Ajker Patrika

গাজা যুদ্ধের বর্ষপূর্তি: হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের এক বছরে যা যা ঘটল

গাজা যুদ্ধের বর্ষপূর্তি: হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের এক বছরে যা যা ঘটল

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে আজ ৭ অক্টোবর। সেদিন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ শ জনকে হত্যা করে। জবাবে সেদিনই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তারপর থেকে আজও অঞ্চলটিতে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। 

এই এক বছরে অঞ্চলটির ভূরাজনীতি, যুদ্ধ পরিস্থিতি পুরোটাই পাল্টে গেছে। এরই মধ্যে ইরান, হিজবুল্লাহ, ইরাকের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী, ইয়েমেনের হুতি, সিরিয়ার বিভিন্ন গোষ্ঠী এই সংঘাতে জড়িয়ে গেছে। এই এক বছরে লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলাকালে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেছে। তারই একটি সংক্ষিপ্ত টাইমলাইন তুলে ধরা হলো।

৮ অক্টোবর, ২০২৩: ইসরায়েলি আগ্রাসনের শুরু 
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। সেই হামলায় ১১ জনের বেশি ইসরায়েলি নিহত হয় এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। এরপরই ইসরায়েল গাজায় হামলা চালানো শুরু করে। প্রতিক্রিয়ায় হামাসের মিত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও গাজাবাসীর পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েলের সেবা ফার্ম অঞ্চলে হামলা চালায়। তারা ঘোষণা দেয়, গাজায় যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত হামলা বন্ধ করবে না। 

এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও প্রায় লাখ খানিক মানুষ। একই সময়ে লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে প্রায় ৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও কয়েক হাজার। এ ছাড়া, লেবাননে ইসরায়েলি হামলার কারণে ১ লাখ মানুষ নিজের বসতভিটা থেকে উদ্বাস্তু হয়েছে। অপরদিকে, ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর হামলায় ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। 

১৩ অক্টোবর, ২০২৩: ইসরায়েলি হামলায় রয়টার্সের সাংবাদিক নিহত
ঘটনার দিন রয়টার্স, এএফপি এবং আল-জাজিরার সাংবাদিকদের একটি দল উত্তর-ইসরায়েলের একটি সেনা ঘাঁটির কাছে থেকে ভিডিও সম্প্রচার করছিলেন। সে সময় ইসরায়েলি হামলায় রয়টার্সের আলোকচিত্রী ইসাম আবদুল্লাহ নিহত হন এবং ৬ সাংবাদিক গুরুতর আহত হন।

এই হামলার বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, তদন্তে দেখা গেছে—ইসরায়েলি ট্যাংক ক্রুরা সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের ওপর গুলি চালিয়েছে। তবে ইসরায়েল সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করে হামলার কথা অস্বীকার করেছে। 

লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি হামলার পর ধোঁয়া উড়ছে একটি এলাকা থেকেঅক্টোবর-নভেম্বর, ২০২৩: সাময়িক যুদ্ধবিরতি ও সংঘাতের বাড়বাড়ন্ত
এই সময়ে গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণ তীব্র হতে থাকে। পাশাপাশি ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত ‘ব্লু লাইনে’ও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনী (আইডিএফ) ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হয়। ২৪ অক্টোবর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী প্রথমবারের মতো সিরিয়ার দুটি সামরিক অবস্থানে আঘাত করে। 

নভেম্বরের শেষ দিকে গাজায় একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মি ও ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের মুক্তির লক্ষ্যে এক সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় উভয় পক্ষ। হিজবুল্লাহ সে সময় বলেছিল, তারাও যুদ্ধবিরতিকে সম্মান করবে। ফলে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী উভয়ই সংক্ষিপ্তভাবে সামরিক অভিযান বন্ধ করে দেয় এবং অনেক বাস্তুচ্যুত মানুষ বাড়ি ফিরে আসে। 

কিন্তু কার্যত যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হয় মাত্র এক দিন। ২৮ অক্টোবর হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি ড্রোন লক্ষ্য করে রকেট নিক্ষেপ করে। 

জানুয়ারি-মার্চ, ২০২৪
জানুয়ারি মাসের ২ তারিখের লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর ডেপুটি চেয়ারম্যান সালেহ আল-আরোরি নিহত হন। এই হামলায় হামাসের আরও ৬ নেতা নিহত হন। ফেব্রুয়ারি মাসে লেবাননের ইসরায়েলি হামলায় উইসাম আল-তাউইল, আলি হুসেন বারজি, আব্বাস আল-দাবাস নামে তিন হিজবুল্লাহ কমান্ডার নিহত হন। মার্চ মাসে লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় হামাসের হাদি আলি মুস্তফা এবং হিজবুল্লাহর রকেট ও মিসাইল ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার আলি আবেদ আকসান নাইম দুজন নিহত হন।

মধ্যপ্রাচ্য সংকটের কয়েক কুশীলব—খোমেনি, নাসরুল্লাহ, বাইডেন ও নেতানিয়াহুএপ্রিল, ২০২৪: সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ইরানি কমান্ডার নিহত
এপ্রিলের ১ তারিখেই ইসরায়েল সিরিয়ার রাজধানী দামেশকে ইরানি দূতাবাসে হামলা চালায়। সেই হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) জ্যেষ্ঠ কমান্ডার মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ ৮ জন নিহত হন। হিজবুল্লাহ, আইআরজিসি এবং ইয়েমেনের হুতিরা ইসরায়েলে সিরিজ হামলা শুরু করে। ইরান প্রায় ৩ শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালায়। 

সেপ্টেম্বর, ২০২৪: লেবাননে পেজার-ওয়াকিটকিও রেডিও ডিভাইস বিস্ফোরণে হতাহত
সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখে হিজবুল্লাহ সদস্যদের ব্যবহৃত যোগাযোগ ডিভাইস পেজারের কয়েক হাজার ইউনিট বিস্ফোরিত হয়। এতে ১২ জন নিহত, ২ হাজার ৭৫০ জন আহত হয়। পর দিন লেবাননজুড়ে ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে কমপক্ষে ২৫ জন নিহত এবং আরও কয়েক শ লোক আহত হয়। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর ঘোষণা দিয়ে লেবাননে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে প্রায় হাজার খানিক মানুষ নিহত হয়। 

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪: ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এই হত্যাকাণ্ডে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেন। নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর বলেন, ‘সে কোনো সন্ত্রাসী ছিল না, সে নিজেই সন্ত্রাস।’ 

অক্টোবর, ২০২৪: লেবাননে ইসরায়েলের স্থল অভিযান ও ইসরায়েলে ইরানি হামলা 
এই মাসের প্রথম দিনেই ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করে। একই দিনে ইরান ইসরায়েলে কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরান দেশটিতে হামলা চালায়। ইসরায়েলের দাবি, তারা ইরানের অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দিয়েছে। তবে ইরানের দাবি, তাদের ৯০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্রই ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে। তবে এই হামলায় ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি বিমান ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে স্বীকার করে তেল আবিব। 

তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে আক্রমণ করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।

পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো হলে এবং পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ‘প্রতারণা’ বন্ধ করলে নতুন কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান হবে না। তিনি তাঁর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিম তা মানেনি।

মস্কোর একটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুতিনের পেছনে রাশিয়ার বিশাল মানচিত্র ঝুলছিল। এই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল, এমনকি ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, ওই অনুষ্ঠানটিতে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ৩০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।

দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।

পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৫৬
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।

গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংবাদমাধ্যমের ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর।

শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান এই সহিংসতা সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থারুর বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে আমাদের দুটি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ, যেসব বাংলাদেশি ভারতে আসতে চান, তাঁরাই এখন অভিযোগ করছেন যে আগে যেভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

থারুর উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভারত সরকারের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সাহায্য করা কঠিন করে তুলছে।

বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে থারুর বলেন, ‘আমি আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে বলব যেন তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। বাজপেয়ি সাহেব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলেন—আমরা আমাদের ভূগোল পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

শশী থারুর জানান, নয়াদিল্লি পুরো পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করতে অনুরোধ জানাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

ভূমধ্যসাগরের নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকার ধ্বংসের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেন একে ‘অভূতপূর্ব বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করলেও, রাশিয়া এটিকে আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে—ইউক্রেনীয় ড্রোনের আঘাতে রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা গোপন নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ‘কেনডিল’-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ জানিয়েছে, হামলাটি ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে সংঘটিত হয়। কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগরের বাইরে এবং নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের কোনো ড্রোন হামলা।

ইউক্রেন দাবি করেছে, হামলার সময় ট্যাংকারটি খালি ছিল এবং এতে কোনো তেল বা জ্বালানি বহন করা হচ্ছিল না। ফলে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। তবে বিস্ফোরণে জাহাজটি ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ট্যাংকারটি চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের গুজরাট রাজ্যের সিক্কা বন্দরে তেল খালাস করে ফিরে যাচ্ছিল।

এই ঘটনার পর মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভূমধ্যসাগরে রুশ ট্যাংকারে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলা কিছু বাস্তব লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়—যেমন বিমা প্রিমিয়াম বাড়ানো। কিন্তু এতে সরবরাহ ব্যাহত হবে না এবং প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যাবে না। বরং এটি অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করবে। আমাদের দেশ এর জবাব দেবে।’

পুতিন আরও বলেন—বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাতের বিষয়েও রাশিয়া চুপ করে থাকবে না। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই একটি পাল্টা আঘাত ঘটবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের এই হামলা যুদ্ধের পরিধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে পুতিনের পাল্টা জবাবের ঘোষণা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতকে আরও বিস্তৃত ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত