Ajker Patrika

নাগরিকদের পুলিশি হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ২২: ৪৯
নাগরিকদের পুলিশি হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা

দেশের কোনো নাগরিক যেন পুলিশি হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার না হন–এমন দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বারের দক্ষিণ হলে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বিএনপি–জামায়াতের সিনিয়র আইনজীবীরা। 

নারায়ণগঞ্জে নিজ চেম্বার থেকে দুই আইনজীবীকে তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নেতৃবৃন্দ ও সিনিয়র আইনজীবীবৃন্দ’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, বারের এডহক কমিটির আহ্বায়ক মহসিন রশিদ, সুব্রত চৌধুরী, বার কাউন্সিলের সদস্য ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বার কাউন্সিলের সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বক্তব্য রাখেন। 

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল, বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি জসিম উদ্দিন সরকার, বারের এডহক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আহমেদ বাদল, এ. কে. এম. জগলুল হায়দার আফ্রিক, ড. গোলাম রহমান ভূইয়া ও ইউসূফ আলী প্রমুখ। 

জয়নুল আবেদীন লিখিত বক্তব্যে বলেন, চেম্বার থেকে খোরশেদ আলম মোল্লা ও সিদ্দিকুর রহমানকে গত ২৩ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়। সারা রাত ডিবি হেফাজতে রেখে পরদিন দুপুরে আইনজীবীদের প্রতিবাদের মুখে ছেড়ে দেয়। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে স্বাধীনভাবে পেশা পরিচালনার স্বার্থে আইনজীবী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি। আইনজীবীর চেম্বার থেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি অবৈধ ঘোষণা করে তাকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিল।

তিনি বলেন, দেশে কোনো সুশাসন নেই। দীর্ঘদিন ধরে একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকায় এবং একই প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীকে দলীয় কাজে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। ফলে রাষ্ট্রের এই বাহিনীর সদস্যরা তাদের পেশাদারিত্ব হারিয়ে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কর্মীর মত আচরণ করছে। আমরা প্রত্যাশা করবো প্রধান বিচারপতি এই ঘটনা সম্পর্কে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যাতে দেশের কোনো নাগরিক এভাবে পুলিশি হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার না হন। 

এ সময় তিনি বুধবার আটক হওয়া আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দের মুক্তির দাবি জানান। এছাড়া সংবাদ সম্মেলন থেকে মতিউর রহমান আকন্দের মুক্তির দাবি জানান মহসিন রশিদ, মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং রুহুল কুদ্দুস কাজলও। 

নাশকতার সব মামলা ভুয়া 
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আইনের শাসন কোথায়? স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা কোথায়? যারা বিচার বিভাগকে সহায়তা করবে তারাই আজকে হুমকির সম্মুখীন। রাষ্ট্র মনে হয় আজকে একটি জেলাখানা হয়ে গেছে। কেউ নিরাপদ নেই। বিনা কারনে গায়েবি মামলা হচ্ছে, বিনা কারনে গ্রেপ্তার হচ্ছে। দেশে কোনো আইনের শাসন আছে বলে আমরা মনে করিনা। 

প্রধানমন্ত্রী আইনজীবীদের বলেছেন নাশকতার মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য। এসব নাশকতার মামলা সবগুলোই ভুয়া। মামলা নিষ্পত্তি করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ বলে আমি মনে করি। আর বার কান্সিলের ১৫তলা ভবন করতে ১৫ কোটি টাকা লাগতে পারে। সেখানে ১৩৯ কোটি টাকা তারা খরচ করেছে। এখানে যে দুর্নীতি হয়েছে সেজন্য দুদকের তদন্ত চান তিনি। 

আনসারের ক্ষমতা রক্ষী বাহিনীর মতো
পুলিশের ক্ষমতা খর্ব করে আনসারকে সব ধরনের ক্ষমতা দিয়ে রক্ষীবাহিনীর মতো আরও একটি বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে কি না–সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তোলেন সিনিয়র আইনজীবী সুব্রুত চৌধুরী। তিনি বলেন, আনসারকে ক্ষমতা দিয়ে যে আইন উত্থাপিত হয়েছে তা সংবিধান পরিপন্থী। মনে হয় বাংলাদেশের মানুষকে জিম্মি করে সরকার যে কোনভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গ্রেপ্তার বাণিজ্য এবং গণগ্রেপ্তারের সূচনা করেছে। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবর বিরোধী দলের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা বাংলাদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তা বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিগনিত করার পায়তারা। আইনজীবী সমাজ এটি মেনে নিবে না।  

বিনা কারণে গ্রেপ্তার সমর্থন করেন না অ্যাটর্নি জেনারেল
আইনজীবীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, যদি আইনজীবীদের কাউকে ধরে থাকে আমি কখনো সমর্থন করি না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সেটা ভিন্ন বিষয়। বিনা অভিযোগে কাউকে গ্রেপ্তার আমি পছন্দ করিনা। বার কাউন্সিল ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন যদি তদন্ত করতে চায় তাতে আমার কোনো বক্তব্য নেই। তবে কোনো কিছু না দেখে এরূপ দোষারোপ করা অন্তসারশূণ্য। 

নাশকতার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তারা (বিএনপি) নাশকতা না করলে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন? এসব মামলা কি পরে থাকবে? এগুলো শেষ করতে হবে। যে কোনো দিকে যেতে পারে। খালাস হতে পারে, শাস্তিও হতে পারে। আমরা তো জানি নাশকতা হয়েছিল। 

আনসারের ক্ষমতা নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সংবিধানে কি বলা আছে কোন বাহিনী কি কাজ করবে? আগে আইনটি হোক। হওয়ার আগেই কেন কথা বলবো? 

বিচারিক আদালতে রাতে রাজনৈতিক মামলার শুনানির বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আগেও এরকম হয়েছে। কোনো বিশেষ মামলা নয়, সব মামলাতেই এমন হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শরীয়তপুরের ৩ আসন: আওয়ামী লীগের ঘাঁটি দখলে মরিয়া বিএনপি-জামায়াত

  • শরীয়তপুর-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরব সাবেক এমপির অনুসারীরা।
  • নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
শরীয়তপুরের ৩ আসন: আওয়ামী লীগের ঘাঁটি দখলে মরিয়া বিএনপি-জামায়াত

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শরীয়তপুরে এবার বদলে গেছে নির্বাচনী সমীকরণ। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিদ্যমান বাস্তবতায় জেলার তিনটি আসনই নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। শরীয়তপুর-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাঈদ আহমেদ আসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করেছে দলের অপর অংশ। তবে অন্য দুই আসনে এমন বিরোধ নেই। সবকটি আসনেই নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

শরীয়তপুর-১: স্বাধীনতার পর একবারই এখানে জয় পায় বিএনপি। সেটি ছিল ১৯৭৯ সালে। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর দখলে ছিল এটি। শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা নিয়ে গঠিত আসনটিতে এবার বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাঈদ আহমেদ আসলাম। তিনি জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শরীয়তপুর-৩ আসনের বাসিন্দা। তবে তাঁর প্রাথমিক মনোনয়ন মেনে নিতে নারাজ আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি সরদার এ কে এম নাসির উদ্দীন কালুর অনুসারীরা। সাঈদ আহমেদ আসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করেছেন তাঁরা। দলীয়ভাবে মীমাংসা না হলে শেষ পর্যন্ত নাসির উদ্দীন কালু স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ড. মোশারফ হোসেন মাসুদ। সাঈদ আহমেদ আসলাম ও মোশারফ হোসেন মাসুদ দুজনই নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে জালালুদ্দীন আহমদ, এনসিপি থেকে মো. আব্দুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন থেকে মুফতি তোফায়েল আহমেদ কাসেমী, গণঅধিকার পরিষদ থেকে অ্যাডভোকেট খবির উদ্দিন মনোনয়ন পেতে পারেন।

শরীয়তপুর-২: নড়িয়া ও সখিপুর থানা নিয়ে গঠিত আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। শুধু ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে দুবার বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। এবার এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান কিরণ। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) সেক্রেটারি ডা. মাহমুদ হোসেন বকাউল। দুজনই এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভাসহ নানাভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মো. দবির হোসেন শেখ, ইসলামী আন্দোলন থেকে মুফতি মো. ইমরান হোসাইন এবং গণঅধিকার পরিষদ থেকে আক্তারুজ্জামান সম্রাট মাঝি মনোনয়ন পেতে পারেন।

শরীয়তপুর-৩: স্বাধীনতার পর বেশির ভাগ সময়েই এখানে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। শুধু ১৯৭৯ সালে একবার মুসলিম লীগ, ১৯৮৬ সালে একবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হন। গোসাইরহাট, ডামুড্যা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত আসনটিতে এবার বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তারেক রহমানের সাবেক একান্ত সচিব মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম। দুজনই নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। খেলাফত মজলিস থেকে মুফতি খবির উদ্দিন এবং ইসলামী আন্দোলন থেকে অ্যাডভোকেট মো. হানিফ মিয়া মনোনয়ন পেতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কক্সবাজারের চকরিয়া: মাতামুহুরীতে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ বিএনপি নেতার

  • দলীয় পরিচয়ে নয়, এলাকার মুরব্বিরাসহ মিলেমিশে ৩২ জন মাছ চাষ করতে নদীতে বেড়া দিয়েছি।
  • রেজাউল করিম সাবেক ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা।
বাপ্পী শাহরিয়ার, চকরিয়া (কক্সবাজার) 
নদীতে বাঁশের বেড়া ও জাল দিয়ে তৈরি ঘেরে এভাবেই চলছে মাছ চাষ। এতে মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় জেলেরা। গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নদীতে বাঁশের বেড়া ও জাল দিয়ে তৈরি ঘেরে এভাবেই চলছে মাছ চাষ। এতে মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় জেলেরা। গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নদীতে আড়াআড়ি বাঁশ, বেড়া ও জাল দিয়ে ঘের তৈরি করা হয়েছে। সেখানে করা হচ্ছে মাছ চাষ। এমন ঘটনা ঘটছে কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীতে। আর এর পেছনে রয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা। এর ফলে জেলে কিংবা স্থানীয়রা মাছ ধরতে পারছেন না। ব্যাহত হচ্ছে মাছের বংশবিস্তার।

চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের বাটাখালী সেতু এলাকায় ঘের তৈরি করার হয়েছে। এই উপজেলার বিভিন্ন স্থান দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা মাতামুহুরী নদী। নদীটি মাছ আহরণের জন্য উন্মুক্ত।

মিয়ানমার সীমান্তের মাইভার পর্বত থেকে মাতামুহুরীর উৎপত্তি। এরপর নদীটি বান্দরবানের আলীকদম, লামা ও কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী নদীটির দৈর্ঘ্য ১৪৬ কিলোমিটার। চকরিয়া উপজেলায় নদীটির ৪০ কিলোমিটার পড়েছে।

বাটাখালী ও জলদাশপাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাছ চাষ করার জন্য বাঁশের বেড়া দিয়ে নদী দখলে নিয়েছেন মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য রেজাউল করিম। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আনোয়ারুল হাসান, আবু জাফর, জামাল উদ্দিন, আরিফুল ইসলাম বাবুল, মোহাম্মদ মানিকসহ ৩২ জন। নদী দখলে জড়িত ৩২ জনের বেশির ভাগই বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মী ও সমর্থক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চকরিয়া-বদরখালী কে বি জালাল উদ্দিন সড়কের উপজেলার সাহারবিল এলাকায় মাতামুহুরী নদী দখল করে বাটাখালী সেতুর নিচে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। এই বেড়ার মধ্যে তাঁরা অবৈধভাবে মাছচাষ করবেন। বেড়া দিয়ে নদী দখলের কারণে স্বাভাবিক পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সেখানে একটি খুপরিঘরও বানানো হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীর পাশে চকরিয়া পৌরসভা ও সাহারবিল জলদাশপাড়ার প্রায় ৪০০ জেলে পরিবার বাস করে। তারা মাতামুহুরী ও খাল থেকে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন রাজনৈতিক আশ্রয়ে নদীতে বেড়া দিয়ে দখল শুরু হয়েছে। তাই ভয়ে অনেকে নদীতে মাছ ধরতে যায় না। বাঁশের বেড়া দেওয়ার কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা নদীতে গোসল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো কাজ করতে পারছে না।

এই বিষয়ে জেলে আলী আকবর বলেন, ‘৮-৯ দিন ধরে নদীর বুকে আড়াআড়িভাবে বাঁশের তৈরি বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করতে একটি প্রভাবশালী চক্র দখল করেছে। এভাবে নদীতে বেড়া দেওয়া শুরু হলে মাতামুহুরীর কোনো অংশই বাদ যাবে না। আমরা জেলেরা মাছ আহরণ করতে পারব না।’

তবে নদী দখলকারীদের একজন আবু জাফর বলেন, ‘আমরা এলাকার বেকার যুবকদের নিয়ে মাছ চাষ করতে নদীর একপাশে বাঁশের বেড়া দিয়েছি। এখানে নদীর কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, বাঁধও দিচ্ছি না। এ ব্যাপারে উপজেলার একজন কর্মচারী আমাদের মৌখিক অনুমতি দেন।’

আর দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য রেজাউল করিম বলেন, ‘আগামী তিন মাসের জন্য মাতামুহুরী নদীতে রাবার ড্যাম ফোলানো হলে পানি বাড়বে। দলীয় পরিচয়ে নয়, এলাকার মুরব্বিরাসহ মিলেমিশে ৩২ জন মাছ চাষ করতে নদীতে বেড়া দিয়েছি। আমরা নদীও দখল করছি না, ব্যবসাও করছি না।’

চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল আমিন বলেন, ‘নদীতে বাঁশের বেড়া দিয়ে দখল করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন দেলোয়ার বলেন, ‘এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসন থেকে লোক পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সেলিম ওসমানকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
এ কে এম সেলিম ওসমান। ছবি: সংগৃহীত
এ কে এম সেলিম ওসমান। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই আন্দোলনে একাধিক হত্যা মামলার আসামি জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি এ কে এম সেলিম ওসমানকে গ্রেপ্তারে তাঁর কারখানায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে ফতুল্লার উইজডম অ্যাটায়ার্স লিমিটেড কারখানায় অভিযান চালায় ফতুল্লা মডেল থানা-পুলিশের একটি টিম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী। তবে সেখানে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্যকে পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

এর আগে, গত রোববার জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতারা সেলিম ওসমানের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রায়ই তিনি গার্মেন্টসে অফিস করছেন, এমন গুঞ্জনের জবাবে তারেক আল মেহেদী জানান, সেলিম ওসমানকে গ্রেপ্তারে তাঁদের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।

সেই বৈঠকের পরদিন উইজডম অ্যাটায়ার্সে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি ও আলোচিত আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমানের বড় ভাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজধানীর দক্ষিণখানে যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি 
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর দক্ষিণখানে প্রকাশ্যে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে দক্ষিণখানের নদ্দাপাড়ার তালতলা মোড়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম শাহজাহান শেখ (৪৫)। তিনি দক্ষিণখানের আশকোনা ডিলার বাড়ির হাকিম উদ্দিনের ছেলে। জানা গেছে, শাহজাহান শেখ বিমানবন্দর থানা যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি আশকোনা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি ও ডিশের ব্যবসা করতেন।

ওই এলাকার ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান মিয়াদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শাহজাহান ডিলার একটি গলি থেকে দৌড়ে তালতলা মোড়ের দিকে আসেন। তখন কয়েক দুর্বৃত্ত পেছন থেকে দৌড়ে এসে তাঁকে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে তাঁর মাথা দুই খণ্ড হয়ে যায়। পরে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।’

মাহফুজ আরও জানান, দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থলে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি ও একটি ক্যাপ (টুপি) ফেলে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রকাশ্যে কিছু লোক শাহজাহানকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের পরপরই দক্ষিণখান থানা পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে ঘটনাস্থলে এসে আলামত সংগ্রহ করতে দেখা যায়।

ডিএমপির দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, কতিপয় অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী ধারালো অস্ত্র দিয়ে শাহজাহান শেখকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মাথা, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখম করে। তিনি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতসহ আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের শনাক্তকরণসহ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত