রানাকুমার সিংহ

একটি অন্ধ ভিখারি রোজ মন্দিরে পূজা করতে যায়। প্রতিদিন ভক্তিভরে পূজা শেষ করে মন্দিরের দরজায় প্রণাম করে সে ফিরে আসে; মন্দিরের পুরোহিত সেটা ভাল করে লক্ষ্য করে দেখেন। এইভাবে কত বৎসর কেটে গেছে কেউ জানে না। একদিন পুরোহিত ভিখারিকে ডেকে বললেন, “দেখ হে! দেবতা তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। তুমি কোন একটা বর চাও। কিন্তু, মনে রেখো, একটিমাত্র বর পাবে।” ভিখারি বেচারা বড় মুস্কিলে পড়ল। কি যে চাইবে, কিছুতেই আর ঠিক করতে পারে না। একবার ভাবল, দৃষ্টি ফিরে চাইবে; আবার ভাবল, টাকাকড়ি চাইবে; আবার ভাবল, আত্মীয়স্বজন ছেলেপিলের দীর্ঘ জীবন এইসব চাইবে, কিছুতেই আর ঠিক করতে পারে না। তখন সে বলল, “আচ্ছা, আমি কাল ভাল করে ভেবে এসে বর চাইব। এখন কিছুতেই ঠিক করতে পারছি না, কি চাই।” অনেক ভেবেচিন্তে সে মনে মনে একটা ঠিক করে নিল। তারপর মন্দিরে গিয়ে পুরোহিতকে বলল, “পরতে ঠাকুর! আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দিচ্ছি: আপনি আমার বড় উপকার করলেন। যে একটি বরের কথা বলেছেন সেটি এখন আমি চাইব মনে রাখবেন, একটিমাত্র বর আমি চাচ্ছি। আমি এই বর চাই যে মরবার আগে যেন আমার নাতিকে ছয়তলা বাড়ির মধ্যে বসে সোনার থালায় পায়স খেতে স্বচক্ষে দেখে যেতে পারি।” এই এক বরে ভিখারি চোখের দৃষ্টি ফিরে পেল, ধনজন পেল, ছেলেপিলে, নাতি-নাতনি পেল, দীর্ঘজীবন।—‘একটি বর’ শিরোনামের গল্পটি সুকুমার রায়ের। একটানে পড়ে ফেলার মতো এমন গল্পই তিনি বাংলা সাহিত্যে উপহার দিয়েছেন। টানটান আবেশের এসব গল্পে আনন্দের পাশাপাশি বুদ্ধির খেলা পাঠকের আগ্রহ উস্কে দেয় এখনো।
তেমনিভাবে উপদেশ শুনতে কারোরই ভাল লাগার কথা না, বিশেষ করে শিশুদের। কিন্তু সুকুমার রায় যদি উপদেশ দেন তবে সেই উপদেশ শুনতেই হয়! সুকুমার রায় গল্প-ছড়া-নাটক-প্রবন্ধে শিশুদের এমন কতকিছুই শিখিয়েছেন। কঠিন উপদেশের বাইরে এসে গল্প-কবিতার ছলে শিখিয়েছেন উচিত-অনুচিত। পেনসিল কামড়ানো কিংবা সিঁড়ি দিয়ে ধুপধাপ করে নেমে জুতা ছিঁড়ে ফেলা একদম ভালো কাজ নয়—এ উপদেশ দিতে গিয়ে ‘যতীনের জুতো’ নামক একটি গল্পই সুকুমার রায় লিখে ফেলেছেন। গল্পটির কিয়দংশ এমন—যতীন দেখল সে কোন অচেনা দেশে এসে পড়েছে। সেখানে চারদিকে অনেক মুচি বসে আছে। তারা যতীনকে দেখে কাছে এল, তারপর তার পা থেকে ছেঁড়া চটিজোড়া খুলে নিয়ে সেগুলোকে যত্ন করে ঝাড়তে লাগল। তাদের মধ্যে একজন মাতব্বর গোছের, সে যতীনকে বলল, “তুমি দেখছি ভারি দুষ্টু। জুতোজোড়ার এমন দশা করেছ? দেখ দেখি, আর একটু হলে বেচারিদের প্রাণ বেরিয়ে যেত।” যতীনের ততক্ষণে একটু সাহস হয়েছে। সে বলল, “জুতোর আবার প্রাণ থাকে নাকি?” মুচিরা বলল, “তা না তো কি? তোমরা বুঝি মনে কর, তোমরা যখন জুতো পায়ে দিয়ে জোরে ছোটো তখন ওদের লাগে না? খুব লাগে। লাগে বলেই তো ওরা মচ্মচ্ করে। যখন তুমি চটি পায়ে দিয়ে দুড়্দুড়্ করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করেছিলে আর তোমার পায়ের চাপে ওর পাশ কেটে গিয়েছিল, তখন কি ওর লাগেনি? খুব লেগেছিল। সেইজন্যেই ও তোমাকে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছে। যত রাজ্যের ছেলেদের জিনিসপত্রের ভার আমাদের উপর। তারা সে সবের অযত্ন করলে আমরা তাদের শিক্ষা দেই।” মুচি যতীনের হাতে ছেঁড়া চটি দিয়ে বলল, “নাও, সেলাই কর।” যতীন রেগে বলল, “আমি জুতো সেলাই করি না, মুচিরা করে।” মুচি একটু হেসে বলল, “একি তোমাদের দেশ পেয়েছ যে করব না বললেই হল? এই ছুঁচ সুতো নাও, সেলাই কর।” যতীনের রাগ তখন কমে এসেছে, তার মনে ভয় হয়েছে। সে বলল, “আমি জুতো সেলাই করতে জানি না।” মুচি বলল, “আমি দেখিয়ে দিচ্ছি, সেলাই তোমাকে করতেই হবে।” যতীন ভয়ে ভয়ে জুতো সেলাই করতে বসল। তার হাতে ছুঁচ ফুটে গেল, ঘাড় নিচু করে থেকে থেকে ঘাড়ে ব্যথা হয়ে গেল, অনেক কষ্টে সারাদিনে একপাটি চটি সেলাই হল। তখন সে মুচিকে বলল, “কাল অন্যটা করব। এখন ক্ষিদে পেয়েছে।” মুচি বলল, “সে কি! সব কাজ শেষ না করে তুমি খেতেও পাবে না, ঘুমোতেও পাবে না। একপাটি চটি এখনও বাকি আছে। তারপর তোমাকে আস্তে আস্তে চলতে শিখতে হবে, যেন আর কোনো জুতোর উপর অত্যাচার না কর। তারপর দরজীর কাছে গিয়ে ছেঁড়া কাপড় সেলাই করতে হবে। তারপর আর কি কি জিনিস নষ্ট কর দেখা যাবে।”...এভাবেই স্বভাবসুলভ টানটান ভঙ্গিতে গল্পটি এগিয়ে যায় আর যতীনও বুঝতে পারে কোনো কাজ সহজ নয়। অবহেলা করে কোনো জিনিসই নষ্ট করা ঠিক নয়। এরপর সে আর পেনসিল কামড়ায় না, জুতোও ছিঁড়ে না। কোমল শিশু মননে এত সুন্দরভাবে শুভচিন্তা গেঁথে দেওয়ার কাজটি সুকুমার রায়ই বাংলা সাহিত্যে সংযুক্ত করেছেন।
সুকুমার রায়ের গল্প নিয়ে তো কিছু কথা হলো। ছড়াকার হিসেবে বাংলা সাহিত্যে তাঁর স্থান অবধারিতভাবে শীর্ষে। সকলের প্রিয় ছড়াকারই শুধু নয়, বাংলা সাহিত্যে ননসেন্সের প্রবর্তকও তিনি। ব্রিটিশ সাহিত্যিক এডওয়ার্ড লিয়রের লেখা ‘বুক অব ননসেন্স’-এর হাত ধরেই বিশ্বের শিশুরা সাহিত্যে পেয়েছিল এক অদ্ভুত দেশের খোঁজ। ননসেন্সকে জনপ্রিয় করার পেছনে আরও একটি নাম-লুই ক্যারল। ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ নামের যে উদ্ভট উপন্যাসটি লিখেছিলেন, তা আজও সবার কাছে জনপ্রিয়। নানা কমিকস, কার্টুন আর সিনেমার কল্যাণে এই উপন্যাসের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ইংরেজিতে যেমন ক্যারল অথবা এডওয়ার্ড লিয়র তেমনই বাংলা সাহিত্যে সুকুমার রায়। তিনি বাংলা ননসেন্স সাহিত্যের সম্রাট। সুকুমার তাঁর ননসেন্স ও উদ্ভট ধরনের রচনায় এডওয়ার্ড লিয়রের ‘বুক অব ননসেন্স’, লুইস ক্যারলের ‘অ্যালিস ঐ দ্য লুকিং গ্লাস’ কিংবা ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ প্রভৃতি লেখার দ্বারা নিশ্চয়ই প্রভাবিত হয়েছেন, আবার হয়ত রয়েছে চ্যাপলিনের খামখেয়ালিপনার প্রভাবও। কিন্তু তাঁর লেখা ও আঁকায় যেন তাঁর সৃষ্ট উদ্ভট চরিত্র ও ছবিগুলি অনেক বেশি সরস ও গতিশীল। এ প্রসঙ্গে সুকুমার রায়ের একমাত্র সন্তান আরেক কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায় বলেন—আসলে, যে-কথা আগেই বলেছি, সুকুমারের ননসেন্সের অনেকখানি সুকুমারেরই সৃষ্টি। প্রভাবের কথাই যদি বলতে হয় তাহলে শুধু বাংলার ট্র্যাডিশনের কথা বললে চলে না, বিদেশী সাহিত্য, পান্টোমাইম, চার্লি চ্যাপলিন, বিলিতি কমিকস (মার্কিন কমিক পুস্তকের ক্যাটজেন-জ্যামার কিস যে মোমবাতি-চোষা ডানপিটে ছেলের প্রেরণার উৎস সেটা আবোল তাবোলের ছবি দেখলেই বোঝা যায়)–এসবই সুকুমারের ননসেন্সের পুষ্টি সাধন করেছে। ননসেন্সের রসগ্রহণ বাঙালি পাঠক করতে পারবে কি না সে সম্বন্ধে সুকুমারের সংশয় ছিল; তাই এ জাতীয় আবোল তাবোলের ভূমিকায় তাঁকে কৈফিয়ৎ দিতে হয়েছিল—ইহা খেয়াল রসের বই, সুতরাং সে রস যাঁহারা উপভোগ করিতে পারেন না, এ পুস্তক তাঁহাদের জন্য নহে। এখানে উল্লেখযোগ্য এই যে রবীন্দ্রনাথও তাঁর শেষ বয়সের উদ্ভট ছড়ার সংকলন ’খাপছাড়া’-তে এই ধরনের একটা কৈফিয়তের প্রয়োজন বোধ করেছিলেন।
তবে, শুধু ননসেন্স নয়, সুকুমার তাঁর সাহিত্যে ছোটদের জন্য এমন এক বিচিত্র জগৎ গড়ে গেছেন, যার আনন্দ থেকে শিশুদের বঞ্চিত করা উচিত নয়। সুকুমার রায় তাঁর ছড়া-নাটক-গল্পে প্রাণী অথবা পৌরাণিক প্রাণীর ব্যবহার করেছেন। নিজের কল্পনাজগতের উদ্ভট প্রাণিকুলের সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করান তার লেখায়-আঁকায়। সুকুমারের এমন অনন্য আবিষ্কার তাঁর লেখাকে আকর্ষণীয় ও রসময় করে তোলে। যেমন তিনি লিখেছেন—
হলদে সবুজে ওরাং ওটাং
ইট পাটকেল চিৎ পটাং
গন্ধ গোকুল হিজিবিজি
নো অ্যাডমিশন ভেরি বিজি
নন্দী ভৃঙ্গী সারেগামা
নেই মামা তাই কানা মামা
চিনে বাদাম সর্দি কাশি
ব্লটিং পেপার বাঘের মাসি
মুশকিল আসান উড়ে মালি
ধর্মতলা কর্মখালি।
এমন ননসেন্সময় বক্তব্য বড় গভীর। গভীরে যেতে যেতে পাঠক জিনিয়াস হয়ে ওঠেন নিশ্চয়ই! আলোচিত এমন সব উদ্ভট বিষয় নিয়ে সুকুমার রায় প্রণীত আবোল তাবোল, পাগলা দাশু, হেশোরাম হুশিয়ারের ডায়েরি, খাই‐খাই, অবাক জলপান, লক্ষণের শক্তিশেল, ঝালাপালা ও অনান্য নাটক, হ য ব র ল, শব্দ কল্প দ্রুম, বহুরূপী, ভাষার অতাচার ইত্যাদি গ্রন্থ বাংলা শিশুসাহিত্যের অমর সৃষ্টি।
বাংলাসাহিত্যে সুকুমার রায়ের তুলনা কেবল সুকুমার রায়ই। সন্দেশ পত্রিকায় তাঁর বিজ্ঞানবিষয়ক লেখা প্রকাশ পেত। ছোটদের উপযোগী করে সহজভাবে তিনি বিজ্ঞানের জটিল বিষয় ব্যাখ্যা করেছেন সেসব লেখায়। সুকুমার অনায়াসে বিজ্ঞানের জটিল বিষয়কে শিশুদের জন্য রসপূর্ণভাবে উপস্থাপন করতেন। বিজ্ঞান বিষয়ে সন্দেশ পত্রিকায় লিখেছিলেন ‘বেগের কথা’। সহজভাবে ছোটদের তিনি ‘বেগ’ সম্বন্ধে বুঝিয়েছেন এভাবে—যে লোক সৌখিন, সামান্য কষ্টেই কাতর হইয়া পড়ে তাহাকে লক্ষ্য করিয়া বলা হয় ‘ফুলের ঘায় মূর্ছা যায়।’ রঘুবংশে আছে যে দশরথের মা ইন্দুমতী সত্যসত্যই ফুলের ঘায়ে কেবল মূর্ছা নয়, একেবারে মারাই গিয়াছিলেন। ইন্দ্রের পারিজাতমালা আকাশ হইতে তাঁহার গায়ে পড়ায় তাঁহার মৃত্যু হয়। প্রথম যখন এই বর্ণনাটা শুনিয়াছিলাম তখন ইহাকে অসম্ভব কল্পনা বলিয়া বোধ হইয়াছিল; কিন্তু এখন ভাবিয়া দেখিতেছি ইহা নিতান্ত অসম্ভব কিছু নয়। তাল গাছের উপর হইতে ভাদ্রমাসের তাল যদি ধুপ্ করিয়া পিঠে পড়ে তবে তার আঘাতটা খুবই সাংঘাতিক হয়; কিন্তু ঐ তালটাই যদি তাল গাছ হইতে না পড়িয়া ঐ পেয়ারাগাছ হইতে এক হাত নীচে তোমার পিঠের উপর পড়িত, তাহা হইলে এতটা চোট লাগিত না। কেন লাগিত না? কারণ, বেগ কম হইত। কোন জিনিস যখন উঁচু হইতে পড়িতে থাকে তখন সে যতই পড়ে ততই তার বেগ বাড়িয়া চলে। যে হাড়ের টুকরাটি দোতলা হইতে একতলায় মানুষের মাথায় পড়িলে বিশেষ কোনই অনিষ্ট হয় না—সেইটিই যখন চিলের মুখ হইতে পড়িতে পড়িতে অনেক নীচে প্রবল বেগে আসিয়া নামে তখন তাহার আঘাতে মানুষ রীতিমত জখম হইতে পারে। ফুলের মালাটিকেও যদি যথেষ্ট উঁচু হইতে ফেলিয়া দেওয়া যায় তবে তাহার আঘাতটি যে একেবারেই মোলায়েম হইবে না, এ কথা নিশ্চয় করিয়া বলা যায়।
অল্পদিনের লেখালেখির জীবনে সুকুমার রায় পৃথিবী বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনী, বিজ্ঞানের আবিষ্কার, দেশ-বিদেশের উপকথার চরিত্র ইত্যাদি বিষয়েও অমূল্য সব রচনা লিখে গিয়েছেন। সুকুমারই ‘পাগলা দাশু’র মতো নতুন ধারণার স্কুল স্টোরি লিখেছেন। উনিশ শতকের শুরুর দিকে তিনি ডুবো জাহাজ তথা সাবমেরিনের মতো বিষয় নিয়ে চমকপ্রদ লেখা শিশুদের জন্য উপহার দিয়েছেন। ভূমিকম্প, নীহারিকা, আলোর গতি ইত্যাদি বিজ্ঞানবিষয়ক লেখা তাঁর হাতে দুর্দান্ত হয়ে প্রস্ফুটিত হয়েছে।
গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সুকুমার রায় একজন প্রকৃতিপ্রেমিক লেখক ছিলেন। বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎও ছিল তাঁর চিন্তার জগতে। তেমনি একটি লেখা ‘কাঠের কথা’। সেই লেখায় তিনি পৃথিবী একদিন বৃক্ষশূন্য হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন—‘কেউ কেউ হয়ত বলবে, “দূর ছাই! কাঠের কথা আবার শুনব কি? ভারি ত জিনিস, তাই নিয়ে আবার কথা!” তা বলতে পার কিন্তু কাঠ যে মানুষের কাজের পক্ষে কত বড় দরকারী জিনিস, তা একবার ভেবে দেখেছ কি? এখন না হয় সভ্য মানুষে কয়লা, কেরোসিন, গ্যাস বা ইলেকট্রিক চুল্লির ব্যবহার শিখেছে; কিন্তু তার আগে ত জ্বালানি কাঠ না হলে মানুষের রান্নাবান্না কলকারখানা কিচ্ছুই চলত না, শীতের দেশে মানুষের বেঁচে থাকাই দায় হত। এই ত কিছুকাল আগেও কাঠের জাহাজ না হলে মানুষে সমুদ্রে যেতে পারত না, কাঠের কড়ি বরগা থাম না হলে তার ঘর বাড়ি তৈরি হত না। বলতে পার, এখন ত এ সবের জন্য কাঠের ব্যবহার কমে আসছে তা সত্যি! এমনকি, ঘরের দরজা-জানালা আসবাবপত্র পর্যন্ত যে ক্রমে কাঠের বদলে অন্য জিনিস দিয়ে তৈরি হতে থাকবে তাতেও কোন সন্দেহ নাই। আর পঞ্চাশ বছরের মধ্যেই হয়ত দেখবে, ঘরে ঘরে নানারকম ঢালাই-করা মেটে পাথরের আসবাবপত্র! কিন্তু তবুও দেখা যায় যে খুব ‘সভ্য’ জাতিদের মধ্যেও কাঠের ব্যবহার ক্রমেই বেড়ে চলছে, কমবার লক্ষণ একটাও দেখা যায় না। প্রতি বৎসরে এত কোটি মণ কাঠ মানুষে খরচ করে এবং তার জন্য এত অসংখ্য গাছ কাটতে হয় যে অনেকে আশঙ্কা করেন, হয়ত বেহিসাবী যথেচ্ছ গাছ কাটতে কাটতে কোন দিন পৃথিবীতে কাঠের দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হবে! এরকম যে সত্যি সত্যিই হতে পারে, তার প্রমাণ নানা দেশে পাওয়া গিয়েছে। আমেরিকার যুক্তরাজ্যে এক সময়ে এমন প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড বন ছিল আর তাতে এত অসংখ্য গাছ ছিল যে লোকে বলত এ দেশের কাঠ অফুরন্ত—এরা সমস্ত পৃথিবীময় কাঠ চালান দিয়েও কোনদিন এত গাছ কেটে শেষ করতে পারবে না। কিন্তু সে দেশের লোকে এমন বে-আন্দাজভাবে এর মধ্যে বন জঙ্গল সব কেটে প্রায় উজাড় করে ফেলেছে যে এখন তারা নিজেরাই অন্য দেশ থেকে কাঠ আমদানী করতে বাধ্য হচ্ছে।’
রসসম্রাট সুকুমার রায়ের চিরাচরিত রসের মধ্যেও ব্রিটিশবিরোধিতার ছাপ পাওয়া যায়। এমন একটি লেখা হলো ‘একুশের আইন’। সেখানে তিনি লিখেছেন—
শিবঠাকুরের আপন দেশে,
আইন কানুন সর্বনেশে!
কেউ যদি যায় পিছলে প’ড়ে,
প্যায়দা এসে পাক্ড়ে ধরে,
কাজির কাছে হয় বিচার—
একুশ টাকা দণ্ড তার।।
সেথায় সন্ধে ছটার আগে
হাঁচতে হলে টিকিট লাগে
হাঁচলে পরে বিন্ টিকিটে
দম্দমাদম্ লাগায় পিঠে,
কোটাল এসে নস্যি ঝাড়ে—
একুশ দফা হাঁচিয়ে মারে।।
এই পদ্যেই তিনি আরও লেখেন—
যে সব লোকে পদ্য লেখে,
তাদের ধরে খাঁচায় রেখে,
কানের কাছে নানান্ সুরে
নামতা শোনায় একশো উড়ে,
সামনে রেখে মুদীর খাতা—
হিসেব কষায় একুশ পাতা।।
সুকুমার রায় বাংলা সাহিত্য তথা বাংলা শিশুসাহিত্যের বরপুত্র। সুকুমার-পূর্ব যুগে হরিনাথ মজুমদার, সর্বানন্দ রায়, মুনশী নামদার, যোগীন্দ্রনাথ সরকার, রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মদন মোহন দত্ত, অক্ষয় কুমার দত্ত, মদন মোহন তর্কালঙ্কার, উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার প্রমুখের হাত ধরে বাংলা শিশুসাহিত্যের পথচলা এগিয়েছিল। সেই গতিকে নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তায় সুকুমার সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর দেখানো পথ ধরেই বাংলা শিশুসাহিত্য এগিয়ে চলছে বিগত এক শতাব্দী ধরে। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সুকুমারের প্রায় সমসাময়িক। সুকুমার সময়ের চাইতে আধুনিক ছিলেন। গত এক শ বছর বাংলা শিশুসাহিত্য নতুন নতুন শাখায় বিস্তৃত হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি সেগুলোকে আরো বর্ণিল করেছে।
কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা, বিখ্যাত চরিত্র ফেলুদা ও প্রফেসর শঙ্কুর স্রষ্টা সত্যজিৎ রায় ‘সমগ্র শিশুসাহিত্য সুকুমার রায়’ বইয়ের মুখবন্ধের শেষ লাইনগুলোতে যা লিখেছেন, সেই বাক্যগুলো ছাড়া এই রচনার ইতি টানা সহজ হবে না। সেখানে তিনি লিখেছেন—সুকুমার রায়ের কোনো রচনাই তাঁর জীবদ্দশায় পূর্ণাঙ্গ পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় নি। আবোল তাবোল প্রথম প্রকাশের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ১৯২৩। অর্থাৎ সুকুমারের মৃত্যুর ঠিক নয় দিন পরে। ছাপা বই দেখে না গেলেও, তার তিনরঙা মলাট, তার অঙ্গসজ্জা, পাদপূরক দু-চার লাইনের কিছু ছড়া, টেলপিসের ছবি ইত্যাদি সবই তিনি করে গিয়েছিলেন শয্যাশায়ী অবস্থায়। তাঁর শেষ রচনা ছিল আবোল তাবোলের শেষ কবিতা, যার বিচিত্র মিশ্র রস বাংলা সাহিত্যে চির-কালের বিস্ময়ের বস্তু হয়ে থাকবে। এটি রচনার সময় যে তাঁর উপর মৃত্যুর ছায়া পড়েছিল তার ইঙ্গিত এর শেষ কয়েক ছত্রে আছে—
আদিম কালের চাঁদিম হিম
তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম
গানের পালা সাঙ্গ মোর
ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর।
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উপস্থিত হয়ে এমন রসিকতা আর কোনো রসস্রষ্টার পক্ষে সম্ভব হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

একটি অন্ধ ভিখারি রোজ মন্দিরে পূজা করতে যায়। প্রতিদিন ভক্তিভরে পূজা শেষ করে মন্দিরের দরজায় প্রণাম করে সে ফিরে আসে; মন্দিরের পুরোহিত সেটা ভাল করে লক্ষ্য করে দেখেন। এইভাবে কত বৎসর কেটে গেছে কেউ জানে না। একদিন পুরোহিত ভিখারিকে ডেকে বললেন, “দেখ হে! দেবতা তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। তুমি কোন একটা বর চাও। কিন্তু, মনে রেখো, একটিমাত্র বর পাবে।” ভিখারি বেচারা বড় মুস্কিলে পড়ল। কি যে চাইবে, কিছুতেই আর ঠিক করতে পারে না। একবার ভাবল, দৃষ্টি ফিরে চাইবে; আবার ভাবল, টাকাকড়ি চাইবে; আবার ভাবল, আত্মীয়স্বজন ছেলেপিলের দীর্ঘ জীবন এইসব চাইবে, কিছুতেই আর ঠিক করতে পারে না। তখন সে বলল, “আচ্ছা, আমি কাল ভাল করে ভেবে এসে বর চাইব। এখন কিছুতেই ঠিক করতে পারছি না, কি চাই।” অনেক ভেবেচিন্তে সে মনে মনে একটা ঠিক করে নিল। তারপর মন্দিরে গিয়ে পুরোহিতকে বলল, “পরতে ঠাকুর! আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দিচ্ছি: আপনি আমার বড় উপকার করলেন। যে একটি বরের কথা বলেছেন সেটি এখন আমি চাইব মনে রাখবেন, একটিমাত্র বর আমি চাচ্ছি। আমি এই বর চাই যে মরবার আগে যেন আমার নাতিকে ছয়তলা বাড়ির মধ্যে বসে সোনার থালায় পায়স খেতে স্বচক্ষে দেখে যেতে পারি।” এই এক বরে ভিখারি চোখের দৃষ্টি ফিরে পেল, ধনজন পেল, ছেলেপিলে, নাতি-নাতনি পেল, দীর্ঘজীবন।—‘একটি বর’ শিরোনামের গল্পটি সুকুমার রায়ের। একটানে পড়ে ফেলার মতো এমন গল্পই তিনি বাংলা সাহিত্যে উপহার দিয়েছেন। টানটান আবেশের এসব গল্পে আনন্দের পাশাপাশি বুদ্ধির খেলা পাঠকের আগ্রহ উস্কে দেয় এখনো।
তেমনিভাবে উপদেশ শুনতে কারোরই ভাল লাগার কথা না, বিশেষ করে শিশুদের। কিন্তু সুকুমার রায় যদি উপদেশ দেন তবে সেই উপদেশ শুনতেই হয়! সুকুমার রায় গল্প-ছড়া-নাটক-প্রবন্ধে শিশুদের এমন কতকিছুই শিখিয়েছেন। কঠিন উপদেশের বাইরে এসে গল্প-কবিতার ছলে শিখিয়েছেন উচিত-অনুচিত। পেনসিল কামড়ানো কিংবা সিঁড়ি দিয়ে ধুপধাপ করে নেমে জুতা ছিঁড়ে ফেলা একদম ভালো কাজ নয়—এ উপদেশ দিতে গিয়ে ‘যতীনের জুতো’ নামক একটি গল্পই সুকুমার রায় লিখে ফেলেছেন। গল্পটির কিয়দংশ এমন—যতীন দেখল সে কোন অচেনা দেশে এসে পড়েছে। সেখানে চারদিকে অনেক মুচি বসে আছে। তারা যতীনকে দেখে কাছে এল, তারপর তার পা থেকে ছেঁড়া চটিজোড়া খুলে নিয়ে সেগুলোকে যত্ন করে ঝাড়তে লাগল। তাদের মধ্যে একজন মাতব্বর গোছের, সে যতীনকে বলল, “তুমি দেখছি ভারি দুষ্টু। জুতোজোড়ার এমন দশা করেছ? দেখ দেখি, আর একটু হলে বেচারিদের প্রাণ বেরিয়ে যেত।” যতীনের ততক্ষণে একটু সাহস হয়েছে। সে বলল, “জুতোর আবার প্রাণ থাকে নাকি?” মুচিরা বলল, “তা না তো কি? তোমরা বুঝি মনে কর, তোমরা যখন জুতো পায়ে দিয়ে জোরে ছোটো তখন ওদের লাগে না? খুব লাগে। লাগে বলেই তো ওরা মচ্মচ্ করে। যখন তুমি চটি পায়ে দিয়ে দুড়্দুড়্ করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করেছিলে আর তোমার পায়ের চাপে ওর পাশ কেটে গিয়েছিল, তখন কি ওর লাগেনি? খুব লেগেছিল। সেইজন্যেই ও তোমাকে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছে। যত রাজ্যের ছেলেদের জিনিসপত্রের ভার আমাদের উপর। তারা সে সবের অযত্ন করলে আমরা তাদের শিক্ষা দেই।” মুচি যতীনের হাতে ছেঁড়া চটি দিয়ে বলল, “নাও, সেলাই কর।” যতীন রেগে বলল, “আমি জুতো সেলাই করি না, মুচিরা করে।” মুচি একটু হেসে বলল, “একি তোমাদের দেশ পেয়েছ যে করব না বললেই হল? এই ছুঁচ সুতো নাও, সেলাই কর।” যতীনের রাগ তখন কমে এসেছে, তার মনে ভয় হয়েছে। সে বলল, “আমি জুতো সেলাই করতে জানি না।” মুচি বলল, “আমি দেখিয়ে দিচ্ছি, সেলাই তোমাকে করতেই হবে।” যতীন ভয়ে ভয়ে জুতো সেলাই করতে বসল। তার হাতে ছুঁচ ফুটে গেল, ঘাড় নিচু করে থেকে থেকে ঘাড়ে ব্যথা হয়ে গেল, অনেক কষ্টে সারাদিনে একপাটি চটি সেলাই হল। তখন সে মুচিকে বলল, “কাল অন্যটা করব। এখন ক্ষিদে পেয়েছে।” মুচি বলল, “সে কি! সব কাজ শেষ না করে তুমি খেতেও পাবে না, ঘুমোতেও পাবে না। একপাটি চটি এখনও বাকি আছে। তারপর তোমাকে আস্তে আস্তে চলতে শিখতে হবে, যেন আর কোনো জুতোর উপর অত্যাচার না কর। তারপর দরজীর কাছে গিয়ে ছেঁড়া কাপড় সেলাই করতে হবে। তারপর আর কি কি জিনিস নষ্ট কর দেখা যাবে।”...এভাবেই স্বভাবসুলভ টানটান ভঙ্গিতে গল্পটি এগিয়ে যায় আর যতীনও বুঝতে পারে কোনো কাজ সহজ নয়। অবহেলা করে কোনো জিনিসই নষ্ট করা ঠিক নয়। এরপর সে আর পেনসিল কামড়ায় না, জুতোও ছিঁড়ে না। কোমল শিশু মননে এত সুন্দরভাবে শুভচিন্তা গেঁথে দেওয়ার কাজটি সুকুমার রায়ই বাংলা সাহিত্যে সংযুক্ত করেছেন।
সুকুমার রায়ের গল্প নিয়ে তো কিছু কথা হলো। ছড়াকার হিসেবে বাংলা সাহিত্যে তাঁর স্থান অবধারিতভাবে শীর্ষে। সকলের প্রিয় ছড়াকারই শুধু নয়, বাংলা সাহিত্যে ননসেন্সের প্রবর্তকও তিনি। ব্রিটিশ সাহিত্যিক এডওয়ার্ড লিয়রের লেখা ‘বুক অব ননসেন্স’-এর হাত ধরেই বিশ্বের শিশুরা সাহিত্যে পেয়েছিল এক অদ্ভুত দেশের খোঁজ। ননসেন্সকে জনপ্রিয় করার পেছনে আরও একটি নাম-লুই ক্যারল। ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ নামের যে উদ্ভট উপন্যাসটি লিখেছিলেন, তা আজও সবার কাছে জনপ্রিয়। নানা কমিকস, কার্টুন আর সিনেমার কল্যাণে এই উপন্যাসের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ইংরেজিতে যেমন ক্যারল অথবা এডওয়ার্ড লিয়র তেমনই বাংলা সাহিত্যে সুকুমার রায়। তিনি বাংলা ননসেন্স সাহিত্যের সম্রাট। সুকুমার তাঁর ননসেন্স ও উদ্ভট ধরনের রচনায় এডওয়ার্ড লিয়রের ‘বুক অব ননসেন্স’, লুইস ক্যারলের ‘অ্যালিস ঐ দ্য লুকিং গ্লাস’ কিংবা ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ প্রভৃতি লেখার দ্বারা নিশ্চয়ই প্রভাবিত হয়েছেন, আবার হয়ত রয়েছে চ্যাপলিনের খামখেয়ালিপনার প্রভাবও। কিন্তু তাঁর লেখা ও আঁকায় যেন তাঁর সৃষ্ট উদ্ভট চরিত্র ও ছবিগুলি অনেক বেশি সরস ও গতিশীল। এ প্রসঙ্গে সুকুমার রায়ের একমাত্র সন্তান আরেক কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায় বলেন—আসলে, যে-কথা আগেই বলেছি, সুকুমারের ননসেন্সের অনেকখানি সুকুমারেরই সৃষ্টি। প্রভাবের কথাই যদি বলতে হয় তাহলে শুধু বাংলার ট্র্যাডিশনের কথা বললে চলে না, বিদেশী সাহিত্য, পান্টোমাইম, চার্লি চ্যাপলিন, বিলিতি কমিকস (মার্কিন কমিক পুস্তকের ক্যাটজেন-জ্যামার কিস যে মোমবাতি-চোষা ডানপিটে ছেলের প্রেরণার উৎস সেটা আবোল তাবোলের ছবি দেখলেই বোঝা যায়)–এসবই সুকুমারের ননসেন্সের পুষ্টি সাধন করেছে। ননসেন্সের রসগ্রহণ বাঙালি পাঠক করতে পারবে কি না সে সম্বন্ধে সুকুমারের সংশয় ছিল; তাই এ জাতীয় আবোল তাবোলের ভূমিকায় তাঁকে কৈফিয়ৎ দিতে হয়েছিল—ইহা খেয়াল রসের বই, সুতরাং সে রস যাঁহারা উপভোগ করিতে পারেন না, এ পুস্তক তাঁহাদের জন্য নহে। এখানে উল্লেখযোগ্য এই যে রবীন্দ্রনাথও তাঁর শেষ বয়সের উদ্ভট ছড়ার সংকলন ’খাপছাড়া’-তে এই ধরনের একটা কৈফিয়তের প্রয়োজন বোধ করেছিলেন।
তবে, শুধু ননসেন্স নয়, সুকুমার তাঁর সাহিত্যে ছোটদের জন্য এমন এক বিচিত্র জগৎ গড়ে গেছেন, যার আনন্দ থেকে শিশুদের বঞ্চিত করা উচিত নয়। সুকুমার রায় তাঁর ছড়া-নাটক-গল্পে প্রাণী অথবা পৌরাণিক প্রাণীর ব্যবহার করেছেন। নিজের কল্পনাজগতের উদ্ভট প্রাণিকুলের সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করান তার লেখায়-আঁকায়। সুকুমারের এমন অনন্য আবিষ্কার তাঁর লেখাকে আকর্ষণীয় ও রসময় করে তোলে। যেমন তিনি লিখেছেন—
হলদে সবুজে ওরাং ওটাং
ইট পাটকেল চিৎ পটাং
গন্ধ গোকুল হিজিবিজি
নো অ্যাডমিশন ভেরি বিজি
নন্দী ভৃঙ্গী সারেগামা
নেই মামা তাই কানা মামা
চিনে বাদাম সর্দি কাশি
ব্লটিং পেপার বাঘের মাসি
মুশকিল আসান উড়ে মালি
ধর্মতলা কর্মখালি।
এমন ননসেন্সময় বক্তব্য বড় গভীর। গভীরে যেতে যেতে পাঠক জিনিয়াস হয়ে ওঠেন নিশ্চয়ই! আলোচিত এমন সব উদ্ভট বিষয় নিয়ে সুকুমার রায় প্রণীত আবোল তাবোল, পাগলা দাশু, হেশোরাম হুশিয়ারের ডায়েরি, খাই‐খাই, অবাক জলপান, লক্ষণের শক্তিশেল, ঝালাপালা ও অনান্য নাটক, হ য ব র ল, শব্দ কল্প দ্রুম, বহুরূপী, ভাষার অতাচার ইত্যাদি গ্রন্থ বাংলা শিশুসাহিত্যের অমর সৃষ্টি।
বাংলাসাহিত্যে সুকুমার রায়ের তুলনা কেবল সুকুমার রায়ই। সন্দেশ পত্রিকায় তাঁর বিজ্ঞানবিষয়ক লেখা প্রকাশ পেত। ছোটদের উপযোগী করে সহজভাবে তিনি বিজ্ঞানের জটিল বিষয় ব্যাখ্যা করেছেন সেসব লেখায়। সুকুমার অনায়াসে বিজ্ঞানের জটিল বিষয়কে শিশুদের জন্য রসপূর্ণভাবে উপস্থাপন করতেন। বিজ্ঞান বিষয়ে সন্দেশ পত্রিকায় লিখেছিলেন ‘বেগের কথা’। সহজভাবে ছোটদের তিনি ‘বেগ’ সম্বন্ধে বুঝিয়েছেন এভাবে—যে লোক সৌখিন, সামান্য কষ্টেই কাতর হইয়া পড়ে তাহাকে লক্ষ্য করিয়া বলা হয় ‘ফুলের ঘায় মূর্ছা যায়।’ রঘুবংশে আছে যে দশরথের মা ইন্দুমতী সত্যসত্যই ফুলের ঘায়ে কেবল মূর্ছা নয়, একেবারে মারাই গিয়াছিলেন। ইন্দ্রের পারিজাতমালা আকাশ হইতে তাঁহার গায়ে পড়ায় তাঁহার মৃত্যু হয়। প্রথম যখন এই বর্ণনাটা শুনিয়াছিলাম তখন ইহাকে অসম্ভব কল্পনা বলিয়া বোধ হইয়াছিল; কিন্তু এখন ভাবিয়া দেখিতেছি ইহা নিতান্ত অসম্ভব কিছু নয়। তাল গাছের উপর হইতে ভাদ্রমাসের তাল যদি ধুপ্ করিয়া পিঠে পড়ে তবে তার আঘাতটা খুবই সাংঘাতিক হয়; কিন্তু ঐ তালটাই যদি তাল গাছ হইতে না পড়িয়া ঐ পেয়ারাগাছ হইতে এক হাত নীচে তোমার পিঠের উপর পড়িত, তাহা হইলে এতটা চোট লাগিত না। কেন লাগিত না? কারণ, বেগ কম হইত। কোন জিনিস যখন উঁচু হইতে পড়িতে থাকে তখন সে যতই পড়ে ততই তার বেগ বাড়িয়া চলে। যে হাড়ের টুকরাটি দোতলা হইতে একতলায় মানুষের মাথায় পড়িলে বিশেষ কোনই অনিষ্ট হয় না—সেইটিই যখন চিলের মুখ হইতে পড়িতে পড়িতে অনেক নীচে প্রবল বেগে আসিয়া নামে তখন তাহার আঘাতে মানুষ রীতিমত জখম হইতে পারে। ফুলের মালাটিকেও যদি যথেষ্ট উঁচু হইতে ফেলিয়া দেওয়া যায় তবে তাহার আঘাতটি যে একেবারেই মোলায়েম হইবে না, এ কথা নিশ্চয় করিয়া বলা যায়।
অল্পদিনের লেখালেখির জীবনে সুকুমার রায় পৃথিবী বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনী, বিজ্ঞানের আবিষ্কার, দেশ-বিদেশের উপকথার চরিত্র ইত্যাদি বিষয়েও অমূল্য সব রচনা লিখে গিয়েছেন। সুকুমারই ‘পাগলা দাশু’র মতো নতুন ধারণার স্কুল স্টোরি লিখেছেন। উনিশ শতকের শুরুর দিকে তিনি ডুবো জাহাজ তথা সাবমেরিনের মতো বিষয় নিয়ে চমকপ্রদ লেখা শিশুদের জন্য উপহার দিয়েছেন। ভূমিকম্প, নীহারিকা, আলোর গতি ইত্যাদি বিজ্ঞানবিষয়ক লেখা তাঁর হাতে দুর্দান্ত হয়ে প্রস্ফুটিত হয়েছে।
গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সুকুমার রায় একজন প্রকৃতিপ্রেমিক লেখক ছিলেন। বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎও ছিল তাঁর চিন্তার জগতে। তেমনি একটি লেখা ‘কাঠের কথা’। সেই লেখায় তিনি পৃথিবী একদিন বৃক্ষশূন্য হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন—‘কেউ কেউ হয়ত বলবে, “দূর ছাই! কাঠের কথা আবার শুনব কি? ভারি ত জিনিস, তাই নিয়ে আবার কথা!” তা বলতে পার কিন্তু কাঠ যে মানুষের কাজের পক্ষে কত বড় দরকারী জিনিস, তা একবার ভেবে দেখেছ কি? এখন না হয় সভ্য মানুষে কয়লা, কেরোসিন, গ্যাস বা ইলেকট্রিক চুল্লির ব্যবহার শিখেছে; কিন্তু তার আগে ত জ্বালানি কাঠ না হলে মানুষের রান্নাবান্না কলকারখানা কিচ্ছুই চলত না, শীতের দেশে মানুষের বেঁচে থাকাই দায় হত। এই ত কিছুকাল আগেও কাঠের জাহাজ না হলে মানুষে সমুদ্রে যেতে পারত না, কাঠের কড়ি বরগা থাম না হলে তার ঘর বাড়ি তৈরি হত না। বলতে পার, এখন ত এ সবের জন্য কাঠের ব্যবহার কমে আসছে তা সত্যি! এমনকি, ঘরের দরজা-জানালা আসবাবপত্র পর্যন্ত যে ক্রমে কাঠের বদলে অন্য জিনিস দিয়ে তৈরি হতে থাকবে তাতেও কোন সন্দেহ নাই। আর পঞ্চাশ বছরের মধ্যেই হয়ত দেখবে, ঘরে ঘরে নানারকম ঢালাই-করা মেটে পাথরের আসবাবপত্র! কিন্তু তবুও দেখা যায় যে খুব ‘সভ্য’ জাতিদের মধ্যেও কাঠের ব্যবহার ক্রমেই বেড়ে চলছে, কমবার লক্ষণ একটাও দেখা যায় না। প্রতি বৎসরে এত কোটি মণ কাঠ মানুষে খরচ করে এবং তার জন্য এত অসংখ্য গাছ কাটতে হয় যে অনেকে আশঙ্কা করেন, হয়ত বেহিসাবী যথেচ্ছ গাছ কাটতে কাটতে কোন দিন পৃথিবীতে কাঠের দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হবে! এরকম যে সত্যি সত্যিই হতে পারে, তার প্রমাণ নানা দেশে পাওয়া গিয়েছে। আমেরিকার যুক্তরাজ্যে এক সময়ে এমন প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড বন ছিল আর তাতে এত অসংখ্য গাছ ছিল যে লোকে বলত এ দেশের কাঠ অফুরন্ত—এরা সমস্ত পৃথিবীময় কাঠ চালান দিয়েও কোনদিন এত গাছ কেটে শেষ করতে পারবে না। কিন্তু সে দেশের লোকে এমন বে-আন্দাজভাবে এর মধ্যে বন জঙ্গল সব কেটে প্রায় উজাড় করে ফেলেছে যে এখন তারা নিজেরাই অন্য দেশ থেকে কাঠ আমদানী করতে বাধ্য হচ্ছে।’
রসসম্রাট সুকুমার রায়ের চিরাচরিত রসের মধ্যেও ব্রিটিশবিরোধিতার ছাপ পাওয়া যায়। এমন একটি লেখা হলো ‘একুশের আইন’। সেখানে তিনি লিখেছেন—
শিবঠাকুরের আপন দেশে,
আইন কানুন সর্বনেশে!
কেউ যদি যায় পিছলে প’ড়ে,
প্যায়দা এসে পাক্ড়ে ধরে,
কাজির কাছে হয় বিচার—
একুশ টাকা দণ্ড তার।।
সেথায় সন্ধে ছটার আগে
হাঁচতে হলে টিকিট লাগে
হাঁচলে পরে বিন্ টিকিটে
দম্দমাদম্ লাগায় পিঠে,
কোটাল এসে নস্যি ঝাড়ে—
একুশ দফা হাঁচিয়ে মারে।।
এই পদ্যেই তিনি আরও লেখেন—
যে সব লোকে পদ্য লেখে,
তাদের ধরে খাঁচায় রেখে,
কানের কাছে নানান্ সুরে
নামতা শোনায় একশো উড়ে,
সামনে রেখে মুদীর খাতা—
হিসেব কষায় একুশ পাতা।।
সুকুমার রায় বাংলা সাহিত্য তথা বাংলা শিশুসাহিত্যের বরপুত্র। সুকুমার-পূর্ব যুগে হরিনাথ মজুমদার, সর্বানন্দ রায়, মুনশী নামদার, যোগীন্দ্রনাথ সরকার, রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মদন মোহন দত্ত, অক্ষয় কুমার দত্ত, মদন মোহন তর্কালঙ্কার, উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার প্রমুখের হাত ধরে বাংলা শিশুসাহিত্যের পথচলা এগিয়েছিল। সেই গতিকে নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তায় সুকুমার সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর দেখানো পথ ধরেই বাংলা শিশুসাহিত্য এগিয়ে চলছে বিগত এক শতাব্দী ধরে। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সুকুমারের প্রায় সমসাময়িক। সুকুমার সময়ের চাইতে আধুনিক ছিলেন। গত এক শ বছর বাংলা শিশুসাহিত্য নতুন নতুন শাখায় বিস্তৃত হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি সেগুলোকে আরো বর্ণিল করেছে।
কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা, বিখ্যাত চরিত্র ফেলুদা ও প্রফেসর শঙ্কুর স্রষ্টা সত্যজিৎ রায় ‘সমগ্র শিশুসাহিত্য সুকুমার রায়’ বইয়ের মুখবন্ধের শেষ লাইনগুলোতে যা লিখেছেন, সেই বাক্যগুলো ছাড়া এই রচনার ইতি টানা সহজ হবে না। সেখানে তিনি লিখেছেন—সুকুমার রায়ের কোনো রচনাই তাঁর জীবদ্দশায় পূর্ণাঙ্গ পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় নি। আবোল তাবোল প্রথম প্রকাশের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ১৯২৩। অর্থাৎ সুকুমারের মৃত্যুর ঠিক নয় দিন পরে। ছাপা বই দেখে না গেলেও, তার তিনরঙা মলাট, তার অঙ্গসজ্জা, পাদপূরক দু-চার লাইনের কিছু ছড়া, টেলপিসের ছবি ইত্যাদি সবই তিনি করে গিয়েছিলেন শয্যাশায়ী অবস্থায়। তাঁর শেষ রচনা ছিল আবোল তাবোলের শেষ কবিতা, যার বিচিত্র মিশ্র রস বাংলা সাহিত্যে চির-কালের বিস্ময়ের বস্তু হয়ে থাকবে। এটি রচনার সময় যে তাঁর উপর মৃত্যুর ছায়া পড়েছিল তার ইঙ্গিত এর শেষ কয়েক ছত্রে আছে—
আদিম কালের চাঁদিম হিম
তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম
গানের পালা সাঙ্গ মোর
ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর।
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উপস্থিত হয়ে এমন রসিকতা আর কোনো রসস্রষ্টার পক্ষে সম্ভব হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

একটি অন্ধ ভিখারি রোজ মন্দিরে পূজা করতে যায়। প্রতিদিন ভক্তিভরে পূজা শেষ করে মন্দিরের দরজায় প্রণাম করে সে ফিরে আসে; মন্দিরের পুরোহিত সেটা ভাল করে লক্ষ্য করে দেখেন। এইভাবে কত বৎসর কেটে গেছে কেউ জানে না। একদিন পুরোহিত ভিখারিকে ডেকে বললেন, “দেখ হে! দেবতা তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। তুমি কোন একটা বর চাও। ক
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

একটি অন্ধ ভিখারি রোজ মন্দিরে পূজা করতে যায়। প্রতিদিন ভক্তিভরে পূজা শেষ করে মন্দিরের দরজায় প্রণাম করে সে ফিরে আসে; মন্দিরের পুরোহিত সেটা ভাল করে লক্ষ্য করে দেখেন। এইভাবে কত বৎসর কেটে গেছে কেউ জানে না। একদিন পুরোহিত ভিখারিকে ডেকে বললেন, “দেখ হে! দেবতা তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। তুমি কোন একটা বর চাও। ক
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

একটি অন্ধ ভিখারি রোজ মন্দিরে পূজা করতে যায়। প্রতিদিন ভক্তিভরে পূজা শেষ করে মন্দিরের দরজায় প্রণাম করে সে ফিরে আসে; মন্দিরের পুরোহিত সেটা ভাল করে লক্ষ্য করে দেখেন। এইভাবে কত বৎসর কেটে গেছে কেউ জানে না। একদিন পুরোহিত ভিখারিকে ডেকে বললেন, “দেখ হে! দেবতা তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। তুমি কোন একটা বর চাও। ক
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

একটি অন্ধ ভিখারি রোজ মন্দিরে পূজা করতে যায়। প্রতিদিন ভক্তিভরে পূজা শেষ করে মন্দিরের দরজায় প্রণাম করে সে ফিরে আসে; মন্দিরের পুরোহিত সেটা ভাল করে লক্ষ্য করে দেখেন। এইভাবে কত বৎসর কেটে গেছে কেউ জানে না। একদিন পুরোহিত ভিখারিকে ডেকে বললেন, “দেখ হে! দেবতা তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। তুমি কোন একটা বর চাও। ক
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫