
তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে চীন। এই প্রকল্প বাঁধের আশপাশ এবং এর ভাটিতে অবস্থিত অঞ্চলে পরিবেশগত প্রভাব এবং চীন-ভারত সম্পর্কের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ইয়ারলুন সাংপো (ভারত-বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত) নদীর ভাটিতে বাঁধটি নির্মিত হলে এটি হবে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এটি চীনের তৈরি আরেকটি বিশাল বাঁধ থ্রি গর্জেসের চেয়ে তিন গুণ বেশি শক্তি উৎপাদনে সক্ষম হতে পারে। এই বাঁধের নির্মাণ চীনের তিব্বত মালভূমির জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর পরিকল্পনায় একটি বড় পদক্ষেপ। তবে এটি চীন-ভারত সীমান্ত অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণ প্রতিযোগিতা তীব্র করতে পারে বলে কূটনৈতিক ও পরিবেশগত বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, চীন সরকার সম্প্রতি বিশাল প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে। এই প্রকল্প বেইজিংয়ের ২০২১-২৫ সালের ১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রতিবেদনে প্রকল্পটির সঠিক স্থান সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। তবে এটি তিব্বতের দীর্ঘতম নদী ইয়ারলুন সাংপোর এমন একটি কৌশলগত স্থানে নির্মাণ করা হবে, যা বাঁধটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হওয়ার সুযোগ দেবে। এই নদ ব্রহ্মপুত্র নামে ভারতের অরুণাচল-আসাম প্রদেশে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং এরপর এটির একটি শাখা যমুনা নামে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আদি খাতকে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র বলা হয়।
জানা গেছে, প্রকল্পটি নির্মিত হবে ইয়ারলুন সাংপোর ভাটিতে অবস্থিত গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন বা ‘গ্রেট বেন্ড’ এলাকায়। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন ২০২০ সালে একটি অনুমান প্রকাশ করেছিল যে এই বাঁধ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনাময় অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি প্রায় ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে প্রতি বছর।
এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ থ্রি গর্জেস বাঁধকে ছাড়িয়ে যাবে। থ্রি গর্জেস জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে প্রতি বছর ৮৮ দশমিক ২ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। সিনহুয়া প্রস্তাবিত বাঁধটিকে ‘একটি নিরাপদ প্রকল্প’ বলে উল্লেখ করেছে। তারা দাবি করেছে, এই প্রকল্প ‘পরিবেশগত সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়’ এবং ‘এটি একটি সবুজ প্রকল্প, যা কম কার্বন নিঃসরণকে’ উৎসাহিত করতে সাহায্য করবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং শুক্রবার বলেছেন, প্রকল্পটি নিয়ে কয়েক দশক ধরে গবেষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রকল্পের নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত প্রভাব মোকাবিলার জন্য পদক্ষেপ এবং ভাটিতে নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধের ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘চীন বর্তমানে ভাটির দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যমান যোগাযোগের চ্যানেল বজায় রাখবে এবং বিপর্যয় প্রতিরোধ ও প্রশমনে সহযোগিতা বাড়াবে।’
তবে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁরা বলছেন, প্রকল্পটি তিব্বত মালভূমির নাজুক বাস্তুতন্ত্র, স্থানীয় সম্প্রদায় এবং ভাটির দেশগুলোর ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। এ ছাড়া এর বিশাল প্রকৌশল খরচ এবং চ্যালেঞ্জগুলো তো আছেই।
সিচুয়ান প্রদেশের ভূতাত্ত্বিক ফান সিয়াও বলেছিলেন, বাঁধটির অবস্থান একটি বিরল ‘জৈববৈচিত্র্য হটস্পটে’ এবং ভূতাত্ত্বিকভাবে একটি অস্থিতিশীল অঞ্চলে এটি অবস্থিত। বিষয়টি পরিবেশের জন্য ‘অপ্রত্যাবর্তনীয় ক্ষতির’ কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকা খুব বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ। ভূমিকম্পের ফলে এ ধরনের মহা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ঝাঁকুনি ভূমিধস এবং অন্যান্য বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।’
ফান সিয়াও আরও বলেন, ‘ইয়ারলুন সাংপো গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের ভূতাত্ত্বিক অস্থিতিশীলতা এবং ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা চীনের পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য নদীর চেয়ে অনেক বেশি।’ তাঁর মতে, ‘আমার ভয়, প্রস্তাবিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণে বিশাল খরচ হবে এবং বিপর্যয়ের ব্যাপক আশঙ্কা তৈরি হবে এতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে গত দুই দশকে বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে যে তাণ্ডবলীলা ঘটেছে, তার ফলে ওই অঞ্চলের জলবিদ্যুৎ শক্তির অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে।’
ফান সিয়াও চীন সরকারের দাবিগুলোর প্রতি সন্দেহ পোষণ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বড় বাঁধ প্রকল্পগুলো মূলত অর্থনৈতিক চিন্তা এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থে হাতে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে এসব গোষ্ঠী যথাযথ বৈজ্ঞানিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না এবং এগুলোতে জনসাধারণের যথাযথ অংশগ্রহণ থাকে না।
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘এটি এখনো অস্পষ্ট যে ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ের সম্ভাব্য প্রভাব, পরিবেশগত ক্ষতি এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব মূল্যায়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কি না। কিংবা ভাটির ব্রহ্মপুত্রের খাত এবং উপমহাদেশের সমতল ভূমির ওপর এই বাঁধের পরিবেশগত ও বাস্তুতান্ত্রিক প্রভাব পুরোপুরি বিবেচনা করা হয়েছে কি না।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার আন্তসীমান্ত নদী এবং নদীশাসন-সম্পর্কিত গবেষক সায়ানাংশু মোদক বলেন, ভারতের প্রধান একটি উদ্বেগ হলো অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া বা ভূমিকম্পজনিত ঘটনাগুলোর কারণে বাঁধটিতে কী ধরনের বিপর্যয় তৈরি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকা অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ। ২০২১ সালের মার্চে গ্রেট বেন্ড এলাকায় এক বিশাল হিমবাহ বিপর্যয়ের কারণে নদীর প্রবাহ থমকে গিয়েছিল এবং পানির স্তর ৩৩ ফুট পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। এই ধারাবাহিক প্রভাবগুলো অঞ্চলটির ভঙ্গুরতা এবং বিশাল আকারের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুতর ঝুঁকিগুলোই তুলে ধরে।’
প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে চীন এবং ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় অবস্থিত দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনার কারণ। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশও চীনের ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সায়ানাংশু মোদক জানান, এই প্রকল্প থেকে চীনকে বিরত রাখার জন্য ভারত খুব সামান্যই বিকল্প দিতে পারবে বেইজিংকে। বিষয়টি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মধ্যে গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে দুই পক্ষই হিমালয় অঞ্চলে সীমান্ত উত্তেজনা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। চীনের শীর্ষ কূটনীতিক (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ওয়াং ই এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও চলতি মাসের শুরুতে বেইজিংয়ে উচ্চপর্যায়ের সীমান্ত আলোচনা করেছেন; যা বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম।

মোদক বলেন, ‘ভারতের উদ্বেগ ব্যাপক ও ন্যায্য। বিশাল বাঁধ প্রকল্প দুই দেশের মধ্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করবে কি না; এই বিষয়ে মন্তব্য করা খুব চটজলদি হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘চীনের জন্য এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দেশটির কারিগরি সক্ষমতা এবং হাইড্রোলিক প্রকৌশলে শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরবে।’
এই পানি বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘নামচা বারওয়া পর্বতের কাছে ইয়ারলুন সাংপো প্রায় ২ মিটার খাড়াভাবে নিচে নেমে গেছে। এই এলাকা পৃথিবীর অন্যতম সুবিধাজনক জলবিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য উপযোগী।’ তিনি বলেন, ‘ভারত ক্রমবর্ধমানভাবে এই বিশাল বাঁধ এবং পানি সংরক্ষণ ও প্রবাহের বিষয়গুলোকে জাতীয় নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে এবং এই চিন্তা একই নদীর ভাটিতে নিজ অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে নয়াদিল্লির সিদ্ধান্তকে ত্বরান্বিত করছে।’
গত জুলাইয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত চীনের পরিকল্পিত বাঁধ প্রকল্পের প্রতিক্রিয়ায় অরুণাচলে ১২টি জলবিদ্যুৎ স্টেশন নির্মাণে ১ বিলিয়ন ডলার খরচের পরিকল্পনা করছে।
২০২২ সালে ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিসের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চীন ও ভারত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি এবং বাঁধ প্রকল্প নিয়ে প্রতিযোগিতা বাড়াচ্ছে। এতে বলা হয়, তথাকথিত গ্রেট বেন্ড বাঁধ ব্রহ্মপুত্রের মূলধারায় সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং বিতর্কিত প্রকল্প। এরই মধ্যে এই নদীর ওপর স্যাটেলাইট চিত্র থেকে প্রায় ২০টি বাঁধ চিহ্নিত করা হয়েছে।
থিংকট্যাংকটি জানিয়েছে, ভারত ২০০০ সালের শুরু থেকে অরুণাচল প্রদেশে ১৫০টির মতো বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। বিষয়টি কেবল পানির প্রবাহ নয়, আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণেরও সংকেত দেয়।
মোদকও বাঁধ নির্মাণের ফলে সৃষ্ট ব্যাপক ‘পারিপার্শ্বিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব’ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন; বিশেষ করে তিব্বত ও অরুণাচল প্রদেশে এই বাঁধের কারণে মানুষের বাস্তুহারা হওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘ভারত-চীনের মধ্যে একমাত্র একটি বিষয়ই নিশ্চিতভাবে উঠে আসে—এই অঞ্চলের অনন্য জীববৈচিত্র্য এবং এর আদিবাসী জনগণের ঐতিহ্য অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
সাংহাইভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক নি লেক্সিওং বলেছেন, ‘এই মেগা বাঁধ প্রকল্প সম্ভবত দুই দেশের মধ্যে একটি ‘শব্দযুদ্ধ’ পুনরায় উসকে দেবে। এখানে অবধারিতভাবেই এই প্রশ্ন উঠবে যে বেইজিং কি ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহকে কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে দিল্লির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।’
এই বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘ভারতীয় গণমাধ্যমে পানিযুদ্ধ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। চীনে একটি বাঁধ নির্মাণ বিষয়ে যদি দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকত, তাহলে তা হয়তো বড় কোনো ব্যাপার হতো না। কিন্তু যখন তারা একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখতে শুরু করেছে, তখন যেকোনো কিছুই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে, যার মধ্যে পানির সমস্যা অন্যতম।’
যদিও বেইজিং দাবি করেছে, ইয়ারলুন সাংপো নদীর সম্ভাবনা ব্যবহার করা একটি সার্বভৌমত্বের বিষয়। নি লেক্সিং বলেন, গ্রেট বেন্ডে একটি মেগা বাঁধ প্রকল্প ভারতকে মোকাবিলার ক্ষেত্রে চীনকে কৌশলগত সুবিধা দেবে। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত—যা-ই হোক না কেন, এটি কার্যত ভারত-সম্পর্কিত কূটনৈতিক ক্ষেত্রে চীনকে কৌশলগত অবস্থানে এগিয়ে রাখবে। ভারত যে এটিকে একটি হুমকি হিসেবে দেখছে, এটাও আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছু নয়। কিন্তু এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্যও ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
তবে সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সাউথ এশিয়া অ্যান্ড চায়না সেন্টারের সিনিয়র ফেলো লিউ ঝংই বলেছেন, বেইজিং ভাটির দেশগুলোর উদ্বেগের বিষয়টি মাথায় নিয়েই বাঁধ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। তিনি বলেন, ‘চীনের বাঁধ নির্মাণ কার্যক্রমের ফলে ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহে যে প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার চেয়ে কমই পড়বে।’
আবার বেইজিং এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতকে কৌশলগতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে—এমন ধারণা লিউ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চীনের আঞ্চলিক সীমানার মধ্যে। ভারত অরুণাচল প্রদেশে বাঁধ নির্মাণের কাজ ত্বরান্বিত করতে যে পরিকল্পনা করেছে, তা স্পষ্ট করে দেয় যে তারা ওই এলাকার ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করতে মনোযোগ দিয়েছে। কারণ, এই অঞ্চলকে চীন দক্ষিণ তিব্বত হিসেবে দাবি করে।’
এ সময় লিউ অভিযোগ করে বলেন, ভারত এবং এর পশ্চিমা মিত্ররা সম্ভবত এই প্রকল্প নিয়ে তাদের হতাশা থেকে চীনের বিরুদ্ধে গিবত করবে। তিনি বলেন, ‘তবে আমি মনে করি না যে বাঁধ প্রকল্পটি চীন-ভারত সম্পর্কের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে। তবে এর কারণে সম্ভবত চীন-ভারত সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পথে বাধা আসবে; বিশেষ করে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর।’
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে চীন। এই প্রকল্প বাঁধের আশপাশ এবং এর ভাটিতে অবস্থিত অঞ্চলে পরিবেশগত প্রভাব এবং চীন-ভারত সম্পর্কের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ইয়ারলুন সাংপো (ভারত-বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত) নদীর ভাটিতে বাঁধটি নির্মিত হলে এটি হবে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এটি চীনের তৈরি আরেকটি বিশাল বাঁধ থ্রি গর্জেসের চেয়ে তিন গুণ বেশি শক্তি উৎপাদনে সক্ষম হতে পারে। এই বাঁধের নির্মাণ চীনের তিব্বত মালভূমির জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর পরিকল্পনায় একটি বড় পদক্ষেপ। তবে এটি চীন-ভারত সীমান্ত অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণ প্রতিযোগিতা তীব্র করতে পারে বলে কূটনৈতিক ও পরিবেশগত বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, চীন সরকার সম্প্রতি বিশাল প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে। এই প্রকল্প বেইজিংয়ের ২০২১-২৫ সালের ১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রতিবেদনে প্রকল্পটির সঠিক স্থান সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। তবে এটি তিব্বতের দীর্ঘতম নদী ইয়ারলুন সাংপোর এমন একটি কৌশলগত স্থানে নির্মাণ করা হবে, যা বাঁধটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হওয়ার সুযোগ দেবে। এই নদ ব্রহ্মপুত্র নামে ভারতের অরুণাচল-আসাম প্রদেশে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং এরপর এটির একটি শাখা যমুনা নামে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আদি খাতকে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র বলা হয়।
জানা গেছে, প্রকল্পটি নির্মিত হবে ইয়ারলুন সাংপোর ভাটিতে অবস্থিত গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন বা ‘গ্রেট বেন্ড’ এলাকায়। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন ২০২০ সালে একটি অনুমান প্রকাশ করেছিল যে এই বাঁধ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনাময় অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি প্রায় ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে প্রতি বছর।
এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ থ্রি গর্জেস বাঁধকে ছাড়িয়ে যাবে। থ্রি গর্জেস জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে প্রতি বছর ৮৮ দশমিক ২ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। সিনহুয়া প্রস্তাবিত বাঁধটিকে ‘একটি নিরাপদ প্রকল্প’ বলে উল্লেখ করেছে। তারা দাবি করেছে, এই প্রকল্প ‘পরিবেশগত সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়’ এবং ‘এটি একটি সবুজ প্রকল্প, যা কম কার্বন নিঃসরণকে’ উৎসাহিত করতে সাহায্য করবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং শুক্রবার বলেছেন, প্রকল্পটি নিয়ে কয়েক দশক ধরে গবেষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রকল্পের নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত প্রভাব মোকাবিলার জন্য পদক্ষেপ এবং ভাটিতে নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধের ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘চীন বর্তমানে ভাটির দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যমান যোগাযোগের চ্যানেল বজায় রাখবে এবং বিপর্যয় প্রতিরোধ ও প্রশমনে সহযোগিতা বাড়াবে।’
তবে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁরা বলছেন, প্রকল্পটি তিব্বত মালভূমির নাজুক বাস্তুতন্ত্র, স্থানীয় সম্প্রদায় এবং ভাটির দেশগুলোর ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। এ ছাড়া এর বিশাল প্রকৌশল খরচ এবং চ্যালেঞ্জগুলো তো আছেই।
সিচুয়ান প্রদেশের ভূতাত্ত্বিক ফান সিয়াও বলেছিলেন, বাঁধটির অবস্থান একটি বিরল ‘জৈববৈচিত্র্য হটস্পটে’ এবং ভূতাত্ত্বিকভাবে একটি অস্থিতিশীল অঞ্চলে এটি অবস্থিত। বিষয়টি পরিবেশের জন্য ‘অপ্রত্যাবর্তনীয় ক্ষতির’ কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকা খুব বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ। ভূমিকম্পের ফলে এ ধরনের মহা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ঝাঁকুনি ভূমিধস এবং অন্যান্য বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।’
ফান সিয়াও আরও বলেন, ‘ইয়ারলুন সাংপো গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের ভূতাত্ত্বিক অস্থিতিশীলতা এবং ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা চীনের পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য নদীর চেয়ে অনেক বেশি।’ তাঁর মতে, ‘আমার ভয়, প্রস্তাবিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণে বিশাল খরচ হবে এবং বিপর্যয়ের ব্যাপক আশঙ্কা তৈরি হবে এতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে গত দুই দশকে বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে যে তাণ্ডবলীলা ঘটেছে, তার ফলে ওই অঞ্চলের জলবিদ্যুৎ শক্তির অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে।’
ফান সিয়াও চীন সরকারের দাবিগুলোর প্রতি সন্দেহ পোষণ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বড় বাঁধ প্রকল্পগুলো মূলত অর্থনৈতিক চিন্তা এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থে হাতে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে এসব গোষ্ঠী যথাযথ বৈজ্ঞানিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না এবং এগুলোতে জনসাধারণের যথাযথ অংশগ্রহণ থাকে না।
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘এটি এখনো অস্পষ্ট যে ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ের সম্ভাব্য প্রভাব, পরিবেশগত ক্ষতি এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব মূল্যায়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কি না। কিংবা ভাটির ব্রহ্মপুত্রের খাত এবং উপমহাদেশের সমতল ভূমির ওপর এই বাঁধের পরিবেশগত ও বাস্তুতান্ত্রিক প্রভাব পুরোপুরি বিবেচনা করা হয়েছে কি না।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার আন্তসীমান্ত নদী এবং নদীশাসন-সম্পর্কিত গবেষক সায়ানাংশু মোদক বলেন, ভারতের প্রধান একটি উদ্বেগ হলো অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া বা ভূমিকম্পজনিত ঘটনাগুলোর কারণে বাঁধটিতে কী ধরনের বিপর্যয় তৈরি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকা অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ। ২০২১ সালের মার্চে গ্রেট বেন্ড এলাকায় এক বিশাল হিমবাহ বিপর্যয়ের কারণে নদীর প্রবাহ থমকে গিয়েছিল এবং পানির স্তর ৩৩ ফুট পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। এই ধারাবাহিক প্রভাবগুলো অঞ্চলটির ভঙ্গুরতা এবং বিশাল আকারের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুতর ঝুঁকিগুলোই তুলে ধরে।’
প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে চীন এবং ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় অবস্থিত দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনার কারণ। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশও চীনের ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সায়ানাংশু মোদক জানান, এই প্রকল্প থেকে চীনকে বিরত রাখার জন্য ভারত খুব সামান্যই বিকল্প দিতে পারবে বেইজিংকে। বিষয়টি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মধ্যে গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে দুই পক্ষই হিমালয় অঞ্চলে সীমান্ত উত্তেজনা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। চীনের শীর্ষ কূটনীতিক (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ওয়াং ই এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও চলতি মাসের শুরুতে বেইজিংয়ে উচ্চপর্যায়ের সীমান্ত আলোচনা করেছেন; যা বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম।

মোদক বলেন, ‘ভারতের উদ্বেগ ব্যাপক ও ন্যায্য। বিশাল বাঁধ প্রকল্প দুই দেশের মধ্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করবে কি না; এই বিষয়ে মন্তব্য করা খুব চটজলদি হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘চীনের জন্য এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দেশটির কারিগরি সক্ষমতা এবং হাইড্রোলিক প্রকৌশলে শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরবে।’
এই পানি বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘নামচা বারওয়া পর্বতের কাছে ইয়ারলুন সাংপো প্রায় ২ মিটার খাড়াভাবে নিচে নেমে গেছে। এই এলাকা পৃথিবীর অন্যতম সুবিধাজনক জলবিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য উপযোগী।’ তিনি বলেন, ‘ভারত ক্রমবর্ধমানভাবে এই বিশাল বাঁধ এবং পানি সংরক্ষণ ও প্রবাহের বিষয়গুলোকে জাতীয় নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে এবং এই চিন্তা একই নদীর ভাটিতে নিজ অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে নয়াদিল্লির সিদ্ধান্তকে ত্বরান্বিত করছে।’
গত জুলাইয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত চীনের পরিকল্পিত বাঁধ প্রকল্পের প্রতিক্রিয়ায় অরুণাচলে ১২টি জলবিদ্যুৎ স্টেশন নির্মাণে ১ বিলিয়ন ডলার খরচের পরিকল্পনা করছে।
২০২২ সালে ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিসের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চীন ও ভারত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি এবং বাঁধ প্রকল্প নিয়ে প্রতিযোগিতা বাড়াচ্ছে। এতে বলা হয়, তথাকথিত গ্রেট বেন্ড বাঁধ ব্রহ্মপুত্রের মূলধারায় সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং বিতর্কিত প্রকল্প। এরই মধ্যে এই নদীর ওপর স্যাটেলাইট চিত্র থেকে প্রায় ২০টি বাঁধ চিহ্নিত করা হয়েছে।
থিংকট্যাংকটি জানিয়েছে, ভারত ২০০০ সালের শুরু থেকে অরুণাচল প্রদেশে ১৫০টির মতো বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। বিষয়টি কেবল পানির প্রবাহ নয়, আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণেরও সংকেত দেয়।
মোদকও বাঁধ নির্মাণের ফলে সৃষ্ট ব্যাপক ‘পারিপার্শ্বিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব’ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন; বিশেষ করে তিব্বত ও অরুণাচল প্রদেশে এই বাঁধের কারণে মানুষের বাস্তুহারা হওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘ভারত-চীনের মধ্যে একমাত্র একটি বিষয়ই নিশ্চিতভাবে উঠে আসে—এই অঞ্চলের অনন্য জীববৈচিত্র্য এবং এর আদিবাসী জনগণের ঐতিহ্য অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
সাংহাইভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক নি লেক্সিওং বলেছেন, ‘এই মেগা বাঁধ প্রকল্প সম্ভবত দুই দেশের মধ্যে একটি ‘শব্দযুদ্ধ’ পুনরায় উসকে দেবে। এখানে অবধারিতভাবেই এই প্রশ্ন উঠবে যে বেইজিং কি ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহকে কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে দিল্লির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।’
এই বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘ভারতীয় গণমাধ্যমে পানিযুদ্ধ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। চীনে একটি বাঁধ নির্মাণ বিষয়ে যদি দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকত, তাহলে তা হয়তো বড় কোনো ব্যাপার হতো না। কিন্তু যখন তারা একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখতে শুরু করেছে, তখন যেকোনো কিছুই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে, যার মধ্যে পানির সমস্যা অন্যতম।’
যদিও বেইজিং দাবি করেছে, ইয়ারলুন সাংপো নদীর সম্ভাবনা ব্যবহার করা একটি সার্বভৌমত্বের বিষয়। নি লেক্সিং বলেন, গ্রেট বেন্ডে একটি মেগা বাঁধ প্রকল্প ভারতকে মোকাবিলার ক্ষেত্রে চীনকে কৌশলগত সুবিধা দেবে। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত—যা-ই হোক না কেন, এটি কার্যত ভারত-সম্পর্কিত কূটনৈতিক ক্ষেত্রে চীনকে কৌশলগত অবস্থানে এগিয়ে রাখবে। ভারত যে এটিকে একটি হুমকি হিসেবে দেখছে, এটাও আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছু নয়। কিন্তু এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্যও ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
তবে সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সাউথ এশিয়া অ্যান্ড চায়না সেন্টারের সিনিয়র ফেলো লিউ ঝংই বলেছেন, বেইজিং ভাটির দেশগুলোর উদ্বেগের বিষয়টি মাথায় নিয়েই বাঁধ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। তিনি বলেন, ‘চীনের বাঁধ নির্মাণ কার্যক্রমের ফলে ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহে যে প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার চেয়ে কমই পড়বে।’
আবার বেইজিং এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতকে কৌশলগতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে—এমন ধারণা লিউ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চীনের আঞ্চলিক সীমানার মধ্যে। ভারত অরুণাচল প্রদেশে বাঁধ নির্মাণের কাজ ত্বরান্বিত করতে যে পরিকল্পনা করেছে, তা স্পষ্ট করে দেয় যে তারা ওই এলাকার ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করতে মনোযোগ দিয়েছে। কারণ, এই অঞ্চলকে চীন দক্ষিণ তিব্বত হিসেবে দাবি করে।’
এ সময় লিউ অভিযোগ করে বলেন, ভারত এবং এর পশ্চিমা মিত্ররা সম্ভবত এই প্রকল্প নিয়ে তাদের হতাশা থেকে চীনের বিরুদ্ধে গিবত করবে। তিনি বলেন, ‘তবে আমি মনে করি না যে বাঁধ প্রকল্পটি চীন-ভারত সম্পর্কের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে। তবে এর কারণে সম্ভবত চীন-ভারত সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পথে বাধা আসবে; বিশেষ করে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর।’
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৭ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

ভূতাত্ত্বিক ফান সিয়াও বলেছিলেন, বাঁধটির অবস্থান একটি বিরল ‘জৈববৈচিত্র্য হটস্পটে’ এবং ভূতাত্ত্বিকভাবে একটি অস্থিতিশীল অঞ্চলে এটি অবস্থিত। বিষয়টি পরিবেশের জন্য ‘অপ্রত্যাবর্তনীয় ক্ষতির’ কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকা খুব বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ।
০৪ জানুয়ারি ২০২৫
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৭ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

ভূতাত্ত্বিক ফান সিয়াও বলেছিলেন, বাঁধটির অবস্থান একটি বিরল ‘জৈববৈচিত্র্য হটস্পটে’ এবং ভূতাত্ত্বিকভাবে একটি অস্থিতিশীল অঞ্চলে এটি অবস্থিত। বিষয়টি পরিবেশের জন্য ‘অপ্রত্যাবর্তনীয় ক্ষতির’ কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকা খুব বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ।
০৪ জানুয়ারি ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভূতাত্ত্বিক ফান সিয়াও বলেছিলেন, বাঁধটির অবস্থান একটি বিরল ‘জৈববৈচিত্র্য হটস্পটে’ এবং ভূতাত্ত্বিকভাবে একটি অস্থিতিশীল অঞ্চলে এটি অবস্থিত। বিষয়টি পরিবেশের জন্য ‘অপ্রত্যাবর্তনীয় ক্ষতির’ কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকা খুব বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ।
০৪ জানুয়ারি ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৭ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভূতাত্ত্বিক ফান সিয়াও বলেছিলেন, বাঁধটির অবস্থান একটি বিরল ‘জৈববৈচিত্র্য হটস্পটে’ এবং ভূতাত্ত্বিকভাবে একটি অস্থিতিশীল অঞ্চলে এটি অবস্থিত। বিষয়টি পরিবেশের জন্য ‘অপ্রত্যাবর্তনীয় ক্ষতির’ কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকা খুব বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ।
০৪ জানুয়ারি ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৭ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে