আজকের পত্রিকা ডেস্ক

পদার্থবিদ্যার এক জটিল ধারণা ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’। সহজভাবে এটিকে ‘ত্রিমুখী সমস্যা’ও বলা যেতে পারে। তিনটি মহাজাগতিক বস্তুর মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়া এক অনিশ্চিত অপরিমাপযোগ্য পরিস্থিতি তৈরি করে— এটি বোঝাতেই পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়। এই ধারণাটি এখন রাজনীতির ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনটি প্রধান পক্ষ যেমন—ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থা—পরস্পর যখন এমনভাবে মিথস্ক্রিয়া করে যা অস্থির এবং অননুমেয় ফলাফলের জন্ম দেয়, সেই পরিস্থিতিকেই রাজনীতির ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ বলা হয়। স্বার্থের দ্বন্দ্ব, অনাস্থা, মিত্র পরিবর্তন এবং পারস্পরিক প্রভাব এই পরিস্থিতি তৈরি করে।
রাজনীতিতে থ্রি-বডি প্রবলেম-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, পদার্থবিদ্যার সমস্যাটির মতোই, এখানে কোনো একক পক্ষ অন্যদের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে অনুমান বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে একটা অস্থির রাজনৈতিক গতিশীলতা তৈরি হয়।
কোনো এক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রতিটি পক্ষ স্বল্পমেয়াদি স্বার্থের ভিত্তিতে মিত্র খুঁজতে থাকে, জোটবদ্ধ হয় বা বিরোধিতা করে। তখন এই ধরনের মৈত্রী বা জোট হয় খুবই অস্থির। পক্ষগুলোর এমন আচরণ পুরো ব্যবস্থাকেই অস্থিতিশীল করে তোলে।
এখানে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, প্রতিটি পক্ষের সিদ্ধান্ত অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলে। এই পারস্পরিক প্রভাব প্রায়শই অপ্রত্যাশিত পরিণতি বা ফিডব্যাক লুপ তৈরি করে। ফলে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। একের পর এক ইস্যু বদল হতে থাকে।
দ্বি-পক্ষীয় ব্যবস্থা (যেমন দুই-দলীয় রাজনীতি) সংঘাতের একপর্যায়ে স্থিতাবস্থা অর্জন করে। উভয়পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ বিবেচনায় সমঝোতায় পৌঁছায়। কিন্তু থ্রি-বডি প্রবলেম বা ত্রিমুখী ব্যবস্থায় খুব কমই অনুমানযোগ্য ভারসাম্য তৈরি হয়। স্বার্থগুলো বহুমাত্রিক হওয়ার হওয়ার কারণে স্থির ভারসাম্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
একই ভাবে এ বছর রাজনীতি, অর্থনীতি এবং বাজারের পারস্পরিক ক্রিয়া শেয়ারবাজার, বন্ড, কমোডিটি ও মুদ্রার গতিপথ অনুমান করা ট্রেডার ও বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও কঠিন করে তুলেছে।
‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ শব্দবন্ধটি চীনা ঔপন্যাসিক লিউ সিক্সিনের উপন্যাস ‘দ্য থ্রি-বডি প্রবলেম’ থেকে গণমাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছে। সর্বশেষ এই উপন্যাস অবলম্বনে ২০২৪ সালে সিরিজ মুক্তি দিয়েছে নেটফ্লিক্স। এই সিরিজ রাজনৈতিক বিতর্ক উসকে দিয়েছে।
এই উপন্যাসের উপজীব্য চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কাল। উপন্যাসটিতে উঠে এসেছে রাজনৈতিক চরমপন্থা এবং সরকারি সেন্সরশিপ। নেটফ্লিক্সের নির্মাতারা আধুনিক রাজনীতির সঙ্গেও এর সাদৃশ্য উল্লেখ করেছেন।
লিউ সিক্সিনের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী এবং এর নেটফ্লিক্স সংস্করণে ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ সমস্যাটিকে ‘রাজনৈতিক ও অস্তিত্ববাদী’ বিষয়বস্তুর রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
উপন্যাসটিতে তুলে ধরা হয়েছে, একটি তিন-নক্ষত্র ব্যবস্থায় গ্রহের বিশৃঙ্খল কক্ষপথের কারণে কীভাবে ত্রিসোলারান সভ্যতা অস্তিত্বের হুমকিতে পড়ে। এটিকে মানবজাতির ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার’ সমান্তরাল বলা হচ্ছে। উপন্যাসটিতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে ভয়, আদর্শ (আইডলজি) এবং টিকে থাকার তাগিদ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোকে চালিত করে। উপন্যাসে মানবজাতির বিভিন্ন দল ত্রিসোলারানদের পক্ষে বা বিপক্ষে জোটবদ্ধ হয়। ত্রিসোলারান আক্রমণের হুমকি ফুটিয়ে তোলে কীভাবে ‘বহিরাগত চাপ’ (যেমন জলবায়ু পরিবর্তন বা বৈশ্বিক সংঘাত) জাতিগুলোকে ‘অস্থির জোট বা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ ঠেলে দেয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই থ্রি-বডি প্রবলেম বুঝতে পারাটা সহজ। যুক্তরাষ্ট্র-চীন-রাশিয়া সম্পর্কের মতো ত্রিমুখী কূটনীতি প্রায়শই ‘থ্রি-বডি’ গতিমুখ প্রদর্শন করে। প্রতিটি দেশের পদক্ষেপ (যেমন বাণিজ্য চুক্তি, নিষেধাজ্ঞা বা সামরিক অবস্থান) অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলে। এই পারস্পরিক প্রভাব প্রায়ই অস্থিরতা তৈরি করে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় নিক্সনের চীন সফর (১৯৭২) যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়ন-চীন ত্রিভুজ ভেঙে দিয়েছিল। এই সফর নতুন হিসাব-নিকাশের জন্ম দেয়।
বর্তমান বৈশ্বিক রাজনীতিতে এই তিনটি শক্তি বাণিজ্য যুদ্ধ, সামরিক উত্তেজনা এবং কূটনৈতিক কৌশলের মধ্যে দিয়ে চলছে। ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রচেষ্টা (যেমন, চীনকে প্রতিহত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত জোট) এমন এক পরিবর্তনশীল গতিশীলতা তৈরি করেছে যার কোনো স্থায়ী সমাধান নেই।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ট্রিপল এন্টেন্ট (ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য) বনাম ট্রিপল অ্যালায়েন্স (জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, ইতালি) ‘থ্রি-বডি’র মতো জটিলতা প্রদর্শন করেছিল। যেখানে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং কৌশলগত প্রয়োজনের কারণে জোটগুলো পরিবর্তিত হয়েছিল।
ইউক্রেন সংঘাত এর একটি উদাহরণ: রাশিয়া, ন্যাটো (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে) এবং চীন একটি ত্রিমুখী গতিশীলতা তৈরি করেছে, যেখানে প্রতিটি পক্ষের পদক্ষেপ (নিষেধাজ্ঞা, জ্বালানি চুক্তি, বা সামরিক সাহায্য) অপ্রত্যাশিতভাবে প্রভাব ফেলে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চীন-ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্রিভুজ ‘থ্রি-বডি’ বৈশিষ্ট্য দেখাচ্ছে। বাণিজ্য বিরোধ, জলবায়ু আলোচনা এবং প্রযুক্তিগত মান (যেমন এআই রেগুলেশন) প্রতিটি পক্ষকে সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে বাধ্য করছে, যেখানে কোনো স্থিতিশীল সংহতি নেই। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪-২৫ সালে ইইউ’র ডিজিটাল সার্বভৌমত্বের ওপর জোর (যেমন জিডিপিআর প্রয়োগ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনকে অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের কৌশল সমন্বয় করতে বাধ্য করছে।
এ ছাড়া বহু-দলীয় গণতন্ত্রে, তিনটি প্রভাবশালী দল বা উপদল অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কংগ্রেস, বিজেপি এবং আম আদমি পার্টি (এএপি) বা তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) মতো আঞ্চলিক দলগুলো একটি জটিল অবস্থা তৈরি করেছে। নির্বাচনী ফলাফল এবং আঞ্চলিক স্বার্থের ভিত্তিতে জোটগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। বিজেপির বিপরীতে ইন্ডিয়া জোট কার্যকর না হওয়া এর একটি মোক্ষম দৃষ্টান্ত।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে রক্ষণশীল, বামপন্থী, উদার গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে জোট গঠন অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়ে। কোনো একক দল প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে না। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সাময়িক জোটগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে ক্ষমতা পরিবর্তন করে ফেলে। যেমন, ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের পর লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা যখন কনজারভেটিভদের সঙ্গে জোট বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়ে তখন ব্রিটেনের রাজনীতি এক নতুন মোড় নিয়েছিল।
বাংলাদেশে কতটা প্রাসঙ্গিক
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে অস্থিরতা চলছে, সেখানেও এই থ্রি-বডি প্রবলেম অনেকখানি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক পক্ষগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন। রাজনৈতিক জোট এখনো নিশ্চিত নয়। বিভিন্ন ইস্যুতে বহু মেরু অবস্থান দেখা যাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় জোটের আভাস মিলছে। কিন্তু পরক্ষণেই সেগুলো সাময়িক বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বার্থ ও লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করতে পারছে না। পারস্পরিক প্রভাব অর্থাৎ কোনো একটি দলের তাৎক্ষণিক অবস্থান অন্যদের সিদ্ধান্তেও যেভাবে প্রভাব ফেলছে তাতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
এ ধরনের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে, যদি দলের অভ্যন্তরে প্রতিদ্বন্দ্বী উপদল থাকে। মধ্যপন্থী, প্রগতিশীল এবং পপুলিস্ট (জনতুষ্টিবাদী)—এমন দ্বন্দ্ব অভ্যন্তরীণ অচলাবস্থা বা অস্থির নীতি পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে আমরা ২০২০ সালের মার্কিন ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির কথা স্মরণ করতে পারি। ওই সময় বার্নি স্যান্ডার্সের প্রগতিশীল, জো বাইডেনের মধ্যপন্থী এবং এলিজাবেথ ওয়ারেনের মিশ্র উপদলের মধ্যে উত্তেজনা ঐক্যের পথকে জটিল করে তুলেছিল।
অতীত ও সাম্প্রতিক ইতিহাস থেকে দেখা যায়, রাজনীতির ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ বহু-পক্ষীয় ব্যবস্থায় স্থিতিশীল শাসন বা কূটনীতি কঠিন করে তোলে। ত্রিমুখী মিথস্ক্রিয়াগুলো সহজ সমাধানকে বারবার প্রতিহত করে। এর জন্য পক্ষগুলোর মধ্যে অবিরাম আলোচনা এবং অভিযোজনের প্রয়োজন হয়। আলোচনাই উদ্ভাবনের (যেমন, সৃজনশীল জোট) দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে যদি ভুলভাবে পরিচালিত হয় তবে অচলাবস্থা বা সংঘাতের কারণও হতে পারে।
তাহলে এই ধরনের জটিলতার সম্ভাব্য সমাধান কী হতে পারে? ভূরাজনৈতিক তো বটেই যে কোনো সম্পর্কে মিত্রতার প্রথম শর্ত হলো হলো প্রতিপক্ষের আচরণ ‘অনুমানযোগ্য’ হওয়া। ক্ষুদ্র ও স্বল্পমেয়াদি স্বার্থে যদি কোনো পক্ষ অস্থির ও প্রতারণামূলক আচরণ করতে থাকে তাহলে সমঝোতা কঠিন হয়ে পড়ে। ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করতে স্বল্পমেয়াদি জোট গঠনও কার্যকর হতে পারে। সংসদীয় জোটের ক্ষেত্রে এটি অনেক সময় স্থিতিশীলতা দেয়।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি নিরপেক্ষ চতুর্থ পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা কমাতে পারে। সে ক্ষেত্রেও পক্ষগুলোর মধ্যে সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতা জরুরি।
এসব ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করে পদক্ষেপ নেওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত। সমঝোতার শর্ত তৈরির সুযোগ দিতে অন্যদের অভিপ্রায় প্রকাশ করার জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে।
‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ এখন রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী রূপক। দুই-এর বেশি শক্তি যদি বিরোধে লিপ্ত হয় তাহলে ফলাফল প্রায়শই বিশৃঙ্খল ও অস্থির হয়। নীতি নির্ধারকেরা হয়তো এটি বোঝেন, কিন্তু নানা অনুঘটক ও শক্তি এখানে অস্থিরতা জিইয়ে রাখার পেছনে সক্রিয় থাকতে পারে। এই ধরনের অস্থিরতার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি এড়াতে এবং কার্যকরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে ছাড় দেওয়ার মানসিক নিয়ে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

পদার্থবিদ্যার এক জটিল ধারণা ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’। সহজভাবে এটিকে ‘ত্রিমুখী সমস্যা’ও বলা যেতে পারে। তিনটি মহাজাগতিক বস্তুর মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়া এক অনিশ্চিত অপরিমাপযোগ্য পরিস্থিতি তৈরি করে— এটি বোঝাতেই পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়। এই ধারণাটি এখন রাজনীতির ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনটি প্রধান পক্ষ যেমন—ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থা—পরস্পর যখন এমনভাবে মিথস্ক্রিয়া করে যা অস্থির এবং অননুমেয় ফলাফলের জন্ম দেয়, সেই পরিস্থিতিকেই রাজনীতির ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ বলা হয়। স্বার্থের দ্বন্দ্ব, অনাস্থা, মিত্র পরিবর্তন এবং পারস্পরিক প্রভাব এই পরিস্থিতি তৈরি করে।
রাজনীতিতে থ্রি-বডি প্রবলেম-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, পদার্থবিদ্যার সমস্যাটির মতোই, এখানে কোনো একক পক্ষ অন্যদের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে অনুমান বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে একটা অস্থির রাজনৈতিক গতিশীলতা তৈরি হয়।
কোনো এক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রতিটি পক্ষ স্বল্পমেয়াদি স্বার্থের ভিত্তিতে মিত্র খুঁজতে থাকে, জোটবদ্ধ হয় বা বিরোধিতা করে। তখন এই ধরনের মৈত্রী বা জোট হয় খুবই অস্থির। পক্ষগুলোর এমন আচরণ পুরো ব্যবস্থাকেই অস্থিতিশীল করে তোলে।
এখানে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, প্রতিটি পক্ষের সিদ্ধান্ত অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলে। এই পারস্পরিক প্রভাব প্রায়শই অপ্রত্যাশিত পরিণতি বা ফিডব্যাক লুপ তৈরি করে। ফলে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। একের পর এক ইস্যু বদল হতে থাকে।
দ্বি-পক্ষীয় ব্যবস্থা (যেমন দুই-দলীয় রাজনীতি) সংঘাতের একপর্যায়ে স্থিতাবস্থা অর্জন করে। উভয়পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ বিবেচনায় সমঝোতায় পৌঁছায়। কিন্তু থ্রি-বডি প্রবলেম বা ত্রিমুখী ব্যবস্থায় খুব কমই অনুমানযোগ্য ভারসাম্য তৈরি হয়। স্বার্থগুলো বহুমাত্রিক হওয়ার হওয়ার কারণে স্থির ভারসাম্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
একই ভাবে এ বছর রাজনীতি, অর্থনীতি এবং বাজারের পারস্পরিক ক্রিয়া শেয়ারবাজার, বন্ড, কমোডিটি ও মুদ্রার গতিপথ অনুমান করা ট্রেডার ও বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও কঠিন করে তুলেছে।
‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ শব্দবন্ধটি চীনা ঔপন্যাসিক লিউ সিক্সিনের উপন্যাস ‘দ্য থ্রি-বডি প্রবলেম’ থেকে গণমাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছে। সর্বশেষ এই উপন্যাস অবলম্বনে ২০২৪ সালে সিরিজ মুক্তি দিয়েছে নেটফ্লিক্স। এই সিরিজ রাজনৈতিক বিতর্ক উসকে দিয়েছে।
এই উপন্যাসের উপজীব্য চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কাল। উপন্যাসটিতে উঠে এসেছে রাজনৈতিক চরমপন্থা এবং সরকারি সেন্সরশিপ। নেটফ্লিক্সের নির্মাতারা আধুনিক রাজনীতির সঙ্গেও এর সাদৃশ্য উল্লেখ করেছেন।
লিউ সিক্সিনের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী এবং এর নেটফ্লিক্স সংস্করণে ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ সমস্যাটিকে ‘রাজনৈতিক ও অস্তিত্ববাদী’ বিষয়বস্তুর রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
উপন্যাসটিতে তুলে ধরা হয়েছে, একটি তিন-নক্ষত্র ব্যবস্থায় গ্রহের বিশৃঙ্খল কক্ষপথের কারণে কীভাবে ত্রিসোলারান সভ্যতা অস্তিত্বের হুমকিতে পড়ে। এটিকে মানবজাতির ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার’ সমান্তরাল বলা হচ্ছে। উপন্যাসটিতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে ভয়, আদর্শ (আইডলজি) এবং টিকে থাকার তাগিদ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোকে চালিত করে। উপন্যাসে মানবজাতির বিভিন্ন দল ত্রিসোলারানদের পক্ষে বা বিপক্ষে জোটবদ্ধ হয়। ত্রিসোলারান আক্রমণের হুমকি ফুটিয়ে তোলে কীভাবে ‘বহিরাগত চাপ’ (যেমন জলবায়ু পরিবর্তন বা বৈশ্বিক সংঘাত) জাতিগুলোকে ‘অস্থির জোট বা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ ঠেলে দেয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই থ্রি-বডি প্রবলেম বুঝতে পারাটা সহজ। যুক্তরাষ্ট্র-চীন-রাশিয়া সম্পর্কের মতো ত্রিমুখী কূটনীতি প্রায়শই ‘থ্রি-বডি’ গতিমুখ প্রদর্শন করে। প্রতিটি দেশের পদক্ষেপ (যেমন বাণিজ্য চুক্তি, নিষেধাজ্ঞা বা সামরিক অবস্থান) অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলে। এই পারস্পরিক প্রভাব প্রায়ই অস্থিরতা তৈরি করে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় নিক্সনের চীন সফর (১৯৭২) যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়ন-চীন ত্রিভুজ ভেঙে দিয়েছিল। এই সফর নতুন হিসাব-নিকাশের জন্ম দেয়।
বর্তমান বৈশ্বিক রাজনীতিতে এই তিনটি শক্তি বাণিজ্য যুদ্ধ, সামরিক উত্তেজনা এবং কূটনৈতিক কৌশলের মধ্যে দিয়ে চলছে। ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রচেষ্টা (যেমন, চীনকে প্রতিহত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত জোট) এমন এক পরিবর্তনশীল গতিশীলতা তৈরি করেছে যার কোনো স্থায়ী সমাধান নেই।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ট্রিপল এন্টেন্ট (ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য) বনাম ট্রিপল অ্যালায়েন্স (জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, ইতালি) ‘থ্রি-বডি’র মতো জটিলতা প্রদর্শন করেছিল। যেখানে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং কৌশলগত প্রয়োজনের কারণে জোটগুলো পরিবর্তিত হয়েছিল।
ইউক্রেন সংঘাত এর একটি উদাহরণ: রাশিয়া, ন্যাটো (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে) এবং চীন একটি ত্রিমুখী গতিশীলতা তৈরি করেছে, যেখানে প্রতিটি পক্ষের পদক্ষেপ (নিষেধাজ্ঞা, জ্বালানি চুক্তি, বা সামরিক সাহায্য) অপ্রত্যাশিতভাবে প্রভাব ফেলে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চীন-ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্রিভুজ ‘থ্রি-বডি’ বৈশিষ্ট্য দেখাচ্ছে। বাণিজ্য বিরোধ, জলবায়ু আলোচনা এবং প্রযুক্তিগত মান (যেমন এআই রেগুলেশন) প্রতিটি পক্ষকে সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে বাধ্য করছে, যেখানে কোনো স্থিতিশীল সংহতি নেই। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪-২৫ সালে ইইউ’র ডিজিটাল সার্বভৌমত্বের ওপর জোর (যেমন জিডিপিআর প্রয়োগ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনকে অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের কৌশল সমন্বয় করতে বাধ্য করছে।
এ ছাড়া বহু-দলীয় গণতন্ত্রে, তিনটি প্রভাবশালী দল বা উপদল অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কংগ্রেস, বিজেপি এবং আম আদমি পার্টি (এএপি) বা তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) মতো আঞ্চলিক দলগুলো একটি জটিল অবস্থা তৈরি করেছে। নির্বাচনী ফলাফল এবং আঞ্চলিক স্বার্থের ভিত্তিতে জোটগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। বিজেপির বিপরীতে ইন্ডিয়া জোট কার্যকর না হওয়া এর একটি মোক্ষম দৃষ্টান্ত।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে রক্ষণশীল, বামপন্থী, উদার গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে জোট গঠন অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়ে। কোনো একক দল প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে না। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সাময়িক জোটগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে ক্ষমতা পরিবর্তন করে ফেলে। যেমন, ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের পর লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা যখন কনজারভেটিভদের সঙ্গে জোট বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়ে তখন ব্রিটেনের রাজনীতি এক নতুন মোড় নিয়েছিল।
বাংলাদেশে কতটা প্রাসঙ্গিক
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে অস্থিরতা চলছে, সেখানেও এই থ্রি-বডি প্রবলেম অনেকখানি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক পক্ষগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন। রাজনৈতিক জোট এখনো নিশ্চিত নয়। বিভিন্ন ইস্যুতে বহু মেরু অবস্থান দেখা যাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় জোটের আভাস মিলছে। কিন্তু পরক্ষণেই সেগুলো সাময়িক বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বার্থ ও লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করতে পারছে না। পারস্পরিক প্রভাব অর্থাৎ কোনো একটি দলের তাৎক্ষণিক অবস্থান অন্যদের সিদ্ধান্তেও যেভাবে প্রভাব ফেলছে তাতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
এ ধরনের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে, যদি দলের অভ্যন্তরে প্রতিদ্বন্দ্বী উপদল থাকে। মধ্যপন্থী, প্রগতিশীল এবং পপুলিস্ট (জনতুষ্টিবাদী)—এমন দ্বন্দ্ব অভ্যন্তরীণ অচলাবস্থা বা অস্থির নীতি পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে আমরা ২০২০ সালের মার্কিন ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির কথা স্মরণ করতে পারি। ওই সময় বার্নি স্যান্ডার্সের প্রগতিশীল, জো বাইডেনের মধ্যপন্থী এবং এলিজাবেথ ওয়ারেনের মিশ্র উপদলের মধ্যে উত্তেজনা ঐক্যের পথকে জটিল করে তুলেছিল।
অতীত ও সাম্প্রতিক ইতিহাস থেকে দেখা যায়, রাজনীতির ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ বহু-পক্ষীয় ব্যবস্থায় স্থিতিশীল শাসন বা কূটনীতি কঠিন করে তোলে। ত্রিমুখী মিথস্ক্রিয়াগুলো সহজ সমাধানকে বারবার প্রতিহত করে। এর জন্য পক্ষগুলোর মধ্যে অবিরাম আলোচনা এবং অভিযোজনের প্রয়োজন হয়। আলোচনাই উদ্ভাবনের (যেমন, সৃজনশীল জোট) দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে যদি ভুলভাবে পরিচালিত হয় তবে অচলাবস্থা বা সংঘাতের কারণও হতে পারে।
তাহলে এই ধরনের জটিলতার সম্ভাব্য সমাধান কী হতে পারে? ভূরাজনৈতিক তো বটেই যে কোনো সম্পর্কে মিত্রতার প্রথম শর্ত হলো হলো প্রতিপক্ষের আচরণ ‘অনুমানযোগ্য’ হওয়া। ক্ষুদ্র ও স্বল্পমেয়াদি স্বার্থে যদি কোনো পক্ষ অস্থির ও প্রতারণামূলক আচরণ করতে থাকে তাহলে সমঝোতা কঠিন হয়ে পড়ে। ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করতে স্বল্পমেয়াদি জোট গঠনও কার্যকর হতে পারে। সংসদীয় জোটের ক্ষেত্রে এটি অনেক সময় স্থিতিশীলতা দেয়।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি নিরপেক্ষ চতুর্থ পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা কমাতে পারে। সে ক্ষেত্রেও পক্ষগুলোর মধ্যে সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতা জরুরি।
এসব ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করে পদক্ষেপ নেওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত। সমঝোতার শর্ত তৈরির সুযোগ দিতে অন্যদের অভিপ্রায় প্রকাশ করার জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে।
‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ এখন রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী রূপক। দুই-এর বেশি শক্তি যদি বিরোধে লিপ্ত হয় তাহলে ফলাফল প্রায়শই বিশৃঙ্খল ও অস্থির হয়। নীতি নির্ধারকেরা হয়তো এটি বোঝেন, কিন্তু নানা অনুঘটক ও শক্তি এখানে অস্থিরতা জিইয়ে রাখার পেছনে সক্রিয় থাকতে পারে। এই ধরনের অস্থিরতার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি এড়াতে এবং কার্যকরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে ছাড় দেওয়ার মানসিক নিয়ে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

পদার্থবিদ্যার এক জটিল ধারণা ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’। সহজভাবে এটিকে ‘ত্রিমুখী সমস্যা’ও বলা যেতে পারে। তিনটি মহাজাগতিক বস্তুর মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়া এক অনিশ্চিত অপরিমাপযোগ্য পরিস্থিতি তৈরি করে— এটি বোঝাতেই পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়। এই ধারণাটি এখন রাজনীতির ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনটি প্রধান পক্ষ যেমন—ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থা—পরস্পর যখন এমনভাবে মিথস্ক্রিয়া করে যা অস্থির এবং অননুমেয় ফলাফলের জন্ম দেয়, সেই পরিস্থিতিকেই রাজনীতির ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ বলা হয়। স্বার্থের দ্বন্দ্ব, অনাস্থা, মিত্র পরিবর্তন এবং পারস্পরিক প্রভাব এই পরিস্থিতি তৈরি করে।
রাজনীতিতে থ্রি-বডি প্রবলেম-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, পদার্থবিদ্যার সমস্যাটির মতোই, এখানে কোনো একক পক্ষ অন্যদের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে অনুমান বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে একটা অস্থির রাজনৈতিক গতিশীলতা তৈরি হয়।
কোনো এক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রতিটি পক্ষ স্বল্পমেয়াদি স্বার্থের ভিত্তিতে মিত্র খুঁজতে থাকে, জোটবদ্ধ হয় বা বিরোধিতা করে। তখন এই ধরনের মৈত্রী বা জোট হয় খুবই অস্থির। পক্ষগুলোর এমন আচরণ পুরো ব্যবস্থাকেই অস্থিতিশীল করে তোলে।
এখানে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, প্রতিটি পক্ষের সিদ্ধান্ত অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলে। এই পারস্পরিক প্রভাব প্রায়শই অপ্রত্যাশিত পরিণতি বা ফিডব্যাক লুপ তৈরি করে। ফলে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। একের পর এক ইস্যু বদল হতে থাকে।
দ্বি-পক্ষীয় ব্যবস্থা (যেমন দুই-দলীয় রাজনীতি) সংঘাতের একপর্যায়ে স্থিতাবস্থা অর্জন করে। উভয়পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ বিবেচনায় সমঝোতায় পৌঁছায়। কিন্তু থ্রি-বডি প্রবলেম বা ত্রিমুখী ব্যবস্থায় খুব কমই অনুমানযোগ্য ভারসাম্য তৈরি হয়। স্বার্থগুলো বহুমাত্রিক হওয়ার হওয়ার কারণে স্থির ভারসাম্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
একই ভাবে এ বছর রাজনীতি, অর্থনীতি এবং বাজারের পারস্পরিক ক্রিয়া শেয়ারবাজার, বন্ড, কমোডিটি ও মুদ্রার গতিপথ অনুমান করা ট্রেডার ও বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও কঠিন করে তুলেছে।
‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ শব্দবন্ধটি চীনা ঔপন্যাসিক লিউ সিক্সিনের উপন্যাস ‘দ্য থ্রি-বডি প্রবলেম’ থেকে গণমাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছে। সর্বশেষ এই উপন্যাস অবলম্বনে ২০২৪ সালে সিরিজ মুক্তি দিয়েছে নেটফ্লিক্স। এই সিরিজ রাজনৈতিক বিতর্ক উসকে দিয়েছে।
এই উপন্যাসের উপজীব্য চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কাল। উপন্যাসটিতে উঠে এসেছে রাজনৈতিক চরমপন্থা এবং সরকারি সেন্সরশিপ। নেটফ্লিক্সের নির্মাতারা আধুনিক রাজনীতির সঙ্গেও এর সাদৃশ্য উল্লেখ করেছেন।
লিউ সিক্সিনের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী এবং এর নেটফ্লিক্স সংস্করণে ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ সমস্যাটিকে ‘রাজনৈতিক ও অস্তিত্ববাদী’ বিষয়বস্তুর রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
উপন্যাসটিতে তুলে ধরা হয়েছে, একটি তিন-নক্ষত্র ব্যবস্থায় গ্রহের বিশৃঙ্খল কক্ষপথের কারণে কীভাবে ত্রিসোলারান সভ্যতা অস্তিত্বের হুমকিতে পড়ে। এটিকে মানবজাতির ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার’ সমান্তরাল বলা হচ্ছে। উপন্যাসটিতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে ভয়, আদর্শ (আইডলজি) এবং টিকে থাকার তাগিদ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোকে চালিত করে। উপন্যাসে মানবজাতির বিভিন্ন দল ত্রিসোলারানদের পক্ষে বা বিপক্ষে জোটবদ্ধ হয়। ত্রিসোলারান আক্রমণের হুমকি ফুটিয়ে তোলে কীভাবে ‘বহিরাগত চাপ’ (যেমন জলবায়ু পরিবর্তন বা বৈশ্বিক সংঘাত) জাতিগুলোকে ‘অস্থির জোট বা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ ঠেলে দেয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই থ্রি-বডি প্রবলেম বুঝতে পারাটা সহজ। যুক্তরাষ্ট্র-চীন-রাশিয়া সম্পর্কের মতো ত্রিমুখী কূটনীতি প্রায়শই ‘থ্রি-বডি’ গতিমুখ প্রদর্শন করে। প্রতিটি দেশের পদক্ষেপ (যেমন বাণিজ্য চুক্তি, নিষেধাজ্ঞা বা সামরিক অবস্থান) অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলে। এই পারস্পরিক প্রভাব প্রায়ই অস্থিরতা তৈরি করে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় নিক্সনের চীন সফর (১৯৭২) যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়ন-চীন ত্রিভুজ ভেঙে দিয়েছিল। এই সফর নতুন হিসাব-নিকাশের জন্ম দেয়।
বর্তমান বৈশ্বিক রাজনীতিতে এই তিনটি শক্তি বাণিজ্য যুদ্ধ, সামরিক উত্তেজনা এবং কূটনৈতিক কৌশলের মধ্যে দিয়ে চলছে। ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রচেষ্টা (যেমন, চীনকে প্রতিহত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত জোট) এমন এক পরিবর্তনশীল গতিশীলতা তৈরি করেছে যার কোনো স্থায়ী সমাধান নেই।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ট্রিপল এন্টেন্ট (ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য) বনাম ট্রিপল অ্যালায়েন্স (জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, ইতালি) ‘থ্রি-বডি’র মতো জটিলতা প্রদর্শন করেছিল। যেখানে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং কৌশলগত প্রয়োজনের কারণে জোটগুলো পরিবর্তিত হয়েছিল।
ইউক্রেন সংঘাত এর একটি উদাহরণ: রাশিয়া, ন্যাটো (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে) এবং চীন একটি ত্রিমুখী গতিশীলতা তৈরি করেছে, যেখানে প্রতিটি পক্ষের পদক্ষেপ (নিষেধাজ্ঞা, জ্বালানি চুক্তি, বা সামরিক সাহায্য) অপ্রত্যাশিতভাবে প্রভাব ফেলে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চীন-ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্রিভুজ ‘থ্রি-বডি’ বৈশিষ্ট্য দেখাচ্ছে। বাণিজ্য বিরোধ, জলবায়ু আলোচনা এবং প্রযুক্তিগত মান (যেমন এআই রেগুলেশন) প্রতিটি পক্ষকে সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে বাধ্য করছে, যেখানে কোনো স্থিতিশীল সংহতি নেই। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪-২৫ সালে ইইউ’র ডিজিটাল সার্বভৌমত্বের ওপর জোর (যেমন জিডিপিআর প্রয়োগ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনকে অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের কৌশল সমন্বয় করতে বাধ্য করছে।
এ ছাড়া বহু-দলীয় গণতন্ত্রে, তিনটি প্রভাবশালী দল বা উপদল অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কংগ্রেস, বিজেপি এবং আম আদমি পার্টি (এএপি) বা তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) মতো আঞ্চলিক দলগুলো একটি জটিল অবস্থা তৈরি করেছে। নির্বাচনী ফলাফল এবং আঞ্চলিক স্বার্থের ভিত্তিতে জোটগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। বিজেপির বিপরীতে ইন্ডিয়া জোট কার্যকর না হওয়া এর একটি মোক্ষম দৃষ্টান্ত।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে রক্ষণশীল, বামপন্থী, উদার গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে জোট গঠন অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়ে। কোনো একক দল প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে না। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সাময়িক জোটগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে ক্ষমতা পরিবর্তন করে ফেলে। যেমন, ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের পর লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা যখন কনজারভেটিভদের সঙ্গে জোট বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়ে তখন ব্রিটেনের রাজনীতি এক নতুন মোড় নিয়েছিল।
বাংলাদেশে কতটা প্রাসঙ্গিক
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে অস্থিরতা চলছে, সেখানেও এই থ্রি-বডি প্রবলেম অনেকখানি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক পক্ষগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন। রাজনৈতিক জোট এখনো নিশ্চিত নয়। বিভিন্ন ইস্যুতে বহু মেরু অবস্থান দেখা যাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় জোটের আভাস মিলছে। কিন্তু পরক্ষণেই সেগুলো সাময়িক বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বার্থ ও লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করতে পারছে না। পারস্পরিক প্রভাব অর্থাৎ কোনো একটি দলের তাৎক্ষণিক অবস্থান অন্যদের সিদ্ধান্তেও যেভাবে প্রভাব ফেলছে তাতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
এ ধরনের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে, যদি দলের অভ্যন্তরে প্রতিদ্বন্দ্বী উপদল থাকে। মধ্যপন্থী, প্রগতিশীল এবং পপুলিস্ট (জনতুষ্টিবাদী)—এমন দ্বন্দ্ব অভ্যন্তরীণ অচলাবস্থা বা অস্থির নীতি পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে আমরা ২০২০ সালের মার্কিন ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির কথা স্মরণ করতে পারি। ওই সময় বার্নি স্যান্ডার্সের প্রগতিশীল, জো বাইডেনের মধ্যপন্থী এবং এলিজাবেথ ওয়ারেনের মিশ্র উপদলের মধ্যে উত্তেজনা ঐক্যের পথকে জটিল করে তুলেছিল।
অতীত ও সাম্প্রতিক ইতিহাস থেকে দেখা যায়, রাজনীতির ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ বহু-পক্ষীয় ব্যবস্থায় স্থিতিশীল শাসন বা কূটনীতি কঠিন করে তোলে। ত্রিমুখী মিথস্ক্রিয়াগুলো সহজ সমাধানকে বারবার প্রতিহত করে। এর জন্য পক্ষগুলোর মধ্যে অবিরাম আলোচনা এবং অভিযোজনের প্রয়োজন হয়। আলোচনাই উদ্ভাবনের (যেমন, সৃজনশীল জোট) দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে যদি ভুলভাবে পরিচালিত হয় তবে অচলাবস্থা বা সংঘাতের কারণও হতে পারে।
তাহলে এই ধরনের জটিলতার সম্ভাব্য সমাধান কী হতে পারে? ভূরাজনৈতিক তো বটেই যে কোনো সম্পর্কে মিত্রতার প্রথম শর্ত হলো হলো প্রতিপক্ষের আচরণ ‘অনুমানযোগ্য’ হওয়া। ক্ষুদ্র ও স্বল্পমেয়াদি স্বার্থে যদি কোনো পক্ষ অস্থির ও প্রতারণামূলক আচরণ করতে থাকে তাহলে সমঝোতা কঠিন হয়ে পড়ে। ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করতে স্বল্পমেয়াদি জোট গঠনও কার্যকর হতে পারে। সংসদীয় জোটের ক্ষেত্রে এটি অনেক সময় স্থিতিশীলতা দেয়।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি নিরপেক্ষ চতুর্থ পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা কমাতে পারে। সে ক্ষেত্রেও পক্ষগুলোর মধ্যে সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতা জরুরি।
এসব ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করে পদক্ষেপ নেওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত। সমঝোতার শর্ত তৈরির সুযোগ দিতে অন্যদের অভিপ্রায় প্রকাশ করার জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে।
‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ এখন রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী রূপক। দুই-এর বেশি শক্তি যদি বিরোধে লিপ্ত হয় তাহলে ফলাফল প্রায়শই বিশৃঙ্খল ও অস্থির হয়। নীতি নির্ধারকেরা হয়তো এটি বোঝেন, কিন্তু নানা অনুঘটক ও শক্তি এখানে অস্থিরতা জিইয়ে রাখার পেছনে সক্রিয় থাকতে পারে। এই ধরনের অস্থিরতার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি এড়াতে এবং কার্যকরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে ছাড় দেওয়ার মানসিক নিয়ে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

পদার্থবিদ্যার এক জটিল ধারণা ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’। সহজভাবে এটিকে ‘ত্রিমুখী সমস্যা’ও বলা যেতে পারে। তিনটি মহাজাগতিক বস্তুর মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়া এক অনিশ্চিত অপরিমাপযোগ্য পরিস্থিতি তৈরি করে— এটি বোঝাতেই পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়। এই ধারণাটি এখন রাজনীতির ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনটি প্রধান পক্ষ যেমন—ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থা—পরস্পর যখন এমনভাবে মিথস্ক্রিয়া করে যা অস্থির এবং অননুমেয় ফলাফলের জন্ম দেয়, সেই পরিস্থিতিকেই রাজনীতির ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ বলা হয়। স্বার্থের দ্বন্দ্ব, অনাস্থা, মিত্র পরিবর্তন এবং পারস্পরিক প্রভাব এই পরিস্থিতি তৈরি করে।
রাজনীতিতে থ্রি-বডি প্রবলেম-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, পদার্থবিদ্যার সমস্যাটির মতোই, এখানে কোনো একক পক্ষ অন্যদের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে অনুমান বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে একটা অস্থির রাজনৈতিক গতিশীলতা তৈরি হয়।
কোনো এক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রতিটি পক্ষ স্বল্পমেয়াদি স্বার্থের ভিত্তিতে মিত্র খুঁজতে থাকে, জোটবদ্ধ হয় বা বিরোধিতা করে। তখন এই ধরনের মৈত্রী বা জোট হয় খুবই অস্থির। পক্ষগুলোর এমন আচরণ পুরো ব্যবস্থাকেই অস্থিতিশীল করে তোলে।
এখানে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, প্রতিটি পক্ষের সিদ্ধান্ত অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলে। এই পারস্পরিক প্রভাব প্রায়শই অপ্রত্যাশিত পরিণতি বা ফিডব্যাক লুপ তৈরি করে। ফলে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। একের পর এক ইস্যু বদল হতে থাকে।
দ্বি-পক্ষীয় ব্যবস্থা (যেমন দুই-দলীয় রাজনীতি) সংঘাতের একপর্যায়ে স্থিতাবস্থা অর্জন করে। উভয়পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ বিবেচনায় সমঝোতায় পৌঁছায়। কিন্তু থ্রি-বডি প্রবলেম বা ত্রিমুখী ব্যবস্থায় খুব কমই অনুমানযোগ্য ভারসাম্য তৈরি হয়। স্বার্থগুলো বহুমাত্রিক হওয়ার হওয়ার কারণে স্থির ভারসাম্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
একই ভাবে এ বছর রাজনীতি, অর্থনীতি এবং বাজারের পারস্পরিক ক্রিয়া শেয়ারবাজার, বন্ড, কমোডিটি ও মুদ্রার গতিপথ অনুমান করা ট্রেডার ও বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও কঠিন করে তুলেছে।
‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ শব্দবন্ধটি চীনা ঔপন্যাসিক লিউ সিক্সিনের উপন্যাস ‘দ্য থ্রি-বডি প্রবলেম’ থেকে গণমাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছে। সর্বশেষ এই উপন্যাস অবলম্বনে ২০২৪ সালে সিরিজ মুক্তি দিয়েছে নেটফ্লিক্স। এই সিরিজ রাজনৈতিক বিতর্ক উসকে দিয়েছে।
এই উপন্যাসের উপজীব্য চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কাল। উপন্যাসটিতে উঠে এসেছে রাজনৈতিক চরমপন্থা এবং সরকারি সেন্সরশিপ। নেটফ্লিক্সের নির্মাতারা আধুনিক রাজনীতির সঙ্গেও এর সাদৃশ্য উল্লেখ করেছেন।
লিউ সিক্সিনের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী এবং এর নেটফ্লিক্স সংস্করণে ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ সমস্যাটিকে ‘রাজনৈতিক ও অস্তিত্ববাদী’ বিষয়বস্তুর রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
উপন্যাসটিতে তুলে ধরা হয়েছে, একটি তিন-নক্ষত্র ব্যবস্থায় গ্রহের বিশৃঙ্খল কক্ষপথের কারণে কীভাবে ত্রিসোলারান সভ্যতা অস্তিত্বের হুমকিতে পড়ে। এটিকে মানবজাতির ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার’ সমান্তরাল বলা হচ্ছে। উপন্যাসটিতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে ভয়, আদর্শ (আইডলজি) এবং টিকে থাকার তাগিদ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোকে চালিত করে। উপন্যাসে মানবজাতির বিভিন্ন দল ত্রিসোলারানদের পক্ষে বা বিপক্ষে জোটবদ্ধ হয়। ত্রিসোলারান আক্রমণের হুমকি ফুটিয়ে তোলে কীভাবে ‘বহিরাগত চাপ’ (যেমন জলবায়ু পরিবর্তন বা বৈশ্বিক সংঘাত) জাতিগুলোকে ‘অস্থির জোট বা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ ঠেলে দেয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই থ্রি-বডি প্রবলেম বুঝতে পারাটা সহজ। যুক্তরাষ্ট্র-চীন-রাশিয়া সম্পর্কের মতো ত্রিমুখী কূটনীতি প্রায়শই ‘থ্রি-বডি’ গতিমুখ প্রদর্শন করে। প্রতিটি দেশের পদক্ষেপ (যেমন বাণিজ্য চুক্তি, নিষেধাজ্ঞা বা সামরিক অবস্থান) অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলে। এই পারস্পরিক প্রভাব প্রায়ই অস্থিরতা তৈরি করে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় নিক্সনের চীন সফর (১৯৭২) যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়ন-চীন ত্রিভুজ ভেঙে দিয়েছিল। এই সফর নতুন হিসাব-নিকাশের জন্ম দেয়।
বর্তমান বৈশ্বিক রাজনীতিতে এই তিনটি শক্তি বাণিজ্য যুদ্ধ, সামরিক উত্তেজনা এবং কূটনৈতিক কৌশলের মধ্যে দিয়ে চলছে। ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রচেষ্টা (যেমন, চীনকে প্রতিহত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত জোট) এমন এক পরিবর্তনশীল গতিশীলতা তৈরি করেছে যার কোনো স্থায়ী সমাধান নেই।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ট্রিপল এন্টেন্ট (ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য) বনাম ট্রিপল অ্যালায়েন্স (জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, ইতালি) ‘থ্রি-বডি’র মতো জটিলতা প্রদর্শন করেছিল। যেখানে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং কৌশলগত প্রয়োজনের কারণে জোটগুলো পরিবর্তিত হয়েছিল।
ইউক্রেন সংঘাত এর একটি উদাহরণ: রাশিয়া, ন্যাটো (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে) এবং চীন একটি ত্রিমুখী গতিশীলতা তৈরি করেছে, যেখানে প্রতিটি পক্ষের পদক্ষেপ (নিষেধাজ্ঞা, জ্বালানি চুক্তি, বা সামরিক সাহায্য) অপ্রত্যাশিতভাবে প্রভাব ফেলে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চীন-ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্রিভুজ ‘থ্রি-বডি’ বৈশিষ্ট্য দেখাচ্ছে। বাণিজ্য বিরোধ, জলবায়ু আলোচনা এবং প্রযুক্তিগত মান (যেমন এআই রেগুলেশন) প্রতিটি পক্ষকে সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে বাধ্য করছে, যেখানে কোনো স্থিতিশীল সংহতি নেই। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪-২৫ সালে ইইউ’র ডিজিটাল সার্বভৌমত্বের ওপর জোর (যেমন জিডিপিআর প্রয়োগ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনকে অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের কৌশল সমন্বয় করতে বাধ্য করছে।
এ ছাড়া বহু-দলীয় গণতন্ত্রে, তিনটি প্রভাবশালী দল বা উপদল অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কংগ্রেস, বিজেপি এবং আম আদমি পার্টি (এএপি) বা তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) মতো আঞ্চলিক দলগুলো একটি জটিল অবস্থা তৈরি করেছে। নির্বাচনী ফলাফল এবং আঞ্চলিক স্বার্থের ভিত্তিতে জোটগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। বিজেপির বিপরীতে ইন্ডিয়া জোট কার্যকর না হওয়া এর একটি মোক্ষম দৃষ্টান্ত।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে রক্ষণশীল, বামপন্থী, উদার গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে জোট গঠন অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়ে। কোনো একক দল প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে না। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সাময়িক জোটগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে ক্ষমতা পরিবর্তন করে ফেলে। যেমন, ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের পর লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা যখন কনজারভেটিভদের সঙ্গে জোট বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়ে তখন ব্রিটেনের রাজনীতি এক নতুন মোড় নিয়েছিল।
বাংলাদেশে কতটা প্রাসঙ্গিক
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে অস্থিরতা চলছে, সেখানেও এই থ্রি-বডি প্রবলেম অনেকখানি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক পক্ষগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন। রাজনৈতিক জোট এখনো নিশ্চিত নয়। বিভিন্ন ইস্যুতে বহু মেরু অবস্থান দেখা যাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় জোটের আভাস মিলছে। কিন্তু পরক্ষণেই সেগুলো সাময়িক বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বার্থ ও লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করতে পারছে না। পারস্পরিক প্রভাব অর্থাৎ কোনো একটি দলের তাৎক্ষণিক অবস্থান অন্যদের সিদ্ধান্তেও যেভাবে প্রভাব ফেলছে তাতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
এ ধরনের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে, যদি দলের অভ্যন্তরে প্রতিদ্বন্দ্বী উপদল থাকে। মধ্যপন্থী, প্রগতিশীল এবং পপুলিস্ট (জনতুষ্টিবাদী)—এমন দ্বন্দ্ব অভ্যন্তরীণ অচলাবস্থা বা অস্থির নীতি পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে আমরা ২০২০ সালের মার্কিন ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির কথা স্মরণ করতে পারি। ওই সময় বার্নি স্যান্ডার্সের প্রগতিশীল, জো বাইডেনের মধ্যপন্থী এবং এলিজাবেথ ওয়ারেনের মিশ্র উপদলের মধ্যে উত্তেজনা ঐক্যের পথকে জটিল করে তুলেছিল।
অতীত ও সাম্প্রতিক ইতিহাস থেকে দেখা যায়, রাজনীতির ‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ বহু-পক্ষীয় ব্যবস্থায় স্থিতিশীল শাসন বা কূটনীতি কঠিন করে তোলে। ত্রিমুখী মিথস্ক্রিয়াগুলো সহজ সমাধানকে বারবার প্রতিহত করে। এর জন্য পক্ষগুলোর মধ্যে অবিরাম আলোচনা এবং অভিযোজনের প্রয়োজন হয়। আলোচনাই উদ্ভাবনের (যেমন, সৃজনশীল জোট) দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে যদি ভুলভাবে পরিচালিত হয় তবে অচলাবস্থা বা সংঘাতের কারণও হতে পারে।
তাহলে এই ধরনের জটিলতার সম্ভাব্য সমাধান কী হতে পারে? ভূরাজনৈতিক তো বটেই যে কোনো সম্পর্কে মিত্রতার প্রথম শর্ত হলো হলো প্রতিপক্ষের আচরণ ‘অনুমানযোগ্য’ হওয়া। ক্ষুদ্র ও স্বল্পমেয়াদি স্বার্থে যদি কোনো পক্ষ অস্থির ও প্রতারণামূলক আচরণ করতে থাকে তাহলে সমঝোতা কঠিন হয়ে পড়ে। ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করতে স্বল্পমেয়াদি জোট গঠনও কার্যকর হতে পারে। সংসদীয় জোটের ক্ষেত্রে এটি অনেক সময় স্থিতিশীলতা দেয়।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি নিরপেক্ষ চতুর্থ পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা কমাতে পারে। সে ক্ষেত্রেও পক্ষগুলোর মধ্যে সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতা জরুরি।
এসব ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করে পদক্ষেপ নেওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত। সমঝোতার শর্ত তৈরির সুযোগ দিতে অন্যদের অভিপ্রায় প্রকাশ করার জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে।
‘থ্রি-বডি প্রবলেম’ এখন রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী রূপক। দুই-এর বেশি শক্তি যদি বিরোধে লিপ্ত হয় তাহলে ফলাফল প্রায়শই বিশৃঙ্খল ও অস্থির হয়। নীতি নির্ধারকেরা হয়তো এটি বোঝেন, কিন্তু নানা অনুঘটক ও শক্তি এখানে অস্থিরতা জিইয়ে রাখার পেছনে সক্রিয় থাকতে পারে। এই ধরনের অস্থিরতার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি এড়াতে এবং কার্যকরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে ছাড় দেওয়ার মানসিক নিয়ে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেও
১ ঘণ্টা আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রুশদের মতে যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইউক্রেন তাদের শর্তগুলো মানতে চাইছে না, সেটাই শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়। অন্যদিকে কিয়েভ এবং তার অধিকাংশ ইউরোপীয় মিত্রদের বক্তব্য, এই যুদ্ধবিরতির চুক্তির পথে প্রধান বাধা হলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল মস্কোয় যান। সেখানে পুতিনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়, যা চলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে। এই দলে ছিলেন আমেরিকার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার।
পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ এই বৈঠককে ‘খুবই কাজের এবং গঠনমূলক’ বললেও স্বীকার করেন যে, ‘সামনে অনেক পথ বাকি।’ তিনি বলেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছা হলো ‘মূল প্রশ্ন।’ তবে তিনি এটাও মেনে নেন যে, ভূখণ্ড সংক্রান্ত প্রশ্নে কোনো সমঝোতা হয়নি।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা রাশিয়ার অবস্থানকে একেবারেই হাস্যকর মনে করছেন। কারণ, মস্কোই ২০২২ সালে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে। তাদের ধারণা, ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে লাগাতার বোমা হামলা চলার কারণে পুতিনের আসলে শান্তিতে কোনো প্রকৃত আগ্রহ নেই।
আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের ভিজিটিং ফেলো ও রুশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইলিয়া বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘যেমনটা প্রত্যাশা করা গিয়েছিল, এই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ, আমেরিকান এবং ক্রেমলিনের মধ্যে যা ঘটছে, তা নিয়ে তাদের ধারণা মূলত আলাদা।’ তিনি বলেন, ‘শান্তি প্রস্তাবের মূল ধারণা হিসেবে আমেরিকানরা ভূখণ্ড বিনিময়ের যে চেষ্টা করেছিল, তাতে পুতিনের বিশেষ আগ্রহ নেই। তিনি আসলে পূর্ব ইউরোপের সামগ্রিক নিরাপত্তা কাঠামো পাল্টে দিতে আগ্রহী।’
রাশিয়ার অনেকে ক্রেমলিনের বক্তব্যকেই সমর্থন করেন এবং অনেকটা একই ভাষায় কথা বলেন। মস্কোভিত্তিক থিংক ট্যাংক ডিগোরিয়া এক্সপার্ট ক্লাবের সদস্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্পার্টাক বারানভস্কির মতামত রুশ সরকারের সঙ্গে মিলে যায়। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে কিয়েভ সরকারের ক্রমাগত নাশকতা, তথ্য বিকৃত করা এবং অনিবার্যকে বিলম্বিত করার চেষ্টা আলোচনা প্রক্রিয়াকে অনেক জটিল করে তুলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনীয় পক্ষ প্রথমে মিনস্ক চুক্তি কার্যকর করতে রাজি হয়নি এবং পরে ইস্তাম্বুলে আলোচনা হওয়া প্রাথমিক শান্তি চুক্তির শর্তগুলো প্রত্যাখ্যান করে। এমন এক ভরসা করার অযোগ্য প্রতিপক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক আলাপ চালানো সত্যিই কঠিন।’
মিনস্ক চুক্তি ছিল ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সই হওয়া একাধিক চুক্তিমালা, যার উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনের দনবাসে চলা যুদ্ধ থামানো, যেখানে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কিয়েভ সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছিল। ২০২২ সালের পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে বেলারুশ ও তুরস্কে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে, কিন্তু কোনোটিই শান্তি আনতে পারেনি।
যদিও মস্কোয় সর্বশেষ বৈঠকে কী আলোচিত হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ফাঁস হয়নি, তবু রাশিয়ায় সামান্য হলেও একটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে যে, যুদ্ধের শেষ হয়তো কাছাকাছি। সেন্ট পিটার্সবার্গের ষাটোর্ধ্ব ব্যবসায়ী তাতিয়ানা এই যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকেই দোষ দেন। তবে তিনি মনে করেন, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে তাঁর ইউরোপীয় মিত্ররাই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে বাধ্য করছেন।
তিনি আক্ষেপ করে প্রশ্ন করেন, ‘এই পরিস্থিতিতে যখন একমাত্র ট্রাম্পকেই কিছুটা বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন বলে মনে হচ্ছে। যিনি কিনা আবার স্বভাবগতভাবেই সম্পূর্ণ উন্মাদ। তাহলে বুঝুন দুনিয়ার কী হাল হয়েছে?’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি সবার জন্যই আরও খারাপ। একটা সিদ্ধান্ত তো নিতেই হবে, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে স্পষ্টতই রাশিয়ার পাল্লা ভারী, যা আমেরিকান জেনারেলরাও ভালোই বোঝেন।’
গত মঙ্গলবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ঘোষণা করেন, রুশ সৈন্যরা অবশেষে পূর্ব ইউক্রেনের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক দখল করেছে। এর ফলে দুই বছরের অবরোধের অবসান ঘটেছে। ইউক্রেন শহর পতনের কথা অস্বীকার করলেও, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অঞ্চলে রুশদের অগ্রযাত্রা থামাতে তাদের সেনারা বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
প্রস্তাবিত চুক্তির শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইউক্রেনকে দনবাস অঞ্চলের যেসব অংশ এখনো রাশিয়ার দখলে যায়নি, সেখান থেকে সেনা সরাতে হবে। ওই এলাকা একটি নিরপেক্ষ নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চল হবে, তবে আন্তর্জাতিকভাবে তা রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃত হবে। একই সঙ্গে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকস, যা ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়া বা রুশ-সমর্থিতদের নিয়ন্ত্রণে, সেগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা ৬ লাখের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের সমস্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এর বিনিময়ে, রাশিয়াকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তারা আর কোনো ইউরোপীয় দেশ আক্রমণ করবে না এবং এই প্রতিশ্রুতি তাদের আইনে লিপিবদ্ধ করতে হবে। এ ছাড়া, যুদ্ধাপরাধের জন্য সাধারণ ক্ষমার প্রস্তাবও আছে। গত সপ্তাহে পুতিন স্বীকার করেন যে এই পরিকল্পনা ‘ভবিষ্যতের চুক্তির ভিত্তি হতে পারে।’ তবে তিনি যোগ করেন, ‘যদি ইউক্রেনীয় সৈন্যরা তাদের দখল করা এলাকাগুলো ছেড়ে যায়, তবে আমরা যুদ্ধ থামাব। যদি না যায়, তবে আমরা সামরিকভাবেই আমাদের লক্ষ্য পূরণ করব।’
সূত্র মারফত জানা যায়, গত সপ্তাহান্তে ইউক্রেনীয় মধ্যস্থতাকারীরা তাদের আমেরিকান প্রতিপক্ষকে আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে—কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাসকারী রুশ অর্থনীতিবিদ ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া পর্যন্ত নয়, বরং তার শর্তগুলো পূরণ হওয়া পর্যন্ত।’
মঙ্গলবার বৈঠকের আগে, পুতিন ইউরোপকে হুমকি দিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে যান। তিনি সতর্ক করে দেন যে রাশিয়া ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে না, ‘তবে ইউরোপ যদি চায় এবং শুরু করে, আমরা এই মুহূর্তেই প্রস্তুত।’
বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘পুতিন এর জন্যই প্রস্তুতি নেবেন, ঠিক যেমন ২০২২ সালের আগে তিনি বলেছিলেন যে—রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করতে যাচ্ছে না, যা বিপরীতটাই ইঙ্গিত করেছিল।’ দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা থাকার পরও ইনোজেমতসেভ এবং বারানভস্কি দুজনেই একমত যে রাশিয়া অনির্দিষ্টকাল ধরে তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম। ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘এতটা তীব্রতায় বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া মোটেও কোনো সমস্যা নয়।’
তাঁর ভাষায়, ‘যুদ্ধের শুরুতে যত সমস্যা ছিল, এখন তার চেয়ে কম। কারণ, শুরুতে আমরা দেখেছি তাদের লোক জড়ো করতে হয়েছিল; এখন তারা বেশ ভালো বেতন দেয় এবং (নতুন স্বেচ্ছাসেবকেরা) ক্রমাগত তালিকাভুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া, তাদের অস্ত্রের সমস্যা ছিল এবং ভাষ্যকাররা লিখেছিলেন যে তিন মাসের মধ্যে তাদের শেল ফুরিয়ে যাবে। বাস্তবে, এখন যুদ্ধের আগের চেয়েও বেশি সক্রিয়ভাবে অস্ত্র উৎপাদন হচ্ছে।’
ইনোজেমতসেভ মনে করেন, এখন ‘আমেরিকানরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে—হয় এই যুদ্ধ শেষ করতে হবে, না হয় ইউক্রেনের প্রতি সব রকম সমর্থন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এই বার্তা এখন কিয়েভকে স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে। আর তাই, ইউক্রেনীয়দের কোনো না কোনোভাবে রাজি করানো হবে...ইউক্রেনীয়রা জানে যে ইউরোপ তাদের রক্ষা করতে পারবে না। অর্থাৎ, যদি এখন আমেরিকানরা এই প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে দাঁড়ায়, তবে ইউরোপের কাছে বছরের পর বছর ধরে এই কারণকে সমর্থন করার মতো অর্থ বা সংকল্প কোনোটাই থাকবে না।’
ইনোজেমতসেভ উল্লেখ করেন, একটি চুক্তি হলেও তা ইউক্রেনের স্বার্থে আসতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি তারা নিজেদের সেনাবাহিনীর জন্য ৬ লাখ সৈন্য এবং অন্তত কয়েক বছরের জন্য একটি বিরতি নিশ্চিত করতে পারে, তবে বাস্তবে এটিই সমস্যার সমাধান।’ তিনি বলেন, ‘পুতিন সব সময়ই একটি হুমকি হয়ে থাকবেন এবং তাই পশ্চিমের প্রধান কাজ হলো (৭৩ বছর বয়সী) পুতিনকে উতরে যাওয়া। যদি তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য লড়াইয়ে বিরতি আসে, তবে এটি তার জীবনের শেষের দিকে পৌঁছে যাবে, যা স্বভাবতই তাঁকে কম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে।’
এ ছাড়া, যেকোনো সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার রুশ অর্থনীতির জন্য উপকারী হবে। তবে ইনোজেমতসেভ ও বুদ্রাইৎস্কিস সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, জীবন ২০২২ সালের আগের মতো স্বাভাবিক হবে। তাঁদের অনুমান, সমাজ প্রবলভাবে সামরিক এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘শান্তি আসতে পারে না। এমন এক স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও ফেরা সম্ভব নয় যেখানে পূর্ণাঙ্গ দমনমূলক সর্বাত্মক একনায়কতন্ত্রের উপযোগী এই সমস্ত ব্যবস্থা তুলে নেওয়া হবে, কারণ আমাদের আর কোনো সরাসরি বাহ্যিক হুমকি নেই।’
তাঁর মতে, ‘এটাই রাশিয়ার পুতিন রেজিমের নকশা। তাঁর ক্ষমতা এভাবেই সাজানো হয়েছে যে, এখানে এক অন্তহীন যুদ্ধ চলবে, যেখানে রুশ অভিজাতরা পতাকার নিচে একত্রিত থাকবে, দেশের অভ্যন্তরে যে কোনো ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চলবে...এগুলো কেবল সাময়িকভাবে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে চালু করা কিছু অসাধারণ ব্যবস্থা নয়, বরং এভাবেই তিনি শাসন চালিয়ে যাবেন।’
তিনি আরও যোগ করেন, ইউক্রেন, ইউরোপ, বাল্টিক রাষ্ট্র বা ‘যে কারও বিরুদ্ধে যেকোনো রূপে যুদ্ধ’ হলো পুতিন ২০২২ সালের পরে রাশিয়ায় যে ‘স্বাভাবিকতা’ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার অবিচ্ছেদ্য চালিকাশক্তি। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ‘সুতরাং, এই রেজিম টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধ চলতে থাকবে।’
কিছু রুশ নাগরিক ইতিমধ্যেই দীর্ঘস্থায়ী পরিস্থিতির জন্য নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। মস্কোর গণমাধ্যম সের্গেই কালেনিক বলেন, ‘আমেরিকা যত দিন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে তাদের দখলদার সৈন্য প্রত্যাহার না করবে, তত দিন যুদ্ধ শেষ হবে না।’
আল–জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

রুশদের মতে যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইউক্রেন তাদের শর্তগুলো মানতে চাইছে না, সেটাই শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়। অন্যদিকে কিয়েভ এবং তার অধিকাংশ ইউরোপীয় মিত্রদের বক্তব্য, এই যুদ্ধবিরতির চুক্তির পথে প্রধান বাধা হলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল মস্কোয় যান। সেখানে পুতিনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়, যা চলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে। এই দলে ছিলেন আমেরিকার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার।
পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ এই বৈঠককে ‘খুবই কাজের এবং গঠনমূলক’ বললেও স্বীকার করেন যে, ‘সামনে অনেক পথ বাকি।’ তিনি বলেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছা হলো ‘মূল প্রশ্ন।’ তবে তিনি এটাও মেনে নেন যে, ভূখণ্ড সংক্রান্ত প্রশ্নে কোনো সমঝোতা হয়নি।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা রাশিয়ার অবস্থানকে একেবারেই হাস্যকর মনে করছেন। কারণ, মস্কোই ২০২২ সালে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে। তাদের ধারণা, ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে লাগাতার বোমা হামলা চলার কারণে পুতিনের আসলে শান্তিতে কোনো প্রকৃত আগ্রহ নেই।
আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের ভিজিটিং ফেলো ও রুশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইলিয়া বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘যেমনটা প্রত্যাশা করা গিয়েছিল, এই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ, আমেরিকান এবং ক্রেমলিনের মধ্যে যা ঘটছে, তা নিয়ে তাদের ধারণা মূলত আলাদা।’ তিনি বলেন, ‘শান্তি প্রস্তাবের মূল ধারণা হিসেবে আমেরিকানরা ভূখণ্ড বিনিময়ের যে চেষ্টা করেছিল, তাতে পুতিনের বিশেষ আগ্রহ নেই। তিনি আসলে পূর্ব ইউরোপের সামগ্রিক নিরাপত্তা কাঠামো পাল্টে দিতে আগ্রহী।’
রাশিয়ার অনেকে ক্রেমলিনের বক্তব্যকেই সমর্থন করেন এবং অনেকটা একই ভাষায় কথা বলেন। মস্কোভিত্তিক থিংক ট্যাংক ডিগোরিয়া এক্সপার্ট ক্লাবের সদস্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্পার্টাক বারানভস্কির মতামত রুশ সরকারের সঙ্গে মিলে যায়। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে কিয়েভ সরকারের ক্রমাগত নাশকতা, তথ্য বিকৃত করা এবং অনিবার্যকে বিলম্বিত করার চেষ্টা আলোচনা প্রক্রিয়াকে অনেক জটিল করে তুলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনীয় পক্ষ প্রথমে মিনস্ক চুক্তি কার্যকর করতে রাজি হয়নি এবং পরে ইস্তাম্বুলে আলোচনা হওয়া প্রাথমিক শান্তি চুক্তির শর্তগুলো প্রত্যাখ্যান করে। এমন এক ভরসা করার অযোগ্য প্রতিপক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক আলাপ চালানো সত্যিই কঠিন।’
মিনস্ক চুক্তি ছিল ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সই হওয়া একাধিক চুক্তিমালা, যার উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনের দনবাসে চলা যুদ্ধ থামানো, যেখানে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কিয়েভ সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছিল। ২০২২ সালের পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে বেলারুশ ও তুরস্কে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে, কিন্তু কোনোটিই শান্তি আনতে পারেনি।
যদিও মস্কোয় সর্বশেষ বৈঠকে কী আলোচিত হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ফাঁস হয়নি, তবু রাশিয়ায় সামান্য হলেও একটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে যে, যুদ্ধের শেষ হয়তো কাছাকাছি। সেন্ট পিটার্সবার্গের ষাটোর্ধ্ব ব্যবসায়ী তাতিয়ানা এই যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকেই দোষ দেন। তবে তিনি মনে করেন, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে তাঁর ইউরোপীয় মিত্ররাই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে বাধ্য করছেন।
তিনি আক্ষেপ করে প্রশ্ন করেন, ‘এই পরিস্থিতিতে যখন একমাত্র ট্রাম্পকেই কিছুটা বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন বলে মনে হচ্ছে। যিনি কিনা আবার স্বভাবগতভাবেই সম্পূর্ণ উন্মাদ। তাহলে বুঝুন দুনিয়ার কী হাল হয়েছে?’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি সবার জন্যই আরও খারাপ। একটা সিদ্ধান্ত তো নিতেই হবে, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে স্পষ্টতই রাশিয়ার পাল্লা ভারী, যা আমেরিকান জেনারেলরাও ভালোই বোঝেন।’
গত মঙ্গলবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ঘোষণা করেন, রুশ সৈন্যরা অবশেষে পূর্ব ইউক্রেনের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক দখল করেছে। এর ফলে দুই বছরের অবরোধের অবসান ঘটেছে। ইউক্রেন শহর পতনের কথা অস্বীকার করলেও, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অঞ্চলে রুশদের অগ্রযাত্রা থামাতে তাদের সেনারা বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
প্রস্তাবিত চুক্তির শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইউক্রেনকে দনবাস অঞ্চলের যেসব অংশ এখনো রাশিয়ার দখলে যায়নি, সেখান থেকে সেনা সরাতে হবে। ওই এলাকা একটি নিরপেক্ষ নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চল হবে, তবে আন্তর্জাতিকভাবে তা রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃত হবে। একই সঙ্গে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকস, যা ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়া বা রুশ-সমর্থিতদের নিয়ন্ত্রণে, সেগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা ৬ লাখের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের সমস্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এর বিনিময়ে, রাশিয়াকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তারা আর কোনো ইউরোপীয় দেশ আক্রমণ করবে না এবং এই প্রতিশ্রুতি তাদের আইনে লিপিবদ্ধ করতে হবে। এ ছাড়া, যুদ্ধাপরাধের জন্য সাধারণ ক্ষমার প্রস্তাবও আছে। গত সপ্তাহে পুতিন স্বীকার করেন যে এই পরিকল্পনা ‘ভবিষ্যতের চুক্তির ভিত্তি হতে পারে।’ তবে তিনি যোগ করেন, ‘যদি ইউক্রেনীয় সৈন্যরা তাদের দখল করা এলাকাগুলো ছেড়ে যায়, তবে আমরা যুদ্ধ থামাব। যদি না যায়, তবে আমরা সামরিকভাবেই আমাদের লক্ষ্য পূরণ করব।’
সূত্র মারফত জানা যায়, গত সপ্তাহান্তে ইউক্রেনীয় মধ্যস্থতাকারীরা তাদের আমেরিকান প্রতিপক্ষকে আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে—কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাসকারী রুশ অর্থনীতিবিদ ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া পর্যন্ত নয়, বরং তার শর্তগুলো পূরণ হওয়া পর্যন্ত।’
মঙ্গলবার বৈঠকের আগে, পুতিন ইউরোপকে হুমকি দিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে যান। তিনি সতর্ক করে দেন যে রাশিয়া ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে না, ‘তবে ইউরোপ যদি চায় এবং শুরু করে, আমরা এই মুহূর্তেই প্রস্তুত।’
বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘পুতিন এর জন্যই প্রস্তুতি নেবেন, ঠিক যেমন ২০২২ সালের আগে তিনি বলেছিলেন যে—রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করতে যাচ্ছে না, যা বিপরীতটাই ইঙ্গিত করেছিল।’ দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা থাকার পরও ইনোজেমতসেভ এবং বারানভস্কি দুজনেই একমত যে রাশিয়া অনির্দিষ্টকাল ধরে তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম। ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘এতটা তীব্রতায় বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া মোটেও কোনো সমস্যা নয়।’
তাঁর ভাষায়, ‘যুদ্ধের শুরুতে যত সমস্যা ছিল, এখন তার চেয়ে কম। কারণ, শুরুতে আমরা দেখেছি তাদের লোক জড়ো করতে হয়েছিল; এখন তারা বেশ ভালো বেতন দেয় এবং (নতুন স্বেচ্ছাসেবকেরা) ক্রমাগত তালিকাভুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া, তাদের অস্ত্রের সমস্যা ছিল এবং ভাষ্যকাররা লিখেছিলেন যে তিন মাসের মধ্যে তাদের শেল ফুরিয়ে যাবে। বাস্তবে, এখন যুদ্ধের আগের চেয়েও বেশি সক্রিয়ভাবে অস্ত্র উৎপাদন হচ্ছে।’
ইনোজেমতসেভ মনে করেন, এখন ‘আমেরিকানরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে—হয় এই যুদ্ধ শেষ করতে হবে, না হয় ইউক্রেনের প্রতি সব রকম সমর্থন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এই বার্তা এখন কিয়েভকে স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে। আর তাই, ইউক্রেনীয়দের কোনো না কোনোভাবে রাজি করানো হবে...ইউক্রেনীয়রা জানে যে ইউরোপ তাদের রক্ষা করতে পারবে না। অর্থাৎ, যদি এখন আমেরিকানরা এই প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে দাঁড়ায়, তবে ইউরোপের কাছে বছরের পর বছর ধরে এই কারণকে সমর্থন করার মতো অর্থ বা সংকল্প কোনোটাই থাকবে না।’
ইনোজেমতসেভ উল্লেখ করেন, একটি চুক্তি হলেও তা ইউক্রেনের স্বার্থে আসতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি তারা নিজেদের সেনাবাহিনীর জন্য ৬ লাখ সৈন্য এবং অন্তত কয়েক বছরের জন্য একটি বিরতি নিশ্চিত করতে পারে, তবে বাস্তবে এটিই সমস্যার সমাধান।’ তিনি বলেন, ‘পুতিন সব সময়ই একটি হুমকি হয়ে থাকবেন এবং তাই পশ্চিমের প্রধান কাজ হলো (৭৩ বছর বয়সী) পুতিনকে উতরে যাওয়া। যদি তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য লড়াইয়ে বিরতি আসে, তবে এটি তার জীবনের শেষের দিকে পৌঁছে যাবে, যা স্বভাবতই তাঁকে কম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে।’
এ ছাড়া, যেকোনো সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার রুশ অর্থনীতির জন্য উপকারী হবে। তবে ইনোজেমতসেভ ও বুদ্রাইৎস্কিস সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, জীবন ২০২২ সালের আগের মতো স্বাভাবিক হবে। তাঁদের অনুমান, সমাজ প্রবলভাবে সামরিক এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘শান্তি আসতে পারে না। এমন এক স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও ফেরা সম্ভব নয় যেখানে পূর্ণাঙ্গ দমনমূলক সর্বাত্মক একনায়কতন্ত্রের উপযোগী এই সমস্ত ব্যবস্থা তুলে নেওয়া হবে, কারণ আমাদের আর কোনো সরাসরি বাহ্যিক হুমকি নেই।’
তাঁর মতে, ‘এটাই রাশিয়ার পুতিন রেজিমের নকশা। তাঁর ক্ষমতা এভাবেই সাজানো হয়েছে যে, এখানে এক অন্তহীন যুদ্ধ চলবে, যেখানে রুশ অভিজাতরা পতাকার নিচে একত্রিত থাকবে, দেশের অভ্যন্তরে যে কোনো ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চলবে...এগুলো কেবল সাময়িকভাবে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে চালু করা কিছু অসাধারণ ব্যবস্থা নয়, বরং এভাবেই তিনি শাসন চালিয়ে যাবেন।’
তিনি আরও যোগ করেন, ইউক্রেন, ইউরোপ, বাল্টিক রাষ্ট্র বা ‘যে কারও বিরুদ্ধে যেকোনো রূপে যুদ্ধ’ হলো পুতিন ২০২২ সালের পরে রাশিয়ায় যে ‘স্বাভাবিকতা’ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার অবিচ্ছেদ্য চালিকাশক্তি। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ‘সুতরাং, এই রেজিম টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধ চলতে থাকবে।’
কিছু রুশ নাগরিক ইতিমধ্যেই দীর্ঘস্থায়ী পরিস্থিতির জন্য নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। মস্কোর গণমাধ্যম সের্গেই কালেনিক বলেন, ‘আমেরিকা যত দিন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে তাদের দখলদার সৈন্য প্রত্যাহার না করবে, তত দিন যুদ্ধ শেষ হবে না।’
আল–জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

রাজনীতিতে থ্রি-বডি প্রবলেম-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, পদার্থবিদ্যার সমস্যাটির মতোই, এখানে কোনো একক পক্ষ অন্যদের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে অনুমান বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে একটা অস্থির রাজনৈতিক গতিশীলতা তৈরি হয়।
০১ জুন ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাজনীতিতে থ্রি-বডি প্রবলেম-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, পদার্থবিদ্যার সমস্যাটির মতোই, এখানে কোনো একক পক্ষ অন্যদের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে অনুমান বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে একটা অস্থির রাজনৈতিক গতিশীলতা তৈরি হয়।
০১ জুন ২০২৫
ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেও
১ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

রাজনীতিতে থ্রি-বডি প্রবলেম-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, পদার্থবিদ্যার সমস্যাটির মতোই, এখানে কোনো একক পক্ষ অন্যদের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে অনুমান বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে একটা অস্থির রাজনৈতিক গতিশীলতা তৈরি হয়।
০১ জুন ২০২৫
ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেও
১ ঘণ্টা আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

রাজনীতিতে থ্রি-বডি প্রবলেম-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, পদার্থবিদ্যার সমস্যাটির মতোই, এখানে কোনো একক পক্ষ অন্যদের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে অনুমান বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে একটা অস্থির রাজনৈতিক গতিশীলতা তৈরি হয়।
০১ জুন ২০২৫
ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেও
১ ঘণ্টা আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে