Ajker Patrika

ইরান-ইসরায়েল: একসময়ের ‘বন্ধু’ যেভাবে হয়ে উঠল ঘোরতর শত্রু

আব্দুর রহমান 
আপডেট : ২১ জুন ২০২৫, ১১: ১৯
একসময় বন্ধু হলেও সময়ের ব্যবধানে শত্রু হয়ে উঠেছে খামেনির ইরান ও নেতানিয়াহুর ইসরায়েল। ছবি: সংগৃহীত
একসময় বন্ধু হলেও সময়ের ব্যবধানে শত্রু হয়ে উঠেছে খামেনির ইরান ও নেতানিয়াহুর ইসরায়েল। ছবি: সংগৃহীত

বিগত কয়েক দশক ধরে ইরান-ইসরায়েল শত্রুতা ছিল অন্তরালে, কখনোই তেমন প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু ২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর এ দুই দেশ স্বল্প সময়ের মধ্যে তিন তিনবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। সর্বশেষ সংঘর্ষ টানা আট দিন ধরে চলছে। ইসরায়েলের দাবি, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি। যদিও কোনো প্রমাণ নেই। আর ইরান বলছে, তারা শান্তপূর্ণ ব্যবহারের জন্যই পরমাণু শক্তি চায়। তাদের অস্ত্র অর্জনের কোনো ইচ্ছা নেই।

ইসরায়েল গত ১৩ জুন ভোরে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং সামরিক কমান্ডারদের ওপর হামলা চালায়। জবাবে ইরানও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। গত বছরও ইসরায়েল ইরানের প্রতিরক্ষা স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল। এর জবাবে ইরানও পাল্টা হামলা করেছিল ইসরায়েলে। তবে সেই সংঘাত ছিল সীমিত পরিসরে।

যাই হোক, আজকের দিনে ইরান ও ইসরায়েলের সম্পর্ক আন্তর্জাতিক রাজনীতির সবচেয়ে বৈরী ও উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কগুলোর একটি। দেশ দুটি আজ যেমন চিরশত্রু, মাত্র কয়েক দশক আগেও তেমনটা ছিল না। তবে এই শত্রুতার পেছনে লুকিয়ে আছে এক জটিল ইতিহাস। একসময় দুই দেশের মধ্যে ছিল গোপন সহযোগিতা, কৌশলগত জোট ও পারস্পরিক স্বার্থের মিল। একসময় তারা বন্ধু ছিল, পরে গোপনে একে অপরের মিত্র হয়ে ওঠে, আর শেষে পরিণত হয় চিরশত্রুতে।

গাজার ওপর ইসরায়েলের নির্মম আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বে সবচেয়ে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানানো দেশগুলোর একটি ইরান। এটি ইরানের দৃঢ় ইসরায়েলবিরোধী পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই দেশকে প্রায়ই ‘চিরশত্রু’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। উভয় দেশ পরস্পরকে অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে মনে করে।

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল-ইরান বৈরিতার কেন্দ্রে রয়েছে ফিলিস্তিন ইস্যু। গাজায় হামলার পাশাপাশি ইসরায়েল লেবানন ও সিরিয়ায়ও মাঝে মাঝেই হামলা চালাচ্ছে। এ দুই দেশেই ইরানের প্রভাব ব্যাপক ছিল। কিন্তু সিরিয়ায় বাশারের পতনের পর এবং লেবাননে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে হিজবুল্লাহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এই প্রভাবে ভাটা পড়ে।

গত বছরের ৩১ জুলাই তেহরানে এক বিস্ফোরণে হামাসের তৎকালীন প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহত হন। হামাস ও ইরান এটিকে ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করে। এর ঠিক এক সপ্তাহ পর ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বৈরুতে নিহত হন হিজবুল্লাহর দীর্ঘদিনের নেতা হাসান নাসরুল্লাহ।

তবে ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক সব সময় এমন বৈরিতামূলক ছিল না। একসময় দুই দেশের সম্পর্ক নানা পর্যায়ে উঠানামা করেছে। ১৯২৫ সাল থেকে ১৯৭৯ সালের বিপ্লব পর্যন্ত শাসন করা পাহলভি রাজবংশের শাসনামলে ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক মোটেই বৈরী ছিল না। বরং, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের পর তুরস্কের পরই ইরান ছিল দ্বিতীয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘ যে বিশেষ কমিটি গঠন করে, ইরান ছিল তার ১১ সদস্যের একটি। এই কমিটিতে ইরান, ভারত ও যুগোস্লাভিয়া—এই তিনটি দেশ জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিভাজন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ভোট দেয়। তাদের আশঙ্কা ছিল, এতে এই অঞ্চলে বহু প্রজন্ম ধরে সহিংসতা চলতে পারে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ এরিক কভিন্ডেসল্যান্ড আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ইরান, ভারত ও যুগোস্লাভিয়া একটি বিকল্প পরিকল্পনা দেয়। তাদের প্রস্তাব ছিল একটি ফেডারেল রাষ্ট্র গঠন—যেখানে একটি পার্লামেন্ট থাকবে, কিন্তু আরব ও ইহুদি অঞ্চলে বিভক্ত থাকবে ফিলিস্তিন। এটাই ছিল ইরানের আপসের প্রস্তাব। তারা চেয়েছিল প্রো-জায়নিস্ট পশ্চিমা বিশ্ব ও প্রতিবেশী আরব-মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে।’

কিন্তু ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েল জাতিসংঘ নির্ধারিত সীমার চেয়েও বেশি ভূখণ্ড দখল করে নিলে, ১৯৫০ সালে ইরান—তৎকালীন সম্রাট মোহাম্মদ রেজা পাহলভির শাসনে—ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। ওই সময় জায়নিস্ট মিলিশিয়ারা ৭ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে তাঁদের ঘরবাড়ি থেকে জোর করে উৎখাত করে। এই ঘটনাকে ফিলিস্তিনিরা ‘নাকবা’ বা ‘বিপর্যয়’ হিসেবে স্মরণ করে।

কভিন্ডেসল্যান্ড জানান, সে সময় প্রায় ২ হাজার ইরানি ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে বসবাস করতেন এবং যুদ্ধের সময় তাঁদের সম্পত্তি ইসরায়েলি বাহিনী দখল করে। এই সম্পদ রক্ষার জন্যও ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল তেহরান। তবে এর পেছনে ছিল ইসরায়েলের তথাকথিত ‘পেরিফেরি নীতি।’ সে সময় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিওন মধ্যপ্রাচ্যে একঘরে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজছিলেন। তাই তিনি আরব দেশগুলোর বাইরের রাষ্ট্র—যেমন ইরান, তুরস্ক, ইথিওপিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এর মধ্যে ইরান ও তুরস্কের সঙ্গেই সফল যোগাযোগ হয়।

এরপর, ১৯৫১ সালে ইরানের প্রধানমন্ত্রী হন মোহাম্মদ মোসাদ্দেক। তিনি দেশের তেলশিল্প জাতীয়করণ করেন। এই তেলশিল্প তখন পুরোপুরি ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মোসাদ্দেক ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। কারণ, তিনি একে পশ্চিমা স্বার্থ রক্ষাকারী শক্তি হিসেবে দেখতেন।

তবে ইতিহাসবিদ কভিন্ডেসল্যান্ড বলছেন, মোসাদ্দেকের কাছে মূল বিষয় ছিল ব্রিটিশ তাড়ানো, রাজতন্ত্র দুর্বল করা ও আরব দেশগুলোর সমর্থন আদায় করা। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া ছিল ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’ বা ‘গৌণ ক্ষতি।’

ইরানে তখন কিছুটা হলেও জায়নবাদবিরোধী চিন্তা ছড়িয়েছিল। প্রভাবশালী শিয়া আলেম নবাব সাফাভি ছিলেন সেই সময়ের অন্যতম কণ্ঠস্বর। তিনি ইসরায়েল ও জায়নিজমের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তবে মোসাদ্দেকের কাছে মূল লক্ষ্য ছিল আরব বিশ্বে সমর্থন পাওয়া।

১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সহায়তায় এক অভ্যুত্থানে মোসাদ্দেক সরকার পতনের পর রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। পাহলভি পরিবার পুনরায় ক্ষমতায় ফেরে এবং হয়ে ওঠে পশ্চিমা বিশ্বের ঘনিষ্ঠ মিত্র। এরপর ইসরায়েল তেহরানে একটি দূতাবাস খোলে। ১৯৭০-এর দশকে দুই দেশ দুই দেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেয়। তেহরান-তেল আবিবের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বিস্তৃত হয়। ইরান হয়ে ওঠে ইসরায়েলের প্রধান তেল সরবরাহকারী। সে সময় ইসরায়েল হয়ে ইউরোপে তেল পাঠানোর জন্য ইরান একটি পাইপলাইনও নির্মাণ করে।

এই সম্পর্ক ছিল মূলত গোপন, যেন আরব রাষ্ট্রগুলো ক্ষুব্ধ না হয়। কভিন্ডেসল্যান্ড বলেন, ‘ইসরায়েল ইরানকে যতটা প্রয়োজন মনে করত, ইরান ততটা না। ইসরায়েল সব সময়ই বেশি আগ্রহী ছিল। তবে শাহও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে ইসরায়েলকে কাজে লাগাতে চাইতেন।’

ইরানের গোপন পুলিশ সংস্থা সাভাক গঠনে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সহায়তা ছিল বলেও ইতিহাসবিদেরা জানান। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর একটি নথিতে বলা হয়েছে, শাহের আমলে ইসরায়েল নিয়মিত ইরানে অস্ত্র বিক্রি করত। নথিতে বলা হয়, ‘এই অস্ত্র বিক্রি ইসরায়েলের নবগঠিত প্রতিরক্ষা শিল্পকে উল্লেখযোগ্যভাবে চাঙা করে তোলে, আর পারস্পরিক বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ইরান থেকে দরকারি তেল পাওয়া যেত, যার বিনিময়ে ইসরায়েল অস্ত্র ও কারিগরি সহায়তা দিত।’

সিআইএর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল ইরাকের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি ইরানের সমর্থনে সহায়তা করতে আগ্রহী ছিল। এর বদলে, ইরানও সম্ভবত ইরাকি সেনাবাহিনী সম্পর্কে কিছু গোয়েন্দা তথ্য মোসাদের সঙ্গে শেয়ার করেছিল। ওই নথিতে আরও বলা হয়েছে, ইরানে বসবাসরত ৯০ হাজার ইহুদির নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করাও ইসরায়েলের লক্ষ্য ছিল। তবে শাহ ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাননি। ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের মাধ্যমে শাহ ক্ষমতাচ্যুত হন। ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।

বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ইসলামি আদর্শে দেশ পরিচালনার ডাক দেন। তাঁর দৃষ্টিতে ইসরায়েল ছিল ‘ছোট শয়তান’ আর যুক্তরাষ্ট্র ‘বড় শয়তান’। তিনি বলতেন, এই শক্তিগুলো বিশ্বজুড়ে নিপীড়নের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে।

তেহরান ইসরায়েলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে। ইসরায়েলি দূতাবাসকে পরিণত করা হয় ফিলিস্তিনি দূতাবাসে। ইরানি নাগরিকদের জন্য ইসরায়েলে ভ্রমণ নিষিদ্ধ হয়। বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। খোমেনি পবিত্র রমজানের শেষ শুক্রবারকে ‘আল-কুদস দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। এই দিনটি জেরুজালেমের (যাকে আরবিতে বলা হয় আল-কুদস) মুক্তির দাবিতে প্রতিবছর ইরানে বড় বড় র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়।

কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্রাফটের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পারসি বলেন, খোমেনি ফিলিস্তিন ইস্যুকে আরব জাতীয়তাবাদের নয়, ইসলামের একটি বিষয় হিসেবে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। এর মাধ্যমে ইরান শুধু এই ইস্যুতে সক্রিয় থাকতেই নয়, নেতৃত্বও দিতে পারে—এমন ভিত্তি গড়ে তোলেন তিনি।

পারসি বলেন, ‘আরব-পারস্য বিভাজন এবং সুন্নি-শিয়া বিভক্তি অতিক্রম করে ইরান ফিলিস্তিন ইস্যুতে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক অবস্থান নেয়। এতে তারা ইসলামি বিশ্বের নেতৃত্বদানের অবস্থান তৈরি করে এবং যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আরব সরকারগুলোকে রক্ষণাত্মক ভূমিকায় ঠেলে দেয়।’

১৯৮০—১৯৯০ এর দশকে ইরান ইসরায়েলবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আবির্ভূত হয়। লেবাননে হিজবুল্লাহ এবং পরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে হামাসকে ইরান প্রশিক্ষণ, অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করতে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের প্রধান শত্রু হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতেই ইরান এ ধরনের ভূমিকা নেয়।

সিআইএ—এর তথ্য অনুসারে, ইরান ও ইসরায়েল প্রকাশ্যে একে অপরের শত্রুতে পরিণত হলেও পর্দার আড়ালে দুপক্ষের সম্পর্ক বজায় ছিল। ১৯৮০ সালে শুরু হওয়া এবং আট বছর ধরে চলা ইরান-ইরাক যুদ্ধে ইসরায়েল মনে করেছিল, খোমেনির ইসলামি ইরানের চেয়ে সাদ্দাম হোসেনের ইরাকই তাদের জন্য বেশি বিপজ্জনক। সে কারণেই ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে, গোপনে ইরানে অস্ত্র সরবরাহে জড়িয়ে পড়ে।

এই ঘটনা পরবর্তীতে ‘ইরান-কনট্রা কেলেঙ্কারি’ নামে ফাঁস হয়ে যায়। এতে দেখা যায়, ইসরায়েলি মধ্যস্থতায় ইরানে অস্ত্র পাঠানো হচ্ছিল। এর বিনিময়ে লেবাননে বন্দী থাকা মার্কিনিদের মুক্ত করতে সহায়তা এবং নিকারাগুয়ায় মার্কিনপন্থী বিদ্রোহীদের অর্থ জোগানো হচ্ছিল। তখন ইরান-ইসরায়েলের প্রকাশ্য বৈরিতার কথা মাথায় রেখে এই সম্পর্ক অনেককেই বিস্মিত করে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে এতটাই গোপন সহযোগিতা চলছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েছিল—ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্র বা যন্ত্রাংশ ইরানে পৌঁছে দিচ্ছে কিনা।

১৯৮৫ সালের ৭ অক্টোবর তারিখে সিআইএর এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘Israel and Iran: The ties that bind—অর্থাৎ ইসরায়েল ও ইরান: যে বন্ধনে তারা বাঁধা।’ এতে লেখা ছিল, ‘আমাদের ধারণা, ইসরায়েল যে ইরানে অস্ত্র বিক্রি করছে, সেটা ১৯৫০-এর দশকের শেষ থেকেই চলছে এবং এখনো চলছে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘১৯৫০-এর দশকে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার পেছনে যে কৌশলগত হিসাব ছিল, সেই একই কারণে ইসরায়েল এখনো এই অস্ত্র বিক্রির প্রতি সহনশীল মনোভাব দেখাচ্ছে। ইসরায়েলিরা আমাদের বলেছে, তারা চায় এই সহায়তা ইরান-ইরাক যুদ্ধকে দীর্ঘতর করুক, যাতে ইরাকের বিশাল সামরিক শক্তি পূর্ব সীমান্তেই আটকে থাকে। তবে তারা সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রের গোয়েন্দা সহায়তা দেবে না, কারণ এতে ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতা ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে এবং ইরান এই তথ্য সিরিয়ার মতো ইসরায়েলবিরোধী দেশের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে।’

সিআইএর ওই গোপন নথিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েল বিশ্বাস করত—যুক্তরাষ্ট্র যতই প্রকাশ্যে ইরানকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলুক, শেষ পর্যন্ত উপসাগরীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে হবে। ইসরায়েল মনে করত, ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলে তাদের স্বার্থ রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত শক্তি এবং ইসরায়েল আশা করত, ভবিষ্যতে এই গোপন সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার মধ্যস্থতাকারী হতে পারবে।

আজকের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অত্যন্ত আশ্চর্যজনক শোনালেও, তখন ইসরায়েল সত্যিই বিশ্বাস করত, তারা যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্কোন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। সিআইএ নথিতে বলা হয়, ‘তেল নিয়ে ইসরায়েলের চিন্তা এতটাই গভীর ছিল যে, তারা বিশ্বাস করত, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে, তাহলে তারাও ইরান থেকে তেল কিনতে পারবে।’

তবে ইসরায়েল নিশ্চিত ছিল, তাদের এই সহায়তা পুরোপুরি গোপনই থাকবে। সিআইএ নথিতে লেখা হয়, ‘খোমেনি শাসনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শাস্তিমূলক মনোভাব সম্পর্কে ইসরায়েল সচেতন এবং তারা তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠপোষককে (যুক্তরাষ্ট্রকে) রাগানোর ঝুঁকি নিতে চায় না। সে কারণে ইসরায়েল এমন মাত্রায় অস্ত্র বিক্রি করবে না, যা আর অস্বীকার করার সুযোগ রাখবে না। মার্কিন উদ্বেগের কারণে ইসরায়েল অতীতে কখনো ইরানকে বড় ধরনের অস্ত্র—যেমন ট্যাংক বা বিমান বিক্রি করেনি।’

১৯৯০-এর দশকে ইরান-ইসরায়েলের এই গোপন সম্পর্কের অবসান ঘটে। কারণ, সে সময়ই ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করে, যা ইসরায়েলের জন্য অস্তিত্বগত হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ইরান পরমাণু কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করলে, ইসরায়েল সন্দেহ করে এটি আসলে একটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি প্রকল্প। এরপর ইরান হিজবুল্লাহ, হামাস ও হুতিদের মতো ইসরায়েলবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি তাদের সমর্থন আরও জোরদার করে। ইরান লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক ও সশস্ত্র দলগুলো নিয়ে ‘এক্সিস অব রেজিস্যান্স’ বা ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ গঠন করেছে। এই জোট ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করে এবং ইসরায়েলকে প্রধান শত্রু মনে করে।

অন্যদিকে ইসরায়েলও বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে, যারা ইরান সরকারবিরোধী এবং সশস্ত্র কার্যক্রম চালায়। তেহরানের ভাষায়, এসব গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে ইউরোপভিত্তিক মুজাহিদীন-ই-খালক (এমইকে), দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের সুন্নি জঙ্গি সংগঠনগুলো এবং ইরাকি কুর্দিস্তানে অবস্থানকারী কুর্দি সশস্ত্র দলগুলো—যাদের ইরান ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে অভিহিত করে।

২০২০-এর দশকে ইরান-ইসরায়েল বিরোধ ‘শ্যাডো ওয়ার’ বা ছায়াযুদ্ধে রূপ নেয়। ড্রোন হামলা, সাইবার যুদ্ধ এবং সমুদ্রপথে নাশকতা—সবই এই সংঘাতের অংশ হয়ে ওঠে। ইরাক, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনে ইরানের প্রভাব যত বেড়েছে, ততই ইসরায়েলও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে এবং ইরানি উপস্থিতি ঠেকাতে বিভিন্ন সামরিক অভিযান চালিয়েছে।

চলতি বছরে এসে এই বৈরিতা আরও ঘনীভূত হয় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির রহস্যজনক দুর্ঘটনায় পড়ে মৃত্যু, তেহরানে ইসমাইল হানিয়া হত্যার পর। এরপর, দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে হামলা করে ইসরায়েল বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এক শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করে। এসব ঘটনার আলোকে গাজা যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে, ২০২৪ সালে ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের ওপর সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়।

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, আরব দেশগুলো যখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চার চারটি যুদ্ধ লড়েছে একুশ শতকের আগ পর্যন্ত সে সময় ইরান ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো সংঘাতেই জড়ায়নি। কিন্তু ইসলামি বিপ্লবের পর ইরান ক্রমেই ইসরায়েলের বিষয়ে মনোভাব বদলাতে থাকে এবং একপর্যায়ে দুই দেশ চির শত্রুতে পরিণত হয়। আর যে আরব ইসরায়েলের ঘোরতর শত্রু ছিল সেই আরব দেশগুলো এখন ইসরায়েলের একপ্রকার মিত্রে পরিণত হয়েছে।

সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন, ওমান, কুয়েতসহ অনেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে বা করার পথে আছে। সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনের পর নতুন সরকার গোপনে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ, কয়েক দশকের ব্যবধানে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক সমীকরণ একপ্রকার উল্টে গেছে। ইসরায়েলের এক সময়ের শত্রুরা এখন ‘বন্ধু’ হওয়ার পথে আর এক সময়ের বন্ধু এখন চিরশত্রু।

তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা ও ইকোনমিক টাইমস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের মেয়ে কুমিল্লায় আটক

পটিয়ায় আওয়ামী লীগের বিজয় দিবস উদ্‌যাপন, ক্ষুব্ধ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকারীরা

‘নিরাপত্তার’ কারণে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীর

আজকের রাশিফল: বাবা-মা আজ আবদার রাখবেন, সিঙ্গেলরা দ্রুত প্রোফাইল পিক বদলান

ধানমন্ডি ৩২-এ ভাসানী, সিরাজ সিকদার, হাদির ছবি টানালেন জুলাই যোদ্ধারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’

ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।

কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’

কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’

কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি
১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।

ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।

অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।

কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’

ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’

শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের মেয়ে কুমিল্লায় আটক

পটিয়ায় আওয়ামী লীগের বিজয় দিবস উদ্‌যাপন, ক্ষুব্ধ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকারীরা

‘নিরাপত্তার’ কারণে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীর

আজকের রাশিফল: বাবা-মা আজ আবদার রাখবেন, সিঙ্গেলরা দ্রুত প্রোফাইল পিক বদলান

ধানমন্ডি ৩২-এ ভাসানী, সিরাজ সিকদার, হাদির ছবি টানালেন জুলাই যোদ্ধারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইরান ও ইসরায়েলে সমানতালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪২
খামেনির ইরান ও নেতানিয়াহুর ইসরায়েল নতুন করে যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করেছে—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ছবি: সংগৃহীত
খামেনির ইরান ও নেতানিয়াহুর ইসরায়েল নতুন করে যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করেছে—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ছবি: সংগৃহীত

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।

হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।

গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।

এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?

গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।

ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।

সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।

যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।

আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের মেয়ে কুমিল্লায় আটক

পটিয়ায় আওয়ামী লীগের বিজয় দিবস উদ্‌যাপন, ক্ষুব্ধ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকারীরা

‘নিরাপত্তার’ কারণে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীর

আজকের রাশিফল: বাবা-মা আজ আবদার রাখবেন, সিঙ্গেলরা দ্রুত প্রোফাইল পিক বদলান

ধানমন্ডি ৩২-এ ভাসানী, সিরাজ সিকদার, হাদির ছবি টানালেন জুলাই যোদ্ধারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /পাকিস্তানকে এফ-১৬ আধুনিকীকরণের প্যাকেজ, ভারতকে কী বার্তা দিতে চান ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানকে এফ–১৬ যুদ্ধবিমান আধুনিকীকরণের প্রযুক্তি দিয়ে ভারতের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানকে এফ–১৬ যুদ্ধবিমান আধুনিকীকরণের প্রযুক্তি দিয়ে ভারতের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।

মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো

ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’

সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।

ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।

এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।

এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।

বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী

এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।

ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল

এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।

পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।

পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে

হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।

ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।

ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’

যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’

পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।

দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’

তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।

যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে

কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’

তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।

দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’


আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের মেয়ে কুমিল্লায় আটক

পটিয়ায় আওয়ামী লীগের বিজয় দিবস উদ্‌যাপন, ক্ষুব্ধ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকারীরা

‘নিরাপত্তার’ কারণে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীর

আজকের রাশিফল: বাবা-মা আজ আবদার রাখবেন, সিঙ্গেলরা দ্রুত প্রোফাইল পিক বদলান

ধানমন্ডি ৩২-এ ভাসানী, সিরাজ সিকদার, হাদির ছবি টানালেন জুলাই যোদ্ধারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।

আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।

মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।

যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।

ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।

১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।

‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের মেয়ে কুমিল্লায় আটক

পটিয়ায় আওয়ামী লীগের বিজয় দিবস উদ্‌যাপন, ক্ষুব্ধ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকারীরা

‘নিরাপত্তার’ কারণে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীর

আজকের রাশিফল: বাবা-মা আজ আবদার রাখবেন, সিঙ্গেলরা দ্রুত প্রোফাইল পিক বদলান

ধানমন্ডি ৩২-এ ভাসানী, সিরাজ সিকদার, হাদির ছবি টানালেন জুলাই যোদ্ধারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত