আজকের পত্রিকা ডেস্ক

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী সময়ে যখন আদর্শবাদী আবহ তুঙ্গে, ঠিক সেই সময়টাতে ১৯৪৫ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকে সংগঠনের অভিজ্ঞ নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁদের প্রধান শক্তি আসলে বক্তৃতার মঞ্চে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে প্রকাশ্যে তিরস্কার ও লজ্জা দেওয়ার ক্ষমতা।
জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব দাগ হ্যামারশোল্ড এই কৌশলের সবচেয়ে দক্ষ ব্যবহারকারী ছিলেন। ১৯৬১ সালে কঙ্গোতে শান্তি মিশনের সময় এক রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। কিন্তু তাঁর ভাষণগুলো বিশ্ববাসীর মনোযোগ কাড়ত। তিনি একবার বলেছিলেন, জাতিসংঘের লক্ষ্য মানবজাতিকে স্বর্গে পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং নরক থেকে বাঁচানো। আজও এই উক্তিই সংগঠনের মূল মিশনকে ধারণ করে।
বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তুলনামূলকভাবে সতর্ক ও সংযত স্বভাবের হলেও মাঝে মাঝে তিনিও সরাসরি কথা বলেন। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইসরায়েলের গাজা উপত্যকা অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর ভাষা ছিল অস্বাভাবিক কঠোর ও কূটনৈতিকভাবে ‘অভদ্র’। তিনি বলেন, ‘আমরা বেসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ দেখছি। মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নাটকীয় বাধা তৈরি হচ্ছে। সত্য হলো—এ ধরনের ঘটনা নৈতিক, রাজনৈতিক ও আইনি দিক থেকে একেবারেই সহনীয় নয়।’
কিন্তু মনে হচ্ছে, বিশ্ব আর তা শুনছে না। ইউক্রেন, গাজা ও সুদানে চলমান যুদ্ধগুলো দেখাচ্ছে যে—জাতিসংঘ সনদে প্রতিশ্রুত বিশ্বব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বর্তমান ও সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, সংস্থাটি এখন প্রায় দর্শকের ভূমিকা পালন করছে—যেখানে শক্তির আধিপত্য বা গায়ের জোরই নিয়ন্ত্রণ করছে বিশ্ব।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সাবেক প্রধান ও কফি আনানের আমলে উপমহাসচিব লর্ড মার্ক ম্যালক-ব্রাউন বলেন, ‘গুতেরেস অবশ্যই সাহসী কিছু কথা বলেন। কিন্তু তাঁকে এখন মূল খেলোয়াড় নয়, একেবারেই বাইরে থাকা মানুষ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কফির সময়ে ব্রিফিং রুম সাংবাদিকে ভরা থাকত। এখন সেটি যেন এক শোকাগার।’
জাতিসংঘকে ঘিরে সমালোচনা নতুন কিছু নয়। মার্কিন রক্ষণশীলরা দীর্ঘদিন ধরে এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিকে শ্লথ করার হাতিয়ার হিসেবে দেখে এসেছে এবং গ্লোবাল সাউথ ও প্রগতিশীল মহলের পক্ষে সংস্থাটি পক্ষপাতী বলে অভিযুক্ত করেছে। অপরদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলো মনে করে, অনেক সময় জাতিসংঘ পশ্চিমা স্বার্থের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। সংস্থাটিতে ৪০ হাজারের বেশি কর্মচারী রয়েছেন। এই সংখ্যা সময়ের সঙ্গে বেড়েছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে এটি ক্রমেই এক জটিল আমলাতান্ত্রিক দৈত্যে পরিণত হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে বিশ্বনেতারা একত্র হচ্ছেন। ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতিসংঘের অস্তিত্ব নিয়েই যেন প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপও সমালোচনায় যোগ দিয়েছেন। চলতি মাসের শুরুতে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে, এটা সাধারণভাবে স্বীকৃত যে, জাতিসংঘ মানুষকে একত্র করার ক্ষমতা হারিয়েছে।’
জাতিসংঘের সংকটের কেন্দ্রে মূলত নিরাপত্তা পরিষদের অচলাবস্থা। জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব এই পরিষদের ওপর। কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ জাতীয় সীমান্তের অখণ্ডতার ধারণা ভেঙে দিয়েছে এবং নিরাপত্তা পরিষদকে কার্যত অচল করে দিয়েছে। কারণ, সেখানে রাশিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স—এই পাঁচ দেশ ভেটোর ক্ষমতা রাখে। এখন আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা নীতি জাতিসংঘের মূল মূল্যবোধ ও নীতিকে নানাভাবে উপেক্ষা ও ক্ষুণ্ন করছে।
১৯৯০-এর দশকে কফি আনানের ঘনিষ্ঠ সহকারী ছিলেন নাদের মুসাভিজাদেহ। তিনি বলেছেন, ৮০ বছর পূর্তিতে জাতিসংঘ ভেতর ও বাইরে থেকে দুই দিকের সংকটে পড়েছে। ভেতরের সংকট হলো, ২০ বছরের কর্তৃত্ব, সক্ষমতা ও প্রভাবের অবক্ষয়—বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও সংঘাতপীড়িত মানুষের ক্ষেত্রে। বাইরের সংকট হলো মহাশক্তির দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতার প্রত্যাবর্তন এবং নিরাপত্তা পরিষদের ৫০ বছর অদৃশ্য থাকা অচলাবস্থা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভূমিকা—যেন জাতিসংঘ একেবারেই গুরুত্বহীন, বরং কখনো কখনো সরাসরি বাধা।
মুসাভিজাদেহ আরও বলেন, বাইরে থেকে জাতিসংঘের সামনে তৃতীয় একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। গ্লোবাল সাউথের প্রভাবশালী দেশগুলো এবং ইউরোপ ও কানাডার মতো প্রচলিত সমর্থকেরা জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে নতুন অংশীদারত্ব গড়ে তুলছে উন্নয়ন ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে। তাঁর ভাষায়, জাতিসংঘের জন্য এই তিনমুখী সংকটই অস্তিত্ব সংকট।
এমন এক কঠিন প্রেক্ষাপটে ৮০তম জন্মদিনে জাতিসংঘ সচিবালয় সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে ‘ইউএন ৮০’ কর্মসূচির মাধ্যমে। এর প্রস্তাবনায় রয়েছে—সংস্থার অসংখ্য দপ্তর ও কর্মসূচিকে একীভূত করা এবং বাজেটে বড় ধরনের কাটছাঁট। জাতিসংঘের সমর্থকেরা এই সংকটকে একধরনের সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তাঁদের আশা, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সংস্থাটিকে আরও ছোট, কার্যকর ও প্রতিষ্ঠাতাদের মূল মূল্যবোধ রক্ষায় নিবেদিত একটি সংস্থায় রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
তবে বাতাসে আরও এক অন্ধকার আশঙ্কাও ভেসে বেড়াচ্ছে—প্রথম বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী সময়ে গঠিত দুর্ভাগা ‘লিগ অব ন্যাশনস’-এর মতো দশা হতে পারে জাতিসংঘের। যে সংগঠন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রান্তিক হয়ে পড়েছিল। জাতিসংঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা নেদারল্যান্ডসের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী সিগ্রিড কাগ বলেন, জাতিসংঘ এখন অপ্রাসঙ্গিকতার দোরগোড়ায়। এটাই এর বিপদ। স্বপ্ন হয়তো বেঁচে আছে, কিন্তু কেউ খবর দেখে আর বলে না—আজ জাতিসংঘে কী হলো?
কাগ নিজেই প্রশ্ন করেন, এটাকে কি বাঁচানো সম্ভব? উত্তরে তিনিই বলেন, হ্যাঁ। কিন্তু সেটা নির্ভর করছে ইচ্ছাশক্তির ওপর। আর বিষয়টা অতীতের জাতিসংঘকে ফিরিয়ে আনার নয়; বরং একেবারেই ভিন্ন কাঠামো আর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন।
জাতিসংঘের কাঠামোতে যেকোনো বড় ধরনের সংস্কার করতে হলে ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন লাগবে। তবে জাতিসংঘের ইতিহাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৪৫ সালে এই সংগঠন সৃষ্টির নকশা তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রধান অর্থদাতাও তারা। তবে একই সঙ্গে জাতিসংঘের বিধিনিষেধে বিরক্ত হয়ে অনেক সময় সেগুলো উপেক্ষা করেছে দেশটি। এমন এক সময়েই জাতিসংঘের সদর দপ্তরের আঙিনায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবার এ সময়ে সংস্থাটির সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক ভয়াবহ টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ম্যালক-ব্রাউন বলেন, ‘জাতিসংঘের অস্তিত্বজুড়ে আমেরিকার দ্বিচারিতার ইতিহাস রয়ে গেছে। তবু আমেরিকা সব সময় এটিকে অর্থ জুগিয়েছে এবং তাদের পররাষ্ট্রনীতি জাতিসংঘের নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ দেখানোর চেষ্টা করেছে, যদিও অনেক সময় সেটা ভাঁওতা ছাড়া কিছুই ছিল না। তিনি আরও বলেন, কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলা কার্যত ভেঙে পড়েছে। আর ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট ধারণা প্ররোচিত চুক্তিকেন্দ্রিক কূটনীতি জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পর্ককে ভাঙনের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের সঙ্গে ইরাক যুদ্ধ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ালেও দুজন নিয়মিত কথা বলতেন। এমনকি আনানের বিদায়ী ভোজও আয়োজন করেছিলেন বুশ। এ বিষয়ে বুশের আমলে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা জন বোল্টন বলেন, ‘আমার তো মনে হয় না ট্রাম্প কখনো গুতেরেসের সঙ্গে কথা বলেন, শুধু নিউইয়র্কে বক্তৃতা দিতে গেলে ছাড়া।’ বোল্টন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক সদস্য ও রিপাবলিকান নেতারা চান, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ থেকে আরও দূরে সরে যাক। এ বছরই রিপাবলিকানরা কংগ্রেসে জাতিসংঘবিরোধী ২০টিরও বেশি প্রস্তাব তুলেছে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—যেসব দেশ জাতিসংঘে যত ভোট হয়, তার মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশের কম বার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসঙ্গে ভোট দিয়েছে বা দেয়, তাদের জন্য বিদেশি সহায়তা বন্ধ রাখা হোক। এ ছাড়া জাতিসংঘ থেকে সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে যাওয়া ও নিউইয়র্ক সদর দপ্তর বন্ধ করে দেওয়ার দাবিও আছে এসব প্রস্তাবে।
আরেকটি বড় টানাপোড়েন হলো ইসরায়েল। ওয়াশিংটনের সঙ্গে জাতিসংঘের সম্পর্কের দীর্ঘদিনের অন্যতম স্পর্শকাতর বিষয় এটি। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক উইলিয়াম গ্রান্ট বলেন, ইসরায়েল জাতিসংঘকে প্রতিপক্ষ মনে করে, এমনকি সচিবালয়কেও। আর অনেক সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ তো আছেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রের কাজ ছিল ইসরায়েলকে রক্ষা করা ও আক্রমণ ঠেকানো।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর গাজায় ইসরায়েলের ২৩ মাসব্যাপী যুদ্ধ এবং এতে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক প্রাণহানির কারণে বৈশ্বিক ক্ষোভ আরও বেড়েছে। হাডসন ইনস্টিটিউটের গবেষক পিটার রাফ বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘবিরোধী সেই সমালোচনাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে।
ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, জাতিসংঘ যদি নিজেকে গুছিয়ে নিতে না পারে, তবে এর পরিণতি হবে অন্য অনেক সংগঠনের মতোই—আস্থা হারিয়ে একসময় শূন্যতায় পরিণত হওয়া। তবে রিপাবলিকান প্রশাসনগুলো সাধারণত জাতিসংঘ নিয়ে অভিযোগ তুললেও সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন আনে না। রোনাল্ড রিগ্যানের সময় জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জিন কার্কপ্যাট্রিক একবার বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ থেকে বের হতে চাইলে পারে, কিন্তু ঝামেলাটা নেওয়ার মতো মূল্যবান নয়।
জাতিসংঘের দীর্ঘদিনের সমালোচক বোল্টনও একমত। তাঁর মতে, বেরিয়ে যাওয়া নয়, বরং সংস্থাটিকে সংস্কার করা ভালো। যেসব সংস্থা রাজনৈতিক প্রভাবিত হয়ে পড়েছে বা মূল লক্ষ্য ছাড়িয়েছে, সেগুলো বাদ দিয়ে সংস্থাটিকে ছোট করা উচিত। ট্রাম্প ও তাঁর দল মাঝেমধ্যে জাতিসংঘের আদর্শকে সম্মান জানান। ফেব্রুয়ারিতেই ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি জাতিসংঘের ‘অসাধারণ সম্ভাবনায়’ বিশ্বাস করেন। তবে এটাও যোগ করেছিলেন, তাঁর প্রশাসনের সবাই সে মতের নয়।
ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ থিংকট্যাংক হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ইউজিন কন্তোরোভিচ বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘ সংস্কারে আগ্রহ দেখাবে না। বরং তারা জাতিসংঘ থেকে আরও দূরে সরে যাবে এবং অর্থায়নও কমাবে। তাদের দৃষ্টিতে জাতিসংঘের অনেক কাজ—বিশেষ করে সহায়তা কার্যক্রম—সহজেই অন্য কোনো আঞ্চলিক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো জাতিসংঘের সদস্য আছে, সেটা কেবল ‘আমলাতান্ত্রিক জড়তার’ কারণে।
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অধিকাংশের অগ্রাধিকার এখন নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার। কারণ, ভেটো ক্ষমতা থাকা পাঁচ দেশের কাঠামোটি এখনো ১৯৪৫ সালের বাস্তবতা বহন করছে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া ও অন্য উদীয়মান শক্তিগুলো জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ে আসন দাবি করছে।
তবে কূটনীতিকেরা স্বীকার করছেন, আপাতত এই কাঠামো অপরিবর্তিতই থাকবে। কারণ কাকে উন্নীত করা হবে, সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে জাতিসংঘের এজেন্ডা ও কার্যক্রম সংস্কারের দিকে, যদিও এখানেও লক্ষ্যকে ঘিরে তীব্র মতভেদ রয়েছে। মূল ভিন্নতা হলো—কেউ বলছে শান্তি ও নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে মানবিক উদ্যোগ কমাতে হবে। আবার কেউ জোর দিচ্ছে টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও বৈষম্য হ্রাসে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার ওপর, তবে এগুলো সহজ উপায়ে বাস্তবায়নের পথ খুঁজতে হবে।
জাতিসংঘের নীতিবিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল ও ইউএন ৮০ টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান গাই রাইডার বলেন, সচিবালয়ের অবস্থান পরিষ্কার—জাতিসংঘকে অবশ্যই তার মূল তিনটি স্তম্ভে অটল থাকতে হবে: শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার। তাঁর ভাষায়, ‘একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে প্রাধান্য দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’
গাই রাইডার স্বীকার করেছেন, জাতিসংঘ এখন ‘অসংখ্য খণ্ড খণ্ড দ্বীপের সমষ্টি’ এবং ‘খুব জটিল একটি ব্যবস্থা।’ তবে তাঁর মতে, গুতেরেস এখন সংকটময় সময়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ—‘কীভাবে জাতিসংঘ আরও ভালো করতে পারে, সেটি নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখার।’
এমন সময়ে জাতিসংঘ দ্বিমুখী আর্থিক সংকটেও পড়েছে। যার ফলে কর্মী ও কর্মসূচি উভয় ক্ষেত্রেই বড় ধরনের ছাঁটাই চলছে। দুই প্রধান দাতা যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বিপুল পরিমাণ বকেয়া গড়ে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিদেশি সাহায্যে ব্যাপক কাটছাঁট করেছেন, অন্য দাতারাও সেই পথে হাঁটছেন।
২০২৬ সালে কিছু সংস্থায় ২০ শতাংশ কর্মী কমানোর ডাক দিয়েছেন গুতেরেস। সচিবালয়ও ১৫ শতাংশ বাজেট ও প্রায় ১৯ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে। সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করছে, এতে অসংখ্য প্রাণ হুমকির মুখে পড়বে। তবে গোপনে অনেক জাতিসংঘ কর্মীও স্বীকার করেন, বহু সংস্থা ফোলানো আর অদক্ষভাবে পরিচালিত।
এ অন্ধকার বাস্তবতায় জাতিসংঘের পুরোনো মিত্ররা পুনরুজ্জীবনের পথ খুঁজছে। জাতিসংঘের অনড় সমর্থক নরওয়ে মেক্সিকোকে সঙ্গে নিয়ে একটি জোট গড়ছে, যার লক্ষ্য হলো জাতিসংঘ যেন তার প্রতিষ্ঠাকালীন মূল্যবোধ ধরে রাখে, কিন্তু মিশনকে সহজ করে। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্ত আইদে বলেন, ‘এই আর্থিক সংকটকে আমাদের সুযোগে পরিণত করতে হবে—সংহত করতে হবে, কর্মসূচি কমাতে হবে। কঠিন ভালোবাসা দেখাতে হবে। অনেক সময় বড় সংস্কার ছোট সংস্কারের চেয়ে সহজ হয়।’
গ্লোবাল সাউথের কূটনীতিকেরা জোর দিয়ে বলছেন, উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি জাতিসংঘ কমাতে পারে না। তবে কিছু সাবেক কর্মকর্তা ও ইউরোপীয় মিত্ররা ইঙ্গিত করছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সঠিক যে জাতিসংঘকে কিছু মানবিক দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে হবে।
জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি এবং নেদারল্যান্ডসের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী কাগ বলেন, ‘অন্যরা জাতিসংঘের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে পারে। আপনি ধরে নিতে পারেন না যে, জাতিসংঘ সব সময় থাকবে। জাতিসংঘকে সবকিছু করতে হবে না। এটি ছোট হতে পারে, বেছে কাজ করতে পারে। বৈশ্বিক নীতিমালা তৈরি করতে পারবে, কিন্তু প্রতিটি কাজে সরাসরি যুক্ত থাকতে হবে না।’
২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মার্টিন গ্রিফিথস আরও সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানান। তাঁর মতে, ‘ইউএন ৮০ মূলত কার্যকারিতা খোঁজার চেষ্টা করছে, প্রকৃত সংস্কার নয়। কাটছাঁট সামলাতে হবে, কিন্তু এর সঙ্গে ভিশন থাকতে হবে—জাতিসংঘ আসলে কী হতে চায়। আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি না।’ তিনি গাজায় ইসরায়েলি হামলার মানবিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সরব ছিলেন।
মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, ‘এটা তহবিলের সমস্যা নয়, প্রাসঙ্গিকতার সমস্যা। সঠিক মানুষকে বিশ্ব সংকটে সম্পৃক্ত করা দরকার—মধ্যস্থতায়, কূটনৈতিক সক্রিয়তায়।’
এই জটিল পরিস্থিতিতে আগামী বছরে জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গুতেরেস ও তাঁর পূর্বসূরি বান কি মুন গত দুই দশক ধরে বাড়তে থাকা মহাশক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা সামলেছেন, তবে অভ্যন্তরীণ সমালোচকদের মতে তাঁরা ঝুঁকি নিতে অনিচ্ছুক।
সিগ্রিড কাগ মনে করেন, জাতিসংঘের আরও ‘সক্রিয় কূটনীতিক’ দরকার। তাঁর ভাষায়, ‘জাতিসংঘ এতটাই নীরব হয়ে গেছে যে অনেক সময় বোঝাই যায় না, তারা কোনো একটি ইস্যুতে জড়িত আছে।’ তবে ইতিহাস বলছে, ভেটো ক্ষমতার অধিকারী শক্তিগুলো এমন হস্তক্ষেপকারী কাউকে সমর্থন দেবে না।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘর সংস্কারের বিষয়ে প্রাণবন্ত বিতর্ক চলছে। ম্যালক-ব্রাউন উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরে দাঁড়ানোয় চীন ও গ্লোবাল সাউথের উদীয়মান শক্তিগুলো নেতৃত্বের ভূমিকায় আসতে চাইছে। আর স্থবির নিরাপত্তা পরিষদের বিপরীতে সাধারণ পরিষদে নতুন এনার্জি তৈরি হয়েছে। তাঁর কল্পনায়, আরও ছোট ও কেন্দ্রভিত্তিক জাতিসংঘ এখনো বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে তিনি কোনো ভ্রমে নেই। তাঁর ভাষায়, ‘অনেক দিক থেকেই জাতিসংঘ চলমান এক মৃতদেহ বা জম্বি। এটি কখনো পুরোপুরি পড়েও যায় না, আবার জীবিতও না।’
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী সময়ে যখন আদর্শবাদী আবহ তুঙ্গে, ঠিক সেই সময়টাতে ১৯৪৫ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকে সংগঠনের অভিজ্ঞ নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁদের প্রধান শক্তি আসলে বক্তৃতার মঞ্চে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে প্রকাশ্যে তিরস্কার ও লজ্জা দেওয়ার ক্ষমতা।
জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব দাগ হ্যামারশোল্ড এই কৌশলের সবচেয়ে দক্ষ ব্যবহারকারী ছিলেন। ১৯৬১ সালে কঙ্গোতে শান্তি মিশনের সময় এক রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। কিন্তু তাঁর ভাষণগুলো বিশ্ববাসীর মনোযোগ কাড়ত। তিনি একবার বলেছিলেন, জাতিসংঘের লক্ষ্য মানবজাতিকে স্বর্গে পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং নরক থেকে বাঁচানো। আজও এই উক্তিই সংগঠনের মূল মিশনকে ধারণ করে।
বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তুলনামূলকভাবে সতর্ক ও সংযত স্বভাবের হলেও মাঝে মাঝে তিনিও সরাসরি কথা বলেন। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইসরায়েলের গাজা উপত্যকা অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর ভাষা ছিল অস্বাভাবিক কঠোর ও কূটনৈতিকভাবে ‘অভদ্র’। তিনি বলেন, ‘আমরা বেসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ দেখছি। মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নাটকীয় বাধা তৈরি হচ্ছে। সত্য হলো—এ ধরনের ঘটনা নৈতিক, রাজনৈতিক ও আইনি দিক থেকে একেবারেই সহনীয় নয়।’
কিন্তু মনে হচ্ছে, বিশ্ব আর তা শুনছে না। ইউক্রেন, গাজা ও সুদানে চলমান যুদ্ধগুলো দেখাচ্ছে যে—জাতিসংঘ সনদে প্রতিশ্রুত বিশ্বব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বর্তমান ও সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, সংস্থাটি এখন প্রায় দর্শকের ভূমিকা পালন করছে—যেখানে শক্তির আধিপত্য বা গায়ের জোরই নিয়ন্ত্রণ করছে বিশ্ব।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সাবেক প্রধান ও কফি আনানের আমলে উপমহাসচিব লর্ড মার্ক ম্যালক-ব্রাউন বলেন, ‘গুতেরেস অবশ্যই সাহসী কিছু কথা বলেন। কিন্তু তাঁকে এখন মূল খেলোয়াড় নয়, একেবারেই বাইরে থাকা মানুষ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কফির সময়ে ব্রিফিং রুম সাংবাদিকে ভরা থাকত। এখন সেটি যেন এক শোকাগার।’
জাতিসংঘকে ঘিরে সমালোচনা নতুন কিছু নয়। মার্কিন রক্ষণশীলরা দীর্ঘদিন ধরে এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিকে শ্লথ করার হাতিয়ার হিসেবে দেখে এসেছে এবং গ্লোবাল সাউথ ও প্রগতিশীল মহলের পক্ষে সংস্থাটি পক্ষপাতী বলে অভিযুক্ত করেছে। অপরদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলো মনে করে, অনেক সময় জাতিসংঘ পশ্চিমা স্বার্থের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। সংস্থাটিতে ৪০ হাজারের বেশি কর্মচারী রয়েছেন। এই সংখ্যা সময়ের সঙ্গে বেড়েছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে এটি ক্রমেই এক জটিল আমলাতান্ত্রিক দৈত্যে পরিণত হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে বিশ্বনেতারা একত্র হচ্ছেন। ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতিসংঘের অস্তিত্ব নিয়েই যেন প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপও সমালোচনায় যোগ দিয়েছেন। চলতি মাসের শুরুতে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে, এটা সাধারণভাবে স্বীকৃত যে, জাতিসংঘ মানুষকে একত্র করার ক্ষমতা হারিয়েছে।’
জাতিসংঘের সংকটের কেন্দ্রে মূলত নিরাপত্তা পরিষদের অচলাবস্থা। জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব এই পরিষদের ওপর। কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ জাতীয় সীমান্তের অখণ্ডতার ধারণা ভেঙে দিয়েছে এবং নিরাপত্তা পরিষদকে কার্যত অচল করে দিয়েছে। কারণ, সেখানে রাশিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স—এই পাঁচ দেশ ভেটোর ক্ষমতা রাখে। এখন আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা নীতি জাতিসংঘের মূল মূল্যবোধ ও নীতিকে নানাভাবে উপেক্ষা ও ক্ষুণ্ন করছে।
১৯৯০-এর দশকে কফি আনানের ঘনিষ্ঠ সহকারী ছিলেন নাদের মুসাভিজাদেহ। তিনি বলেছেন, ৮০ বছর পূর্তিতে জাতিসংঘ ভেতর ও বাইরে থেকে দুই দিকের সংকটে পড়েছে। ভেতরের সংকট হলো, ২০ বছরের কর্তৃত্ব, সক্ষমতা ও প্রভাবের অবক্ষয়—বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও সংঘাতপীড়িত মানুষের ক্ষেত্রে। বাইরের সংকট হলো মহাশক্তির দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতার প্রত্যাবর্তন এবং নিরাপত্তা পরিষদের ৫০ বছর অদৃশ্য থাকা অচলাবস্থা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভূমিকা—যেন জাতিসংঘ একেবারেই গুরুত্বহীন, বরং কখনো কখনো সরাসরি বাধা।
মুসাভিজাদেহ আরও বলেন, বাইরে থেকে জাতিসংঘের সামনে তৃতীয় একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। গ্লোবাল সাউথের প্রভাবশালী দেশগুলো এবং ইউরোপ ও কানাডার মতো প্রচলিত সমর্থকেরা জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে নতুন অংশীদারত্ব গড়ে তুলছে উন্নয়ন ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে। তাঁর ভাষায়, জাতিসংঘের জন্য এই তিনমুখী সংকটই অস্তিত্ব সংকট।
এমন এক কঠিন প্রেক্ষাপটে ৮০তম জন্মদিনে জাতিসংঘ সচিবালয় সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে ‘ইউএন ৮০’ কর্মসূচির মাধ্যমে। এর প্রস্তাবনায় রয়েছে—সংস্থার অসংখ্য দপ্তর ও কর্মসূচিকে একীভূত করা এবং বাজেটে বড় ধরনের কাটছাঁট। জাতিসংঘের সমর্থকেরা এই সংকটকে একধরনের সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তাঁদের আশা, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সংস্থাটিকে আরও ছোট, কার্যকর ও প্রতিষ্ঠাতাদের মূল মূল্যবোধ রক্ষায় নিবেদিত একটি সংস্থায় রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
তবে বাতাসে আরও এক অন্ধকার আশঙ্কাও ভেসে বেড়াচ্ছে—প্রথম বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী সময়ে গঠিত দুর্ভাগা ‘লিগ অব ন্যাশনস’-এর মতো দশা হতে পারে জাতিসংঘের। যে সংগঠন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রান্তিক হয়ে পড়েছিল। জাতিসংঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা নেদারল্যান্ডসের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী সিগ্রিড কাগ বলেন, জাতিসংঘ এখন অপ্রাসঙ্গিকতার দোরগোড়ায়। এটাই এর বিপদ। স্বপ্ন হয়তো বেঁচে আছে, কিন্তু কেউ খবর দেখে আর বলে না—আজ জাতিসংঘে কী হলো?
কাগ নিজেই প্রশ্ন করেন, এটাকে কি বাঁচানো সম্ভব? উত্তরে তিনিই বলেন, হ্যাঁ। কিন্তু সেটা নির্ভর করছে ইচ্ছাশক্তির ওপর। আর বিষয়টা অতীতের জাতিসংঘকে ফিরিয়ে আনার নয়; বরং একেবারেই ভিন্ন কাঠামো আর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন।
জাতিসংঘের কাঠামোতে যেকোনো বড় ধরনের সংস্কার করতে হলে ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন লাগবে। তবে জাতিসংঘের ইতিহাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৪৫ সালে এই সংগঠন সৃষ্টির নকশা তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রধান অর্থদাতাও তারা। তবে একই সঙ্গে জাতিসংঘের বিধিনিষেধে বিরক্ত হয়ে অনেক সময় সেগুলো উপেক্ষা করেছে দেশটি। এমন এক সময়েই জাতিসংঘের সদর দপ্তরের আঙিনায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবার এ সময়ে সংস্থাটির সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক ভয়াবহ টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ম্যালক-ব্রাউন বলেন, ‘জাতিসংঘের অস্তিত্বজুড়ে আমেরিকার দ্বিচারিতার ইতিহাস রয়ে গেছে। তবু আমেরিকা সব সময় এটিকে অর্থ জুগিয়েছে এবং তাদের পররাষ্ট্রনীতি জাতিসংঘের নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ দেখানোর চেষ্টা করেছে, যদিও অনেক সময় সেটা ভাঁওতা ছাড়া কিছুই ছিল না। তিনি আরও বলেন, কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলা কার্যত ভেঙে পড়েছে। আর ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট ধারণা প্ররোচিত চুক্তিকেন্দ্রিক কূটনীতি জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পর্ককে ভাঙনের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের সঙ্গে ইরাক যুদ্ধ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ালেও দুজন নিয়মিত কথা বলতেন। এমনকি আনানের বিদায়ী ভোজও আয়োজন করেছিলেন বুশ। এ বিষয়ে বুশের আমলে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা জন বোল্টন বলেন, ‘আমার তো মনে হয় না ট্রাম্প কখনো গুতেরেসের সঙ্গে কথা বলেন, শুধু নিউইয়র্কে বক্তৃতা দিতে গেলে ছাড়া।’ বোল্টন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক সদস্য ও রিপাবলিকান নেতারা চান, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ থেকে আরও দূরে সরে যাক। এ বছরই রিপাবলিকানরা কংগ্রেসে জাতিসংঘবিরোধী ২০টিরও বেশি প্রস্তাব তুলেছে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—যেসব দেশ জাতিসংঘে যত ভোট হয়, তার মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশের কম বার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসঙ্গে ভোট দিয়েছে বা দেয়, তাদের জন্য বিদেশি সহায়তা বন্ধ রাখা হোক। এ ছাড়া জাতিসংঘ থেকে সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে যাওয়া ও নিউইয়র্ক সদর দপ্তর বন্ধ করে দেওয়ার দাবিও আছে এসব প্রস্তাবে।
আরেকটি বড় টানাপোড়েন হলো ইসরায়েল। ওয়াশিংটনের সঙ্গে জাতিসংঘের সম্পর্কের দীর্ঘদিনের অন্যতম স্পর্শকাতর বিষয় এটি। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক উইলিয়াম গ্রান্ট বলেন, ইসরায়েল জাতিসংঘকে প্রতিপক্ষ মনে করে, এমনকি সচিবালয়কেও। আর অনেক সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ তো আছেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রের কাজ ছিল ইসরায়েলকে রক্ষা করা ও আক্রমণ ঠেকানো।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর গাজায় ইসরায়েলের ২৩ মাসব্যাপী যুদ্ধ এবং এতে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক প্রাণহানির কারণে বৈশ্বিক ক্ষোভ আরও বেড়েছে। হাডসন ইনস্টিটিউটের গবেষক পিটার রাফ বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘবিরোধী সেই সমালোচনাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে।
ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, জাতিসংঘ যদি নিজেকে গুছিয়ে নিতে না পারে, তবে এর পরিণতি হবে অন্য অনেক সংগঠনের মতোই—আস্থা হারিয়ে একসময় শূন্যতায় পরিণত হওয়া। তবে রিপাবলিকান প্রশাসনগুলো সাধারণত জাতিসংঘ নিয়ে অভিযোগ তুললেও সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন আনে না। রোনাল্ড রিগ্যানের সময় জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জিন কার্কপ্যাট্রিক একবার বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ থেকে বের হতে চাইলে পারে, কিন্তু ঝামেলাটা নেওয়ার মতো মূল্যবান নয়।
জাতিসংঘের দীর্ঘদিনের সমালোচক বোল্টনও একমত। তাঁর মতে, বেরিয়ে যাওয়া নয়, বরং সংস্থাটিকে সংস্কার করা ভালো। যেসব সংস্থা রাজনৈতিক প্রভাবিত হয়ে পড়েছে বা মূল লক্ষ্য ছাড়িয়েছে, সেগুলো বাদ দিয়ে সংস্থাটিকে ছোট করা উচিত। ট্রাম্প ও তাঁর দল মাঝেমধ্যে জাতিসংঘের আদর্শকে সম্মান জানান। ফেব্রুয়ারিতেই ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি জাতিসংঘের ‘অসাধারণ সম্ভাবনায়’ বিশ্বাস করেন। তবে এটাও যোগ করেছিলেন, তাঁর প্রশাসনের সবাই সে মতের নয়।
ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ থিংকট্যাংক হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ইউজিন কন্তোরোভিচ বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘ সংস্কারে আগ্রহ দেখাবে না। বরং তারা জাতিসংঘ থেকে আরও দূরে সরে যাবে এবং অর্থায়নও কমাবে। তাদের দৃষ্টিতে জাতিসংঘের অনেক কাজ—বিশেষ করে সহায়তা কার্যক্রম—সহজেই অন্য কোনো আঞ্চলিক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো জাতিসংঘের সদস্য আছে, সেটা কেবল ‘আমলাতান্ত্রিক জড়তার’ কারণে।
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অধিকাংশের অগ্রাধিকার এখন নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার। কারণ, ভেটো ক্ষমতা থাকা পাঁচ দেশের কাঠামোটি এখনো ১৯৪৫ সালের বাস্তবতা বহন করছে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া ও অন্য উদীয়মান শক্তিগুলো জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ে আসন দাবি করছে।
তবে কূটনীতিকেরা স্বীকার করছেন, আপাতত এই কাঠামো অপরিবর্তিতই থাকবে। কারণ কাকে উন্নীত করা হবে, সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে জাতিসংঘের এজেন্ডা ও কার্যক্রম সংস্কারের দিকে, যদিও এখানেও লক্ষ্যকে ঘিরে তীব্র মতভেদ রয়েছে। মূল ভিন্নতা হলো—কেউ বলছে শান্তি ও নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে মানবিক উদ্যোগ কমাতে হবে। আবার কেউ জোর দিচ্ছে টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও বৈষম্য হ্রাসে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার ওপর, তবে এগুলো সহজ উপায়ে বাস্তবায়নের পথ খুঁজতে হবে।
জাতিসংঘের নীতিবিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল ও ইউএন ৮০ টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান গাই রাইডার বলেন, সচিবালয়ের অবস্থান পরিষ্কার—জাতিসংঘকে অবশ্যই তার মূল তিনটি স্তম্ভে অটল থাকতে হবে: শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার। তাঁর ভাষায়, ‘একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে প্রাধান্য দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’
গাই রাইডার স্বীকার করেছেন, জাতিসংঘ এখন ‘অসংখ্য খণ্ড খণ্ড দ্বীপের সমষ্টি’ এবং ‘খুব জটিল একটি ব্যবস্থা।’ তবে তাঁর মতে, গুতেরেস এখন সংকটময় সময়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ—‘কীভাবে জাতিসংঘ আরও ভালো করতে পারে, সেটি নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখার।’
এমন সময়ে জাতিসংঘ দ্বিমুখী আর্থিক সংকটেও পড়েছে। যার ফলে কর্মী ও কর্মসূচি উভয় ক্ষেত্রেই বড় ধরনের ছাঁটাই চলছে। দুই প্রধান দাতা যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বিপুল পরিমাণ বকেয়া গড়ে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিদেশি সাহায্যে ব্যাপক কাটছাঁট করেছেন, অন্য দাতারাও সেই পথে হাঁটছেন।
২০২৬ সালে কিছু সংস্থায় ২০ শতাংশ কর্মী কমানোর ডাক দিয়েছেন গুতেরেস। সচিবালয়ও ১৫ শতাংশ বাজেট ও প্রায় ১৯ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে। সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করছে, এতে অসংখ্য প্রাণ হুমকির মুখে পড়বে। তবে গোপনে অনেক জাতিসংঘ কর্মীও স্বীকার করেন, বহু সংস্থা ফোলানো আর অদক্ষভাবে পরিচালিত।
এ অন্ধকার বাস্তবতায় জাতিসংঘের পুরোনো মিত্ররা পুনরুজ্জীবনের পথ খুঁজছে। জাতিসংঘের অনড় সমর্থক নরওয়ে মেক্সিকোকে সঙ্গে নিয়ে একটি জোট গড়ছে, যার লক্ষ্য হলো জাতিসংঘ যেন তার প্রতিষ্ঠাকালীন মূল্যবোধ ধরে রাখে, কিন্তু মিশনকে সহজ করে। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্ত আইদে বলেন, ‘এই আর্থিক সংকটকে আমাদের সুযোগে পরিণত করতে হবে—সংহত করতে হবে, কর্মসূচি কমাতে হবে। কঠিন ভালোবাসা দেখাতে হবে। অনেক সময় বড় সংস্কার ছোট সংস্কারের চেয়ে সহজ হয়।’
গ্লোবাল সাউথের কূটনীতিকেরা জোর দিয়ে বলছেন, উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি জাতিসংঘ কমাতে পারে না। তবে কিছু সাবেক কর্মকর্তা ও ইউরোপীয় মিত্ররা ইঙ্গিত করছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সঠিক যে জাতিসংঘকে কিছু মানবিক দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে হবে।
জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি এবং নেদারল্যান্ডসের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী কাগ বলেন, ‘অন্যরা জাতিসংঘের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে পারে। আপনি ধরে নিতে পারেন না যে, জাতিসংঘ সব সময় থাকবে। জাতিসংঘকে সবকিছু করতে হবে না। এটি ছোট হতে পারে, বেছে কাজ করতে পারে। বৈশ্বিক নীতিমালা তৈরি করতে পারবে, কিন্তু প্রতিটি কাজে সরাসরি যুক্ত থাকতে হবে না।’
২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মার্টিন গ্রিফিথস আরও সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানান। তাঁর মতে, ‘ইউএন ৮০ মূলত কার্যকারিতা খোঁজার চেষ্টা করছে, প্রকৃত সংস্কার নয়। কাটছাঁট সামলাতে হবে, কিন্তু এর সঙ্গে ভিশন থাকতে হবে—জাতিসংঘ আসলে কী হতে চায়। আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি না।’ তিনি গাজায় ইসরায়েলি হামলার মানবিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সরব ছিলেন।
মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, ‘এটা তহবিলের সমস্যা নয়, প্রাসঙ্গিকতার সমস্যা। সঠিক মানুষকে বিশ্ব সংকটে সম্পৃক্ত করা দরকার—মধ্যস্থতায়, কূটনৈতিক সক্রিয়তায়।’
এই জটিল পরিস্থিতিতে আগামী বছরে জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গুতেরেস ও তাঁর পূর্বসূরি বান কি মুন গত দুই দশক ধরে বাড়তে থাকা মহাশক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা সামলেছেন, তবে অভ্যন্তরীণ সমালোচকদের মতে তাঁরা ঝুঁকি নিতে অনিচ্ছুক।
সিগ্রিড কাগ মনে করেন, জাতিসংঘের আরও ‘সক্রিয় কূটনীতিক’ দরকার। তাঁর ভাষায়, ‘জাতিসংঘ এতটাই নীরব হয়ে গেছে যে অনেক সময় বোঝাই যায় না, তারা কোনো একটি ইস্যুতে জড়িত আছে।’ তবে ইতিহাস বলছে, ভেটো ক্ষমতার অধিকারী শক্তিগুলো এমন হস্তক্ষেপকারী কাউকে সমর্থন দেবে না।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘর সংস্কারের বিষয়ে প্রাণবন্ত বিতর্ক চলছে। ম্যালক-ব্রাউন উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরে দাঁড়ানোয় চীন ও গ্লোবাল সাউথের উদীয়মান শক্তিগুলো নেতৃত্বের ভূমিকায় আসতে চাইছে। আর স্থবির নিরাপত্তা পরিষদের বিপরীতে সাধারণ পরিষদে নতুন এনার্জি তৈরি হয়েছে। তাঁর কল্পনায়, আরও ছোট ও কেন্দ্রভিত্তিক জাতিসংঘ এখনো বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে তিনি কোনো ভ্রমে নেই। তাঁর ভাষায়, ‘অনেক দিক থেকেই জাতিসংঘ চলমান এক মৃতদেহ বা জম্বি। এটি কখনো পুরোপুরি পড়েও যায় না, আবার জীবিতও না।’
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব দাগ হ্যামারশোল্ড এই কৌশলের সবচেয়ে দক্ষ ব্যবহারকারী ছিলেন। ১৯৬১ সালে কঙ্গোতে শান্তি মিশনের সময় এক রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। কিন্তু তাঁর ভাষণগুলো বিশ্ববাসীর মনোযোগ কাড়ত। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘের লক্ষ্য মানবজাতিকে স্বর্গে পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং নরক থেকে বাঁচান
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব দাগ হ্যামারশোল্ড এই কৌশলের সবচেয়ে দক্ষ ব্যবহারকারী ছিলেন। ১৯৬১ সালে কঙ্গোতে শান্তি মিশনের সময় এক রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। কিন্তু তাঁর ভাষণগুলো বিশ্ববাসীর মনোযোগ কাড়ত। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘের লক্ষ্য মানবজাতিকে স্বর্গে পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং নরক থেকে বাঁচান
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব দাগ হ্যামারশোল্ড এই কৌশলের সবচেয়ে দক্ষ ব্যবহারকারী ছিলেন। ১৯৬১ সালে কঙ্গোতে শান্তি মিশনের সময় এক রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। কিন্তু তাঁর ভাষণগুলো বিশ্ববাসীর মনোযোগ কাড়ত। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘের লক্ষ্য মানবজাতিকে স্বর্গে পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং নরক থেকে বাঁচান
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব দাগ হ্যামারশোল্ড এই কৌশলের সবচেয়ে দক্ষ ব্যবহারকারী ছিলেন। ১৯৬১ সালে কঙ্গোতে শান্তি মিশনের সময় এক রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। কিন্তু তাঁর ভাষণগুলো বিশ্ববাসীর মনোযোগ কাড়ত। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘের লক্ষ্য মানবজাতিকে স্বর্গে পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং নরক থেকে বাঁচান
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে