Ajker Patrika

কক্সবাজারে বাঁকখালীর তীর দখলের মচ্ছব

  • আজ পরিদর্শনে আসছেন দুই উপদেষ্টা।
  • দখল-দূষণে সরু খালে পরিণত হচ্ছে খরস্রোতা বাঁকখালী নদী।
  • কস্তুরাঘাট এলাকায় নদীবন্দরের জন্য নির্ধারিত জমিও দখল হয়ে গেছে।
মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৬: ৫৩
কক্সবাজার শহরের মাঝিরঘাট থেকে নুনিয়ারছড়া পর্যন্ত বাঁকখালী নদীর জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের জায়গা দখল করে চলছে পাকা স্থাপনা নির্মাণের কাজ। এরই মধ্যে নদীচরে থাকা প্যারাবনের কয়েক হাজার গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে জেলা শহরের পেশকারপাড়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজার শহরের মাঝিরঘাট থেকে নুনিয়ারছড়া পর্যন্ত বাঁকখালী নদীর জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের জায়গা দখল করে চলছে পাকা স্থাপনা নির্মাণের কাজ। এরই মধ্যে নদীচরে থাকা প্যারাবনের কয়েক হাজার গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে জেলা শহরের পেশকারপাড়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজার শহরের উত্তর পাশ ঘেঁষে মহেশখালী চ্যানেল হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে খরস্রোতা নদী বাঁকখালী। এ নদীর মোহনা ঘিরেই গড়ে উঠেছে দেশের প্রধান পর্যটন শহরের ব্যবসা-বাণিজ্য। কিন্তু সেই নদীই দখল-দূষণে এখন সরু খালে পরিণত হচ্ছে। প্রভাবশালী দখলদারেরা নদীতীরের প্যারাবন কেটে ও চর ভরাট করে একের পর এক পাকা স্থাপনা গড়ে তুলছেন। সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রশাসনিক শিথিলতার সুযোগে নদী মোহনার নুনিয়ারছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় যেন দখলের মচ্ছব চলছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার সামনে দিয়ে তিন-চার শ গজ এগোলেই কস্তুরাঘাট। গত কয়েক মাসে কস্তুরাঘাট এলাকায় নদীবন্দরের জন্য নির্ধারিত জমিও দখল হয়ে গেছে। নৌবন্দরের ৩০০ একর জায়গাজুড়ে এখন পাকা দালান ও স্থাপনা।

কক্সবাজার শহরের সঙ্গে নদীর ওপারের খুরুশকূলের সংযোগ স্থাপনের জন্য দুই বছর আগে ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু ও সড়ক তৈরি করা হয়েছে কস্তুরাঘাটে। সেতুটিতে উঠতেই বাঁ পাশে নৌবন্দরের জমি, ডান পাশে কক্সবাজার পৌরসভার বর্জ্য ফেলার ভাগাড়। এই ভাগাড় থেকে পূর্ব দিকে শহরের মাঝিরঘাট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার নতুন সড়ক তৈরি করা হয়েছে। এই সেতু ও সড়ক তৈরির পর স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদীতীরের জমি দখল করে প্লট বানিয়ে বিক্রি করছেন। এ জন্য ভুয়া কাগজপত্র বানানোর অভিযোগও রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ২০১৩ সাল থেকে বাঁকখালীর পাড়ে পৌরসভার বর্জ্য ফেলা শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে ভাগাড়টিই দখলের চাবিকাঠি হয়ে ওঠে।

২০২৩ সালের মার্চ মাসে আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসন কস্তুরাঘাট সেতুর দুই পাশের চার শতাধিক পাকা-আধা পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করে গুঁড়িয়ে দেয়। দখলমুক্ত করা হয় নৌবন্দরের জমি। কিন্তু দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা জমি দখলে গত ৫ আগস্টের পর আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে দখলদার চক্র। দখলদারেরা এরই মধ্যে নুনিয়ারছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত হাজারো স্থাপনা গড়ে তুলেছে।

স্থানীয় টেকপাড়ার বাসিন্দা আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে প্রভাবশালী নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বিস্তীর্ণ প্যারাবন কেটে নদীতীরের জমি দখল করা হয়েছে। আবার এসব নদী দখলদারদের অন্যতম হাতিয়ার আদালতের নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু কথা হলো, জমির মালিকানা যদি সঠিক থাকে তাহলে কেন আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিতে হবে। এতে বোঝা যায় কাগজপত্রগুলো সবই ভুয়া!’

নদীতীরের জমি দখল করে দালান ও স্থাপনা তৈরি হচ্ছে বলে স্বীকার করে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নীলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী বলেন, ‘কেউ কেউ এসব স্থাপনা ব্যক্তিগত জমিতে করা হচ্ছে দাবি করে কাগজপত্র নিয়ে হাজির হয়। এর মধ্যে কাগজপত্র দেখে নদীতীরের অবৈধ দখল উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’

উপকূল রক্ষার প্রহরী উজাড়

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড় থেকে সৃষ্ট বাঁকখালী নদী রামুর ওপর দিয়ে কক্সবাজার শহরের উত্তর পাশ হয়ে আঁকাবাঁকা পথে মিশেছে বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী চ্যানেলে। সেই নদীর তীরে এক যুগ আগে গড়ে তোলা হয়েছিল প্যারাবন। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো সামুদ্রিক দুর্যোগ থেকে উপকূলকে বাঁচাতে এ বনাঞ্চল প্রহরীর ভূমিকায় ছিল। ক্রমান্বয়ে প্যারাবন উজাড় করে সেই জমিতে খননযন্ত্র দিয়ে নদী থেকে মাটি তুলে রাতারাতি ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভরাট করা জমিতে টিনের ঘের দিয়ে প্লট আলাদা করা। তীরের জমি দখল করে স্থাপনা গড়ায় নদীর গতিপথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীরা জানান, ২০২১ সাল থেকে এই প্যারাবনের লক্ষাধিক বাইন ও কেওড়াগাছ উজাড় করা হয়েছে। এতে অন্তত ২০০ প্রজাতির পাখির আবাসস্থলসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে অন্তত ৪০০ একর প্যারাবন এবং নৌবন্দরের জমি দখল করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় বাঁকখালী নদীর তীর দখল হচ্ছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ১৬ এপ্রিল এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর তাঁরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) জমির উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২০২১ সাল থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পাঁচটি মামলা দেওয়া হয়েছে। সব মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সম্প্রতি দখলের ঘটনায় কয়েকজন দখলদারের বিরুদ্ধে নোটিশ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আগামী রোববার (২৭ এপ্রিল) তাঁর কার্যালয়ে শুনানি রয়েছে।

তালিকা হলেও দখলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি

২০২০ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ১৩০ জন দখলদারের নতুন তালিকা করেছিল। ওই তালিকায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানসহ প্রভাবশালী রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, আইনজীবীর নাম রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন জানান, প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তি কস্তুরাঘাটে বাঁকখালীর তীর দখল করে প্লট বানিয়ে বিক্রি করেছেন। কিন্তু তাঁরা নিজেদের নামে কোনো সাইনবোর্ড লাগাননি কিংবা অন্য কোনোভাবে নাম ব্যবহার করেননি। পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা জেলা প্রশাসন দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

বাঁকখালী রক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া জরুরি বলে মনে করেন কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে জেনেই কিছু ব্যক্তি জোয়ার-ভাটা এলাকায় ভুয়া কাগজ বানিয়ে নদীর তীরের জমির মালিকানা দাবি করছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা মতে, নদীর জমি উদ্ধারে একটি জরিপ প্রক্রিয়া চলছে। শিগগির এ জরিপ শেষ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার নৌপরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাঁকখালী নদীর দখল-দূষণ পর্যবেক্ষণে আসছেন। বিকেলে নৌবন্দরের জমির সীমানা পিলার নির্ধারণ এবং প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠকে বসবেন দুই উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি সম্মিলিত নারী প্রয়াসের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘সম্মিলিত নারী প্রয়াস’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘সম্মিলিত নারী প্রয়াস’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের পাশাপাশি ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সব দলের জন্য সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) তৈরির দাবি জানিয়েছেন সম্মিলিত নারী প্রয়াস সংগঠনের সভানেত্রী এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামীমা তাসনিম।

আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘নতুন বাংলাদেশ, চাই সুষ্ঠু নির্বাচন, চাই যোগ্য নেতৃত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকের আয়োজন করে সম্মিলিত নারী প্রয়াস।

সরকারের কাছে দাবি তুলে শামীমা তাসনিম বলেন, ‘সব দলের রাজনৈতিক সুযোগ রেখে সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেটাকে আমরা বলছি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে হবে এবং সেটি ভয়ভীতি যেন না দেখানো হয়। মানে ভোট দিতে যে আমি যাব, যেন সুস্থ অবস্থায় ফেরত আসতে পারি।’

অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনের কথা বলতে গিয়ে ড. শামীমা তাসনিম বলেন, বাংলাদেশে অতীতে যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করেছে। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে আমলা নিয়োগ এবং পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় আনুগত্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অতীতে ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।

কথায় ও কাজে সৎ এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন, যিনি দুর্নীতি করবেন না এবং দুর্নীতির প্রশ্রয় দেবেন না, যিনি বাংলাদেশকে একমাত্র স্থায়ী ঠিকানা মনে করবেন এবং বিদেশে কোনো ‘সেকেন্ড হোম’ রাখবেন না, আধিপত্যবিরোধী হবেন—এমন নেতৃত্ব আনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

সম্মিলিত নারী প্রয়াস সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার নিয়ামা ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সেক্রেটারি ড. ফেরদৌস আরা খানম, সহকারী সম্পাদক মাহসিনা মমতাজ মারিয়া, লেকচারার ড. জেবুন্নেসা, ড. মেহের আফরোজ লুৎফা, জান্নাতুন নাইম প্রমি প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিক্ষক নেটওয়ার্ক বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি: রাকসু জিএস আম্মার

রাবি প্রতিনিধি  
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩০
রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) শিক্ষক নেটওয়ার্কের ‘ক্যাম্পাসে ছাত্র প্রতিনিধিদের এখতিয়ারবহির্ভূত তৎপরতা বন্ধ হোক’ শিরোনামে দেওয়া বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় এই আহ্বান জানান তিনি।

শিক্ষক নেটওয়ার্কের ফেসবুক পেজে দেওয়া ওই বিবৃতির মন্তব্যে আম্মার লেখেন, ‘শিক্ষক নেটওয়ার্ক বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমি কমেন্ট করেছি, ডিলিট করি নাই। তাঁরা (শিক্ষক নেটওয়ার্ক) আমার কাজকে যদি অপতৎপরতা হিসেবে দেখের, তাহলে আমিও তাঁদের বিবৃতি সন্দেহের চোখে দেখি। তাঁরা আমাকে একটি আহ্বান জানিয়েছেন, আমিও তাঁদের আহ্বান জানিয়েছি। তাঁরা এটাকে স্বাধীনতা হিসেবে দেখলে, আমিও আমার স্বাধীনতা প্রকাশ করছি।’

শিক্ষক নেটওয়ার্কের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারের নেতৃত্বে নানা ধরনের মবপ্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। ডিনদের পদত্যাগ করানো, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হয়রানি তৎপরতা চলমান আছে। রাকসুর জিএস প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি না চেয়ে বরং ছয়জন ডিনের পদত্যাগ দাবি করেন। কেবল তা-ই নয়, নিজেই যেন “প্রশাসন” হয়ে অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় ডিনদের বিরুদ্ধে হুমকি দেন, এমনকি এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে নিজে পদত্যাগপত্র লিখে এনে বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে ডিনদের খুঁজতে থাকেন, সম্ভবত লাঞ্ছিত করার উদ্দেশ্যে। মোট ১২ জন ডিনের প্রত্যেকেই গত আওয়ামী শাসনামলে নির্বাচিত হলেও, বাকি ছয়জন হয়তো রাকসু জিএসের বিবেচনায় “রাজনৈতিক বিবেচনায় উত্তীর্ণ”, ফলে তাঁদের পদত্যাগের দাবি ওঠেনি, তাঁদের নিয়ে অবমাননাকর কিছু বলাও হয়নি। এই উদ্ভূত অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে “প্রগতিশীল শিক্ষক” হিসেবে পরিচিত ছয়জন ডিন দায়িত্ব পালতে অপারগতা প্রকাশ করেন।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে রাকসুর জিএস ভব্যতার সব সীমা ছাড়িয়ে বারবার ঘোষণা করতে থাকেন, লীগপন্থী শিক্ষকেরা ক্যাম্পাসে ঢুকলে কলার ধরে টেনে এনে প্রশাসন ভবনের সামনে বেঁধে রাখা হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যা করছেন, তা রাকসুর এখতিয়ারবহির্ভূত এবং তাঁদের আচরণও আগ্রাসী ও সন্ত্রাসীদের মতো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা এর জবাবদিহি প্রত্যাশা করি। কেননা, রাকসুর নেতৃবৃন্দের এ রকম আচরণ কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেনি; এটা সরাসরি বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতার ওপরে হামলা। এর “স্পাইরাল ইফেক্ট” পড়েছে সারা দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।’

সার্বিক বিষয়ে রাবির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য সৌভিক রেজা বলেন, ‘শিক্ষক নেটওয়ার্ক ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে। যদি ভিন্ন মতাদর্শের হওয়ার কারণে চাকরি চলে যেত বা পদচ্যুত করানো হতো তাহলে তো শিক্ষক নেটওয়ার্কের অনেকেরই আওয়ামী আমলে চাকরি চলে যেত। ৭৩-এর অধ্যাদেশ আমাদেরকে একটা রক্ষাকবজ দিয়েছে, যে কারণে আমরা শিক্ষকেরা সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার পরও আমাদের চাকরি চলে যায়নি।’

সৌভিক রেজা আরও বলেন, ‘ভিন্ন মতাদর্শের শিক্ষক কর্মকর্তাদের গাছে বেঁধে রাখা, চাকরিচ্যুত কিংবা জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো একজন শিক্ষার্থীর এখতিয়ারের বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও এ ক্ষমতা রাখেন না। তবে শিক্ষকেরা কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে নন। আইনানুযায়ী তাঁদের শাস্তি দেওয়া যেতে পারে, তবে মব সৃষ্টি করে নয়। কেউ যদি সরাসরি হামলা বা দালালি করে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু একজন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি এভাবে কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাতক্ষীরায় জেলা আ.লীগ নেতার মনোনয়নপত্র জমা, সমর্থক আটক

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
এস এম মুজিবর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
এস এম মুজিবর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগ নেতাসহ ২৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আজ সোমবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিজ নিজ মনোনয়নপত্র জমা দেন তাঁরা।

সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সাতক্ষীরা-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব, জামায়াতের মো. ইজ্জতুল্লাহ, জাতীয় পার্টির জিয়াউর রহমান ও ইসলামী আন্দোলনের শেখ মো. রেজাউল করিম ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. ইয়ারুল ইসলাম।

আর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক এস এম মুজিবর রহমান ওরফে সরদার মুজিব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। পরে তাঁর পক্ষে মনোনয়ন জমা দেওয়ার অভিযোগে মাগফুর রহমান নামের এক সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন জানান, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে মনোনয়ন জমা দেওয়ার অভিযোগে মাগফুর রহমান নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জামায়াতের মুহাম্মদ আব্দুল খালেক, বিএনপির মো. আব্দুর রউফ, জাতীয় পার্টির মো. আশরাফুজ্জামান ও মাতলুব হোসেন।

এ ছাড়া এলডিপির শফিকুল ইসলাম শাহেদ, ইসলামী আন্দোলনের মুফতি রবিউল ইসলাম, বাংলাদেশ জাসদের মো. ইদ্রিস আলী ও এবি পার্টির জিএম সালাউদ্দীন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

সাতক্ষীরা-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জামায়াতের মুহা. রবিউল ইসলাম, বিএনপির কাজী আলাউদ্দীন ও জাতীয় পার্টির মো. আলিপ হোসেন।

এ ছাড়া মাইনরিটি জনতা পার্টির রুবেল হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের ওয়েজ কুরনী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এম এ আসফউদ্দৌলা খান, আসলাম আল মেহেদী ও ডা. শহিদুল আলম (বিএনপির বিদ্রোহী) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

সাতক্ষীরা-৪ আসনে জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম, বিএনপির মো. মনিরুজ্জামান ও জাতীয় পার্টির হুসেইন মো. মায়াজ, গণঅধিকার পরিষদের এইচ এম গোলাম রেজা, ইসলামী আন্দোলনের মোস্তফা আল মামুন ও আব্দুল ওয়াহেদ (বিএনপির বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোলায় বিজেপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর

ভোলা প্রতিনিধি
ভোলায় বিজেপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভোলায় বিজেপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে সোমবার বিকেলে ভোলায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুড়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের নতুন বাজার এলাকায় জেলা বিজেপি অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে ছাত্রদলের নেতা সিফাত হত্যার প্রতিবাদ মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আল আমিন অভিযোগ করেন, মিছিলটি নতুন বাজার এলাকায় বিজেপি অফিসের সামনে পৌঁছালে সেখান থেকে মিছিল লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হলে বিক্ষুব্ধ জনতা বিজেপি অফিসে হামলা চালায়।

বিজেপির অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক পার্টির জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সামছুল আলম অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁদের দলীয় অফিস বন্ধ ছিল। বিজেপির জনসমর্থনে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপি পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে।

ভোলা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে বিজেপি অফিসে হামলা কিংবা কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে কি না তা আমাদের জানা নেই।’ তিনি আরও জানান, কে বা কারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, সেটা এখনো পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি।

ভোলার জেলা প্রশাসক ডা. শামীম রহমান রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত