Ajker Patrika

অস্তিত্বসংকটে রামগড়ের পর্যটনকেন্দ্রগুলো, প্রতিশ্রুতি প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের

বেলাল হোসাইন, রামগড় (খাগড়াছড়ি) 
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২২, ১৯: ১৬
অস্তিত্বসংকটে রামগড়ের পর্যটনকেন্দ্রগুলো, প্রতিশ্রুতি প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রানি বলা হয় খাগড়াছড়িকে। সৌন্দর্যের জন্য পুরো দেশজুড়ে সুখ্যাতি রয়েছে খাগড়াছড়ির। খাগড়াছড়ির অন্যতম পর্যটনমুখর এলাকা রামগড়। অপরূপ খাগড়াছড়ির পার্বত্য সৌন্দর্য যেন তার পূর্ণ রূপ পেয়েছে এই রামগড়ে এসে। কিন্তু প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং পর্যটকদের জন্য সুব্যবস্থা না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এই এলাকার পর্যটনকেন্দ্রগুলো। সমস্যা সমাধানে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি। 

জানা যায়, রামগড়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা, দুর্গম পাহাড়, সবুজের সমারোহ, সাজানো চা-বাগান, ঝুলন্ত ব্রিজ, রামগড় লেক, বঙ্গবন্ধু পার্ক, পাহাড়ঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু, বিজিবির জন্মস্থান, শহীদ মিনার, কলসিরমুখসহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থান। 

একসময় এই রামগড়ে পর্যটকদের প্রতিনিয়ত ভিড় জমত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রামগড়ে ছুটে আসত পর্যটকেরা। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। এক প্রকার পর্যটকহীন হয়ে পড়ছে রামগড়। নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং থাকার সুব্যবস্থা নেই বলে পর্যটক আসছে না বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তবে জনপ্রতিনিধিরা বলছেন খুব দ্রুত ঢেলে সাজানো হবে রামগড়ে পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে। 

নিয়ম বহির্ভূতভাবে মৎস্য চাষ করায় রামগড় চা বাগানের হ্রদ হারিয়েছে সৌন্দর্য।সরেজমিনে রামগড় পার্ক, স্মৃতিসৌধ, ঝুলন্ত ব্রিজ, কালাডেবা স্লুইসগেট, কলসিরমুখ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব পর্যটনকেন্দ্র সম্পূর্ণ অরক্ষিত। পর্যটকদের জন্য কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়। পুরো দেশজুড়ে সুখ্যাতি রয়েছে রামগড় পার্কের। বছর দশেক আগেও বিশাল আকাশের নিচে চারদিকে সবুজ গাছ-গাছালির শ্যামল ছায়ায় ঘেরা ছিল এই পার্ক। পাতাবাহার, ঝাউগাছ ও বিভিন্ন ফুলের সমন্বয়ে সাজানো ছিল এটি। বিশাল হ্রদের ওপর নির্মিত ঝুলন্ত সেতু পার্কের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছিল কয়েক শ গুণ। এসব দৃশ্য অবলোকন করার জন্য ছুটে আসত দর্শনার্থীরা। 

কিন্তু বর্তমান দৃশ্য উল্টো। চারদিকে সবুজের সমারোহ আর নেই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পার্কটি। কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে টিকে আছে ঝুলন্ত সেতু। অন্যদিকে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রামগড় স্মৃতিসৌধটি এক প্রকার ধ্বংসের প্রান্তে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে এটি। রাতে মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়। কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই। আশপাশের স্থানীয় লোকজন এটিকে গো-চারণভূমি বানিয়েছে। 

বিশাল হ্রদের ওপর নির্মিত ঝুলন্ত সেতুটি কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে টিকে আছে।স্মৃতিসৌধের মতো একই দশা কালাডেবায় অবস্থিত স্লুইসগেটের। একসময়ের কোলাহলপূর্ণ এই পর্যটনকেন্দ্রটি একপ্রকার পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সরঞ্জামগুলো নষ্ট হয়ে পড়েছে। 

অন্যদিকে রামগড় শহরের প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটারর ভেতরে অবস্থিত কলসিরমুখ। প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় কলসিরমুখ পর্যটনকেন্দ্রে যেতে ভয় পায় মানুষ। পাহাড়ে অবস্থানকারী সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ এবং জেএসএসের তোপের মুখে পড়তে হয় পর্যটকদের। যথেষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই এই এলাকায়। 

রামগড় পার্কে ঘুরতে আসা পর্যটক নাদিয়া সুলতানা জানান, স্বামী-সন্তানদের নিয়ে রামগড় ঘুরতে এসেছেন। রামগড়ের আগের সৌন্দর্য আর নেই। তা ছাড়া এখানে থাকার জন্য ভালো হোটেল নেই। যার ফলে থাকার জন্য দুপুরের একটু পরেই খাগড়াছড়ি সদরের দিকে রওনা হবেন। 

সংস্কার এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই স্মৃতিসৌধেরামগড় উপজেলার বাসিন্দা খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অরুণ চন্দ্র সিংহ জানান, রামগড় পর্যটনমুখর শহর ছিল। নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মানুষ রামগড়মুখী হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ চাইলে রামগড়ের সুখ্যাতি আবার ফিরিয়ে আনতে পারে। দলমত-নির্বিশেষে রামগড়ের জনপ্রতিনিধিদের উচিত রামগড়ের পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে এক হওয়া। সুপরিকল্পিতভাবে রামগড় নিয়ে কাজ করলে রামগড় খুব দ্রুত আগের সুখ্যাতি ফিরে পাবে। 

কালাডেবা এলাকার বাসিন্দা সালাউদ্দীন আহমেদ জানান, কালাডেবা স্লুইসগেট পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে। কয়েকজন পর্যটক মাঝে মাঝে আসে। তবে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই বলে স্থানীয়রা পরিবার নিয়ে এখানে আসতে চান না। 

এ নিয়ে রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ ত্রিপুরা জানান, রামগড় উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে রামগড়ের পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে কাজ করা হচ্ছে। রামগড়ের প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্র আধুনিক সাজসজ্জায় সাজানো হবে। বিশেষ করে রামগড় পার্ক সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু হবে। এরই মধ্যে পরিকল্পনা এবং নকশা তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রামগড়ের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে রামগড়ের পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে ঢেলে সাজানো হবে। 

চেয়ারম্যান আরও জানান, রামগড়ে সরকারিভাবে রেস্ট হাউস নির্মাণ হচ্ছে। নকশা পরিবর্তনের জন্য কিছুটা থমকে আছে। উন্নত মানের হোটেল নির্মাণের জন্য সাধারণ ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। 

এ বিষয়ে রামগড় পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম কামাল জানান, রামগড় পরিত্যক্ত বাস টার্মিনালটি মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এটি শিশু ও কিশোরদের বিনোদনের উপযোগী করার জন্য আধুনিক বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামগড় উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত বলেন, ‘রামগড় পার্ক এবং কলসির মুখ এ দুটি নিয়ে কাজ করছি আমরা। খুব দ্রুত সংস্কার করা হবে এ পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে। রামগড় পার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে উপজেলা পরিষদের সমন্বয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কলসিরমুখ পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে শোভাবর্ধনের পাশাপাশি নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করা হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে কৃষিজমির টপসয়েল কেটে অবাধে বিক্রি, পরিবেশ ও উৎপাদন হুমকিতে

সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কেটে অবাধে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রতিবছর শীত মৌসুম এলেই একটি সংঘবদ্ধ মাটিখেকো চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। গত কয়েক বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ অবৈধ কার্যক্রম চললেও শীত শুরু হলেই ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নে তৎপরতা সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কার্যকর তদারকির অভাবে চলতি মৌসুমে মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য কয়েক গুণ বেড়েছে। দিন-রাত শ্রমিক ও ভেকু (এক্সকাভেটর) ব্যবহার করে কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ট্রাক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষিজমির উৎপাদনক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়ছে। অতিরিক্ত ভারী যান চলাচলে গ্রামীণ সড়কগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, টপসয়েল কাটা ও পরিবহনের সঙ্গে একটি মধ্যস্বত্বভোগী চক্র জড়িত। অভিযোগ অনুযায়ী, ব্রাহ্মণডোরা এলাকার মুর্শেদ মিয়ার ছেলে কামাল মিয়া, শেরপুর এলাকার সামসু মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া এবং অলিপুর এলাকার মন্নর মিয়া এ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা কৃষিজমি থেকে টপসয়েল কেটে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের শেরপুর, কেশবপুর ও ঋষিপাড়া এলাকা থেকে নিয়মিত মাটি কেটে ট্রাক্টরের মাধ্যমে পরিবহন করা হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি ট্রাক্টর টপসয়েল ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনে পরে তা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘এই মাটিখেকো চক্রের সঙ্গে প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকায় প্রকাশ্যে কিছু বলা কঠিন। সরকার পরিবর্তন হলেও প্রভাবশালীরা থেকে যায়।’

অভিযোগের বিষয়ে কামাল মিয়া বলেন, ‘আমরা যে জমি থেকে মাটি কাটি, তা মালিকের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া। যদি আইনি কোনো বাধা থাকে, তাহলে আর এসব কাজ করব না।’

আরেক অভিযুক্ত মন্নর মিয়া বলেন, ‘এই মৌসুমে মাত্র দুই দিন মাটি কেটেছি। এখন আর কাটছি না। যে গাড়ি এনেছিলাম, সেটিও ফেরত পাঠিয়েছি। এ বছর আর মাটি কাটব না।’

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হোসেন বলেন, ‘কৃষিজমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়টি শুনেছি। যারা এ কাজে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আ.লীগের দুই নেতাকে বিএনপির মনোনয়ন

  • বাগেরহাট-১ আসনে মনোনয়ন পাওয়া কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি
  • বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী সোমনাথ দে গত বছরের আগস্টে আ.লীগ থেকে পদত্যাগ করেন
বাগেরহাট প্রতিনিধি
আ.লীগের দুই নেতাকে বিএনপির মনোনয়ন

বাগেরহাটের চারটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে চারটির দুটিতেই দলটির মনোনয়ন পেয়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দুই নেতা। বিএনপিতে যোগ দিয়ে এক বছরের মধ্যে দুটি আসনের মনোনয়ন পাওয়ায় বিএনপি বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে থাকা ঘনিষ্ঠ ছবি শেয়ার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট-১ (ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারী) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল। তিনি একই সঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব এবং বাংলাদেশ অশ্বিনী সেবা আশ্রমের সভাপতি। ছিলেন চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

অপর দিকে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের সভাপতি সোমনাথ দে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। এর আগে সোমনাথ দে জাতীয় পার্টি করতেন। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সংখ্যালঘুবিষয়ক উপদেষ্টা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন।

২০১৯ সালের শেষের দিকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০২২ সালে গঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটিতে তিনি ৩নং সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছিলেন। ‘দেশবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগে’ কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল চলতি বছরের মার্চে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং অপর একটি মামলায় কারাভোগ করেছেন সোমনাথ দে। জেল থেকে বেরিয়ে সনাতন ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে ২০ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন কপিল ও সোমনাথ।

এই নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় শরণখোলার বাসিন্দা রাসেল আহম্মেদ ফেসবুকে সোমনাথ দের ছবি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, ‘জয় বাংলা, ধানের শীষে ভোট দিন।’ পোস্টের নিচে একজন লিখেছেন, ‘সাথে জাতীয় পার্টির স্লোগান যুক্ত করে দিন।’

গত শনিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে প্রার্থী ঘোষণার পরে আসন দুটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, ‘কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের আসলে করার কিছু নেই। তবে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দীর্ঘদিন দল করে, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পরে অন্য দলের কেউ এসে মনোনয়ন পাওয়ায় তাঁরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে এসব বিষয় কেন্দ্রকে জানিয়েছি।’

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এটি কীভাবে মেনে নেবে বলেন। তাঁরা দুজনই সুবিধাবাদী এবং শেখ হেলালের নিকটতম অনুসারী ছিলেন।’

তবে বাগেরহাট-১ আসনের মনোনয়নপ্রাপ্ত কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘কখনো অন্য কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। এটিই আমার প্রথম রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া।’ আর বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী সোমনাথ দে বলেন, ‘আমি মনোনয়ন পাওয়ায় যাঁরা চাঁদাবাজ, জুলুমকারী, নির্যাতন করে, তাঁদের গাত্রদাহ হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা সাধারণ মানুষ তাঁরা আমাকে সাদরে বরণ করেছেন। আমি জাতীয় পার্টি করেছি, আওয়ামী লীগ করেছি, ৫ আগস্টের পর জেল খেটেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়, দলের হাইকমান্ড আমাকে মনোনীত করেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘স্যাক্রোলাইটিস’ রোগে আক্রান্ত: মেধাবী ছাত্রী আসফির বাঁচার আকুতি

খুলনা প্রতিনিধি
আরিফা জান্নাত আসফি । ছবি: সংগৃহীত
আরিফা জান্নাত আসফি । ছবি: সংগৃহীত

খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী আরিফা জান্নাত আসফি পিইসি পরীক্ষায় বৃত্তিসহ এ+ এবং জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় এ+ পেয়েছেন। অত্যন্ত মেধাবী এই ছাত্রী গত চার বছর ধরে দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে।

চিকিৎসকের পরামর্শে এর আগে পরপর দুবার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। তবে এখনো শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় পুনরায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

আসফির পরিবার জানায়, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে তারা চরম সংকটে পড়েছে। ভারতে গিয়ে পুনরায় চিকিৎসা নিতে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন হলেও দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এ অর্থ জোগাড় করা সম্ভব নয়।

এ অবস্থায় ‘স্যাক্রোলাইটিস’ রোগে আক্রান্ত মেধাবী ছাত্রী আরিফা জান্নাত আসফি নিজের জীবন রক্ষার্থে সমাজের বিত্তবান ও সহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন। সামান্য সহযোগিতাই হয়তো তার চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে এবং একটি সম্ভাবনাময় জীবন রক্ষা করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নকলায় ৭ অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, সাড়ে ২২ লাখ টাকা জরিমানা

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
অবৈধভাবে প্রস্তুত করা কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয় । ছবি: আজকের পত্রিকা
অবৈধভাবে প্রস্তুত করা কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয় । ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরের নকলায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। রোববার (২১ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় দিনব্যাপী এ অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযানকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা সাতটি অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর বিভিন্ন ধারায় ভাটামালিকদের মোট ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ সময় অবৈধভাবে প্রস্তুত করা কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট ইটভাটাগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পাশাপাশি অবৈধ ইটভাটার সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে মালিকপক্ষকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশের ক্ষতি রোধ ও সরকারি আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে চলমান থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত