Ajker Patrika

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নজরে ৩ বিষয়

আপডেট : ১৭ জুন ২০২৩, ০০: ২৩
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নজরে ৩ বিষয়

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভেতরে বাইরে নানা তৎপরতা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে তা আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে দেশটি। সর্বশেষ মার্কিন শান্তিবিষয়ক ফেডারেল সংস্থা ‘ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিস’ বাংলাদেশের নির্বাচনে তিনটি মৌলিক বিষয়ে নজর রাখার বিষয়ে অভিমত দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) এ বিষয়ে দীর্ঘ এক প্রতিবেদনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকটসহ বিরোধী দলগুলো বড় বড় সমাবেশ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে পতনের হুমকি দিচ্ছে। 

টানা ১৫ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার পর গণতন্ত্র নিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে পড়েছে আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড়। ফলস্বরূপ ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিরোধীদের কোন্দল বাড়ছে। 

‘ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিস’–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচন যখন আর মাত্র ছয় মাস বাকি—এ অবস্থায় আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নজরে থাকবে তিনটি বিষয়।

প্রথমত, কীভাবে নির্বাচন পরিচালিত হবে
এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোর দিয়ে বলছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। তবে এই কমিশনকে বিরোধীরা পক্ষপাতদুষ্ট বলে দাবি করে। 

এ অবস্থায় ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক বাতিল করা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার দাবি করছে বিরোধী দল বিএনপি। তা না হলে তারা সব নির্বাচন বয়কট করার অনড় অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেছে। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এর আগে ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে তিনটি সফল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ২০০৬ সালে এই ব্যবস্থা নিয়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি ও বিরোধী দল আওয়ামী লীগের টানাপোড়েনের জেরে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়টিরও উল্লেখ আছে। 

বলা হয়েছে, সামরিক হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি নড়বড়ে হয়ে যায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তিন বছরের মধ্যেই এই ব্যবস্থাটিকে সংবিধান থেকেই মুছে ফেলে। আর তখন থেকেই বিএনপি এই ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছে। আওয়ামী লীগ তা বরাবরই প্রত্যাখ্যান করছে। 

এ অবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহালের বিতর্ক এড়াতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দুটি কৌশল অবলম্বন করছে বলে মত দেওয়া হয়েছে। প্রথম কৌশলটি হলো—রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবার জন্য উন্মুক্ত এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে তা প্রমাণ করা। 

এদিক থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে বিএনপির বিশাল সমাবেশ নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি ইঙ্গিত করছে আওয়ামী লীগ। ২০২২ সালে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ নয় এমন প্রার্থীদের জয়লাভ করার কিছু উদাহরণও টানছে দলটি। এ ছাড়া সাম্প্রতিক পৌর নির্বাচনগুলোতে কিছু সমস্যা দেখা গেলেও তুলনামূলক বেশি ভোটারের উপস্থিতি, সহিংসতা হ্রাস এবং কিছু এলাকায় উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার বিষয়গুলোকে তারা সামনে নিয়ে আসছে। জানুয়ারিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদেরও স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। 

তা সত্ত্বেও, বিরোধী সমর্থকেরা বলছেন, (ভোট কেন্দ্রে) সহিংসতা ও বাধা সৃষ্টি নির্বাচনের পরিবেশকে আওয়ামী লীগের পক্ষে নিয়ে গেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ওপর নিপীড়নের অসংখ্য ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। 

বিএনপি দাবি করছে, দলটির চেয়ারপারসন, মহাসচিব এবং নির্বাসিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দেওয়াসহ জেলহাজতের সাজা ভোগ করানো হচ্ছে। পরিবহন সংস্থাগুলো কাকতালীয়ভাবে বিএনপির সমাবেশগুলোর সময়ই ধর্মঘট ডেকে সমর্থকদের উপস্থিতিতে বাধা সৃষ্টি করেছে। 

বিএনপি অভিযোগ করছে, এসব নিপীড়ন ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনকালীন পরিস্থিতিরই পুনরাবৃত্তি। সে সময় স্বতন্ত্র দলগুলো ক্ষমতাসীনদের ভোট জালিয়াতির শিকার হয়েছিল। এমন পরিবেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণ অর্থহীন। 

আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় কৌশলটি হলো—সীমিত আকারে সমঝোতার তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রত্যাবর্তনে বিএনপিকে প্রলুব্ধ করা। গুঞ্জন রয়েছে, নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থান থেকে বিএনপিকে সরিয়ে আনতে ভেতরে-ভেতরে রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা চলছে। গত মে মাসেই বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে একটি বহুদলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের ধারণা হাজির করেছিল আওয়ামী লীগ। দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় একটি রাজনৈতিক সংলাপেরও প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বর্তমানে উভয় পক্ষই প্রকাশ্যে মুখোমুখি অবস্থানে যেতে ইচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে না। তবে বিকল্পপথে আলোচনার সম্ভাবনা অব্যাহত আছে। 

দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণের বিষয় হলো—বিরোধী দল কতটা শক্তিশালী? 

এ ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে-বিএনপির জনপ্রিয়তা ও অভ্যন্তরীণ সংহতির বিষয়টি স্পষ্ট নয়। 

বলা হয়েছে, ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে জনমত নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য খুবই কম। বর্তমানে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মীদের নড়াচড়া এবং রাজনৈতিক সমাবেশ কত বড় হলো—তা দিয়ে দলগুলোর শক্তি সম্পর্কে মূল্যায়ন করছেন বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক। এ ধরনের মূল্যায়ন যথাযথ না হলেও দেখে মনে হচ্ছে, বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। করোনা মহামারির আগে বিরোধীদের সমাবেশে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কম দেখা গেলেও বর্তমানে তাদের সমাবেশগুলোতে মানুষের ঢল নামছে। কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমান বিএনপিকে অনেক বেশি জনপ্রিয় দেখাচ্ছে। 

প্রতিবেদনে লন্ডনে অবস্থান করা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সঙ্গে কিছু বিষয়ে ঢাকার দলীয় নেতাদের মতভেদেরও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তবে এ ধরনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ‘গুজব’কে বিএনপির অস্বীকার এবং নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

 ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি দেশজুড়ে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টির জন্য বিএনপির জনপ্রিয়তা অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের নির্বাচন বিএনপি বয়কটের হুমকি দিলেও পরে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের দিন সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে দলটির বেশির ভাগ প্রার্থীই ভোটের মাঠ ত্যাগ করে। ফলস্বরূপ মাত্র ৬টি আসনে বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হন। 

২০২১ সালে নির্বাচন বর্জনের নীতিতে আবারও ফিরে আসে বিএনপি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সংসদ থেকে দলটির সাত এমপি পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। তবে এই কৌশলেও কিছুটা গলদ দেখা যায়, যখন দলটির পদত্যাগ করা এমপি আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া দলীয় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে নিজের আসনে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। এ ছাড়া চলতি জুনেও বিএনপির কিছু প্রার্থী দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও মেয়র নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। বিএনপি এসব বিদ্রোহী সদস্যকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। তবে এটা স্পষ্ট যে, দলটির অনেকেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে হলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না। 

এসব ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক বৈধতা বাড়াতে বিএনপির আগ্রহী প্রার্থীদের উৎসাহ দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে টেনে আনছে বলেও প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে। আর যেসব নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত সদস্যরা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন সেসব নির্বাচন অবাধ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে ক্ষমতাসীনেরা। ফলে প্রায় সময়ই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়ে যাচ্ছে। এমপি হিসেবে সাত্তারের পুনর্নির্বাচন এর একটি উদাহরণ। 

বলা হয়েছে, এ ধরনের ফলাফল দিয়ে নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতাদের প্রলুব্ধ করারও কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া একটি নির্বাচনকালীন ঐক্য সরকার প্রতিষ্ঠার নামে বিএনপিকে আবারও নির্বাচনে আনার কৌশলও হাতে আছে দলটির। নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে বিএনপিতে ভাঙনের চেষ্টাও হচ্ছে। 

তৃতীয় পর্যবেক্ষণের বিষয়—আমেরিকান চাপের প্রভাব কতটুকু?
যুক্তরাষ্ট্র তার বাংলাদেশ নীতিতে গণতন্ত্রকে সবার ওপরে রেখেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় ওয়াশিংটন। ২০২১ ও ২০২৩ সালের বিশ্ব গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি বাইডেন প্রশাসন। সর্বশেষ গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার’ সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাঁকে ভিসা দেওয়া হবে না। 

গত এক বছরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ বেশ কয়েকজন মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন। 

যুক্তরাজ্য, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে আরও ভালো নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সুরেই কথা বলছে। এ ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। 

এ ধরনের উদ্যোগে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ অধিকার বিষয়ক সংস্থাগুলো খুশি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ আছে, চাপের মুখে বাংলাদেশের কিছু সরকারি কর্মকর্তা দেশের বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার এবং র‍্যাবের ‘কিছুটা বাড়াবাড়ি’র কথা স্বীকার করেছেন এবং তাঁরা তুলনামূলকভাবে নতুন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেসহ আওয়ামী লীগের অন্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘনকে স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাঁরা তির্যক মন্তব্যও করছেন এবং বাইডেন প্রশাসনকে বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের দায় দিচ্ছেন।

গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আরও বলা হয়েছে, ভারত নিরবচ্ছিন্নভাবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে দেখছে। 

গত জানুয়ারিতে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সাবেক এক মন্ত্রী ঢাকায় বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা সম্পর্কে ভারতের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।’ শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

ফেব্রুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, ‘আপনার এবং আপনার নেতৃত্বের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’ 

এ ছাড়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গড়ে তোলার বিষয়গুলোও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। 

বলা হয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে র‍্যাব কিছুটা নমনীয় হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ অব্যাহত রাখলে তা আগামী ছয় মাসে দেশের রাজনীতিতে সহিংসতা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। তবুও দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের মধ্যে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত। এসব বিষয় বাংলাদেশে মার্কিন চাপের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। 

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের গুরুত্ব
সবশেষে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রশাসনের ভূমিকা, রাজনৈতিক বিরোধীদের শক্তি এবং মার্কিন চাপের প্রভাব—এ তিনটি বিষয় বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণের বিষয়। ২০০৮ সালের পরে বাংলাদেশে সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০২৪ সালেও যদি এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে তবে পরবর্তী নির্বাচনের আগে পর্যন্ত আরও পাঁচ বছরের জন্য গভীরভাবে বিভক্ত এবং রাজনৈতিক সহিংস পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছে। তাই বাংলাদেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করতে এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন। 

বাংলাদেশের পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ভারত এবং চীন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে বলে প্রতিবেদনে মত দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৪
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।

ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।

শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।

ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’

ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।

‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।

ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।

তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।

যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।

বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’

ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।

কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’

কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’

কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি
১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।

ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।

অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।

কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’

ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’

শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত