Ajker Patrika

ভরা মৌসুমেও আমদানি, কৃষকের মাথায় হাত

� দেশীয় চার পণ্যের উৎপাদন খরচও উঠছে না।

� ন্যূনতম দাম ও আমদানি বন্ধের দাবিতে কৃষকদের বিক্ষোভ।

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৮: ২৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশীয় পেঁয়াজ, রসুন, আলু ও লবণের ভরা মৌসুম এখন। চলতি মৌসুমে এসব পণ্য উৎপাদন পর্যাপ্ত হওয়ায় এই সময়ে কৃষকের মুখে হাসি ফোটার কথা। কিন্তু লাভ তো দূরে থাক, পণ্যের উৎপাদন খরচও তুলতে না পেরে হতাশ কৃষকেরা।

ভরা মৌসুমে আমদানি অব্যাহত থাকা, পণ্যের ন্যায্যমূল্য বেঁধে না দেওয়া এবং সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় লোকসানে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। ন্যূনতম দাম ও আমদানি বন্ধের দাবিতে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন কৃষকেরা।

২৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার সড়কে লবণ ঢেলে দিয়ে লবণের ন্যায্য দাম ও আমদানি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কৃষকেরা। আলুর ন্যায্যমূল্যের দাবিতে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলায় কয়েক দফায় বিক্ষোভ হয়েছে। পণ্যের যৌক্তিক দামের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন পেঁয়াজচাষিরাও।

ভোক্তা পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি লবণ ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হলেও মিল পর্যায়ে (ক্র্যাশিং শেষে আয়োডিনযুক্ত) বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকার কম দামে (১০ টাকা ৪০ পয়সা)। অথচ মাঠপর্যায়ে কৃষক প্রতি কেজি লবণের দাম পাচ্ছেন মাত্র ৪ টাকা।

চকরিয়া উপজেলার লবণচাষি খোরশেদ আলম বলেন, এক কানি (৪০ শতক) জমিতে লবণ চাষ করতে ইজারা ৪০-৪৫ হাজার, মাঠ তৈরিতে ৭ হাজার, সেচ ৫ হাজার, মজুরি ২০ হাজার, পলিথিন বিছানোয় ৩ হাজারসহ মোট ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়।

একই জমিতে উৎপাদিত লবণের পরিমাণ ২০০ মণ। বর্তমানে মাঠপর্যায়ে প্রতিমণ লবণের দাম ২০০ টাকা। সেই হিসাবে এক কানি জমি থেকে উৎপাদিত লবণ বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে ৩৬-৪০ হাজার টাকা।

চট্টগ্রামের লাল মিয়া সল্ট নামের লবণ কারখানার মালিক আসাদ আহমেদ বলেন, মৌসুমেও আমদানি অব্যাহত থাকায় কৃষকেরা লবণের ন্যূনতম দাম পাচ্ছেন না। ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট (শিল্পে ব্যবহারের লবণ) এবং দেশে সংকট হলে লবণ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্টের নামে আমদানি হওয়া বেশির ভাগ লবণ খাবার লবণ হিসেবে ভোক্তাদের কাছে চলে যাচ্ছে। দেশের লবণচাষিদের বাঁচাতে হলে মৌসুমে লবণ আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।

মৌসুমেও লবণ আমদানির প্রমাণ মিলেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যেও। অক্টোবর থেকে পুরোদমে মাঠে লবণ ওঠা শুরু হয়। এর মধ্যেই গত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি– এই চার মাসে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট নাম দিয়ে দেশে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩১৬ টন লবণ আমদানি হয়েছে।

এভাবে মৌসুমেও আমদানি অব্যাহত থাকায় আলু, পেঁয়াজ ও রসুনের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকেরা।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদন মৌসুম শুরুর পরও নভেম্বর-ডিসেম্বর দুই মাসে দেশে ২৪ হাজার ১২২ টন আলু আমদানি হয়েছে। একইভাবে গত চার মাসে ৬৬ হাজার ৬৭ টন পেঁয়াজ এবং ২২ হাজার ৬০৮ টন রসুন আমদানি হয়েছে। ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, দেশে বছরে রসুনের চাহিদা প্রায় ৬ লাখ টন। চাহিদার কাছাকাছি অর্থাৎ ৬ লাখ থেকে সাড়ে ৬ লাখ উৎপাদন হলেও পচে যাওয়া রসুনের হিসাব বাদ দিয়ে প্রকৃত উৎপাদন ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার টন। সেই অনুযায়ী, চাহিদার ১৩ থেকে ২০ শতাংশ রসুন আমদানি করতে হয় বলে মনে করে ট্যারিফ কমিশন।

আমদানিনির্ভরতা কাটিয়ে স্বনির্ভর হতে হলে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। মৌসুমের সময় পেঁয়াজ, রসুনসহ পণ্য আমদানি বন্ধ করতে হবে।বলয় কুমার পোদ্দার ব্যবসায়ী, খাতুনগঞ্জ, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের রেয়াজুদ্দিন বাজারে পাইকারিতে বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকার মধ্যে। আর কৃষক পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়।

৩ মার্চ খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০-৩৫ টাকায়; যা মাঠে ১৫-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ একই বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়।

পাইকারিতে বর্তমানে প্রতি কেজি চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২১৫-২২০ টাকায়। অথচ দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের কাঁচা পণ্য (পেঁয়াজ, রসুন ও আদা) ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিচ মিয়া বলেন, প্রতিবছর মৌসুমে লোকসানে পণ্য বিক্রি করতে হয় কৃষকদের। আমদানি বন্ধ থাকলে এই সময়ে দেশি পেঁয়াজ কমপক্ষে ৫০ টাকা এবং রসুন ১০০ টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু আমদানি পণ্যের চেয়ে অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ ও রসুন। এভাবে লোকসানে পড়ে আগ্রহ হারিয়ে বছর বছর পেঁয়াজ, রসুন ও আদার উৎপাদন কমছে।

খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বলয় কুমার পোদ্দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমদানিনির্ভরতা কাটিয়ে স্বনির্ভর হতে হলে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। মৌসুমের সময় পেঁয়াজ, রসুনসহ পণ্য আমদানি বন্ধ করতে হবে। সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে দেশীয় উদ্যোক্তাদের বাঁচাতে এবং উৎপাদনে আগ্রহী করতে ভোক্তাদের উচিত দেশীয় পণ্য ব্যবহারে সচেতন হওয়া।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, সরবরাহ সংকটের কারণে তিন মাস আগেও প্রতি কেজি আলু কিনতে হয়েছে ৮০ টাকা দামে। অথচ মৌসুমে এসে ৮০ টাকায় ৮ কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে কৃষককে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ৫ টাকায়। যে আলু উৎপাদনে তাঁর খরচ পড়েছে কমপক্ষে ৩০ টাকা। এভাবে কৃষকেরা চাষে আগ্রহ হারানোয় আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ছে বাজার। কৃষককে বাঁচাতে হলে ‘পণ্যের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ, সংরক্ষণ এবং আমদানি-রপ্তানির কৌশল’ নির্ধারণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে (২০২৪-২৫) দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার টন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের একটি ও কক্সবাজারের ৭ উপজেলায় ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৮ হাজার ১২৪ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। গত দুই বছরে রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদিত হয়; যা চাহিদার বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে বার্ষিক আলুর চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ (৫ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর) জমিতে আলু চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৭ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে এবার।

দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। চাহিদার বাড়তি উৎপাদনের পরও একই বছর ভারত থেকে ৭ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ সঠিক পরিচর্যা, সংরক্ষণের অভাবসহ নানা কারণে নষ্ট হয়। ফলে বাড়তি উৎপাদনের পরও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাকের পেছনে বাসের ধাক্কা, নারীসহ আহত ৬

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৫
শ্রীনগরে গতকাল রাতে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে বাসের সামনের অংশ মুচড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
শ্রীনগরে গতকাল রাতে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে বাসের সামনের অংশ মুচড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা লেগে বাসটির নারী যাত্রীসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে জেলার শ্রীনগর উপজেলার ছনবাড়ি এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের মাওয়ামুখী লেনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার গাউস শিকদারের ছেলে নিয়ামত, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার রম্বু খলিফার ছেলে ইয়াছিন, বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার আবেদ আলীর ছেলে হায়দার আলী, একই উপজেলার সোনা মিয়ার ছেলে আমেদ মিয়া, আসাদুজ্জামানের স্ত্রী জুলেখা আক্তার ও মাসুদ মিয়ার ছেলে রিজভী মিয়া।

শ্রীনগরে গতকাল রাতে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে বাসের সামনের অংশ মুচড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
শ্রীনগরে গতকাল রাতে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে বাসের সামনের অংশ মুচড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার দেওয়ান আজাদ হোসেন জানান, আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পরে কয়েকজনের অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়। দুর্ঘটনার কারণে এক্সপ্রেসওয়েতে কিছু সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। তবে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

দুর্ঘটনাকবলিত ‘টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস’ বাসটি হাসাড়া হাইওয়ে থানায় রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ট্রাকটি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাত পেরিয়ে সকাল, শাহবাগ ছাড়েননি হাদি হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভকারীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে আজ শনিবার সকালেও অবস্থান করতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। গতকাল থেকে শুরু হওয়া এই অবরোধে সেখানে রাতভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিক্ষোভকারীরা। সকালেও সেখানে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তাঁরা।

গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইনকিলাব মঞ্চের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থী-জনতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগে এসে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন।

চারদিকে কুয়াশা আর হাড়কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যেও শাহবাগ মোড় আন্দোলনের উত্তাপে সরব। হাদি হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।

জাবের বলেন, ওসমান হাদি হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না তাঁরা। সরকারের উপদেষ্টারা জনগণের সামনে এসে না দাঁড়ানো পর্যন্ত তাঁরা শাহবাগ ছাড়বেন না। হত্যার পরিকল্পনাকারী, হত্যাকারী ও তাঁদের ভারতে পালাতে সহায়তাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাজপথে অবস্থান চালিয়ে যাবেন।

ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে সরকারের আগ্রহ নেই। হত্যার বিচার না হলে যমুনা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।

ওমর বিন হাদি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ওপর চাপ থাকলে বা তাঁকে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা সাহায্য না করলে আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থাকে নিযুক্ত করতে হবে।

শরিফ ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রচার চালাচ্ছিলেন। ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের কিছু পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেল থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তাঁকে মাথায় গুলি করার পর আততায়ীরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর মারা যান তিনি।

এই ঘটনায় গত মঙ্গলবার ‘শহীদি শপথ’ নেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যরা। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ওসমান হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর নতুন নাম ‘শহীদ ওসমান হাদি’

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৬
শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর টোল প্লাজার নামফলকের পাশে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নাম স্থাপন করেন ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর টোল প্লাজার নামফলকের পাশে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নাম স্থাপন করেন ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলার ওপর নির্মিত শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতু উদ্বোধন করা হয় ২০২২ সালে। সে সময় জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের নামে সেতুটির নামকরণ করা হয়। তবে ৫ আগস্টের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সেতু থেকে নাসিম ওসমানের নাম মুছে ফেলা হয়। এবার জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা ওসমান হাদির নামে সেতুটির নামকরণ করেছেন বন্দর এলাকার ছাত্র-জনতা।

শুক্রবার বিকেলে ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্র-জনতা। মিছিলটি বন্দর রেললাইন এলাকা থেকে শুরু হয়ে মদনগঞ্জ এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর টোল প্লাজার নামফলকের পাশে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নাম স্থাপন করেন আন্দোলনকারীরা।

নতুন নামকরণের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই ছাত্র-জনতার এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। আয়োজকদের দাবি, ওসমান হাদিকে স্মরণীয় করে রাখা এবং তাঁর হত্যার বিচার নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আয়োজকদের একজন রেদোয়ান ইসলাম বলেন, ‘হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে আমরা বিক্ষোভ মিছিল করেছি। এরপর সিদ্ধান্ত নিই, তাঁর নাম স্মরণীয় করে রাখতে সেতুর নামকরণ করব। এর আগে ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগী নাসিম ওসমানের নাম মুছে দেওয়া হয়েছে। এবার সেখানে দেশের একজন মহানায়ক হাদি ভাইয়ের নাম স্থাপন করা হলো। শিগগিরই সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই নাম স্থায়ী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় মাদারীপুর অন্ধকারে

মাদারীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় অন্ধকারে ঢেকে গেছে মাদারীপুর জেলা। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাদারীপুর শহরসহ আশপাশের গ্রামাঞ্চলে ঘন কুয়াশা দেখা যায়।

এর আগে দিনভর আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, সূর্যের দেখা মেলেনি। রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি। কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচল করেছে ধীরগতিতে ও সতর্কতার সঙ্গে।

রিকশাচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সাধারণত রাত ১২টা পর্যন্ত রিকশা চালাই। কিন্তু আজ হঠাৎ অনেক কুয়াশা পড়েছে, রাস্তাও ফাঁকা। তাই আগেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’

ডিসি ব্রিজ এলাকার মুদিদোকানি রানা বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখি। আজ কুয়াশা আর শীত বেশি থাকায় রাত সাড়ে ৮টার দিকেই দোকান বন্ধ করেছি।’

মাদারীপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আগামী দুই সপ্তাহ জেলায় শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব থাকতে পারে। এ সময় সাধারণ মানুষকে সতর্কভাবে চলাচলের পরামর্শ দেন তিনি। দুর্ঘটনা এড়াতে দিনের বেলায়ও যানবাহনের হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচলের অনুরোধ জানান এবং মহাসড়কে চলাচলকারী চালকদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকার কথা বলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত