Ajker Patrika

ভরা মৌসুমেও আমদানি, কৃষকের মাথায় হাত

� দেশীয় চার পণ্যের উৎপাদন খরচও উঠছে না।

� ন্যূনতম দাম ও আমদানি বন্ধের দাবিতে কৃষকদের বিক্ষোভ।

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৮: ২৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশীয় পেঁয়াজ, রসুন, আলু ও লবণের ভরা মৌসুম এখন। চলতি মৌসুমে এসব পণ্য উৎপাদন পর্যাপ্ত হওয়ায় এই সময়ে কৃষকের মুখে হাসি ফোটার কথা। কিন্তু লাভ তো দূরে থাক, পণ্যের উৎপাদন খরচও তুলতে না পেরে হতাশ কৃষকেরা।

ভরা মৌসুমে আমদানি অব্যাহত থাকা, পণ্যের ন্যায্যমূল্য বেঁধে না দেওয়া এবং সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় লোকসানে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। ন্যূনতম দাম ও আমদানি বন্ধের দাবিতে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন কৃষকেরা।

২৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার সড়কে লবণ ঢেলে দিয়ে লবণের ন্যায্য দাম ও আমদানি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কৃষকেরা। আলুর ন্যায্যমূল্যের দাবিতে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলায় কয়েক দফায় বিক্ষোভ হয়েছে। পণ্যের যৌক্তিক দামের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন পেঁয়াজচাষিরাও।

ভোক্তা পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি লবণ ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হলেও মিল পর্যায়ে (ক্র্যাশিং শেষে আয়োডিনযুক্ত) বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকার কম দামে (১০ টাকা ৪০ পয়সা)। অথচ মাঠপর্যায়ে কৃষক প্রতি কেজি লবণের দাম পাচ্ছেন মাত্র ৪ টাকা।

চকরিয়া উপজেলার লবণচাষি খোরশেদ আলম বলেন, এক কানি (৪০ শতক) জমিতে লবণ চাষ করতে ইজারা ৪০-৪৫ হাজার, মাঠ তৈরিতে ৭ হাজার, সেচ ৫ হাজার, মজুরি ২০ হাজার, পলিথিন বিছানোয় ৩ হাজারসহ মোট ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়।

একই জমিতে উৎপাদিত লবণের পরিমাণ ২০০ মণ। বর্তমানে মাঠপর্যায়ে প্রতিমণ লবণের দাম ২০০ টাকা। সেই হিসাবে এক কানি জমি থেকে উৎপাদিত লবণ বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে ৩৬-৪০ হাজার টাকা।

চট্টগ্রামের লাল মিয়া সল্ট নামের লবণ কারখানার মালিক আসাদ আহমেদ বলেন, মৌসুমেও আমদানি অব্যাহত থাকায় কৃষকেরা লবণের ন্যূনতম দাম পাচ্ছেন না। ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট (শিল্পে ব্যবহারের লবণ) এবং দেশে সংকট হলে লবণ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্টের নামে আমদানি হওয়া বেশির ভাগ লবণ খাবার লবণ হিসেবে ভোক্তাদের কাছে চলে যাচ্ছে। দেশের লবণচাষিদের বাঁচাতে হলে মৌসুমে লবণ আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।

মৌসুমেও লবণ আমদানির প্রমাণ মিলেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যেও। অক্টোবর থেকে পুরোদমে মাঠে লবণ ওঠা শুরু হয়। এর মধ্যেই গত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি– এই চার মাসে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট নাম দিয়ে দেশে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩১৬ টন লবণ আমদানি হয়েছে।

এভাবে মৌসুমেও আমদানি অব্যাহত থাকায় আলু, পেঁয়াজ ও রসুনের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকেরা।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদন মৌসুম শুরুর পরও নভেম্বর-ডিসেম্বর দুই মাসে দেশে ২৪ হাজার ১২২ টন আলু আমদানি হয়েছে। একইভাবে গত চার মাসে ৬৬ হাজার ৬৭ টন পেঁয়াজ এবং ২২ হাজার ৬০৮ টন রসুন আমদানি হয়েছে। ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, দেশে বছরে রসুনের চাহিদা প্রায় ৬ লাখ টন। চাহিদার কাছাকাছি অর্থাৎ ৬ লাখ থেকে সাড়ে ৬ লাখ উৎপাদন হলেও পচে যাওয়া রসুনের হিসাব বাদ দিয়ে প্রকৃত উৎপাদন ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার টন। সেই অনুযায়ী, চাহিদার ১৩ থেকে ২০ শতাংশ রসুন আমদানি করতে হয় বলে মনে করে ট্যারিফ কমিশন।

আমদানিনির্ভরতা কাটিয়ে স্বনির্ভর হতে হলে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। মৌসুমের সময় পেঁয়াজ, রসুনসহ পণ্য আমদানি বন্ধ করতে হবে।বলয় কুমার পোদ্দার ব্যবসায়ী, খাতুনগঞ্জ, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের রেয়াজুদ্দিন বাজারে পাইকারিতে বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকার মধ্যে। আর কৃষক পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়।

৩ মার্চ খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০-৩৫ টাকায়; যা মাঠে ১৫-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ একই বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়।

পাইকারিতে বর্তমানে প্রতি কেজি চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২১৫-২২০ টাকায়। অথচ দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের কাঁচা পণ্য (পেঁয়াজ, রসুন ও আদা) ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিচ মিয়া বলেন, প্রতিবছর মৌসুমে লোকসানে পণ্য বিক্রি করতে হয় কৃষকদের। আমদানি বন্ধ থাকলে এই সময়ে দেশি পেঁয়াজ কমপক্ষে ৫০ টাকা এবং রসুন ১০০ টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু আমদানি পণ্যের চেয়ে অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ ও রসুন। এভাবে লোকসানে পড়ে আগ্রহ হারিয়ে বছর বছর পেঁয়াজ, রসুন ও আদার উৎপাদন কমছে।

খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বলয় কুমার পোদ্দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমদানিনির্ভরতা কাটিয়ে স্বনির্ভর হতে হলে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। মৌসুমের সময় পেঁয়াজ, রসুনসহ পণ্য আমদানি বন্ধ করতে হবে। সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে দেশীয় উদ্যোক্তাদের বাঁচাতে এবং উৎপাদনে আগ্রহী করতে ভোক্তাদের উচিত দেশীয় পণ্য ব্যবহারে সচেতন হওয়া।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, সরবরাহ সংকটের কারণে তিন মাস আগেও প্রতি কেজি আলু কিনতে হয়েছে ৮০ টাকা দামে। অথচ মৌসুমে এসে ৮০ টাকায় ৮ কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে কৃষককে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ৫ টাকায়। যে আলু উৎপাদনে তাঁর খরচ পড়েছে কমপক্ষে ৩০ টাকা। এভাবে কৃষকেরা চাষে আগ্রহ হারানোয় আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ছে বাজার। কৃষককে বাঁচাতে হলে ‘পণ্যের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ, সংরক্ষণ এবং আমদানি-রপ্তানির কৌশল’ নির্ধারণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে (২০২৪-২৫) দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার টন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের একটি ও কক্সবাজারের ৭ উপজেলায় ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৮ হাজার ১২৪ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। গত দুই বছরে রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদিত হয়; যা চাহিদার বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে বার্ষিক আলুর চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ (৫ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর) জমিতে আলু চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৭ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে এবার।

দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। চাহিদার বাড়তি উৎপাদনের পরও একই বছর ভারত থেকে ৭ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ সঠিক পরিচর্যা, সংরক্ষণের অভাবসহ নানা কারণে নষ্ট হয়। ফলে বাড়তি উৎপাদনের পরও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গলায় রশি পেঁচানো নছিমনচালকের লাশ উদ্ধার

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ডোবায় নছিমনচালকের লাশ পাওয়া যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডোবায় নছিমনচালকের লাশ পাওয়া যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ওমর আলী শেখ (৫০) নামের এক নছিমনচালকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে মোবারকগঞ্জ চিনিকল ফার্মের সড়কের ডোবা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণ, নছিমনচালককে কুপিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত ওমর আলী কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার হাটবেলাটপুর গ্রামের ছাত্তার শেখের ছেলে।

বারোবাজারের ইসমাইল নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে বারোবাজারে শ্রমিকের কাজ করতাম। কিছুদিন আগে ওমর আলী নছিমন কিনেছে। সে বারোবাজারের মাছের ভাড়া টানে। সকালে তার মোবাইলে ফোন দিলে রিসিভ হচ্ছিল না। পরে জানতে পারি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির গলায় ধারালো অস্ত্রের কাটা দাগ রয়েছে। এ ছাড়া রশি দিয়ে তাঁর গলা পেঁচানো। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে কুপিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে ফেলে রেখে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত