৯। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করা অ্যাডভেঞ্চার-৯। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতটি মেঘনা নদীতে নৌ চলাচলের জন্য ছিল বেশ ভয়ংকর। ওই রাতে অ্যাডভেঞ্চার-৯ এবং জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের সংঘর্ষসহ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে মেঘনায়। এসব দুর্ঘটনায় অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। বিএনপির জনসভা শেষে নেতা-কর্মীদের নিয়ে অনেক লঞ্চ এই রাতে বরিশালে ফিরছিল। রাতের আঁধারে ঘন কুয়াশায় বেপরোয়া লঞ্চ চলানোয় এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, গতকাল দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে ভোলা থেকে ঢাকাগামী জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের সঙ্গে ঢাকা-বরিশাল রুটের অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে চারজনের মৃত্যু হয়। চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে মেঘনা নদীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

একই রাতে চাঁদপুর এলাকার মেঘনায় কুয়াশায় দিক হারিয়ে এম খান-৭ ও ঈগল-৪ নামে দুটি লঞ্চের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। ঢাকা-বরিশাল রুটের এম খান-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. শুভ জানান, চাঁদপুরের আমিরাবাদ এলাকায় কুয়াশায় দিক হারিয়ে ঈগল-৪ লঞ্চ দিক হারিয়ে তাদের লঞ্চের ডান পাশে ধাক্কা দেয়। এতে এম খান-৭-এর চারটি টেক্সিন ও খুঁটি ভেঙে গেছে। লঞ্চটি নিরাপদে আজ শুক্রবার সকালে পৌঁছেছে।

একই রাতে মেঘনায় বরিশালগামী সুরভী-৭ ও ঢাকাগামী ফারহান-৭ লঞ্চের মধ্যে মৃদু সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া সুন্দরবন-১৬ লঞ্চের সঙ্গে বাল্কহেডের ধাক্কা লেগেছে। এ ঘটনায় আজ বিকেলে ডুবে যাওয়া বাল্কহেডের ভেতর থেকে দুই স্টাফের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

ঢাকা থেকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়াগামী কুয়াকাটা-১ লঞ্চ দিক হারিয়ে চরে ওঠে গিয়েছিল। লঞ্চের সুপারভাইজার মো. হুমায়ন কবীর জানান, জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেলে আজ সকাল ১০টায় লঞ্চটি চর থেকে নামানো সম্ভব হয়। পরে নিরাপদে মঠবাড়িয়ায় পৌঁছেছে। এ লঞ্চের যাত্রীরা ছিলেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। রাজধানীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গণসংবর্ধনা কর্মসূচিতে অংশ নিতে তাঁরা লঞ্চটি রিজার্ভ নিয়েছিলেন।

বিআইডব্লিউটিএর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লঞ্চের চালকেরা আইন মানছে না। কুয়াশার মধ্যেও তাঁরা লঞ্চ চালান। যে কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে।

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর বরিশালের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক সোলায়মান হোসেন বলেন, গতকাল নদীতে অনেক বেশি লঞ্চ ছিল। বিএনপির জনসভার পর লঞ্চগুলো ফিরেছে, নিয়মিত লঞ্চও ছিল। গত রাতে কুয়াশাও ছিল অতি ঘন। যে কারণে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটে একই রাতে। দুর্ঘটনার জেরে সুন্দরবন-১৬-এর রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে। অ্যাডভেঞ্চার-৯ এবং জাকির সম্রাট-৩-এর রুট পারমিটও বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, কুয়াশার বিষয়ে সাবধান করে লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ঘাটে ঘাটে মাইকিংও করা হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু লঞ্চ বেপরোয়া গতিতে চলায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত