
ইউক্রেন যুদ্ধে বেশ দীর্ঘস্থায়ী এবং ধারণার চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হলেও অগ্রগতির মুখ দেখেছে রাশিয়া। এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষিত অন্যতম লক্ষ্য—লুহানস্ক প্রদেশকে ইউক্রেনের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই শান্তি চুক্তি না হলে আগামী দু-এক মাসের মধ্যেই পার্শ্ববর্তী দনেৎস্কও রাশিয়া এবং তাদের মিত্রদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে আলোচনা করার কোনো মানেই হয় না। কারণ, রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি এবং অনেক ক্ষেত্রে হয়তো বেশিও। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার না হারার কারণ এটি নয়। রাশিয়ার বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরামর্শদাতা সের্গেই কারাগানভের মতে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ দেশটির ‘অস্তিত্বের’ প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত।
কারাগানভ বলেন, এই যুদ্ধের বিষয়ে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—রাশিয়া অন্যতম বিশ্বশক্তি। বিশ্বে সে তার মতো প্রভাব বলয় তৈরি করতে চায়। এ যুদ্ধে রাশিয়া হারলে রাশিয়ার ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। তাই রাশিয়া কোনোভাবেই হার মেনে নেবে না। এটা পশ্চিমাদের বুঝতে হবে।
কারাগানভের মতে, যুদ্ধ শুরুর সময় ইউক্রেনের সঙ্গে ন্যাটোর যে ধরনের সম্পর্ক চলছিল, তা বিশেষভাবে রাশিয়ার জন্য উদ্বেগজনক ছিল। বিশেষ করে ন্যাটো যেভাবে অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল ইউক্রেনকে, তাতে মনে হচ্ছিল যে, ইউক্রেন একটি ধারালো ফলা, যা রাশিয়ার হৃৎপিণ্ডের দিকে তাক করা। এই অবস্থায় ১৯৯০ এর দশকে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের আধিপত্যের চূড়ায় উঠেছিল। ফলে অর্থনৈতিক, নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পশ্চিমের যে ক্ষয়, তা এখন তাকে বেশি পোড়াচ্ছে। এতে সৃষ্ট সংকটগুলো কিন্তু না পশ্চিমে, না বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সমাধান হয়নি। এটিই ছিল এ যুদ্ধের ধ্রুপদি প্রেক্ষাপট। এদিকে, ২১ শতকের প্রথম দশকের শেষ থেকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমের যুদ্ধংদেহী মনোভাব বাড়তে থাকে। ফলে তখন থেকেই মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমের একটি সংঘাত আসন্ন বলে মনে হচ্ছিল। মস্কো এ ক্ষেত্রে আগ বাড়িয়ে নিজে থেকেই এই সংঘাতের শর্তাবলি নির্ধারণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।
এই সংঘাত অধিকাংশ পশ্চিমা অভিজাতের জন্য এক অস্তিত্বের লড়াই উল্লেখ করে কারাগানভ নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, এর পেছনে তাদের ব্যর্থতা আছে। আছে গণমানুষের দিক থেকে তাদের অনাস্থার বাস্তবতাও। তাই জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে নিয়ে যেতে তাদের দরকার ছিল একটি শত্রুর। এবং সেই শত্রুই হলো রাশিয়া। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে উদারবাদী বিশ্বায়নের নামে জারি করা সাম্রাজ্যবাদী কাঠামো ধসে গেলে শুধু বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা অভিজাতরাই নয়, অধিকাংশ পশ্চিমা দেশই আর টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে না। তাই এই যুদ্ধ কোনোভাবেই শুধু ইউক্রেনের বিষয় নয়। বরং ইউক্রেন ও তার জনগণকে পশ্চিমা অভিজাতরা নিজেদের শৌর্যকে অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে কামানের গোলা হিসেবে ব্যবহার করছে।
বিপরীতে রাশিয়ার কাছে এই যুদ্ধ কেবল তার অভিজাত গোষ্ঠীকে রক্ষা নয়, বরং দেশটির অস্তিত্বের জন্যই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই এই যুদ্ধে রাশিয়ার কোনোভাবেই হারা চলবে না বলে মনে করেন কারাগানভ। তাঁর মতে, এ কারণেই খুব বেশি সহিংসতার আশ্রয় না নিয়েও রাশিয়া জিতবে বলে আশা করা যায়। যদিও মানুষ কিন্তু মরছে।
এই যুদ্ধ ও ক্ষয়ের জন্য এক ধরনের পীড়নও বোধ করেন কারাগানভ। তিনি বলেন, ‘গত ২৫ বছর ধরে এমন একটি যুদ্ধের শঙ্কা ছিল আমার মধ্যে। আমি এটি থামাতে পারিনি। এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যর্থতা।’
কিন্তু কারাগানভ যে কথা বলছেন, তার সমালোচনাও আছে। তিনি এই যুদ্ধকে পশ্চিমাদের ‘রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন’ করার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো হিসেবে বর্ণনা করলেও, পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্লেষকেরা একে দেখছেন ভিন্নভাবে। তাঁরা বলছেন, এই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই রাশিয়া বরং বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। এই যুদ্ধকে সামনে রেখে, ইউক্রেনে চলা ধ্বংসযজ্ঞকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো বরং নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করছে। সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দিচ্ছে। এই যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পশ্চিম রাশিয়াকে আগামী বহু বছর ‘বড় হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করবে।
এই প্রসঙ্গ সামনে এনে এই যুদ্ধকে ‘ভুল’ হিসেবে ভাবতে রাজি কি-না, প্রশ্ন করলে কারাগানভ বলেন, গত দেড় দশক ধরেই রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমের সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছে। গত কয়েক মাসের ঘটনায় তাই খুব বেশি কিছু হারানোর নেই। তিনি বলেন, ‘এখন দ্বিতীয় কোনো ভাবনা ছাড়াই পশ্চিম থেকে রাশিয়া বিচ্ছিন্ন থাকতে পারবে। বরং আমরা পশ্চিমে কী ঘটে তা দেখার অপেক্ষায় আছি। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক দূরত্বের কথা বিবেচনায় বলতে গেলে পশ্চিম থেকে যত দূরে থাকব, ততই আমরা ভালো থাকব। অন্তত পরের এক-দুই দশক। এর পর আশা করা যায় কিছু বদল আসবে। পশ্চিমা অভিজাতদের মধ্যে কিছু বদল আসবে। আবার আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে। তবে এটা এখনই করতে গিয়ে আমরা দ্রুত বর্ধনশীল বাকি বিশ্ব থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফলতে পারি না, যেখানে পশ্চিম ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। সেটা হবে আত্মহত্যার শামিল। একেবারের সরাসরি দ্বৈরথে যাওয়াটা ঠিক ছিল, নাকি ভুল, তার মীমাংসা একমাত্র ইতিহাসই করতে পারে।’
কিন্তু এই যুদ্ধের কারণে রাশিয়া এরই মধ্যে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন সার্জ শ্মেম্যান। উদাহরণ হিসেবে তিনি রাশিয়া থেকে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া, খেলা বা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তারকাদের এই যুদ্ধের কারণে ভোগান্তিতে পড়া ইত্যাদির কথা তুলে ধরেন তিনি। একই সঙ্গে রাশিয়ার ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে ভ্লাদিমির পুতিন ধ্বংস করছেন বলে একটি মত চাউর হয়েছে উল্লেখ করে কারাগানভ কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি এসব ঘটনাকে রাশিয়ার জন্য ভালো কিছু বলে বিবেচনা করছেন কি-না, করলে কেন?
জবাবে কারাগানভ যা বলেছেন, তাতে ভবিষ্যতের বৈশ্বিক কাঠামোয় প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার আকাঙ্ক্ষাই প্রবল হয়ে উঠেছে। তাঁর মতে, একটা ন্যায্য ও স্থিতিশীল বিশ্বকাঠামোয় নিজের শক্ত অবস্থান তৈরির লড়াই এটি। এ যুদ্ধ রাশিয়ার কাছে উন্নত ও গৌরবময় সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য লড়াই। তিনি বলেন, ‘এমন একটা যুদ্ধ কিছু না হারিয়ে জয় করা সম্ভব নয়। তবে এর কারণে কয়েক লাখ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের রাশিয়া ছেড়ে যাওয়াটা দুঃখজনক। যদিও আমি জানি, আপনিও একমত হবেন যে, তারা সুখে নেই। তাদের কেউ কেউ ফিরে আসবে আশা করি। রুশ সংস্কৃতি বা রাশিয়ার যেকোনো কিছুকে খারিজ করাটা পশ্চিমাদের সমস্যা। এটা অনেকটা তাদের নিজের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও খ্রিষ্টীয় নৈতিকতাকে খারিজ করার মতোই।’
তবে সংঘাত রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে খর্ব করে বলে স্বীকার করেছেন সের্গেই কারাগানভ। নিজের বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্যেও তিনি বরাবরই এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন উল্লেখ করে কারাগানভ বলেন, রাশিয়ায় রাজনৈতিক স্বাধীনতা অন্য অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থানে আছে। খারিজ করার সংস্কৃতি রুশদের মধ্যে নেই। রাশিয়া বরং ভবিষ্যতের চিন্তার স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। একই সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘাত নিয়েও উদ্বিগ্ন, যা মানবসভ্যতার ইতিহাসেই ইতি টেনে দিতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিকে গত শতকের ৬০-এর দশকের কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সঙ্গে তুলনা করে কারাগানভ বলেন, ‘মুশকিল হচ্ছে বিপরীত পক্ষে কেনেডির মতো দক্ষ কোনো লোক এবার নেই।’
মোদ্দা কথা, কারাগানভ নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে পশ্চিমাদের খারিজ করার সংস্কৃতিকে এই সংকটের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর মতে, এই যুদ্ধের কারণে সাধারণ রুশদের কষ্ট হচ্ছে। পশ্চিমারা একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়ায় একটা বিদ্রোহের আবহ তৈরি করতে চায়। কিন্তু এসব করে উল্টো ফল হচ্ছে বলে দাবি কারাগানভের। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে একটা লাভ হয়েছে যে, রাশিয়ায় পশ্চিমা মূল্যবোধ নিয়ে থাকা লোকেরা অন্য দেশে চলে গেছে। এতে পশ্চিমাবান্ধব উপাদান থেকে মুক্ত হচ্ছে রাশিয়া। তবে, এর মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় সংস্কৃতি বিতাড়ন রাশিয়ার উদ্দেশ্য নয়। বরং এর ফলে ভবিষ্যতে রাশিয়াই হয়ে উঠবে অন্যতম অঞ্চল, যেখানে ইউরোপের সংস্কৃতি ও এর যাবতীয় সম্পদ ও মূল্যবোধের দেখা মিলবে।
রাশিয়া বারবার করে এ যুদ্ধে জয়ের কথা বলছে নিজের অস্তিত্ব টেকানোর প্রশ্নে। কিন্তু এই জয় আসলে কীসে নির্ধারিত হবে জানতে চাইলে সের্গেই কারাগানভ বলেন, ‘লক্ষ্যটা আদতে পরিবর্তনশীল। তবে ন্যূনতম লক্ষ্য হচ্ছে, দনবাসকে কিয়েভের ক্ষমতাকাঠামো থেকে মুক্ত করা। এটি এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তারপরই আসছে ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চল মুক্ত করার প্রশ্ন। আর তার পর রাশিয়ার লক্ষ্য হয়তো থাকবে, কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোর নিরস্ত্রীকরণ।’
কারাগানভ বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ পশ্চিম আরোপিত বিশ্ব ব্যবস্থা পতনের মধ্য দিয়ে একটি ন্যায্য ও মুক্ত বহুমেরু বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে যাত্রার ছোট্ট একটি পদক্ষেপ। সেই বিশ্ব ব্যবস্থার অন্যতম কেন্দ্র হবে ইউরেশিয়া, যেখানে রয়েছে মহান সভ্যতার ইতিহাস, যাকে শত শত বছর ধরে অবদমনে বাধ্য করা হয়েছে। এখানে রাশিয়া বিশ্ব সভ্যতাগুলো মধ্যে সংযোগ সাধনের এক নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই কাঠামোয় ভারসাম্য রক্ষার কাজটি রাশিয়া করতে পারে। দুটি ভূমিকাই রাশিয়া পালন করতে পারবে বলে আশা করা যায়।

ইউক্রেন যুদ্ধে বেশ দীর্ঘস্থায়ী এবং ধারণার চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হলেও অগ্রগতির মুখ দেখেছে রাশিয়া। এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষিত অন্যতম লক্ষ্য—লুহানস্ক প্রদেশকে ইউক্রেনের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই শান্তি চুক্তি না হলে আগামী দু-এক মাসের মধ্যেই পার্শ্ববর্তী দনেৎস্কও রাশিয়া এবং তাদের মিত্রদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে আলোচনা করার কোনো মানেই হয় না। কারণ, রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি এবং অনেক ক্ষেত্রে হয়তো বেশিও। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার না হারার কারণ এটি নয়। রাশিয়ার বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরামর্শদাতা সের্গেই কারাগানভের মতে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ দেশটির ‘অস্তিত্বের’ প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত।
কারাগানভ বলেন, এই যুদ্ধের বিষয়ে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—রাশিয়া অন্যতম বিশ্বশক্তি। বিশ্বে সে তার মতো প্রভাব বলয় তৈরি করতে চায়। এ যুদ্ধে রাশিয়া হারলে রাশিয়ার ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। তাই রাশিয়া কোনোভাবেই হার মেনে নেবে না। এটা পশ্চিমাদের বুঝতে হবে।
কারাগানভের মতে, যুদ্ধ শুরুর সময় ইউক্রেনের সঙ্গে ন্যাটোর যে ধরনের সম্পর্ক চলছিল, তা বিশেষভাবে রাশিয়ার জন্য উদ্বেগজনক ছিল। বিশেষ করে ন্যাটো যেভাবে অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল ইউক্রেনকে, তাতে মনে হচ্ছিল যে, ইউক্রেন একটি ধারালো ফলা, যা রাশিয়ার হৃৎপিণ্ডের দিকে তাক করা। এই অবস্থায় ১৯৯০ এর দশকে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের আধিপত্যের চূড়ায় উঠেছিল। ফলে অর্থনৈতিক, নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পশ্চিমের যে ক্ষয়, তা এখন তাকে বেশি পোড়াচ্ছে। এতে সৃষ্ট সংকটগুলো কিন্তু না পশ্চিমে, না বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সমাধান হয়নি। এটিই ছিল এ যুদ্ধের ধ্রুপদি প্রেক্ষাপট। এদিকে, ২১ শতকের প্রথম দশকের শেষ থেকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমের যুদ্ধংদেহী মনোভাব বাড়তে থাকে। ফলে তখন থেকেই মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমের একটি সংঘাত আসন্ন বলে মনে হচ্ছিল। মস্কো এ ক্ষেত্রে আগ বাড়িয়ে নিজে থেকেই এই সংঘাতের শর্তাবলি নির্ধারণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।
এই সংঘাত অধিকাংশ পশ্চিমা অভিজাতের জন্য এক অস্তিত্বের লড়াই উল্লেখ করে কারাগানভ নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, এর পেছনে তাদের ব্যর্থতা আছে। আছে গণমানুষের দিক থেকে তাদের অনাস্থার বাস্তবতাও। তাই জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে নিয়ে যেতে তাদের দরকার ছিল একটি শত্রুর। এবং সেই শত্রুই হলো রাশিয়া। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে উদারবাদী বিশ্বায়নের নামে জারি করা সাম্রাজ্যবাদী কাঠামো ধসে গেলে শুধু বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা অভিজাতরাই নয়, অধিকাংশ পশ্চিমা দেশই আর টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে না। তাই এই যুদ্ধ কোনোভাবেই শুধু ইউক্রেনের বিষয় নয়। বরং ইউক্রেন ও তার জনগণকে পশ্চিমা অভিজাতরা নিজেদের শৌর্যকে অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে কামানের গোলা হিসেবে ব্যবহার করছে।
বিপরীতে রাশিয়ার কাছে এই যুদ্ধ কেবল তার অভিজাত গোষ্ঠীকে রক্ষা নয়, বরং দেশটির অস্তিত্বের জন্যই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই এই যুদ্ধে রাশিয়ার কোনোভাবেই হারা চলবে না বলে মনে করেন কারাগানভ। তাঁর মতে, এ কারণেই খুব বেশি সহিংসতার আশ্রয় না নিয়েও রাশিয়া জিতবে বলে আশা করা যায়। যদিও মানুষ কিন্তু মরছে।
এই যুদ্ধ ও ক্ষয়ের জন্য এক ধরনের পীড়নও বোধ করেন কারাগানভ। তিনি বলেন, ‘গত ২৫ বছর ধরে এমন একটি যুদ্ধের শঙ্কা ছিল আমার মধ্যে। আমি এটি থামাতে পারিনি। এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যর্থতা।’
কিন্তু কারাগানভ যে কথা বলছেন, তার সমালোচনাও আছে। তিনি এই যুদ্ধকে পশ্চিমাদের ‘রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন’ করার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো হিসেবে বর্ণনা করলেও, পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্লেষকেরা একে দেখছেন ভিন্নভাবে। তাঁরা বলছেন, এই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই রাশিয়া বরং বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। এই যুদ্ধকে সামনে রেখে, ইউক্রেনে চলা ধ্বংসযজ্ঞকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো বরং নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করছে। সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দিচ্ছে। এই যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পশ্চিম রাশিয়াকে আগামী বহু বছর ‘বড় হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করবে।
এই প্রসঙ্গ সামনে এনে এই যুদ্ধকে ‘ভুল’ হিসেবে ভাবতে রাজি কি-না, প্রশ্ন করলে কারাগানভ বলেন, গত দেড় দশক ধরেই রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমের সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছে। গত কয়েক মাসের ঘটনায় তাই খুব বেশি কিছু হারানোর নেই। তিনি বলেন, ‘এখন দ্বিতীয় কোনো ভাবনা ছাড়াই পশ্চিম থেকে রাশিয়া বিচ্ছিন্ন থাকতে পারবে। বরং আমরা পশ্চিমে কী ঘটে তা দেখার অপেক্ষায় আছি। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক দূরত্বের কথা বিবেচনায় বলতে গেলে পশ্চিম থেকে যত দূরে থাকব, ততই আমরা ভালো থাকব। অন্তত পরের এক-দুই দশক। এর পর আশা করা যায় কিছু বদল আসবে। পশ্চিমা অভিজাতদের মধ্যে কিছু বদল আসবে। আবার আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে। তবে এটা এখনই করতে গিয়ে আমরা দ্রুত বর্ধনশীল বাকি বিশ্ব থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফলতে পারি না, যেখানে পশ্চিম ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। সেটা হবে আত্মহত্যার শামিল। একেবারের সরাসরি দ্বৈরথে যাওয়াটা ঠিক ছিল, নাকি ভুল, তার মীমাংসা একমাত্র ইতিহাসই করতে পারে।’
কিন্তু এই যুদ্ধের কারণে রাশিয়া এরই মধ্যে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন সার্জ শ্মেম্যান। উদাহরণ হিসেবে তিনি রাশিয়া থেকে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া, খেলা বা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তারকাদের এই যুদ্ধের কারণে ভোগান্তিতে পড়া ইত্যাদির কথা তুলে ধরেন তিনি। একই সঙ্গে রাশিয়ার ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে ভ্লাদিমির পুতিন ধ্বংস করছেন বলে একটি মত চাউর হয়েছে উল্লেখ করে কারাগানভ কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি এসব ঘটনাকে রাশিয়ার জন্য ভালো কিছু বলে বিবেচনা করছেন কি-না, করলে কেন?
জবাবে কারাগানভ যা বলেছেন, তাতে ভবিষ্যতের বৈশ্বিক কাঠামোয় প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার আকাঙ্ক্ষাই প্রবল হয়ে উঠেছে। তাঁর মতে, একটা ন্যায্য ও স্থিতিশীল বিশ্বকাঠামোয় নিজের শক্ত অবস্থান তৈরির লড়াই এটি। এ যুদ্ধ রাশিয়ার কাছে উন্নত ও গৌরবময় সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য লড়াই। তিনি বলেন, ‘এমন একটা যুদ্ধ কিছু না হারিয়ে জয় করা সম্ভব নয়। তবে এর কারণে কয়েক লাখ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের রাশিয়া ছেড়ে যাওয়াটা দুঃখজনক। যদিও আমি জানি, আপনিও একমত হবেন যে, তারা সুখে নেই। তাদের কেউ কেউ ফিরে আসবে আশা করি। রুশ সংস্কৃতি বা রাশিয়ার যেকোনো কিছুকে খারিজ করাটা পশ্চিমাদের সমস্যা। এটা অনেকটা তাদের নিজের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও খ্রিষ্টীয় নৈতিকতাকে খারিজ করার মতোই।’
তবে সংঘাত রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে খর্ব করে বলে স্বীকার করেছেন সের্গেই কারাগানভ। নিজের বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্যেও তিনি বরাবরই এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন উল্লেখ করে কারাগানভ বলেন, রাশিয়ায় রাজনৈতিক স্বাধীনতা অন্য অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থানে আছে। খারিজ করার সংস্কৃতি রুশদের মধ্যে নেই। রাশিয়া বরং ভবিষ্যতের চিন্তার স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। একই সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘাত নিয়েও উদ্বিগ্ন, যা মানবসভ্যতার ইতিহাসেই ইতি টেনে দিতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিকে গত শতকের ৬০-এর দশকের কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সঙ্গে তুলনা করে কারাগানভ বলেন, ‘মুশকিল হচ্ছে বিপরীত পক্ষে কেনেডির মতো দক্ষ কোনো লোক এবার নেই।’
মোদ্দা কথা, কারাগানভ নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে পশ্চিমাদের খারিজ করার সংস্কৃতিকে এই সংকটের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর মতে, এই যুদ্ধের কারণে সাধারণ রুশদের কষ্ট হচ্ছে। পশ্চিমারা একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়ায় একটা বিদ্রোহের আবহ তৈরি করতে চায়। কিন্তু এসব করে উল্টো ফল হচ্ছে বলে দাবি কারাগানভের। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে একটা লাভ হয়েছে যে, রাশিয়ায় পশ্চিমা মূল্যবোধ নিয়ে থাকা লোকেরা অন্য দেশে চলে গেছে। এতে পশ্চিমাবান্ধব উপাদান থেকে মুক্ত হচ্ছে রাশিয়া। তবে, এর মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় সংস্কৃতি বিতাড়ন রাশিয়ার উদ্দেশ্য নয়। বরং এর ফলে ভবিষ্যতে রাশিয়াই হয়ে উঠবে অন্যতম অঞ্চল, যেখানে ইউরোপের সংস্কৃতি ও এর যাবতীয় সম্পদ ও মূল্যবোধের দেখা মিলবে।
রাশিয়া বারবার করে এ যুদ্ধে জয়ের কথা বলছে নিজের অস্তিত্ব টেকানোর প্রশ্নে। কিন্তু এই জয় আসলে কীসে নির্ধারিত হবে জানতে চাইলে সের্গেই কারাগানভ বলেন, ‘লক্ষ্যটা আদতে পরিবর্তনশীল। তবে ন্যূনতম লক্ষ্য হচ্ছে, দনবাসকে কিয়েভের ক্ষমতাকাঠামো থেকে মুক্ত করা। এটি এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তারপরই আসছে ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চল মুক্ত করার প্রশ্ন। আর তার পর রাশিয়ার লক্ষ্য হয়তো থাকবে, কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোর নিরস্ত্রীকরণ।’
কারাগানভ বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ পশ্চিম আরোপিত বিশ্ব ব্যবস্থা পতনের মধ্য দিয়ে একটি ন্যায্য ও মুক্ত বহুমেরু বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে যাত্রার ছোট্ট একটি পদক্ষেপ। সেই বিশ্ব ব্যবস্থার অন্যতম কেন্দ্র হবে ইউরেশিয়া, যেখানে রয়েছে মহান সভ্যতার ইতিহাস, যাকে শত শত বছর ধরে অবদমনে বাধ্য করা হয়েছে। এখানে রাশিয়া বিশ্ব সভ্যতাগুলো মধ্যে সংযোগ সাধনের এক নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই কাঠামোয় ভারসাম্য রক্ষার কাজটি রাশিয়া করতে পারে। দুটি ভূমিকাই রাশিয়া পালন করতে পারবে বলে আশা করা যায়।

ইউক্রেন যুদ্ধে বেশ দীর্ঘস্থায়ী এবং ধারণার চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হলেও অগ্রগতির মুখ দেখেছে রাশিয়া। এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষিত অন্যতম লক্ষ্য—লুহানস্ক প্রদেশকে ইউক্রেনের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই শান্তি চুক্তি না হলে আগামী দু-এক মাসের মধ্যেই পার্শ্ববর্তী দনেৎস্কও রাশিয়া এবং তাদের মিত্রদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে আলোচনা করার কোনো মানেই হয় না। কারণ, রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি এবং অনেক ক্ষেত্রে হয়তো বেশিও। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার না হারার কারণ এটি নয়। রাশিয়ার বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরামর্শদাতা সের্গেই কারাগানভের মতে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ দেশটির ‘অস্তিত্বের’ প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত।
কারাগানভ বলেন, এই যুদ্ধের বিষয়ে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—রাশিয়া অন্যতম বিশ্বশক্তি। বিশ্বে সে তার মতো প্রভাব বলয় তৈরি করতে চায়। এ যুদ্ধে রাশিয়া হারলে রাশিয়ার ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। তাই রাশিয়া কোনোভাবেই হার মেনে নেবে না। এটা পশ্চিমাদের বুঝতে হবে।
কারাগানভের মতে, যুদ্ধ শুরুর সময় ইউক্রেনের সঙ্গে ন্যাটোর যে ধরনের সম্পর্ক চলছিল, তা বিশেষভাবে রাশিয়ার জন্য উদ্বেগজনক ছিল। বিশেষ করে ন্যাটো যেভাবে অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল ইউক্রেনকে, তাতে মনে হচ্ছিল যে, ইউক্রেন একটি ধারালো ফলা, যা রাশিয়ার হৃৎপিণ্ডের দিকে তাক করা। এই অবস্থায় ১৯৯০ এর দশকে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের আধিপত্যের চূড়ায় উঠেছিল। ফলে অর্থনৈতিক, নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পশ্চিমের যে ক্ষয়, তা এখন তাকে বেশি পোড়াচ্ছে। এতে সৃষ্ট সংকটগুলো কিন্তু না পশ্চিমে, না বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সমাধান হয়নি। এটিই ছিল এ যুদ্ধের ধ্রুপদি প্রেক্ষাপট। এদিকে, ২১ শতকের প্রথম দশকের শেষ থেকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমের যুদ্ধংদেহী মনোভাব বাড়তে থাকে। ফলে তখন থেকেই মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমের একটি সংঘাত আসন্ন বলে মনে হচ্ছিল। মস্কো এ ক্ষেত্রে আগ বাড়িয়ে নিজে থেকেই এই সংঘাতের শর্তাবলি নির্ধারণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।
এই সংঘাত অধিকাংশ পশ্চিমা অভিজাতের জন্য এক অস্তিত্বের লড়াই উল্লেখ করে কারাগানভ নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, এর পেছনে তাদের ব্যর্থতা আছে। আছে গণমানুষের দিক থেকে তাদের অনাস্থার বাস্তবতাও। তাই জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে নিয়ে যেতে তাদের দরকার ছিল একটি শত্রুর। এবং সেই শত্রুই হলো রাশিয়া। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে উদারবাদী বিশ্বায়নের নামে জারি করা সাম্রাজ্যবাদী কাঠামো ধসে গেলে শুধু বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা অভিজাতরাই নয়, অধিকাংশ পশ্চিমা দেশই আর টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে না। তাই এই যুদ্ধ কোনোভাবেই শুধু ইউক্রেনের বিষয় নয়। বরং ইউক্রেন ও তার জনগণকে পশ্চিমা অভিজাতরা নিজেদের শৌর্যকে অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে কামানের গোলা হিসেবে ব্যবহার করছে।
বিপরীতে রাশিয়ার কাছে এই যুদ্ধ কেবল তার অভিজাত গোষ্ঠীকে রক্ষা নয়, বরং দেশটির অস্তিত্বের জন্যই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই এই যুদ্ধে রাশিয়ার কোনোভাবেই হারা চলবে না বলে মনে করেন কারাগানভ। তাঁর মতে, এ কারণেই খুব বেশি সহিংসতার আশ্রয় না নিয়েও রাশিয়া জিতবে বলে আশা করা যায়। যদিও মানুষ কিন্তু মরছে।
এই যুদ্ধ ও ক্ষয়ের জন্য এক ধরনের পীড়নও বোধ করেন কারাগানভ। তিনি বলেন, ‘গত ২৫ বছর ধরে এমন একটি যুদ্ধের শঙ্কা ছিল আমার মধ্যে। আমি এটি থামাতে পারিনি। এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যর্থতা।’
কিন্তু কারাগানভ যে কথা বলছেন, তার সমালোচনাও আছে। তিনি এই যুদ্ধকে পশ্চিমাদের ‘রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন’ করার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো হিসেবে বর্ণনা করলেও, পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্লেষকেরা একে দেখছেন ভিন্নভাবে। তাঁরা বলছেন, এই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই রাশিয়া বরং বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। এই যুদ্ধকে সামনে রেখে, ইউক্রেনে চলা ধ্বংসযজ্ঞকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো বরং নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করছে। সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দিচ্ছে। এই যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পশ্চিম রাশিয়াকে আগামী বহু বছর ‘বড় হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করবে।
এই প্রসঙ্গ সামনে এনে এই যুদ্ধকে ‘ভুল’ হিসেবে ভাবতে রাজি কি-না, প্রশ্ন করলে কারাগানভ বলেন, গত দেড় দশক ধরেই রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমের সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছে। গত কয়েক মাসের ঘটনায় তাই খুব বেশি কিছু হারানোর নেই। তিনি বলেন, ‘এখন দ্বিতীয় কোনো ভাবনা ছাড়াই পশ্চিম থেকে রাশিয়া বিচ্ছিন্ন থাকতে পারবে। বরং আমরা পশ্চিমে কী ঘটে তা দেখার অপেক্ষায় আছি। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক দূরত্বের কথা বিবেচনায় বলতে গেলে পশ্চিম থেকে যত দূরে থাকব, ততই আমরা ভালো থাকব। অন্তত পরের এক-দুই দশক। এর পর আশা করা যায় কিছু বদল আসবে। পশ্চিমা অভিজাতদের মধ্যে কিছু বদল আসবে। আবার আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে। তবে এটা এখনই করতে গিয়ে আমরা দ্রুত বর্ধনশীল বাকি বিশ্ব থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফলতে পারি না, যেখানে পশ্চিম ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। সেটা হবে আত্মহত্যার শামিল। একেবারের সরাসরি দ্বৈরথে যাওয়াটা ঠিক ছিল, নাকি ভুল, তার মীমাংসা একমাত্র ইতিহাসই করতে পারে।’
কিন্তু এই যুদ্ধের কারণে রাশিয়া এরই মধ্যে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন সার্জ শ্মেম্যান। উদাহরণ হিসেবে তিনি রাশিয়া থেকে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া, খেলা বা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তারকাদের এই যুদ্ধের কারণে ভোগান্তিতে পড়া ইত্যাদির কথা তুলে ধরেন তিনি। একই সঙ্গে রাশিয়ার ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে ভ্লাদিমির পুতিন ধ্বংস করছেন বলে একটি মত চাউর হয়েছে উল্লেখ করে কারাগানভ কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি এসব ঘটনাকে রাশিয়ার জন্য ভালো কিছু বলে বিবেচনা করছেন কি-না, করলে কেন?
জবাবে কারাগানভ যা বলেছেন, তাতে ভবিষ্যতের বৈশ্বিক কাঠামোয় প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার আকাঙ্ক্ষাই প্রবল হয়ে উঠেছে। তাঁর মতে, একটা ন্যায্য ও স্থিতিশীল বিশ্বকাঠামোয় নিজের শক্ত অবস্থান তৈরির লড়াই এটি। এ যুদ্ধ রাশিয়ার কাছে উন্নত ও গৌরবময় সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য লড়াই। তিনি বলেন, ‘এমন একটা যুদ্ধ কিছু না হারিয়ে জয় করা সম্ভব নয়। তবে এর কারণে কয়েক লাখ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের রাশিয়া ছেড়ে যাওয়াটা দুঃখজনক। যদিও আমি জানি, আপনিও একমত হবেন যে, তারা সুখে নেই। তাদের কেউ কেউ ফিরে আসবে আশা করি। রুশ সংস্কৃতি বা রাশিয়ার যেকোনো কিছুকে খারিজ করাটা পশ্চিমাদের সমস্যা। এটা অনেকটা তাদের নিজের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও খ্রিষ্টীয় নৈতিকতাকে খারিজ করার মতোই।’
তবে সংঘাত রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে খর্ব করে বলে স্বীকার করেছেন সের্গেই কারাগানভ। নিজের বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্যেও তিনি বরাবরই এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন উল্লেখ করে কারাগানভ বলেন, রাশিয়ায় রাজনৈতিক স্বাধীনতা অন্য অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থানে আছে। খারিজ করার সংস্কৃতি রুশদের মধ্যে নেই। রাশিয়া বরং ভবিষ্যতের চিন্তার স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। একই সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘাত নিয়েও উদ্বিগ্ন, যা মানবসভ্যতার ইতিহাসেই ইতি টেনে দিতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিকে গত শতকের ৬০-এর দশকের কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সঙ্গে তুলনা করে কারাগানভ বলেন, ‘মুশকিল হচ্ছে বিপরীত পক্ষে কেনেডির মতো দক্ষ কোনো লোক এবার নেই।’
মোদ্দা কথা, কারাগানভ নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে পশ্চিমাদের খারিজ করার সংস্কৃতিকে এই সংকটের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর মতে, এই যুদ্ধের কারণে সাধারণ রুশদের কষ্ট হচ্ছে। পশ্চিমারা একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়ায় একটা বিদ্রোহের আবহ তৈরি করতে চায়। কিন্তু এসব করে উল্টো ফল হচ্ছে বলে দাবি কারাগানভের। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে একটা লাভ হয়েছে যে, রাশিয়ায় পশ্চিমা মূল্যবোধ নিয়ে থাকা লোকেরা অন্য দেশে চলে গেছে। এতে পশ্চিমাবান্ধব উপাদান থেকে মুক্ত হচ্ছে রাশিয়া। তবে, এর মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় সংস্কৃতি বিতাড়ন রাশিয়ার উদ্দেশ্য নয়। বরং এর ফলে ভবিষ্যতে রাশিয়াই হয়ে উঠবে অন্যতম অঞ্চল, যেখানে ইউরোপের সংস্কৃতি ও এর যাবতীয় সম্পদ ও মূল্যবোধের দেখা মিলবে।
রাশিয়া বারবার করে এ যুদ্ধে জয়ের কথা বলছে নিজের অস্তিত্ব টেকানোর প্রশ্নে। কিন্তু এই জয় আসলে কীসে নির্ধারিত হবে জানতে চাইলে সের্গেই কারাগানভ বলেন, ‘লক্ষ্যটা আদতে পরিবর্তনশীল। তবে ন্যূনতম লক্ষ্য হচ্ছে, দনবাসকে কিয়েভের ক্ষমতাকাঠামো থেকে মুক্ত করা। এটি এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তারপরই আসছে ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চল মুক্ত করার প্রশ্ন। আর তার পর রাশিয়ার লক্ষ্য হয়তো থাকবে, কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোর নিরস্ত্রীকরণ।’
কারাগানভ বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ পশ্চিম আরোপিত বিশ্ব ব্যবস্থা পতনের মধ্য দিয়ে একটি ন্যায্য ও মুক্ত বহুমেরু বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে যাত্রার ছোট্ট একটি পদক্ষেপ। সেই বিশ্ব ব্যবস্থার অন্যতম কেন্দ্র হবে ইউরেশিয়া, যেখানে রয়েছে মহান সভ্যতার ইতিহাস, যাকে শত শত বছর ধরে অবদমনে বাধ্য করা হয়েছে। এখানে রাশিয়া বিশ্ব সভ্যতাগুলো মধ্যে সংযোগ সাধনের এক নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই কাঠামোয় ভারসাম্য রক্ষার কাজটি রাশিয়া করতে পারে। দুটি ভূমিকাই রাশিয়া পালন করতে পারবে বলে আশা করা যায়।

ইউক্রেন যুদ্ধে বেশ দীর্ঘস্থায়ী এবং ধারণার চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হলেও অগ্রগতির মুখ দেখেছে রাশিয়া। এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষিত অন্যতম লক্ষ্য—লুহানস্ক প্রদেশকে ইউক্রেনের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই শান্তি চুক্তি না হলে আগামী দু-এক মাসের মধ্যেই পার্শ্ববর্তী দনেৎস্কও রাশিয়া এবং তাদের মিত্রদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে আলোচনা করার কোনো মানেই হয় না। কারণ, রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি এবং অনেক ক্ষেত্রে হয়তো বেশিও। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার না হারার কারণ এটি নয়। রাশিয়ার বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরামর্শদাতা সের্গেই কারাগানভের মতে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ দেশটির ‘অস্তিত্বের’ প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত।
কারাগানভ বলেন, এই যুদ্ধের বিষয়ে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—রাশিয়া অন্যতম বিশ্বশক্তি। বিশ্বে সে তার মতো প্রভাব বলয় তৈরি করতে চায়। এ যুদ্ধে রাশিয়া হারলে রাশিয়ার ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। তাই রাশিয়া কোনোভাবেই হার মেনে নেবে না। এটা পশ্চিমাদের বুঝতে হবে।
কারাগানভের মতে, যুদ্ধ শুরুর সময় ইউক্রেনের সঙ্গে ন্যাটোর যে ধরনের সম্পর্ক চলছিল, তা বিশেষভাবে রাশিয়ার জন্য উদ্বেগজনক ছিল। বিশেষ করে ন্যাটো যেভাবে অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল ইউক্রেনকে, তাতে মনে হচ্ছিল যে, ইউক্রেন একটি ধারালো ফলা, যা রাশিয়ার হৃৎপিণ্ডের দিকে তাক করা। এই অবস্থায় ১৯৯০ এর দশকে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের আধিপত্যের চূড়ায় উঠেছিল। ফলে অর্থনৈতিক, নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পশ্চিমের যে ক্ষয়, তা এখন তাকে বেশি পোড়াচ্ছে। এতে সৃষ্ট সংকটগুলো কিন্তু না পশ্চিমে, না বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সমাধান হয়নি। এটিই ছিল এ যুদ্ধের ধ্রুপদি প্রেক্ষাপট। এদিকে, ২১ শতকের প্রথম দশকের শেষ থেকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমের যুদ্ধংদেহী মনোভাব বাড়তে থাকে। ফলে তখন থেকেই মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমের একটি সংঘাত আসন্ন বলে মনে হচ্ছিল। মস্কো এ ক্ষেত্রে আগ বাড়িয়ে নিজে থেকেই এই সংঘাতের শর্তাবলি নির্ধারণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।
এই সংঘাত অধিকাংশ পশ্চিমা অভিজাতের জন্য এক অস্তিত্বের লড়াই উল্লেখ করে কারাগানভ নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, এর পেছনে তাদের ব্যর্থতা আছে। আছে গণমানুষের দিক থেকে তাদের অনাস্থার বাস্তবতাও। তাই জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে নিয়ে যেতে তাদের দরকার ছিল একটি শত্রুর। এবং সেই শত্রুই হলো রাশিয়া। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে উদারবাদী বিশ্বায়নের নামে জারি করা সাম্রাজ্যবাদী কাঠামো ধসে গেলে শুধু বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা অভিজাতরাই নয়, অধিকাংশ পশ্চিমা দেশই আর টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে না। তাই এই যুদ্ধ কোনোভাবেই শুধু ইউক্রেনের বিষয় নয়। বরং ইউক্রেন ও তার জনগণকে পশ্চিমা অভিজাতরা নিজেদের শৌর্যকে অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে কামানের গোলা হিসেবে ব্যবহার করছে।
বিপরীতে রাশিয়ার কাছে এই যুদ্ধ কেবল তার অভিজাত গোষ্ঠীকে রক্ষা নয়, বরং দেশটির অস্তিত্বের জন্যই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই এই যুদ্ধে রাশিয়ার কোনোভাবেই হারা চলবে না বলে মনে করেন কারাগানভ। তাঁর মতে, এ কারণেই খুব বেশি সহিংসতার আশ্রয় না নিয়েও রাশিয়া জিতবে বলে আশা করা যায়। যদিও মানুষ কিন্তু মরছে।
এই যুদ্ধ ও ক্ষয়ের জন্য এক ধরনের পীড়নও বোধ করেন কারাগানভ। তিনি বলেন, ‘গত ২৫ বছর ধরে এমন একটি যুদ্ধের শঙ্কা ছিল আমার মধ্যে। আমি এটি থামাতে পারিনি। এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যর্থতা।’
কিন্তু কারাগানভ যে কথা বলছেন, তার সমালোচনাও আছে। তিনি এই যুদ্ধকে পশ্চিমাদের ‘রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন’ করার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো হিসেবে বর্ণনা করলেও, পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্লেষকেরা একে দেখছেন ভিন্নভাবে। তাঁরা বলছেন, এই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই রাশিয়া বরং বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। এই যুদ্ধকে সামনে রেখে, ইউক্রেনে চলা ধ্বংসযজ্ঞকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো বরং নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করছে। সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দিচ্ছে। এই যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পশ্চিম রাশিয়াকে আগামী বহু বছর ‘বড় হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করবে।
এই প্রসঙ্গ সামনে এনে এই যুদ্ধকে ‘ভুল’ হিসেবে ভাবতে রাজি কি-না, প্রশ্ন করলে কারাগানভ বলেন, গত দেড় দশক ধরেই রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমের সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছে। গত কয়েক মাসের ঘটনায় তাই খুব বেশি কিছু হারানোর নেই। তিনি বলেন, ‘এখন দ্বিতীয় কোনো ভাবনা ছাড়াই পশ্চিম থেকে রাশিয়া বিচ্ছিন্ন থাকতে পারবে। বরং আমরা পশ্চিমে কী ঘটে তা দেখার অপেক্ষায় আছি। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক দূরত্বের কথা বিবেচনায় বলতে গেলে পশ্চিম থেকে যত দূরে থাকব, ততই আমরা ভালো থাকব। অন্তত পরের এক-দুই দশক। এর পর আশা করা যায় কিছু বদল আসবে। পশ্চিমা অভিজাতদের মধ্যে কিছু বদল আসবে। আবার আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে। তবে এটা এখনই করতে গিয়ে আমরা দ্রুত বর্ধনশীল বাকি বিশ্ব থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফলতে পারি না, যেখানে পশ্চিম ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। সেটা হবে আত্মহত্যার শামিল। একেবারের সরাসরি দ্বৈরথে যাওয়াটা ঠিক ছিল, নাকি ভুল, তার মীমাংসা একমাত্র ইতিহাসই করতে পারে।’
কিন্তু এই যুদ্ধের কারণে রাশিয়া এরই মধ্যে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন সার্জ শ্মেম্যান। উদাহরণ হিসেবে তিনি রাশিয়া থেকে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া, খেলা বা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তারকাদের এই যুদ্ধের কারণে ভোগান্তিতে পড়া ইত্যাদির কথা তুলে ধরেন তিনি। একই সঙ্গে রাশিয়ার ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে ভ্লাদিমির পুতিন ধ্বংস করছেন বলে একটি মত চাউর হয়েছে উল্লেখ করে কারাগানভ কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি এসব ঘটনাকে রাশিয়ার জন্য ভালো কিছু বলে বিবেচনা করছেন কি-না, করলে কেন?
জবাবে কারাগানভ যা বলেছেন, তাতে ভবিষ্যতের বৈশ্বিক কাঠামোয় প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার আকাঙ্ক্ষাই প্রবল হয়ে উঠেছে। তাঁর মতে, একটা ন্যায্য ও স্থিতিশীল বিশ্বকাঠামোয় নিজের শক্ত অবস্থান তৈরির লড়াই এটি। এ যুদ্ধ রাশিয়ার কাছে উন্নত ও গৌরবময় সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য লড়াই। তিনি বলেন, ‘এমন একটা যুদ্ধ কিছু না হারিয়ে জয় করা সম্ভব নয়। তবে এর কারণে কয়েক লাখ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের রাশিয়া ছেড়ে যাওয়াটা দুঃখজনক। যদিও আমি জানি, আপনিও একমত হবেন যে, তারা সুখে নেই। তাদের কেউ কেউ ফিরে আসবে আশা করি। রুশ সংস্কৃতি বা রাশিয়ার যেকোনো কিছুকে খারিজ করাটা পশ্চিমাদের সমস্যা। এটা অনেকটা তাদের নিজের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও খ্রিষ্টীয় নৈতিকতাকে খারিজ করার মতোই।’
তবে সংঘাত রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে খর্ব করে বলে স্বীকার করেছেন সের্গেই কারাগানভ। নিজের বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্যেও তিনি বরাবরই এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন উল্লেখ করে কারাগানভ বলেন, রাশিয়ায় রাজনৈতিক স্বাধীনতা অন্য অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থানে আছে। খারিজ করার সংস্কৃতি রুশদের মধ্যে নেই। রাশিয়া বরং ভবিষ্যতের চিন্তার স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। একই সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘাত নিয়েও উদ্বিগ্ন, যা মানবসভ্যতার ইতিহাসেই ইতি টেনে দিতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিকে গত শতকের ৬০-এর দশকের কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সঙ্গে তুলনা করে কারাগানভ বলেন, ‘মুশকিল হচ্ছে বিপরীত পক্ষে কেনেডির মতো দক্ষ কোনো লোক এবার নেই।’
মোদ্দা কথা, কারাগানভ নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে পশ্চিমাদের খারিজ করার সংস্কৃতিকে এই সংকটের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর মতে, এই যুদ্ধের কারণে সাধারণ রুশদের কষ্ট হচ্ছে। পশ্চিমারা একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়ায় একটা বিদ্রোহের আবহ তৈরি করতে চায়। কিন্তু এসব করে উল্টো ফল হচ্ছে বলে দাবি কারাগানভের। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে একটা লাভ হয়েছে যে, রাশিয়ায় পশ্চিমা মূল্যবোধ নিয়ে থাকা লোকেরা অন্য দেশে চলে গেছে। এতে পশ্চিমাবান্ধব উপাদান থেকে মুক্ত হচ্ছে রাশিয়া। তবে, এর মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় সংস্কৃতি বিতাড়ন রাশিয়ার উদ্দেশ্য নয়। বরং এর ফলে ভবিষ্যতে রাশিয়াই হয়ে উঠবে অন্যতম অঞ্চল, যেখানে ইউরোপের সংস্কৃতি ও এর যাবতীয় সম্পদ ও মূল্যবোধের দেখা মিলবে।
রাশিয়া বারবার করে এ যুদ্ধে জয়ের কথা বলছে নিজের অস্তিত্ব টেকানোর প্রশ্নে। কিন্তু এই জয় আসলে কীসে নির্ধারিত হবে জানতে চাইলে সের্গেই কারাগানভ বলেন, ‘লক্ষ্যটা আদতে পরিবর্তনশীল। তবে ন্যূনতম লক্ষ্য হচ্ছে, দনবাসকে কিয়েভের ক্ষমতাকাঠামো থেকে মুক্ত করা। এটি এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তারপরই আসছে ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চল মুক্ত করার প্রশ্ন। আর তার পর রাশিয়ার লক্ষ্য হয়তো থাকবে, কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোর নিরস্ত্রীকরণ।’
কারাগানভ বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ পশ্চিম আরোপিত বিশ্ব ব্যবস্থা পতনের মধ্য দিয়ে একটি ন্যায্য ও মুক্ত বহুমেরু বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে যাত্রার ছোট্ট একটি পদক্ষেপ। সেই বিশ্ব ব্যবস্থার অন্যতম কেন্দ্র হবে ইউরেশিয়া, যেখানে রয়েছে মহান সভ্যতার ইতিহাস, যাকে শত শত বছর ধরে অবদমনে বাধ্য করা হয়েছে। এখানে রাশিয়া বিশ্ব সভ্যতাগুলো মধ্যে সংযোগ সাধনের এক নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই কাঠামোয় ভারসাম্য রক্ষার কাজটি রাশিয়া করতে পারে। দুটি ভূমিকাই রাশিয়া পালন করতে পারবে বলে আশা করা যায়।

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

রাশিয়ার ইউক্রেন হামলা চালানোর ছয় মাস পূর্ণ হতে চলেছে। ধারণার চেয়ে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হলেও ধীরে ধীরে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের দিকেই এগোচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেনে রাশিয়ার অগ্রগতি, রাশিয়ার বর্তমান অবস্থান এবং তাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে সম্প্রতি সাক্ষাৎকার দিয়
২০ জুলাই ২০২২
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

রাশিয়ার ইউক্রেন হামলা চালানোর ছয় মাস পূর্ণ হতে চলেছে। ধারণার চেয়ে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হলেও ধীরে ধীরে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের দিকেই এগোচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেনে রাশিয়ার অগ্রগতি, রাশিয়ার বর্তমান অবস্থান এবং তাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে সম্প্রতি সাক্ষাৎকার দিয়
২০ জুলাই ২০২২
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

রাশিয়ার ইউক্রেন হামলা চালানোর ছয় মাস পূর্ণ হতে চলেছে। ধারণার চেয়ে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হলেও ধীরে ধীরে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের দিকেই এগোচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেনে রাশিয়ার অগ্রগতি, রাশিয়ার বর্তমান অবস্থান এবং তাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে সম্প্রতি সাক্ষাৎকার দিয়
২০ জুলাই ২০২২
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

রাশিয়ার ইউক্রেন হামলা চালানোর ছয় মাস পূর্ণ হতে চলেছে। ধারণার চেয়ে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হলেও ধীরে ধীরে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের দিকেই এগোচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেনে রাশিয়ার অগ্রগতি, রাশিয়ার বর্তমান অবস্থান এবং তাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে সম্প্রতি সাক্ষাৎকার দিয়
২০ জুলাই ২০২২
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে