মারুফ ইসলাম

পুতিন এখন ইউক্রেন নিয়ে খেলায় মেতে আছেন, তাতে সন্দেহ নেই। তাই বলে কি অন্য কোথাও তাঁর নজর নেই? আলবৎ আছে। আপনি যদি গভীরভাবে তলিয়ে ভাবেন, তাহলে দেখবেন, আফ্রিকা অঞ্চলে এক গভীর পরিকল্পনা নিয়ে খেলায় মেতেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ‘পুতিনের আফ্রিকা নীতি’ নিয়ে এরই মধ্যে সরব হয়েছে বিশ্লেষকেরা।
এই নীতিটা কেমন? তা জানার জন্য আফ্রিকা-রাশিয়া-ইউক্রেন প্রসঙ্গগুলোতে নজর বোলাতে হবে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে পুতিনের বাহিনী। তারপর ২ মার্চ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। সেখানে বিশ্বের ১১৪টি দেশ পুতিনের আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে ভোট দিয়েছে। এই ভোট দেওয়ার মাধ্যমে তারা এটি নিশ্চিত করেছে যে, বিশ্বের যেকোনো রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ব্যাহত করার চেষ্টা বা তার রাজনৈতিক স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
কিন্তু পুতিনের এ বর্বরতার বিরুদ্ধে আফ্রিকার দেশগুলোর অবস্থান কী? এ অঞ্চলের ১৭টি দেশ নিন্দা প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল। আর আটটি দেশ ভোটাভুটিতে অংশই নেয়নি। শুধু একটি দেশ—ইরিত্রিয়া, যেটি একনায়কতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত, সেটি সরাসরি এ নিন্দা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।
আফ্রিকার দেশগুলোর এই অবস্থান মাথায় রেখে পুতিনের ভাবনার দিকে নজর দিলে দেখা যাবে, তিনি গোটা বিশ্ব ব্যবস্থাকেই দুর্বল করার চেষ্টা করছেন। ক্রিমিয়া ও উত্তর জর্জিয়ার কিছু অংশ এবং ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্বাঞ্চল দখল করে ফেলেছে পুতিনের বাহিনী। তিনি তাঁর দখলদারি আস্তে আস্তে বাড়াচ্ছেন।
এ সম্পর্কিত এক বিশ্লেষণে মার্কিন পত্রিকা ফরেন পলিসি বলছে, পুতিনের সাম্রাজ্য বিস্তারের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা আফ্রিকাকে বড় ধরনের নেতিবাচক পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। কারণ, এ ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতার ধারণাগুলোকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে হিংসাত্মক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে বিশ্রীভাবে উন্মুক্ত করে দেয়।

সুতরাং, ভেবে দেখার বিষয় হচ্ছে, পুতিনের আফ্রিকা নীতিটা কী? তা কি সত্যিই আফ্রিকার জন্য বিধ্বংসী হয়ে উঠবে?
পুতিনের নীতির প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত অলঙ্ঘনীয় সীমানাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা। আফ্রিকা মহাদেশে বর্তমানে প্রায় ১০০টি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সীমানা রয়েছে। এ সীমানাগুলোর বেশির ভাগই ঔপনিবেশিক সময়ে নির্বিচারে টানা হয়েছিল।
সীমানাগুলো আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সরকারেরা দীর্ঘকাল ধরে শান্তিপূর্ণভাবে রক্ষা করে চলছিল। তারা আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘অর্গানাইজেশন অব আফ্রিকান ইউনিটি’ সংস্থার সনদের মধ্যে এ নীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে ২০০১ সালে আফ্রিকান ইউনিয়নের সাংবিধানিক আইনে তা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
ঔপনিবেশিক স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে অনেক আফ্রিকান রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছে মূলত ‘আত্মনিয়ন্ত্রণের’ প্রতিশ্রুতি থেকে। কিন্তু হাস্যকরভাবে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের মাধ্যমে সেই প্রতিশ্রুতিই আজ হুমকির মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে আমরা আফ্রিকার কিছু অংশেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখছি।

আফ্রিকান গ্রেট লেক অঞ্চল (বুরুন্ডি, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, মালাউ, মোজাম্বিক, রুয়ান্ডা, জাম্বিয়া, তানজানিয়া ও উগান্ডা) দাঁড়িয়ে আছে ভঙ্গুর সীমান্ত নিয়ে। এদিকে কঙ্গো তার প্রতিবেশী রুয়ান্ডা ও উগান্ডার কর্তৃত্ববাদী নেতাদের শোষণের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে।
রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে ২০০০ সাল থেকে এবং উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইউওয়েরি মুসেভেনি ১৯৮৬ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন। তাঁরা তাঁদের সেনাবাহিনী ও তাঁদের মদদপুষ্ট বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে কঙ্গোর ভূখণ্ড দখল করতে, প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন করতে এবং নাগরিকদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই তো গত বছরের অক্টোবরে কঙ্গোর সঙ্গে রুয়ান্ডার সৈন্যদের সংঘর্ষ হয়েছে। রুয়ান্ডা বেশ কয়েকটি গ্রাম দখল করেছে বলে অভিযোগ করেছে কঙ্গো। একই সঙ্গে কঙ্গোর সেনাবাহিনী বলেছে, পূর্ব কঙ্গোর বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন দিচ্ছে কাগামে সরকার—এমন প্রমাণ তারা পেয়েছে।
আফ্রিকার গ্রেট লেক অঞ্চলে পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, সেখানে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব-সংঘাত পুনরুজ্জীবিত হওয়ার আশঙ্কা চূড়া স্পর্শ করেছে। আর এই আশঙ্কার আগুনে ঘি ঢালছেন স্বয়ং পুতিন।
কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, মস্কো আফ্রিকার জন্য এক ‘নতুন নীতি’ গ্রহণ করেছে। এ মহাদেশজুড়ে তারা নিজেদের রাজনীতি, শাসন ও অর্থনৈতিক পতাকা ওড়াতে চায় এবং তা অনেকটা জবরদখল নীতির পথ ধরেই। এ জন্য রাশিয়া বারবার এ অঞ্চলের জনবিচ্ছিন্ন ও কর্তৃত্ববাদী নেতাদের সমর্থন দিয়েছে। আর রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট নির্ভার হাতখানা নিজের কাঁধে পেয়ে ভয়ংকর কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছে আফ্রিকার দেশগুলোর নেতারা, বিশেষ করে লিবিয়া, মালি ও সুদান।
পুতিন এ অঞ্চলে জবাবদিহিহীন ভাড়াটে গোষ্ঠী মোতায়েন করে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালাচ্ছেন, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছেন এবং অহরহ অস্ত্রচুক্তি করছেন। আর এসবের মাধ্যমে পুরো আফ্রিকাকে অস্থিতিশীল করে তুলছেন। রাশিয়ার ছত্রচ্ছায়ায় সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন এখন নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আফ্রিকার অনেক দেশে এখন অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায়। তাদের প্রকাশ্যে এবং গোপনে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। আফ্রিকায় একনায়কতান্ত্রিক নেতাদের উত্থানের স্রোত এবং তাদের মেয়াদ বৃদ্ধির পেছনে দক্ষ খেলুড়ে হিসেবে কাজ করছে মস্কো। বলা বাহুল্য, সমগ্র আফ্রিকাকে স্বৈরাচারী ছাঁচে নির্মাণ করতে চাচ্ছেন পুতিন। আর সেই লক্ষ্যেই তিনি তাঁর ‘আফ্রিকা নীতি’ তৈরি করেছেন।
পুতিনের আফ্রিকা নীতি পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হলে ওই অঞ্চলের জনসাধারণের কপালে সীমাহীন নিপীড়ন নেমে আসবে, তা আগে থেকে অনুমান করাই যায়। কারণ আফ্রিকায় চলমান ১৬টি অভ্যন্তরীণ সংঘাতের প্রধান শিকড় গেঁড়ে আছে এসব কর্তৃত্ববাদী শাসনের ভেতরে। বিপরীতে আফ্রিকায় যে কয়েকটি হাতেগোনা দেশে গণতন্ত্র আছে, সেসব দেশে তাকিয়ে দেখুন, কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত নেই। সুতরাং আরও কর্তৃত্ববাদ আরও সংঘাতের জন্ম দেবে বলে ধারণা করা যায়।

আফ্রিকার ৭৫ শতাংশ মানুষ গণতন্ত্র পছন্দ করে। তাদের ওপর চেপে বসেছে স্বৈরতান্ত্রিক সরকার। এসব একনায়ক সরকার গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর ক্রমবর্ধমান হারে দমন, পীড়ন, নির্যাতন চালাবে তাতে সন্দেহ নেই। এতে আফ্রিকার অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়বে। বাড়বে নিজ দেশ ছেড়ে শরণার্থী হওয়ার সংখ্যা।
আফ্রিকান সেন্টারের তথ্যমতে, পুতিন লিবিয়াকে ২০১৯ সাল থেকে স্নাইপার, মিগ-২৯, এসইউ-২৪ ফাইটার জেট, এসএ-২২ সারফেস টু ক্ষেপণাস্ত্র, বিমানবিধ্বংসী সরঞ্জাম ও শত শত উড়োজাহাজ দিয়ে সহায়তা করে আসছেন। বিনিময়ে কী ফায়দা তুলে নিচ্ছেন পুতিন? পূর্ব লিবিয়ার তেলক্ষেত্র থেকে রাজস্ব ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে নৌসুবিধা নিচ্ছে রাশিয়া।
পুতিনের আফ্রিকা নীতির মধ্যে আরও রয়েছে—বৈধ সরকারগুলোকে কোণঠাসা করে রাখা, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালিয়ে সমাজকে বিভক্ত করে রাখা, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অসাংবিধানিক দাবিগুলোকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। আফ্রিকার অন্তত আটজন নেতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে পুতিন এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
সুদানের স্বৈরশাসক ওমর আল বশিরকে দীর্ঘদিন ধরে সমর্থন দিয়ে গেছে মস্কো। সেখানে সুদানের সামরিক বাহিনীকে সমর্থন দিতে গিয়ে নিজেদের সেনাদের যুক্ত করেছে রাশিয়া। বিনিময়ে পশ্চিম সুদানের সোনার খনিগুলোতে অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেছেন মহামান্য পুতিন।
তারপর পুতিন নজর দিয়েছেন মোজাম্বিকের দিকে। দেশটির উত্তরে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে। সুতরাং তাদের মোকাবিলা করা দরকার—এই অজুহাতে রুশ সেনাসমর্থিত ওয়াগনার গ্রুপকে নিযুক্ত করেছে রাশিয়া। শুধুই কি জঙ্গি মোকাবিলা করাই উদ্দেশ্য? মনে হয় না। আসলে এ অঞ্চলের গ্যাস খনির দিকে নজর পড়েছে পুতিনের।
আফ্রিকার আরেক দেশ মালিকে কতটা কবজা করেছেন পুতিন, তা একটি ঘটনার দিকে নজর দিলেই স্পষ্ট হবে। ঘটনা ২০২০ সালের ১৮ আগস্টের। ওই দিন সেনা অভ্যুত্থানের পর খুশিতে রাস্তায় নেমে আসেন অনেক মানুষ। তাঁদের অনেকের হাতে রাশিয়ার পতাকা ও পুতিনের ছবি দেখা গেছে। এ থেকেই বোঝা যায়, পুতিন সেখানে কতটা প্রভাব বিস্তার করেছেন।
নানা কারণেই আফ্রিকাকে নিজের কবজায় রাখতে চান পুতিন। এর একটি বড় কারণ ‘অস্ত্র ব্যবসা’। এখন পর্যন্ত আফ্রিকার অস্ত্রের বাজারের ৪৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে মস্কো। রাশিয়ার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কেনে আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, মিসর, মরক্কো, নাইজেরিয়া, সুদান, সেনেগাল ও জাম্বিয়া।

পুতিন চান দক্ষিণ ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাগরে তাঁর প্রভাব বিস্তার করতে। একই সঙ্গে চান, এ অঞ্চলে ন্যাটোকে চাপের মধ্যে রাখতে। নিজের শক্তি প্রদর্শন এবং এ অঞ্চলকে পশ্চিমা প্রভাবমুক্ত করে নিজের কবজায় আনাই পুতিনের অদম্য ইচ্ছা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এসব ইচ্ছা পূরণ করতে পুতিন ব্যবহার করছেন আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বুরুন্ডি, গিনি, মাদাগাস্কার, মোজাম্বিক, দক্ষিণ সুদান, উগান্ডা ও জিম্বাবুয়ের পুতুল সরকারকে।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, আরও দীর্ঘকাল আফ্রিকা পুতিনের এসব খায়েশ পূরণ করে যাবে। কারণ, আফ্রিকার সঙ্গে রাশিয়ার রয়েছে ঐতিহাসিক সম্পর্ক—সেই সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় থেকে।
রাশিয়া ইউক্রেন সংকট সম্পর্কিত সংবাদ পেতে - এখানে ক্লিক করুন
অ্যাঙ্গোলার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এন কুলুম্বু বলেছেন, ‘মস্কোর সঙ্গে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের কথা মাথায় রেখেই অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ার মতো দেশগুলো জাতিসংঘের ইউক্রেনের প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে।’
সূত্র: ফরেন পলিসি, আফ্রিকা সেন্টার, দ্য কনভারসেশন ও ডয়চে ভেলে
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত পড়ুন:

পুতিন এখন ইউক্রেন নিয়ে খেলায় মেতে আছেন, তাতে সন্দেহ নেই। তাই বলে কি অন্য কোথাও তাঁর নজর নেই? আলবৎ আছে। আপনি যদি গভীরভাবে তলিয়ে ভাবেন, তাহলে দেখবেন, আফ্রিকা অঞ্চলে এক গভীর পরিকল্পনা নিয়ে খেলায় মেতেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ‘পুতিনের আফ্রিকা নীতি’ নিয়ে এরই মধ্যে সরব হয়েছে বিশ্লেষকেরা।
এই নীতিটা কেমন? তা জানার জন্য আফ্রিকা-রাশিয়া-ইউক্রেন প্রসঙ্গগুলোতে নজর বোলাতে হবে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে পুতিনের বাহিনী। তারপর ২ মার্চ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। সেখানে বিশ্বের ১১৪টি দেশ পুতিনের আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে ভোট দিয়েছে। এই ভোট দেওয়ার মাধ্যমে তারা এটি নিশ্চিত করেছে যে, বিশ্বের যেকোনো রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ব্যাহত করার চেষ্টা বা তার রাজনৈতিক স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
কিন্তু পুতিনের এ বর্বরতার বিরুদ্ধে আফ্রিকার দেশগুলোর অবস্থান কী? এ অঞ্চলের ১৭টি দেশ নিন্দা প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল। আর আটটি দেশ ভোটাভুটিতে অংশই নেয়নি। শুধু একটি দেশ—ইরিত্রিয়া, যেটি একনায়কতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত, সেটি সরাসরি এ নিন্দা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।
আফ্রিকার দেশগুলোর এই অবস্থান মাথায় রেখে পুতিনের ভাবনার দিকে নজর দিলে দেখা যাবে, তিনি গোটা বিশ্ব ব্যবস্থাকেই দুর্বল করার চেষ্টা করছেন। ক্রিমিয়া ও উত্তর জর্জিয়ার কিছু অংশ এবং ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্বাঞ্চল দখল করে ফেলেছে পুতিনের বাহিনী। তিনি তাঁর দখলদারি আস্তে আস্তে বাড়াচ্ছেন।
এ সম্পর্কিত এক বিশ্লেষণে মার্কিন পত্রিকা ফরেন পলিসি বলছে, পুতিনের সাম্রাজ্য বিস্তারের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা আফ্রিকাকে বড় ধরনের নেতিবাচক পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। কারণ, এ ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতার ধারণাগুলোকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে হিংসাত্মক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে বিশ্রীভাবে উন্মুক্ত করে দেয়।

সুতরাং, ভেবে দেখার বিষয় হচ্ছে, পুতিনের আফ্রিকা নীতিটা কী? তা কি সত্যিই আফ্রিকার জন্য বিধ্বংসী হয়ে উঠবে?
পুতিনের নীতির প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত অলঙ্ঘনীয় সীমানাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা। আফ্রিকা মহাদেশে বর্তমানে প্রায় ১০০টি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সীমানা রয়েছে। এ সীমানাগুলোর বেশির ভাগই ঔপনিবেশিক সময়ে নির্বিচারে টানা হয়েছিল।
সীমানাগুলো আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সরকারেরা দীর্ঘকাল ধরে শান্তিপূর্ণভাবে রক্ষা করে চলছিল। তারা আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘অর্গানাইজেশন অব আফ্রিকান ইউনিটি’ সংস্থার সনদের মধ্যে এ নীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে ২০০১ সালে আফ্রিকান ইউনিয়নের সাংবিধানিক আইনে তা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
ঔপনিবেশিক স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে অনেক আফ্রিকান রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছে মূলত ‘আত্মনিয়ন্ত্রণের’ প্রতিশ্রুতি থেকে। কিন্তু হাস্যকরভাবে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের মাধ্যমে সেই প্রতিশ্রুতিই আজ হুমকির মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে আমরা আফ্রিকার কিছু অংশেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখছি।

আফ্রিকান গ্রেট লেক অঞ্চল (বুরুন্ডি, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, মালাউ, মোজাম্বিক, রুয়ান্ডা, জাম্বিয়া, তানজানিয়া ও উগান্ডা) দাঁড়িয়ে আছে ভঙ্গুর সীমান্ত নিয়ে। এদিকে কঙ্গো তার প্রতিবেশী রুয়ান্ডা ও উগান্ডার কর্তৃত্ববাদী নেতাদের শোষণের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে।
রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে ২০০০ সাল থেকে এবং উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইউওয়েরি মুসেভেনি ১৯৮৬ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন। তাঁরা তাঁদের সেনাবাহিনী ও তাঁদের মদদপুষ্ট বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে কঙ্গোর ভূখণ্ড দখল করতে, প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন করতে এবং নাগরিকদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই তো গত বছরের অক্টোবরে কঙ্গোর সঙ্গে রুয়ান্ডার সৈন্যদের সংঘর্ষ হয়েছে। রুয়ান্ডা বেশ কয়েকটি গ্রাম দখল করেছে বলে অভিযোগ করেছে কঙ্গো। একই সঙ্গে কঙ্গোর সেনাবাহিনী বলেছে, পূর্ব কঙ্গোর বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন দিচ্ছে কাগামে সরকার—এমন প্রমাণ তারা পেয়েছে।
আফ্রিকার গ্রেট লেক অঞ্চলে পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, সেখানে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব-সংঘাত পুনরুজ্জীবিত হওয়ার আশঙ্কা চূড়া স্পর্শ করেছে। আর এই আশঙ্কার আগুনে ঘি ঢালছেন স্বয়ং পুতিন।
কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, মস্কো আফ্রিকার জন্য এক ‘নতুন নীতি’ গ্রহণ করেছে। এ মহাদেশজুড়ে তারা নিজেদের রাজনীতি, শাসন ও অর্থনৈতিক পতাকা ওড়াতে চায় এবং তা অনেকটা জবরদখল নীতির পথ ধরেই। এ জন্য রাশিয়া বারবার এ অঞ্চলের জনবিচ্ছিন্ন ও কর্তৃত্ববাদী নেতাদের সমর্থন দিয়েছে। আর রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট নির্ভার হাতখানা নিজের কাঁধে পেয়ে ভয়ংকর কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছে আফ্রিকার দেশগুলোর নেতারা, বিশেষ করে লিবিয়া, মালি ও সুদান।
পুতিন এ অঞ্চলে জবাবদিহিহীন ভাড়াটে গোষ্ঠী মোতায়েন করে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালাচ্ছেন, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছেন এবং অহরহ অস্ত্রচুক্তি করছেন। আর এসবের মাধ্যমে পুরো আফ্রিকাকে অস্থিতিশীল করে তুলছেন। রাশিয়ার ছত্রচ্ছায়ায় সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন এখন নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আফ্রিকার অনেক দেশে এখন অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায়। তাদের প্রকাশ্যে এবং গোপনে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। আফ্রিকায় একনায়কতান্ত্রিক নেতাদের উত্থানের স্রোত এবং তাদের মেয়াদ বৃদ্ধির পেছনে দক্ষ খেলুড়ে হিসেবে কাজ করছে মস্কো। বলা বাহুল্য, সমগ্র আফ্রিকাকে স্বৈরাচারী ছাঁচে নির্মাণ করতে চাচ্ছেন পুতিন। আর সেই লক্ষ্যেই তিনি তাঁর ‘আফ্রিকা নীতি’ তৈরি করেছেন।
পুতিনের আফ্রিকা নীতি পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হলে ওই অঞ্চলের জনসাধারণের কপালে সীমাহীন নিপীড়ন নেমে আসবে, তা আগে থেকে অনুমান করাই যায়। কারণ আফ্রিকায় চলমান ১৬টি অভ্যন্তরীণ সংঘাতের প্রধান শিকড় গেঁড়ে আছে এসব কর্তৃত্ববাদী শাসনের ভেতরে। বিপরীতে আফ্রিকায় যে কয়েকটি হাতেগোনা দেশে গণতন্ত্র আছে, সেসব দেশে তাকিয়ে দেখুন, কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত নেই। সুতরাং আরও কর্তৃত্ববাদ আরও সংঘাতের জন্ম দেবে বলে ধারণা করা যায়।

আফ্রিকার ৭৫ শতাংশ মানুষ গণতন্ত্র পছন্দ করে। তাদের ওপর চেপে বসেছে স্বৈরতান্ত্রিক সরকার। এসব একনায়ক সরকার গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর ক্রমবর্ধমান হারে দমন, পীড়ন, নির্যাতন চালাবে তাতে সন্দেহ নেই। এতে আফ্রিকার অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়বে। বাড়বে নিজ দেশ ছেড়ে শরণার্থী হওয়ার সংখ্যা।
আফ্রিকান সেন্টারের তথ্যমতে, পুতিন লিবিয়াকে ২০১৯ সাল থেকে স্নাইপার, মিগ-২৯, এসইউ-২৪ ফাইটার জেট, এসএ-২২ সারফেস টু ক্ষেপণাস্ত্র, বিমানবিধ্বংসী সরঞ্জাম ও শত শত উড়োজাহাজ দিয়ে সহায়তা করে আসছেন। বিনিময়ে কী ফায়দা তুলে নিচ্ছেন পুতিন? পূর্ব লিবিয়ার তেলক্ষেত্র থেকে রাজস্ব ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে নৌসুবিধা নিচ্ছে রাশিয়া।
পুতিনের আফ্রিকা নীতির মধ্যে আরও রয়েছে—বৈধ সরকারগুলোকে কোণঠাসা করে রাখা, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালিয়ে সমাজকে বিভক্ত করে রাখা, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অসাংবিধানিক দাবিগুলোকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। আফ্রিকার অন্তত আটজন নেতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে পুতিন এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
সুদানের স্বৈরশাসক ওমর আল বশিরকে দীর্ঘদিন ধরে সমর্থন দিয়ে গেছে মস্কো। সেখানে সুদানের সামরিক বাহিনীকে সমর্থন দিতে গিয়ে নিজেদের সেনাদের যুক্ত করেছে রাশিয়া। বিনিময়ে পশ্চিম সুদানের সোনার খনিগুলোতে অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেছেন মহামান্য পুতিন।
তারপর পুতিন নজর দিয়েছেন মোজাম্বিকের দিকে। দেশটির উত্তরে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে। সুতরাং তাদের মোকাবিলা করা দরকার—এই অজুহাতে রুশ সেনাসমর্থিত ওয়াগনার গ্রুপকে নিযুক্ত করেছে রাশিয়া। শুধুই কি জঙ্গি মোকাবিলা করাই উদ্দেশ্য? মনে হয় না। আসলে এ অঞ্চলের গ্যাস খনির দিকে নজর পড়েছে পুতিনের।
আফ্রিকার আরেক দেশ মালিকে কতটা কবজা করেছেন পুতিন, তা একটি ঘটনার দিকে নজর দিলেই স্পষ্ট হবে। ঘটনা ২০২০ সালের ১৮ আগস্টের। ওই দিন সেনা অভ্যুত্থানের পর খুশিতে রাস্তায় নেমে আসেন অনেক মানুষ। তাঁদের অনেকের হাতে রাশিয়ার পতাকা ও পুতিনের ছবি দেখা গেছে। এ থেকেই বোঝা যায়, পুতিন সেখানে কতটা প্রভাব বিস্তার করেছেন।
নানা কারণেই আফ্রিকাকে নিজের কবজায় রাখতে চান পুতিন। এর একটি বড় কারণ ‘অস্ত্র ব্যবসা’। এখন পর্যন্ত আফ্রিকার অস্ত্রের বাজারের ৪৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে মস্কো। রাশিয়ার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কেনে আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, মিসর, মরক্কো, নাইজেরিয়া, সুদান, সেনেগাল ও জাম্বিয়া।

পুতিন চান দক্ষিণ ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাগরে তাঁর প্রভাব বিস্তার করতে। একই সঙ্গে চান, এ অঞ্চলে ন্যাটোকে চাপের মধ্যে রাখতে। নিজের শক্তি প্রদর্শন এবং এ অঞ্চলকে পশ্চিমা প্রভাবমুক্ত করে নিজের কবজায় আনাই পুতিনের অদম্য ইচ্ছা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এসব ইচ্ছা পূরণ করতে পুতিন ব্যবহার করছেন আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বুরুন্ডি, গিনি, মাদাগাস্কার, মোজাম্বিক, দক্ষিণ সুদান, উগান্ডা ও জিম্বাবুয়ের পুতুল সরকারকে।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, আরও দীর্ঘকাল আফ্রিকা পুতিনের এসব খায়েশ পূরণ করে যাবে। কারণ, আফ্রিকার সঙ্গে রাশিয়ার রয়েছে ঐতিহাসিক সম্পর্ক—সেই সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় থেকে।
রাশিয়া ইউক্রেন সংকট সম্পর্কিত সংবাদ পেতে - এখানে ক্লিক করুন
অ্যাঙ্গোলার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এন কুলুম্বু বলেছেন, ‘মস্কোর সঙ্গে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের কথা মাথায় রেখেই অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ার মতো দেশগুলো জাতিসংঘের ইউক্রেনের প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে।’
সূত্র: ফরেন পলিসি, আফ্রিকা সেন্টার, দ্য কনভারসেশন ও ডয়চে ভেলে
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত পড়ুন:

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৪ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৪ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৪ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

পুতিন এখন ইউক্রেন নিয়ে খেলায় মেতে আছেন, তাতে সন্দেহ নেই। তাই বলে কি অন্য কোথাও তাঁর নজর নেই? আলবৎ আছে। আপনি যদি গভীরভাবে তলিয়ে ভাবেন, তাহলে দেখবেন, আফ্রিকা অঞ্চলে এক গভীর পরিকল্পনা নিয়ে খেলায় মেতেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
১৬ জুন ২০২২
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৪ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৪ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

পুতিন এখন ইউক্রেন নিয়ে খেলায় মেতে আছেন, তাতে সন্দেহ নেই। তাই বলে কি অন্য কোথাও তাঁর নজর নেই? আলবৎ আছে। আপনি যদি গভীরভাবে তলিয়ে ভাবেন, তাহলে দেখবেন, আফ্রিকা অঞ্চলে এক গভীর পরিকল্পনা নিয়ে খেলায় মেতেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
১৬ জুন ২০২২
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৪ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৪ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

পুতিন এখন ইউক্রেন নিয়ে খেলায় মেতে আছেন, তাতে সন্দেহ নেই। তাই বলে কি অন্য কোথাও তাঁর নজর নেই? আলবৎ আছে। আপনি যদি গভীরভাবে তলিয়ে ভাবেন, তাহলে দেখবেন, আফ্রিকা অঞ্চলে এক গভীর পরিকল্পনা নিয়ে খেলায় মেতেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
১৬ জুন ২০২২
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৪ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৪ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

পুতিন এখন ইউক্রেন নিয়ে খেলায় মেতে আছেন, তাতে সন্দেহ নেই। তাই বলে কি অন্য কোথাও তাঁর নজর নেই? আলবৎ আছে। আপনি যদি গভীরভাবে তলিয়ে ভাবেন, তাহলে দেখবেন, আফ্রিকা অঞ্চলে এক গভীর পরিকল্পনা নিয়ে খেলায় মেতেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
১৬ জুন ২০২২
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৪ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৪ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৪ দিন আগে