Ajker Patrika

চট্টগ্রামে ৮ অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই পুলিশের

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৪, ২০: ৫৯
চট্টগ্রামে ৮ অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই পুলিশের

চট্টগ্রামে কোটা আন্দোলনে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৭ মামলায় ৩০ হাজারের বেশি আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে আন্দোলনে পুলিশের সামনে অস্ত্র ব্যবহার করা আটজনের কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি এক শ্রমিক ও পাঁচ ছাত্র হত্যার ঘটনায় কোনো মামলাও করেনি পুলিশ।

গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর ও ১৮ জুলাই নগরের বহদ্দারহাটে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম নগরে পৃথক সহিংসতায় তাৎক্ষণিক পাঁচজন, পরে একজনসহ ছয়জন নিহত হন। এসব ঘটনায় আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ। যাদের মধ্যে ৮০ ভাগই গুলিবিদ্ধ।

অস্ত্রধারী মো. ফরিদ। ছবি: সংগৃহীতগত বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তছলিম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, চট্টগ্রামে আহত ১৬ জনের মধ্যে একজন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়। কয়েক দিনের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মোট ২০৮ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

১৬ জুলাই নগরের মুরাদপুরে মারা যাওয়া তিনজন হলেন— চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াসিম আকরাম। তিনি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামা এলাকার সবুর আলমের ছেলে। অপরজন ফারুক, তিনি পথচারী ছিলেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন। আরেকজন চট্টগ্রাম নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল আহমেদ শান্ত।

মহিউদ্দিন ফরহাদ (বাঁয়ে) তাঁর পেছনে হেলমেট পরা অস্ত্রধারীর পরিচয় পাওয়া যায়নি, ডানে জালাল। ছবি: সংগৃহীত১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বহদ্দারহাটে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। তাঁরা হলেন— চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়া। তিনি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার রতন চন্দ্র তরুয়ার একমাত্র ছেলে। আরেকজন তানভীর আহমেদ (১৯)। তিনি মহেশখালীর নোয়াপাড়া এলাকার বাদশা মিয়ার ছেলে। তিনি আশেকানিয়া ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্র ছিলেন। অপরজন সন্দ্বীপের হারামিয়া ইউনিয়নের বিধবা রহিমা বেগমের ছোট ছেলে সাইমন হোসেন (১৯)। তিনি নগরের বহদ্দারহাটে একটি মুদিদোকানে কাজ করতেন।

অস্ত্রধারী মো. দেলোয়ার। ছবি: সংগৃহীতআন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ৮ অস্ত্রধারীর গুলি
সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই বেলা ৩টার দিকে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে জড়ো হন কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন। এ সময় সংঘর্ষের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মিছিল লক্ষ্য করে চার ব্যক্তিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। তাতে তিনজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ৩০ জন। গুলি করা সেই চার ব্যক্তির মধ্যে একজন মো. ফিরোজ। তিনি মহানগর যুবলীগের কর্মী। অন্যজন মো. দেলোয়ার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংগঠক। ফিরোজ রিভলবার নিয়ে এবং দেলোয়ার শটগান নিয়ে গুলি করেন। বাকি দুজন এইচ এম মিঠু ও মো. জাফর। তাঁরা দুজনও যুবলীগের কর্মী বলে জানা গেছে। তাঁদের রিভলবার নিয়ে গুলি করতে দেখা গেছে। আজকের পত্রিকার হাতে আসা বেশ কয়েকটি ছবি যাচাই করে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অস্ত্রধারী মো. মিঠু। ছবি: সংগৃহীতখোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগের ফিরোজ একসময় ছাত্র শিবিরের ক্যাডার ছিলেন। মুরাদপুরের ত্রাস ছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। সর্বশেষ চট্টগ্রামের আলোচিত স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তিনি। এ বিষয়ে মো. ফিরোজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিছিলে গুলি করার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘রিভলবার হাতে ওই ব্যক্তি আমি না।’ তবে যুবলীগের বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, রিভলবার হাতে ওই ব্যক্তি ফিরোজই।

অস্ত্রধারী মো. জালাল। ছবি: সংগৃহীত১৮ জুলাই সরেজমিন দেখা যায়, দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বহদ্দারহাট মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় ছাত্রদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন চার অস্ত্রধারী। হামলাকারীরা সরকারদলীয় স্লোগান দিয়েছেন। বেশ কয়েকটি গ্রুপ ছাত্রদের ওপর হামলা করেছেন। কালো টি শার্ট ও নীল গেঞ্জি পরা দুজনকে একটি শটগান দিয়ে গুলি করতে দেখা গেছে। বহদ্দারহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে একটি গ্রুপ থেকে ওই দুজন গুলি ছোড়েন। আরও দুজন রিভলবার দিয়ে গুলি করেছেন। এর মধ্যে হেলমেট ও সাদা গেঞ্জি পরা একজন রিভলবার দিয়ে গুলি ছুড়েছেন। তিনি চান্দগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন ফরহাদ। তাঁর সঙ্গে আরও একজন রিয়াল মাদ্রিদের গেঞ্জি-ক্যাপ ও মুখোশ পরে রিভলবার দিয়ে গুলি ছুড়েছেন। তিনি মো. জালাল। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অন্যজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম আজকের পত্রিকাকে অস্ত্রধারীদের নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এখন পর্যন্ত এই আট অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। গ্রেপ্তার বা অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীতে সহিংসতার অভিযোগে করা মামলায় ৩৭৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৬ জনকে। চট্টগ্রাম নগরীতে হওয়া ১৬টি মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

অস্ত্রধারী মো. জাফর। ছবি: সংগৃহীতএ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো. আরিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোটা আন্দোলন নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলার ১০টি থানায় ১১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ৩৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা বিভিন্ন দলের নেতা–কর্মী বলে জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলায় বেশির ভাগই অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। তবে যাঁরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, জামায়াত, শিবির ও বাম সংগঠনের নেতা–কর্মী। অবশ্য পুলিশ দাবি করছে, ঘটনার সময় সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়াসহ বিভিন্ন তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ১৬ জুলাই থেকে বিএনপি, যুবদল, কৃষক দলসহ তাঁদের ৩১০ জন নেতা-কর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনটি ছাত্রদের ছিল। ওই আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি কোনোভাবেই যুক্ত ছিল না। এরপরও হয়রানির উদ্দেশ্যে আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। থানায় থানায় নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তারের প্রতিযোগিতা চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খানসামায় গ্রাম সমিতির অফিসের বারান্দা থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার ২ নম্বর ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া চেয়ারম্যানপাড়া গ্রাম সমিতির অফিসের বারান্দা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গভীর রাতে গ্রাম সমিতির অফিসের বারান্দায় একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে ভ্যানযোগে খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

খানসামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাছেত সরদার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, লাশটির পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। মৃত্যুর কারণ ও পরিচয় উদ্‌ঘাটনে আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বগুড়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, সিসিটিভির হার্ডডিস্ক নিয়ে আত্মগোপনে স্বামী

বগুড়া প্রতিনিধি
নিহত রিফাত জাহান রিংকি। ছবি: সংগৃহীত
নিহত রিফাত জাহান রিংকি। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ায় রিফাত জাহান রিংকি (১৯) নামের এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার নুনগোলা দক্ষিণ পাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর পরপরই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাড়ির সিসিটিভির হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এই ঘটনায় সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।

নিহত রিংকি শাজাহানপুর উপজেলার নন্দকুল উত্তর পাড়া গ্রামের রাশেদুল ইসলামের মেয়ে। পাঁচ বছর আগে নুনগোলা এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে নুরুন্নবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের চার বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিবেশীরা রিংকিকে বাড়ির উঠানে স্বাভাবিকভাবে ব্যাডমিন্টন খেলতে দেখেন। যদিও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যে পারিবারিক কলহের কথা শোনা যেত। রাতের দিকে হঠাৎ তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

নিহত রিংকির বোন আশা খাতুন জানান, বিকেলে রিংকির মোবাইল থেকে তাঁর ফোনে একটি মিসকল আসে। পরে একাধিকবার ফোন করলেও রিংকি ফোন ধরেননি। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতে নুরুন্নবী ফোন করে জানায়, রিংকির ওপর জিনের আছর পড়েছে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রিংকির নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তখন তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন লক্ষ করা যায়।

রিংকির মামি আয়না খাতুন বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে রিংকিকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই আলামত নষ্ট করতে বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। আমরা এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্বামী নুরুন্নবী ও তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য বাড়িতে নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনার পরপরই তাঁরা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু রায়হান বলেন, ‘এর আগে তাঁদের মধ্যে কোনো ঝগড়াবিবাদের কথা আমার জানা ছিল না। হঠাৎ রাতে মৃত্যুর খবর পাই। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’

বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান বলেন, পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। প্রাথমিক সুরতহালে আত্মহত্যার কোনো সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫ দিন সূর্যহীন চুয়াডাঙ্গা: মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে বিপন্ন জনজীবন

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। হিমাঙ্কের কাছাকাছি নামা তাপমাত্রার সঙ্গে টানা পাঁচ দিন সূর্যের দেখা না মেলায় স্থবির হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। আজ বুধবার চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা জেলাজুড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সৃষ্টি করেছে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। চলতি শীত মৌসুমে এটিই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ ছাড়া জেলায় ২৭ ডিসেম্বর থেকে একটানা সূর্যের দেখা মেলেনি। ২৭ ডিসেম্বর ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি এবং সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করলেও বুধবার একলাফে তাপমাত্রা কমেছে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৬ শতাংশ হওয়ায় শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে, যা মানুষের জীবনযাত্রায় হঠাৎ করে চরম দুর্ভোগ ডেকে এনেছে।

জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু এবং ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সেই হিসাবে চুয়াডাঙ্গায় এখন মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে এবং এই পরিস্থিতি আরও দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। রাস্তাঘাটে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে।

চা-দোকানি আলফাজ আলী বলেন, ‘ঠান্ডার চোটে সকালে দোকান খোলাই দায় হয়ে পড়েছে। কুয়াশায় মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না, বেচাকেনাও খুব কম।’

দিনমজুর হারেজ আলী বলেন, ‘হাতে-পায়ে বরফের মতো ঠান্ডা লাগে। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না, তাই এই শীতেও বের হতে হচ্ছে।’

সদর উপজেলার একটি ইটভাটার শ্রমিক আফতাব হক বলেন, ‘খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হয়। বাতাসের ঝাপটায় হাত অবশ হয়ে আসে, কাজ এগোয় না।’

টানা কুয়াশা ও সূর্যের অনুপস্থিতিতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। হাটকালুগঞ্জ গ্রামের ধানচাষি ফরজ আলী জানান, তীব্র ঠান্ডায় ধানের বীজতলা লালচে হয়ে যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, বীজতলা রক্ষায় সকালে দড়ি টেনে কুয়াশার পানি ঝরিয়ে দিতে হবে এবং প্রয়োজনে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ফসল সুরক্ষায় ছত্রাকনাশক ও পরিমিত সেচ জরুরি।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শিশু বিশেষজ্ঞ আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান, প্রতিদিন আউটডোরে শত শত শিশু ও বৃদ্ধ রোগী নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা নিতে আসছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। এ সময় তিনি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এনসিপির প্রার্থী ডা. মাহমুদা মিতুকে হত্যার হুমকি

ঝালকাঠি প্রতিনিধি 
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. মাহমুদা মিতু। ছবি: সংগৃহীত
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. মাহমুদা মিতু। ছবি: সংগৃহীত

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. মাহমুদা মিতুকে পুড়িয়ে ও কুপিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই অভিযোগ করেন।

ফেসবুক পোস্টে ডা. মাহমুদা মিতু লেখেন, ‘আজকেও (+৯৬৬৫৪৮৬৮০৪৩৬) এই নম্বর থেকে হত্যার হুমকি আসছে। আবার নতুন করে প্রতিদিন হত্যার হুমকি শুরু হয়েছে। পুড়িয়ে মারবে, কুপিয়ে মারবে—এ ধরনের কথা বলছে। আপনাদের বিচলিত করতে চাই না বলে এত দিন জানাচ্ছিলাম না। কিন্তু জোটে ইলেকশন করব—এ খবর জানার পর একদম বানোয়াট ও উদ্ভট গল্প বানিয়ে চরিত্র হনন শুরু করেছে। জোটের খবর আওয়ামী লীগের পুচ্ছে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।’

মাহমুদা মিতু লেখেন, ‘আমি ভয় পাচ্ছি না, বিচলিতও নই। আপনারাও বিচলিত হবেন না। ওদের লেখাগুলো পড়ার দরকার নেই। আল্লাহ ভরসা। আমার স্বামী বলছে—এটা তো শুরু, সামনে এআই ভিডিও, ন্যুড ও এডিটেড ছবি ছড়ানোর চেষ্টাও হতে পারে। দোয়ার আরজি রইল।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মাহমুদা মিতু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এর আগেও বিভিন্ন সময় নানা ধরনের হুমকি এসেছিল। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর এই প্রথম এমন হুমকি এসেছে।’ তিনি জানান, শুধু হুমকি নয়, তাঁকে নিয়ে মিথ্যা বদনাম রটানোর চেষ্টাও চলছে।

ডা. মাহমুদা মিতুর ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত
ডা. মাহমুদা মিতুর ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত

আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো আইনি সহায়তা নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত এ ধরনের হুমকি-ধমকি আসছেই।’

রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত