আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়েই ছাত্র ইউনিয়নগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে। ইতিহাস বলে, এই ছাত্ররাই সরকারকে দায়বদ্ধ করে তোলে এবং তরুণদের অধিকার রক্ষা করে। বাংলাদেশে অনেক ছাত্র নেতা পরবর্তীকালে মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে রাজনীতিতে অসাধারণ অবদান রেখেছেন। কিন্তু এর দুঃখজনক পরিণতি হলো, এই ছাত্ররাজনীতি একপর্যায়ে কার্যত তাদের আদর্শলগ্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এমনকি নির্লজ্জ লেজুড়বৃত্তি এবং ওই রাজনৈতিক দলের স্বার্থ রক্ষায় সহিংসতায় জড়িয়ে গেছে। সেই সঙ্গে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যেও ছাত্রনেতাদের নাম এসেছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে নতুন ছাত্ররাজনীতির প্রত্যাশা বেগবান হয়েছে। পূর্বের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে কেউ কেউ আবার ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার দাবিও তুলছে। এই দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশের প্রধান কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।
ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা কতখানি, এই ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতার ভূমিকা ও অবদান কী, পরবর্তীতে তথাকথিত মুরব্বি সংগঠনের লেজুড়বৃত্তিই কি ছাত্ররাজনীতির অনিবার্য পরিণতি?
এসব প্রশ্নের জবাব পেতে আমরা ভারতের অভিজ্ঞতা স্মরণ করতে পারি। ভারতের ছাত্ররাজনীতির ঐতিহাসিক পটভূমি, বর্তমান অবস্থা, প্রেশার গ্রুপ হিসেবে ভূমিকা এবং বিশ্বব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা—বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বুঝতেও সহায়তা করবে।
ভারতে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে তরুণ-যুবকেরা ছিলেন মূল শক্তি। ১৯১৯ সালের রাউলাট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধীর আন্দোলনে ছাত্ররা ব্যাপকভাবে অংশ নেয়। অসহযোগ আন্দোলনে গান্ধী ছাত্রদের স্কুল-কলেজ বয়কট করার আহ্বান জানান। তাঁরা রাস্তায় নেমে জাতীয় নেতাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ১৯২০ সালে প্রথম অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকেই ১৯৩৬ সালে অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস ফেডারেশন (এআইএসএফ)-এর জন্ম হয়। স্বদেশি আন্দোলনে ছাত্ররা ব্রিটিশ পণ্য বয়কট করে ভারতীয় পণ্যের প্রচার করে। ১৯৪২ সালের ভারত ছাড় আন্দোলনে ছাত্ররা গণ-সমাবেশ এবং প্রতিবাদ সংগঠিত করে। অনেক ছাত্রনেতা কারাবন্দী হন অথবা শহীদ হন।
স্বাধীনতার পর, ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকলেও, একটি একক ও চূড়ান্ত লক্ষ্যের অভাব দেখা যায়। ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র ইউনিয়নগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ে। এমনকি বামপন্থী সংগঠনগুলো যেমন এআইএসএফ কট্টর কমিউনিস্ট এবং গান্ধীবাদী সমাজতান্ত্রিক—এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়। ১৯৭০-এর দশকে একটি বড় আদর্শগত পরিবর্তন ঘটে। ১৯৬২,১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের তিনটি যুদ্ধ, অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং কংগ্রেস সরকারের সমাজতান্ত্রিক নীতির কারণে অসন্তোষ বাড়ে। ১৯৭৪ সালে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং সরকারি অপশাসনের বিরুদ্ধে বিহার এবং গুজরাটে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় ছাত্ররা। জয়প্রকাশ নারায়ণের ‘টোটাল রেভল্যুশন’ এই আন্দোলনকে শক্তি জোগায়। এই সময়ে আরএসএস-সমর্থিত অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) উত্থান ঘটে। তারা দ্রুতই নিজেদের কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
এই আন্দোলন থেকে উঠে আসা ছাত্র নেতারা যেমন অরুণ জেটলি, লালু প্রসাদ যাদব এবং রাম বিলাস পাসোয়ান পরবর্তীকালে মূলধারার রাজনীতিতে প্রভাবশালী হন। জেটলি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (ডিইউএসইউ)-এর সভাপতি ছিলেন এবং ইন্দিরার জরুরি অবস্থার (ইমার্জেন্সি) সময় কারাবন্দী হন। পরে তিনি বিজেপি সরকারের অর্থ, প্রতিরক্ষা এবং আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
ভারতের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেমন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ), যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতির জন্য বিখ্যাত। এখানে কংগ্রেস-সমর্থিত ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া (এনএসইউআই), আরএসএস-সমর্থিত এবিভিপি, বামপন্থী অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইসা) এবং নতুন গোষ্ঠী যেমন আম আদমি পার্টি-সমর্থিত ছাত্র যুব সংঘর্ষ সমিতি (সিওয়াইএসএস) এবং স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ইউনিয়ন যেমন বিরসা আম্বেদকর ফুলে স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বাপসা) সক্রিয়।
এখন প্রশ্ন হলো: ছাত্ররাজনীতি কি কেবল জাতীয় বা রাজ্য-স্তরের রাজনীতির প্রতিফলন, নাকি সরকারের বিরুদ্ধে সত্যিকারের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে?
সাধারণত দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র শাখা বেশি অর্থ এবং সংস্থান পায়। এই প্রবণতা বিরোধী ইউনিয়নগুলোকে দুর্বল করে দেয়। যেমন বামফ্রন্টের দুর্বলতার কারণে আইসা এবং স্টুডেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (এসএফআই) কমজোর হয়েছে।
তবে বিজেপির এই সময় এসে ব্যাপারটা অতো সরলও থাকেনি। ভারতে ক্যাম্পাসগুলোতে সরকার-বিরোধী ছাত্র নেতাদের ‘দেশদ্রোহী’ বা ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের এই কূটচাল রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে জাতীয়তাবাদী বনাম বিশ্বাসঘাতকতার ফ্রেমে বন্দী করছে। এই কৌশল কার্যত প্রতিরোধকে দুর্বল করে দেয় এবং মতামতের বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে, সমাজে বিতর্কের পরিবেশ সংকুচিত করে।
পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে অনেকে ছাত্ররাজনীতিকে প্রায়শই হিংসাত্মক এবং নোংরা বলে চিহ্নিত করেন। বিভিন্ন ইস্যুতে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার কারণে বলা হয়, ছাত্ররাজনীতি শিক্ষাকে প্রভাবিত করে। এই রাজনীতি ছাত্রদের কর্মজীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে। যেমন, কোনো কোম্পানি ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ হিসেবে চিহ্নিত ছাত্রকে নিয়োগ করতে চাইবে না।
অন্যদিকে, ইউনিয়ন-বিহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে। ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পারা একটি বড় দৃষ্টান্ত। তবে ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কিত হিংসা ও সংঘাত এবং নির্বাচনী অশান্তি এড়ানোর জন্য অনেক শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকাকে স্বাগত জানায়। ফলে, ছাত্ররা ক্রমেই ‘অরাজনৈতিক’ হয়ে ওঠে। এতে জাতীয় রাজনীতির প্রতি পুরো প্রজন্মের সচেতনতা ক্রমেই কমতে থাকে। যেমন বাংলাদেশে রাজনীতি পছন্দ না করা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রায় ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।
ভারতে ২০১৯ সাল ছিল ছাত্র অ্যাকটিভিজমের একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেএনইউ-এর ছাত্ররা উঠে দাঁড়ায়। পুলিশি নির্যাতনের পর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি আইআইটি এবং আইআইএম-এর মতো অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসেও সংহতি দেখা যায়।
বিশ্বজুড়ে ছাত্ররা বারবার বিভিন্ন আন্দোলনের মুখ হয়েছে। সম্প্রতি হংকং-এ প্রো-ডেমোক্রেসি আন্দোলনে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্গে পরিণত করে পুলিশি নির্যাতনের মুখোমুখি হয়। চিলিতে পিনোচেটের পতনের পর থেকে ছাত্ররা অসমতা, বেসরকারিকরণ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিবাদ করে। ছাত্ররা আগ্নেয়াস্ত্র আইন সংশোধন, এলজিবিটিকিউ+ অধিকার, শিক্ষা সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে। এতে স্পষ্ট যে রাজনীতি শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্র নয়; তরুণেরাও নীতি-নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
এ ছাড়া ছাত্ররা কিন্তু সবচেয়ে কার্যকর প্রেশার গ্রুপ হয়ে উঠতে পারে। যেমন, ভারতে প্রেশার গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে—ব্যবসায়ী গোষ্ঠী (যেমন সিআইআই, ফিক্কি), ট্রেড ইউনিয়ন (যেমন এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি), কৃষক গোষ্ঠী (যেমন অল ইন্ডিয়া কিষান সভা), ছাত্র সংগঠন, শিক্ষক সমিতি এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সংগঠন (যেমন কাস্ট ফেডারেশন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ)। ছাত্র সংগঠনগুলো স্বাধীনতার আগে থেকেই সক্রিয়, যেমন ১৯২৮ সালের অল বেঙ্গল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এবং ১৯৩৬ সালের এআইএসএফ। স্বাধীনতার পর, এগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়: যেমন—এনএসইউআই জাতীয় কংগ্রেসে, এসএফআই সিপিআই-এ, এবিভিপি বিজেপিতে ভিড়ে যায়। তারা শিক্ষা-সম্পর্কিত ইস্যু ছাড়াও জাতীয় বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করে।
সবদিক বিবেচনায় বলা যেতে পারে, ছাত্র সংগঠনগুলোতে শেষ পর্যন্ত অবধারিতভাবে জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলন ঘটলেও প্রতিরোধের সম্ভাবনাও যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। তবে হিংসা, দলীয় নিয়ন্ত্রণ এবং দমনমূলক কৌশল ছাত্রসংগঠনের এই সম্ভাবনাকে নষ্ট করে, সংগঠনগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ইউনিয়ন-বিহীন ক্যাম্পাসগুলো ছাত্রদের অধিকারহীন করে ফেলতে পারে। অথচ ছাত্র ইউনিয়ন সক্রিয় আছে এমন ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক সচেতনতা বাড়ে।
সুতরাং বলা যেতে পারে, ছাত্ররাজনীতি একটি দেশের গণতান্ত্রিক চর্চার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ছাত্রসংগঠনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বলতে গেলে তারা রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছে। পরবর্তীতেও ক্যাম্পাসেরসহ নানা জাতীয় ইস্যুতে তারা সোচ্চার থেকেছে এবং দাবি আদায় করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো জাতীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত থেকেই ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে। বলতে গেলে, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের ফলেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ বিশ্বব্যাপী ঐকমত্য তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। ফলে সরকারগুলোও এখন বেশ চাপে পড়েছে।
বিশ্বব্যাপী এসব উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে, বাংলাদেশের তরুণদেরও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আরও অংশগ্রহণ ইতিবাচক ফল দিতে পারে। প্রেশার গ্রুপ হিসেবে, ছাত্র সংগঠনগুলো যদি স্বাধীন এবং ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে তারা সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে পারে। অন্যথায়, এটি কেবল মূলধারার রাজনীতির ছায়া হয়ে থাকবে। তরুণেরা জনসংখ্যার একটি বড় অংশ—তাদের কণ্ঠস্বরকে উপেক্ষা করা মানে দেশের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকিতে ফেলা।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

বিশ্বজুড়েই ছাত্র ইউনিয়নগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে। ইতিহাস বলে, এই ছাত্ররাই সরকারকে দায়বদ্ধ করে তোলে এবং তরুণদের অধিকার রক্ষা করে। বাংলাদেশে অনেক ছাত্র নেতা পরবর্তীকালে মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে রাজনীতিতে অসাধারণ অবদান রেখেছেন। কিন্তু এর দুঃখজনক পরিণতি হলো, এই ছাত্ররাজনীতি একপর্যায়ে কার্যত তাদের আদর্শলগ্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এমনকি নির্লজ্জ লেজুড়বৃত্তি এবং ওই রাজনৈতিক দলের স্বার্থ রক্ষায় সহিংসতায় জড়িয়ে গেছে। সেই সঙ্গে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যেও ছাত্রনেতাদের নাম এসেছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে নতুন ছাত্ররাজনীতির প্রত্যাশা বেগবান হয়েছে। পূর্বের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে কেউ কেউ আবার ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার দাবিও তুলছে। এই দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশের প্রধান কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।
ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা কতখানি, এই ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতার ভূমিকা ও অবদান কী, পরবর্তীতে তথাকথিত মুরব্বি সংগঠনের লেজুড়বৃত্তিই কি ছাত্ররাজনীতির অনিবার্য পরিণতি?
এসব প্রশ্নের জবাব পেতে আমরা ভারতের অভিজ্ঞতা স্মরণ করতে পারি। ভারতের ছাত্ররাজনীতির ঐতিহাসিক পটভূমি, বর্তমান অবস্থা, প্রেশার গ্রুপ হিসেবে ভূমিকা এবং বিশ্বব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা—বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বুঝতেও সহায়তা করবে।
ভারতে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে তরুণ-যুবকেরা ছিলেন মূল শক্তি। ১৯১৯ সালের রাউলাট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধীর আন্দোলনে ছাত্ররা ব্যাপকভাবে অংশ নেয়। অসহযোগ আন্দোলনে গান্ধী ছাত্রদের স্কুল-কলেজ বয়কট করার আহ্বান জানান। তাঁরা রাস্তায় নেমে জাতীয় নেতাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ১৯২০ সালে প্রথম অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকেই ১৯৩৬ সালে অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস ফেডারেশন (এআইএসএফ)-এর জন্ম হয়। স্বদেশি আন্দোলনে ছাত্ররা ব্রিটিশ পণ্য বয়কট করে ভারতীয় পণ্যের প্রচার করে। ১৯৪২ সালের ভারত ছাড় আন্দোলনে ছাত্ররা গণ-সমাবেশ এবং প্রতিবাদ সংগঠিত করে। অনেক ছাত্রনেতা কারাবন্দী হন অথবা শহীদ হন।
স্বাধীনতার পর, ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকলেও, একটি একক ও চূড়ান্ত লক্ষ্যের অভাব দেখা যায়। ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র ইউনিয়নগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ে। এমনকি বামপন্থী সংগঠনগুলো যেমন এআইএসএফ কট্টর কমিউনিস্ট এবং গান্ধীবাদী সমাজতান্ত্রিক—এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়। ১৯৭০-এর দশকে একটি বড় আদর্শগত পরিবর্তন ঘটে। ১৯৬২,১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের তিনটি যুদ্ধ, অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং কংগ্রেস সরকারের সমাজতান্ত্রিক নীতির কারণে অসন্তোষ বাড়ে। ১৯৭৪ সালে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং সরকারি অপশাসনের বিরুদ্ধে বিহার এবং গুজরাটে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় ছাত্ররা। জয়প্রকাশ নারায়ণের ‘টোটাল রেভল্যুশন’ এই আন্দোলনকে শক্তি জোগায়। এই সময়ে আরএসএস-সমর্থিত অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) উত্থান ঘটে। তারা দ্রুতই নিজেদের কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
এই আন্দোলন থেকে উঠে আসা ছাত্র নেতারা যেমন অরুণ জেটলি, লালু প্রসাদ যাদব এবং রাম বিলাস পাসোয়ান পরবর্তীকালে মূলধারার রাজনীতিতে প্রভাবশালী হন। জেটলি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (ডিইউএসইউ)-এর সভাপতি ছিলেন এবং ইন্দিরার জরুরি অবস্থার (ইমার্জেন্সি) সময় কারাবন্দী হন। পরে তিনি বিজেপি সরকারের অর্থ, প্রতিরক্ষা এবং আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
ভারতের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেমন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ), যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতির জন্য বিখ্যাত। এখানে কংগ্রেস-সমর্থিত ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া (এনএসইউআই), আরএসএস-সমর্থিত এবিভিপি, বামপন্থী অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইসা) এবং নতুন গোষ্ঠী যেমন আম আদমি পার্টি-সমর্থিত ছাত্র যুব সংঘর্ষ সমিতি (সিওয়াইএসএস) এবং স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ইউনিয়ন যেমন বিরসা আম্বেদকর ফুলে স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বাপসা) সক্রিয়।
এখন প্রশ্ন হলো: ছাত্ররাজনীতি কি কেবল জাতীয় বা রাজ্য-স্তরের রাজনীতির প্রতিফলন, নাকি সরকারের বিরুদ্ধে সত্যিকারের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে?
সাধারণত দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র শাখা বেশি অর্থ এবং সংস্থান পায়। এই প্রবণতা বিরোধী ইউনিয়নগুলোকে দুর্বল করে দেয়। যেমন বামফ্রন্টের দুর্বলতার কারণে আইসা এবং স্টুডেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (এসএফআই) কমজোর হয়েছে।
তবে বিজেপির এই সময় এসে ব্যাপারটা অতো সরলও থাকেনি। ভারতে ক্যাম্পাসগুলোতে সরকার-বিরোধী ছাত্র নেতাদের ‘দেশদ্রোহী’ বা ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের এই কূটচাল রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে জাতীয়তাবাদী বনাম বিশ্বাসঘাতকতার ফ্রেমে বন্দী করছে। এই কৌশল কার্যত প্রতিরোধকে দুর্বল করে দেয় এবং মতামতের বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে, সমাজে বিতর্কের পরিবেশ সংকুচিত করে।
পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে অনেকে ছাত্ররাজনীতিকে প্রায়শই হিংসাত্মক এবং নোংরা বলে চিহ্নিত করেন। বিভিন্ন ইস্যুতে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার কারণে বলা হয়, ছাত্ররাজনীতি শিক্ষাকে প্রভাবিত করে। এই রাজনীতি ছাত্রদের কর্মজীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে। যেমন, কোনো কোম্পানি ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ হিসেবে চিহ্নিত ছাত্রকে নিয়োগ করতে চাইবে না।
অন্যদিকে, ইউনিয়ন-বিহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে। ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পারা একটি বড় দৃষ্টান্ত। তবে ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কিত হিংসা ও সংঘাত এবং নির্বাচনী অশান্তি এড়ানোর জন্য অনেক শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকাকে স্বাগত জানায়। ফলে, ছাত্ররা ক্রমেই ‘অরাজনৈতিক’ হয়ে ওঠে। এতে জাতীয় রাজনীতির প্রতি পুরো প্রজন্মের সচেতনতা ক্রমেই কমতে থাকে। যেমন বাংলাদেশে রাজনীতি পছন্দ না করা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রায় ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।
ভারতে ২০১৯ সাল ছিল ছাত্র অ্যাকটিভিজমের একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেএনইউ-এর ছাত্ররা উঠে দাঁড়ায়। পুলিশি নির্যাতনের পর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি আইআইটি এবং আইআইএম-এর মতো অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসেও সংহতি দেখা যায়।
বিশ্বজুড়ে ছাত্ররা বারবার বিভিন্ন আন্দোলনের মুখ হয়েছে। সম্প্রতি হংকং-এ প্রো-ডেমোক্রেসি আন্দোলনে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্গে পরিণত করে পুলিশি নির্যাতনের মুখোমুখি হয়। চিলিতে পিনোচেটের পতনের পর থেকে ছাত্ররা অসমতা, বেসরকারিকরণ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিবাদ করে। ছাত্ররা আগ্নেয়াস্ত্র আইন সংশোধন, এলজিবিটিকিউ+ অধিকার, শিক্ষা সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে। এতে স্পষ্ট যে রাজনীতি শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্র নয়; তরুণেরাও নীতি-নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
এ ছাড়া ছাত্ররা কিন্তু সবচেয়ে কার্যকর প্রেশার গ্রুপ হয়ে উঠতে পারে। যেমন, ভারতে প্রেশার গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে—ব্যবসায়ী গোষ্ঠী (যেমন সিআইআই, ফিক্কি), ট্রেড ইউনিয়ন (যেমন এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি), কৃষক গোষ্ঠী (যেমন অল ইন্ডিয়া কিষান সভা), ছাত্র সংগঠন, শিক্ষক সমিতি এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সংগঠন (যেমন কাস্ট ফেডারেশন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ)। ছাত্র সংগঠনগুলো স্বাধীনতার আগে থেকেই সক্রিয়, যেমন ১৯২৮ সালের অল বেঙ্গল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এবং ১৯৩৬ সালের এআইএসএফ। স্বাধীনতার পর, এগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়: যেমন—এনএসইউআই জাতীয় কংগ্রেসে, এসএফআই সিপিআই-এ, এবিভিপি বিজেপিতে ভিড়ে যায়। তারা শিক্ষা-সম্পর্কিত ইস্যু ছাড়াও জাতীয় বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করে।
সবদিক বিবেচনায় বলা যেতে পারে, ছাত্র সংগঠনগুলোতে শেষ পর্যন্ত অবধারিতভাবে জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলন ঘটলেও প্রতিরোধের সম্ভাবনাও যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। তবে হিংসা, দলীয় নিয়ন্ত্রণ এবং দমনমূলক কৌশল ছাত্রসংগঠনের এই সম্ভাবনাকে নষ্ট করে, সংগঠনগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ইউনিয়ন-বিহীন ক্যাম্পাসগুলো ছাত্রদের অধিকারহীন করে ফেলতে পারে। অথচ ছাত্র ইউনিয়ন সক্রিয় আছে এমন ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক সচেতনতা বাড়ে।
সুতরাং বলা যেতে পারে, ছাত্ররাজনীতি একটি দেশের গণতান্ত্রিক চর্চার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ছাত্রসংগঠনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বলতে গেলে তারা রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছে। পরবর্তীতেও ক্যাম্পাসেরসহ নানা জাতীয় ইস্যুতে তারা সোচ্চার থেকেছে এবং দাবি আদায় করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো জাতীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত থেকেই ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে। বলতে গেলে, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের ফলেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ বিশ্বব্যাপী ঐকমত্য তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। ফলে সরকারগুলোও এখন বেশ চাপে পড়েছে।
বিশ্বব্যাপী এসব উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে, বাংলাদেশের তরুণদেরও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আরও অংশগ্রহণ ইতিবাচক ফল দিতে পারে। প্রেশার গ্রুপ হিসেবে, ছাত্র সংগঠনগুলো যদি স্বাধীন এবং ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে তারা সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে পারে। অন্যথায়, এটি কেবল মূলধারার রাজনীতির ছায়া হয়ে থাকবে। তরুণেরা জনসংখ্যার একটি বড় অংশ—তাদের কণ্ঠস্বরকে উপেক্ষা করা মানে দেশের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকিতে ফেলা।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়েই ছাত্র ইউনিয়নগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে। ইতিহাস বলে, এই ছাত্ররাই সরকারকে দায়বদ্ধ করে তোলে এবং তরুণদের অধিকার রক্ষা করে। বাংলাদেশে অনেক ছাত্র নেতা পরবর্তীকালে মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে রাজনীতিতে অসাধারণ অবদান রেখেছেন। কিন্তু এর দুঃখজনক পরিণতি হলো, এই ছাত্ররাজনীতি একপর্যায়ে কার্যত তাদের আদর্শলগ্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এমনকি নির্লজ্জ লেজুড়বৃত্তি এবং ওই রাজনৈতিক দলের স্বার্থ রক্ষায় সহিংসতায় জড়িয়ে গেছে। সেই সঙ্গে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যেও ছাত্রনেতাদের নাম এসেছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে নতুন ছাত্ররাজনীতির প্রত্যাশা বেগবান হয়েছে। পূর্বের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে কেউ কেউ আবার ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার দাবিও তুলছে। এই দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশের প্রধান কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।
ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা কতখানি, এই ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতার ভূমিকা ও অবদান কী, পরবর্তীতে তথাকথিত মুরব্বি সংগঠনের লেজুড়বৃত্তিই কি ছাত্ররাজনীতির অনিবার্য পরিণতি?
এসব প্রশ্নের জবাব পেতে আমরা ভারতের অভিজ্ঞতা স্মরণ করতে পারি। ভারতের ছাত্ররাজনীতির ঐতিহাসিক পটভূমি, বর্তমান অবস্থা, প্রেশার গ্রুপ হিসেবে ভূমিকা এবং বিশ্বব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা—বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বুঝতেও সহায়তা করবে।
ভারতে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে তরুণ-যুবকেরা ছিলেন মূল শক্তি। ১৯১৯ সালের রাউলাট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধীর আন্দোলনে ছাত্ররা ব্যাপকভাবে অংশ নেয়। অসহযোগ আন্দোলনে গান্ধী ছাত্রদের স্কুল-কলেজ বয়কট করার আহ্বান জানান। তাঁরা রাস্তায় নেমে জাতীয় নেতাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ১৯২০ সালে প্রথম অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকেই ১৯৩৬ সালে অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস ফেডারেশন (এআইএসএফ)-এর জন্ম হয়। স্বদেশি আন্দোলনে ছাত্ররা ব্রিটিশ পণ্য বয়কট করে ভারতীয় পণ্যের প্রচার করে। ১৯৪২ সালের ভারত ছাড় আন্দোলনে ছাত্ররা গণ-সমাবেশ এবং প্রতিবাদ সংগঠিত করে। অনেক ছাত্রনেতা কারাবন্দী হন অথবা শহীদ হন।
স্বাধীনতার পর, ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকলেও, একটি একক ও চূড়ান্ত লক্ষ্যের অভাব দেখা যায়। ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র ইউনিয়নগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ে। এমনকি বামপন্থী সংগঠনগুলো যেমন এআইএসএফ কট্টর কমিউনিস্ট এবং গান্ধীবাদী সমাজতান্ত্রিক—এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়। ১৯৭০-এর দশকে একটি বড় আদর্শগত পরিবর্তন ঘটে। ১৯৬২,১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের তিনটি যুদ্ধ, অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং কংগ্রেস সরকারের সমাজতান্ত্রিক নীতির কারণে অসন্তোষ বাড়ে। ১৯৭৪ সালে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং সরকারি অপশাসনের বিরুদ্ধে বিহার এবং গুজরাটে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় ছাত্ররা। জয়প্রকাশ নারায়ণের ‘টোটাল রেভল্যুশন’ এই আন্দোলনকে শক্তি জোগায়। এই সময়ে আরএসএস-সমর্থিত অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) উত্থান ঘটে। তারা দ্রুতই নিজেদের কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
এই আন্দোলন থেকে উঠে আসা ছাত্র নেতারা যেমন অরুণ জেটলি, লালু প্রসাদ যাদব এবং রাম বিলাস পাসোয়ান পরবর্তীকালে মূলধারার রাজনীতিতে প্রভাবশালী হন। জেটলি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (ডিইউএসইউ)-এর সভাপতি ছিলেন এবং ইন্দিরার জরুরি অবস্থার (ইমার্জেন্সি) সময় কারাবন্দী হন। পরে তিনি বিজেপি সরকারের অর্থ, প্রতিরক্ষা এবং আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
ভারতের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেমন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ), যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতির জন্য বিখ্যাত। এখানে কংগ্রেস-সমর্থিত ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া (এনএসইউআই), আরএসএস-সমর্থিত এবিভিপি, বামপন্থী অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইসা) এবং নতুন গোষ্ঠী যেমন আম আদমি পার্টি-সমর্থিত ছাত্র যুব সংঘর্ষ সমিতি (সিওয়াইএসএস) এবং স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ইউনিয়ন যেমন বিরসা আম্বেদকর ফুলে স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বাপসা) সক্রিয়।
এখন প্রশ্ন হলো: ছাত্ররাজনীতি কি কেবল জাতীয় বা রাজ্য-স্তরের রাজনীতির প্রতিফলন, নাকি সরকারের বিরুদ্ধে সত্যিকারের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে?
সাধারণত দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র শাখা বেশি অর্থ এবং সংস্থান পায়। এই প্রবণতা বিরোধী ইউনিয়নগুলোকে দুর্বল করে দেয়। যেমন বামফ্রন্টের দুর্বলতার কারণে আইসা এবং স্টুডেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (এসএফআই) কমজোর হয়েছে।
তবে বিজেপির এই সময় এসে ব্যাপারটা অতো সরলও থাকেনি। ভারতে ক্যাম্পাসগুলোতে সরকার-বিরোধী ছাত্র নেতাদের ‘দেশদ্রোহী’ বা ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের এই কূটচাল রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে জাতীয়তাবাদী বনাম বিশ্বাসঘাতকতার ফ্রেমে বন্দী করছে। এই কৌশল কার্যত প্রতিরোধকে দুর্বল করে দেয় এবং মতামতের বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে, সমাজে বিতর্কের পরিবেশ সংকুচিত করে।
পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে অনেকে ছাত্ররাজনীতিকে প্রায়শই হিংসাত্মক এবং নোংরা বলে চিহ্নিত করেন। বিভিন্ন ইস্যুতে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার কারণে বলা হয়, ছাত্ররাজনীতি শিক্ষাকে প্রভাবিত করে। এই রাজনীতি ছাত্রদের কর্মজীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে। যেমন, কোনো কোম্পানি ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ হিসেবে চিহ্নিত ছাত্রকে নিয়োগ করতে চাইবে না।
অন্যদিকে, ইউনিয়ন-বিহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে। ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পারা একটি বড় দৃষ্টান্ত। তবে ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কিত হিংসা ও সংঘাত এবং নির্বাচনী অশান্তি এড়ানোর জন্য অনেক শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকাকে স্বাগত জানায়। ফলে, ছাত্ররা ক্রমেই ‘অরাজনৈতিক’ হয়ে ওঠে। এতে জাতীয় রাজনীতির প্রতি পুরো প্রজন্মের সচেতনতা ক্রমেই কমতে থাকে। যেমন বাংলাদেশে রাজনীতি পছন্দ না করা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রায় ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।
ভারতে ২০১৯ সাল ছিল ছাত্র অ্যাকটিভিজমের একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেএনইউ-এর ছাত্ররা উঠে দাঁড়ায়। পুলিশি নির্যাতনের পর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি আইআইটি এবং আইআইএম-এর মতো অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসেও সংহতি দেখা যায়।
বিশ্বজুড়ে ছাত্ররা বারবার বিভিন্ন আন্দোলনের মুখ হয়েছে। সম্প্রতি হংকং-এ প্রো-ডেমোক্রেসি আন্দোলনে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্গে পরিণত করে পুলিশি নির্যাতনের মুখোমুখি হয়। চিলিতে পিনোচেটের পতনের পর থেকে ছাত্ররা অসমতা, বেসরকারিকরণ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিবাদ করে। ছাত্ররা আগ্নেয়াস্ত্র আইন সংশোধন, এলজিবিটিকিউ+ অধিকার, শিক্ষা সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে। এতে স্পষ্ট যে রাজনীতি শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্র নয়; তরুণেরাও নীতি-নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
এ ছাড়া ছাত্ররা কিন্তু সবচেয়ে কার্যকর প্রেশার গ্রুপ হয়ে উঠতে পারে। যেমন, ভারতে প্রেশার গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে—ব্যবসায়ী গোষ্ঠী (যেমন সিআইআই, ফিক্কি), ট্রেড ইউনিয়ন (যেমন এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি), কৃষক গোষ্ঠী (যেমন অল ইন্ডিয়া কিষান সভা), ছাত্র সংগঠন, শিক্ষক সমিতি এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সংগঠন (যেমন কাস্ট ফেডারেশন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ)। ছাত্র সংগঠনগুলো স্বাধীনতার আগে থেকেই সক্রিয়, যেমন ১৯২৮ সালের অল বেঙ্গল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এবং ১৯৩৬ সালের এআইএসএফ। স্বাধীনতার পর, এগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়: যেমন—এনএসইউআই জাতীয় কংগ্রেসে, এসএফআই সিপিআই-এ, এবিভিপি বিজেপিতে ভিড়ে যায়। তারা শিক্ষা-সম্পর্কিত ইস্যু ছাড়াও জাতীয় বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করে।
সবদিক বিবেচনায় বলা যেতে পারে, ছাত্র সংগঠনগুলোতে শেষ পর্যন্ত অবধারিতভাবে জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলন ঘটলেও প্রতিরোধের সম্ভাবনাও যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। তবে হিংসা, দলীয় নিয়ন্ত্রণ এবং দমনমূলক কৌশল ছাত্রসংগঠনের এই সম্ভাবনাকে নষ্ট করে, সংগঠনগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ইউনিয়ন-বিহীন ক্যাম্পাসগুলো ছাত্রদের অধিকারহীন করে ফেলতে পারে। অথচ ছাত্র ইউনিয়ন সক্রিয় আছে এমন ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক সচেতনতা বাড়ে।
সুতরাং বলা যেতে পারে, ছাত্ররাজনীতি একটি দেশের গণতান্ত্রিক চর্চার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ছাত্রসংগঠনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বলতে গেলে তারা রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছে। পরবর্তীতেও ক্যাম্পাসেরসহ নানা জাতীয় ইস্যুতে তারা সোচ্চার থেকেছে এবং দাবি আদায় করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো জাতীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত থেকেই ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে। বলতে গেলে, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের ফলেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ বিশ্বব্যাপী ঐকমত্য তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। ফলে সরকারগুলোও এখন বেশ চাপে পড়েছে।
বিশ্বব্যাপী এসব উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে, বাংলাদেশের তরুণদেরও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আরও অংশগ্রহণ ইতিবাচক ফল দিতে পারে। প্রেশার গ্রুপ হিসেবে, ছাত্র সংগঠনগুলো যদি স্বাধীন এবং ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে তারা সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে পারে। অন্যথায়, এটি কেবল মূলধারার রাজনীতির ছায়া হয়ে থাকবে। তরুণেরা জনসংখ্যার একটি বড় অংশ—তাদের কণ্ঠস্বরকে উপেক্ষা করা মানে দেশের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকিতে ফেলা।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

বিশ্বজুড়েই ছাত্র ইউনিয়নগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে। ইতিহাস বলে, এই ছাত্ররাই সরকারকে দায়বদ্ধ করে তোলে এবং তরুণদের অধিকার রক্ষা করে। বাংলাদেশে অনেক ছাত্র নেতা পরবর্তীকালে মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে রাজনীতিতে অসাধারণ অবদান রেখেছেন। কিন্তু এর দুঃখজনক পরিণতি হলো, এই ছাত্ররাজনীতি একপর্যায়ে কার্যত তাদের আদর্শলগ্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এমনকি নির্লজ্জ লেজুড়বৃত্তি এবং ওই রাজনৈতিক দলের স্বার্থ রক্ষায় সহিংসতায় জড়িয়ে গেছে। সেই সঙ্গে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যেও ছাত্রনেতাদের নাম এসেছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে নতুন ছাত্ররাজনীতির প্রত্যাশা বেগবান হয়েছে। পূর্বের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে কেউ কেউ আবার ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার দাবিও তুলছে। এই দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশের প্রধান কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।
ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা কতখানি, এই ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতার ভূমিকা ও অবদান কী, পরবর্তীতে তথাকথিত মুরব্বি সংগঠনের লেজুড়বৃত্তিই কি ছাত্ররাজনীতির অনিবার্য পরিণতি?
এসব প্রশ্নের জবাব পেতে আমরা ভারতের অভিজ্ঞতা স্মরণ করতে পারি। ভারতের ছাত্ররাজনীতির ঐতিহাসিক পটভূমি, বর্তমান অবস্থা, প্রেশার গ্রুপ হিসেবে ভূমিকা এবং বিশ্বব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা—বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বুঝতেও সহায়তা করবে।
ভারতে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে তরুণ-যুবকেরা ছিলেন মূল শক্তি। ১৯১৯ সালের রাউলাট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধীর আন্দোলনে ছাত্ররা ব্যাপকভাবে অংশ নেয়। অসহযোগ আন্দোলনে গান্ধী ছাত্রদের স্কুল-কলেজ বয়কট করার আহ্বান জানান। তাঁরা রাস্তায় নেমে জাতীয় নেতাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ১৯২০ সালে প্রথম অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকেই ১৯৩৬ সালে অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস ফেডারেশন (এআইএসএফ)-এর জন্ম হয়। স্বদেশি আন্দোলনে ছাত্ররা ব্রিটিশ পণ্য বয়কট করে ভারতীয় পণ্যের প্রচার করে। ১৯৪২ সালের ভারত ছাড় আন্দোলনে ছাত্ররা গণ-সমাবেশ এবং প্রতিবাদ সংগঠিত করে। অনেক ছাত্রনেতা কারাবন্দী হন অথবা শহীদ হন।
স্বাধীনতার পর, ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকলেও, একটি একক ও চূড়ান্ত লক্ষ্যের অভাব দেখা যায়। ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র ইউনিয়নগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ে। এমনকি বামপন্থী সংগঠনগুলো যেমন এআইএসএফ কট্টর কমিউনিস্ট এবং গান্ধীবাদী সমাজতান্ত্রিক—এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়। ১৯৭০-এর দশকে একটি বড় আদর্শগত পরিবর্তন ঘটে। ১৯৬২,১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের তিনটি যুদ্ধ, অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং কংগ্রেস সরকারের সমাজতান্ত্রিক নীতির কারণে অসন্তোষ বাড়ে। ১৯৭৪ সালে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং সরকারি অপশাসনের বিরুদ্ধে বিহার এবং গুজরাটে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় ছাত্ররা। জয়প্রকাশ নারায়ণের ‘টোটাল রেভল্যুশন’ এই আন্দোলনকে শক্তি জোগায়। এই সময়ে আরএসএস-সমর্থিত অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) উত্থান ঘটে। তারা দ্রুতই নিজেদের কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
এই আন্দোলন থেকে উঠে আসা ছাত্র নেতারা যেমন অরুণ জেটলি, লালু প্রসাদ যাদব এবং রাম বিলাস পাসোয়ান পরবর্তীকালে মূলধারার রাজনীতিতে প্রভাবশালী হন। জেটলি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (ডিইউএসইউ)-এর সভাপতি ছিলেন এবং ইন্দিরার জরুরি অবস্থার (ইমার্জেন্সি) সময় কারাবন্দী হন। পরে তিনি বিজেপি সরকারের অর্থ, প্রতিরক্ষা এবং আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
ভারতের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেমন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ), যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতির জন্য বিখ্যাত। এখানে কংগ্রেস-সমর্থিত ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া (এনএসইউআই), আরএসএস-সমর্থিত এবিভিপি, বামপন্থী অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইসা) এবং নতুন গোষ্ঠী যেমন আম আদমি পার্টি-সমর্থিত ছাত্র যুব সংঘর্ষ সমিতি (সিওয়াইএসএস) এবং স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ইউনিয়ন যেমন বিরসা আম্বেদকর ফুলে স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বাপসা) সক্রিয়।
এখন প্রশ্ন হলো: ছাত্ররাজনীতি কি কেবল জাতীয় বা রাজ্য-স্তরের রাজনীতির প্রতিফলন, নাকি সরকারের বিরুদ্ধে সত্যিকারের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে?
সাধারণত দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র শাখা বেশি অর্থ এবং সংস্থান পায়। এই প্রবণতা বিরোধী ইউনিয়নগুলোকে দুর্বল করে দেয়। যেমন বামফ্রন্টের দুর্বলতার কারণে আইসা এবং স্টুডেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (এসএফআই) কমজোর হয়েছে।
তবে বিজেপির এই সময় এসে ব্যাপারটা অতো সরলও থাকেনি। ভারতে ক্যাম্পাসগুলোতে সরকার-বিরোধী ছাত্র নেতাদের ‘দেশদ্রোহী’ বা ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের এই কূটচাল রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে জাতীয়তাবাদী বনাম বিশ্বাসঘাতকতার ফ্রেমে বন্দী করছে। এই কৌশল কার্যত প্রতিরোধকে দুর্বল করে দেয় এবং মতামতের বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে, সমাজে বিতর্কের পরিবেশ সংকুচিত করে।
পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে অনেকে ছাত্ররাজনীতিকে প্রায়শই হিংসাত্মক এবং নোংরা বলে চিহ্নিত করেন। বিভিন্ন ইস্যুতে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার কারণে বলা হয়, ছাত্ররাজনীতি শিক্ষাকে প্রভাবিত করে। এই রাজনীতি ছাত্রদের কর্মজীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে। যেমন, কোনো কোম্পানি ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ হিসেবে চিহ্নিত ছাত্রকে নিয়োগ করতে চাইবে না।
অন্যদিকে, ইউনিয়ন-বিহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে। ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পারা একটি বড় দৃষ্টান্ত। তবে ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কিত হিংসা ও সংঘাত এবং নির্বাচনী অশান্তি এড়ানোর জন্য অনেক শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকাকে স্বাগত জানায়। ফলে, ছাত্ররা ক্রমেই ‘অরাজনৈতিক’ হয়ে ওঠে। এতে জাতীয় রাজনীতির প্রতি পুরো প্রজন্মের সচেতনতা ক্রমেই কমতে থাকে। যেমন বাংলাদেশে রাজনীতি পছন্দ না করা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রায় ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।
ভারতে ২০১৯ সাল ছিল ছাত্র অ্যাকটিভিজমের একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেএনইউ-এর ছাত্ররা উঠে দাঁড়ায়। পুলিশি নির্যাতনের পর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি আইআইটি এবং আইআইএম-এর মতো অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসেও সংহতি দেখা যায়।
বিশ্বজুড়ে ছাত্ররা বারবার বিভিন্ন আন্দোলনের মুখ হয়েছে। সম্প্রতি হংকং-এ প্রো-ডেমোক্রেসি আন্দোলনে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্গে পরিণত করে পুলিশি নির্যাতনের মুখোমুখি হয়। চিলিতে পিনোচেটের পতনের পর থেকে ছাত্ররা অসমতা, বেসরকারিকরণ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিবাদ করে। ছাত্ররা আগ্নেয়াস্ত্র আইন সংশোধন, এলজিবিটিকিউ+ অধিকার, শিক্ষা সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে। এতে স্পষ্ট যে রাজনীতি শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্র নয়; তরুণেরাও নীতি-নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
এ ছাড়া ছাত্ররা কিন্তু সবচেয়ে কার্যকর প্রেশার গ্রুপ হয়ে উঠতে পারে। যেমন, ভারতে প্রেশার গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে—ব্যবসায়ী গোষ্ঠী (যেমন সিআইআই, ফিক্কি), ট্রেড ইউনিয়ন (যেমন এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি), কৃষক গোষ্ঠী (যেমন অল ইন্ডিয়া কিষান সভা), ছাত্র সংগঠন, শিক্ষক সমিতি এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সংগঠন (যেমন কাস্ট ফেডারেশন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ)। ছাত্র সংগঠনগুলো স্বাধীনতার আগে থেকেই সক্রিয়, যেমন ১৯২৮ সালের অল বেঙ্গল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এবং ১৯৩৬ সালের এআইএসএফ। স্বাধীনতার পর, এগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়: যেমন—এনএসইউআই জাতীয় কংগ্রেসে, এসএফআই সিপিআই-এ, এবিভিপি বিজেপিতে ভিড়ে যায়। তারা শিক্ষা-সম্পর্কিত ইস্যু ছাড়াও জাতীয় বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করে।
সবদিক বিবেচনায় বলা যেতে পারে, ছাত্র সংগঠনগুলোতে শেষ পর্যন্ত অবধারিতভাবে জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলন ঘটলেও প্রতিরোধের সম্ভাবনাও যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। তবে হিংসা, দলীয় নিয়ন্ত্রণ এবং দমনমূলক কৌশল ছাত্রসংগঠনের এই সম্ভাবনাকে নষ্ট করে, সংগঠনগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ইউনিয়ন-বিহীন ক্যাম্পাসগুলো ছাত্রদের অধিকারহীন করে ফেলতে পারে। অথচ ছাত্র ইউনিয়ন সক্রিয় আছে এমন ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক সচেতনতা বাড়ে।
সুতরাং বলা যেতে পারে, ছাত্ররাজনীতি একটি দেশের গণতান্ত্রিক চর্চার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ছাত্রসংগঠনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বলতে গেলে তারা রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছে। পরবর্তীতেও ক্যাম্পাসেরসহ নানা জাতীয় ইস্যুতে তারা সোচ্চার থেকেছে এবং দাবি আদায় করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো জাতীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত থেকেই ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে। বলতে গেলে, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের ফলেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ বিশ্বব্যাপী ঐকমত্য তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। ফলে সরকারগুলোও এখন বেশ চাপে পড়েছে।
বিশ্বব্যাপী এসব উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে, বাংলাদেশের তরুণদেরও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আরও অংশগ্রহণ ইতিবাচক ফল দিতে পারে। প্রেশার গ্রুপ হিসেবে, ছাত্র সংগঠনগুলো যদি স্বাধীন এবং ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে তারা সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে পারে। অন্যথায়, এটি কেবল মূলধারার রাজনীতির ছায়া হয়ে থাকবে। তরুণেরা জনসংখ্যার একটি বড় অংশ—তাদের কণ্ঠস্বরকে উপেক্ষা করা মানে দেশের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকিতে ফেলা।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

বিশ্বজুড়েই ছাত্র ইউনিয়নগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে। ইতিহাস বলে, এই ছাত্ররাই সরকারকে দায়বদ্ধ করে তোলে এবং তরুণদের অধিকার রক্ষা করে। বাংলাদেশে অনেক ছাত্র নেতা পরবর্তীকালে মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ...
১১ আগস্ট ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়েই ছাত্র ইউনিয়নগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে। ইতিহাস বলে, এই ছাত্ররাই সরকারকে দায়বদ্ধ করে তোলে এবং তরুণদের অধিকার রক্ষা করে। বাংলাদেশে অনেক ছাত্র নেতা পরবর্তীকালে মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ...
১১ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

বিশ্বজুড়েই ছাত্র ইউনিয়নগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে। ইতিহাস বলে, এই ছাত্ররাই সরকারকে দায়বদ্ধ করে তোলে এবং তরুণদের অধিকার রক্ষা করে। বাংলাদেশে অনেক ছাত্র নেতা পরবর্তীকালে মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ...
১১ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্বজুড়েই ছাত্র ইউনিয়নগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে। ইতিহাস বলে, এই ছাত্ররাই সরকারকে দায়বদ্ধ করে তোলে এবং তরুণদের অধিকার রক্ষা করে। বাংলাদেশে অনেক ছাত্র নেতা পরবর্তীকালে মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ...
১১ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে