Ajker Patrika

তেল পরিবহন আ.লীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণেই

 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭: ২৬
তেল পরিবহন আ.লীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণেই
ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ আমলে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে টেন্ডার ছাড়াই সরাসরি ৫৩টি তেলবাহী জাহাজকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বহরে যুক্ত করা হয়। চিঠি দিয়ে এক আদেশের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন জ্বালানি তেল কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় তেল পরিবহনের কাজে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেগুলোকে। এসব জাহাজ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার মালিকানাধীন।

২০২৪ সাল পর্যন্ত বিপিসির বহরে তেল পরিবহনে জাহাজের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত বিপিসির বহরে থাকা ১৭৭ জাহাজের মধ্যে ১১৮টিই আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, নেতা ও আমলাদের মালিকানাধীন বলে জানা গেছে।

জ্বালানি তেল পরিবহনে ত্রুটিহীন জাপানি জাহাজগুলো সরিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মালিকানায় দেশে তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয় বলে তথ্য উঠে এসেছে বিপিসির নথিতেই। ‘বয়স হয়েছে’ উল্লেখ করে ৭০টি জাপানি জাহাজ জ্বালানি পরিবহনের বহর থেকে বাদ দেওয়া হয়, অথচ আইনে বয়সের কথা উল্লেখ নেই।

বিপিসির পক্ষ থেকে ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবকে দেওয়া এক পত্রে বিপিসির বহরে মোট ১৬২টি অয়েল ট্যাংকার থাকার কথা জানানো হয়। এর মধ্যে ১৪৩টি ট্যাংকার দেশে তৈরি। এর বেশির ভাগই আওয়ামী নেতাদের মালিকানাধীন।

বিপিসি ও তিন কোম্পানি থেকে পাওয়া তথ্যমতে, জ্বালানি তেল পরিবহনে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নামে রয়েছে এমটি অনিম জালাল, ওটি নেয়ামত ও এমটি সুলতানা নামের জাহাজ। নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমানের নামে রয়েছে এমটি সি ব্রিজ ও জেডএন-১ নামের দুটি জাহাজ। শামীম ওসমানের আত্মীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল কবির খানের নামে রয়েছে এমটি রাশেদ, এমটি রিদা-১ সহ কয়েকটি জাহাজ।

এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার (ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য) আলাউদ্দিন মোহাম্মদ নাসিম, ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস, তাপসের ভায়রা হাসানুল বারী, আওয়ামী লীগ নেতা ও ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি কে এম জামান রোমেল, নোয়াখালীর-১ সাবেক সংসদ সদস্য মো. ইব্রাহিম, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নামেও একাধিক জাহাজ রয়েছে।

ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের নেতা ইঞ্জিনিয়ার মাহাবুব কবির, নরসিংদীর আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল আমিন ভুইয়া, পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাফিজুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা খালেদ এইচ খান, চট্টগ্রাম নগর থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, আওয়ামী লীগ নেতা ও ছাগলনাইয়ার (ফেনী) সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, নরসিংদীর সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ট্যাংকার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ওয়াহিদ মিয়ার নাম রয়েছে জাহাজমালিক হিসেবে। বেনজীর আহমেদের জাহাজটি অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকারের শেষদিকে দলের এক নেতার কাছে বিক্রি করে দেন বলে জানা গেছে। এই নেতারা কেউ আত্মগোপন, কেউ কারাগারে থাকায় তাঁদের বক্তব্য জানা যায়নি।

বিপিসির বহরে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের তিনটি জাহাজ রয়েছে। এগুলো হলো এমটি অনিম জালাল, ওটি সুলতানা এবং ওটি নেয়ামত। এগুলো পরিচালনা করেন ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নেতা মুনতাসীর মামুনের ভাতিজা ইয়ামিন। শামীম ওসমানের দুটি জাহাজ এজেডএন-১ এবং সিব্রিজ দেখাশোনা করেন সুপারভাইজার কামরুল। তবে সম্প্রতি বিএনপির এক নেতা তত্ত্বাবধান করছেন। আওয়ামী লীগ নেতা ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি কে এম জামান রোমেলের দুটি জাহাজ রয়েছে। এগুলো পিপলস-১ এবং পিপলস-২। এ জাহাজগুলো দেখাশোনা করেন রেজাউল করিম বাদল। তিনি নিজেকে কে এম জামান রোমেল সাহেবের ম্যানেজার হিসেবে জানিয়েছেন। তিনি জানান, মালিক কে এম জামান রোমেল সাহেব দেশের বাইরে রয়েছেন।

খান গ্রুপের তোফায়েল কবির খানের ৭ থেকে ৮টি জাহাজ রয়েছে। এগুলো দেখাশোনা করেন শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান (অয়ন ওসমান) এবং জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে রয়েছেন সাইয়েদ গোলাম রূপস। জেনারেল ম্যানেজার জানিয়েছেন, জ্বালানি তেল পরিবহনে তাঁদের ৮টি জাহাজ রয়েছে।

বিপিসির পরিচালক (অপারেশন) অনুপম বড়ুয়া আজকের পত্রিকার কাছে দাবি করেন, নীতিমালা অনুযায়ী জাহাজ বিপিসির বহরে যুক্ত করা হয়। এখানে কোনো অনিয়ম হয় না। জাহাজের বয়স ৪০ বছরের পর আর চুক্তি নবায়ন করা হয় না। কারণ ৪০ বছরের বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অয়েল ট্যাংকার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আবুল বশর আবু জানান, বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠরা দলীয় বিবেচনায় বিনা টেন্ডারে অবৈধভাবে অসংখ্য জাহাজকে বিপিসির বহরে যুক্ত করেন। এতে তাঁরা ফায়দা লুটে নিলেও ক্ষতি হয় প্রকৃত ব্যবসায়ীদের।

আবুল বশর আবু আরও বলেন, তেল পরিবহনের ক্ষেত্রে জাহাজের ৪০ বছর বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলেও সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে ৪০ বয়সী জাহাজগুলোকে বিপিসির বহর থেকে বাদ দেওয়া হয়। অথচ এটার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম জানান, কোস্টাল ট্যাংকার বা জাহাজগুলো মার্চেন্ট শিপিং অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর আওতায় সারা বছর সাগর পাড়ি দিয়ে তেল পরিবহন করতে পারবে। এই মার্চেন্ট শিপগুলো বিশ্বের মানসম্মত লোর্ড লাইন, ক্লাস ও সেপটি কসন্ট্রাকশন হয়ে থাকে। ইনল্যান্ড শিপিং অধ্যাদেশ ১৯৭৬ অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ নৌযানের ক্ষেত্রে ৩০ বছরের বয়সসীমা থাকলেও মার্চেন্ট শিপিং অধ্যাদেশের আওতায় নিবন্ধিত সমুদ্রগামী অথবা কোস্টাল জাহাজের চলাচলের বয়সসীমা উল্লেখ নেই। ইনল্যান্ড শিপিং অধ্যাদেশ অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ নৌযানের এসব জাহাজ তিন মাস (১৫ নভেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) সাগর অতিক্রম করে তেল পরিবহন করতে পারবে।

অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার তেল পরিবহনের জন্য এসব শ্যালো ড্রাফট, বে ক্রসিং ও মিনি ট্যাংকার বা জাহাজগুলো সারা বছরই ঝুঁকি নিয়ে তেল পরিবহন করে থাকে।

কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের বিভাগের লোকবল বা পরিদর্শক কম, তাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া বা অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।’

বিপিসি সূত্র জানায়, সারা দেশে বছরে ৭০ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। এগুলোর মধ্যে ডিজেল, জেড ফুয়েল, অকটেন, ফার্নেস অয়েল মারবার ক্রুড এবং আরব লাইট ক্রুড। ৫০ লাখ টন নদীপথে পরিবহন করা হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, নেতা ও আমলাদের জাহাজে পরিবহন করা হয় প্রায় ৭০ শতাংশ জ্বালানি তেল।

এ বিষয়ে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন, বাণিজ্যিক) মনি লাল দাশ বলেন, বিপিসি বছরে ৭০ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে। এর প্রায় ৭৫ শতাংশ নৌপথে পরিবাহিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চাঁদপুরে নতুন ভোটারদের নিয়ে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চাঁদপুরে শতাধিক নতুন ভোটারের অংশগ্রহণে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের আয়োজনে এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চাঁদপুর জেলা কমিটির সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি হয়।

আজ সকাল সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও বেলুন উড়িয়ে নির্বাচনী অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান মিয়া। নতুন ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি, গণতন্ত্রের মূল্যবোধ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন ইত্যাদি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ হয়েছে। সুজনের সহযোগিতায় এই আয়োজন অবশ্যই অংশগ্রহণকারীদের অনেক সমৃদ্ধ করবে এবং সচেতন নাগরিক তৈরি হবে।’

পরে কলেজের অডিটরিয়ামে ৫০টি এমসিকিউ পদ্ধতির প্রশ্নের মাধ্যমে ৩০ মিনিটের পরীক্ষা হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ১০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তাঁদের মধ্য থেকে প্রথম থেকে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী তিনজন জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সনদ দেওয়া হয়।

পরীক্ষা শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য ও বিজয়ীদের হাতে সনদ তুলে দেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজন চাঁদপুরের সভাপতি অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সুজনের আঞ্চলিক সমন্বয়ক নাছির উদ্দিন।

সুজন চাঁদপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রহিব বাদশা, শিক্ষক ওমর ফারুক, সংগঠক সালাউদ্দিন, কর আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল ফারুক, সাংবাদিক আলম পলাশ, জাকির হোসেন, শোভন আল-ইমরান, মোরশেদ আলম রোকন, মো. মাসুদ আলম, শরীফুল ইসলামসহ সুজন জেলা কমিটির সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত