Ajker Patrika

গভীর নলকূপের কথা বলে টাকা নিয়ে গ্রামবাসীর তোপের মুখে জাসদ নেতা

পরশুরাম (ফেনী) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ মে ২০২৩, ১১: ২৭
গভীর নলকূপের কথা বলে টাকা নিয়ে গ্রামবাসীর তোপের মুখে জাসদ নেতা

ফেনীর পরশুরামে গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে টাকা নেন তছলিম আহাম্মেদ নামে উপজেলা জাসদের এক নেতা। দুই বছরেও নলকূপ অথবা সেই টাকা ফেরত দিতে না পারায় গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়েন তিনি। এরপর তাঁকে আটক করেন ভুক্তভোগীরা। পরে কিছু টাকা দিয়ে এবং বাকি টাকা পরে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা পান।

গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই নেতাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জাসদ নেতা তছলিম আহাম্মেদ চৌধুরী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) উপজেলা সহসভাপতি ও ফেনী জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক।

স্থানীয়রা ও একাধিক ভুক্তভোগী জানান, রোববার বিকেলে ইউএনওর অফিসের বারান্দায় জাসদ নেতার পথ রোধ করেন স্থানীয় কয়েকজন ভুক্তভোগী। তাঁকে আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে একই অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় আলাউদ্দিন আহামেদ চৌধুরী নাসিম কলেজের অফিস সহকারী ছালেহ আহাম্মদ চৌধুরী, সাঈদ চৌধুরীসহ আরও ১০ জন জড়ো হন। তাঁদের সবার একই অভিযোগ, গভীর নলকূপ দেওয়ার কথা বলে তছলিম তাদের কাছ থেকে প্রতিটি নলকূপের জন্য ২৫-৩০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। কিন্তু গত দুই বছরেও নলকূপ বরাদ্দ দিতে পারেননি। তাঁকে মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি কেটে দেন এবং বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা করেন।

পরে ক্ষতিগ্রস্তরা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একে একে ক্ষতিগ্রস্তরা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ করেন। এরপর তোপের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত দিদারুল আলম ও আমিনুর রহমান নামের দুজনকে ১০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন। জাসদ নেতা তছলিম দুজনের কাছ থেকে গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে তাঁরা অভিযোগ করেছেন। বাকি টাকা কিছুদিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেখান থেকে ছাড়া পান।

মনছুর আহাম্মদ নামে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের একজন কর্মচারী বলেন, ‘আমার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নেওয়ার পরও গত দুই বছর ধরে নলকূপ বরাদ্দ না দেওয়ায় রোববার বিকেলে আমি জাসদ নেতাদের ইউএনও অফিসের বারান্দায় পথরোধ করেছিলাম। নলকূপ না দিতে পারলে টাকা ফেরতে দিতে চাপ দেই।’ 

উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের জঙ্গলঘোনা গ্রামের দিদারুল আলম বলেন, উপজেলা ও তিনটি ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকায় দুই শতাধিক লোকের কাছ থেকে প্রতিটি নলকূূপের জন্য ২৫-৩০ হাজার টাকা আদায় করেছেন। ২০০ জনের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, স্থানীয় ইউপি সদস্য, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন।

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজের অফিস সহকারী ছালেহ আহাম্মদ চৌধুরী সুজন এবং সাঈদ চৌধুরী, মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ফখরুল ইসলাম ফারুখ, বর্তমান সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডর সদস্যের স্বামী নুর হোসেন অভিযোগ করেন, জাসদ নেতা তছলিম নলকূপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ২৫-৩০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। অথচ সরকারিভাবে খরচ হচ্ছে মাত্র ১১ হাজার টাকা।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ করেন উপজেলার জঙ্গলঘোনা গ্রামের দিদারুল আলম ও তাঁর ভগ্নিপতি আমিনুর রহমান। অভিযোগে তাঁরা জানান, দুজনকে গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে তছলিম আহমেদ চৌধুরী ৫০ হাজার টাকা আদায় করেছেন। কিন্তু গত দুই বছর অপেক্ষার পরও নলকূপ বরাদ্দ দিচ্ছেন না। নানা অজুহাতে টালবাহানা করছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

রোববার বিকেলে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে একই সময় ছালেহ আহাম্মদ চৌধুরী সুজন ও সাঈদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, তাঁদের দুজনের কাছ থেকেও জাসদ নেতারা ৫০ হাজার টাকা করে এবং চারজনের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা আদায় করেছেন। কিন্তু গত দুই বছরেও তারা নলকূপ বরাদ্দ পাননি।

মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান ভুট্টো বলেন, ‘গত শনিবার (৬ মে) রাতে সংসদ সদস্য শিরিন আখতারের ছেলে জাসদ নেতা অমিত মনোশিষ মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদে গেলে সেখানেও স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি জাসদ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তাঁদের অভিযোগ, এমপির কথা বলে গভীর নলকূপ বরাদ্দের নামে টাকা নিয়ে টালবাহানা দেখাচ্ছে।’

পরশুরাম উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, ‘গ্রামীণ এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সারা দেশে ৬ লাখ গভীর ও অগভীর নলকূপ বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। তার মধ্যে পরশুরাম উপজেলায় ৪৯টি নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রানা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। কিন্তু ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরিন আখতারের বরাদ্দকৃত নলকূপের ৪৯ জনের তালিকার মধ্যে বেশির ভাগ লোকের নাম ও ফোন নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য ভুল থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না।’

অভিযোগের বিষয়ে পরশুরাম উপজেলা জাসদের সহসভাপতি ও ফেনী জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক তছলিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলা জাসদের দলীয় কার্যক্রমের খরচ চালানোর জন্য আমাকে শুধু ছয়টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ দিয়েছে। সেগুলোর জন্য আমি কয়েকজনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে নিয়েছি। যেহেতু নলকূপ বরাদ্দ দিতে পারি নাই, তাই দুই-এক দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দিয়ে দেব।’

পরশুরাম উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, ‘এমপি মহোদয়ের কথা বলে এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অফিস খরচের কথা বলে জাসদ নেতারা প্রতিটি নলকূপের জন্য ২৫-৩০ হাজার টাকা আদায় করছেন। এতে এমপি ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কোষাগারে শুধু ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ১১ হাজার টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। অথচ মিথ্যা তথ্য দিয়ে লোকজনের কাছ থেকে দ্বিগুণ টাকা আদায় করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দৌলতপুর সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক পুশ ইনের চেষ্টা: ব্যর্থ হয়ে ১৪ জনকে ফেরত নিল বিএসএফ

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি 
১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ ইনের চেষ্টা করে বিএসএফ। শূন্য লাইন থেকে গতকাল দুপুরে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ ইনের চেষ্টা করে বিএসএফ। শূন্য লাইন থেকে গতকাল দুপুরে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে যখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি চলছে, ঠিক সেই সময় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ ইনের চেষ্টা চালিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তৎপরতায় ওই চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ১৪ ভারতীয় নাগরিককে জিরো লাইন থেকে ফেরত নিয়ে যায় বিএসএফ।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর বিওপির সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করা হয়।

বিজিবি সূত্র জানায়, বিএসএফের আহ্বানে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে একটি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের (৪৭ বিজিবি) অধীন মহিষকুন্ডি বিওপিতে কর্মরত সুবেদার আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বিজিবি প্রতিনিধিদল এবং ১৪৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের নিউ উদয় কোম্পানি কমান্ডার এসি অনিল কুমারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বিএসএফ প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেয়।

বৃহস্পতিবার বেলা ১টা ৪০ মিনিট থেকে ২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত সীমান্তের মেইন পিলার ১৫৪/০৭ এস-সংলগ্ন ভারতের অভ্যন্তরে চাইডোবা মাঠে এই পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে ভারতীয় নাগরিক পুশ ইনের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয় এবং অবিলম্বে তাদের ফেরত নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

পরে শূন্য লাইনে অবস্থানরত ব্যক্তিদের পরিচয় ও ঠিকানা যাচাই করে তারা সবাই ভারতের ওডিশা প্রদেশের জগতসিংপুর সদর উপজেলার তারিকুন্ডা এলাকার বাসিন্দা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। যাচাই শেষে বিএসএফ তাদেরকে ভারতের অভ্যন্তরে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

পুশ ইনের চেষ্টা করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন মৃত হারুন শেখের ছেলে শেখ জব্বার (৭০), তাঁর চার ছেলে শেখ হাকিম (৪৫), শেখ ওকিল (৪০), শেখ রাজা (৩০) ও শেখ বান্টি (২৮); শেখ ওকিলের স্ত্রী শাবেরা বিবি (৩০); শেখ হাকিমের স্ত্রী শমশেরি বিবি (৪০); শেখ রাজার স্ত্রী মাইনু বিবি (২৫); শেখ জব্বারের স্ত্রী আলকনি বিবি (৬০); মৃত শেখ হোসেনের স্ত্রী গুলশান বিবি (৯০); শিশুদের মধ্যে রয়েছে শাকিলা খাতুন (১১), নাছরিন আক্তার (১২), শেখ তাওহিদ (১১) ও আড়াই বছর বয়সী শেখ রহিত।

এই ঘটনায় সীমান্তবাসীর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নির্বাচনকালীন স্পর্শকাতর সময়ে ভারতের এমন পুশ ইন চেষ্টাকে কেন্দ্র করে সীমান্ত এলাকায় নানা আলোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশেদ কামাল রনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে কোনোভাবেই অবৈধ অনুপ্রবেশ বা পুশ ইন মেনে নেওয়া হবে না। সীমান্ত নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিজিবি সব সময় কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিরাজগঞ্জে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত ২

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  
উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা তালতলা এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা তালতলা এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মালবাহী দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক ট্রাকের চালক ও হেলপার গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

শুক্রবার সকালে উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা তালতলা এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন আজকের পত্রিকাকে জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা গবাদিপশুর খাবার (ভুসি) বহনকারী একটি ট্রাকের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা পাথরবোঝাই আরেকটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে এবং অপরটি মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যায়।

দুর্ঘটনার পর রেকার দিয়ে ট্রাক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আহত চালক ও হেলপারের পরিচয় এখনো জানা যায়নি বলে জানান ওসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চুয়াডাঙ্গায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৫
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তঘেঁষা জেলা চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। কয়েক দিন ধরে এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে, যা আজ মৃদু শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।

ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসায় সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। বিশেষ করে রিকশাচালক, দিনমজুর, ইটভাটার শ্রমিক এবং সবজি বিক্রেতারা জীবিকার তাগিদে ভোরে ঘর থেকে বের হয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

পেশাজীবীদের ভাষ্যমতে, হাড়কাঁপানো ঠান্ডার কারণে স্বাভাবিক কাজকর্মে ভাটা পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা শহরের রিকশাচালক স্বপন ইসলাম বলেন, ‘বাপু, হাত-পা তো জমে বরফ হয়ে যাচ্ছে। হ্যান্ডেল ধরলে মনে হয় যেন রড কামড়ে ধরছে। এই হিমেল বাতাসে শরীর কাঁপতিছে। ভাড়া-ভুতো কম, সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।’

বড় বাজারের মুদিদোকানি সুমন আলী বলেন, ‘সকাল সকাল দোকান খুলে বসে থাকি, কিন্তু কাস্টমারের দেখা নেই। মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ঠান্ডার চোটে দোকানের ভেতর বসে থাকাই এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্ট পাড়ার গৃহিণী অনামিকা খাতুন বলেন, ‘ভোরবেলা ঠান্ডা পানিতে হাত দেওয়া যায় না। রান্নাবান্না আর ঘরের কাজ করতে গিয়ে হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের নিয়ে খুব ভয়ে আছি, কখন ঠান্ডা লেগে অসুখ-বিসুখ হয়।’

দিনমজুর সেতাব আলী বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন কামলা দিয়ে খাই। কিন্তু এই ঠান্ডায় মাঠে বা বাইরে বেশিক্ষণ কাজ করা যাচ্ছে না। শরীর থরথর করে কাঁপে, কোদাল বা ঝুড়ি ধরা কষ্টের।’

টানা কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের ফলে বোরো ধানের বীজতলা এবং শীতকালীন শাকসবজি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন স্থানীয় কৃষকেরা। কৃষকদের আশঙ্কা, কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার কৃষকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ধানের বীজতলার কুয়াশা সকালে দড়ি টেনে ফেলে দিতে হবে। প্রয়োজনে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে। ছত্রাকনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি পরিমিত সেচ দিতে হবে।’

তীব্র শীতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান, প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ বৃদ্ধ এবং ৩০০ থেকে ৪০০ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসছে। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের প্রাদুর্ভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, শীতার্ত মানুষের সহায়তায় জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছে। তিনি প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাসের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, ‘তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। চুয়াডাঙ্গার বর্তমান তাপমাত্রা এই সীমার মধ্যে রয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় আজ থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। তবে আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা (৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রেকর্ড করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা যশোরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেঘনায় মধ্যরাতে দুই লঞ্চের সংঘর্ষ, নিহত বেড়ে ৭

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০৮
ঘন কুয়াশায় জাকির সম্রাট-৩ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত
ঘন কুয়াশায় জাকির সম্রাট-৩ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে দুটি যাত্রীবাহী লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৭ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চের হতাহত যাত্রীদের উদ্ধার করে ঢাকার সদরঘাটে নিয়ে আসা হলে সেখানে লাশের সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়। সদরঘাট নৌ থানার ইনচার্জ সোহাগ রানা গণমাধ্যমকে জানান, দুটি লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তকরণ এবং ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।

তবে নৌ পুলিশের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রাত আনুমানিক ৩টার দিকে দুটি লঞ্চের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নারী ও তিনজন পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চাঁদপুরের ট্রাফিক পরিদর্শক বাবু লাল বৈদ্য জানান, ভোলার ঘোষেরহাট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা অভিমুখী ‘এমভি জাকির সম্রাট-৩’ লঞ্চটি রাত ২টার দিকে হাইমচর এলাকা অতিক্রম করছিল। এ সময় নদীতে ঘন কুয়াশা থাকায় দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ফলে বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকা-বরিশাল রুটের ‘এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯’ লঞ্চের সঙ্গে জাকির সম্রাট-৩-এর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

বাবু লাল বৈদ্যের দেওয়া তথ্যমতে, সংঘর্ষের পরপরই ঘটনাস্থলে একজন যাত্রী নিহত হন। ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চটির যাত্রীদের তাৎক্ষণিকভাবে ‘এমভি কর্ণফুলী-৯’ নামক লঞ্চের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে ঢাকা যাওয়ার পথেই আরও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। পরে সদরঘাটে পৌঁছানোর পর নিহতের মোট সংখ্যা সাতজনে পৌঁছায়।

নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় চালকদের অবহেলা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত