Ajker Patrika

মিয়ানমারে অস্থিরতা

রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা আসছে প্রতিদিনই

  • প্রতিদিনই দুর্গম পাহাড়ি পথে ঢুকছে ৩০-৪০ জন রোহিঙ্গা।
  • রাখাইনে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে হত্যা-নিপীড়নের অভিযোগ।
  • নতুন রোহিঙ্গাদের ঠাঁই দিতে জায়গা চেয়ে সরকারকে ইউএনএইচসিআরের চিঠি।
মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ১০ মে ২০২৫, ০৮: ২২
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে দলে দলে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের কোনো না কোনো পথ দিয়ে প্রতিদিনই ৩০-৪০ জন রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটছে। ঢুকে পড়া রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরের বিভিন্ন শেল্টার ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, কোনো না কোনোভাবে প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে জান্তা সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত টাউনশিপগুলোয় হামলা শুরু হয়। হামলার মুখে আবারও রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে।

আরআরআরসি কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১ মে পর্যন্ত নতুন করে আসা রোহিঙ্গার মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজারের মতো রোহিঙ্গার নিবন্ধন শেষ হয়েছে। নিবন্ধনের অপেক্ষায় আছে আরও ৩৫ থেকে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে বড় অংশ এসেছে গত বছরের মে, জুন ও জুলাই মাসে। আশ্রয় নেওয়া এই রোহিঙ্গাদের আবাসনের জন্য জায়গা চেয়ে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছে। তবে সরকার এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।

নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের আবাসনের জন্য উখিয়া ও টেকনাফে কোনো খালি জায়গা নেই জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতি ও বড় রোহিঙ্গা ক্যাম্প কক্সবাজারে। পাহাড়ি জায়গায় অবস্থিত এসব ক্যাম্পে নতুন করে আবাসন দেওয়ার সুযোগ নেই।

যেসব পথে আসছে রোহিঙ্গারা

বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা মিয়ানমারের জল ও স্থলপথের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই রাখাইন প্রদেশের সঙ্গে। ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর এ রাজ্যের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে মংডুসহ ১৪টি টাউনশিপ মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। ইউএনএইচসিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, রাখাইনে সংঘাতের কারণে মংডু ও আশপাশের টাউনশিপগুলোয় চরম খাদ্য ও নিরাপত্তা সংকট চলছে। কোনো অসুস্থ মানুষ চিকিৎসাসেবা কিংবা ওষুধ পাচ্ছে না। এ কারণে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে।

সীমান্তের একাধিক সূত্র বলেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও সাবরাং ইউনিয়নের ২২-২৪টি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন রোহিঙ্গারা দালালের মাধ্যমে ঢুকছে। দালালেরা নতুন আসা রোহিঙ্গাদের টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে পৌঁছে দেয়। কেউ কেউ বিভিন্ন বাসাবাড়িতেও আত্মগোপন করছে।

রাখাইনের মংডু থেকে পরিবার নিয়ে পালিয়ে এসেছেন আবদুল কাদের (৪৫) ও মোহাম্মদ শফি (৫০)। তাঁরা উখিয়ার কুতুপালংয়ের একটি আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছেন। রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁরা বলেন, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের বাড়িছাড়া করতে নির্যাতন চালাচ্ছে। আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে অনেককে ধরে নিয়ে গুলি করেও মারা হচ্ছে।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মো. জুবায়ের বলেন, আরাকান আর্মি জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ রোহিঙ্গা এখনো রাখাইনে আছে। তারা খাদ্য ও নিরাপত্তা-সংকটে পড়েছে।

বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর বরাবর কঠিন নজরদারি থাকায় রোহিঙ্গারা সংঘবদ্ধ পাচারকারীদের সহায়তায় দুর্গম পাহাড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গত চার মাসে নাফ নদী ও সাগরপথ দিয়ে দৃশ্যমান অনুপ্রবেশ ঘটেনি। তবে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।

১২ মে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক কক্সবাজারে

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, সীমান্ত পরিস্থিতি ও মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে আগামী সোমবার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সভা ডাকা হয়েছে। সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ, প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

৫ আগস্টের পর দুর্নীতিবাজদের কোটি টাকায় সীমান্ত পার করে দিয়েছেন রাজনৈতিক এলিটরা: দুদক চেয়ারম্যান

তুরস্কের গোয়েন্দা সহায়তায় যেভাবে ‘দামেস্কের আমির’ হলেন আল–শারা

কোটালীপাড়ায় এক রাতে ২টি এজেন্ট ব্যাংকসহ ৪ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চুরি

সিরাজগঞ্জে ‘মিছিল নিয়ে’ ওয়াজ মাহফিলে জামায়াত নেতা, হামলার অভিযোগ বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‎গৃহকর্মী নিয়োগের পূর্বে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার অনুরোধ ডিএমপি কমিশনারের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ফাইল ছবি
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ফাইল ছবি

‎গৃহকর্মী নিয়োগের পূর্বে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। মঙ্গলবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গৃহকর্মী কর্তৃক চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের একটি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া গৃহকর্মী কর্তৃক অনেক সময় মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও নতুন নয়। সম্মানিত নগরবাসী একটু সচেতন হলে এরূপ অপরাধ প্রতিরোধ করা অনেকাংশে সম্ভব।

‎এমতাবস্থায়, নিরাপত্তার স্বার্থে গৃহকর্মী নিয়োগের পূর্বে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, এক কপি সম্প্রতি তোলা পাসপোর্ট আকারের ছবি ও তার পরিচয় নিশ্চিতের জন্য কমপক্ষে দুজন শনাক্তকারীর নাম-ঠিকানা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য সম্মানিত নগরবাসীকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এনডিসি।

‎এ ছাড়া ভাড়াটে নিবন্ধন ফর্ম যথাযথভাবে পূরণপূর্বক নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহে পুলিশকে সহযোগিতার জন্যও পুনরায় অনুরোধ করা হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

৫ আগস্টের পর দুর্নীতিবাজদের কোটি টাকায় সীমান্ত পার করে দিয়েছেন রাজনৈতিক এলিটরা: দুদক চেয়ারম্যান

তুরস্কের গোয়েন্দা সহায়তায় যেভাবে ‘দামেস্কের আমির’ হলেন আল–শারা

কোটালীপাড়ায় এক রাতে ২টি এজেন্ট ব্যাংকসহ ৪ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চুরি

সিরাজগঞ্জে ‘মিছিল নিয়ে’ ওয়াজ মাহফিলে জামায়াত নেতা, হামলার অভিযোগ বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফেনীতে থানার পাশে দীঘিতে মিলল অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ

ফেনী প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফেনী শহরের রাজাঝির দীঘি থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির আনুমানিক বয়স ৪৫ বছর। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে মডেল থানাসংলগ্ন দীঘির পশ্চিম পাশ থেকে এ মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রাত পৌনে ৯টার দিকে দীঘির নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এক ব্যক্তি অজ্ঞাত এ মরদেহ দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় এক ঘণ্টা পর মরদেহ উদ্ধার করে।  

আবু কাউছার নিপু নামের দীঘির নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এক ব্যক্তি বলেন, আমি দীঘি দেখাশোনার কাজ করি। প্রতিদিনের মতো রাতে দিঘির পশ্চিম পাশে হাঁটার সময় লাইটের আলোতে পানিতে মানুষের মাথার মতো কিছু দেখতে পাই। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।  

ফেনী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুল মজিদ বলেন, মরদেহটি পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় ছিল। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।  

এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সজল কান্তি দাশ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় মরদেহ উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। তার পরনে শার্ট, লুঙ্গি ও মাফলার ছিল। কয়েক দিন আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছি। পরিচয় শনাক্তে পিবিআই কাজ করছে। মরদেহ এখানে কীভাবে এসেছে এবং মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পুলিশ কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

৫ আগস্টের পর দুর্নীতিবাজদের কোটি টাকায় সীমান্ত পার করে দিয়েছেন রাজনৈতিক এলিটরা: দুদক চেয়ারম্যান

তুরস্কের গোয়েন্দা সহায়তায় যেভাবে ‘দামেস্কের আমির’ হলেন আল–শারা

কোটালীপাড়ায় এক রাতে ২টি এজেন্ট ব্যাংকসহ ৪ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চুরি

সিরাজগঞ্জে ‘মিছিল নিয়ে’ ওয়াজ মাহফিলে জামায়াত নেতা, হামলার অভিযোগ বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

  • মিথ্যা পরিচয়ে কাজ নিয়েছিলেন তরুণী। গ্রেপ্তার করা যায়নি।
  • বাসা থেকে খোয়া গেছে ফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, টাকা।
  • দুজনের মরদেহ নাটোরের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে নিজেদের ফ্ল্যাটে মা ও মেয়ে হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন ‘গৃহকর্মী আয়েশাকে’ শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁর প্রকৃত নাম-পরিচয় ও তাঁর স্বামীর নামও জেনেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত ওই গৃহকর্মীকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ওই তরুণীকে শনাক্ত ও নাম-পরিচয় বের করা হলেও তাঁকে গ্রেপ্তারের পর তা প্রকাশ করা হবে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কারণ জানা যাবে।

গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিয়াকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। গতকাল তাঁদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর এক নারী স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চার দিন আগে আয়েশা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেওয়া তরুণী (২০) এই জোড়া খুনে জড়িত বলে সন্দেহ স্বজনদের। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক।

‘আয়েশা’কে গ্রেপ্তার এবং এই জোড়া খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটনে তদন্তে নেমেছে পুলিশ, র‍্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গৃহকর্মী তাঁর প্রকৃত নাম ও ঠিকানা দেননি। তাঁকে কেউ চিনতেও পারছিলেন না। ঘটনার সময় তাঁর সঙ্গে কোনো মোবাইল ফোনও ছিল না। বাসা থেকে তিনি যে ফোন নিয়ে গেছেন, সেটাও বের হয়েই বন্ধ করে দিয়েছেন। আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল না থাকায় ওই বাড়ির গেট থেকে বের হয়ে রিকশা নিয়ে কোনদিকে গেছেন, তা নিশ্চিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

সূত্র বলেছে, ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে ওই তরুণীর চার দিনের মোবাইল ফোনে কোনো যোগাযোগ ছিল না। সব সময় বোরকা পরে থাকায় ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরায়ও তাঁর মুখ স্পষ্টভাবে ধরা পড়েনি। ফলে তাঁকে শনাক্তে ম্যানুয়ালি কাজ করতে হয়। সম্ভাব্য সব ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করে তাঁকে শনাক্ত করা হয়।

এর আগে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে বলেন, গৃহকর্মীর নাম-ঠিকানা ও কোনো মোবাইল ফোন না থাকায় পরিচয় জানা যাচ্ছে না। দ্রুতই তাঁকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

জোড়া হত্যার ঘটনায় সোমবার রাতে ‘গৃহকর্মী আয়েশা’কে একমাত্র আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত লায়লা আফরোজের স্বামী স্কুলশিক্ষক আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলার এজাহারে বলা হয়, সোমবার সকাল ৭টার দিকে তিনি উত্তরায় স্কুলে চলে যান। সেখানে থাকা অবস্থায় স্ত্রীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তিনি বাসায় ফিরে স্ত্রী ও মেয়ের রক্তে ভেজা লাশ দেখেন। ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, আয়েশা সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে কাজ করার জন্য বাসায় আসেন এবং সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিস নিয়ে যান।

বাদী এজাহারে আরও বলেন, অজ্ঞাত কারণে গৃহকর্মী আয়েশা তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি অথবা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেছেন।

সুরতহাল প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, লায়লা আফরোজের শরীরে প্রায় ৩০টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁর মেয়ে নাফিসার শরীরে ৪টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন বলেন, হত্যাকাণ্ডের কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। পুলিশ অভিযুক্তকে শনাক্তের চেষ্টা করছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে লায়লা ও তাঁর মেয়ের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সকালে তাঁদের গ্রামের বাড়ি নাটোর পৌরসভার দক্ষিণ বড়গাছায় নেওয়া হয়। জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের মরদেহ দাফন করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

৫ আগস্টের পর দুর্নীতিবাজদের কোটি টাকায় সীমান্ত পার করে দিয়েছেন রাজনৈতিক এলিটরা: দুদক চেয়ারম্যান

তুরস্কের গোয়েন্দা সহায়তায় যেভাবে ‘দামেস্কের আমির’ হলেন আল–শারা

কোটালীপাড়ায় এক রাতে ২টি এজেন্ট ব্যাংকসহ ৪ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চুরি

সিরাজগঞ্জে ‘মিছিল নিয়ে’ ওয়াজ মাহফিলে জামায়াত নেতা, হামলার অভিযোগ বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্রাকসু নির্বাচন: মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে অফিসে তালা, কর্মকর্তারা লাপাত্তা

বেরোবি সংবাদদাতা
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৮
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (ব্রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তফসিল অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন থাকলেও সকাল থেকে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় বন্ধ ছিল। এতে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেল ব্রাকসু নির্বাচন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার মনোনয়নপত্র জমা নিচ্ছেন না বা নির্বাচন কমিশনার কার্যালয়ে কেন নেই, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে আপনারা নির্বাচন কমিশনারদের জিজ্ঞেস করলে সঠিক তথ্য পাবেন।’

এর আগে সকাল থেকে কমিশনের কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কর্মকর্তাদের না দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এটি পরিকল্পিত অবহেলা, যা পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে কমিশনের অনুপস্থিতি নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন করার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যর্থতার নগ্ন উদাহরণ। এতে নির্বাচন নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

কমিশনে আসা প্রার্থী মো. শিবলী সাদিক বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত শেষ দিনে সকাল থেকে কার্যালয়ে আছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কেউ নেই। মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে কমিশনের অনুপস্থিতি একটি বড় প্রশাসনিক ব্যর্থতা। এতে পুরো নির্বাচনী কাঠামো দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’

ভিপি প্রার্থী আহমাদুল হক আলবীর বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে দেখি অফিসই বন্ধ। আজ শেষ দিন জানার পরও সকাল থেকে আমরা এখানে বসে আছি। কিন্তু কমিশনের কেউ নেই। এতে আমাদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে কথা বলতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. শাহজামান, কমিশনার সহযোগী অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার সরকার ও সহযোগী অধ্যাপক মো. হাসান আলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া না পাওয়ায় তাঁদের বক্তব্য জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, ১ ডিসেম্বর শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অসংগতি থাকার কারণ দেখিয়ে তফসিল স্থগিত করে ব্রাকসু নির্বাচন কমিশন। পরে ৩ ডিসেম্বর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নতুন তফসিল ঘোষণা করা হয়।

তফসিল অনুযায়ী ৮ ও ৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বিতরণ ও দাখিল (ডোপ টেস্টের রিপোর্টসহ), ১০ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ, ১১ ডিসেম্বর প্রাথমিক তালিকা সম্পর্কে প্রার্থীদের আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি এবং ২৪ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

৫ আগস্টের পর দুর্নীতিবাজদের কোটি টাকায় সীমান্ত পার করে দিয়েছেন রাজনৈতিক এলিটরা: দুদক চেয়ারম্যান

তুরস্কের গোয়েন্দা সহায়তায় যেভাবে ‘দামেস্কের আমির’ হলেন আল–শারা

কোটালীপাড়ায় এক রাতে ২টি এজেন্ট ব্যাংকসহ ৪ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চুরি

সিরাজগঞ্জে ‘মিছিল নিয়ে’ ওয়াজ মাহফিলে জামায়াত নেতা, হামলার অভিযোগ বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত