আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে, যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশির ভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প। চার মাস পর আবারও বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প। আর এই শুল্ক আরোপ ও বাণিজ্য চুক্তিকে নিজের সাফল্য হিসেবে অভিহিত করছেন তিনি।
ট্রাম্প কিছু বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে চুক্তি করেছেন আর অন্যদের ওপর একতরফাভাবে শুল্ক চাপিয়েছেন। তবে এবার দেশগুলো কিছুটা প্রস্তুতই ছিল বলা যায়। এ কারণে গত এপ্রিলের মতো অস্থির অর্থনীতির দেখা মিলছে না।
বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পুনর্বিন্যাস করতে চান ট্রাম্প। অন্তত এই দাবিতেই শুল্ক আরোপ বাড়িয়েছেন তিনি। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নতুন রাজস্বের, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন শিল্প পুনরুজ্জীবিত করার এবং দেশে শত শত বিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার ও মার্কিন পণ্য কেনার চুক্তির।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই প্রতিশ্রুতির কতটা বাস্তবায়ন হবে বা এর নেতিবাচক ফলাফল কতটা পড়বে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এখন পর্যন্ত যা পরিষ্কার তা হলো, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগেই যেখানে বৈশ্বিক মুক্ত বাণিজ্যের প্রতি আগ্রহ ধীরে ধীরে কমছিল, সেখানে ট্রাম্পের পদক্ষেপ সেটিকে রীতিমতো এক ঢেউয়ে পরিণত করেছে, যা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বদলে দিচ্ছে। যদিও এখনো সেই পরিবর্তনের পূর্ণ প্রভাব বোঝা যায়নি। কারণ এমন পরিবর্তনে ফলাফল সামনে আসে দেরিতে।
অনেক দেশের জন্যই এই শুল্ক আরোপ একধরনের সতর্কবার্তা হিসেবে এসেছে। বাণিজ্যিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তায় নতুন জোট গঠন নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
ফলে, স্বল্প মেয়াদে ট্রাম্প যা ‘জয়’ হিসেবে দেখছেন, সেটি তাঁর বৃহত্তর কৌশলিক লক্ষ্যপূরণে কতটা কাজে দেবে, তা অনিশ্চিত। আর এর প্রভাব ট্রাম্পের জন্য এবং দীর্ঘমেয়াদে আমেরিকার ওপর পড়তে যাচ্ছে, তা একেবারেই ভিন্ন হতে পারে।
‘৯০ দিনে ৯০ চুক্তি’, যে সময়সীমা নিয়ে এসেছিল আতঙ্ক
আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকদের ক্যালেন্ডারে ১ আগস্ট তারিখটি লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত ছিল। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে আগেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করো, নইলে ধ্বংসাত্মক শুল্কের মুখোমুখি হও।
হোয়াইট হাউজের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো যখন ‘৯০ দিনে ৯০ চুক্তি’র ঘোষণা দেন এবং ট্রাম্প নিজেও দ্রুত চুক্তি সম্পাদনের আশাবাদী মন্তব্য করেন, তখন থেকেই বিশেষজ্ঞদের কাছে সময়সীমাটি অবাস্তব বলেই মনে হচ্ছিল এবং বাস্তবেও সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
জুলাই মাসের শেষে এসে দেখা গেছে, ট্রাম্প মাত্র এক ডজন বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেছেন, যার অনেকগুলোই এক-দুই পৃষ্ঠার বেশি নয়। এসব চুক্তিতে সাধারণত যেসব বিশদ ও বাধ্যবাধকতামূলক শর্ত থাকে, তা অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত।
এই পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য অংশীদারদের অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রশ্ন থেকে গেছে চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ বাস্তবায়ন ও স্থায়িত্ব নিয়ে।
প্রথম ধাক্কা লেগেছিল যুক্তরাজ্যে
ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি আর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সেই ঘাটতি তুলনামূলকভাবে প্রায় ভারসাম্যপূর্ণ। ফলে যুক্তরাজ্যের বেলায় দ্রুত অগ্রগতি হওয়াটা খুব একটা বিস্ময়ের নয়।
বেশির ভাগ ব্রিটিশ পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ প্রাথমিক শুল্কহার আরোপ প্রথমে কিছুটা কপাল কুঁচকানোর মতো ছিল ঠিকই, তবে সেটিই পরবর্তী পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত সেটিও কিছুটা স্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের মতো অংশীদারদের ওপর যেখানে শুল্ক ১৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি যথাক্রমে ২৪০ বিলিয়ন ডলার ও ৭০ বিলিয়ন ডলার (শুধু গত বছরে) সেখানে যুক্তরাজ্যের হার ছিল তুলনামূলক সহনীয়।
তবে বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের এসব চুক্তি শর্তহীন ছিল না। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য কেনার বিষয়ে স্পষ্ট অঙ্গীকার দিতে পারেনি, তারা অনেক সময় উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক দেশকে শুল্ক চিঠি পাঠাতে থাকে। বর্তমানে বেশির ভাগ আমদানি যুক্তরাষ্ট্রে এখন কোনো না কোনো চুক্তি বা প্রেসিডেন্টের একতরফা আদেশের আওতায় পড়ে আর এসব আদেশের শেষে থাকে ট্রাম্পের সংক্ষিপ্ত বার্তা: ‘এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’
বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘ক্ষতি’ করার ক্ষমতা
গত কয়েক মাসের ঘটনাপ্রবাহ অনেক কিছু উন্মোচন করেছে। তবে ভালো খবর হলো শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ শুল্ক এবং মন্দার আশঙ্কা এড়ানো গেছে। উচ্চ শুল্কহার এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা বাস্তবে রূপ নেয়নি।
দ্বিতীয়ত, অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন শুল্ক শর্তে সম্মত হওয়ায় একটা বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে। যে অনিশ্চয়তা ট্রাম্প নিজেই গত মাসগুলোতে একধরনের অর্থনৈতিক চাপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।
এই অনিশ্চয়তা দূর হওয়ায় একদিকে যেমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় পরিকল্পনা করতে পারছে, তেমনি বিনিয়োগ ও নিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও আবার সচল হচ্ছে।
বেশিরভাগ রপ্তানিকারক এখন জানেন, তাদের পণ্যের ওপর কত শতাংশ শুল্ক বসছে এবং সেই অনুযায়ী তাঁরা খরচ কীভাবে সামলাবেন বা ভোক্তার ওপর কতটা চাপ দেবেন, সেটাও হিসাব করতে পারছেন।
এই ক্রমবর্ধমান স্পষ্টতা বিশ্ব অর্থবাজারে তুলনামূলক স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করেছে। এর ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে উল্লেখযোগ্য উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে।
অবশ্য একটি দিক থেকে এটি নেতিবাচকও বটে। কারণ এখন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির গড় শুল্কহার আগের তুলনায় বেশি এবং ছয় মাস আগেও এতটা চরম অবস্থার পূর্বাভাস দেননি বিশ্লেষকেরা।
ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিকে বড় অর্জন হিসেবে তুলে ধরলেও এগুলো সেই রকম ‘শুল্ক বাধা ভেঙে ফেলার’ চুক্তি নয়, যা আগের দশকগুলোতে দেখা যেত।
বিপর্যয়, বড় মন্দা, ব্যাপক বাজার ধসের মতো শঙ্কাগুলো এখন কিছুটা দূরে ঠেকছে। তবে অক্সফোর্ড ইকোনমিকস-এর গ্লোবাল ম্যাক্রো ফোরকাস্টিং ডিরেক্টর বেন মে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি এখনো বহুভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ করার ক্ষমতা রাখে।
তিনি বলেন, ‘এই শুল্ক কার্যত যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের আয় সংকুচিত করছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যদি কম পণ্য আমদানি করে, তাহলে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাবে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও।’
জয়ী ও পরাজিত: জার্মানি, ভারত ও চীন
শুধু শুল্কের হার নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের পরিমাণও নির্ধারণ করে কে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভারতের কথা ধরলে, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানির ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ। তবে ক্যাপিটাল ইকোনমিকস-এর অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদার অবদান মাত্র ২ শতাংশ হওয়ায়, এই শুল্কের তাৎক্ষণিক প্রভাব হয়তো খুব বড় ধরনের হবে না।
তবে জার্মানির ক্ষেত্রে খবরটা ততটা আশাব্যঞ্জক নয়। ১৫ শতাংশ শুল্ক তাদের প্রবৃদ্ধির হার থেকে চলতি বছরে ০.৫ শতাংশেরও বেশি কমিয়ে দিতে পারে। যা বছরের শুরুতে করা পূর্বাভাসের চেয়ে অনেকটাই কম। এর মূল কারণ হলো, এই ধরনের শুল্কবৃদ্ধির ফলে জার্মানির বিশাল গাড়ি শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এমন সময় এই শুল্ক আরোপ যখন দেশটি ইতিমধ্যেই মন্দার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।
আর চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক সবচেয়ে অস্থির অবস্থায় রয়েছে। গত কয়েক মাসে চীনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ শুল্কের আশঙ্কায় অ্যাপলসহ একাধিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর এই সিদ্ধান্তে লাভবান হয় ভারত। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে।
তবে ভারত এটা জানে, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো, যারা যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে তুলনামূলকভাবে কম শুল্কের মুখোমুখি হয়, তারা অন্যান্য খাতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও আকর্ষণীয় বিকল্প জোগানদাতা হয়ে উঠতে পারে।
শুল্ক নীতি ও ট্রাম্পের রাজনৈতিক ঝুঁকি
যত সময় যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এই শুল্কনীতির প্রভাবও ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। শুল্কের পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে এই শঙ্কায় অনেক প্রতিষ্ঠান আগেভাগে মার্কিন পণ্য কিনে রেখেছিল তাই চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা প্রবৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, বছরের বাকি সময়টাতে এই প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পাবে।
বছরের শুরুতে যেখানে গড় শুল্কহার ছিল মাত্র ২ শতাংশ, এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রাজস্বে উল্লেখযোগ্য প্রবাহ এসেছে, যা ছিল ট্রাম্পের ঘোষিত বাণিজ্যনীতির অন্যতম লক্ষ্য।
এ বছরের প্রথম সাত মাসেই আমদানি শুল্ক থেকে এসেছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা মার্কিন ফেডারেল আয়ের প্রায় ৫ শতাংশ (যেখানে সাধারণত তা থাকে ২ শতাংশ-এর আশেপাশে)।
ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট আশা করছেন, পুরো বছরে শুল্ক থেকে আয় হবে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার। তুলনামূলকভাবে, ফেডারেল ইনকাম ট্যাক্স থেকে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র পায় প্রায় ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
তবে সবচেয়ে বড় চাপ এখনো সাধারণ মার্কিন ভোক্তার কাঁধেই রয়েছে। তারা এখনো পুরোপুরি মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা পাননি, কিন্তু ইউনিলিভার, অ্যাডিডাসের মতো বড় ভোক্তা পণ্য কোম্পানিগুলো এখন খোলাখুলিভাবে বাড়তি খরচের হিসাব দিচ্ছে।
ফলে সামনে ‘স্টিকার শক’ অর্থাৎ হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্রাহকদের বিস্মিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এটা ভোক্তাদের ব্যয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং ট্রাম্পের প্রত্যাশিত সুদের হার কমানোর পথও আটকে দিতে পারে।
এ অবস্থায় অর্থনৈতিক চাপ ও মূল্যবৃদ্ধি মিলিয়ে নির্বাচনী বছর ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্পের জন্য এটি একটি বাস্তব ও বাড়তে থাকা রাজনৈতিক ঝুঁকিতে পরিণত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও স্পষ্ট রাজনৈতিক হুমকি
সব ধরনের পূর্বাভাসেই কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকে, তবে এই মুহূর্তে যা স্পষ্ট, তা হলো, একজন এমন প্রেসিডেন্টের জন্য এটা একটি বাস্তব রাজনৈতিক হুমকি, যিনি ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দাম বাড়ানোর নয়।
ট্রাম্প এবং হোয়াইট হাউজের অন্যান্য কর্মকর্তারা এখন কম আয়ের মার্কিনদের জন্য ‘রিবেট চেক’ দেওয়ার কথা ভাবছেন। বিশেষ করে সেইসব ব্লু-কলার (শ্রমজীবী) ভোটারদের জন্য, যারা তার রাজনৈতিক উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা জটিল হতে পারে এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনও প্রয়োজন হবে।
এটা আবার একধরনের পরোক্ষ স্বীকারোক্তিও বটে। শুধু অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব আসার দাবি, ব্যয় বা কর হ্রাসের ঘাটতি পূরণের যুক্তি অথবা ভবিষ্যতে দেশীয় কর্মসংস্থান ও সম্পদ তৈরির আশ্বাস দিয়ে জনগণের আস্থা রাখা রাজনৈতিকভাবে খুব একটা নিরাপদ কৌশল নয়। যখন রিপাবলিকান পার্টিকে আগামী বছরের অঙ্গরাজ্য ও কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটারদের মুখোমুখি হতে হবে, তখন এই মূল্যবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক চাপ দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
এখনো চূড়ান্ত হয়নি বহু গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি
এই জটিল পরিস্থিতিতে আরও জটিলতা যোগ করছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে চুক্তি এখনও চূড়ান্ত না হওয়া। বিশেষ করে কানাডা এবং তাইওয়ানের সঙ্গে এখনও সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বড় বাণিজ্যিক অংশীদার মেক্সিকোর সঙ্গে আলোচনার সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এছাড়া চীনের জন্য আলাদা সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাও এখনো অনির্ধারিত রয়েছে।
এ পর্যন্ত বেশ কিছু চুক্তি মৌখিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু তা এখনও লিখিত স্বাক্ষরিত হয়নি। এছাড়া ট্রাম্পের শর্তাবলীর বাস্তবায়ন কতটা এবং কীভাবে হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি নেতারা ট্রাম্পের দাবি করা শর্তাবলীর অস্তিত্বই অস্বীকার করেছেন।
এই অনিশ্চয়তার কারণে ভবিষ্যতে বাণিজ্য সম্পর্ক কতটা স্থায়ী ও ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
হোয়াইট হাউজ ও বিভিন্ন দেশের মধ্যকার শুল্ক চুক্তি বিশ্লেষণে করে অর্থনীতিবিদ জন মে বলছেন, “‘শয়তান’ থাকে বিস্তারিত শর্তাবলীতে। আর এই বিস্তারিত শর্তাবলী এখন পর্যন্ত খুবই সীমিত বা অসম্পূর্ণ। ”
তবুও এটা স্পষ্ট যে বিশ্ব ধ্বংসাত্মক বাণিজ্যযুদ্ধের প্রান্ত থেকে ফিরে এসেছে। এখন, যখন দেশগুলো নতুন ধরনের বাণিজ্য বাধার সঙ্গে মোকাবিলা করছে, ট্রাম্প সেই পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন।
তবে ইতিহাস বলছে, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্পের যে লক্ষ্য তা খুব বেশি সফল হবে বলে আশা করা কঠিন। আর কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দীর্ঘদিনের মার্কিন অংশীদাররা হয়তো এমন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা করবে, যা তাদের আর ‘নির্ভরযোগ্য’ অর্থনৈতিক মিত্র হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেখবে না।
ট্রাম্প সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক অনন্য অবস্থানের সুবিধা নিচ্ছেন, যা বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং যেটি গড়ে তুলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আধা শতকেরও বেশি সময় নিয়েছে। কিন্তু যদি বর্তমান শুল্ক ব্যবস্থা বিশ্ববাণিজ্যে মৌলিক পুনর্বিন্যাস শুরু করে, তাহলে তার দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে না হলেও হতে পারে। এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর মিলতে কেটে যাবে বছরের পর ছর।
তবে এখন পর্যন্ত, ট্রাম্পের নির্বাচকদের হয়তো তাদের বেশির ভাগ ‘মূল্য’ নিজেই বহন করতে হবে উচ্চ মূল্য, সীমিত পছন্দ এবং ধীর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক ফারহানা জিয়াসমিন।

গত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে, যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশির ভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প। চার মাস পর আবারও বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প। আর এই শুল্ক আরোপ ও বাণিজ্য চুক্তিকে নিজের সাফল্য হিসেবে অভিহিত করছেন তিনি।
ট্রাম্প কিছু বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে চুক্তি করেছেন আর অন্যদের ওপর একতরফাভাবে শুল্ক চাপিয়েছেন। তবে এবার দেশগুলো কিছুটা প্রস্তুতই ছিল বলা যায়। এ কারণে গত এপ্রিলের মতো অস্থির অর্থনীতির দেখা মিলছে না।
বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পুনর্বিন্যাস করতে চান ট্রাম্প। অন্তত এই দাবিতেই শুল্ক আরোপ বাড়িয়েছেন তিনি। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নতুন রাজস্বের, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন শিল্প পুনরুজ্জীবিত করার এবং দেশে শত শত বিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার ও মার্কিন পণ্য কেনার চুক্তির।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই প্রতিশ্রুতির কতটা বাস্তবায়ন হবে বা এর নেতিবাচক ফলাফল কতটা পড়বে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এখন পর্যন্ত যা পরিষ্কার তা হলো, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগেই যেখানে বৈশ্বিক মুক্ত বাণিজ্যের প্রতি আগ্রহ ধীরে ধীরে কমছিল, সেখানে ট্রাম্পের পদক্ষেপ সেটিকে রীতিমতো এক ঢেউয়ে পরিণত করেছে, যা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বদলে দিচ্ছে। যদিও এখনো সেই পরিবর্তনের পূর্ণ প্রভাব বোঝা যায়নি। কারণ এমন পরিবর্তনে ফলাফল সামনে আসে দেরিতে।
অনেক দেশের জন্যই এই শুল্ক আরোপ একধরনের সতর্কবার্তা হিসেবে এসেছে। বাণিজ্যিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তায় নতুন জোট গঠন নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
ফলে, স্বল্প মেয়াদে ট্রাম্প যা ‘জয়’ হিসেবে দেখছেন, সেটি তাঁর বৃহত্তর কৌশলিক লক্ষ্যপূরণে কতটা কাজে দেবে, তা অনিশ্চিত। আর এর প্রভাব ট্রাম্পের জন্য এবং দীর্ঘমেয়াদে আমেরিকার ওপর পড়তে যাচ্ছে, তা একেবারেই ভিন্ন হতে পারে।
‘৯০ দিনে ৯০ চুক্তি’, যে সময়সীমা নিয়ে এসেছিল আতঙ্ক
আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকদের ক্যালেন্ডারে ১ আগস্ট তারিখটি লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত ছিল। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে আগেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করো, নইলে ধ্বংসাত্মক শুল্কের মুখোমুখি হও।
হোয়াইট হাউজের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো যখন ‘৯০ দিনে ৯০ চুক্তি’র ঘোষণা দেন এবং ট্রাম্প নিজেও দ্রুত চুক্তি সম্পাদনের আশাবাদী মন্তব্য করেন, তখন থেকেই বিশেষজ্ঞদের কাছে সময়সীমাটি অবাস্তব বলেই মনে হচ্ছিল এবং বাস্তবেও সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
জুলাই মাসের শেষে এসে দেখা গেছে, ট্রাম্প মাত্র এক ডজন বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেছেন, যার অনেকগুলোই এক-দুই পৃষ্ঠার বেশি নয়। এসব চুক্তিতে সাধারণত যেসব বিশদ ও বাধ্যবাধকতামূলক শর্ত থাকে, তা অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত।
এই পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য অংশীদারদের অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রশ্ন থেকে গেছে চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ বাস্তবায়ন ও স্থায়িত্ব নিয়ে।
প্রথম ধাক্কা লেগেছিল যুক্তরাজ্যে
ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি আর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সেই ঘাটতি তুলনামূলকভাবে প্রায় ভারসাম্যপূর্ণ। ফলে যুক্তরাজ্যের বেলায় দ্রুত অগ্রগতি হওয়াটা খুব একটা বিস্ময়ের নয়।
বেশির ভাগ ব্রিটিশ পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ প্রাথমিক শুল্কহার আরোপ প্রথমে কিছুটা কপাল কুঁচকানোর মতো ছিল ঠিকই, তবে সেটিই পরবর্তী পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত সেটিও কিছুটা স্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের মতো অংশীদারদের ওপর যেখানে শুল্ক ১৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি যথাক্রমে ২৪০ বিলিয়ন ডলার ও ৭০ বিলিয়ন ডলার (শুধু গত বছরে) সেখানে যুক্তরাজ্যের হার ছিল তুলনামূলক সহনীয়।
তবে বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের এসব চুক্তি শর্তহীন ছিল না। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য কেনার বিষয়ে স্পষ্ট অঙ্গীকার দিতে পারেনি, তারা অনেক সময় উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক দেশকে শুল্ক চিঠি পাঠাতে থাকে। বর্তমানে বেশির ভাগ আমদানি যুক্তরাষ্ট্রে এখন কোনো না কোনো চুক্তি বা প্রেসিডেন্টের একতরফা আদেশের আওতায় পড়ে আর এসব আদেশের শেষে থাকে ট্রাম্পের সংক্ষিপ্ত বার্তা: ‘এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’
বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘ক্ষতি’ করার ক্ষমতা
গত কয়েক মাসের ঘটনাপ্রবাহ অনেক কিছু উন্মোচন করেছে। তবে ভালো খবর হলো শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ শুল্ক এবং মন্দার আশঙ্কা এড়ানো গেছে। উচ্চ শুল্কহার এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা বাস্তবে রূপ নেয়নি।
দ্বিতীয়ত, অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন শুল্ক শর্তে সম্মত হওয়ায় একটা বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে। যে অনিশ্চয়তা ট্রাম্প নিজেই গত মাসগুলোতে একধরনের অর্থনৈতিক চাপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।
এই অনিশ্চয়তা দূর হওয়ায় একদিকে যেমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় পরিকল্পনা করতে পারছে, তেমনি বিনিয়োগ ও নিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও আবার সচল হচ্ছে।
বেশিরভাগ রপ্তানিকারক এখন জানেন, তাদের পণ্যের ওপর কত শতাংশ শুল্ক বসছে এবং সেই অনুযায়ী তাঁরা খরচ কীভাবে সামলাবেন বা ভোক্তার ওপর কতটা চাপ দেবেন, সেটাও হিসাব করতে পারছেন।
এই ক্রমবর্ধমান স্পষ্টতা বিশ্ব অর্থবাজারে তুলনামূলক স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করেছে। এর ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে উল্লেখযোগ্য উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে।
অবশ্য একটি দিক থেকে এটি নেতিবাচকও বটে। কারণ এখন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির গড় শুল্কহার আগের তুলনায় বেশি এবং ছয় মাস আগেও এতটা চরম অবস্থার পূর্বাভাস দেননি বিশ্লেষকেরা।
ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিকে বড় অর্জন হিসেবে তুলে ধরলেও এগুলো সেই রকম ‘শুল্ক বাধা ভেঙে ফেলার’ চুক্তি নয়, যা আগের দশকগুলোতে দেখা যেত।
বিপর্যয়, বড় মন্দা, ব্যাপক বাজার ধসের মতো শঙ্কাগুলো এখন কিছুটা দূরে ঠেকছে। তবে অক্সফোর্ড ইকোনমিকস-এর গ্লোবাল ম্যাক্রো ফোরকাস্টিং ডিরেক্টর বেন মে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি এখনো বহুভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ করার ক্ষমতা রাখে।
তিনি বলেন, ‘এই শুল্ক কার্যত যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের আয় সংকুচিত করছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যদি কম পণ্য আমদানি করে, তাহলে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাবে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও।’
জয়ী ও পরাজিত: জার্মানি, ভারত ও চীন
শুধু শুল্কের হার নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের পরিমাণও নির্ধারণ করে কে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভারতের কথা ধরলে, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানির ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ। তবে ক্যাপিটাল ইকোনমিকস-এর অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদার অবদান মাত্র ২ শতাংশ হওয়ায়, এই শুল্কের তাৎক্ষণিক প্রভাব হয়তো খুব বড় ধরনের হবে না।
তবে জার্মানির ক্ষেত্রে খবরটা ততটা আশাব্যঞ্জক নয়। ১৫ শতাংশ শুল্ক তাদের প্রবৃদ্ধির হার থেকে চলতি বছরে ০.৫ শতাংশেরও বেশি কমিয়ে দিতে পারে। যা বছরের শুরুতে করা পূর্বাভাসের চেয়ে অনেকটাই কম। এর মূল কারণ হলো, এই ধরনের শুল্কবৃদ্ধির ফলে জার্মানির বিশাল গাড়ি শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এমন সময় এই শুল্ক আরোপ যখন দেশটি ইতিমধ্যেই মন্দার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।
আর চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক সবচেয়ে অস্থির অবস্থায় রয়েছে। গত কয়েক মাসে চীনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ শুল্কের আশঙ্কায় অ্যাপলসহ একাধিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর এই সিদ্ধান্তে লাভবান হয় ভারত। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে।
তবে ভারত এটা জানে, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো, যারা যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে তুলনামূলকভাবে কম শুল্কের মুখোমুখি হয়, তারা অন্যান্য খাতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও আকর্ষণীয় বিকল্প জোগানদাতা হয়ে উঠতে পারে।
শুল্ক নীতি ও ট্রাম্পের রাজনৈতিক ঝুঁকি
যত সময় যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এই শুল্কনীতির প্রভাবও ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। শুল্কের পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে এই শঙ্কায় অনেক প্রতিষ্ঠান আগেভাগে মার্কিন পণ্য কিনে রেখেছিল তাই চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা প্রবৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, বছরের বাকি সময়টাতে এই প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পাবে।
বছরের শুরুতে যেখানে গড় শুল্কহার ছিল মাত্র ২ শতাংশ, এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রাজস্বে উল্লেখযোগ্য প্রবাহ এসেছে, যা ছিল ট্রাম্পের ঘোষিত বাণিজ্যনীতির অন্যতম লক্ষ্য।
এ বছরের প্রথম সাত মাসেই আমদানি শুল্ক থেকে এসেছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা মার্কিন ফেডারেল আয়ের প্রায় ৫ শতাংশ (যেখানে সাধারণত তা থাকে ২ শতাংশ-এর আশেপাশে)।
ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট আশা করছেন, পুরো বছরে শুল্ক থেকে আয় হবে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার। তুলনামূলকভাবে, ফেডারেল ইনকাম ট্যাক্স থেকে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র পায় প্রায় ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
তবে সবচেয়ে বড় চাপ এখনো সাধারণ মার্কিন ভোক্তার কাঁধেই রয়েছে। তারা এখনো পুরোপুরি মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা পাননি, কিন্তু ইউনিলিভার, অ্যাডিডাসের মতো বড় ভোক্তা পণ্য কোম্পানিগুলো এখন খোলাখুলিভাবে বাড়তি খরচের হিসাব দিচ্ছে।
ফলে সামনে ‘স্টিকার শক’ অর্থাৎ হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্রাহকদের বিস্মিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এটা ভোক্তাদের ব্যয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং ট্রাম্পের প্রত্যাশিত সুদের হার কমানোর পথও আটকে দিতে পারে।
এ অবস্থায় অর্থনৈতিক চাপ ও মূল্যবৃদ্ধি মিলিয়ে নির্বাচনী বছর ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্পের জন্য এটি একটি বাস্তব ও বাড়তে থাকা রাজনৈতিক ঝুঁকিতে পরিণত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও স্পষ্ট রাজনৈতিক হুমকি
সব ধরনের পূর্বাভাসেই কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকে, তবে এই মুহূর্তে যা স্পষ্ট, তা হলো, একজন এমন প্রেসিডেন্টের জন্য এটা একটি বাস্তব রাজনৈতিক হুমকি, যিনি ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দাম বাড়ানোর নয়।
ট্রাম্প এবং হোয়াইট হাউজের অন্যান্য কর্মকর্তারা এখন কম আয়ের মার্কিনদের জন্য ‘রিবেট চেক’ দেওয়ার কথা ভাবছেন। বিশেষ করে সেইসব ব্লু-কলার (শ্রমজীবী) ভোটারদের জন্য, যারা তার রাজনৈতিক উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা জটিল হতে পারে এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনও প্রয়োজন হবে।
এটা আবার একধরনের পরোক্ষ স্বীকারোক্তিও বটে। শুধু অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব আসার দাবি, ব্যয় বা কর হ্রাসের ঘাটতি পূরণের যুক্তি অথবা ভবিষ্যতে দেশীয় কর্মসংস্থান ও সম্পদ তৈরির আশ্বাস দিয়ে জনগণের আস্থা রাখা রাজনৈতিকভাবে খুব একটা নিরাপদ কৌশল নয়। যখন রিপাবলিকান পার্টিকে আগামী বছরের অঙ্গরাজ্য ও কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটারদের মুখোমুখি হতে হবে, তখন এই মূল্যবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক চাপ দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
এখনো চূড়ান্ত হয়নি বহু গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি
এই জটিল পরিস্থিতিতে আরও জটিলতা যোগ করছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে চুক্তি এখনও চূড়ান্ত না হওয়া। বিশেষ করে কানাডা এবং তাইওয়ানের সঙ্গে এখনও সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বড় বাণিজ্যিক অংশীদার মেক্সিকোর সঙ্গে আলোচনার সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এছাড়া চীনের জন্য আলাদা সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাও এখনো অনির্ধারিত রয়েছে।
এ পর্যন্ত বেশ কিছু চুক্তি মৌখিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু তা এখনও লিখিত স্বাক্ষরিত হয়নি। এছাড়া ট্রাম্পের শর্তাবলীর বাস্তবায়ন কতটা এবং কীভাবে হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি নেতারা ট্রাম্পের দাবি করা শর্তাবলীর অস্তিত্বই অস্বীকার করেছেন।
এই অনিশ্চয়তার কারণে ভবিষ্যতে বাণিজ্য সম্পর্ক কতটা স্থায়ী ও ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
হোয়াইট হাউজ ও বিভিন্ন দেশের মধ্যকার শুল্ক চুক্তি বিশ্লেষণে করে অর্থনীতিবিদ জন মে বলছেন, “‘শয়তান’ থাকে বিস্তারিত শর্তাবলীতে। আর এই বিস্তারিত শর্তাবলী এখন পর্যন্ত খুবই সীমিত বা অসম্পূর্ণ। ”
তবুও এটা স্পষ্ট যে বিশ্ব ধ্বংসাত্মক বাণিজ্যযুদ্ধের প্রান্ত থেকে ফিরে এসেছে। এখন, যখন দেশগুলো নতুন ধরনের বাণিজ্য বাধার সঙ্গে মোকাবিলা করছে, ট্রাম্প সেই পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন।
তবে ইতিহাস বলছে, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্পের যে লক্ষ্য তা খুব বেশি সফল হবে বলে আশা করা কঠিন। আর কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দীর্ঘদিনের মার্কিন অংশীদাররা হয়তো এমন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা করবে, যা তাদের আর ‘নির্ভরযোগ্য’ অর্থনৈতিক মিত্র হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেখবে না।
ট্রাম্প সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক অনন্য অবস্থানের সুবিধা নিচ্ছেন, যা বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং যেটি গড়ে তুলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আধা শতকেরও বেশি সময় নিয়েছে। কিন্তু যদি বর্তমান শুল্ক ব্যবস্থা বিশ্ববাণিজ্যে মৌলিক পুনর্বিন্যাস শুরু করে, তাহলে তার দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে না হলেও হতে পারে। এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর মিলতে কেটে যাবে বছরের পর ছর।
তবে এখন পর্যন্ত, ট্রাম্পের নির্বাচকদের হয়তো তাদের বেশির ভাগ ‘মূল্য’ নিজেই বহন করতে হবে উচ্চ মূল্য, সীমিত পছন্দ এবং ধীর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক ফারহানা জিয়াসমিন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

গত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে। যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশিরভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প।
০১ আগস্ট ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

গত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে। যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশিরভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প।
০১ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

গত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে। যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশিরভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প।
০১ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে। যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশিরভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প।
০১ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে