Ajker Patrika

‘ওরে বাপরে ভূমি অফিস! ওহানে তো ঘুষ ছাড়া কোনো কামই অয়না’

রুদ্র রুহান, বরগুনা
‘ওরে বাপরে ভূমি অফিস! ওহানে তো ঘুষ ছাড়া কোনো কামই অয়না’

ভূমি অফিসের কথা শুনতেই বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের আজাদুল ইসলাম বলে ওঠেন, ‘ওরে বাপরে ভূমি অফিস! ওহানে তো ঘুষ ছাড়া কোনো কামই অয়না।’ গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়েছিলেন জমির দাখিলার জন্য। কিন্তু সেখানের এক কর্মচারীর ঘুষের শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। 

আজাদুল ইসলাম বলেন, ‘মুই একটা দাহিলা (দাখিলা) আনতে ভূমি অফিসে গেছালাম। তহশিলদারের সহকারী পঙ্কজ চন্দ্র মোরে কয় জমি নদী সিকস্তিতে গ্যাছে। জরিপ কইরা হেইয়ার পর দাহিলা দেওন যাইবে। হেরপর মোরো আড়ালে ডাইক্কা কয় ৫ হাজার টাহা দেলে দাহিলা দেতে পারমু। পরে টাহা গুছাইয়া লইয়া গেছি পর মোরে দাহিলা কাইট্টা দেছে। দাহিলায় ল্যাকছে ৫০০ টাহা।’ 

জেলা রাজস্ব বিভাগের তথ্য মতে, বরগুনা জেলায় মোট ২৪টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, পাঁচটি উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার অফিস, ও জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় রয়েছে। 

সরেজমিন অনুসন্ধান ও ভুক্তভোগীদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে শুরু করে উপজেলা ও জেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয় পর্যন্ত কোনো কাজে গেলে ঘুষ ছাড়া সে কাজ হয় না। বরং পর্যায়ক্রমে টাকার অঙ্ক বাড়তে থাকে। তৃণমূল পর্যায়ে ভূমি সংক্রান্ত সেবা পেতে প্রথমেই ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন তহশিলদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বাসিন্দাদের বেশির ভাগই সাধারণত জমির খাজনা দিয়ে দাখিলা নিতে আসেন। এ ছাড়া জমি জমা সংক্রান্ত সাধারণ তথ্য খোঁজ করতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগাযোগ করেন। আর এখানে এসেই প্রথম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়, ঘুষ না দিয়ে কেউই কোনো সেবা পান না এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। 

বরগুনা সদর ইউনিয়নে হেউলীবুনিয়া এলাকার আবদুস সত্তার গত সোমবার সকালে দাখিলার জন্য গিয়েছিলেন। নিয়মানুযায়ী জমির খাজনা দিতে চাইলেও তার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। অগত্যা বাধ্য হয়ে আট হাজার টাকায় তিনি দাখিলা কাটেন আর দাখিলায় খাজনা জমা দেখানো হয় মাত্র ২২০ টাকা। এ বিষয়ে সাত্তার বলেন, ‘এখানে অতিরিক্ত টাকা বা ঘুষ না দিয়ে কাজ আদায় করতে পেরেছে এমন ভাগ্যবান ব্যক্তির কথা আমার জানা নেই। প্রত্যেক এলাকায় ভূমি অফিসের নির্দিষ্ট দালাল আছে। এই দালালদের মাধ্যমে সব কাজ করতে হয়। নয়তো আপনাকে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হবে।’ 

একই অবস্থার কথা জানিয়েছেন বরগুনার ২৪টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভুক্তভোগী সেবা গ্রহীতারা। ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দাখিলা, দাগ-খতিয়ান ও মিউটেশনের তথ্য সরবরাহে ঘুষ না দিলে ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। অবশেষে ধার্যকৃত টাকা দিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে হয়। রোববার সরেজমিনে বরগুনা সদরের ফুলঝুড়ি ভূমি অফিসে গেলে দেখা যায়, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ রশিদে শাহজাহান বিশ্বাসের দাখিলায় ৮৮ টাকা লেখা। কিন্তু রাখা হয়েছে ১০০ টাকা। এর আগে সোমবার তারাবানু, রুনু, মাজেদা ও ফারুক প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে মোট ৮০০ টাকা রাখা হয়েছে। অথচ, দাখিলা রশিদে ২০ টাকা। 

দাখিলা কাটতে আসা ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রফিক হাওলাদার বলেন, অনেক আগে থেকেই এখানে ঘুষ বাণিজ্য চলে। আমরা যদি প্রতিবাদ করি তাহলে কোনো কাজ হয় না। তাই ঘুষ দিয়েই কাজ করি। 

এ তো গেল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের গল্প। উপজেলা থেকে জেলা যেখানে যাবেন ঘুষ দিতেই হবে। আর ধাপে ধাপে বাড়বে ঘুষের টাকার পরিমাণ। গত রোববার দুপুরে বরগুনা সদর উপজেলার ভূমি অফিসের সামনে অপেক্ষমাণ কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কোনো কাজের জন্য আসলে অগ্রিম ঘুষ দিতে হয়। আর ঘুষ দিলেই কেবল বালামে হাত দেন সংশ্লিষ্টরা। আর না দিলে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। 

এমন বিড়ম্বনার শিকার হওয়া কয়েকজনের সঙ্গে রোববার দুপুরে সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সামনে কথা হয়। সদরের এম বালিয়াতলীর তালতলী এলাকার কৃষক সেন্টু মিয়া বরগুনা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে এসেছেন নষ্ট হয়ে যাওয়া জমির দলিল ওঠানোর জন্য। তার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন অফিসের একজন সহকারী রেকর্ড কিপার। সদর উপজেলার রায়ভোগ এলাকার ইউনুস মিয়াও এসেছেন দলিল খুঁজতে। তাঁর কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন এই অফিসের একজন কর্মচারী। ইউনুস বলেন, ‘এখানে পিয়ন–ঝাড়ুদার থেকে শুরু করে সবাই সুযোগ পেলে ঘুষ নেন। আমরা এখানে এসে টাকা ছাড়া কোনো কাজই করতে পারি না। টাকা দিলেই কেবল বালামে হাত দেয়, না দিলে কোনো কাজ হয় না।’ 

পাথরঘাটা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সামনে কথা হয় রেজাউল কবির নামের কালমেঘা ইউনিয়নের এক বাসিন্দার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানে কিছু দলিল লেখকদের সঙ্গে যোগসাজশে অফিসের কর্মকর্তারা ঘুষ নিয়ে থাকেন। দলিলের সরকারি সব খরচার বাইরেও অফিস খরচার নামে ৫ থেকে ২০ হাজার পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়। জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে আমতলীতে কৃষিজমির পরিমাণ বেশি।’ 

ভূমিখাতে সবচেয়ে বেশি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ বরগুনার আমতলী উপজেলায়। আমতলীর আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আফজাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে ঘুষ দিয়ে জাল দলিল থেকে শুরু করে সব কাজ করানো সম্ভব। আর ঘুষ না দিয়ে কেউ কোনো কাজ করতেই পারবে না। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, এখানে এসে কেউ ঘুষ না দিয়ে কাজ করাতে পেরেছে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে এমন কেউ নেই। একইরকম চিত্র জেলার বাকি তিনটি সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়েরও।’ 

এ ছাড়া জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের চিত্র ঠিক এমনই। শুধুমাত্র পার্থক্য ঘুষের অঙ্কের। সরকারি ফির ধার ধারার সময় নেই কারওই। দলিল রেকর্ড করতে আসলে মোক্তাররা আগেই চুক্তি করে অফিস খরচা বাবদ টাকা রেখে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা সংক্রান্ত সিভিল মামলা পরিচালনা করে আসছেন এমন কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলিল করার ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে সরকারি খরচার বাইরে মোক্তারদের মাধ্যমে অফিস খরচা বাবদ দুই থেকে ২৫ হাজার পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়। সম্প্রতি দলিল করেছেন এমন কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে আইনজীবীর দাবির মিল রয়েছে। 

জাকির হোসেন নামের বেতাগী উপজেলার একজন বাসিন্দা বলেন, ‘আমি একজন মোক্তারের মাধ্যমে দলিলের কাজ করিয়েছি। আমার তিনটি দলিলে অতিরিক্ত ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।’ 

বরগুনার জেলা প্রশাসক (ভূমি) পীযূষ কান্তির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা তৃণমূল থেকে শুরু করে উপজেলা ও জেলায় সেবা নিতে আসা নাগরিকেরা যাতে ভোগান্তি ও বিড়ম্বনার শিকার না হয় সে জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। ভূমি অফিসের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী বিরুদ্ধে ঘুষ বাবদ অর্থ নেওয়ার কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত