আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে, যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশির ভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প। চার মাস পর আবারও বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প। আর এই শুল্ক আরোপ ও বাণিজ্য চুক্তিকে নিজের সাফল্য হিসেবে অভিহিত করছেন তিনি।
ট্রাম্প কিছু বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে চুক্তি করেছেন আর অন্যদের ওপর একতরফাভাবে শুল্ক চাপিয়েছেন। তবে এবার দেশগুলো কিছুটা প্রস্তুতই ছিল বলা যায়। এ কারণে গত এপ্রিলের মতো অস্থির অর্থনীতির দেখা মিলছে না।
বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পুনর্বিন্যাস করতে চান ট্রাম্প। অন্তত এই দাবিতেই শুল্ক আরোপ বাড়িয়েছেন তিনি। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নতুন রাজস্বের, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন শিল্প পুনরুজ্জীবিত করার এবং দেশে শত শত বিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার ও মার্কিন পণ্য কেনার চুক্তির।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই প্রতিশ্রুতির কতটা বাস্তবায়ন হবে বা এর নেতিবাচক ফলাফল কতটা পড়বে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এখন পর্যন্ত যা পরিষ্কার তা হলো, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগেই যেখানে বৈশ্বিক মুক্ত বাণিজ্যের প্রতি আগ্রহ ধীরে ধীরে কমছিল, সেখানে ট্রাম্পের পদক্ষেপ সেটিকে রীতিমতো এক ঢেউয়ে পরিণত করেছে, যা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বদলে দিচ্ছে। যদিও এখনো সেই পরিবর্তনের পূর্ণ প্রভাব বোঝা যায়নি। কারণ এমন পরিবর্তনে ফলাফল সামনে আসে দেরিতে।
অনেক দেশের জন্যই এই শুল্ক আরোপ একধরনের সতর্কবার্তা হিসেবে এসেছে। বাণিজ্যিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তায় নতুন জোট গঠন নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
ফলে, স্বল্প মেয়াদে ট্রাম্প যা ‘জয়’ হিসেবে দেখছেন, সেটি তাঁর বৃহত্তর কৌশলিক লক্ষ্যপূরণে কতটা কাজে দেবে, তা অনিশ্চিত। আর এর প্রভাব ট্রাম্পের জন্য এবং দীর্ঘমেয়াদে আমেরিকার ওপর পড়তে যাচ্ছে, তা একেবারেই ভিন্ন হতে পারে।
‘৯০ দিনে ৯০ চুক্তি’, যে সময়সীমা নিয়ে এসেছিল আতঙ্ক
আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকদের ক্যালেন্ডারে ১ আগস্ট তারিখটি লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত ছিল। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে আগেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করো, নইলে ধ্বংসাত্মক শুল্কের মুখোমুখি হও।
হোয়াইট হাউজের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো যখন ‘৯০ দিনে ৯০ চুক্তি’র ঘোষণা দেন এবং ট্রাম্প নিজেও দ্রুত চুক্তি সম্পাদনের আশাবাদী মন্তব্য করেন, তখন থেকেই বিশেষজ্ঞদের কাছে সময়সীমাটি অবাস্তব বলেই মনে হচ্ছিল এবং বাস্তবেও সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
জুলাই মাসের শেষে এসে দেখা গেছে, ট্রাম্প মাত্র এক ডজন বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেছেন, যার অনেকগুলোই এক-দুই পৃষ্ঠার বেশি নয়। এসব চুক্তিতে সাধারণত যেসব বিশদ ও বাধ্যবাধকতামূলক শর্ত থাকে, তা অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত।
এই পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য অংশীদারদের অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রশ্ন থেকে গেছে চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ বাস্তবায়ন ও স্থায়িত্ব নিয়ে।
প্রথম ধাক্কা লেগেছিল যুক্তরাজ্যে
ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি আর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সেই ঘাটতি তুলনামূলকভাবে প্রায় ভারসাম্যপূর্ণ। ফলে যুক্তরাজ্যের বেলায় দ্রুত অগ্রগতি হওয়াটা খুব একটা বিস্ময়ের নয়।
বেশির ভাগ ব্রিটিশ পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ প্রাথমিক শুল্কহার আরোপ প্রথমে কিছুটা কপাল কুঁচকানোর মতো ছিল ঠিকই, তবে সেটিই পরবর্তী পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত সেটিও কিছুটা স্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের মতো অংশীদারদের ওপর যেখানে শুল্ক ১৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি যথাক্রমে ২৪০ বিলিয়ন ডলার ও ৭০ বিলিয়ন ডলার (শুধু গত বছরে) সেখানে যুক্তরাজ্যের হার ছিল তুলনামূলক সহনীয়।
তবে বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের এসব চুক্তি শর্তহীন ছিল না। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য কেনার বিষয়ে স্পষ্ট অঙ্গীকার দিতে পারেনি, তারা অনেক সময় উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক দেশকে শুল্ক চিঠি পাঠাতে থাকে। বর্তমানে বেশির ভাগ আমদানি যুক্তরাষ্ট্রে এখন কোনো না কোনো চুক্তি বা প্রেসিডেন্টের একতরফা আদেশের আওতায় পড়ে আর এসব আদেশের শেষে থাকে ট্রাম্পের সংক্ষিপ্ত বার্তা: ‘এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’
বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘ক্ষতি’ করার ক্ষমতা
গত কয়েক মাসের ঘটনাপ্রবাহ অনেক কিছু উন্মোচন করেছে। তবে ভালো খবর হলো শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ শুল্ক এবং মন্দার আশঙ্কা এড়ানো গেছে। উচ্চ শুল্কহার এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা বাস্তবে রূপ নেয়নি।
দ্বিতীয়ত, অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন শুল্ক শর্তে সম্মত হওয়ায় একটা বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে। যে অনিশ্চয়তা ট্রাম্প নিজেই গত মাসগুলোতে একধরনের অর্থনৈতিক চাপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।
এই অনিশ্চয়তা দূর হওয়ায় একদিকে যেমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় পরিকল্পনা করতে পারছে, তেমনি বিনিয়োগ ও নিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও আবার সচল হচ্ছে।
বেশিরভাগ রপ্তানিকারক এখন জানেন, তাদের পণ্যের ওপর কত শতাংশ শুল্ক বসছে এবং সেই অনুযায়ী তাঁরা খরচ কীভাবে সামলাবেন বা ভোক্তার ওপর কতটা চাপ দেবেন, সেটাও হিসাব করতে পারছেন।
এই ক্রমবর্ধমান স্পষ্টতা বিশ্ব অর্থবাজারে তুলনামূলক স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করেছে। এর ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে উল্লেখযোগ্য উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে।
অবশ্য একটি দিক থেকে এটি নেতিবাচকও বটে। কারণ এখন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির গড় শুল্কহার আগের তুলনায় বেশি এবং ছয় মাস আগেও এতটা চরম অবস্থার পূর্বাভাস দেননি বিশ্লেষকেরা।
ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিকে বড় অর্জন হিসেবে তুলে ধরলেও এগুলো সেই রকম ‘শুল্ক বাধা ভেঙে ফেলার’ চুক্তি নয়, যা আগের দশকগুলোতে দেখা যেত।
বিপর্যয়, বড় মন্দা, ব্যাপক বাজার ধসের মতো শঙ্কাগুলো এখন কিছুটা দূরে ঠেকছে। তবে অক্সফোর্ড ইকোনমিকস-এর গ্লোবাল ম্যাক্রো ফোরকাস্টিং ডিরেক্টর বেন মে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি এখনো বহুভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ করার ক্ষমতা রাখে।
তিনি বলেন, ‘এই শুল্ক কার্যত যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের আয় সংকুচিত করছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যদি কম পণ্য আমদানি করে, তাহলে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাবে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও।’
জয়ী ও পরাজিত: জার্মানি, ভারত ও চীন
শুধু শুল্কের হার নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের পরিমাণও নির্ধারণ করে কে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভারতের কথা ধরলে, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানির ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ। তবে ক্যাপিটাল ইকোনমিকস-এর অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদার অবদান মাত্র ২ শতাংশ হওয়ায়, এই শুল্কের তাৎক্ষণিক প্রভাব হয়তো খুব বড় ধরনের হবে না।
তবে জার্মানির ক্ষেত্রে খবরটা ততটা আশাব্যঞ্জক নয়। ১৫ শতাংশ শুল্ক তাদের প্রবৃদ্ধির হার থেকে চলতি বছরে ০.৫ শতাংশেরও বেশি কমিয়ে দিতে পারে। যা বছরের শুরুতে করা পূর্বাভাসের চেয়ে অনেকটাই কম। এর মূল কারণ হলো, এই ধরনের শুল্কবৃদ্ধির ফলে জার্মানির বিশাল গাড়ি শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এমন সময় এই শুল্ক আরোপ যখন দেশটি ইতিমধ্যেই মন্দার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।
আর চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক সবচেয়ে অস্থির অবস্থায় রয়েছে। গত কয়েক মাসে চীনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ শুল্কের আশঙ্কায় অ্যাপলসহ একাধিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর এই সিদ্ধান্তে লাভবান হয় ভারত। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে।
তবে ভারত এটা জানে, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো, যারা যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে তুলনামূলকভাবে কম শুল্কের মুখোমুখি হয়, তারা অন্যান্য খাতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও আকর্ষণীয় বিকল্প জোগানদাতা হয়ে উঠতে পারে।
শুল্ক নীতি ও ট্রাম্পের রাজনৈতিক ঝুঁকি
যত সময় যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এই শুল্কনীতির প্রভাবও ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। শুল্কের পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে এই শঙ্কায় অনেক প্রতিষ্ঠান আগেভাগে মার্কিন পণ্য কিনে রেখেছিল তাই চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা প্রবৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, বছরের বাকি সময়টাতে এই প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পাবে।
বছরের শুরুতে যেখানে গড় শুল্কহার ছিল মাত্র ২ শতাংশ, এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রাজস্বে উল্লেখযোগ্য প্রবাহ এসেছে, যা ছিল ট্রাম্পের ঘোষিত বাণিজ্যনীতির অন্যতম লক্ষ্য।
এ বছরের প্রথম সাত মাসেই আমদানি শুল্ক থেকে এসেছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা মার্কিন ফেডারেল আয়ের প্রায় ৫ শতাংশ (যেখানে সাধারণত তা থাকে ২ শতাংশ-এর আশেপাশে)।
ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট আশা করছেন, পুরো বছরে শুল্ক থেকে আয় হবে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার। তুলনামূলকভাবে, ফেডারেল ইনকাম ট্যাক্স থেকে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র পায় প্রায় ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
তবে সবচেয়ে বড় চাপ এখনো সাধারণ মার্কিন ভোক্তার কাঁধেই রয়েছে। তারা এখনো পুরোপুরি মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা পাননি, কিন্তু ইউনিলিভার, অ্যাডিডাসের মতো বড় ভোক্তা পণ্য কোম্পানিগুলো এখন খোলাখুলিভাবে বাড়তি খরচের হিসাব দিচ্ছে।
ফলে সামনে ‘স্টিকার শক’ অর্থাৎ হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্রাহকদের বিস্মিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এটা ভোক্তাদের ব্যয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং ট্রাম্পের প্রত্যাশিত সুদের হার কমানোর পথও আটকে দিতে পারে।
এ অবস্থায় অর্থনৈতিক চাপ ও মূল্যবৃদ্ধি মিলিয়ে নির্বাচনী বছর ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্পের জন্য এটি একটি বাস্তব ও বাড়তে থাকা রাজনৈতিক ঝুঁকিতে পরিণত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও স্পষ্ট রাজনৈতিক হুমকি
সব ধরনের পূর্বাভাসেই কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকে, তবে এই মুহূর্তে যা স্পষ্ট, তা হলো, একজন এমন প্রেসিডেন্টের জন্য এটা একটি বাস্তব রাজনৈতিক হুমকি, যিনি ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দাম বাড়ানোর নয়।
ট্রাম্প এবং হোয়াইট হাউজের অন্যান্য কর্মকর্তারা এখন কম আয়ের মার্কিনদের জন্য ‘রিবেট চেক’ দেওয়ার কথা ভাবছেন। বিশেষ করে সেইসব ব্লু-কলার (শ্রমজীবী) ভোটারদের জন্য, যারা তার রাজনৈতিক উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা জটিল হতে পারে এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনও প্রয়োজন হবে।
এটা আবার একধরনের পরোক্ষ স্বীকারোক্তিও বটে। শুধু অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব আসার দাবি, ব্যয় বা কর হ্রাসের ঘাটতি পূরণের যুক্তি অথবা ভবিষ্যতে দেশীয় কর্মসংস্থান ও সম্পদ তৈরির আশ্বাস দিয়ে জনগণের আস্থা রাখা রাজনৈতিকভাবে খুব একটা নিরাপদ কৌশল নয়। যখন রিপাবলিকান পার্টিকে আগামী বছরের অঙ্গরাজ্য ও কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটারদের মুখোমুখি হতে হবে, তখন এই মূল্যবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক চাপ দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
এখনো চূড়ান্ত হয়নি বহু গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি
এই জটিল পরিস্থিতিতে আরও জটিলতা যোগ করছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে চুক্তি এখনও চূড়ান্ত না হওয়া। বিশেষ করে কানাডা এবং তাইওয়ানের সঙ্গে এখনও সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বড় বাণিজ্যিক অংশীদার মেক্সিকোর সঙ্গে আলোচনার সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এছাড়া চীনের জন্য আলাদা সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাও এখনো অনির্ধারিত রয়েছে।
এ পর্যন্ত বেশ কিছু চুক্তি মৌখিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু তা এখনও লিখিত স্বাক্ষরিত হয়নি। এছাড়া ট্রাম্পের শর্তাবলীর বাস্তবায়ন কতটা এবং কীভাবে হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি নেতারা ট্রাম্পের দাবি করা শর্তাবলীর অস্তিত্বই অস্বীকার করেছেন।
এই অনিশ্চয়তার কারণে ভবিষ্যতে বাণিজ্য সম্পর্ক কতটা স্থায়ী ও ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
হোয়াইট হাউজ ও বিভিন্ন দেশের মধ্যকার শুল্ক চুক্তি বিশ্লেষণে করে অর্থনীতিবিদ জন মে বলছেন, “‘শয়তান’ থাকে বিস্তারিত শর্তাবলীতে। আর এই বিস্তারিত শর্তাবলী এখন পর্যন্ত খুবই সীমিত বা অসম্পূর্ণ। ”
তবুও এটা স্পষ্ট যে বিশ্ব ধ্বংসাত্মক বাণিজ্যযুদ্ধের প্রান্ত থেকে ফিরে এসেছে। এখন, যখন দেশগুলো নতুন ধরনের বাণিজ্য বাধার সঙ্গে মোকাবিলা করছে, ট্রাম্প সেই পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন।
তবে ইতিহাস বলছে, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্পের যে লক্ষ্য তা খুব বেশি সফল হবে বলে আশা করা কঠিন। আর কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দীর্ঘদিনের মার্কিন অংশীদাররা হয়তো এমন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা করবে, যা তাদের আর ‘নির্ভরযোগ্য’ অর্থনৈতিক মিত্র হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেখবে না।
ট্রাম্প সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক অনন্য অবস্থানের সুবিধা নিচ্ছেন, যা বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং যেটি গড়ে তুলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আধা শতকেরও বেশি সময় নিয়েছে। কিন্তু যদি বর্তমান শুল্ক ব্যবস্থা বিশ্ববাণিজ্যে মৌলিক পুনর্বিন্যাস শুরু করে, তাহলে তার দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে না হলেও হতে পারে। এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর মিলতে কেটে যাবে বছরের পর ছর।
তবে এখন পর্যন্ত, ট্রাম্পের নির্বাচকদের হয়তো তাদের বেশির ভাগ ‘মূল্য’ নিজেই বহন করতে হবে উচ্চ মূল্য, সীমিত পছন্দ এবং ধীর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক ফারহানা জিয়াসমিন।

গত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে, যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশির ভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প। চার মাস পর আবারও বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প। আর এই শুল্ক আরোপ ও বাণিজ্য চুক্তিকে নিজের সাফল্য হিসেবে অভিহিত করছেন তিনি।
ট্রাম্প কিছু বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে চুক্তি করেছেন আর অন্যদের ওপর একতরফাভাবে শুল্ক চাপিয়েছেন। তবে এবার দেশগুলো কিছুটা প্রস্তুতই ছিল বলা যায়। এ কারণে গত এপ্রিলের মতো অস্থির অর্থনীতির দেখা মিলছে না।
বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পুনর্বিন্যাস করতে চান ট্রাম্প। অন্তত এই দাবিতেই শুল্ক আরোপ বাড়িয়েছেন তিনি। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নতুন রাজস্বের, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন শিল্প পুনরুজ্জীবিত করার এবং দেশে শত শত বিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার ও মার্কিন পণ্য কেনার চুক্তির।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই প্রতিশ্রুতির কতটা বাস্তবায়ন হবে বা এর নেতিবাচক ফলাফল কতটা পড়বে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এখন পর্যন্ত যা পরিষ্কার তা হলো, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগেই যেখানে বৈশ্বিক মুক্ত বাণিজ্যের প্রতি আগ্রহ ধীরে ধীরে কমছিল, সেখানে ট্রাম্পের পদক্ষেপ সেটিকে রীতিমতো এক ঢেউয়ে পরিণত করেছে, যা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বদলে দিচ্ছে। যদিও এখনো সেই পরিবর্তনের পূর্ণ প্রভাব বোঝা যায়নি। কারণ এমন পরিবর্তনে ফলাফল সামনে আসে দেরিতে।
অনেক দেশের জন্যই এই শুল্ক আরোপ একধরনের সতর্কবার্তা হিসেবে এসেছে। বাণিজ্যিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তায় নতুন জোট গঠন নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
ফলে, স্বল্প মেয়াদে ট্রাম্প যা ‘জয়’ হিসেবে দেখছেন, সেটি তাঁর বৃহত্তর কৌশলিক লক্ষ্যপূরণে কতটা কাজে দেবে, তা অনিশ্চিত। আর এর প্রভাব ট্রাম্পের জন্য এবং দীর্ঘমেয়াদে আমেরিকার ওপর পড়তে যাচ্ছে, তা একেবারেই ভিন্ন হতে পারে।
‘৯০ দিনে ৯০ চুক্তি’, যে সময়সীমা নিয়ে এসেছিল আতঙ্ক
আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকদের ক্যালেন্ডারে ১ আগস্ট তারিখটি লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত ছিল। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে আগেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করো, নইলে ধ্বংসাত্মক শুল্কের মুখোমুখি হও।
হোয়াইট হাউজের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো যখন ‘৯০ দিনে ৯০ চুক্তি’র ঘোষণা দেন এবং ট্রাম্প নিজেও দ্রুত চুক্তি সম্পাদনের আশাবাদী মন্তব্য করেন, তখন থেকেই বিশেষজ্ঞদের কাছে সময়সীমাটি অবাস্তব বলেই মনে হচ্ছিল এবং বাস্তবেও সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
জুলাই মাসের শেষে এসে দেখা গেছে, ট্রাম্প মাত্র এক ডজন বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেছেন, যার অনেকগুলোই এক-দুই পৃষ্ঠার বেশি নয়। এসব চুক্তিতে সাধারণত যেসব বিশদ ও বাধ্যবাধকতামূলক শর্ত থাকে, তা অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত।
এই পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য অংশীদারদের অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রশ্ন থেকে গেছে চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ বাস্তবায়ন ও স্থায়িত্ব নিয়ে।
প্রথম ধাক্কা লেগেছিল যুক্তরাজ্যে
ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি আর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সেই ঘাটতি তুলনামূলকভাবে প্রায় ভারসাম্যপূর্ণ। ফলে যুক্তরাজ্যের বেলায় দ্রুত অগ্রগতি হওয়াটা খুব একটা বিস্ময়ের নয়।
বেশির ভাগ ব্রিটিশ পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ প্রাথমিক শুল্কহার আরোপ প্রথমে কিছুটা কপাল কুঁচকানোর মতো ছিল ঠিকই, তবে সেটিই পরবর্তী পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত সেটিও কিছুটা স্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের মতো অংশীদারদের ওপর যেখানে শুল্ক ১৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি যথাক্রমে ২৪০ বিলিয়ন ডলার ও ৭০ বিলিয়ন ডলার (শুধু গত বছরে) সেখানে যুক্তরাজ্যের হার ছিল তুলনামূলক সহনীয়।
তবে বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের এসব চুক্তি শর্তহীন ছিল না। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য কেনার বিষয়ে স্পষ্ট অঙ্গীকার দিতে পারেনি, তারা অনেক সময় উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক দেশকে শুল্ক চিঠি পাঠাতে থাকে। বর্তমানে বেশির ভাগ আমদানি যুক্তরাষ্ট্রে এখন কোনো না কোনো চুক্তি বা প্রেসিডেন্টের একতরফা আদেশের আওতায় পড়ে আর এসব আদেশের শেষে থাকে ট্রাম্পের সংক্ষিপ্ত বার্তা: ‘এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’
বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘ক্ষতি’ করার ক্ষমতা
গত কয়েক মাসের ঘটনাপ্রবাহ অনেক কিছু উন্মোচন করেছে। তবে ভালো খবর হলো শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ শুল্ক এবং মন্দার আশঙ্কা এড়ানো গেছে। উচ্চ শুল্কহার এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা বাস্তবে রূপ নেয়নি।
দ্বিতীয়ত, অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন শুল্ক শর্তে সম্মত হওয়ায় একটা বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে। যে অনিশ্চয়তা ট্রাম্প নিজেই গত মাসগুলোতে একধরনের অর্থনৈতিক চাপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।
এই অনিশ্চয়তা দূর হওয়ায় একদিকে যেমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় পরিকল্পনা করতে পারছে, তেমনি বিনিয়োগ ও নিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও আবার সচল হচ্ছে।
বেশিরভাগ রপ্তানিকারক এখন জানেন, তাদের পণ্যের ওপর কত শতাংশ শুল্ক বসছে এবং সেই অনুযায়ী তাঁরা খরচ কীভাবে সামলাবেন বা ভোক্তার ওপর কতটা চাপ দেবেন, সেটাও হিসাব করতে পারছেন।
এই ক্রমবর্ধমান স্পষ্টতা বিশ্ব অর্থবাজারে তুলনামূলক স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করেছে। এর ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে উল্লেখযোগ্য উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে।
অবশ্য একটি দিক থেকে এটি নেতিবাচকও বটে। কারণ এখন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির গড় শুল্কহার আগের তুলনায় বেশি এবং ছয় মাস আগেও এতটা চরম অবস্থার পূর্বাভাস দেননি বিশ্লেষকেরা।
ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিকে বড় অর্জন হিসেবে তুলে ধরলেও এগুলো সেই রকম ‘শুল্ক বাধা ভেঙে ফেলার’ চুক্তি নয়, যা আগের দশকগুলোতে দেখা যেত।
বিপর্যয়, বড় মন্দা, ব্যাপক বাজার ধসের মতো শঙ্কাগুলো এখন কিছুটা দূরে ঠেকছে। তবে অক্সফোর্ড ইকোনমিকস-এর গ্লোবাল ম্যাক্রো ফোরকাস্টিং ডিরেক্টর বেন মে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি এখনো বহুভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ করার ক্ষমতা রাখে।
তিনি বলেন, ‘এই শুল্ক কার্যত যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের আয় সংকুচিত করছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যদি কম পণ্য আমদানি করে, তাহলে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাবে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও।’
জয়ী ও পরাজিত: জার্মানি, ভারত ও চীন
শুধু শুল্কের হার নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের পরিমাণও নির্ধারণ করে কে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভারতের কথা ধরলে, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানির ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ। তবে ক্যাপিটাল ইকোনমিকস-এর অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদার অবদান মাত্র ২ শতাংশ হওয়ায়, এই শুল্কের তাৎক্ষণিক প্রভাব হয়তো খুব বড় ধরনের হবে না।
তবে জার্মানির ক্ষেত্রে খবরটা ততটা আশাব্যঞ্জক নয়। ১৫ শতাংশ শুল্ক তাদের প্রবৃদ্ধির হার থেকে চলতি বছরে ০.৫ শতাংশেরও বেশি কমিয়ে দিতে পারে। যা বছরের শুরুতে করা পূর্বাভাসের চেয়ে অনেকটাই কম। এর মূল কারণ হলো, এই ধরনের শুল্কবৃদ্ধির ফলে জার্মানির বিশাল গাড়ি শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এমন সময় এই শুল্ক আরোপ যখন দেশটি ইতিমধ্যেই মন্দার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।
আর চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক সবচেয়ে অস্থির অবস্থায় রয়েছে। গত কয়েক মাসে চীনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ শুল্কের আশঙ্কায় অ্যাপলসহ একাধিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর এই সিদ্ধান্তে লাভবান হয় ভারত। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে।
তবে ভারত এটা জানে, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো, যারা যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে তুলনামূলকভাবে কম শুল্কের মুখোমুখি হয়, তারা অন্যান্য খাতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও আকর্ষণীয় বিকল্প জোগানদাতা হয়ে উঠতে পারে।
শুল্ক নীতি ও ট্রাম্পের রাজনৈতিক ঝুঁকি
যত সময় যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এই শুল্কনীতির প্রভাবও ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। শুল্কের পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে এই শঙ্কায় অনেক প্রতিষ্ঠান আগেভাগে মার্কিন পণ্য কিনে রেখেছিল তাই চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা প্রবৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, বছরের বাকি সময়টাতে এই প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পাবে।
বছরের শুরুতে যেখানে গড় শুল্কহার ছিল মাত্র ২ শতাংশ, এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রাজস্বে উল্লেখযোগ্য প্রবাহ এসেছে, যা ছিল ট্রাম্পের ঘোষিত বাণিজ্যনীতির অন্যতম লক্ষ্য।
এ বছরের প্রথম সাত মাসেই আমদানি শুল্ক থেকে এসেছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা মার্কিন ফেডারেল আয়ের প্রায় ৫ শতাংশ (যেখানে সাধারণত তা থাকে ২ শতাংশ-এর আশেপাশে)।
ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট আশা করছেন, পুরো বছরে শুল্ক থেকে আয় হবে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার। তুলনামূলকভাবে, ফেডারেল ইনকাম ট্যাক্স থেকে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র পায় প্রায় ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
তবে সবচেয়ে বড় চাপ এখনো সাধারণ মার্কিন ভোক্তার কাঁধেই রয়েছে। তারা এখনো পুরোপুরি মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা পাননি, কিন্তু ইউনিলিভার, অ্যাডিডাসের মতো বড় ভোক্তা পণ্য কোম্পানিগুলো এখন খোলাখুলিভাবে বাড়তি খরচের হিসাব দিচ্ছে।
ফলে সামনে ‘স্টিকার শক’ অর্থাৎ হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্রাহকদের বিস্মিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এটা ভোক্তাদের ব্যয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং ট্রাম্পের প্রত্যাশিত সুদের হার কমানোর পথও আটকে দিতে পারে।
এ অবস্থায় অর্থনৈতিক চাপ ও মূল্যবৃদ্ধি মিলিয়ে নির্বাচনী বছর ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্পের জন্য এটি একটি বাস্তব ও বাড়তে থাকা রাজনৈতিক ঝুঁকিতে পরিণত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও স্পষ্ট রাজনৈতিক হুমকি
সব ধরনের পূর্বাভাসেই কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকে, তবে এই মুহূর্তে যা স্পষ্ট, তা হলো, একজন এমন প্রেসিডেন্টের জন্য এটা একটি বাস্তব রাজনৈতিক হুমকি, যিনি ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দাম বাড়ানোর নয়।
ট্রাম্প এবং হোয়াইট হাউজের অন্যান্য কর্মকর্তারা এখন কম আয়ের মার্কিনদের জন্য ‘রিবেট চেক’ দেওয়ার কথা ভাবছেন। বিশেষ করে সেইসব ব্লু-কলার (শ্রমজীবী) ভোটারদের জন্য, যারা তার রাজনৈতিক উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা জটিল হতে পারে এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনও প্রয়োজন হবে।
এটা আবার একধরনের পরোক্ষ স্বীকারোক্তিও বটে। শুধু অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব আসার দাবি, ব্যয় বা কর হ্রাসের ঘাটতি পূরণের যুক্তি অথবা ভবিষ্যতে দেশীয় কর্মসংস্থান ও সম্পদ তৈরির আশ্বাস দিয়ে জনগণের আস্থা রাখা রাজনৈতিকভাবে খুব একটা নিরাপদ কৌশল নয়। যখন রিপাবলিকান পার্টিকে আগামী বছরের অঙ্গরাজ্য ও কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটারদের মুখোমুখি হতে হবে, তখন এই মূল্যবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক চাপ দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
এখনো চূড়ান্ত হয়নি বহু গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি
এই জটিল পরিস্থিতিতে আরও জটিলতা যোগ করছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে চুক্তি এখনও চূড়ান্ত না হওয়া। বিশেষ করে কানাডা এবং তাইওয়ানের সঙ্গে এখনও সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বড় বাণিজ্যিক অংশীদার মেক্সিকোর সঙ্গে আলোচনার সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এছাড়া চীনের জন্য আলাদা সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাও এখনো অনির্ধারিত রয়েছে।
এ পর্যন্ত বেশ কিছু চুক্তি মৌখিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু তা এখনও লিখিত স্বাক্ষরিত হয়নি। এছাড়া ট্রাম্পের শর্তাবলীর বাস্তবায়ন কতটা এবং কীভাবে হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি নেতারা ট্রাম্পের দাবি করা শর্তাবলীর অস্তিত্বই অস্বীকার করেছেন।
এই অনিশ্চয়তার কারণে ভবিষ্যতে বাণিজ্য সম্পর্ক কতটা স্থায়ী ও ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
হোয়াইট হাউজ ও বিভিন্ন দেশের মধ্যকার শুল্ক চুক্তি বিশ্লেষণে করে অর্থনীতিবিদ জন মে বলছেন, “‘শয়তান’ থাকে বিস্তারিত শর্তাবলীতে। আর এই বিস্তারিত শর্তাবলী এখন পর্যন্ত খুবই সীমিত বা অসম্পূর্ণ। ”
তবুও এটা স্পষ্ট যে বিশ্ব ধ্বংসাত্মক বাণিজ্যযুদ্ধের প্রান্ত থেকে ফিরে এসেছে। এখন, যখন দেশগুলো নতুন ধরনের বাণিজ্য বাধার সঙ্গে মোকাবিলা করছে, ট্রাম্প সেই পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন।
তবে ইতিহাস বলছে, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্পের যে লক্ষ্য তা খুব বেশি সফল হবে বলে আশা করা কঠিন। আর কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দীর্ঘদিনের মার্কিন অংশীদাররা হয়তো এমন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা করবে, যা তাদের আর ‘নির্ভরযোগ্য’ অর্থনৈতিক মিত্র হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেখবে না।
ট্রাম্প সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক অনন্য অবস্থানের সুবিধা নিচ্ছেন, যা বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং যেটি গড়ে তুলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আধা শতকেরও বেশি সময় নিয়েছে। কিন্তু যদি বর্তমান শুল্ক ব্যবস্থা বিশ্ববাণিজ্যে মৌলিক পুনর্বিন্যাস শুরু করে, তাহলে তার দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে না হলেও হতে পারে। এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর মিলতে কেটে যাবে বছরের পর ছর।
তবে এখন পর্যন্ত, ট্রাম্পের নির্বাচকদের হয়তো তাদের বেশির ভাগ ‘মূল্য’ নিজেই বহন করতে হবে উচ্চ মূল্য, সীমিত পছন্দ এবং ধীর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক ফারহানা জিয়াসমিন।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে, যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশির ভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প। চার মাস পর আবারও বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প। আর এই শুল্ক আরোপ ও বাণিজ্য চুক্তিকে নিজের সাফল্য হিসেবে অভিহিত করছেন তিনি।
ট্রাম্প কিছু বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে চুক্তি করেছেন আর অন্যদের ওপর একতরফাভাবে শুল্ক চাপিয়েছেন। তবে এবার দেশগুলো কিছুটা প্রস্তুতই ছিল বলা যায়। এ কারণে গত এপ্রিলের মতো অস্থির অর্থনীতির দেখা মিলছে না।
বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পুনর্বিন্যাস করতে চান ট্রাম্প। অন্তত এই দাবিতেই শুল্ক আরোপ বাড়িয়েছেন তিনি। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নতুন রাজস্বের, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন শিল্প পুনরুজ্জীবিত করার এবং দেশে শত শত বিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার ও মার্কিন পণ্য কেনার চুক্তির।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই প্রতিশ্রুতির কতটা বাস্তবায়ন হবে বা এর নেতিবাচক ফলাফল কতটা পড়বে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এখন পর্যন্ত যা পরিষ্কার তা হলো, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগেই যেখানে বৈশ্বিক মুক্ত বাণিজ্যের প্রতি আগ্রহ ধীরে ধীরে কমছিল, সেখানে ট্রাম্পের পদক্ষেপ সেটিকে রীতিমতো এক ঢেউয়ে পরিণত করেছে, যা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বদলে দিচ্ছে। যদিও এখনো সেই পরিবর্তনের পূর্ণ প্রভাব বোঝা যায়নি। কারণ এমন পরিবর্তনে ফলাফল সামনে আসে দেরিতে।
অনেক দেশের জন্যই এই শুল্ক আরোপ একধরনের সতর্কবার্তা হিসেবে এসেছে। বাণিজ্যিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তায় নতুন জোট গঠন নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
ফলে, স্বল্প মেয়াদে ট্রাম্প যা ‘জয়’ হিসেবে দেখছেন, সেটি তাঁর বৃহত্তর কৌশলিক লক্ষ্যপূরণে কতটা কাজে দেবে, তা অনিশ্চিত। আর এর প্রভাব ট্রাম্পের জন্য এবং দীর্ঘমেয়াদে আমেরিকার ওপর পড়তে যাচ্ছে, তা একেবারেই ভিন্ন হতে পারে।
‘৯০ দিনে ৯০ চুক্তি’, যে সময়সীমা নিয়ে এসেছিল আতঙ্ক
আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকদের ক্যালেন্ডারে ১ আগস্ট তারিখটি লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত ছিল। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে আগেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করো, নইলে ধ্বংসাত্মক শুল্কের মুখোমুখি হও।
হোয়াইট হাউজের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো যখন ‘৯০ দিনে ৯০ চুক্তি’র ঘোষণা দেন এবং ট্রাম্প নিজেও দ্রুত চুক্তি সম্পাদনের আশাবাদী মন্তব্য করেন, তখন থেকেই বিশেষজ্ঞদের কাছে সময়সীমাটি অবাস্তব বলেই মনে হচ্ছিল এবং বাস্তবেও সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
জুলাই মাসের শেষে এসে দেখা গেছে, ট্রাম্প মাত্র এক ডজন বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেছেন, যার অনেকগুলোই এক-দুই পৃষ্ঠার বেশি নয়। এসব চুক্তিতে সাধারণত যেসব বিশদ ও বাধ্যবাধকতামূলক শর্ত থাকে, তা অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত।
এই পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য অংশীদারদের অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রশ্ন থেকে গেছে চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ বাস্তবায়ন ও স্থায়িত্ব নিয়ে।
প্রথম ধাক্কা লেগেছিল যুক্তরাজ্যে
ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি আর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সেই ঘাটতি তুলনামূলকভাবে প্রায় ভারসাম্যপূর্ণ। ফলে যুক্তরাজ্যের বেলায় দ্রুত অগ্রগতি হওয়াটা খুব একটা বিস্ময়ের নয়।
বেশির ভাগ ব্রিটিশ পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ প্রাথমিক শুল্কহার আরোপ প্রথমে কিছুটা কপাল কুঁচকানোর মতো ছিল ঠিকই, তবে সেটিই পরবর্তী পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত সেটিও কিছুটা স্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের মতো অংশীদারদের ওপর যেখানে শুল্ক ১৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি যথাক্রমে ২৪০ বিলিয়ন ডলার ও ৭০ বিলিয়ন ডলার (শুধু গত বছরে) সেখানে যুক্তরাজ্যের হার ছিল তুলনামূলক সহনীয়।
তবে বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের এসব চুক্তি শর্তহীন ছিল না। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য কেনার বিষয়ে স্পষ্ট অঙ্গীকার দিতে পারেনি, তারা অনেক সময় উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক দেশকে শুল্ক চিঠি পাঠাতে থাকে। বর্তমানে বেশির ভাগ আমদানি যুক্তরাষ্ট্রে এখন কোনো না কোনো চুক্তি বা প্রেসিডেন্টের একতরফা আদেশের আওতায় পড়ে আর এসব আদেশের শেষে থাকে ট্রাম্পের সংক্ষিপ্ত বার্তা: ‘এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’
বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘ক্ষতি’ করার ক্ষমতা
গত কয়েক মাসের ঘটনাপ্রবাহ অনেক কিছু উন্মোচন করেছে। তবে ভালো খবর হলো শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ শুল্ক এবং মন্দার আশঙ্কা এড়ানো গেছে। উচ্চ শুল্কহার এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা বাস্তবে রূপ নেয়নি।
দ্বিতীয়ত, অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন শুল্ক শর্তে সম্মত হওয়ায় একটা বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে। যে অনিশ্চয়তা ট্রাম্প নিজেই গত মাসগুলোতে একধরনের অর্থনৈতিক চাপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।
এই অনিশ্চয়তা দূর হওয়ায় একদিকে যেমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় পরিকল্পনা করতে পারছে, তেমনি বিনিয়োগ ও নিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও আবার সচল হচ্ছে।
বেশিরভাগ রপ্তানিকারক এখন জানেন, তাদের পণ্যের ওপর কত শতাংশ শুল্ক বসছে এবং সেই অনুযায়ী তাঁরা খরচ কীভাবে সামলাবেন বা ভোক্তার ওপর কতটা চাপ দেবেন, সেটাও হিসাব করতে পারছেন।
এই ক্রমবর্ধমান স্পষ্টতা বিশ্ব অর্থবাজারে তুলনামূলক স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করেছে। এর ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে উল্লেখযোগ্য উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে।
অবশ্য একটি দিক থেকে এটি নেতিবাচকও বটে। কারণ এখন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির গড় শুল্কহার আগের তুলনায় বেশি এবং ছয় মাস আগেও এতটা চরম অবস্থার পূর্বাভাস দেননি বিশ্লেষকেরা।
ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিকে বড় অর্জন হিসেবে তুলে ধরলেও এগুলো সেই রকম ‘শুল্ক বাধা ভেঙে ফেলার’ চুক্তি নয়, যা আগের দশকগুলোতে দেখা যেত।
বিপর্যয়, বড় মন্দা, ব্যাপক বাজার ধসের মতো শঙ্কাগুলো এখন কিছুটা দূরে ঠেকছে। তবে অক্সফোর্ড ইকোনমিকস-এর গ্লোবাল ম্যাক্রো ফোরকাস্টিং ডিরেক্টর বেন মে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি এখনো বহুভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ করার ক্ষমতা রাখে।
তিনি বলেন, ‘এই শুল্ক কার্যত যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের আয় সংকুচিত করছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যদি কম পণ্য আমদানি করে, তাহলে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাবে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও।’
জয়ী ও পরাজিত: জার্মানি, ভারত ও চীন
শুধু শুল্কের হার নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের পরিমাণও নির্ধারণ করে কে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভারতের কথা ধরলে, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানির ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ। তবে ক্যাপিটাল ইকোনমিকস-এর অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদার অবদান মাত্র ২ শতাংশ হওয়ায়, এই শুল্কের তাৎক্ষণিক প্রভাব হয়তো খুব বড় ধরনের হবে না।
তবে জার্মানির ক্ষেত্রে খবরটা ততটা আশাব্যঞ্জক নয়। ১৫ শতাংশ শুল্ক তাদের প্রবৃদ্ধির হার থেকে চলতি বছরে ০.৫ শতাংশেরও বেশি কমিয়ে দিতে পারে। যা বছরের শুরুতে করা পূর্বাভাসের চেয়ে অনেকটাই কম। এর মূল কারণ হলো, এই ধরনের শুল্কবৃদ্ধির ফলে জার্মানির বিশাল গাড়ি শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এমন সময় এই শুল্ক আরোপ যখন দেশটি ইতিমধ্যেই মন্দার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।
আর চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক সবচেয়ে অস্থির অবস্থায় রয়েছে। গত কয়েক মাসে চীনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ শুল্কের আশঙ্কায় অ্যাপলসহ একাধিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর এই সিদ্ধান্তে লাভবান হয় ভারত। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে।
তবে ভারত এটা জানে, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো, যারা যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে তুলনামূলকভাবে কম শুল্কের মুখোমুখি হয়, তারা অন্যান্য খাতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও আকর্ষণীয় বিকল্প জোগানদাতা হয়ে উঠতে পারে।
শুল্ক নীতি ও ট্রাম্পের রাজনৈতিক ঝুঁকি
যত সময় যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এই শুল্কনীতির প্রভাবও ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। শুল্কের পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে এই শঙ্কায় অনেক প্রতিষ্ঠান আগেভাগে মার্কিন পণ্য কিনে রেখেছিল তাই চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা প্রবৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, বছরের বাকি সময়টাতে এই প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পাবে।
বছরের শুরুতে যেখানে গড় শুল্কহার ছিল মাত্র ২ শতাংশ, এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রাজস্বে উল্লেখযোগ্য প্রবাহ এসেছে, যা ছিল ট্রাম্পের ঘোষিত বাণিজ্যনীতির অন্যতম লক্ষ্য।
এ বছরের প্রথম সাত মাসেই আমদানি শুল্ক থেকে এসেছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা মার্কিন ফেডারেল আয়ের প্রায় ৫ শতাংশ (যেখানে সাধারণত তা থাকে ২ শতাংশ-এর আশেপাশে)।
ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট আশা করছেন, পুরো বছরে শুল্ক থেকে আয় হবে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার। তুলনামূলকভাবে, ফেডারেল ইনকাম ট্যাক্স থেকে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র পায় প্রায় ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
তবে সবচেয়ে বড় চাপ এখনো সাধারণ মার্কিন ভোক্তার কাঁধেই রয়েছে। তারা এখনো পুরোপুরি মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা পাননি, কিন্তু ইউনিলিভার, অ্যাডিডাসের মতো বড় ভোক্তা পণ্য কোম্পানিগুলো এখন খোলাখুলিভাবে বাড়তি খরচের হিসাব দিচ্ছে।
ফলে সামনে ‘স্টিকার শক’ অর্থাৎ হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্রাহকদের বিস্মিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এটা ভোক্তাদের ব্যয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং ট্রাম্পের প্রত্যাশিত সুদের হার কমানোর পথও আটকে দিতে পারে।
এ অবস্থায় অর্থনৈতিক চাপ ও মূল্যবৃদ্ধি মিলিয়ে নির্বাচনী বছর ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্পের জন্য এটি একটি বাস্তব ও বাড়তে থাকা রাজনৈতিক ঝুঁকিতে পরিণত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও স্পষ্ট রাজনৈতিক হুমকি
সব ধরনের পূর্বাভাসেই কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকে, তবে এই মুহূর্তে যা স্পষ্ট, তা হলো, একজন এমন প্রেসিডেন্টের জন্য এটা একটি বাস্তব রাজনৈতিক হুমকি, যিনি ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দাম বাড়ানোর নয়।
ট্রাম্প এবং হোয়াইট হাউজের অন্যান্য কর্মকর্তারা এখন কম আয়ের মার্কিনদের জন্য ‘রিবেট চেক’ দেওয়ার কথা ভাবছেন। বিশেষ করে সেইসব ব্লু-কলার (শ্রমজীবী) ভোটারদের জন্য, যারা তার রাজনৈতিক উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা জটিল হতে পারে এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনও প্রয়োজন হবে।
এটা আবার একধরনের পরোক্ষ স্বীকারোক্তিও বটে। শুধু অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব আসার দাবি, ব্যয় বা কর হ্রাসের ঘাটতি পূরণের যুক্তি অথবা ভবিষ্যতে দেশীয় কর্মসংস্থান ও সম্পদ তৈরির আশ্বাস দিয়ে জনগণের আস্থা রাখা রাজনৈতিকভাবে খুব একটা নিরাপদ কৌশল নয়। যখন রিপাবলিকান পার্টিকে আগামী বছরের অঙ্গরাজ্য ও কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটারদের মুখোমুখি হতে হবে, তখন এই মূল্যবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক চাপ দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
এখনো চূড়ান্ত হয়নি বহু গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি
এই জটিল পরিস্থিতিতে আরও জটিলতা যোগ করছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে চুক্তি এখনও চূড়ান্ত না হওয়া। বিশেষ করে কানাডা এবং তাইওয়ানের সঙ্গে এখনও সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বড় বাণিজ্যিক অংশীদার মেক্সিকোর সঙ্গে আলোচনার সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এছাড়া চীনের জন্য আলাদা সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাও এখনো অনির্ধারিত রয়েছে।
এ পর্যন্ত বেশ কিছু চুক্তি মৌখিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু তা এখনও লিখিত স্বাক্ষরিত হয়নি। এছাড়া ট্রাম্পের শর্তাবলীর বাস্তবায়ন কতটা এবং কীভাবে হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি নেতারা ট্রাম্পের দাবি করা শর্তাবলীর অস্তিত্বই অস্বীকার করেছেন।
এই অনিশ্চয়তার কারণে ভবিষ্যতে বাণিজ্য সম্পর্ক কতটা স্থায়ী ও ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
হোয়াইট হাউজ ও বিভিন্ন দেশের মধ্যকার শুল্ক চুক্তি বিশ্লেষণে করে অর্থনীতিবিদ জন মে বলছেন, “‘শয়তান’ থাকে বিস্তারিত শর্তাবলীতে। আর এই বিস্তারিত শর্তাবলী এখন পর্যন্ত খুবই সীমিত বা অসম্পূর্ণ। ”
তবুও এটা স্পষ্ট যে বিশ্ব ধ্বংসাত্মক বাণিজ্যযুদ্ধের প্রান্ত থেকে ফিরে এসেছে। এখন, যখন দেশগুলো নতুন ধরনের বাণিজ্য বাধার সঙ্গে মোকাবিলা করছে, ট্রাম্প সেই পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন।
তবে ইতিহাস বলছে, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্পের যে লক্ষ্য তা খুব বেশি সফল হবে বলে আশা করা কঠিন। আর কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দীর্ঘদিনের মার্কিন অংশীদাররা হয়তো এমন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা করবে, যা তাদের আর ‘নির্ভরযোগ্য’ অর্থনৈতিক মিত্র হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেখবে না।
ট্রাম্প সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক অনন্য অবস্থানের সুবিধা নিচ্ছেন, যা বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং যেটি গড়ে তুলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আধা শতকেরও বেশি সময় নিয়েছে। কিন্তু যদি বর্তমান শুল্ক ব্যবস্থা বিশ্ববাণিজ্যে মৌলিক পুনর্বিন্যাস শুরু করে, তাহলে তার দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে না হলেও হতে পারে। এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর মিলতে কেটে যাবে বছরের পর ছর।
তবে এখন পর্যন্ত, ট্রাম্পের নির্বাচকদের হয়তো তাদের বেশির ভাগ ‘মূল্য’ নিজেই বহন করতে হবে উচ্চ মূল্য, সীমিত পছন্দ এবং ধীর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক ফারহানা জিয়াসমিন।

গত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে, যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশির ভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প। চার মাস পর আবারও বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প। আর এই শুল্ক আরোপ ও বাণিজ্য চুক্তিকে নিজের সাফল্য হিসেবে অভিহিত করছেন তিনি।
ট্রাম্প কিছু বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে চুক্তি করেছেন আর অন্যদের ওপর একতরফাভাবে শুল্ক চাপিয়েছেন। তবে এবার দেশগুলো কিছুটা প্রস্তুতই ছিল বলা যায়। এ কারণে গত এপ্রিলের মতো অস্থির অর্থনীতির দেখা মিলছে না।
বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পুনর্বিন্যাস করতে চান ট্রাম্প। অন্তত এই দাবিতেই শুল্ক আরোপ বাড়িয়েছেন তিনি। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নতুন রাজস্বের, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন শিল্প পুনরুজ্জীবিত করার এবং দেশে শত শত বিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার ও মার্কিন পণ্য কেনার চুক্তির।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই প্রতিশ্রুতির কতটা বাস্তবায়ন হবে বা এর নেতিবাচক ফলাফল কতটা পড়বে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এখন পর্যন্ত যা পরিষ্কার তা হলো, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগেই যেখানে বৈশ্বিক মুক্ত বাণিজ্যের প্রতি আগ্রহ ধীরে ধীরে কমছিল, সেখানে ট্রাম্পের পদক্ষেপ সেটিকে রীতিমতো এক ঢেউয়ে পরিণত করেছে, যা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বদলে দিচ্ছে। যদিও এখনো সেই পরিবর্তনের পূর্ণ প্রভাব বোঝা যায়নি। কারণ এমন পরিবর্তনে ফলাফল সামনে আসে দেরিতে।
অনেক দেশের জন্যই এই শুল্ক আরোপ একধরনের সতর্কবার্তা হিসেবে এসেছে। বাণিজ্যিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তায় নতুন জোট গঠন নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
ফলে, স্বল্প মেয়াদে ট্রাম্প যা ‘জয়’ হিসেবে দেখছেন, সেটি তাঁর বৃহত্তর কৌশলিক লক্ষ্যপূরণে কতটা কাজে দেবে, তা অনিশ্চিত। আর এর প্রভাব ট্রাম্পের জন্য এবং দীর্ঘমেয়াদে আমেরিকার ওপর পড়তে যাচ্ছে, তা একেবারেই ভিন্ন হতে পারে।
‘৯০ দিনে ৯০ চুক্তি’, যে সময়সীমা নিয়ে এসেছিল আতঙ্ক
আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকদের ক্যালেন্ডারে ১ আগস্ট তারিখটি লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত ছিল। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে আগেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করো, নইলে ধ্বংসাত্মক শুল্কের মুখোমুখি হও।
হোয়াইট হাউজের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো যখন ‘৯০ দিনে ৯০ চুক্তি’র ঘোষণা দেন এবং ট্রাম্প নিজেও দ্রুত চুক্তি সম্পাদনের আশাবাদী মন্তব্য করেন, তখন থেকেই বিশেষজ্ঞদের কাছে সময়সীমাটি অবাস্তব বলেই মনে হচ্ছিল এবং বাস্তবেও সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
জুলাই মাসের শেষে এসে দেখা গেছে, ট্রাম্প মাত্র এক ডজন বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেছেন, যার অনেকগুলোই এক-দুই পৃষ্ঠার বেশি নয়। এসব চুক্তিতে সাধারণত যেসব বিশদ ও বাধ্যবাধকতামূলক শর্ত থাকে, তা অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত।
এই পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য অংশীদারদের অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রশ্ন থেকে গেছে চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ বাস্তবায়ন ও স্থায়িত্ব নিয়ে।
প্রথম ধাক্কা লেগেছিল যুক্তরাজ্যে
ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি আর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সেই ঘাটতি তুলনামূলকভাবে প্রায় ভারসাম্যপূর্ণ। ফলে যুক্তরাজ্যের বেলায় দ্রুত অগ্রগতি হওয়াটা খুব একটা বিস্ময়ের নয়।
বেশির ভাগ ব্রিটিশ পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ প্রাথমিক শুল্কহার আরোপ প্রথমে কিছুটা কপাল কুঁচকানোর মতো ছিল ঠিকই, তবে সেটিই পরবর্তী পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত সেটিও কিছুটা স্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের মতো অংশীদারদের ওপর যেখানে শুল্ক ১৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি যথাক্রমে ২৪০ বিলিয়ন ডলার ও ৭০ বিলিয়ন ডলার (শুধু গত বছরে) সেখানে যুক্তরাজ্যের হার ছিল তুলনামূলক সহনীয়।
তবে বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের এসব চুক্তি শর্তহীন ছিল না। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য কেনার বিষয়ে স্পষ্ট অঙ্গীকার দিতে পারেনি, তারা অনেক সময় উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক দেশকে শুল্ক চিঠি পাঠাতে থাকে। বর্তমানে বেশির ভাগ আমদানি যুক্তরাষ্ট্রে এখন কোনো না কোনো চুক্তি বা প্রেসিডেন্টের একতরফা আদেশের আওতায় পড়ে আর এসব আদেশের শেষে থাকে ট্রাম্পের সংক্ষিপ্ত বার্তা: ‘এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’
বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘ক্ষতি’ করার ক্ষমতা
গত কয়েক মাসের ঘটনাপ্রবাহ অনেক কিছু উন্মোচন করেছে। তবে ভালো খবর হলো শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ শুল্ক এবং মন্দার আশঙ্কা এড়ানো গেছে। উচ্চ শুল্কহার এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা বাস্তবে রূপ নেয়নি।
দ্বিতীয়ত, অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন শুল্ক শর্তে সম্মত হওয়ায় একটা বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে। যে অনিশ্চয়তা ট্রাম্প নিজেই গত মাসগুলোতে একধরনের অর্থনৈতিক চাপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।
এই অনিশ্চয়তা দূর হওয়ায় একদিকে যেমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় পরিকল্পনা করতে পারছে, তেমনি বিনিয়োগ ও নিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও আবার সচল হচ্ছে।
বেশিরভাগ রপ্তানিকারক এখন জানেন, তাদের পণ্যের ওপর কত শতাংশ শুল্ক বসছে এবং সেই অনুযায়ী তাঁরা খরচ কীভাবে সামলাবেন বা ভোক্তার ওপর কতটা চাপ দেবেন, সেটাও হিসাব করতে পারছেন।
এই ক্রমবর্ধমান স্পষ্টতা বিশ্ব অর্থবাজারে তুলনামূলক স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করেছে। এর ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে উল্লেখযোগ্য উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে।
অবশ্য একটি দিক থেকে এটি নেতিবাচকও বটে। কারণ এখন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির গড় শুল্কহার আগের তুলনায় বেশি এবং ছয় মাস আগেও এতটা চরম অবস্থার পূর্বাভাস দেননি বিশ্লেষকেরা।
ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিকে বড় অর্জন হিসেবে তুলে ধরলেও এগুলো সেই রকম ‘শুল্ক বাধা ভেঙে ফেলার’ চুক্তি নয়, যা আগের দশকগুলোতে দেখা যেত।
বিপর্যয়, বড় মন্দা, ব্যাপক বাজার ধসের মতো শঙ্কাগুলো এখন কিছুটা দূরে ঠেকছে। তবে অক্সফোর্ড ইকোনমিকস-এর গ্লোবাল ম্যাক্রো ফোরকাস্টিং ডিরেক্টর বেন মে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি এখনো বহুভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ করার ক্ষমতা রাখে।
তিনি বলেন, ‘এই শুল্ক কার্যত যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের আয় সংকুচিত করছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যদি কম পণ্য আমদানি করে, তাহলে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাবে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও।’
জয়ী ও পরাজিত: জার্মানি, ভারত ও চীন
শুধু শুল্কের হার নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের পরিমাণও নির্ধারণ করে কে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভারতের কথা ধরলে, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানির ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ। তবে ক্যাপিটাল ইকোনমিকস-এর অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদার অবদান মাত্র ২ শতাংশ হওয়ায়, এই শুল্কের তাৎক্ষণিক প্রভাব হয়তো খুব বড় ধরনের হবে না।
তবে জার্মানির ক্ষেত্রে খবরটা ততটা আশাব্যঞ্জক নয়। ১৫ শতাংশ শুল্ক তাদের প্রবৃদ্ধির হার থেকে চলতি বছরে ০.৫ শতাংশেরও বেশি কমিয়ে দিতে পারে। যা বছরের শুরুতে করা পূর্বাভাসের চেয়ে অনেকটাই কম। এর মূল কারণ হলো, এই ধরনের শুল্কবৃদ্ধির ফলে জার্মানির বিশাল গাড়ি শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এমন সময় এই শুল্ক আরোপ যখন দেশটি ইতিমধ্যেই মন্দার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।
আর চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক সবচেয়ে অস্থির অবস্থায় রয়েছে। গত কয়েক মাসে চীনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ শুল্কের আশঙ্কায় অ্যাপলসহ একাধিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর এই সিদ্ধান্তে লাভবান হয় ভারত। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে।
তবে ভারত এটা জানে, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো, যারা যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে তুলনামূলকভাবে কম শুল্কের মুখোমুখি হয়, তারা অন্যান্য খাতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও আকর্ষণীয় বিকল্প জোগানদাতা হয়ে উঠতে পারে।
শুল্ক নীতি ও ট্রাম্পের রাজনৈতিক ঝুঁকি
যত সময় যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এই শুল্কনীতির প্রভাবও ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। শুল্কের পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে এই শঙ্কায় অনেক প্রতিষ্ঠান আগেভাগে মার্কিন পণ্য কিনে রেখেছিল তাই চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা প্রবৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, বছরের বাকি সময়টাতে এই প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পাবে।
বছরের শুরুতে যেখানে গড় শুল্কহার ছিল মাত্র ২ শতাংশ, এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রাজস্বে উল্লেখযোগ্য প্রবাহ এসেছে, যা ছিল ট্রাম্পের ঘোষিত বাণিজ্যনীতির অন্যতম লক্ষ্য।
এ বছরের প্রথম সাত মাসেই আমদানি শুল্ক থেকে এসেছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা মার্কিন ফেডারেল আয়ের প্রায় ৫ শতাংশ (যেখানে সাধারণত তা থাকে ২ শতাংশ-এর আশেপাশে)।
ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট আশা করছেন, পুরো বছরে শুল্ক থেকে আয় হবে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার। তুলনামূলকভাবে, ফেডারেল ইনকাম ট্যাক্স থেকে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র পায় প্রায় ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
তবে সবচেয়ে বড় চাপ এখনো সাধারণ মার্কিন ভোক্তার কাঁধেই রয়েছে। তারা এখনো পুরোপুরি মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা পাননি, কিন্তু ইউনিলিভার, অ্যাডিডাসের মতো বড় ভোক্তা পণ্য কোম্পানিগুলো এখন খোলাখুলিভাবে বাড়তি খরচের হিসাব দিচ্ছে।
ফলে সামনে ‘স্টিকার শক’ অর্থাৎ হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্রাহকদের বিস্মিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এটা ভোক্তাদের ব্যয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং ট্রাম্পের প্রত্যাশিত সুদের হার কমানোর পথও আটকে দিতে পারে।
এ অবস্থায় অর্থনৈতিক চাপ ও মূল্যবৃদ্ধি মিলিয়ে নির্বাচনী বছর ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্পের জন্য এটি একটি বাস্তব ও বাড়তে থাকা রাজনৈতিক ঝুঁকিতে পরিণত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও স্পষ্ট রাজনৈতিক হুমকি
সব ধরনের পূর্বাভাসেই কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকে, তবে এই মুহূর্তে যা স্পষ্ট, তা হলো, একজন এমন প্রেসিডেন্টের জন্য এটা একটি বাস্তব রাজনৈতিক হুমকি, যিনি ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দাম বাড়ানোর নয়।
ট্রাম্প এবং হোয়াইট হাউজের অন্যান্য কর্মকর্তারা এখন কম আয়ের মার্কিনদের জন্য ‘রিবেট চেক’ দেওয়ার কথা ভাবছেন। বিশেষ করে সেইসব ব্লু-কলার (শ্রমজীবী) ভোটারদের জন্য, যারা তার রাজনৈতিক উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা জটিল হতে পারে এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনও প্রয়োজন হবে।
এটা আবার একধরনের পরোক্ষ স্বীকারোক্তিও বটে। শুধু অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব আসার দাবি, ব্যয় বা কর হ্রাসের ঘাটতি পূরণের যুক্তি অথবা ভবিষ্যতে দেশীয় কর্মসংস্থান ও সম্পদ তৈরির আশ্বাস দিয়ে জনগণের আস্থা রাখা রাজনৈতিকভাবে খুব একটা নিরাপদ কৌশল নয়। যখন রিপাবলিকান পার্টিকে আগামী বছরের অঙ্গরাজ্য ও কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটারদের মুখোমুখি হতে হবে, তখন এই মূল্যবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক চাপ দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
এখনো চূড়ান্ত হয়নি বহু গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি
এই জটিল পরিস্থিতিতে আরও জটিলতা যোগ করছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে চুক্তি এখনও চূড়ান্ত না হওয়া। বিশেষ করে কানাডা এবং তাইওয়ানের সঙ্গে এখনও সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বড় বাণিজ্যিক অংশীদার মেক্সিকোর সঙ্গে আলোচনার সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এছাড়া চীনের জন্য আলাদা সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাও এখনো অনির্ধারিত রয়েছে।
এ পর্যন্ত বেশ কিছু চুক্তি মৌখিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু তা এখনও লিখিত স্বাক্ষরিত হয়নি। এছাড়া ট্রাম্পের শর্তাবলীর বাস্তবায়ন কতটা এবং কীভাবে হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি নেতারা ট্রাম্পের দাবি করা শর্তাবলীর অস্তিত্বই অস্বীকার করেছেন।
এই অনিশ্চয়তার কারণে ভবিষ্যতে বাণিজ্য সম্পর্ক কতটা স্থায়ী ও ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
হোয়াইট হাউজ ও বিভিন্ন দেশের মধ্যকার শুল্ক চুক্তি বিশ্লেষণে করে অর্থনীতিবিদ জন মে বলছেন, “‘শয়তান’ থাকে বিস্তারিত শর্তাবলীতে। আর এই বিস্তারিত শর্তাবলী এখন পর্যন্ত খুবই সীমিত বা অসম্পূর্ণ। ”
তবুও এটা স্পষ্ট যে বিশ্ব ধ্বংসাত্মক বাণিজ্যযুদ্ধের প্রান্ত থেকে ফিরে এসেছে। এখন, যখন দেশগুলো নতুন ধরনের বাণিজ্য বাধার সঙ্গে মোকাবিলা করছে, ট্রাম্প সেই পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন।
তবে ইতিহাস বলছে, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্পের যে লক্ষ্য তা খুব বেশি সফল হবে বলে আশা করা কঠিন। আর কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দীর্ঘদিনের মার্কিন অংশীদাররা হয়তো এমন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা করবে, যা তাদের আর ‘নির্ভরযোগ্য’ অর্থনৈতিক মিত্র হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেখবে না।
ট্রাম্প সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক অনন্য অবস্থানের সুবিধা নিচ্ছেন, যা বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং যেটি গড়ে তুলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আধা শতকেরও বেশি সময় নিয়েছে। কিন্তু যদি বর্তমান শুল্ক ব্যবস্থা বিশ্ববাণিজ্যে মৌলিক পুনর্বিন্যাস শুরু করে, তাহলে তার দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে না হলেও হতে পারে। এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর মিলতে কেটে যাবে বছরের পর ছর।
তবে এখন পর্যন্ত, ট্রাম্পের নির্বাচকদের হয়তো তাদের বেশির ভাগ ‘মূল্য’ নিজেই বহন করতে হবে উচ্চ মূল্য, সীমিত পছন্দ এবং ধীর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক ফারহানা জিয়াসমিন।

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

গত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে। যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশিরভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প।
০১ আগস্ট ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

গত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে। যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশিরভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প।
০১ আগস্ট ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

গত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে। যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশিরভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প।
০১ আগস্ট ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

গত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে। যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশিরভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প।
০১ আগস্ট ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে