Ajker Patrika

বিশ্বে পণ্যের দাম কমছে

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২১, ১৩: ১৮
বিশ্বে পণ্যের দাম কমছে

বিশ্ববাজারে প্রায় সব নিত্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামালের দাম কমছে। নানান অজুহাতে নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামের উত্তাপে যখন দেশের বাজার পুড়ছে, তখন জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, চিনি, চাল, গম, লোহা, স্টিল, তুলা, বিটুমিন, অ্যালুমিনিয়ামসহ অনেক পণ্যের দাম ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কমার খবর এসেছে এবং কমার ধারা অব্যাহত রয়েছে। পণ্য-বাজার, অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত বিশ্বের নামকরা প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গসহ বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা এসব পণ্যের দাম কমার তথ্য দিচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ ধরা পড়ার পরই পণ্যগুলোর দাম কমার ধারা দেখা যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এখন দেশের বাজারে এসব পণ্যের দাম কমানোর যৌক্তিকতা সামনে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে ব্যবসায়ীরা বিশ্ববাজারের অজুহাতে যত দ্রুততার সঙ্গে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন, তত দ্রুততার সঙ্গে দাম কমাবেন কি না। উদ্যোক্তা, ব্যাংকার ও বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এর সুফল যাতে ভোক্তারা পায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। দাম কমার ফলে আমদানি বিলের ক্ষেত্রেও দেশ সুফল পাবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবিলম্বে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা উচিত। একই সঙ্গে বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বাজারেও নিত্যপণ্যের দাম সমন্বয় করতে করণীয় ঠিক করতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠক করা উচিত। দাম নির্ধারিত হবে চাহিদা জোগানের ওপর ভিত্তি করে।

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কয়েক মাস ধরে দেশের বাজারে চাল, চিনি, ভোজ্যতেল, তুলা, লোহা, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দফায় দফায় বৈঠক করেও দামে রাশ টানতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত কিছু পণ্যে শুল্ক তুলে দিয়ে এবং কিছু পণ্যে শুল্ক কমিয়েও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পুরো সরবরাহ ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করেছে। এর প্রভাবে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে গত এক বছরে চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ, খোলা আটার দাম বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ, খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৫৬ শতাংশ, খোলা পাম তেলের দাম বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। এভাবে প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের দামই অসহনীয় মাত্রায় বেড়েছে। 

Internationalএমন এক পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্য ও শিল্পের বিভিন্ন কাঁচামালের দাম কমার খবর এসেছে। ব্লুমবার্গসহ বিশ্বের পণ্যবাজার ও পণ্যের দাম নিয়ে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে এমন বেশ কিছু সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমার তথ্য সম্পর্কে জানা যায়। তারা পৃথক পৃথক তথ্য দিলেও দামে খুব বেশি তারতম্য নেই। ব্লুমবার্গ ২৬ নভেম্বরের হালনাগাদ তথ্য দিয়ে বলছে, বিশ্ববাজারে সার্বিকভাবে নিত্যপণ্যের দাম কমেছে প্রায় ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ১৩ শতাংশ। তুলার দাম কমেছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও গমের দাম কমেছে ১ দশমিক ১৮ শতাংশ।

অপর পণ্যমূল্য বিশ্লেষণকারী সংস্থা ট্রেডিং ইকোনমিকসের ২৬ নভেম্বরের হালনাগাদ তথ্য বলছে, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ, স্টিল কমেছে ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, লোহা কমেছে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, সিলভার কমেছে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সয়াবিন তেল কমেছে প্রায় ১ শতাংশ, পাম তেল কমেছে দেড় শতাংশ, গম কমেছে প্রায় ১ শতাংশ, চাল ১ দশমিক ১৮ শতাংশ, চিনি প্রায় ৩ শতাংশ, তুলা ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ, বিটুমিন ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ, অ্যালুমিনিয়ামের প্রায় ৪ শতাংশ দাম কমেছে। প্রায় একই রকম তথ্য দিয়েছে মার্কেট ইনসাইডারও। তারাও পাম তেল, সয়াবিন তেল, গম, চিনির দাম ৩ শতাংশ পর্যন্ত কমার তথ্য দিয়েছে।

জানা যায়, দেশের তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে তুলা। বেশ কয়েক মাস ধরে তুলার দাম বাড়ছিল। এতে রপ্তানিকারকদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে বলে উদ্যোক্তারা ব্যাপক শোরগোল করেন। এর দাম কমা অব্যাহত থাকলে পোশাক খাত এর সুফল পেতে পারে। ভোজ্যতেল, চিনির দামও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়েছে দেশের বাজারে। দাম কমতে থাকলে এসব নিত্যপণ্যের দামও কিছুটা সহনীয় হতে পারে। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দেশের রাজারে এসব পণ্যের দাম শিগগির কমবে না।

এ ব্যাপারে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা যখন বিশ্ববাজারে দাম বাড়ে, সঙ্গে সঙ্গেই দাম বাড়িয়ে দেন। এতে বেশির ভাগ সময় সরকারেরও সায় থাকে। কিন্তু যখন কমে তখন ওনারা নানা অজুহাত দেখান। তাঁরা তখন বলেন, বাজারে তো আমাদের আগের দামে কেনা পণ্য রয়েছে। যখন নতুন পণ্য আসবে তখন কমবে। তবে আমার অভিজ্ঞতা বলে, বিশ্ববাজারে কমার সঙ্গে সঙ্গে এখানে কমে না, সময় লাগে। আমি আশা করি, দাম যাতে দ্রুত কমে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দেশের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানি পণ্য নিট পোশাক। এর প্রধান কাঁচামাল তুলা। বিশ্ববাজারে দাম কমলে উদ্যোক্তারা এর সুফল পাবেন কি না—এমন প্রশ্নে এ খাতের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ও প্লামি ফ্যাশনসের উদ্যোক্তা ফজলুল হক বলেন, ‘এটা ওমিক্রনের প্রভাব হতে পারে। এটাকে এখনই ইতিবাচক বলা যাবে না। কমাটা কত দূর স্থায়ী হবে, তার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। তবে আমি মনে করি ওমিক্রনের কারণে বিশ্ব স্থবির হয়ে কোনো পণ্যের দাম কমলে কোনো লাভ নেই। বরং সবকিছু স্বাভাবিক থাকার পর চাহিদা ও সরবরাহের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ হলে সেটাই কাম্য।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

ফয়সালের সঙ্গে ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গেছি, এতটুকুই—আদালতে কবির

রেকর্ড ৯ কোটি ২০ লাখ রুপিতে মোস্তাফিজকে নিল কলকাতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ