আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইউক্রেনের আকাশে-বাতাসে চ্যালেঞ্জ আর চ্যালেঞ্জ। আপাতদৃষ্টিতে যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ইউক্রেন এক দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু রণক্ষেত্রে থেকে মোটেও কোনো সুখবর আসছে না। রুশ বাহিনী ইউক্রেনীয় শহর সুমি দখলের দ্বারপ্রান্তে। এক সময়কার আড়াই লাখ মানুষের শহর এখন একপ্রকার জনশূন্য। দনবাসে রাশিয়া ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ক্রমেই পিছু হটতে বাধ্য করছে, ফলে এখনো রক্তের বন্যা বইছে। এরই মধ্যে, প্রতিনিয়ত শত শত রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে আছড়ে পড়ছে, কখনো কখনো তো এই ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
৩১ জুন মাঝে রাতে, ইউক্রেনে মার্কিন অস্ত্র সহায়তা হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই অবশ্য অস্ত্র সরবরাহ ধীরে ধীরে কমছিল। তবে সেদিন রাতে সব ধরনের অস্ত্র পাঠানো স্থগিত করা হয়, এমনকি কিছু বিমান মাঝ আকাশ থেকে ফিরে যায় ওয়াশিংটনে। পরে অবশ্য ট্রাম্প সেই স্থগিতাদেশ তুলে নেন। তবে, বিশ্লেষকেরা মনে করেন—ট্রাম্প এমনটা করেছিলেন মূলত, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করতে ইউক্রেনের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য।
তবে এসব তো গেল, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এবং সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের নাটক। কিন্তু নাটক এখানেই শেষ হয়নি। এর চেয়েও গুরুতর আশঙ্কা ও উদ্বেগপূর্ণ নাটক চলছে ইউক্রেনের রাজনীতিতে। দেশটির অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিভাজন, শুদ্ধি অভিযান ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পটভূমি দেশটিকে ভেতর থেকেই এমনভাবে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে, যা রুশ আক্রমণের চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতিকর।
গত জুনে ঘটে যাওয়া তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ইউক্রেনের ক্ষমতার অলিন্দে এক নতুন সুর তৈরি করেছে। এসব ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা আন্দ্রে ইয়ারমাক দেশের অভ্যন্তরে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে তাঁর ভূমিকা থেকে স্পষ্ট যে, তিনি নির্বাচিত না হয়েও দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। আন্তর্জাতিক মহলে তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও দেশের রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব এখন স্পষ্ট।
গত ২৩ জুন, ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ও সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী ওলেক্সেই চেরনিশভ দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এটি ইউক্রেনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পদস্থ রাজনীতিকের বিরুদ্ধে ওঠা প্রথম দুর্নীতি মামলা। ইউরোপে সরকারি সফরে থাকা অবস্থায় তিনি দেশে ফিরতে বিলম্ব করেন, যা এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। কারণ, যে মন্ত্রী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে থাকা ইউক্রেনীয়দের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে সাহায্য করেন, তিনিই নিজেই নিজের নির্বাসন পরিকল্পনা করছেন। একই সময়ে, মন্ত্রিসভায় আসন্ন রদবদলের যে সতর্কবার্তা দেওয়া হয় তাতে এই ধারণা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে,৩৯ বছরে ইউলিয়া সুইরিদেঙ্কোকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের সম্ভাবনা আছে। সুইরিদেঙ্কোকে ইয়ারমাকের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়।
জুনের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল—ইউক্রেনের অত্যন্ত স্বাধীনচেতা গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভকে সরানোর এক নতুন প্রচেষ্টা। তবে এটি আপাতত ব্যর্থ হয়েছে। একাধিক সূত্র বলছে, এই তিনটি ঘটনার পেছনেই আন্দ্রে ইয়ারমাকের ‘অদৃশ্য হাত’ ছিল। তিনি রাষ্ট্রপতির কার্যালয় পরিচালনা করলেও বাস্তবে তিনিই অলিখিত সরকারপ্রধান।
আন্দ্রে ইয়ারমাক যুদ্ধের সময় আরও বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে তিনি টিভি ও চলচ্চিত্র প্রযোজক, আইনজীবী, ফ্যাশন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এবং এমনকি ছোট ব্যবসার ‘দালাল’ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
ইয়ারমাকের রাজনৈতিক উত্থান অপ্রত্যাশিত ও দ্রুত। তবে অনেকেই এতে প্রভাবিত নন। সম্প্রতি পলিটিকো ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে ইয়ারমাকের কূটনীতিতে ‘লেকচার দেওয়ার’ ধরন নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে অসন্তোষের কথা বলা হয়েছে। কেউ কেউ এই ইয়ারমাককেই ইউক্রেন প্রসঙ্গে আমেরিকানদের ‘সামগ্রিক বিরক্তির’ জন্য দায়ী করেন। এই প্রতিবেদনগুলো ওয়াশিংটনে তাঁর জন্য দরজা বন্ধ হয়ে আসছে এমন এক বাস্তব চিত্রও তুলে ধরে। এর ফলে, অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে, ইয়ারমাক তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করছেন। কিন্তু জুনের তিনটি তিনটি ঘটনা উল্টোটা প্রমাণ করেছে যে, তিনি অভ্যন্তরীণভাবে আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন।
চেরনিশভের বিরুদ্ধে তদন্তের আদেশ ইয়ারমাক দিয়েছেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। এই উপপ্রধানমন্ত্রীর সহযোগীরা তাঁর অনুমোদিত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কম দামে অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন—এমন অভিযোগে গত এক বছর ধরে তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, ইয়ারমাক অন্য অনেক মামলা আটকে রাখলেও ইচ্ছাকৃতভাবেই এই মামলা এগিয়ে নিতে দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তাদের দাবি, চেরনিশভের আসল অপরাধ—তিনি ইয়ারমাকের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রথমত, চেরনিশভ আমেরিকানদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজেকে বিকল্প মাধ্যম হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয়ত, তাঁর পতনের ফলে ইয়ারমাকের ঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ সুইরিদেঙ্কোর পদোন্নতির পথ পরিষ্কার হয়।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহালকে সরিয়ে ইয়ারমাকের পুতুলকে আনার ধারণা নতুন নয়। এক বছর আগে জেলেনস্কি এই পরিবর্তন আটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে ইয়ারমাক আরও শক্তিশালী হয়েছেন এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই পরিবর্তনের ওপর এক পার্লামেন্টারি ভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, সমাজনীতি এবং সম্ভবত অর্থ মন্ত্রণালয়েও পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আন্দ্রে জাল গুটিয়ে আনছেন, তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ করছেন। এসব পদে যারা নিয়োগ পাবেন বেশির ভাগ তাঁর লোক।’
জুনে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সেবায় আরও নাটকীয় শুদ্ধি অভিযান আসন্ন ছিল। ইয়ারমাক ও গোয়েন্দাপ্রধান জেনারেল কিরিলো বুদানভের মধ্যে ৩ বছরের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে এ মাসেই। বুদানভকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি ছিল। ইয়ারমাকের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জেনারেল বুদানভকে ‘অস্থির বিপ্লবী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। তাদের দাবি, বুদানভ নিজস্ব রাজনৈতিক মেশিন তৈরি করছেন।
ইউক্রেন সরকারের এক অভ্যন্তরীণ সূত্র বলেছে, ‘প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের ৯০ শতাংশ লোকই মনে করে তিনি (বুদানভ) পাগল এবং ১০ শতাংশ মনে করে তিনি একজন প্রতিভাবান।’ অন্যদিকে, গোয়েন্দাপ্রধানের মিত্ররা তাঁকে নিবেদিতপ্রাণ রাষ্ট্রীয় কর্মচারী এবং প্রেসিডেন্টকে কঠিন সত্য বলতে সক্ষম একজন হিসেবে অভিহিত করেন। কিন্তু জুনের মাঝামাঝি সময়ে, তাদের অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন যে, বুদানভের ইয়ারমাককে উৎখাত করার ‘নবম প্রচেষ্টা’ সফল হবে। তবে সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নিজের চিরাচরিত কৌশল ব্যবহার করে জেনারেল বুদানভ আরও একবার প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন। ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিন জানতে পেরেছে যে, হোয়াইট হাউসের বারংবার সতর্কবার্তা বুদানভকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে, অন্তত এখনো পর্যন্ত।
জেনারেল বুদানভের টিকে যাওয়া প্রমাণ করে যে, এখনো প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, ইয়ারমাক তাঁর সিস্টেমে যতই ভূমিকা পালন করুন না কেন। ইয়ারমাক নিজের জোরে ক্ষমতা প্রয়োগ করেন, এমনটা মনে হয় না, বরং এটি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক অদ্ভুত ‘নির্ভরশীলতা’ থেকে উদ্ভূত, যা কোনো সূত্রই পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারছে না।
কখনো কখনো, ইয়ারমাক কেবলই জেলেনস্কির জেদি সহযোগী এবং জেদি জেলেনস্কির প্রতিনিধি। কিন্তু কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন, ইয়ারমাক প্রেসিডেন্টের কাছে যে তথ্যের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছেন তা বাস্তব। কেউ কেউ তো মনে করেন, ইয়ারমাক জেলেনস্কির কাছে যাওয়া অন্তত ৮৫ শতাংশ তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে। এই বিষয়টি সরকারের কেন্দ্রস্থলে ষড়যন্ত্রের এক বিপজ্জনক পরিবেশ তৈরি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সূত্র বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট কী জানতে পারবেন, সেটা নির্ধারণ করেন আন্দ্রে ইয়ারমাক। ৬ বছর ধরে একই ঘরে থেকে প্রেসিডেন্টকে নিজের মতামত দিয়ে যাচ্ছেন। এটি কার্যত একাই সব—এর মতো পরিস্থিতি।’
প্রাসাদ ষড়যন্ত্র রাজনীতি কোনো নতুন ঘটনা নয়, এবং সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধের বিধ্বস্ত একটি দেশে এটি অপ্রত্যাশিতও নয়। ইউক্রেনের ক্লান্ত নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্রীভূত না করলেই বরং অবাক হতে হতো। কিন্তু দেশের বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি—যেখানে প্রতিদিন কৌশলগত পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে—কেন্দ্রীভূত ও অকার্যকর ক্ষমতা কাঠামোকে বিপজ্জনক করে তুলছে। শত্রুদের এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের জনজীবনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার জন্য নির্বাহী ক্ষমতার অনুপযুক্ত ব্যবহারের বিষয়েও উদ্বেগ রয়েছে। একটি সমাধান হতে পারে—স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, কিন্তু এটা হবে এমন আশা করা ঠিক নয়। এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হতাশ হয়ে বলেন, ‘রাশিয়ানরা আমাদের অল্প আঁচে ধীরে ধীরে ঝলসে দিচ্ছে, আর আমরা ঘরে বসে গুরুতর পরিণতির মূর্খতার খেলা খেলছি।’
দ্য ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণ

ইউক্রেনের আকাশে-বাতাসে চ্যালেঞ্জ আর চ্যালেঞ্জ। আপাতদৃষ্টিতে যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ইউক্রেন এক দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু রণক্ষেত্রে থেকে মোটেও কোনো সুখবর আসছে না। রুশ বাহিনী ইউক্রেনীয় শহর সুমি দখলের দ্বারপ্রান্তে। এক সময়কার আড়াই লাখ মানুষের শহর এখন একপ্রকার জনশূন্য। দনবাসে রাশিয়া ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ক্রমেই পিছু হটতে বাধ্য করছে, ফলে এখনো রক্তের বন্যা বইছে। এরই মধ্যে, প্রতিনিয়ত শত শত রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে আছড়ে পড়ছে, কখনো কখনো তো এই ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
৩১ জুন মাঝে রাতে, ইউক্রেনে মার্কিন অস্ত্র সহায়তা হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই অবশ্য অস্ত্র সরবরাহ ধীরে ধীরে কমছিল। তবে সেদিন রাতে সব ধরনের অস্ত্র পাঠানো স্থগিত করা হয়, এমনকি কিছু বিমান মাঝ আকাশ থেকে ফিরে যায় ওয়াশিংটনে। পরে অবশ্য ট্রাম্প সেই স্থগিতাদেশ তুলে নেন। তবে, বিশ্লেষকেরা মনে করেন—ট্রাম্প এমনটা করেছিলেন মূলত, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করতে ইউক্রেনের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য।
তবে এসব তো গেল, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এবং সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের নাটক। কিন্তু নাটক এখানেই শেষ হয়নি। এর চেয়েও গুরুতর আশঙ্কা ও উদ্বেগপূর্ণ নাটক চলছে ইউক্রেনের রাজনীতিতে। দেশটির অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিভাজন, শুদ্ধি অভিযান ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পটভূমি দেশটিকে ভেতর থেকেই এমনভাবে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে, যা রুশ আক্রমণের চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতিকর।
গত জুনে ঘটে যাওয়া তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ইউক্রেনের ক্ষমতার অলিন্দে এক নতুন সুর তৈরি করেছে। এসব ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা আন্দ্রে ইয়ারমাক দেশের অভ্যন্তরে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে তাঁর ভূমিকা থেকে স্পষ্ট যে, তিনি নির্বাচিত না হয়েও দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। আন্তর্জাতিক মহলে তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও দেশের রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব এখন স্পষ্ট।
গত ২৩ জুন, ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ও সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী ওলেক্সেই চেরনিশভ দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এটি ইউক্রেনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পদস্থ রাজনীতিকের বিরুদ্ধে ওঠা প্রথম দুর্নীতি মামলা। ইউরোপে সরকারি সফরে থাকা অবস্থায় তিনি দেশে ফিরতে বিলম্ব করেন, যা এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। কারণ, যে মন্ত্রী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে থাকা ইউক্রেনীয়দের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে সাহায্য করেন, তিনিই নিজেই নিজের নির্বাসন পরিকল্পনা করছেন। একই সময়ে, মন্ত্রিসভায় আসন্ন রদবদলের যে সতর্কবার্তা দেওয়া হয় তাতে এই ধারণা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে,৩৯ বছরে ইউলিয়া সুইরিদেঙ্কোকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের সম্ভাবনা আছে। সুইরিদেঙ্কোকে ইয়ারমাকের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়।
জুনের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল—ইউক্রেনের অত্যন্ত স্বাধীনচেতা গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভকে সরানোর এক নতুন প্রচেষ্টা। তবে এটি আপাতত ব্যর্থ হয়েছে। একাধিক সূত্র বলছে, এই তিনটি ঘটনার পেছনেই আন্দ্রে ইয়ারমাকের ‘অদৃশ্য হাত’ ছিল। তিনি রাষ্ট্রপতির কার্যালয় পরিচালনা করলেও বাস্তবে তিনিই অলিখিত সরকারপ্রধান।
আন্দ্রে ইয়ারমাক যুদ্ধের সময় আরও বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে তিনি টিভি ও চলচ্চিত্র প্রযোজক, আইনজীবী, ফ্যাশন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এবং এমনকি ছোট ব্যবসার ‘দালাল’ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
ইয়ারমাকের রাজনৈতিক উত্থান অপ্রত্যাশিত ও দ্রুত। তবে অনেকেই এতে প্রভাবিত নন। সম্প্রতি পলিটিকো ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে ইয়ারমাকের কূটনীতিতে ‘লেকচার দেওয়ার’ ধরন নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে অসন্তোষের কথা বলা হয়েছে। কেউ কেউ এই ইয়ারমাককেই ইউক্রেন প্রসঙ্গে আমেরিকানদের ‘সামগ্রিক বিরক্তির’ জন্য দায়ী করেন। এই প্রতিবেদনগুলো ওয়াশিংটনে তাঁর জন্য দরজা বন্ধ হয়ে আসছে এমন এক বাস্তব চিত্রও তুলে ধরে। এর ফলে, অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে, ইয়ারমাক তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করছেন। কিন্তু জুনের তিনটি তিনটি ঘটনা উল্টোটা প্রমাণ করেছে যে, তিনি অভ্যন্তরীণভাবে আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন।
চেরনিশভের বিরুদ্ধে তদন্তের আদেশ ইয়ারমাক দিয়েছেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। এই উপপ্রধানমন্ত্রীর সহযোগীরা তাঁর অনুমোদিত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কম দামে অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন—এমন অভিযোগে গত এক বছর ধরে তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, ইয়ারমাক অন্য অনেক মামলা আটকে রাখলেও ইচ্ছাকৃতভাবেই এই মামলা এগিয়ে নিতে দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তাদের দাবি, চেরনিশভের আসল অপরাধ—তিনি ইয়ারমাকের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রথমত, চেরনিশভ আমেরিকানদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজেকে বিকল্প মাধ্যম হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয়ত, তাঁর পতনের ফলে ইয়ারমাকের ঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ সুইরিদেঙ্কোর পদোন্নতির পথ পরিষ্কার হয়।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহালকে সরিয়ে ইয়ারমাকের পুতুলকে আনার ধারণা নতুন নয়। এক বছর আগে জেলেনস্কি এই পরিবর্তন আটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে ইয়ারমাক আরও শক্তিশালী হয়েছেন এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই পরিবর্তনের ওপর এক পার্লামেন্টারি ভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, সমাজনীতি এবং সম্ভবত অর্থ মন্ত্রণালয়েও পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আন্দ্রে জাল গুটিয়ে আনছেন, তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ করছেন। এসব পদে যারা নিয়োগ পাবেন বেশির ভাগ তাঁর লোক।’
জুনে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সেবায় আরও নাটকীয় শুদ্ধি অভিযান আসন্ন ছিল। ইয়ারমাক ও গোয়েন্দাপ্রধান জেনারেল কিরিলো বুদানভের মধ্যে ৩ বছরের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে এ মাসেই। বুদানভকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি ছিল। ইয়ারমাকের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জেনারেল বুদানভকে ‘অস্থির বিপ্লবী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। তাদের দাবি, বুদানভ নিজস্ব রাজনৈতিক মেশিন তৈরি করছেন।
ইউক্রেন সরকারের এক অভ্যন্তরীণ সূত্র বলেছে, ‘প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের ৯০ শতাংশ লোকই মনে করে তিনি (বুদানভ) পাগল এবং ১০ শতাংশ মনে করে তিনি একজন প্রতিভাবান।’ অন্যদিকে, গোয়েন্দাপ্রধানের মিত্ররা তাঁকে নিবেদিতপ্রাণ রাষ্ট্রীয় কর্মচারী এবং প্রেসিডেন্টকে কঠিন সত্য বলতে সক্ষম একজন হিসেবে অভিহিত করেন। কিন্তু জুনের মাঝামাঝি সময়ে, তাদের অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন যে, বুদানভের ইয়ারমাককে উৎখাত করার ‘নবম প্রচেষ্টা’ সফল হবে। তবে সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নিজের চিরাচরিত কৌশল ব্যবহার করে জেনারেল বুদানভ আরও একবার প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন। ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিন জানতে পেরেছে যে, হোয়াইট হাউসের বারংবার সতর্কবার্তা বুদানভকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে, অন্তত এখনো পর্যন্ত।
জেনারেল বুদানভের টিকে যাওয়া প্রমাণ করে যে, এখনো প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, ইয়ারমাক তাঁর সিস্টেমে যতই ভূমিকা পালন করুন না কেন। ইয়ারমাক নিজের জোরে ক্ষমতা প্রয়োগ করেন, এমনটা মনে হয় না, বরং এটি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক অদ্ভুত ‘নির্ভরশীলতা’ থেকে উদ্ভূত, যা কোনো সূত্রই পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারছে না।
কখনো কখনো, ইয়ারমাক কেবলই জেলেনস্কির জেদি সহযোগী এবং জেদি জেলেনস্কির প্রতিনিধি। কিন্তু কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন, ইয়ারমাক প্রেসিডেন্টের কাছে যে তথ্যের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছেন তা বাস্তব। কেউ কেউ তো মনে করেন, ইয়ারমাক জেলেনস্কির কাছে যাওয়া অন্তত ৮৫ শতাংশ তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে। এই বিষয়টি সরকারের কেন্দ্রস্থলে ষড়যন্ত্রের এক বিপজ্জনক পরিবেশ তৈরি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সূত্র বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট কী জানতে পারবেন, সেটা নির্ধারণ করেন আন্দ্রে ইয়ারমাক। ৬ বছর ধরে একই ঘরে থেকে প্রেসিডেন্টকে নিজের মতামত দিয়ে যাচ্ছেন। এটি কার্যত একাই সব—এর মতো পরিস্থিতি।’
প্রাসাদ ষড়যন্ত্র রাজনীতি কোনো নতুন ঘটনা নয়, এবং সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধের বিধ্বস্ত একটি দেশে এটি অপ্রত্যাশিতও নয়। ইউক্রেনের ক্লান্ত নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্রীভূত না করলেই বরং অবাক হতে হতো। কিন্তু দেশের বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি—যেখানে প্রতিদিন কৌশলগত পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে—কেন্দ্রীভূত ও অকার্যকর ক্ষমতা কাঠামোকে বিপজ্জনক করে তুলছে। শত্রুদের এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের জনজীবনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার জন্য নির্বাহী ক্ষমতার অনুপযুক্ত ব্যবহারের বিষয়েও উদ্বেগ রয়েছে। একটি সমাধান হতে পারে—স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, কিন্তু এটা হবে এমন আশা করা ঠিক নয়। এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হতাশ হয়ে বলেন, ‘রাশিয়ানরা আমাদের অল্প আঁচে ধীরে ধীরে ঝলসে দিচ্ছে, আর আমরা ঘরে বসে গুরুতর পরিণতির মূর্খতার খেলা খেলছি।’
দ্য ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইউক্রেনের আকাশে-বাতাসে চ্যালেঞ্জ আর চ্যালেঞ্জ। আপাতদৃষ্টিতে যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ইউক্রেন এক দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু রণক্ষেত্রে থেকে মোটেও কোনো সুখবর আসছে না। রুশ বাহিনী ইউক্রেনীয় শহর সুমি দখলের দ্বারপ্রান্তে। এক সময়কার আড়াই লাখ মানুষের শহর এখন একপ্রকার জনশূন্য। দনবাসে রাশিয়া ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ক্রমেই পিছু হটতে বাধ্য করছে, ফলে এখনো রক্তের বন্যা বইছে। এরই মধ্যে, প্রতিনিয়ত শত শত রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে আছড়ে পড়ছে, কখনো কখনো তো এই ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
৩১ জুন মাঝে রাতে, ইউক্রেনে মার্কিন অস্ত্র সহায়তা হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই অবশ্য অস্ত্র সরবরাহ ধীরে ধীরে কমছিল। তবে সেদিন রাতে সব ধরনের অস্ত্র পাঠানো স্থগিত করা হয়, এমনকি কিছু বিমান মাঝ আকাশ থেকে ফিরে যায় ওয়াশিংটনে। পরে অবশ্য ট্রাম্প সেই স্থগিতাদেশ তুলে নেন। তবে, বিশ্লেষকেরা মনে করেন—ট্রাম্প এমনটা করেছিলেন মূলত, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করতে ইউক্রেনের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য।
তবে এসব তো গেল, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এবং সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের নাটক। কিন্তু নাটক এখানেই শেষ হয়নি। এর চেয়েও গুরুতর আশঙ্কা ও উদ্বেগপূর্ণ নাটক চলছে ইউক্রেনের রাজনীতিতে। দেশটির অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিভাজন, শুদ্ধি অভিযান ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পটভূমি দেশটিকে ভেতর থেকেই এমনভাবে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে, যা রুশ আক্রমণের চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতিকর।
গত জুনে ঘটে যাওয়া তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ইউক্রেনের ক্ষমতার অলিন্দে এক নতুন সুর তৈরি করেছে। এসব ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা আন্দ্রে ইয়ারমাক দেশের অভ্যন্তরে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে তাঁর ভূমিকা থেকে স্পষ্ট যে, তিনি নির্বাচিত না হয়েও দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। আন্তর্জাতিক মহলে তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও দেশের রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব এখন স্পষ্ট।
গত ২৩ জুন, ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ও সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী ওলেক্সেই চেরনিশভ দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এটি ইউক্রেনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পদস্থ রাজনীতিকের বিরুদ্ধে ওঠা প্রথম দুর্নীতি মামলা। ইউরোপে সরকারি সফরে থাকা অবস্থায় তিনি দেশে ফিরতে বিলম্ব করেন, যা এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। কারণ, যে মন্ত্রী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে থাকা ইউক্রেনীয়দের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে সাহায্য করেন, তিনিই নিজেই নিজের নির্বাসন পরিকল্পনা করছেন। একই সময়ে, মন্ত্রিসভায় আসন্ন রদবদলের যে সতর্কবার্তা দেওয়া হয় তাতে এই ধারণা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে,৩৯ বছরে ইউলিয়া সুইরিদেঙ্কোকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের সম্ভাবনা আছে। সুইরিদেঙ্কোকে ইয়ারমাকের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়।
জুনের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল—ইউক্রেনের অত্যন্ত স্বাধীনচেতা গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভকে সরানোর এক নতুন প্রচেষ্টা। তবে এটি আপাতত ব্যর্থ হয়েছে। একাধিক সূত্র বলছে, এই তিনটি ঘটনার পেছনেই আন্দ্রে ইয়ারমাকের ‘অদৃশ্য হাত’ ছিল। তিনি রাষ্ট্রপতির কার্যালয় পরিচালনা করলেও বাস্তবে তিনিই অলিখিত সরকারপ্রধান।
আন্দ্রে ইয়ারমাক যুদ্ধের সময় আরও বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে তিনি টিভি ও চলচ্চিত্র প্রযোজক, আইনজীবী, ফ্যাশন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এবং এমনকি ছোট ব্যবসার ‘দালাল’ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
ইয়ারমাকের রাজনৈতিক উত্থান অপ্রত্যাশিত ও দ্রুত। তবে অনেকেই এতে প্রভাবিত নন। সম্প্রতি পলিটিকো ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে ইয়ারমাকের কূটনীতিতে ‘লেকচার দেওয়ার’ ধরন নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে অসন্তোষের কথা বলা হয়েছে। কেউ কেউ এই ইয়ারমাককেই ইউক্রেন প্রসঙ্গে আমেরিকানদের ‘সামগ্রিক বিরক্তির’ জন্য দায়ী করেন। এই প্রতিবেদনগুলো ওয়াশিংটনে তাঁর জন্য দরজা বন্ধ হয়ে আসছে এমন এক বাস্তব চিত্রও তুলে ধরে। এর ফলে, অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে, ইয়ারমাক তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করছেন। কিন্তু জুনের তিনটি তিনটি ঘটনা উল্টোটা প্রমাণ করেছে যে, তিনি অভ্যন্তরীণভাবে আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন।
চেরনিশভের বিরুদ্ধে তদন্তের আদেশ ইয়ারমাক দিয়েছেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। এই উপপ্রধানমন্ত্রীর সহযোগীরা তাঁর অনুমোদিত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কম দামে অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন—এমন অভিযোগে গত এক বছর ধরে তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, ইয়ারমাক অন্য অনেক মামলা আটকে রাখলেও ইচ্ছাকৃতভাবেই এই মামলা এগিয়ে নিতে দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তাদের দাবি, চেরনিশভের আসল অপরাধ—তিনি ইয়ারমাকের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রথমত, চেরনিশভ আমেরিকানদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজেকে বিকল্প মাধ্যম হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয়ত, তাঁর পতনের ফলে ইয়ারমাকের ঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ সুইরিদেঙ্কোর পদোন্নতির পথ পরিষ্কার হয়।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহালকে সরিয়ে ইয়ারমাকের পুতুলকে আনার ধারণা নতুন নয়। এক বছর আগে জেলেনস্কি এই পরিবর্তন আটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে ইয়ারমাক আরও শক্তিশালী হয়েছেন এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই পরিবর্তনের ওপর এক পার্লামেন্টারি ভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, সমাজনীতি এবং সম্ভবত অর্থ মন্ত্রণালয়েও পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আন্দ্রে জাল গুটিয়ে আনছেন, তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ করছেন। এসব পদে যারা নিয়োগ পাবেন বেশির ভাগ তাঁর লোক।’
জুনে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সেবায় আরও নাটকীয় শুদ্ধি অভিযান আসন্ন ছিল। ইয়ারমাক ও গোয়েন্দাপ্রধান জেনারেল কিরিলো বুদানভের মধ্যে ৩ বছরের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে এ মাসেই। বুদানভকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি ছিল। ইয়ারমাকের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জেনারেল বুদানভকে ‘অস্থির বিপ্লবী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। তাদের দাবি, বুদানভ নিজস্ব রাজনৈতিক মেশিন তৈরি করছেন।
ইউক্রেন সরকারের এক অভ্যন্তরীণ সূত্র বলেছে, ‘প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের ৯০ শতাংশ লোকই মনে করে তিনি (বুদানভ) পাগল এবং ১০ শতাংশ মনে করে তিনি একজন প্রতিভাবান।’ অন্যদিকে, গোয়েন্দাপ্রধানের মিত্ররা তাঁকে নিবেদিতপ্রাণ রাষ্ট্রীয় কর্মচারী এবং প্রেসিডেন্টকে কঠিন সত্য বলতে সক্ষম একজন হিসেবে অভিহিত করেন। কিন্তু জুনের মাঝামাঝি সময়ে, তাদের অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন যে, বুদানভের ইয়ারমাককে উৎখাত করার ‘নবম প্রচেষ্টা’ সফল হবে। তবে সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নিজের চিরাচরিত কৌশল ব্যবহার করে জেনারেল বুদানভ আরও একবার প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন। ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিন জানতে পেরেছে যে, হোয়াইট হাউসের বারংবার সতর্কবার্তা বুদানভকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে, অন্তত এখনো পর্যন্ত।
জেনারেল বুদানভের টিকে যাওয়া প্রমাণ করে যে, এখনো প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, ইয়ারমাক তাঁর সিস্টেমে যতই ভূমিকা পালন করুন না কেন। ইয়ারমাক নিজের জোরে ক্ষমতা প্রয়োগ করেন, এমনটা মনে হয় না, বরং এটি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক অদ্ভুত ‘নির্ভরশীলতা’ থেকে উদ্ভূত, যা কোনো সূত্রই পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারছে না।
কখনো কখনো, ইয়ারমাক কেবলই জেলেনস্কির জেদি সহযোগী এবং জেদি জেলেনস্কির প্রতিনিধি। কিন্তু কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন, ইয়ারমাক প্রেসিডেন্টের কাছে যে তথ্যের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছেন তা বাস্তব। কেউ কেউ তো মনে করেন, ইয়ারমাক জেলেনস্কির কাছে যাওয়া অন্তত ৮৫ শতাংশ তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে। এই বিষয়টি সরকারের কেন্দ্রস্থলে ষড়যন্ত্রের এক বিপজ্জনক পরিবেশ তৈরি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সূত্র বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট কী জানতে পারবেন, সেটা নির্ধারণ করেন আন্দ্রে ইয়ারমাক। ৬ বছর ধরে একই ঘরে থেকে প্রেসিডেন্টকে নিজের মতামত দিয়ে যাচ্ছেন। এটি কার্যত একাই সব—এর মতো পরিস্থিতি।’
প্রাসাদ ষড়যন্ত্র রাজনীতি কোনো নতুন ঘটনা নয়, এবং সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধের বিধ্বস্ত একটি দেশে এটি অপ্রত্যাশিতও নয়। ইউক্রেনের ক্লান্ত নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্রীভূত না করলেই বরং অবাক হতে হতো। কিন্তু দেশের বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি—যেখানে প্রতিদিন কৌশলগত পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে—কেন্দ্রীভূত ও অকার্যকর ক্ষমতা কাঠামোকে বিপজ্জনক করে তুলছে। শত্রুদের এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের জনজীবনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার জন্য নির্বাহী ক্ষমতার অনুপযুক্ত ব্যবহারের বিষয়েও উদ্বেগ রয়েছে। একটি সমাধান হতে পারে—স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, কিন্তু এটা হবে এমন আশা করা ঠিক নয়। এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হতাশ হয়ে বলেন, ‘রাশিয়ানরা আমাদের অল্প আঁচে ধীরে ধীরে ঝলসে দিচ্ছে, আর আমরা ঘরে বসে গুরুতর পরিণতির মূর্খতার খেলা খেলছি।’
দ্য ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণ

ইউক্রেনের আকাশে-বাতাসে চ্যালেঞ্জ আর চ্যালেঞ্জ। আপাতদৃষ্টিতে যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ইউক্রেন এক দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু রণক্ষেত্রে থেকে মোটেও কোনো সুখবর আসছে না। রুশ বাহিনী ইউক্রেনীয় শহর সুমি দখলের দ্বারপ্রান্তে। এক সময়কার আড়াই লাখ মানুষের শহর এখন একপ্রকার জনশূন্য। দনবাসে রাশিয়া ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ক্রমেই পিছু হটতে বাধ্য করছে, ফলে এখনো রক্তের বন্যা বইছে। এরই মধ্যে, প্রতিনিয়ত শত শত রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে আছড়ে পড়ছে, কখনো কখনো তো এই ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
৩১ জুন মাঝে রাতে, ইউক্রেনে মার্কিন অস্ত্র সহায়তা হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই অবশ্য অস্ত্র সরবরাহ ধীরে ধীরে কমছিল। তবে সেদিন রাতে সব ধরনের অস্ত্র পাঠানো স্থগিত করা হয়, এমনকি কিছু বিমান মাঝ আকাশ থেকে ফিরে যায় ওয়াশিংটনে। পরে অবশ্য ট্রাম্প সেই স্থগিতাদেশ তুলে নেন। তবে, বিশ্লেষকেরা মনে করেন—ট্রাম্প এমনটা করেছিলেন মূলত, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করতে ইউক্রেনের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য।
তবে এসব তো গেল, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এবং সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের নাটক। কিন্তু নাটক এখানেই শেষ হয়নি। এর চেয়েও গুরুতর আশঙ্কা ও উদ্বেগপূর্ণ নাটক চলছে ইউক্রেনের রাজনীতিতে। দেশটির অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিভাজন, শুদ্ধি অভিযান ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পটভূমি দেশটিকে ভেতর থেকেই এমনভাবে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে, যা রুশ আক্রমণের চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতিকর।
গত জুনে ঘটে যাওয়া তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ইউক্রেনের ক্ষমতার অলিন্দে এক নতুন সুর তৈরি করেছে। এসব ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা আন্দ্রে ইয়ারমাক দেশের অভ্যন্তরে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে তাঁর ভূমিকা থেকে স্পষ্ট যে, তিনি নির্বাচিত না হয়েও দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। আন্তর্জাতিক মহলে তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও দেশের রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব এখন স্পষ্ট।
গত ২৩ জুন, ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ও সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী ওলেক্সেই চেরনিশভ দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এটি ইউক্রেনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পদস্থ রাজনীতিকের বিরুদ্ধে ওঠা প্রথম দুর্নীতি মামলা। ইউরোপে সরকারি সফরে থাকা অবস্থায় তিনি দেশে ফিরতে বিলম্ব করেন, যা এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। কারণ, যে মন্ত্রী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে থাকা ইউক্রেনীয়দের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে সাহায্য করেন, তিনিই নিজেই নিজের নির্বাসন পরিকল্পনা করছেন। একই সময়ে, মন্ত্রিসভায় আসন্ন রদবদলের যে সতর্কবার্তা দেওয়া হয় তাতে এই ধারণা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে,৩৯ বছরে ইউলিয়া সুইরিদেঙ্কোকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের সম্ভাবনা আছে। সুইরিদেঙ্কোকে ইয়ারমাকের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়।
জুনের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল—ইউক্রেনের অত্যন্ত স্বাধীনচেতা গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভকে সরানোর এক নতুন প্রচেষ্টা। তবে এটি আপাতত ব্যর্থ হয়েছে। একাধিক সূত্র বলছে, এই তিনটি ঘটনার পেছনেই আন্দ্রে ইয়ারমাকের ‘অদৃশ্য হাত’ ছিল। তিনি রাষ্ট্রপতির কার্যালয় পরিচালনা করলেও বাস্তবে তিনিই অলিখিত সরকারপ্রধান।
আন্দ্রে ইয়ারমাক যুদ্ধের সময় আরও বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে তিনি টিভি ও চলচ্চিত্র প্রযোজক, আইনজীবী, ফ্যাশন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এবং এমনকি ছোট ব্যবসার ‘দালাল’ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
ইয়ারমাকের রাজনৈতিক উত্থান অপ্রত্যাশিত ও দ্রুত। তবে অনেকেই এতে প্রভাবিত নন। সম্প্রতি পলিটিকো ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে ইয়ারমাকের কূটনীতিতে ‘লেকচার দেওয়ার’ ধরন নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে অসন্তোষের কথা বলা হয়েছে। কেউ কেউ এই ইয়ারমাককেই ইউক্রেন প্রসঙ্গে আমেরিকানদের ‘সামগ্রিক বিরক্তির’ জন্য দায়ী করেন। এই প্রতিবেদনগুলো ওয়াশিংটনে তাঁর জন্য দরজা বন্ধ হয়ে আসছে এমন এক বাস্তব চিত্রও তুলে ধরে। এর ফলে, অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে, ইয়ারমাক তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করছেন। কিন্তু জুনের তিনটি তিনটি ঘটনা উল্টোটা প্রমাণ করেছে যে, তিনি অভ্যন্তরীণভাবে আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন।
চেরনিশভের বিরুদ্ধে তদন্তের আদেশ ইয়ারমাক দিয়েছেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। এই উপপ্রধানমন্ত্রীর সহযোগীরা তাঁর অনুমোদিত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কম দামে অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন—এমন অভিযোগে গত এক বছর ধরে তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, ইয়ারমাক অন্য অনেক মামলা আটকে রাখলেও ইচ্ছাকৃতভাবেই এই মামলা এগিয়ে নিতে দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তাদের দাবি, চেরনিশভের আসল অপরাধ—তিনি ইয়ারমাকের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রথমত, চেরনিশভ আমেরিকানদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজেকে বিকল্প মাধ্যম হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয়ত, তাঁর পতনের ফলে ইয়ারমাকের ঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ সুইরিদেঙ্কোর পদোন্নতির পথ পরিষ্কার হয়।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহালকে সরিয়ে ইয়ারমাকের পুতুলকে আনার ধারণা নতুন নয়। এক বছর আগে জেলেনস্কি এই পরিবর্তন আটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে ইয়ারমাক আরও শক্তিশালী হয়েছেন এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই পরিবর্তনের ওপর এক পার্লামেন্টারি ভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, সমাজনীতি এবং সম্ভবত অর্থ মন্ত্রণালয়েও পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আন্দ্রে জাল গুটিয়ে আনছেন, তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ করছেন। এসব পদে যারা নিয়োগ পাবেন বেশির ভাগ তাঁর লোক।’
জুনে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সেবায় আরও নাটকীয় শুদ্ধি অভিযান আসন্ন ছিল। ইয়ারমাক ও গোয়েন্দাপ্রধান জেনারেল কিরিলো বুদানভের মধ্যে ৩ বছরের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে এ মাসেই। বুদানভকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি ছিল। ইয়ারমাকের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জেনারেল বুদানভকে ‘অস্থির বিপ্লবী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। তাদের দাবি, বুদানভ নিজস্ব রাজনৈতিক মেশিন তৈরি করছেন।
ইউক্রেন সরকারের এক অভ্যন্তরীণ সূত্র বলেছে, ‘প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের ৯০ শতাংশ লোকই মনে করে তিনি (বুদানভ) পাগল এবং ১০ শতাংশ মনে করে তিনি একজন প্রতিভাবান।’ অন্যদিকে, গোয়েন্দাপ্রধানের মিত্ররা তাঁকে নিবেদিতপ্রাণ রাষ্ট্রীয় কর্মচারী এবং প্রেসিডেন্টকে কঠিন সত্য বলতে সক্ষম একজন হিসেবে অভিহিত করেন। কিন্তু জুনের মাঝামাঝি সময়ে, তাদের অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন যে, বুদানভের ইয়ারমাককে উৎখাত করার ‘নবম প্রচেষ্টা’ সফল হবে। তবে সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নিজের চিরাচরিত কৌশল ব্যবহার করে জেনারেল বুদানভ আরও একবার প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন। ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিন জানতে পেরেছে যে, হোয়াইট হাউসের বারংবার সতর্কবার্তা বুদানভকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে, অন্তত এখনো পর্যন্ত।
জেনারেল বুদানভের টিকে যাওয়া প্রমাণ করে যে, এখনো প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, ইয়ারমাক তাঁর সিস্টেমে যতই ভূমিকা পালন করুন না কেন। ইয়ারমাক নিজের জোরে ক্ষমতা প্রয়োগ করেন, এমনটা মনে হয় না, বরং এটি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক অদ্ভুত ‘নির্ভরশীলতা’ থেকে উদ্ভূত, যা কোনো সূত্রই পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারছে না।
কখনো কখনো, ইয়ারমাক কেবলই জেলেনস্কির জেদি সহযোগী এবং জেদি জেলেনস্কির প্রতিনিধি। কিন্তু কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন, ইয়ারমাক প্রেসিডেন্টের কাছে যে তথ্যের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছেন তা বাস্তব। কেউ কেউ তো মনে করেন, ইয়ারমাক জেলেনস্কির কাছে যাওয়া অন্তত ৮৫ শতাংশ তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে। এই বিষয়টি সরকারের কেন্দ্রস্থলে ষড়যন্ত্রের এক বিপজ্জনক পরিবেশ তৈরি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সূত্র বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট কী জানতে পারবেন, সেটা নির্ধারণ করেন আন্দ্রে ইয়ারমাক। ৬ বছর ধরে একই ঘরে থেকে প্রেসিডেন্টকে নিজের মতামত দিয়ে যাচ্ছেন। এটি কার্যত একাই সব—এর মতো পরিস্থিতি।’
প্রাসাদ ষড়যন্ত্র রাজনীতি কোনো নতুন ঘটনা নয়, এবং সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধের বিধ্বস্ত একটি দেশে এটি অপ্রত্যাশিতও নয়। ইউক্রেনের ক্লান্ত নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্রীভূত না করলেই বরং অবাক হতে হতো। কিন্তু দেশের বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি—যেখানে প্রতিদিন কৌশলগত পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে—কেন্দ্রীভূত ও অকার্যকর ক্ষমতা কাঠামোকে বিপজ্জনক করে তুলছে। শত্রুদের এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের জনজীবনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার জন্য নির্বাহী ক্ষমতার অনুপযুক্ত ব্যবহারের বিষয়েও উদ্বেগ রয়েছে। একটি সমাধান হতে পারে—স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, কিন্তু এটা হবে এমন আশা করা ঠিক নয়। এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হতাশ হয়ে বলেন, ‘রাশিয়ানরা আমাদের অল্প আঁচে ধীরে ধীরে ঝলসে দিচ্ছে, আর আমরা ঘরে বসে গুরুতর পরিণতির মূর্খতার খেলা খেলছি।’
দ্য ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণ

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

গত জুনে ঘটে যাওয়া তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ইউক্রেনের ক্ষমতার অলিন্দে এক নতুন সুর তৈরি করেছে। এসব ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা আন্দ্রে ইয়ারমাক দেশের অভ্যন্তরে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে তাঁর ভূমিকা থেকে স্পষ্ট যে, তিনি নির্বাচিত না হয়েও...
২৩ জুলাই ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

গত জুনে ঘটে যাওয়া তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ইউক্রেনের ক্ষমতার অলিন্দে এক নতুন সুর তৈরি করেছে। এসব ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা আন্দ্রে ইয়ারমাক দেশের অভ্যন্তরে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে তাঁর ভূমিকা থেকে স্পষ্ট যে, তিনি নির্বাচিত না হয়েও...
২৩ জুলাই ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

গত জুনে ঘটে যাওয়া তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ইউক্রেনের ক্ষমতার অলিন্দে এক নতুন সুর তৈরি করেছে। এসব ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা আন্দ্রে ইয়ারমাক দেশের অভ্যন্তরে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে তাঁর ভূমিকা থেকে স্পষ্ট যে, তিনি নির্বাচিত না হয়েও...
২৩ জুলাই ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

গত জুনে ঘটে যাওয়া তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ইউক্রেনের ক্ষমতার অলিন্দে এক নতুন সুর তৈরি করেছে। এসব ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা আন্দ্রে ইয়ারমাক দেশের অভ্যন্তরে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে তাঁর ভূমিকা থেকে স্পষ্ট যে, তিনি নির্বাচিত না হয়েও...
২৩ জুলাই ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে