Ajker Patrika

মিরসরাইয়ে ঝরনা থেকে পড়ে এক পর্যটকের মৃত্যু, নিখোঁজ ২ ভাই

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
মিরসরাইয়ে ঝরনা থেকে পড়ে এক পর্যটকের মৃত্যু, নিখোঁজ ২ ভাই

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে নাপিত্তাছড়া ঝরনা থেকে ইশতিয়াকুর রহমান প্রান্ত (২২) নামে এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার রাত ৮টায় নয় দুয়ারিয়া নাপিত্তাছড়া ঝরনার দুর্গম পাহাড় থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে মিরসরাই থানা-পুলিশ। এ ঘটনায় মাসুদ আহম্মেদ তানবীর (২২) ও তৌফিক আহম্মেদ তারেক (২০) নামের দুই ভাই নিখোঁজ রয়েছেন।

আজ ভোর ৫টায় নিহতের বাবা জাকারিয়া এসে ছেলেকে শনাক্ত করেন। এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে প্রথমে ইশতিয়াকুর রহমানের সহপাঠী মেহেদী হাসান থানায় ফোন করেন। পরে তাঁকে আরও ছবি পাঠানোর পর তিনি থানায় এসে বন্ধুর মরদেহ নিশ্চিত করেন।

এদিকে আজ সকালে মরদেহের সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল পাঠানো হয়েছে। দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মিরসরাই ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঝরনার নিছে ছড়ার গভীর কূপ ও আশপাশে দুজনকে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।

নিহত ইশতিয়াকুর রহমান প্রান্ত চট্টগ্রাম ইস্পাহানি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। নিখোঁজ দুই ভাই মাসুদ আহম্মেদ তানবীর ইউএসটিসি চট্টগ্রাম স্নাতকের ছাত্র। তৌফিক আহম্মেদ তারেক চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন।

মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন জানান, ঝরনায় যাওয়ার পথে একটি খাবারের দোকান রয়েছে। সেখানে দোকানে পর্যটকেরা মালামাল, ব্যাগ জমা রাখেন। এখান থেকে পর্যটকেরা চাইলে গাইড ম্যান নিতে পারেন। ঘটনার দিন ইশতিয়াকুর রহমানসহ (২২) তিনজন একসঙ্গে দোকানে আসেন। তাঁদের একজন ইশতিয়াক বাকি দুজন এখনো নিখোঁজ।

ওসি জানান, ১২ নম্বর খৈয়াছড়া ইউনিয়নের নয়দুয়ারিয়া এলাকার নাপিত্তাছড়া ঝরনা পর্যটকদের কাছে উৎসবের জায়গা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দল বেঁধে পর্যটকেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসেন। ঝরনাটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। এখানে যাতায়াত, নিরাপত্তা এবং কোনো রকম অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নেই। প্রাকৃতিক এ ঝরনাটি বন বিভাগ কোনো কাজ না করে বছর বছর  ইজারা দিয়ে থাকে। গতকাল দিনভর রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টির ঝরনার নিছে তীব্র স্রোত ছিল। ওপর থেকে পড়ে প্রান্তর মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পর্যটকের মৃত্যুর খবর শুনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নাপিত্তাছড়া ঝরনার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিএসআর ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আনিসুর রহমান বলেন, ‘প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে আমরা রোববার টিকিট কাউন্টার বন্ধ রাখি। পর্যটকও খুব কম ছিল। এই তিনজন বেলা ১১টার দিকে ঝরনায় গেছে শুনেছি। বিকেলে খবর এল তাঁদের একজন মারা গেছেন। এরপর মিরসরাই থানায় খবর দিয়েছি। পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে।’

মিরসরাই ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন বলেন, ‘ঝরনার নিছে ১৫০ ফুট গভীর একটি কূপ রয়েছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে কোনো কূলকিনারা না পেয়ে  চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা চেয়েছি। চট্টগ্রাম থেকে একটি অভিজ্ঞ ডুবুরি টিম রওনা দিয়েছে, এখন পথে আছে।’

ইশতিয়াকের খালাতো ভাই মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘ইশতিয়াক শান্ত স্বভাবের মেধাবী ছাত্র ছিল। সে এইচ এসসিতে এ প্লাস পেয়েছে। এবার বিএমএ ভর্তি হওয়ার কথা ছিলে। সে বন্ধুদের সঙ্গে এর আগেও ঝরনায় এসেছিল। এখানে ঝরনায় যাওয়ার রাস্তা নেই, নিরাপত্তা নেই, সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা না করে পাহাড়ের একটি প্রাকৃতিক ঝরনা প্রতি বছর ইজারা দিচ্ছে বন বিভাগ। আজ অবকাঠামো এবং পর্যটকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকলে হয়তো এ দুর্ঘটনা ঘটতো না।’

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করেএদিকে এলাকাবাসী জানান, নির্জন গহিন পাহাড়ের ভেতর প্রাকৃতিক ঝরনা গুলোতে আগে কখনো এত পর্যটক আসত না। গত কয়েক বছর ধরে বন বিভাগ নিরাপত্তা, চলাচলের রাস্তা, অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা এবং পর্যটকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা না করে বছর বছর ইজারা দিচ্ছে। গত বছর ৮ মার্চ থেকে আগামী ২৮ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত এক বছরের জন্য খৈয়াছড়া ঝরনা ও নাপিত্তাছড়া ঝরনা ২২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ধরে ইজারা পেয়েছে শেরপুর জেলার শ্রীবরদি উপজেলার তাতীহাটি  ইউনিয়নের মেসার্স টিএসআর ইন্টারন্যাশনাল। তারাও কোনো কাজ না করে শুধু টিকিট বাণিজ্য করছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো কাজ না করে বন বিভাগ প্রতি বছর ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা নিয়ে পর্যটকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তারা টাকা নিলেও কোনো দুর্ঘটনা হলে দায়িত্ব নেয় না। অপর দিকে ইজারাদার মুনাফার জন্য আকর্ষণীয়ভাবে প্রচারণা চালিয়ে পর্যটকদের ভ্রমণে আকৃষ্ট করে। এসব অব্যবস্থাপনার কারণে সারা বছর পাহাড়ের ঝরনাগুলোতে ঘটছে নানা অঘটন। পর্যটকদের মালামাল চুরি-ছিনতাই, ঝরনায় পড়ে দুর্ঘটনা, নারীদের উত্ত্যক্ত করা, ঝরনায় এসে নিখোঁজ হওয়া, রহস্যজনক মৃত্যু ইত্যাদি। পর্যটকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা না করে ইজারা দিয়ে টাকা নেওয়ার কারণে এসব ঘটছে বলে পর্যটকেরা বিভিন্ন সময় অভিযোগ করে আসছেন।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘এখানে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ইজারা দাতা এবং ইজারা গ্রহীতা দুই পক্ষের। তারা আগে পর্যটকদের সুরক্ষা নিশ্চিত না করে ইজারা দেওয়া উচিত হয়নি। পর্যটকদেরও গাফিলতি ছিল। তাঁদের এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে গহিন পাহাড়ে এভাবে যাওয়া ঠিক হয়নি। ভবিষ্যতে আমরা মিটিং করে পর্যটন স্পটগুলো উপজেলা পরিষদের আওতায় নিয়ে আসব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫ দিন সূর্যহীন চুয়াডাঙ্গা: মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে বিপন্ন জনজীবন

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। হিমাঙ্কের কাছাকাছি নামা তাপমাত্রার সঙ্গে টানা পাঁচ দিন সূর্যের দেখা না মেলায় স্থবির হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। আজ বুধবার চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা জেলাজুড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সৃষ্টি করেছে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। চলতি শীত মৌসুমে এটিই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ ছাড়া জেলায় ২৭ ডিসেম্বর থেকে একটানা সূর্যের দেখা মেলেনি। ২৭ ডিসেম্বর ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি এবং সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করলেও বুধবার একলাফে তাপমাত্রা কমেছে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৬ শতাংশ হওয়ায় শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে, যা মানুষের জীবনযাত্রায় হঠাৎ করে চরম দুর্ভোগ ডেকে এনেছে।

জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু এবং ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সেই হিসাবে চুয়াডাঙ্গায় এখন মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে এবং এই পরিস্থিতি আরও দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। রাস্তাঘাটে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে।

চা-দোকানি আলফাজ আলী বলেন, ‘ঠান্ডার চোটে সকালে দোকান খোলাই দায় হয়ে পড়েছে। কুয়াশায় মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না, বেচাকেনাও খুব কম।’

দিনমজুর হারেজ আলী বলেন, ‘হাতে-পায়ে বরফের মতো ঠান্ডা লাগে। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না, তাই এই শীতেও বের হতে হচ্ছে।’

সদর উপজেলার একটি ইটভাটার শ্রমিক আফতাব হক বলেন, ‘খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হয়। বাতাসের ঝাপটায় হাত অবশ হয়ে আসে, কাজ এগোয় না।’

টানা কুয়াশা ও সূর্যের অনুপস্থিতিতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। হাটকালুগঞ্জ গ্রামের ধানচাষি ফরজ আলী জানান, তীব্র ঠান্ডায় ধানের বীজতলা লালচে হয়ে যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, বীজতলা রক্ষায় সকালে দড়ি টেনে কুয়াশার পানি ঝরিয়ে দিতে হবে এবং প্রয়োজনে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ফসল সুরক্ষায় ছত্রাকনাশক ও পরিমিত সেচ জরুরি।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শিশু বিশেষজ্ঞ আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান, প্রতিদিন আউটডোরে শত শত শিশু ও বৃদ্ধ রোগী নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা নিতে আসছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। এ সময় তিনি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এনসিপির প্রার্থী ডা. মাহমুদা মিতুকে হত্যার হুমকি

ঝালকাঠি প্রতিনিধি 
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. মাহমুদা মিতু। ছবি: সংগৃহীত
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. মাহমুদা মিতু। ছবি: সংগৃহীত

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. মাহমুদা মিতুকে পুড়িয়ে ও কুপিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই অভিযোগ করেন।

ফেসবুক পোস্টে ডা. মাহমুদা মিতু লেখেন, ‘আজকেও (+৯৬৬৫৪৮৬৮০৪৩৬) এই নম্বর থেকে হত্যার হুমকি আসছে। আবার নতুন করে প্রতিদিন হত্যার হুমকি শুরু হয়েছে। পুড়িয়ে মারবে, কুপিয়ে মারবে—এ ধরনের কথা বলছে। আপনাদের বিচলিত করতে চাই না বলে এত দিন জানাচ্ছিলাম না। কিন্তু জোটে ইলেকশন করব—এ খবর জানার পর একদম বানোয়াট ও উদ্ভট গল্প বানিয়ে চরিত্র হনন শুরু করেছে। জোটের খবর আওয়ামী লীগের পুচ্ছে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।’

মাহমুদা মিতু লেখেন, ‘আমি ভয় পাচ্ছি না, বিচলিতও নই। আপনারাও বিচলিত হবেন না। ওদের লেখাগুলো পড়ার দরকার নেই। আল্লাহ ভরসা। আমার স্বামী বলছে—এটা তো শুরু, সামনে এআই ভিডিও, ন্যুড ও এডিটেড ছবি ছড়ানোর চেষ্টাও হতে পারে। দোয়ার আরজি রইল।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মাহমুদা মিতু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এর আগেও বিভিন্ন সময় নানা ধরনের হুমকি এসেছিল। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর এই প্রথম এমন হুমকি এসেছে।’ তিনি জানান, শুধু হুমকি নয়, তাঁকে নিয়ে মিথ্যা বদনাম রটানোর চেষ্টাও চলছে।

ডা. মাহমুদা মিতুর ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত
ডা. মাহমুদা মিতুর ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত

আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো আইনি সহায়তা নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত এ ধরনের হুমকি-ধমকি আসছেই।’

রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে রাজশাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহীতে কনকনে শীতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টায় কয়েকজন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীতে কনকনে শীতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টায় কয়েকজন। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুয়াশার চাদরে মোড়া রাজশাহী কাঁপছে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায়। দিনের তাপমাত্রা ক্রমেই নেমে যাওয়ায় জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তবে কনকনে শীতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে সময় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ছিল শতভাগ। ফলে শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

এদিকে তিন দিন ধরে পদ্মার তীরের এই জেলায় সূর্যের দেখা নেই বললে চলে। ভোর থেকে সকাল, এরপর দুপুর পেরিয়েও কুয়াশার আস্তরণ কাটছে না। হিমেল বাতাস শরীর ছুঁয়ে গেলেই কাঁপুনি ধরছে। প্রতিদিন যেন শীত নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে জনজীবনে।

সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে রাজশাহীর দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষ। কাজ কমে যাওয়ায় আয় নেই। আবার শীত নিবারণের পর্যাপ্ত গরম কাপড়ও নেই। শীতবস্ত্রের অভাবে ছিন্নমূল মানুষকে কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করে রাত কাটাতে হচ্ছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে খড়কুটো জ্বালিয়ে শরীর গরম রাখার চেষ্টা করছেন।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা থেকে ভোরে কাজের আশায় রাজশাহী নগরের তালাইমারী এলাকায় আসেন দিনমজুর নাজমুল। কিন্তু শীতের কারণে কাজের দেখা মেলেনি। তিনি বলেন, ‘আজ খুব বেশি ঠান্ডা। মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না, তাই কাজও পাওয়া যায়নি। আগে যেখানে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন কাজ মিলত, এখন এই শীতে সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনই কাজ পাওয়া যায় না।’

রিকশাচালক জাকির আলী বলেন, ‘হুহু করে ঠান্ডা বাতাস বইছে। রিকশা চালাতে গেলে শরীর জমে আসে। যাত্রী কম, আয়ও কম। খুব কষ্টে দিন কাটছে। কয়দিন এই অবস্থা থাকবে কে জানে!’

এদিকে তীব্র শীতের প্রভাব পড়েছে নগরজীবনেও। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। কুয়াশা আর ঠান্ডার ভয়ে মানুষ দ্রুত ঘরে ফিরছে। আর সন্ধ্যা নামলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ দোকানপাট। যেন পুরো শহর আগেভাগেই নিস্তব্ধ হয়ে পড়ছে।

গ্রামাঞ্চলে শীতের দাপট আরও বেশি। রাজশাহীর বানেশ্বর এলাকার বাসিন্দা তুষার আলম জানান, শহরের তুলনায় গ্রামে শীত অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে। খোলা মাঠ, নদী আর কুয়াশার কারণে ঠান্ডা যেন হাড়ে হাড়ে ঢুকে পড়ছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিক থেকে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। বুধবার ভোরের পর থেকে কুয়াশার আধিক্য দেখা যায়। কুয়াশার কারণে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মতো অনুভূতি হচ্ছে। রাজশাহীসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এই পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন বিরাজ করতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে বিপর্যস্ত মেহেরপুরের জনজীবন, তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
গাংনীতে ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে সড়ক ও আশপাশের এলাকা। হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনীতে ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে সড়ক ও আশপাশের এলাকা। হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেরপুর জেলায় ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এর সঙ্গে বইছে ঝিরি ঝিরি বাতাস। সকাল থেকে সূর্যের দেখা নেই। ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে সড়ক ও আশপাশের এলাকা। কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু অবস্থায় পড়েছে মানুষ।

কুয়াশা উপেক্ষা করেই মানুষ নিজ নিজ কাজে বের হচ্ছে। যানবাহনগুলো ধীরগতিতে কুয়াশা ভেদ করে চলাচল করছে। দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ জীবিকার তাগিদে কাজে ছুটছেন। তবে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ সকালে তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চারদিক এত কুয়াশায় ঢাকা যে অনেক সময় রাস্তা স্পষ্ট দেখা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে রাস্তায় বের হতে ভয় লাগছে। এর সঙ্গে তীব্র শীত ও ঠান্ডা বাতাসে হাত-পা ঝিনঝিন করছে।

মাঠে কাজ করতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, চরম শীত আর কুয়াশার মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছে। সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস বইছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে শিশু ও বয়স্কদের।

আরেক শ্রমিক শিপন আলী বলেন, ‘আমরা দিনমজুর। কাজ না করলে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। আজ শীত খুব বেশি। হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে, কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে।’

অটোচালক বকুল হোসেন জানান, ভোর থেকেই ঘন কুয়াশায় মাঠ ও রাস্তা ঢেকে গেছে। পেটের তাগিদে বের হতে হলেও ধীরে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। দুই দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি।

ঝিরি ঝিরি বাতাস আর ঘন কুয়াশার মধ্যেই জমিতে কাজ করছেন এক কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝিরি ঝিরি বাতাস আর ঘন কুয়াশার মধ্যেই জমিতে কাজ করছেন এক কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা

নছিমনচালক হিরোক ইসলাম বলেন, ‘ভোরে মাছ আনতে বের হতে হয়। কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনার ভয় বেশি। ধীরে চালালেও ভয় কাটে না। শীত আর বাতাসে হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে।’

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জামিনুর রহমান জানান, আজ সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। এমন আবহাওয়া আরও দু-এক দিন থাকতে পারে। তবে দুপুরের পর আকাশ কিছুটা পরিষ্কার হতে পারে।

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, ঘন কুয়াশা ও শীত থাকলেও এখন পর্যন্ত মাঠের ফসলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা নেই। কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, মেহেরপুর জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকায় পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া অফিসের তথ্যই মেহেরপুর জেলার তাপমাত্রা হিসেবে ধরা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত