Ajker Patrika

কাঠমান্ডু পোস্টের নিবন্ধ

রাজস্ব ঘাটতি, ভর্তুকি আর দুর্বল করব্যবস্থায় টালমাটাল দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কোভিড–১৯ মহামারি, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ এবং দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামোর কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো রীতিমতো খাবি খাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
কোভিড–১৯ মহামারি, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ এবং দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামোর কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো রীতিমতো খাবি খাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ এশিয়া এখন সার্বভৌম ঋণ তথা সরকারের ঋণ ও রাজস্ব ঘাটতির ভারসাম্য রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে। স্থায়ী বাজেট ঘাটতির কারণে এ অঞ্চলের ঋণ বিশ্বের অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির তুলনায় দ্রুত বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালে সরকারগুলোর গড় ঋণের পরিমাণ পৌঁছেছে মোট জিডিপির ৭৭ শতাংশে।

এর আগে, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা ঋণ সংকটে পড়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। ২০২৩ সালে পাকিস্তান অল্পের জন্য একই পরিণতি থেকে রক্ষা পায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল—আইএমএফের সহায়তা চাওয়ার ঘটনাও বাংলাদেশের পরিস্থিতির গভীরতা তুলে ধরেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ভারতও এখন জিডিপির ৮০ শতাংশ সমপরিমাণ সরকারি ঋণের বোঝা বহন করছে। অন্যদিকে নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপের মতো ছোট দেশগুলো টিকে থাকতে অনুদানভিত্তিক বা ছাড়সুবিধাযুক্ত ঋণের ওপর নির্ভর করছে।

এই বিপুল ঋণসংকটের ঝুঁকি কেবল এর পরিমাণেই নয়, দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামোতেও লুকিয়ে আছে। একদিকে, সীমিত করভিত্তি, অদক্ষ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্য আমদানির ওপর অতিনির্ভরতা আর্থিক ব্যবস্থাকে সংকুচিত করেছে। অন্যদিকে, আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সহযোগিতার সীমাবদ্ধতা দক্ষিণ এশিয়াকে আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে বাইরের অংশীদারদের ওপর। ঋণের চাপ বাড়ায় উন্নয়ন খাত ও সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে ব্যয় করার মতো অর্থ কমে যাচ্ছে। ফলে জন–অর্থনীতি ক্রমেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, আর রাষ্ট্রের অগ্রাধিকারও পরিবর্তিত হচ্ছে।

কোভিড–১৯ মহামারি ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করে দিয়েছে। বিশ্ববাজারে মূল্য অস্থিরতার ওপর নির্ভরশীল এই অঞ্চলের দেশগুলো ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তীব্র সংকটে পড়ে যায়। ওই সময় জ্বালানি ও খাদ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়। রিজার্ভে চাপ পড়ায় সরকারগুলো বাধ্য হয় ঋণ নিতে—দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখা ও জ্বালানি–পণ্য মজুত রাখার জন্য।

এর ফলেই পুরো অঞ্চলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে। এই মূল্যবৃদ্ধি অতিরিক্ত চাহিদার কারণে নয়, বরং আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার ব্যাঘাতের ফল। উদাহরণ হিসেবে, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় ভোক্তা মূল্য বেড়ে যায় ৫০ শতাংশ। পাকিস্তানে ২০২৩ সালে তা ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এমনকি ‘টাইগার ইকোনমি’ খ্যাত বাংলাদেশেও ২০২৫ সালে মুদ্রাস্ফীতি ৮ শতাংশের বেশি হয়ে যায়। ভারতের বহুমুখী অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হলেও, রাশিয়ার সঙ্গে ছাড়মূল্যে জ্বালানি চুক্তির সহায়তায় ৩ শতাংশের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ধরে রাখতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার কোটি মানুষের জন্য এখন প্রতিটি বৈশ্বিক সংকটের প্রথম আঘাত আসে পেট্রলপাম্পে ও মুদি দোকানে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন বাণিজ্যিক বাস্তবতা। ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র—যা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক ক্রেতা—২০ থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে এই অঞ্চলের পোশাক ও শ্রমনির্ভর রপ্তানির ওপর। এতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস, শ্রীলঙ্কার অ্যাপারেলস ও ভারতের পোশাক খাতের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

রপ্তানি আয়ের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর জন্য এটি বড় ধাক্কা। কারণ এই শুল্ক তাদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে এবং দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতাকে আরও গভীর করছে।

দেশীয় অর্থনৈতিক কাঠামোগত সমস্যা—যেমন দুর্বল রাজস্বব্যবস্থা ও রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয় ভর্তুকি—দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সরকারকে বাইরের ধাক্কা সামলানোর ক্ষেত্রে দুর্বল করে তুলেছে। এতে আর্থিক খাতও দুর্বল হয়ে পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তানের কথা বলা যায়। দেশটিতে কৃত্রিমভাবে কমিয়ে রাখা বিদ্যুতের দর ‘সার্কুলার ঋণের’ ফাঁদ তৈরি করেছে, যা ঘুরে ফিরে রাষ্ট্রের ঘাড়েই এসে পড়ে। কারণ, সরকার পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না, আবার বেশি ভর্তুকি দিতে গিয়ে অন্য খাতে বরাদ্দ করা অর্থও ভর্তুকি মেটাতে সরিয়ে নিতে হচ্ছে। পুরো অঞ্চলেরই চিত্র এক—ভর্তুকি এখন অর্থনৈতিক প্রয়োজনের চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তা ছাড়া, দুর্বল করভিত্তি আর্থিক সক্ষমতাকে আরও সীমিত করছে। তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে পাকিস্তানে মাত্র ৩ শতাংশ নাগরিক আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। ২০২২ সালে বাংলাদেশে তা ছিল মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ, আর ভারতে প্রায় ৭ শতাংশ। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সরকারি অর্থের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি করছে। এগুলো শুধু অর্থনৈতিক দুর্বলতা নয়, বরং নীতিনির্ধারণে কাঠামোগত ভুল সিদ্ধান্তের ফল। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক শৃঙ্খলার চেয়ে স্বল্পমেয়াদি জনপ্রিয় পদক্ষেপই বেশি প্রাধান্য পায়। এই প্রবণতা সংকটকালে সরকারের কার্যকর সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং পুনরুদ্ধারের পথকে কঠিন করে তোলে।

জলবায়ু পরিবর্তন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আর্থিক সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। এই অঞ্চল এখনো বন্যা, তাপপ্রবাহ আর অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টির মতো জলবায়ু-ঝুঁকির প্রবল শিকার। এসব দুর্যোগ ফসল, জীবিকা, মানববসতি ও অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধু পাকিস্তানেই ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয় এবং লাখ লাখ মানুষের জীবিকা বিপর্যস্ত হয়। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান গরমে প্রতিবছর আনুমানিক ২ কোটি ৫০ লাখ কর্মদিবস নষ্ট হয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৮০ কোটি ডলার। অন্যদিকে ভারত, নেপাল ও ভুটানে অনিয়মিত জলবায়ুর প্রভাবে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, শীতলীকরণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি আমদানি ও সরকারি ব্যয়ও বাড়ছে।

এ ধরনের জলবায়ু-দুর্যোগের পর দেশগুলোকে নতুন করে ঋণ নিতে হয়। কারণ অভিযোজন বা টেকসই উন্নয়ন তহবিলের বড় অংশই ঋণভিত্তিক। ফলে টিকে থাকার লড়াইয়ে সরকারগুলো ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে। এতে আর্থিক চাপ বাড়লেও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি খুব একটা কমে না। এই অবস্থাকে বলা হচ্ছে ‘জলবায়ু-ঋণ ফাঁদ’—যেখানে দেশগুলোকে প্রথমে দুর্যোগে এবং পরে ঋণের বোঝায় শাস্তি পেতে হয়। যথেষ্ট পরিমাণে স্বল্পসুদ বা অনুদানভিত্তিক তহবিল না থাকলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বারবার জলবায়ুর চক্রাকারে আঘাতের কাছে জিম্মি হয়ে থাকবে।

ঋণমুক্ত সহায়তার পথ যেমন ‘ঋণ-বিনিময়ে জলবায়ু তহবিল’ বা আঞ্চলিক ঝুঁকি-ভাগাভাগি তহবিল দুর্যোগের সময় তাৎক্ষণিক অর্থায়নের সুযোগ দিতে পারে। তবে রাজনৈতিক জটিলতা ও আঞ্চলিক সহযোগিতার অভাবে এসব উদ্যোগের বাস্তবায়ন এখনো খুব ধীর গতির।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলো বারবার দেউলিয়া পরিস্থিতি এড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে ৪০০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ভারত। পাশাপাশি ২০২৩ সালে দেশটি ১৭০ কোটি ডলারের একটি ‘এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি’ পেয়েছে, যা দেশটির মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে। তবে সরকারি ঋণের চাপ এখনো টেকসই নয়। পাকিস্তান ২০২৩ সালে ৩০০ কোটি ডলার এবং ২০২৪ সালে আরও ৭০০ কোটি ডলার সহায়তা নিয়েছে আইএমএফ থেকে। এতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সাফল্য এসেছে, কিন্তু ঋণ পরিশোধেই দেশটির মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় হয়।

বাংলাদেশও ৪৭০ কোটি ডলারের একটি আইএমএফ কর্মসূচি নিয়েছে চলতি হিসাব ঘাটতি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে, যা বিনিময় হার সমন্বয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এখনো ধীর গতির। ছোট দেশগুলো—যেমন নেপাল ও ভুটান—সংকীর্ণ রাজস্ব ঘাটতির মধ্যে বিদেশি সহায়তা, রেমিট্যান্স ও স্বল্পসুদে ঋণের ওপর নির্ভর করেই টিকে আছে। সব মিলিয়ে এই অঞ্চলে আইএমএফের সহায়তা জরুরি সংকটকালীন সময়ে কিছুটা সময় ও স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবে দেশগুলোর উচিত এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা ও ঋণ ব্যবস্থাপনাকে নতুনভাবে গড়ে তোলা।

মধ্য মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার দরকার একটি সমন্বিত কাঠামো, যা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়াবে। এর একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে—ভুটান, নেপাল ও ভারতের মধ্যে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বাণিজ্যের সম্ভাবনা, যা বাস্তবায়িত হলে ২০৪০ সালের মধ্যে বছরে প্রায় ৯০০ কোটি ডলার সাশ্রয় সম্ভব। বর্তমানে অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, যেখানে সম্ভাবনা রয়েছে ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার পর্যন্ত—এটি বাড়ানো গেলে বৈশ্বিক সরবরাহ ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়ক হবে।

একই সঙ্গে একটি ঝুঁকি বিমা তহবিল গঠন জরুরি, যা ক্যারিবীয় অঞ্চলের ‘ক্লাইমেট রিস্ক ইন্স্যুরেন্স ফ্যাসিলিটি’-এর মতো কাজ করবে। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর দ্রুত আর্থিক সহায়তা পাওয়া যাবে, নতুন ঋণের বোঝা না বাড়িয়ে। এ ধরনের যৌথ ঝুঁকি ভাগাভাগির ব্যবস্থা অঞ্চলটির অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে টেকসই শক্তিতে রূপ দিতে পারে—যা পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য কার্যকর প্রণোদনা হতে পারে।

অভ্যন্তরীণ সংস্কারের মাধ্যমে সরকারকে করের আওতা বাড়াতে হবে, রাজনৈতিক কারণে দেওয়া ভর্তুকি কমাতে হবে এবং লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য করলে রাজস্ব ঘাটতি কমানো যাবে, তবে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে—বিশেষ করে জ্বালানি খাতে।

এ ছাড়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে তারা স্বচ্ছভাবে ঋণ ব্যবস্থাপনা ও হিসাব প্রকাশ করতে পারে। মধ্যমেয়াদি ব্যয় কাঠামো গ্রহণ এবং বাজেটে জলবায়ু ঝুঁকি অন্তর্ভুক্ত করাও জরুরি। সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, নতুন ঋণ যেন উৎপাদনশীল বিনিয়োগে ব্যয় হয়, রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য নয়।

দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে—দেশগুলো কি একা লড়াই করবে, নাকি একসঙ্গে মিলে আর্থিক স্থিতি গড়বে। বারবার আইএমএফের সহায়তায় টিকে থাকা নয়, বরং টেকসই প্রবৃদ্ধি ও পারস্পরিক স্থিতিশীলতার দিকেই এগোতে হবে এখন। যৌথ উদ্যোগে এই অঞ্চলই পারে দুর্বলতাকে রূপান্তর করতে অর্থনৈতিক সক্ষমতায়—যা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হতে পারে নতুন সূচনা।

লেখক:

বিজ্ঞান বাবু রেজমি, সুইজারল্যান্ডের ইএইচটি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির পিএইচডি গবেষক

শিশির ভান্ডারি, নিউইয়র্কভিত্তিক অর্থনীতিবিদ ও গবেষক

কাঠমান্ডু পোস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দোনেৎস্ক: শান্তি-আলোচনার টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কির অন্তিম বাধা, এর গুরুত্ব কতটা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।

উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।

প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।

পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।

পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।

কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।

দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।

শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।

কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।

উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।

ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।

রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।

দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।

দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।

জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।

রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কী হবে, যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।

সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।

উদ্ভাবন কি থেমে যাবে

অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।

যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো

গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।

বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে

ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে

গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।

চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব

বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।

আল-জাজিরা অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২০
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।

তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।

তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।

তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।

এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুতিন-মোদির আসন্ন বৈঠকের মূলে কী আছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪৫
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।

রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।

পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।

বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত