Ajker Patrika

মুলাদীতে সাত বছর আগের খুনের জেরে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ও মুলাদী প্রতিনিধি
মুলাদীতে সাত বছর আগের খুনের জেরে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা

বরিশালের মুলাদী, মাদারীপুরের কালকিনি ও শরিয়তপুরের ঘোসাইরহাট সীমান্ত এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। গতকাল সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের উত্তর পশ্চিম বালিয়াতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় পুলিশসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। হামলার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন আরও দুজন। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরবর্তী সংঘর্ষ এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন সফিপুর ইউনিয়নের উত্তর পশ্চিম বালিয়াতলী গ্রামের আলমগীর কবিরাজ (৫০) এবং বাটামারা ইউনিয়নের পূর্ব তয়কা গ্রামের হেলাল ব্যাপারী (৩২)। পুলিশের উপস্থিতিতে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁদের হত্যা করেছে বলে পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন।

এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের পর হেলাল ব্যাপারীর ভাই কামাল ব্যাপারী এবং তয়কা গ্রামের মোতালেব হোসেনের ছেলে মমিন হোসেন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনেরা।

বরিশালের মুলাদীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হামলায় নিহতদের স্বজনদের আহাজারিখোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭ বছর আগে সংঘটিত হত্যার জেরে সোমবার রাতে এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তুষার কুমার মণ্ডল বলেন, হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইউপি সদস্য আলম ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।

সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল উত্তর পশ্চিম বালিয়াতলী পরিদর্শন করে দেখা গেছে, নিহত আলমগীর পরিবারের স্বজনেরা বিলাপ করছেন। আশপাশের প্রতিবেশীরা অবস্থান করছিলেন। গোটা এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। একই সময় মুলাদী থানা-পুলিশ পাশের জাগরিন বাজারে অবস্থান করেন। 

নিহত আলমগীরের স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানান, ২০১৬ সালে একটি হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পরে আলমগীর কবিরাজ এলাকা ছেড়ে চলে যান। গত মার্চে তিনি এলাকায় ফেরেন। এরপর থেকে উত্তর বালিয়াতলী গ্রামের দাদন হাওলাদার ও তাঁদের লোকজন বিভিন্ন হুমকি দেন। এর মধ্যে কয়েক দিন আগে পাশের তয়কা-টুমচর গ্রামের আকন গ্রুপ ও হাজি গ্রুপের মধ্যে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আলমগীর কবিরাজ আকন গ্রুপের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় হাজি গ্রুপের আলম ব্যাপারী ও তাদের লোকজন ক্ষিপ্ত হন।

রাবেয়া বেগম আরও জানান, আলম ব্যাপারী সোমবার ২-৩টি ট্রলারে করে বহিরাগত লোক নিয়ে তয়কা-টুমচর এলাকায় আসেন। তাদের সঙ্গে উত্তর বালিয়াতলী গ্রামের দাদন হাওলাদারের লোকজন যুক্ত হয়। সংঘর্ষের আশঙ্কায় বিষয়টি থানা-পুলিশকে জানানো হয়। সোমবার রাত ৮টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে আলম ব্যাপারী, দাদন হাওলাদারে ছেলে কাজল, ইয়াকুব, মৃত আনিচ হাওলাদারের ছেলে নয়ন, সজল, আলমগীর হাওলাদারের ছেলে মিলন ও রবিনসহ অর্ধশত লোক দেশীয় অস্ত্র ও হাতবোমা নিয়ে আলমগীর কবিরাজ, কামাল ব্যাপারী ও হেলাল ব্যাপারীদের ওপর হামলা চালায়।

বরিশালের মুলাদীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হামলায় দুজন নিহত হওয়ার পর পুলিশের অবস্থানপ্রাণভয়ে আলমগীর কবিরাজ দৌড়ে নিজের বাড়িতে পাশের সমীর কবিরাজের লাকড়ির ঘরে খড়ের গাঁদায় লুকান এবং হেলাল ব্যাপারী সমীর কবিরাজের ঘরের মধ্যে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা সেখানে পৌঁছালে সমীর কবিরাজের স্ত্রী হেলাল ব্যাপারীকে বের করে দিলে তাঁকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। এ ছাড়া লাকড়ির ঘরের খড়ের গাঁদার মধ্যে আলমগীর কবিরাজকে টেটা ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় পুলিশ আশপাশেই অবস্থান করছিল। পরে মঙ্গলবার ভোরে পুলিশ আলমগীর এবং হেলালের লাশ উদ্ধার করেছে।

এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ঘটনার পর জাগরনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনার পর অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া থানা-পুলিশ, ফাঁড়ি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ এলাকায় অবস্থান করছেন।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তয়কা-টুমচর ও বালিয়াতলী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছিল। সোমবারের ঘটনায় পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধ অভিযোগ থাকলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ পেলে মামলা এবং দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।’ 

যে কারণে হত্যাকাণ্ড
এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দিনদুপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে উত্তর বালিয়াতলী গ্রামের আনিচ হাওলাদারকে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডে আলমগীর কবিরাজ ও তাঁর লোকজন নেতৃত্ব দিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনায় আনিচ হাওলাদারের ভাই দাদন হাওলাদার বাদী হয়ে আলমগীর কবিরাজ, হেলাল ব্যাপারী, কামাল ব্যাপারীসহ ৫০ জনকে আসামি করে মামলা করে। মামলার পর থেকে আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন।

চলতি বছর মার্চে আলমগীর কবিরাজ লোকজন নিয়ে এলাকায় ফিরে আসলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ ছাড়া তয়কা-টুমচর এলাকায় আকন ও হাজি গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বে একাধিকবার হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আলমগীর কবিরাজ আকন গ্রুপের পক্ষে অবস্থান নিয়ে হাজি গ্রুপের আলম ব্যাপারী এবং রুবেল শাহর বাড়িতে হামলা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদকে চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ার ৬ উপজেলা: ২১৩ ভাটার ১৯৬টিই অবৈধ

  • কৃষিজমিতে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ
  • প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে এসব ভাটা, দাবি স্থানীয়দের
  • পর্যায়ক্রমে সব ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে: কর্মকর্তা
দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া 
অবৈধভাবে গড়ে ওঠা একটি ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য রাখা কাঠ। সম্প্রতি কুষ্টিয়ার একটি উপজেলায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
অবৈধভাবে গড়ে ওঠা একটি ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য রাখা কাঠ। সম্প্রতি কুষ্টিয়ার একটি উপজেলায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলায় মোট ইটভাটা ২১৩টি। এর মধ্যে ছাড়পত্র নিয়ে চালানো হচ্ছে মাত্র ১৭টি। বাকি ১৯৬টিই চলছে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, যেসব ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই, সেগুলোর মালিকেরা প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে ভাটা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া কৃষিজমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোয় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, যা জনজীবন ও কৃষির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বৈধ ইটভাটার মধ্যে ভেড়ামারা উপজেলায় ৩টি, দৌলতপুরে ১টি, কুমারখালীতে ৯টি এবং খোকসা উপজেলায় ৪টি রয়েছে। এসব ইটভাটার মধ্যে ২টি অটো ব্রিকস এবং বাকি ১৫টি জিগ-জ্যাগ। কুষ্টিয়া সদর এবং মিরপুর উপজেলায় বৈধ কোনো ইটভাটা নেই। অবৈধ ১৯৬টি ইটভাটার মধ্যে ১টি অটো, ৪২টি জিগ-জ্যাগ, ২৯টি ড্রাম চিমনি ও ১২৪টি উচ্চতর পাকা ফিক্সড চিমনি।

এদিকে অবৈধ ২১টি ইটভাটার মালিক হাইকোর্টে রিটের কারণে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে না বলে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র নিশ্চিত করেছে।

স্থানীয়দের দাবি, সরকারি আইনে কৃষিজমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও কমপক্ষে প্রতিটি ইটভাটার জন্য তিন-চার একর কৃষিজমি নষ্ট করে ভাটা স্থাপন করেছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আইনের ফাঁকফোকর ডিঙিয়ে জেলায় গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ ইটভাটা। প্রতিবছরের মতো এবারও চলতি মৌসুমের শুরুতেই কৃষিজমি ও নদীর পলি মাটি কেটে ইটভাটাগুলোতে প্রস্তুত করা হচ্ছে নতুন ইট। এতে কৃষিজমি হ্রাস ও উদ্বেগজনকভাবে কমছে খাদ্যশস্য উৎপাদন।

জানা গেছে, ভাটার লাইসেন্স পেতে প্রস্তাবিত আবেদনের সঙ্গে ইট তৈরিতে মাটির উৎস উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে হলফনামা দাখিলের বাধ্যতামূলক শর্ত থাকলেও ভাটার মালিকদের অধিকাংশই তা মানছেন না। ফলে বেআইনিভাবে কৃষিজমি ও নদী তীরের পলি মাটি কেটে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইট।

কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইটভাটার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিজমি। এ ছাড়া কাঠ পুড়িয়ে উজাড় করা হচ্ছে ফলদ-বনজ সম্পদ। ইটভাটার নির্গত ধোঁয়া-ছাই ফসলের ক্ষতি, পরিবেশদূষণসহ জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করছে চরমভাবে।’

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন বৈধ ভাটামালিক বলেন, ‘ইটভাটা মালিক সমিতির শক্তিশালী সিন্ডিকেটের প্রভাব, অর্থবিত্ত ও তদবিরে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা অবৈধ ভাটা উচ্ছেদে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। এ ছাড়া কতিপয় ভাটার মালিক উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে সৃষ্টি করেছেন আইনি প্রতিবন্ধকতা। প্রতিবছর কিছুসংখ্যক ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরে অদৃশ্য কারণে তা আর বেশি দূর এগোয় না।

কুষ্টিয়া ইটভাটা মালিক সমিতি একাংশের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলী বলেন, ‘আমাদের নিয়ন্ত্রণে ৭৩ ইটভাটা রয়েছে। ৮ থেকে ৯টা বাদে সবাই কয়লা ব্যবহার করে।’

পরিবেশের ছাড়পত্র আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কারও পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। যদি তা-ই হয়, তাহলে সবাই অবৈধ। আমরা নিয়মিত সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমল থেকেই বন্ধ রয়েছে।’

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোতেও অভিযান চালানো হবে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে সব ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদকে চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লালমনিরহাটের ৩ আসন: জাপার দুর্গে বিভক্ত বিএনপি

  • তিন আসনের দুটিতেই দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি
  • বিএনপির বিবাদের সুবিধা পেতে পারে জামায়াত
  • তৎপর জাপা, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন
খোরশেদ আলম সাগর, লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের ৩ আসন: জাপার দুর্গে বিভক্ত বিএনপি

একসময় জাতীয় পার্টির (জাপা) দুর্গ হিসেবে পরিচিত লালমনিরহাটে এবার দৃশ্যত ভোটের মাঠে বড় শক্তি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। দুই দলই জাপার আধিপত্য ভাঙতে মরিয়া। তবে তিন আসনের দুটিতেই বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিদ্রোহীরা। বিএনপির এই বিবাদের সুবিধা পেতে পারে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি-জামায়াতের বাইরে জাতীয় পার্টি, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসের মতো দলগুলোও ভোটের মাঠে তৎপর রয়েছে।

লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতীবান্ধা) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান। তিনি এই অঞ্চলের মূল ইস্যু হিসেবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে সোচ্চার। তবে তাঁর প্রাথমিক মনোনয়নে খুশি নয় দলের আরেক নেতা সাহেদুজ্জামান সরকার কোয়েলের অনুসারীরা। শেষ পর্যন্ত সাহেদুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তা হাসান রাজীব প্রধানের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট আনোয়ারুল ইসলাম রাজু। ইতিপূর্বে করোনা ও বন্যার সময়ে মানুষের পাশে থাকায় এলাকায় তিনি পরিচিত মুখ। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বিরোধে বিএনপির ভোট ভাগাভাগি হলে সেটি তাঁকে বাড়তি সুবিধা এনে দেবে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে পারেন মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ। এবি পার্টির মনোনয়ন পেতে পারেন আবু রাইয়ান আসআরী রচি। এ ছাড়া ভোটের মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের ফজলুল করীম শাহারীয়ার, খেলাফত মজলিসের আবুল কাশেম। নানান রকম সামাজিক কাজে জনগণের মধ্যে আলোচনায় এসেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তুরস্কপ্রবাসী শিহাব আহমেদ।

লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা কমিটির সহসভাপতি রোকন উদ্দিন বাবুল। তবে তাঁর প্রাথমিক মনোনয়নে ক্ষুব্ধ তাঁর চাচাতো ভাই কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীরা। শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করলে বা জোরালোভাবে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে বিএনপির জন্য সমীকরণ বদলে যেতে পারে। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ফিরোজ হায়দার লাভলু। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে পারেন দলটির সাবেক এমপি মজিবুর রহমানের ছেলে শামীম কামাল। এনসিপির প্রার্থী হতে পারেন রাসেল আহমেদ। জনতার দলের চেয়ারম্যান শামীম কামাল দলটির প্রার্থী হতে পারেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তরুণ উদ্যোক্তা মমতাজ আলী শান্তর নাম শোনা যাচ্ছে। নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। জেলার অন্য দুই আসনের মতো এখানে বিএনপিতে উল্লেখযোগ্য কোনো বিদ্রোহী না থাকায় কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন তিনি। তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে তিস্তাপারে ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচিতে লাখো জনতার সমাগমের ঘটনায় তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিশমার বিষয়টি সামনে এসেছে। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা আমির অ্যাডভোকেট আবু তাহের। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন মোকছেদুল ইসলাম। তিনজনই নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। এলাকাজুড়ে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদকে চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়

  • উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বহু কৃষক মাটির উর্বর অংশ বিক্রি করেছেন
  • একসময় এই সমতলভূমিতে বাদাম, ধান, সরিষাসহ বিভিন্ন শস্য ফলানো হতো
মোহাম্মদ উজ্জ্বল, মহম্মদপুর (মাগুরা) 
মাগুরার মহম্মদপুরে টপ সয়েল কেটে নেওয়া একটি আবাদি জমি। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাগুরার মহম্মদপুরে টপ সয়েল কেটে নেওয়া একটি আবাদি জমি। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে মাটির ওপরের উর্বর অংশ (টপ সয়েল) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু সেই মাটি কাটার মহোৎসব চলছে মাঠে মাঠে। নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এ চিত্র মাগুরার মহম্মদপুরের। জানা গেছে, উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বহু কৃষক মাটির উর্বর অংশ ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন ধ্বংস হচ্ছে তিন ফসলি জমি, অন্যদিকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মধুমতী সেতু ও আশপাশের পরিবেশ।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মধুমতী সেতুর পূর্ব পাশে গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরঘেঁষা এলাকায় গড়ে ওঠা ৫টি অবৈধ ইটভাটার জন্য জায়গা প্রশস্ত করা হচ্ছে। পাশেই ইট তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহে অবাধে কাটা হচ্ছে আবাদি জমি। একসময় এই সমতলভূমিতে বাদাম, ধান, সরিষা, পাট ও মরিচের ব্যাপক আবাদ হলেও এখন খননযন্ত্রের আঘাতে তা পরিণত হয়েছে গর্ত-খানাখন্দপূর্ণ অনুর্বর ভূমিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮টি ইটভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাস থেকেই উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠের কৃষিজমির টপ সয়েল বিক্রি শুরু হয়। ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ভাটামালিকেরা কৃষিজমির উর্বর অংশ ক্রয় করেন। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ৪ মাস চলে আবাদি জমির টপ সয়েল কর্তনের হিড়িক। এসব কারণে দিন দিন ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি ও উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পীযূষ রায় বলেন, টপ সয়েল হলো আবাদি জমির পুষ্টি-প্রাণ। এই মাটি কেটে নেওয়া হলে কমপক্ষে ১০ বছর ওই জমিতে ভালো ফলন আশা করা যাবে না। ফলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা থাকছে।

ইউএনও মুহ. শাহনুর জামান বলেন, ‘টপ সয়েল কাটার কোনো খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আবাদি জমি রক্ষা করতে হলে কেবল আইন প্রয়োগ করে নয়; বরং কৃষক ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদকে চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দরপত্র ছাড়াই ভাড়া ২৪ শতাংশ জমি

  • খাতুনগঞ্জের মেসার্স পূবালী ট্রেডার্স ও মেসার্স রহমান ট্রেডিংয়ের অনুকূলে বরাদ্দ (ভাড়া) দেওয়া হয়
  • বন্দরের ভূমিব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী দরপত্র ছাড়া জমি ইজারা কিংবা ভাড়া দেওয়া যাবে না
মো. আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

নীতিমালা ভেঙে দরপত্র ছাড়াই ভাড়া দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের ২৪ শতাংশ জমি। এমনকি আমদানিকারকদের এই জমি ভাড়া দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে খাতুনগঞ্জের দুই ব্যবসায়ীকে। যাঁরা আমদানিকারক নন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বন্দরের বোর্ড সভার অ্যাজেন্ডার সারসংক্ষেপের নথি (নথি নম্বর ১৮.১৩.০০০০.৫০০.৩৫.০২২.২৫) থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগরের সুজা কাঠগড় মৌজার ২৪ শতক (১০ হাজার ৪৫৫ বর্গফুট) জমি খাতুনগঞ্জের মেসার্স পূবালী ট্রেডার্স ও মেসার্স রহমান ট্রেডিংয়ের অনুকূলে বরাদ্দ (ভাড়া) দেওয়া হয়। বন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিশেষ প্রভাবে দ্রুততার সঙ্গে এই জমি ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

বন্দর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশে পাইকারি নিত্যপণ্যের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত খাতুনগঞ্জের চাক্তাই খালের নিকটবর্তী এই জমি কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়াই ভাড়া দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মেসার্স পূবালী ট্রেডার্সের মালিক সুব্রত মহাজন ও মেসার্স রহমান ট্রেডিংয়ের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান ওই জমি বরাদ্দ পেতে আবেদন করেন। গত ৭ অক্টোবর অস্থায়ী ভিত্তিতে জমিটি ৬ মাসের জন্য বরাদ্দ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বন্দরের ১৯৬৭০ নম্বর বোর্ড সভায় দরপত্র ছাড়াই ওই ব্যবসায়ীদের এই জমি বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

৯ অক্টোবর এই জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। এরপর ১৬ নভেম্বর ওই জমিতে অস্থায়ী টিনশেড ঘর তৈরির অনুমতিও দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দরসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দ্রুততার সঙ্গে জায়গাটি বরাদ্দ দেওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

বন্দরের ভূমিব্যবস্থাপনা নীতিমালা ১৯৯৮-এর-৬ বিধিতে দরপত্র ছাড়া কোনো ভূমি ইজারা, ভাড়া প্রদান করা যাবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে আমদানি-রপ্তানি পণ্য মজুতের জন্য ৬ মাসের ভাড়া দেওয়ার বিধান রাখা হয়।

এ বিষয়ে পূবালী ট্রেডার্সের মালিক সুব্রত মহাজন বলেন, ‘বন্দর থেকে এই জায়গা আমি বরাদ্দ পেয়েছি। আমার অংশ ইতিমধ্যে রহমান ট্রেডিংয়ের মালিক মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি।’

মোস্তাফিজুর রহমান নিজের নামে বরাদ্দ ও সুব্রত মহাজনের নামে বরাদ্দ জমি কেনার কথা স্বীকার করেন।

বন্দরের সচিব ও মুখপাত্র ওমর ফারুক বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি, অনিয়ম হলে তাঁদের বরাদ্দ বাতিল করা হবে। তবে তাঁদের ৬ মাসের জন্য জায়গাটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদকে চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত