Ajker Patrika

ঠাকুরগাঁওয়ে বিলুপ্ত নীলগাইয়ের দেখা মিলছে

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২১, ১৪: ২১
ঠাকুরগাঁওয়ে বিলুপ্ত নীলগাইয়ের দেখা মিলছে

সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে এক সময় নীলগাইয়ের অবাধ বিচরণ ছিল। কিন্তু বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় ও শিকারের কারণে এদের সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকে। এ বন্যপ্রাণীটি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তবে বিরল প্রজাতির এ নীলগাইয়ের দেখা মিলছে ঠাকুরগাঁওয়ে। একটি দুটি নয় এ পর্যন্ত চারটি নীলগাই উদ্ধার হয়েছে এ জেলা থেকে। 

বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতিবেশী ভারত থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নীলগাই ঢুকে পড়ে সীমান্তের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে। স্থানীয় গ্রামবাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই নীলগাই আটক করে বংশবৃদ্ধির জন্য নিয়ে যায় দিনাজপুরের রামসাগর উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায়।  

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৪০ সালের পর ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রানীশংকৈলের যদুয়ার গ্রামের পাশে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে বয়ে যাওয়া কুলিক নদের ধারে একটি মাদি নীলগাই দেখতে পান স্থানীয় জেলেরা। গ্রামবাসী মিলে নীলগাইটিকে আটক করেন। পরদিন বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এটিকে উদ্ধার করে দিনাজপুর রামসাগর জাতীয় উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চার দিন থাকার পর সেই নীলগাই মৃত বাচ্চা প্রসব করে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ১৮ মার্চ উদ্যানটির বেড়ার সঙ্গে ধাক্কা লেগে স্ত্রী নীলগাইটি মারা যায়। 

এরপর ২০২১ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার নাগর নদী তীরে একটি কালো রঙ্গের পুরুষ নীলগাই আটক করে স্থানীয়রা। পরে নীলগাইটি বন বিভাগ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। একই বছরের জুলাই মাসে রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় সীমান্ত এলাকার কাঁটাতার পেরিয়ে একটি ধূসর রঙের পুরুষ প্রজাতির নীলগাই ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণীটি দেখে ধরার চেষ্টা করে গ্রামবাসীরা। স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়। 

সম্প্রতি আবারও হরিপুর উপজেলার মিনাপুর গ্রামে ধরা পড়ে একটি পুরুষ নীলগাই। তবে ভারত সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় কাঁটাতারের খোঁচায় প্রাণীটির শরীর মারাত্মক জখম হয়। পরে স্থানীয় বিজিবি সদস্যরা আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নিজেদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুরুষ নীলগাইটির মৃত্যু হয়। 

নীলগাইয়ের বিষয়ে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নীলগাই একটি সময় এ দেশের বিভিন্ন বনাঞ্চলে দেখা যেত। ধীরে ধীরে বনভূমি উজাড় ও শিকারিদের হাতে মারা পড়ার কারণে বিলুপ্তির মুখে পড়ে এই হরিণবিশেষ প্রাণীটি। বর্তমানে ভারতসহ অন্যান্য রাষ্ট্র এই প্রাণীকে গৃহপালিত পশু হিসেবে লালন পালন করে থাকে।’ 

আমাদের দেশে জনসাধারণ জন্য এ প্রাণীটি লালন পালন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। যার কারণে প্রাণীটি প্রজনন ও বংশ বিস্তারের উদ্যোগ নেয়নি প্রাণী সম্পদ বিভাগ। এটি দুগ্ধজাতীয় পশু না হলেও এর মাংস খেতে হরিণের মতোই। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাণীটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হলে দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা। 

বিলুপ্ত এই প্রাণীগুলো সম্প্রতি ভারত হয়ে বাংলাদেশে ছুটে আসার কারণ কি এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাজেদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘নীলগাই একটি তৃণভোজী প্রাণী। বেঁচে থাকার তাগিদে এরা ঘাস, লতাপাতা, গুল্ম ও বিভিন্ন ফসলের শস্যদানা খেয়ে জীবন ধারণ করে। বন জঙ্গল উজাড় হয়ে যাওয়ার কারণে এ প্রাণীগুলো লোকালয়ে এসে মানুষের ফসলের শস্যদানা খেয়ে ফেলছে। প্রাণীটির হাত থেকে ফসল রক্ষার্থে সম্প্রতি ভারতের অধিকাংশ এলাকায় এ প্রাণীটিকে হত্যা ও শিকার করা হচ্ছে। যার কারণে ভয়ে ও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেতে বর্ডার ক্রস করে এরা বাংলাদেশে চলে আসছে। তবে বাংলাদেশে যেহেতু প্রাণীটি দেখা পাওয়া যায় না তাই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে। তবে প্রাণীটি ক্ষতিকর নয়। এটি হরিণের মতোই নিরীহ একটি প্রাণী। যেহেতু আমাদের দেশ থেকে এ নীলগাইটি বিলুপ্ত তাই এটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রাণীটি যে বর্ডার পার হয়ে এ দেশে ঢুকে পড়ছে ওই এলাকা গুলো চিহ্নিত করে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। যেন প্রাণীগুলো নিরাপদে এই দেশে আসতে পারে।’ 

মো. মাজেদ জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘একটি স্ত্রী নীলগাই দুই বছরের মধ্যে সন্তান দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করলেও পুরুষ নীলগাইয়ের সময় লাগে তিন বছর। তবে প্রজননক্রিয়ার জন্য এরা চার বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করে। প্রাণীটির গড় আয়ু ২১-২২ বছরের মতো হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Boselaphus Tragocamelus। ১০০ বছরের ও আগে নেপাল, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নীলগাই দেখা যেত। ওই সময়ে ঠাকুরগাঁওসহ দিনাজপুর, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট ও নীলফামারীর মাঠে-ঘাটে নীলগাইয়ের বিচরণ ছিল চোখে পড়ার মতো।’     

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাবিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা ৪ হলের নাম পরিবর্তন

জাবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বজনদের নামে থাকা চারটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শেখ পরিবারের নামে থাকা চারটি হলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এসব হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে রাখ হয়েছে ‘শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক হল’, শেখ রাসেল হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নবাব সলিমুল্লাহ হল’। এ ছাড়া শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই চব্বিশ জাগরণী হল’ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ফেলানী খাতুন হল’ নাম রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত