Ajker Patrika

২০ বছরে এমন ক্রেতাশূন্য বাজার দেখেননি রুবেল

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
২০ বছরে এমন ক্রেতাশূন্য বাজার দেখেননি রুবেল

মো. রুবেল আলী। তিনি মেসার্স ব্রয়লার হাউসের মালিক। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ব্যবসা করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তাঁর দোকানে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতা শূন্য দোকানে অন্য তিনজন কর্মচারীর সঙ্গে টুলে বসে গল্প করছেন। তার দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই এগিয়ে এসে প্রতিবেদককে জিজ্ঞেস করেন– ‘কি নিবেন ভাই।’ গণমাধ্যম কর্মী পরিচয় দিতেই হতাশ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।

পরে ডেকে দোকানের সামনেই দাঁড়িয়ে রুবেল আলীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। রুবেল আলী বলেন, ‘দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে দোকান দিয়ে ব্যবসা করে আসছি। দোকানে রয়েছে তিনজন কর্মচারী। বেচাবিক্রি না হওয়ায় দোকান এবং কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারছি না ঠিকমতো। একই অবস্থা পাশের মুরগি দোকানদার আশরাফুল ইসলামেরও।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের সবচেয়ে বড় মুরগির বাজার হল-নিউ মার্কেট এলাকায়। সেখানে অর্ধশত দোকান রয়েছে। তাঁরা সবাই পাবনা, রাজশাহী, কক্সবাজার, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে বিভিন্ন জাতের মুরগি এনে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করে থাকেন। সব রকম মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় বেচা বিক্রিও কমে গেছে একেবারেই। ফলে এক রকম মানবেতর জীবনযাপন করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন বাজার নিয়ন্ত্রণ না হলে সামনে রমজানে হাঁড়িতে মাংস তুলতে পারবে না সাধারণ মানুষ।

বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে লেয়ার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকা, প্যারেস বিক্রি হয়েছে ২৩০ টাকায়, সাদা লেয়ার ২৬০ টাকায় এবং দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৫৫০ টাকায়। অপরদিকে গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে সাড়ে ৭০০ টাকায়। এসব মাংসে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১২৫ টাকার ওপরে।

এ ছাড়াও চাল, ডাল, চিনি, ডিম, আটা-ময়দা, সবজিসহ প্রায় সবগুলো নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এতে চাপে পড়েছেন ক্রেতারা। এ ছাড়া একের পর এক পণ্য যুক্ত হচ্ছে দাম বৃদ্ধির তালিকায়। আর দুই সপ্তাহ পরে শুরু হবে রমজান মাস। এমন পরিস্থিতিতে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় মানুষ। তারা বলছেন, এখনই দ্রব্যমূল্যের এত দাম, রমজানে মাসে কি অবস্থা হবে সেটাই বড় প্রশ্ন। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষকে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউমার্কেট বাজারে ক্রেতাশূন্য মুরগির দোকান। ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলাচাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পুরোনো বাজার, নিউমার্কেট বাজারসহ অন্যান্য বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সব জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি আটাশ চালের দাম ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়, মিনিকেট ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা কেজি, মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ১২০ টাকা। পোলাও চাল ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা কেজি, ৭৫ টাকা কেজির চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১২ টাকা কেজি, প্রতি কেজি আলুতে দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা কেজি, এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ২৫ থেকে ২৬ টাকা, ১২০ টাকার শজনে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, ফুলকপি ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি। শুধু মাছের বাজার অপরিবর্তিত রয়েছে।

নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারে সবজি বিক্রেতা হাইউল ইসলাম বলেন, সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বেড়েছে সব পণ্যের। মামুনুর রশিদ নামে একজন ক্রেতা বলেন, চাল, ডাল, মুরগি, মাংস ও ডিম থেকে শুরু করে এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি। প্রতিবছর রমজান আসার এক মাস আগে এভাবে দাম বাড়ানো রীতিতে পরিণত হয়েছে। সংসার চালাতে বাজার খরচেই সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে প্রশাসনের উচিত এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে ব্রয়লার মুরগি, মাংস, ডিমসহ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে খামারি পর্যায়ে খোঁজ নিয়েছি। ফিড, বাচ্চা ও পরিবহন খরচের জন্য ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য জেলা পর্যায়ে তেমন কোনো সিন্ডিকেট নেই। রমজানে কোনো সিন্ডিকেট যাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছি। আগামী ১৩ মার্চ জেলা বাজার মনিটরিং কমিটির সভা রয়েছে, সেখান থেকে বাজার তদারকির বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা আসবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, রাতে তীব্র শীত—দিনে ঝলমলে রোদ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
পঞ্চগড় সদর উপজেলা তালমা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় সদর উপজেলা তালমা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে টানা পাঁচ দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাতের কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়লেও দিনে ঝলমলে রোদে স্বস্তি পাচ্ছেন মানুষ। তবে ভোর ও রাতে শীতের দাপটে জনজীবন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার, যা শীতের অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশাহীন ভোরে সূর্যের ঝলমলে আলোয় প্রকৃতি স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে। রোদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্যও লক্ষ্য করা গেছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের তথ্যে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে তাপমাত্রায় ওঠানামা দেখা গেছে। আজ সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে রোববার ও শনিবার ৯ দশমিক ৩, শুক্রবার ৯ দশমিক ৫, বৃহস্পতিবার ৮ দশমিক ৯, বুধবার ও মঙ্গলবার ১০ দশমিক ৭ এবং আগের সোমবার ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। গতকাল রোববার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংজ্ঞা অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি হলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। সে হিসেবে বর্তমানে তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, কয়েক দিনে জেলার তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হচ্ছে। পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। রাত ও ভোরে তাপমাত্রা আরও কমে শীতের দাপট বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদানে শান্তিরক্ষী মিশনে হামলায় আহত লে. কর্নেল খালেকুজ্জামান, উদ্বেগে পরিবার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আহত লে. কর্নেল খালেকুজ্জামানের বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহত লে. কর্নেল খালেকুজ্জামানের বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সন্ত্রাসী হামলায় আহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল খালেকুজ্জামানের পরিবার দিন কাটাচ্ছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায়। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের ঈদগাহ পাড়ায়।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেন। এর আগে তিনি বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার (সিও) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) ছবি প্রকাশের পর বিষয়টি জানতে পারে পরিবার। এর পর থেকেই স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।

আহত সেনা কর্মকর্তার বড় বোন শামীমা আক্তার মোবাইল ফোনে জানান, সন্ত্রাসী হামলায় স্প্লিন্টারের আঘাতে খালেকুজ্জামানের বাঁ হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাঁর অবস্থা গুরুতর নয়। ঘটনার পরপরই হেলিকপ্টারে করে তাঁকে আবি শহরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। পরিবারের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, লে. কর্নেল খালেকুজ্জামান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তাঁর বাবা খন্দকার আক্তারুজ্জামান (মৃত)। পরিবারের সদস্যরা বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বসবাস করেন।

রোববার বিকেল ৪টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের ঈদগাহ পাড়ায় খালেকুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে মূল ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। এ সময় পাশের বাড়িতে বসবাসরত তাঁর চাচা ও খালাতো বোনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, খালেকুজ্জামানের মা বর্তমানে শহরের গোশালা রোড এলাকায় থাকেন। তবে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। মোবাইল ফোনে শুধু জানান, ছেলের আহত হওয়ার খবর তিনি পেয়েছেন।

খালেকুজ্জামানের খালাতো বোন গুলশান আরা হাসান বলেন, ‘খালেকুজ্জামান আমাদের সামনে মানুষ হয়েছে। খুব ভালো ছেলে। শুনেছি শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। দোয়া করি, সে যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।’

চাচা খন্দকার আসাদুজ্জামান খোকন অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘খালেকুজ্জামান আমার মেজো ভাইয়ের ছেলে। শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। সেখানে তার কয়েকজন সহকর্মী নিহত হয়েছেন বলে শুনেছি। সে নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, খালেকুজ্জামান বিবাহিত এবং তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যমুনার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে আব্দুল রাজ্জাক দম্পতি

আব্দুল্লাহ আল মারুফ, সিরাজগঞ্জ
যমুনার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে অন্যের দেওয়া এই ডেরাঘরে আশ্রয় নিয়েছেন আব্দুল রাজ্জাক দম্পতি। ছবি: আজকের পত্রিকা
যমুনার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে অন্যের দেওয়া এই ডেরাঘরে আশ্রয় নিয়েছেন আব্দুল রাজ্জাক দম্পতি। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাদা দাড়িতে অর্ধেক মেহেদি, কপালে গভীর চিন্তার ভাঁজ। ডান পায়ে ফোঁড়ার// কারণে বাঁধা ব্যান্ডেজ। কাঠের টুলে বসে থাকা মানুষটির দিকে তাকালে বোঝার উপায় নেই—মাত্র এক বছর আগেও তিনি ছিলেন সাড়ে চার বিঘা আবাদি জমির মালিক।

৬৬ বছর বয়সী এই বৃদ্ধের নাম আব্দুল রাজ্জাক। স্ত্রী মর্জিনা বেগমের বয়স ৫৫। চার ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে একসময় ভালোই চলছিল তাঁদের সংসার। জমিতে বছরে বিভিন্ন সময়ে গম, ভুট্টা, খেসারি, কালাই ও বাদামের চাষ হতো। পরিশ্রম করেই চলত জীবন। তবে হঠাৎ করেই সবকিছু বদলে দেয় যমুনা নদীর ভাঙন।

ভিটেবাড়ি ও ফসলি জমি একে একে নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় এখন আব্দুল রাজ্জাক দম্পতি কার্যত আশ্রয়হীন। একসময় যাঁর নিজের জমি ছিল, আজ তিনি অন্যের দেওয়া সামান্য জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন। বন, বস্তার চাটাই আর পলিথিনে মোড়ানো ছোট একটি ঘরই তাঁদের বর্তমান ঠিকানা। আব্দুল রাজ্জাক সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াখোলা ইউনিয়নের দোরতা এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওই এলাকার মৃত রহিজ তালুকদারের ছেলে।

শনিবার দুপুর গড়িয়ে বিকেলে সিরাজগঞ্জ ক্রসবার এলাকায় প্লাস্টিকের টুলে বসে কথা বলছিলেন আব্দুল রাজ্জাক। তিনি জানান, তাঁর দাদার প্রায় ২৪ বিঘা জমি ছিল। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি পান সাড়ে চার বিঘা। গত বছরেও সেই জমিতে গম, ভুট্টা, কালাইসহ নানা ফসল আবাদ করেছিলেন। ‘বুড়া-বুড়ির ভালোই চলছিল,’ বলেন তিনি।

সন্তানদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কিছুক্ষণ নীরব থাকেন আব্দুল রাজ্জাক। এরপর ধীর কণ্ঠে বলেন, ‘ওদের নিজেদেরই খুব কষ্ট। আমাদের দেখবে কীভাবে?’

বর্তমানে ফুফাতো ভাইয়ের জমির ওপর কোনোমতে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। শীত এলে দুর্ভোগ আরও বাড়ে। আয়ের একমাত্র সম্বল পাঁচটি গরু। তবে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে এখন বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারেন না তিনি।

আব্দুল রাজ্জাক বলেন, ‘তোমার চাচি যমুনার চরে গিয়ে গরুর জন্য ঘাস কেটে আনে। আর অন্যদের সামান্য সহযোগিতা আর মেয়েরা মাঝে মাঝে যা দেয়, তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চলে।’

কথার একপর্যায়ে তাঁর কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। শেষবারের মতো বলেন, ‘আমাকে যদি কেউ একটা ঘর আর মাসে মাসে একটু খাবার বা কিছু টাকার ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে সারা জীবন দোয়া করতাম।’

যমুনার ভাঙনে হারিয়ে যাওয়া অসংখ্য জীবনের ভিড়ে আব্দুল রাজ্জাক ও মর্জিনা বেগমের গল্পটি শুধু একটি উদাহরণ—নদীভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষের নীরব দীর্ঘশ্বাসের গল্প।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনার পূর্ব রূপসায় যুবককে গুলি করে হত্যা

খুলনা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

খুলনার পূর্ব রূপসায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সাগর শেখ (৩৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত ১১টার দিকে রূপসা সেতুর পূর্বপাশে জাপুসা চৌরাস্তা সিএনজি স্টেশনের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক গ্রিন বাংলা আবাসিকের পেছনের বাসিন্দা ফয়েক শেখের ছেলে। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রূপসা থানার এসআই সৌরভ দাশ।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সাগর বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে রাত ১১টায় কয়েকজন যুবক তার গতি রোধ করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। একটি গুলি তার মাথায় এবং অপরটি তার হাঁটুতে লাগে। গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রূপসা থানার এএসআই গৌতম বলেন, গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা আ. রহমান রাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানায়। পরে ৯৯৯ থেকে আমাদের ফোন দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়।

রূপসা থানার এসআই সৌরভ দাশ বলেন, ‘রাতে জাপুসা এলাকায় ডিউটি করছিলাম। থানা থেকে ফোন আসলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিষয়টি জানার চেষ্টা করি। পরে জানতে পারলাম তারা এখানে জায়গা কিনে নতুন বাড়ি করেছে।’ তবে কারা এবং কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তার প্রকৃত কারণ তিনি বলতে পারেনি।

রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ. রাজ্জাক মীর বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। খুনিদের গ্রেপ্তারে আশপাশের এলাকায় অভিযান শুরু হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত