আজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির প্রচারের আলোয় আসতে খুব একটা আগ্রহী নন। কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পাদপ্রদীপের আলো যেন কেবলই তাঁর দিকে পড়েছে। শুধু পাকিস্তানে নয়, সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ও দূরের কূটনৈতিক রাজধানীগুলোতেও আলোচিত হচ্ছেন তিনি।
সর্বশেষ কাশ্মীর নিয়ে জেনারেল মুনিরের মন্তব্য ভারতে পাকিস্তানের সামরিক অবস্থান ও আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধিতে দেশটির ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু করেছে। জেনারেল মুনির ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে এই মন্তব্য করেন।
কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার এক বিবদমান অঞ্চল। দুই দেশই এই অঞ্চলের পুরোটাই দাবি করে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করে আংশিকভাবে। এই অঞ্চল ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যকার সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। সহিংসতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হলেও জেনারেল মুনিরের কথাগুলোকে ব্যাপকভাবে ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে এবং সেগুলোকে তাঁর ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরও আক্রমণাত্মক মনোভাব হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানে সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, সরকার প্রতিষ্ঠা ও অপসারণের জন্য সমালোচিত। ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা আবারও বাড়ার প্রেক্ষাপটে এই অস্থির পারমাণবিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে তাঁকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাঁকে পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়।
গত শতকের পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে জন্ম নেন জেনারেল মুনির। তাঁর পিতা একটি স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন এবং ধর্মীয় বিষয়ে তাঁর সুগভীর জ্ঞান ছিল। তিনি ১৯৮৬ সালে মাংলায় অফিসার্স ট্রেনিং স্কুলের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেখানে তিনি সেরা ক্যাডেট হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ সোর্ড অব অনার অর্জন করেন। এরপর তিনি ২৩ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন।
প্রায় চার দশক ধরে জেনারেল মুনির কাশ্মীরের কাছাকাছি পাকিস্তানের সংবেদনশীল উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে সেনা পরিচালনা করেছেন। তিনি দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করতে সৌদি আরবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ইসলামাবাদে ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি থেকে জনপ্রশাসন ও কৌশলগত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এ ছাড়া তিনি জাপান ও মালয়েশিয়ার সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও পড়ালেখা করেছেন।
২০২৩ সালে ইসলামাবাদের একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেনারেল মুনিরকে প্রথম দেখেন এই প্রতিবেদনের লেখক। মন্ত্রী, কূটনীতিক, জেনারেল ও সাংবাদিকভর্তি বিশাল হলরুমে তিনি এসেছিলেন বেসামরিক পোশাকে। ধীরস্থির ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভঙ্গিতে হেঁটে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় পুরো হলরুম পর্যবেক্ষণ করছিলেন তিনি। হাফেজ হওয়ায় তিনি পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বক্তৃতা শুরু করেন। এটি পাকিস্তানের সামরিক অভিজাতদের মধ্যে তাঁর বিরল মর্যাদার প্রতিফলন।
ব্যক্তিগতভাবে, জেনারেল মুনিরকে শান্ত স্বভাবের ও বিনয়ী মনে হয়েছে। তবে মঞ্চে তিনি ছিলেন কঠোর এবং সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান হিসেবে তিনি সবকিছু খুটিয়ে দেখছিলেন। একজন প্রশিক্ষিত মানুষ হিসেবে তিনি পর্যবেক্ষণ করতে, শুনতে ও অপেক্ষা করতে জানেন। এখন তাঁর কথাগুলো পাকিস্তানের বাইরেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
জেনারেল মুনির ২০২২ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হন। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট ও শাসনকার্যে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনগণের মোহভঙ্গের এক চরম সংকটের মুহূর্তে তিনি এই দায়িত্ব নেন। মাসব্যাপী জল্পনা-কল্পনার পর তাঁর নিয়োগ হয়েছিল। এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি।
জেনারেল মুনির পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআইয়ের প্রধান হিসেবে আট মাস দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ইমরান খান তাঁকে সরিয়ে দেন। অনেকে মনে করেন, এটি ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যদিও উভয় পক্ষই তা অস্বীকার করে। সেই মুহূর্তটি তাঁদের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে রয়ে গেছে। আজ ইমরান খান কারাগারে বন্দী এবং জেনারেল মুনির দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি।
অনেক বিশ্লেষক জেনারেল মুনিরকে তাঁর পূর্বসূরি জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার চেয়ে স্বভাব ও দৃষ্টিভঙ্গিতে ভিন্ন মনে করেন। জেনারেল বাজওয়া ছিলেন আরও বেশি জনমুখী। তিনি ভারতের সঙ্গে গোপন কূটনীতিকে সমর্থন করতেন এবং ২০১৯ সালে দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধিতে সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন। ‘বাজওয়া ডকট্রিন’ নামে পরিচিত তাঁর নীতির আওতায় তিনি ঐতিহ্যবাহী নিরাপত্তা অগ্রাধিকারের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমানভাবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও ভূ-অর্থনীতির ওপর জোর দিয়েছিলেন।
২০১৯ সালে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সৈন্যদের ওপর আত্মঘাতী বোমা হামলার পর জেনারেল বাজওয়া ভারতীয় বিমান হামলার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক প্রতিক্রিয়া তদারকি করেছিলেন। কিন্তু তিনি পরিস্থিতি উসকে দেননি। তিনি পাকিস্তানে ধরা পড়া ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ফেরত পাঠিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এড়াতে সাহায্য করেছিলেন।
সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো আব্দুল বাসিত বলেন, ‘বাজওয়া ছিলেন স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির।’ তিনি বলেন, ‘তাঁর কূটনৈতিক চ্যানেল খোলা ছিল এবং কাশ্মীর, আফগানিস্তান, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহারসহ একাধিক ফ্রন্ট তিনি বাস্তববাদিতার সঙ্গে সামাল দিচ্ছিলেন। তবে জেনারেল মুনির তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছেন এখন।’
আব্দুল বাসিত বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার অসমাপ্ত কাজ নিয়ে তিনি এসেছেন...তিনি যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছেন (ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, আঞ্চলিক উত্তেজনা) সেগুলো জরুরি ও পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। তাঁর পূর্বসূরি বাজওয়ার মতো দীর্ঘ, সুদূরপ্রসারী কৌশল অবলম্বনের সুযোগ তাঁর নেই। তাঁর দ্রুত, দৃঢ় প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন—দেশে ও বিদেশে উভয় ক্ষেত্রে।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ এমন একটি বিষয় যেখানে পাকিস্তানের কোনো সামরিক নেতাকে দুর্বলতা দেখালে চলবে না। রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আমির জিয়া বিবিসিকে বলেন, ‘কাশ্মীর পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ—পাকিস্তানের স্কুলে প্রতিটি শিশুকে এটি শেখানো হয়। এখানে একটি মৌলিক ধারণা হলো যে আমরা ভারতকে কোনো সুবিধা দিতে পারি না।’
গত সপ্তাহের হামলা ছিল গত দুই দশকের মধ্যে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। এর ফলে ভারত পাকিস্তানকে হামলাকারীদের সমর্থনের অভিযোগ এনেছে। ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কা রয়েছে।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জেনারেল মুনির বেশির ভাগ সময় জনসম্মুখে কথা বলেননি। তবে তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। গত ১৭ এপ্রিল ইসলামাবাদে প্রবাসী পাকিস্তানিদের এক সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা হিন্দুদের থেকে ভিন্ন’ সম্ভাব্য প্রতিটি দিক থেকে। কাশ্মীর নিয়ে তিনি তাঁর অবস্থান দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেন। একে পাকিস্তানের জুগুলার ভেইন বা ‘গলার শিরা’ বলে অভিহিত করেন। তিনি অঙ্গীকার করেন, পাকিস্তান ভারতীয় দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম থেকে কখনও মুখ ফিরিয়ে নেবে না।
এই বক্তৃতা হয়তো গত কয়েক বছরে পাকিস্তানি নেতাদের দেওয়া অনেক আদর্শগত বিবৃতির মতোই থেকে যেত, যদি এরপর যা ঘটেছিল তা না ঘটত। তাঁর বক্তব্যের ঠিক পাঁচ দিন পর, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গিরা পর্যটকদের ওপর গুলি চালায়।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জোশুয়া টি হোয়াইট বলেন, এটি প্রথাগত বাগাড়ম্বর ছিল না। তিনি বলেন, যদিও মূল বিষয়বস্তু পাকিস্তানের আদর্শিক বর্ণনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তবে এর সুর—বিশেষ করে হিন্দু-মুসলিম পার্থক্যের সরাসরি উল্লেখ—এটিকে বিশেষভাবে উসকানিমূলক করে তুলেছে।
জোশুয়া হোয়াইট আরও বলেন, পেহেলগাম হামলার ঠিক আগে এমন মন্তব্য পাকিস্তানের সংযম দাবি করা বা গোপন কূটনীতি অনুসরণ করার যেকোনো প্রচেষ্টাকে মারাত্মকভাবে জটিল করে তুলেছে। আব্দুল বাসিতও এই বিষয়ে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, জেনারেল মুনিরের ভাষণের বাহ্যিক রূপ ছিল ক্ষতিকর। তিনি বলেন, মুনির হয়তো সেই মুহূর্তে নিজেকে সামলাতে পারেননি। তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন, যা হয়তো ব্যক্তিগত পর্যায়ে বললে কারও ভ্রু কুঁচকাত না, কিন্তু জনসমক্ষে, সেনাপ্রধান হিসেবে বলায় সেগুলো অত্যন্ত আক্রমণাত্মক হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।
আব্দুল বাসিত আরও বলেন, কিছু লোক এটিকে ক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে দেখেছে। তিনি আরও বলেন, এটি ছিল তাঁর আগমনের মুহূর্তের মতো। এই সেই ঘোষণার মতো যে, এখন তিনিই সবকিছু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছেন এবং পাকিস্তানের দিকনির্দেশনা আবার সেনাবাহিনীর হাতেই।
জেনারেল মুনির চলতি বছরের শুরুতে আরেকটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তাঁর সেই ভাষণের পর অনেকে মনে করেন, তিনি তাঁর পূর্বসূরির চেয়ে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করছেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীর সংহতি দিবসে মুজাফফারাবাদে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি ঘোষণা করেন, পাকিস্তান ইতিমধ্যেই কাশ্মীরের জন্য তিনটি যুদ্ধ করেছে, প্রয়োজন হলে আরও ১০টি করবে।
কিন্তু সময় বিবেচনায় তাঁর সর্বশেষ বক্তৃতাই পেহেলগাম হামলার পর জল্পনা বাড়িয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা একটি যোগসূত্রের ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি, তবে এই বাগাড়ম্বর অবিশ্বাসকে আরও গভীর করেছে। দেশে জেনারেল মুনিরের পদক্ষেপগুলোকে অনেকে এমন এক নেতার পদক্ষেপ হিসেবে দেখেন, যিনি হিসাবী, আপসহীন ও সামরিক কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর।
গত বছরের ৯ মে ইমরান খানের গ্রেপ্তারের পর সৃষ্ট দাঙ্গার পর জেনারেল মুনির তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন দমন-পীড়ন চালান। বেসামরিক নাগরিকদের সামরিক আইনে বিচার করা হয়েছে, একজন শীর্ষ জেনারেলকে অকাল অবসরে পাঠানো হয়েছে এবং ইমরান খানের একসময়ের ঘনিষ্ঠ সাবেক আইএসআইয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) ফয়েজ হামিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সমালোচকেরা এটিকে খানপন্থীদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান বলে অভিহিত করেছেন, আর সমর্থকেরা পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হিসেবে দেখছেন। কারণ, বাজওয়া ও মুনিরের কর্তৃত্ব প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। প্রকাশ্যে এই দুই ব্যক্তির তীব্র সমালোচনা করা হচ্ছিল।
জেনারেল মুনিরের পাঁচ বছর মেয়াদের দুই বছরের বেশি সময় সবেমাত্র পেরিয়েছে, তবে তাঁর ঐতিহ্যের রূপরেখা এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে। ভারতের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংকট বড় সামরিক সংঘাতের দিকে গড়াবে নাকি কূটনীতির মাধ্যমে মোকাবিলা করা হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে জেনারেল মুনির এটিকে কোন দিকে চালিত করেন তাঁর ওপর।
আব্দুল বাসিত সতর্ক করে বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহই পরিস্থিতি কীভাবে এগোবে তা নির্ধারণ করবে। তিনি বলেন, জেনারেল মুনির কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করেন, তা তাঁকে একজন সৈনিক হিসেবে, একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ও পাকিস্তান কী ধরনের আঞ্চলিক অভিনেতা হতে চায়—তা সংজ্ঞায়িত করবে এবং এই মুহূর্তে সেই পছন্দটি মূলত তাঁর হাতেই।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির প্রচারের আলোয় আসতে খুব একটা আগ্রহী নন। কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পাদপ্রদীপের আলো যেন কেবলই তাঁর দিকে পড়েছে। শুধু পাকিস্তানে নয়, সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ও দূরের কূটনৈতিক রাজধানীগুলোতেও আলোচিত হচ্ছেন তিনি।
সর্বশেষ কাশ্মীর নিয়ে জেনারেল মুনিরের মন্তব্য ভারতে পাকিস্তানের সামরিক অবস্থান ও আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধিতে দেশটির ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু করেছে। জেনারেল মুনির ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে এই মন্তব্য করেন।
কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার এক বিবদমান অঞ্চল। দুই দেশই এই অঞ্চলের পুরোটাই দাবি করে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করে আংশিকভাবে। এই অঞ্চল ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যকার সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। সহিংসতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হলেও জেনারেল মুনিরের কথাগুলোকে ব্যাপকভাবে ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে এবং সেগুলোকে তাঁর ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরও আক্রমণাত্মক মনোভাব হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানে সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, সরকার প্রতিষ্ঠা ও অপসারণের জন্য সমালোচিত। ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা আবারও বাড়ার প্রেক্ষাপটে এই অস্থির পারমাণবিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে তাঁকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাঁকে পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়।
গত শতকের পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে জন্ম নেন জেনারেল মুনির। তাঁর পিতা একটি স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন এবং ধর্মীয় বিষয়ে তাঁর সুগভীর জ্ঞান ছিল। তিনি ১৯৮৬ সালে মাংলায় অফিসার্স ট্রেনিং স্কুলের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেখানে তিনি সেরা ক্যাডেট হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ সোর্ড অব অনার অর্জন করেন। এরপর তিনি ২৩ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন।
প্রায় চার দশক ধরে জেনারেল মুনির কাশ্মীরের কাছাকাছি পাকিস্তানের সংবেদনশীল উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে সেনা পরিচালনা করেছেন। তিনি দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করতে সৌদি আরবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ইসলামাবাদে ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি থেকে জনপ্রশাসন ও কৌশলগত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এ ছাড়া তিনি জাপান ও মালয়েশিয়ার সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও পড়ালেখা করেছেন।
২০২৩ সালে ইসলামাবাদের একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেনারেল মুনিরকে প্রথম দেখেন এই প্রতিবেদনের লেখক। মন্ত্রী, কূটনীতিক, জেনারেল ও সাংবাদিকভর্তি বিশাল হলরুমে তিনি এসেছিলেন বেসামরিক পোশাকে। ধীরস্থির ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভঙ্গিতে হেঁটে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় পুরো হলরুম পর্যবেক্ষণ করছিলেন তিনি। হাফেজ হওয়ায় তিনি পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বক্তৃতা শুরু করেন। এটি পাকিস্তানের সামরিক অভিজাতদের মধ্যে তাঁর বিরল মর্যাদার প্রতিফলন।
ব্যক্তিগতভাবে, জেনারেল মুনিরকে শান্ত স্বভাবের ও বিনয়ী মনে হয়েছে। তবে মঞ্চে তিনি ছিলেন কঠোর এবং সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান হিসেবে তিনি সবকিছু খুটিয়ে দেখছিলেন। একজন প্রশিক্ষিত মানুষ হিসেবে তিনি পর্যবেক্ষণ করতে, শুনতে ও অপেক্ষা করতে জানেন। এখন তাঁর কথাগুলো পাকিস্তানের বাইরেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
জেনারেল মুনির ২০২২ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হন। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট ও শাসনকার্যে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনগণের মোহভঙ্গের এক চরম সংকটের মুহূর্তে তিনি এই দায়িত্ব নেন। মাসব্যাপী জল্পনা-কল্পনার পর তাঁর নিয়োগ হয়েছিল। এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি।
জেনারেল মুনির পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআইয়ের প্রধান হিসেবে আট মাস দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ইমরান খান তাঁকে সরিয়ে দেন। অনেকে মনে করেন, এটি ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যদিও উভয় পক্ষই তা অস্বীকার করে। সেই মুহূর্তটি তাঁদের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে রয়ে গেছে। আজ ইমরান খান কারাগারে বন্দী এবং জেনারেল মুনির দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি।
অনেক বিশ্লেষক জেনারেল মুনিরকে তাঁর পূর্বসূরি জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার চেয়ে স্বভাব ও দৃষ্টিভঙ্গিতে ভিন্ন মনে করেন। জেনারেল বাজওয়া ছিলেন আরও বেশি জনমুখী। তিনি ভারতের সঙ্গে গোপন কূটনীতিকে সমর্থন করতেন এবং ২০১৯ সালে দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধিতে সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন। ‘বাজওয়া ডকট্রিন’ নামে পরিচিত তাঁর নীতির আওতায় তিনি ঐতিহ্যবাহী নিরাপত্তা অগ্রাধিকারের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমানভাবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও ভূ-অর্থনীতির ওপর জোর দিয়েছিলেন।
২০১৯ সালে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সৈন্যদের ওপর আত্মঘাতী বোমা হামলার পর জেনারেল বাজওয়া ভারতীয় বিমান হামলার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক প্রতিক্রিয়া তদারকি করেছিলেন। কিন্তু তিনি পরিস্থিতি উসকে দেননি। তিনি পাকিস্তানে ধরা পড়া ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ফেরত পাঠিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এড়াতে সাহায্য করেছিলেন।
সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো আব্দুল বাসিত বলেন, ‘বাজওয়া ছিলেন স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির।’ তিনি বলেন, ‘তাঁর কূটনৈতিক চ্যানেল খোলা ছিল এবং কাশ্মীর, আফগানিস্তান, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহারসহ একাধিক ফ্রন্ট তিনি বাস্তববাদিতার সঙ্গে সামাল দিচ্ছিলেন। তবে জেনারেল মুনির তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছেন এখন।’
আব্দুল বাসিত বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার অসমাপ্ত কাজ নিয়ে তিনি এসেছেন...তিনি যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছেন (ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, আঞ্চলিক উত্তেজনা) সেগুলো জরুরি ও পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। তাঁর পূর্বসূরি বাজওয়ার মতো দীর্ঘ, সুদূরপ্রসারী কৌশল অবলম্বনের সুযোগ তাঁর নেই। তাঁর দ্রুত, দৃঢ় প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন—দেশে ও বিদেশে উভয় ক্ষেত্রে।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ এমন একটি বিষয় যেখানে পাকিস্তানের কোনো সামরিক নেতাকে দুর্বলতা দেখালে চলবে না। রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আমির জিয়া বিবিসিকে বলেন, ‘কাশ্মীর পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ—পাকিস্তানের স্কুলে প্রতিটি শিশুকে এটি শেখানো হয়। এখানে একটি মৌলিক ধারণা হলো যে আমরা ভারতকে কোনো সুবিধা দিতে পারি না।’
গত সপ্তাহের হামলা ছিল গত দুই দশকের মধ্যে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। এর ফলে ভারত পাকিস্তানকে হামলাকারীদের সমর্থনের অভিযোগ এনেছে। ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কা রয়েছে।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জেনারেল মুনির বেশির ভাগ সময় জনসম্মুখে কথা বলেননি। তবে তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। গত ১৭ এপ্রিল ইসলামাবাদে প্রবাসী পাকিস্তানিদের এক সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা হিন্দুদের থেকে ভিন্ন’ সম্ভাব্য প্রতিটি দিক থেকে। কাশ্মীর নিয়ে তিনি তাঁর অবস্থান দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেন। একে পাকিস্তানের জুগুলার ভেইন বা ‘গলার শিরা’ বলে অভিহিত করেন। তিনি অঙ্গীকার করেন, পাকিস্তান ভারতীয় দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম থেকে কখনও মুখ ফিরিয়ে নেবে না।
এই বক্তৃতা হয়তো গত কয়েক বছরে পাকিস্তানি নেতাদের দেওয়া অনেক আদর্শগত বিবৃতির মতোই থেকে যেত, যদি এরপর যা ঘটেছিল তা না ঘটত। তাঁর বক্তব্যের ঠিক পাঁচ দিন পর, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গিরা পর্যটকদের ওপর গুলি চালায়।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জোশুয়া টি হোয়াইট বলেন, এটি প্রথাগত বাগাড়ম্বর ছিল না। তিনি বলেন, যদিও মূল বিষয়বস্তু পাকিস্তানের আদর্শিক বর্ণনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তবে এর সুর—বিশেষ করে হিন্দু-মুসলিম পার্থক্যের সরাসরি উল্লেখ—এটিকে বিশেষভাবে উসকানিমূলক করে তুলেছে।
জোশুয়া হোয়াইট আরও বলেন, পেহেলগাম হামলার ঠিক আগে এমন মন্তব্য পাকিস্তানের সংযম দাবি করা বা গোপন কূটনীতি অনুসরণ করার যেকোনো প্রচেষ্টাকে মারাত্মকভাবে জটিল করে তুলেছে। আব্দুল বাসিতও এই বিষয়ে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, জেনারেল মুনিরের ভাষণের বাহ্যিক রূপ ছিল ক্ষতিকর। তিনি বলেন, মুনির হয়তো সেই মুহূর্তে নিজেকে সামলাতে পারেননি। তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন, যা হয়তো ব্যক্তিগত পর্যায়ে বললে কারও ভ্রু কুঁচকাত না, কিন্তু জনসমক্ষে, সেনাপ্রধান হিসেবে বলায় সেগুলো অত্যন্ত আক্রমণাত্মক হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।
আব্দুল বাসিত আরও বলেন, কিছু লোক এটিকে ক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে দেখেছে। তিনি আরও বলেন, এটি ছিল তাঁর আগমনের মুহূর্তের মতো। এই সেই ঘোষণার মতো যে, এখন তিনিই সবকিছু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছেন এবং পাকিস্তানের দিকনির্দেশনা আবার সেনাবাহিনীর হাতেই।
জেনারেল মুনির চলতি বছরের শুরুতে আরেকটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তাঁর সেই ভাষণের পর অনেকে মনে করেন, তিনি তাঁর পূর্বসূরির চেয়ে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করছেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীর সংহতি দিবসে মুজাফফারাবাদে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি ঘোষণা করেন, পাকিস্তান ইতিমধ্যেই কাশ্মীরের জন্য তিনটি যুদ্ধ করেছে, প্রয়োজন হলে আরও ১০টি করবে।
কিন্তু সময় বিবেচনায় তাঁর সর্বশেষ বক্তৃতাই পেহেলগাম হামলার পর জল্পনা বাড়িয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা একটি যোগসূত্রের ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি, তবে এই বাগাড়ম্বর অবিশ্বাসকে আরও গভীর করেছে। দেশে জেনারেল মুনিরের পদক্ষেপগুলোকে অনেকে এমন এক নেতার পদক্ষেপ হিসেবে দেখেন, যিনি হিসাবী, আপসহীন ও সামরিক কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর।
গত বছরের ৯ মে ইমরান খানের গ্রেপ্তারের পর সৃষ্ট দাঙ্গার পর জেনারেল মুনির তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন দমন-পীড়ন চালান। বেসামরিক নাগরিকদের সামরিক আইনে বিচার করা হয়েছে, একজন শীর্ষ জেনারেলকে অকাল অবসরে পাঠানো হয়েছে এবং ইমরান খানের একসময়ের ঘনিষ্ঠ সাবেক আইএসআইয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) ফয়েজ হামিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সমালোচকেরা এটিকে খানপন্থীদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান বলে অভিহিত করেছেন, আর সমর্থকেরা পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হিসেবে দেখছেন। কারণ, বাজওয়া ও মুনিরের কর্তৃত্ব প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। প্রকাশ্যে এই দুই ব্যক্তির তীব্র সমালোচনা করা হচ্ছিল।
জেনারেল মুনিরের পাঁচ বছর মেয়াদের দুই বছরের বেশি সময় সবেমাত্র পেরিয়েছে, তবে তাঁর ঐতিহ্যের রূপরেখা এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে। ভারতের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংকট বড় সামরিক সংঘাতের দিকে গড়াবে নাকি কূটনীতির মাধ্যমে মোকাবিলা করা হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে জেনারেল মুনির এটিকে কোন দিকে চালিত করেন তাঁর ওপর।
আব্দুল বাসিত সতর্ক করে বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহই পরিস্থিতি কীভাবে এগোবে তা নির্ধারণ করবে। তিনি বলেন, জেনারেল মুনির কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করেন, তা তাঁকে একজন সৈনিক হিসেবে, একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ও পাকিস্তান কী ধরনের আঞ্চলিক অভিনেতা হতে চায়—তা সংজ্ঞায়িত করবে এবং এই মুহূর্তে সেই পছন্দটি মূলত তাঁর হাতেই।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

আব্দুল বাসিত সতর্ক করে বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহই ‘পরিস্থিতি কীভাবে এগোবে তা নির্ধারণ করবে।’ তিনি বলেন, ‘জেনারেল মুনির কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করেন, তা তাঁকে একজন সৈনিক হিসেবে, একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে এবং পাকিস্তান কী ধরনের আঞ্চলিক অভিনেতা হতে চায়—তা সংজ্ঞায়িত করবে এবং এই মুহূর্তে সেই পছন্দটি মূল
০১ মে ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

আব্দুল বাসিত সতর্ক করে বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহই ‘পরিস্থিতি কীভাবে এগোবে তা নির্ধারণ করবে।’ তিনি বলেন, ‘জেনারেল মুনির কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করেন, তা তাঁকে একজন সৈনিক হিসেবে, একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে এবং পাকিস্তান কী ধরনের আঞ্চলিক অভিনেতা হতে চায়—তা সংজ্ঞায়িত করবে এবং এই মুহূর্তে সেই পছন্দটি মূল
০১ মে ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

আব্দুল বাসিত সতর্ক করে বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহই ‘পরিস্থিতি কীভাবে এগোবে তা নির্ধারণ করবে।’ তিনি বলেন, ‘জেনারেল মুনির কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করেন, তা তাঁকে একজন সৈনিক হিসেবে, একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে এবং পাকিস্তান কী ধরনের আঞ্চলিক অভিনেতা হতে চায়—তা সংজ্ঞায়িত করবে এবং এই মুহূর্তে সেই পছন্দটি মূল
০১ মে ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

আব্দুল বাসিত সতর্ক করে বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহই ‘পরিস্থিতি কীভাবে এগোবে তা নির্ধারণ করবে।’ তিনি বলেন, ‘জেনারেল মুনির কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করেন, তা তাঁকে একজন সৈনিক হিসেবে, একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে এবং পাকিস্তান কী ধরনের আঞ্চলিক অভিনেতা হতে চায়—তা সংজ্ঞায়িত করবে এবং এই মুহূর্তে সেই পছন্দটি মূল
০১ মে ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে